#অপরাধী
#লেখক_অন্তর
পর্ব_১০
,
,
,
মেয়েটার মাথা নিচে ঝুকে ছিলো তাই প্রথমে চেহারা দেখি নাই যখনি মেয়েটা মাথা উঠালো সাথে সাথে আমি তাকে দেখেই নিস্তব্দ হয়ে রইলাম।শুধু তাই না মেয়েটাও আমার দিকে এক নজরেই দেখেই আছে,আমি যে মেয়েটা আমার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায় সেই মেয়েটা আর কেউ না মায়া।সেখানের পরিস্থিতি কিছুক্ষনের জন্য নিরভ হয়ে যায়। মায়া নিচে পড়ে থাকা অবস্থায় আমাকে দেখতে লাগে আর আমিও উপর থেকে দাড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি আজ প্রায় ৬ মাসের বেশি সময় পর তাকে আমি নিজ চোখে নিজের সামনে দেখলাম।তাকে দেখেই আমার ভিতরে অন্য রকম কাজ করতেছিলো, আমি এক ঘোরের ভিতরে চলে যাই।তখনি মনে পড়ে যায় মায়া আমার সাথে কি করছিলো তাই সাথে সাথে আমি হোস ফিরে পাই, যেহুতু সে আমার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায় তাই আমিও তাকে হাত বাড়িয়ে দিলাম, সেও আমার হাত ধরে উঠে দাড়ায়।
–সরি আপু,আমি আসলেই ফোনে কথা বলতেছিলাম তাই খেয়াল করি নাই আমাকে ক্ষমা করবেন!(আমি অন্য দিকে মুখ করে)
এরপর আমি যেতে লাগি কিন্তু আমি হাতে টান খেয়ে যায়,দেখলাম মায়া আমার হাত ছাড়ে নাই,এটা দেখেই আমার মেঝাজ খারাপ হয়ে গেলো তাই সাথে সাথে আমি ঝাড়ি দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিলাম আর সোজা চলে যেতে লাগি। যেখানে সে আমার কতো বড় ক্ষতি করছিলো তারপরেও তাকে এই অবস্থায় দেখার পরেও আমি বেহায়ার মতো হাত বাড়িয়ে দিয়াল। আমি তাকে হাত বাড়িয়ে দিলাম উঠে দাড়ানোর জন্য, কিন্তু সে উঠে দাড়ানোর পরেও কিভাবে আমার হাত ধরে ছিলো,তার তো এই হাত ধরারই কোনো অধিকারই নেই তারপরেও এই হাতটা ধরতে দিলাম কিন্তু ধরে রাখতে না।
আমি সোজা মোবাইল নিয়ে ক্লাবের বারান্দায় চলে যাই সেখানে যেতেই রিদিকা উপস্থিত।
–তুমি এখানে, সৌরভ ভাইয়া তোমাকে তার কাছে যাইতে বলছে! (রিদিকা)
–আচ্ছা আসতেছি!(আমি)
চিন্তা করলাম তানভিরকে পরে কল দিবো তাই একটা মেসেজ দিয়ে দিলাম বলে দিলাম পরে কথা বলবো ক্লাবের ভিতরে নেট নাই,এরপর আমি রিদিকা সহ সৌরভের কাছে যেতে লাগি!ক্লাবের ভিতরে স্টেজের কাছে যেতেই রিদিকা আমাকে দাড়াতে বলে!
