অপরাধী পর্ব-৭

0
1332

#অপরাধী
#লেখক_অন্তর
পর্ব_৭
,
,
,
পিছনে ঘুরতেই আমি পূরাই নিস্তব্দ হয়ে গেলাম সেই ডাক দেওয়া ব্যক্তিকে দেখে!কারন সেই ব্যক্তিটা আর কেউই না আমার আপন বোনের স্বামী! মানে আমার দুলাভাই!

দুলা ভাইকে দেখেই আমার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো,আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি!

–আরে এই যে ভাই, আপনার ওয়ালিট পড়ে গেছে এই নেন!(দুলাভাই)

আল্লাহ কি করতেছো আমার সাথে, একের পর এক পরিচিতদের সাথে দেখা করাচ্ছো কেন আমার সাথে,এক মিনিট দুলাভাই আমাকে দেখে এভাবে ভান করতেছে কেন যে সে আমাকে চিনেই না!

আমি পরে দেখলাম আমার মুখে মাস্ক লাগানো তাই দুলাভাই হয়তো আমাকে চিনে নাই সাথে সাথে আমিও ওয়ালিটটা নিয়ে নিলাম,

–জি ধন্যবাদ,(গলা একটু ভার করে)

–আরে ভাই রাস্তায় চলা ফেরা করেন একটু দেখে শুনে চলা ফেরা করবেন আর নিজের জিনিস পত্রের দিকেও একটু ক্ষেয়াল রাখবেন, এখন যদি আমি আপনাকে আপনার ওয়ালিট ফিরিয়ে না দিতাম তাহলে কি হতো,যদি এখানে আপনার প্রয়োজনিও কোনো কিছু থাকতো পরে আপনিও পাগলের মতো খুজতেন,নেক্স টাইম নিজের জিনিসে একটু খেয়াল রেখে চলা ফেরা করিয়েন,চলি!(দুলাভাই)

বলেই চলে যেতে লাগে আর,আমি তো মনে করছিলাম সে আমাকে চিনে ফেলবে কিন্তু ভাগ্যিস মাস্কটা বাচিয়ে দিলো আমাকে,কিন্তু বারবার কেন সেই মানুষ গুলোর সাথে দেখা হচ্ছে যাদের থেকে আমি নিজেক দূরে রাখতে চাই,না আমাকেও একটু সাবধানে চলা ফেরা করতে হবে, আমি চাই না তারা জানুক আমি এই এলাকায় আছি,আমিও হাটা দিলাম দেখলাম রিদিকা মুন্নি ও সৌরভ ভাই দাঁড়ায় আছে, আমিও তাদের কাছে গেলাম।

–আরে অন্তর ভাই,কই ছিলেন!আপনার জন্য দাঁড়ায় আছি আমরা!(সৌরভ)

–আরে ভাই,একটু কথা বলতেছিলাম, (আমি)

–ধুর মিয়া বাহিরে এসেও মোবাইল নিয়ে ব্যস্থ হয়ে পড়ছেন,কি ভাই gf tf আছে নাকি আপনার!(সৌরভ)

–না ভাই,আমার ঐসব নাই,না আমার হবেও কোনো দিনও, এই সব জিনিসে জড়াতে চাই না আমি!(আমি)

–কি বলেন ভাই,আপনার gf নাই,এটা কোনো কথা, আপনারে দেখে তো মনে হয় ৩,৪ টা থাকবোই আপনার।আচ্ছা বাদ দেন, ভাই প্রায় দুপুর হয়েই গেছে, চলেন এক জায়গায় যাবো,(সৌরভ)

–ভাই বলছেন বাড়ি যাবেন এখন আবার কই যাবেন!(আমি)

–আরে ভাই চলেন তো!(সৌরভ)

এরপর সৌরভ ভাইয়ের সাথে যেতে লাগি সে আমাদের একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায়!