–কি হইছে দাড়াতে বলছো কেন!(আমি)
–স্টেজটা অনেক সুন্দর করে সাজাইছে তাই না! চলো না কয়েকটা ছবি তুলবো স্টেজে!(রিদিকা)
–ছবিটা পরে তুলিও এখন আগে সৌরভ কেন ডাকছে সেটা দেখা দরকার,তাছাড়া সৌরভের সাথে কে কে আছে! (আমি)
–শুধু মুন্নি আছে! (রিদিকা)
–তুমি কি বেক্কেল নাকি।এভাবে সৌরভকে একা রেখে আসে নাকি!বরের সাথে কমপক্ষে ৩জন থাকতেই হয়,আর তুমি বলতেছো ছবি তুলবা! চলো তারাতারি!(আমি রেগে)
বলেই আমি যেতে লাগি দেখলাম রিদিকা আমার দিকে মন খারাপ করে তাকিয়ে আছে কিন্তু আমি সেটা দেখেও না দেখার ভান করে সৌরভের কাছে চলে গেলাম দেখলাম বরকে দেখার জন্য অনেকেই রুমে আসছে আমি গিয়ে দেখি সৌরভ একটু uneasy feel করতেছে,তাই আমিও সৌরভের সামনে দাড়ালাম। আমাকে দেখে মোটামোটি সে একটু সস্থি বোধ করতেছে আসলেই এই সময় বরকে একা রাখা ঠিক না, কারন সে একটা থাকলে অসস্থী বোধ করবে কিন্তু আসে পাশে যদি তার কেউ থাকে তাহলে মোটামোটি ভালোই ফিল করবে, সৌরভ আমাকে দেখে তার পাশে বসতে বলে কিন্তু যেহুতু মুরব্বী আছে রুমে তাই এখন তার কাছে যেতে পারবো না একটু দূর থেকেই তার খেয়াল রাখতেছি,রুম খালি হতেই আমি সৌরভের কাছে গিয়ে বসলাম।
–ভাই কই ছিলি তুই!এভাবে একা রেখে চলে গেছিস সালা জানিস কতোটা uneasy লাগতেছিলো!(সৌরভ)
–আরে ভাই প্যারা নাই চিল, আমি আছি তো,(আমি)
–এমনে গেছিলি কই!(সৌরভ)
–কল আসছিলো কিন্তু ক্লাবের ভিতরে নেট নাই তাই বাহিরে গেলাম,ঐ মুন্নি কই!(আমি)
–তোরে খুজতে পাঠাইছিলাম, এখনো আসে নাই!(সৌরভ)
এরই মধ্যে রুমে মধ্যে ৭,৮টা মতো মেয়ে উপস্থিত, সে গুলো আর কেউ না সৌরভের শালিকাগন, সামনে কয়েকজনকে দেখলাম পিছনের গুলোকে দেখতে পেলাম না, যাই হোক দরকার কি!
–ভাই তোর শালিকাগন আসতেছে টাকা পয়সা যা আছে আমার থেকে দে নাহলে লুট হবি তুই!এমনেও গেটে কম লুট হোস নাই!(আমি)
সাথে সাথে সৌরভ তার মানিব্যাগ + সাথে আরো টাকা পয়সা ছিলো আমার থেকে দিয়ে দেয়,এরই সৌরভের শালিকাগন সৌরভের সাথে ফাইজলামি করতে লাগে তারা সৌরভের সেই ভাবে মজা নিতেছে আর আমিও মজা নিচ্ছি তাদের কান্ড দেখে। এবার আমাকে ধরলো তারা!আমার সাথে ফাইজলামি করতেছে তারা আমি ক্ষেয়াল করলাম রিদিকা আমার দিকে অন্য ভাবেই তাকায় আছে।
–তো ভাইয়া আপনি আমাদের আদরের দুলাভাইয়ের কি হোন!(একটা মেয়ে)
–জি বলতে পারেন, ফ্রেন্ড হই। !(আমি)
–ও ভাইয়া আপনি কি বিবাহিত!(আর একটা মেয়ে)
–কেন আপু আমাকে দেখে যেটা মনে হয় আমি সেটা!(আমি)
–আপনাকে দেখে দুইটা মনে হচ্ছে! এক সময় মনে হয় বিবাহিত আবার কিছুসময় মনে হয় বিবাহিত না!আচ্ছা বলেন না!( মেয়ে একটা)
–জী আপু,আপু আমি বিবাহিত না অবিবাহিত তা জেনে কি করবেন! আমার জন্য মেয়ে দেখবেন নাকি!(আমি)
–যদি প্রয়োজন হয় তাহলে দেখলাম (মেয়েটা)
–তোমাদের কষ্ট করে মেয়ে দেখতে হবে না তার জন্য অলরেডি রেডি আছে। (সৌরভ)
এরই মধ্যে আংকেল উপস্থিত হয় আর বলে সৌরভকে নিয়ে স্টেজে যেতে, আমিও সৌরভকে ভালোভাবে রেডি করে দিলাম তার সেরোয়ানি পাগড়ি ঠিক করে দিলাম তারপর আমি রিদিকা সহ সৌরভকে নিয়ে যেতে লাগি।আমরা রুম থেকে বেরিয়ে সোজা স্টেজের দিকে যেতে লাগি, সৌরভকে নিয়ে স্টেজে উঠতেই দেখলাম আপু দুলাভাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে তারা আমার থেকে চোখ সরাচ্ছেই না আমি সেটা দেখেই সাথে সাথে তাদের থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম আর সৌরভকে স্টেজে বসিয়ে দিলাম এরপর সুন্দর করে সেখান থেকে যেতে লাগি কারন ফটোগ্রাফার আসছে বরের ছবি তুলার জন্য তাই আমিও স্টেজ থেকে নিচে যেতে নিবো তখনি সৌরভ ডাক দেয় আর বলে কোথাও না যেতে স্টেজেই থাকতে,তাই আমিও কথা মতো স্টেজের এক কোনায় দাড়াই, সেখানে দাড়িয়ে নিচের মানুষ দেখতে লাগলাম সেখানে এক সাইডে দেখলাম মায়াও দাঁড়িয়ে আছে, সেও আমার দিকেই তাকিয়ে আছে, আমি আবার সেই সাইডে তাকালাম যেখানে আপু দুলাভাই আছে, কিরে মানেটা কি! একসাইডে আছে আপু দুলাভাই অন্য সাইডে আছে মায়া। আমি একটা জিনিস বুঝতে পারতেছি না তারা আলাদা আলাদা কেন দাঁড়িয়ে আছে। নাকি তারা একে অপরকে দেখেই নাই!এটা তো সম্ভব না তারা যেখানেই যাক না কেন একত্রেই থাকে তাহলে বিয়েতে তারা একজোরা একসাইডে আবার মায়া আর একসাইডে দাঁড়ায় আছে,বিয়েতে তো তারা আসছেই তাহলে আলাদা থাকার প্রশ্নই আসে না।তারা কি জানেই না যে তারা একই বিয়েতে আসছে?।তাদের সাথে কতো মিল মিশ বিশেষ করে দুলাভাই আর মায়া তো ক্লোজ ভাই বোন অথচ এখন দেখি তারা আলাদা আলাদা ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। বিষয়টা সত্যি আমাকে ভাবাচ্ছে।
আমি স্টেজের মধ্যেই আছি স্টেজের ডান দিকেই দাঁড়িয়ে আছে মায়া আবার স্টেজের ঠিক বাম দিকে বরাবর দাঁড়িয়ে আছে দুলাভাই ও আপু!