–আরে ভাই এখানে আনলেন কেন!(আমি)

–আরে ভাই, একটু মজা মাস্তি করতে আসলাম আরকি!এখন বসেন আর অডার করেন, (সৌরভ)

–ধুর ভাই,আমার কিছু খাওয়ার ইচ্ছা নাই!(আমি)

–ভাই এই জন্যই তো আপনার এই হাল!না খেয়ে খেয়ে কেমন হয়ে আছেন, খাওয়া দাওয়া করবেন একটু স্বাস্থ্য বানাবেন,না খেয়ে কাঠ বডি হয়ে আছে আপনার!নাকি বউয়ের আদর পাওয়ার জন্য এই রকম হয়ে আছেন যাতে বউ আদরে স্বাস্থ্যবান হয়ে উঠেন!(সৌরভ)

–আর বউ,যেখানে নিজে বাচবো কিনা তার গ্যারান্টি নেই সেখানে বউ এর চিন্তা করা এটা এক টাইপের বোকামি,(আমি)

–বাচবা না মানে!কি উল্টা পাল্টা কথা বলতেছো এই সব!মুখে দিয়ে যাই আসে তাই বলে ফেলো কেন!উল্টা পাল্টা বলা বন্ধ করো!এই সব উল্টা পাল্টা কথা আর কখনোই যেন না শুনি আমি!(রিদিকা রেগে)

রিদিকার ধমক শুনে আমি তো পূরাই থ হয়ে গেলাম,কিরে ভাই,হঠাৎ রিদিকার আবার কি হলো!এমন রিয়েক্ট করলো কেন সে!আমি আমার পরিস্থীতি হিসাব করেই কথাটা বললাম কিন্তু সে এভাবে রিয়েক্ট করলো কেন,তার তো রিয়েক্ট করার কোনো মানেই হয় না!

রিদিকার এই আচরমটা আমার কেন জানি মনে খটকা নিয়ে আসলো!

–ধুর ভাই এই সব কথা বলিয়েন না, আর সকলে যার যার পছন্দের জিনিস অডার দেন,(সৌরভ)

–ভাই,আমার সত্যি খাওয়ার ইচ্ছা করতেছে না!(আমি)

–এই ভাই এটা কিন্তু বেশি হইতেছে, আপনাদের এখানে আমি খুশি মনে আনলাম,আর আপনি কিনা এমনটা করতেছেন,ভাই কিছু একটা অডার দেন নাহলে কিন্তু কষ্ট পাবো!(সৌরভ)

–কিন্তু ভাই!(আমি)

–কোনো কিন্তু না ভাইয়া!অডার দাও!(সৌরভ)

তাদের জোরাজোরিতে খাবার অডার দিলাম এরপর আমরা চার জনেই দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম।এরপর সৌরভ ভাই খাবার বিল দিয়ে দিলো আর আমরা রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে সোজা সৌরভ ভাইদের বাড়িতে চলে যাই আর সেখানে গিয়ে যে যার যার রুমে চলে যায়।আমিও আমার রুমে এসে মুখ হাত ধুয়ে নি আর খাটে হেলিয়ে শুয়ে পড়ি! আর চোখ বন্ধ করতেই কখন ঘুমিয়ে পড়ি নিজেও জানি না!

সন্ধার সময়!

ঘুমাচ্ছিলাম, কিন্তু দরজার নক করার আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে যায়, আমিও উঠে পড়ি দেখি সন্ধ্যা হয়ে গেছে আর আমিও দরজার কাছে গেলাম ও দরজা খুললাম দেখলাম সৌরভ ভাই দরজায় উপস্থিত!

–ভাই ঘুমাইতেছিলেন নাকি!(সৌরভ)

–না ভাই,আসলে দুপুরে খাটে একটু শুয়ে ছিলাম আর কখন যেন চোখ লেগে যায়, (আমি)

–আচ্ছা বাদ দেন,যান ফ্রেস হয়ে হল রুমের দিকে আসেন!সকলে আপনার জন্য অপেক্ষা করতেছে(সৌরভ)

–আচ্ছা ভাই,আসতেছি!(আমি)

এরপর সৌরভ ভাইও চলে যায় আর আমিও ফ্রেস হয়ে নিলাম এরপর সোজা হল রুমে ডাইনিং টেবিলে দিকে গেলাম দেখলাম সকলেও বসে আছে!