বিয়েতে সকলের চোখ থাকে বর ও কোনের দিকে কিন্তু আমার বোন দুলাভাই ও মায়ার চোখ শুধুই আমার দিকেই আছে, আমি আর একটা জিনিস লক্ষ করলাম আপু সেখানে দাঁড়িয়ে আছে তো বটে কিন্তু তার চোখে পানি দেখতে পাচ্ছি আর অন্যদিকে মায়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম তার চোখ গুলো লাল হয়ে আছে, না যা হোক না কেন এদের দিকে তাকানোটা আমার ভুল তাদের দেখেও না দেখার ভান করি দরকার এই তাদের দেখার, কোনো মানেই হয়না তাদের দিকে তাকানোর। তাই আমিও সেই মানুষগুলোর দিকে তাকানো বাদ দিলাম আর বিয়ের অনুষ্ঠানে মনোযোগ দিলাম, এরই মধ্যেই সকলে উপস্থিত হয় আর বিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়,তারপর রেজিস্ট্রির কাজ শুরু হয় সেখানে বিয়ে সাক্ষী সরূপ প্রথমে মামা সাক্ষর করে এরপর ২য় সাক্ষী হিসেবে আমাকে সাক্ষর করতে বলা হয় আমিও সাক্ষর করলাম এরপর আসল কাজ শুরু হয়, তারপর বর কনেকে সাক্ষর করতে দেওয়া হয় এরপর বিয়ে পড়ানো শুরু হয় আর আল্লাহর রহমতে সেটাও সম্পন্ন হলো।যার জন্য খেজুর বিতারন করতেছে, এর কিছুক্ষন পরেই কনেকে থুক্কু আমাদের ভাবিকে নিয়ে এসে বরের পাশে থুক্কু সৌরভের পাশে বসিয়ে দিলো এরপর আর কি বিয়েতে যা হয় সেটাই হচ্ছে ক্যামেরা ম্যানরা ছবি তুলতে ব্যস্থ আর আমিও দেখতেছি, সকলেই বর কনের সাথে ছবি তুলতে ব্যস্থ তখনি সৌরভ আমাকে ডাক দেয় আর রিদিকাকেও ডাক দেয় আমরা দুজনেই একত্রে স্টেজে উঠলাম আর আমাদেরও বর কনের সাথে ছবি তুলতে লাগলো,ছবি তোলা শেষ করে নিচে যেতে রিদিকা টান দিলো!
–কি হইছে!(আমি)
–আমার কিছু সিংগেল ছবি তুলে দাও!(রিদিকা)
–কেন সেল্ফি নিতে পারো না, সারাক্ষন তো সেটাই করো, আর তাছাড়াও আমাকে কি ক্যামেরা ম্যান মনে হয় যে আমি ছবি তুলে দিবো!(আমি)
–আরে ছবি তুলতে হলে কি শুধু ক্যামেরা ম্যান হতে হয় নাকি, জাষ্ট ক্লিক করবা এটাই!(রিদিকা)
–আমাকে যেতে হবে, ঐদিকে সৌরভ একা!(আমি)
–সৌরভ ভাইয়া একা না সেখানে অনেকেই আছে, আর এমন করো কেন তুমি!জাষ্ট ছবি তুলে দিলে কি হয়!(রিদিকা)
এরই মধ্যেও মুন্নিও আসে,
–কি হইছে ভাইয়া ও আপু, কোনো সমসা!(মুন্নি)
–যাক তুই আসলি!এরে কয়েকটা ছবি তুলে তো আমার অন্যদিকে যেতে হবে, (আমি)
–অন্য দিকে গেলে যাইয়ো!এই মুন্নি এক কাজ কর, আমাদের কয়েকটা ছবি তুলে দে তো!(রিদিকা)
–মাত্র বললা তোমার সিংগেল ছবি তুলবা এখন আমাকে টানতেছো কেন!(আমি)
–আরে দুজনেই তো একই কালারের ড্রাসআপ করছি, একসাথে ছবি গুলো ভালো আসবে তাই! (রিদিকা)
–আসলেই ভাইয়া দুজনকে একসাথে ছবিতে বেশ মানাবে,আরে ভাইয়া এটা জাষ্ট পিক, থাক তুলে নাও,(মুন্নি)
–আরে তুলে নাও মানে সে তুলবেই, মুন্নি তুই তোল তো ছবি!(রিদিকা)
বলেই তার হাত দিয়ে আমার হাত জড়িয়ে ধরে আছে আর এক এক পোজ দিচ্ছে মুন্নিও ছবি তুলতে লাগে,তবে বিষয়টা আমার থেকে কেমন জেন ফিল করাচ্ছে মানে বিরক্ত বোধ করতেছি আমি,কারন আমি চাইছিলাম রিদিকা থেকে একটু দূরুত্ববজায় রাখবো কিন্তু পরিস্থিতির কারনে সেটা হতেই দিচ্ছে না, রিদিকাও আমার সাথে চিপকে আছে আর ছবি তুলতেছে,হঠাৎই একজায়গায় আমার চোখ গেল, দেখলাম আপু দুলাভাই দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু তাদের সামনেই মায়া দাঁড়িয়ে আছে ও তাদের দেখেই যাচ্ছে অথচ আপু দুলাভাই মায়ার দিকে তাকাচ্ছেই না, মানে মায়া যে তাদের নিকটে আছে সেটা তারা খেয়াল করার কথা ও ডেকে কথা বলার কথা,আমি আরো দেখলাম আপু মায়ার দিকে তাকালো কিন্তু রিয়েক্টই করে নাই, এটা কি হচ্ছে, আমার থেকে কেন যেন মনে হচ্ছে এরা মায়াকে এড়িয়ে চলতেছে, কিন্তু কি কারনে তা-ই আমার অজানা,পরে ভাবতে লাগলাম আমি এদের নিয়ে এতো কেন ভাবছি এটা তাদের ব্যক্তিগত বেপার এটা নিয়ে ভাবার আমি কেন,দরকার নেই তাদের ফেলেমি ম্যাটার নিয়ে নাক গলানোর!আমিও তাদের নিয়ে ভাবা বন্ধ করলাম,কিছুক্ষন পরেই খাওয়া দাওয়ার আয়োজন শুরু হয়,মেহমানরা খাওয়া দাওয়া ব্যস্থ, তবে আমরা এখন খেতে পারবো না আংকেল বলছে আমি রিদিকা ও মুন্নি যেন সৌরভ ও ভাবির সাথে বসি,তাই আমরা বর কনে নিয়ে মজা করতে ব্যস্থ।আমরা স্টেজে আছি আর আমিতো সৌরভের বেশ মজাই নিতেছি,তখনি আমি খেয়াল করলাম আপু দুলাভাই খাবার খাওয়ার জন্য টেবিলে বসছে, মেঝাজটাই খারাপ হয়ে গেলো বারবার কেন এই মানুষগুলোর দিকেই আমার চোখ যায়,তখনি দেখলাম মায়াও আপুর সামনেই বসে সাথে সাথে আপু হঠাৎ রেগে যায় আর রাগি অবস্থায় মায়াকে কি যেন বলে আর টেবিল থেকে উঠে যায় সাথে দুলাভাইও, এরপর পরই মায়াও উঠে যায়, এবার কেন জানি জিনিসটা ভালো লাগলো না,আপুর মায়ার প্রতি এই আচরন দেখে কেন জানি মনে খটকা লাগলো,তাই আমিও স্টেজ থেকে নেমে যাই আর মায়া কোথায় গেছে দেখতে লাগি, আমি গিয়ে দেখি মায়া ক্লাবের এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে, আমি আড়াল থেকে মায়াকে দেখতে লাগলাম আমি দেখলাম মায়া কান্না করতেছে, বিষয়টা সত্যি আমাকে অবাক করে দিলো,যে আপু মায়ার জন্য আমাকে জানোয়ার পর্যন্ত বলল এবং চড়ও দিলো আর সেই আপু কিনা মায়ার সাথে এই বিহেব করলো,আমার মনে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগলো, কি এমন ঘটলো যে আপু মায়ার সাথে এখন এমন বিহেব করলো?বা কেনই বা আপু মায়ার সাথে এই রকম আচরন করলো??