–কিরে,রুম একটা পাইছিস আর কি তাই বলে সেই রুম থেকে বাহির হইতে মন চায় না তোর!(মামা)

–আরে মামা,আমি বিছানায় একটু শুইছিলাম কোন সময় চোখ লেগে যায়, এখন এতে আমার কি দোষ!(আমি)

–আচ্ছা যা বয়,(মামা)

আমিও বসতে যাবো তখনি দেখলাম রিদিকার পাশের সিট খালি, কিছু করার নেই তাই সেখানেই বসতে হলো, তবে আজকে রিদিকার ব্যবহারটা আমাকে বারবার ভাবাচ্ছে,থাক সেই চিন্তা বাদ দিলাম, এরপর সুন্দর করে নাস্তা করে নিলাম, নাস্তা শেষ করে আমি আমার রুমের দিকে গেলাম সেখানে গিয়ে বসে বসে মোবাইলে ফেইসবুক চালাচ্ছি তখনি দেখলাম সৌরভ ভাই মুন্নি রিদিকা উপস্থিত।

–ভাই কি করতেছেন ব্যস্থ নাকি??(সৌরভ)

–না ভাই ব্যস্থ না এমনেই একটু মোবাইলে fb চালাচ্ছিলাম আরকি!আরে ভাই বাহিরে কেন আপনারা ভিতরে আসেন!(আমি)

এরপর তারাও ভিতরে আসে,

–না মানে চিন্তা করলাম সকলে মিলে আড্ডা দেই, আসলে বোর লাগতেছিলো তাই!(সৌরভ)

–আসলেই ভাই,আমার নিজেরই বোর লাগতেছে! (আমি)

এরপর আর কি আমরা সকলেই আমার রুমে জমিয়ে আড্ডা দিতে লাগলাম, এভাবে তাদের সাথে মেলা মেশাতে আরো কয়েকটা দিন পার করেই দিলাম,

*সৌরভ এর হলুদ সন্ধায়!

–অন্তর, বাবা স্টেজ কি ভালো করে সাজানো হইছে (আংকেল)

— না আংকেল, কিছু ফুল লাগানো এখনো বাকি আছে আর যে গ্যাট আছে সেটা একটু ডেকোরেট করাই বাকি!এমনে বাকি সব শেষ!(আমি)

–ঠিক আছে বাবা, তুমি এই দিকটা সামলাও আমি আর তোমার মামা একটু বাজারের দিকে যাচ্ছি কিছু জিনিস সেখান থেকে এখনো আনা হয় নাই!(আংকেল)

–আংকেল এক কাজ করেন, আপনি এখানে থাকেন,আমি বাজারের দিকে যাই!(আমি)

— আরে না তুমি এখানে থাকো!কারন এই দিকটা তুমি সামলাচ্ছো এখন যদি আমি সামলাতে শুরু করি তাহলে জিনিসটা পূরাই খারাপ হয়ে যাবে কারন তোমার আর আমার চিন্তা ভাবনা মিলবে না, পরে সৌন্দরটা মাটি হয়ে যাবে।(আংকেল)

–আচ্ছা, তবে আংকেল প্রোগ্রাম কখন শুরু করবেন?(আমি)

–৯ঃ০০ দিকে শুরু করবো, (আংকেল)

–আচ্ছা সমস্যা নাই হয়ে যাবে!(আমি)

–আচ্ছা আমি গেলাম, তুমি কাজ করো!(আংকেল)