মায়ার চোখের পানি দেখে আমার ভিতরটা ব্যাথা করতে লাগলো!,হয়তো সে আমার সাথে ভালোবাসার নাটক করছিলো কিন্তু আমি তো তা করি নাই,আমি তো মায়াকে সত্যিকারেই ভালোবাসছিলাম তাই তার এই চোখের পানি আমাকে ভিতরে ভিতরে যন্ত্রনা দিচ্ছে।
আমি আড়ালেই দাড়িয়েই মায়াকে দেখতে লাগি হঠৎই কেউ একজন পিছন থেকে আমাকে টেনে ক্লাবের এক কোনায় নিয়ে যায়, আমি দেখলাম সে আর কেউই না রিদিকা!
–কি হইছে তোমার!আমাকে এভাবে টেনে আনছো কেন!(আমি)
–তোমার কি হইছে হ্যা,(রিদিকা রেগে)
–আমার কি হইছে মানে,আমার আবার কি হবে,কিন্তু তুমি এভাবে আমাকে টেনে আনলে কেন!সমস্যাটা কি তোমার!(আমি)
–সমস্যা আমার না, সমস্যা হচ্ছে তোমার,বিয়ে বাড়িতে আসতেই দেখলাম তোমার হাবভাব চেঞ্জ হয়ে গেলো,ছ্যাচড়ামিও শুরু করে দিলা(রিদিকা)
–মানে, আমি কখন কার সাথে ছ্যাচড়ামি করলাম!(আমি)
–ছ্যাচড়ামি করো নাই তাই না, দেখলাম তো মেয়ে পেয়েই শরীরের হাবভাব চেঞ্জ হয়ে গেলো,(রিদিকা)
–মানে!কি বলতে চাচ্ছো, আমি ছ্যাচড়া, তো কি ছ্যাচড়ামি করলাম আমি!(আমি)
–কি ছ্যাচড়ামি করছো তাই না!রুমের মধ্যে কতোগুলো মেয়েকে পেয়ে তাদের সাথে ফ্লাট করতে শুরু করে দিলা,এখন আবার একটা মেয়েকে ফলো করতেছো ও তাকে লুকাই লুকাই দেখতেছো,এই সব ছ্যাচড়ামি না,(রিদিকা)
–তোমার সমস্যাটা কি আমাকে বলো তো!এটা বিয়ে বাড়ি এখানে সকলের সাথে হাসিমুখে কথা বলা উচিত এবার যদি মেয়েও হয়ে থাকে তাদের সাথেও, যদি তাদের সাথে আমি হাসিখুশি ভাবে কথা না বলতাম তাহলে বেপারটা খারাপ দেখাতো,আর কথা রইলো মেয়েগুলোর সাথে ফ্লাট করার, জানি না তুমি কয়টা বিয়ে এটেন্ড করছো,বিয়ে বাড়ির সম্পকে জানো কিনা,বিয়ে বাড়িতে সাধারনত এই রকম কথাবার্তা হয়েই থাকে তাও মজার জন্য, আর মনে হয় তুমি আমার কথাগুলো খেয়াল করো নাই,তাই মনে করছো আমি ফ্লাট করছি,শুনো ফ্লাট করার যদি ইচ্ছা থাকতো তাহলে তাদের সুপারিস করতাম তাদের নাম্বারও নিতাম বা আরো কথা আছে যা বলে ফ্লাট করা যায় তাই বলতাম কিন্তু তাদের সাথে জাষ্ট সিমপল ভাবে কথা বললাম,আর কথা রইলো এই মাত্র যে মেয়েটাকে ফলো করলাম ও আড়াল থেকে দেখেই যাচ্ছি সেটার কারনও বলে দেই,আমি স্টেজে থাকা অবস্থায় মেয়েটাকে টেবিলে একজনের সাথে কথা বলতে দেখলাম যার সাথে কথা বলতেছিলো সে মেয়েটার সাথে খারাপ ব্যবহার করে এরপর চলে যায়, আর মেয়েটাও টেবিল থেকে উঠে কোথাও যেতে লাগে, আমার থেকে বিষয়টা ভালো লাগে নি ও মনে অন্য খেয়ালও আসতে লাগে তাই মেয়েটাকে ফলো করি ও দেখতে লাগে মেয়েটা যায় কই,করে কি!বাহ রিদিকা বাহ এই তো সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলা তোমার মনে আমার জন্য কেমন খেয়াল আছে আর আমাকে কেমন চোখে দেখো!ভালোই তো,আসলেই আমি ছ্যাচড়া, তাই একটা কাজ করো আজ থেকে আমার সাথে আর কথা বলিও না কারন একটা ছ্যাচড়ার সাথে কোনো ভালো মেয়ে কথা বলতেই পারে না!পরে সেই ছ্যাচড়ার ছ্যাচড়ামি ভালো মেয়ের উপর প্রভাব পড়তে পারে, তাই এই মুহুত্ত থেকেই আমার থেকে নিজেকে দূরে রাখো!(আমি)
–সরি অন্তর,আমার ভুল হয়ে গেছে! (রিদিকা করুন গলায়)
–না এটা ভুল না,বরং এটাই ঠিক, এখন থেকে আমার থেকে দূরে থাকবেন আমার আশেপাশে আসার চেষ্টাও করবেন না, (আমি)
বলেই সেখান থেকে যেতে লাগি রিদিকা বারবার আমাকে ডাকতে লাগে কিন্তু আমি তার সেই ডাকে কান দেয় না,আসলে আমি রিদিকাকে ২য় ঘটনার পূরা সত্যিটা বলি নাই,শুধু অল্পটুকুই বললাম,আর ভালোই হইছে রিদিকার মনে আমার জন্য এমন মনোভাব আসছে যার জন্য আমিও একটা সুযোগ পেয়ে গেলাম তার থেকে দূরে থাকার।আর সুযোগটা পেয়েই আমি হাত ছাড়া না করেই সেই সুযোগ ভালোভাবেই কাজে লাগিয়ে দিলাম।এখন থেকে আর এর সাথে তেমন কথা বলতেও হবে না,দূরেও থাকতে পারবো,আর আমাকে যথা চেষ্টা করেই যেতে হবে রিদিকা থেকে দূরে থাকার কারন রিদিকার হাভভাব আমার মোটেও ভালো লাগছে না, তাছাড়াও যাদের জন্য আমার অস্তিত্ব টিকে আছে আমি চাই না আমার কোনো কর্মকান্ডে তারা কষ্ট পাক,বা তাদের কাছে আমি কোনো কারনে খারাপ হয়ে যাই।
দেখলাম মেহমানদের প্রায় খাওয়া শেষ এরপর বর বউ সহ আমরাও খাবার খেতে বসলাম,আমি সৌরভের ডান পাশে বসলাম সৌরভের বাম পাশে আমাদের নতুন ভাবি বসে ও তার পাশেই রিদিকা বসে, আবার আমার পাশে মুন্নি বসে, এরপর খাওয়ার পর্ব শুরু হয়,আমরা বেশ মজা মাস্তি করতে করতেই খাবার খাচ্ছি, তবে আমি খেয়াল করলাম রিদিকা কোনো কিছুই খাচ্ছে না,তার চোখ লাল হয়ে আছে আর চোখে পানি জিমে আছে আর খাবারের প্লেটে আঙ্গুল দিয়ে এই দিক ঐদিক করেই যাচ্ছে কিন্তু খাচ্ছে না,তাই আমি সৌরভকে একটু ধাক্কা দিলাম ও রিদিকা খাচ্ছে না যে সেটা দেখালাম,
–কিরে রিদিকা,খাচ্ছিস না কেন!(সৌরভ)
–না ভাইয়া আমার খেতে ইচ্ছা করতেছে না, আমার ক্ষিদা নেই,(রিদিকা ছোট গলায়)
–ক্ষিদা নেই মানে,এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না, তুই যদি এমন করিস তাহলে কিন্তু আমি এখান থেকে ডাইরেক্ট উঠে যাবো!(সৌরভ)
এরপর সৌরভ জোর করে, রিদিকাও আস্তে আস্তে খেতে লাগে,আমিও খাচ্ছি তখনি মনে পড়লো মায়ার কথা,আমি দেখছিলাম সে না খেয়েই উঠে যায় ও ক্লাবের এক কোনায় দাঁড়ায়,এখন জানি না সে খাওয়া দাওয়া করছে কিনা, তাই চিন্তা করলাম এটা খবর নিতে হবে, জানি সে আমার অনেক বড় ক্ষতি করছে আমাকে অপরাধী বানিয়ে দিলো,তারপরেও আমার মনটা না মেয়েটাকে ভিষন ভালোবাসছিলো তাই তাকে দেখার পরে আমার মনের অনেক অভিযোগ হুট করেই চলে যায়,আমি ভুলেই যাই গা যে সে আমার অনেক বড় ক্ষতি করছিলো,যাই হোক সে আমার ক্ষতি করছে তাই বলে আমিও তার ক্ষতি করতে হবে এটা তো না,যদি আমিও তার ক্ষতি করি তাহলে তার আর আমার মধ্যে পাথ্যর্ক কোথায় থাকবে, তাই চিন্তা করলাম খাওয়া দাওয়া শেষ করে তার খোজ নিয়ে দেখবো সে খাওয়া দাওয়া করছে কিনা আমিও তাড়াতাড়ি খেয়ে নিলাম, খাওয়া শেষ করেই আমিও ওয়াশরুমের বেসিনে চলে যাই হাত ধুতে, আমিও হাত ধুতে ব্যস্থ, হাতে হ্যান্ডওয়াস লাগিয়ে হাত ধুচ্ছি তখনি পিছন থেকে কেউ একজন আমাকে শক্ত জড়িয়ে ধরে ও কান্না করতে লাগে।
চলবে…………..
ভুলক্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।আর লাইক ও গল্প ভিত্তিক কমেন্ট করে পাশে থাকুন।নাইস নেক্সট বলা থেকে বিরত থাকুন।বিনা অনুমতিতে কপি করা নিষেধ।সেয়ার করুন আর পরর্বতি পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন।
বিদ্রঃ গতকাল গল্প দেই নাই তার জন্য সরি,আসলে একটু সমস্যায় পড়ে গেছিলাম, তাই গল্প দেওয়া হয় নাই,তবে দিন দিন আমার গল্প লিখার আগ্রহটা শেষ হয়ে যাচ্ছে কারন দেখলাম অনেকেই আছে যারা গল্পটা পড়ে লাইক কমেন্ট করে না তবে হ্যা লাইক আসে না যে সেটা বলছি না তবে কমেন্টে অনেকেই নাইস নেক্স এই সব কমেন্ট করে যা আমার দিন দিন গল্প লিখার আগ্রহটা শেষ করে দিচ্ছে, তাই বিনিত অনুরোধ আপনারা নাইস নেক্স এই সব কমেন্ট না করে গল্প ভিত্তিক কমেন্ট করুন,প্রশ্ন করুন,আর পর্বের কোন জায়গা ভালো কিংবা খাবার লাগছে সেটা বলুন,কারন নাইস নেক্স এই সব দেখে প্রায় বিরক্ত। তাই সকলে গল্প ভিত্তিক, ও প্রশ্ন ভিত্তিক কমেন্ট করার চেষ্টা করবেন।
পার্ট 11
https://www.facebook.com/groups/315195763809014/permalink/399279482067308/
পার্ট9
https://www.facebook.com/groups/315195763809014/permalink/399278782067378/