বলেই চলে গেলো আর আমিও আমার কাজে ব্যস্থ হয়ে পড়ি,আংকেল আমাকে দায়িত্ব দিছে স্টেজ, ও বাড়ি সাজানোর,মানে আমি যেভাবে যেভাবে বলবো সেভাবেই লোকগুলো সাজাবে মানে আমাকে ওয়েডিং প্লেনার এর কাজ দিয়ে দিছে আংকেল, আর আমিও যথেষ্ট চেষ্টা করতেছি নিজের দায়িত্ব পালন করার জন্য, বেশ লাগতেছে, আসলেই বসে থাকতে আমার নিজের থেকে কেমন যেনো বোর লাগে, তবে আগে অনেক গুলো বিয়েতে ছিলাম সেখানে ততটা ভালো লাগলো না যতোটা এই বিয়েতে লাগতেছে।এখানে দেখলাম সকলেই আমাকে মূল্যায়ন করতেছে, আমাকে বিভিন্ন কাজ্র ডাকছে বেশ ভালোই লাগতেছে, এই কয়েক দিনের মধ্যেই আংকেল আন্টি দের সাথে ভালোই ভাব হয়ে গেছে আমার!আর সৌরভ তো পূরাই বন্ধু হয়ে গেলো,আর মুন্নি সাথে আমার আগে যেমন সম্পর্ক ছিলো এখনোই সেই সম্পর্কই আছে শুধু আমাদের সম্পকের এতোটুকুই পরির্বতন হইছে মুন্নি আগে আমাকে আপনি আপনি করে বলতো আর এখন সে তুমি করেই বলে, যেখানে ভাই বোনের মধ্যে যেমন সম্পক হয়,আমাদেরও সেটাই হয়ে গেছে প্রায়!বোন হচ্ছে সে যে আমাকে জালাবে আবার কেয়ারও করবে, মুন্নিও সেটাই করতেছে আমার সাথে, বোন হয়ে অধিকারও খাটায় আবার বোন হওয়ার দায়িত্ব পালন করছে সে।

–অন্তর ভাইয়া!(মুন্নি)

আমি দেখলাম মুন্নি আমাকে ডাকতেছে! আমিও তার কাছে গেলাম!

–হ্যা বলো!কি হইছে!(আমি)

–ভাইয়া,সৌরভ ভাইয়া তোমাকে ডাকতেছে, তার একটু যাও তো!(মুন্নি)

–আচ্ছা এদের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে যাচ্ছি!তুমি যাও!(আমি)

মুন্নি চলে গেলো আর সেখানে যারা সাজাচ্ছিলো তাদের স্টেজের কাজটা ভালো করে বুঝিয়ে দিলাম এরপর এক পলক গেটের কাছে গেলাম গেট সাজানো হইছে কিনা দেখতে, তারা হলুদ মেহেদির অনুষ্ঠান্টা বাড়িতেই করতেছে। আসলে এটাই সুন্দর বাড়িতে করতেছে কোনো সমস্যা হলে তাও খুব সহজে সমাধান করা যাচ্ছে যদি কোনো ক্লাবে হতো তাহলে অনেক সময় সমস্যস দেখা যায়, আমি গেটের দিকে গিয়ে গেট সাজানো সেই লোক বলি তারাতারি কাজ সম্পন্ন করতে কারন প্রোগ্রাম শুরু হতে হাতে গনা দেড় ঘন্টাই আছে এর মধ্যে আরো কিছু কাজ আছে। এরই মধ্যে মেহমানও আসা শুরু হয়ে গেছে, মেহমানের দায়িত্বটা আংকেলই নিছে কারন সেই মেহমানদের চিনে।আমি সোজা সৌরভ এর রুমে চলে গেলাম!দরজার সামনে গিয়ে দরজায় নক করলাম!সৌরভ দরজা খুলে দিল!

–কিরে ভাই তুই!তুই দরজা নক করতেছিস কেন,সোজা ডুকে যাবি না!নক করার কি আছে! (সৌরভ)

–নক করার কি আছে মানে,এটা একটা আদব বুঝছিস,এখন বল ডাকছিস কেন!(আমি)

–আরে ভাই আমি কি বলতাম, পাঞ্জাবির অভাব নাই কিন্তু পড়বো কোনটা সেটাই বুঝতেছি না!, হলুদ পড়বো নাকি কালো পড়বো সেটাই বুঝতেছি না!(সৌরভ)

–ঐ হলুদ আর কালো মানে,তোর কাছে সাদা পাঞ্জাবি নাই??(আমি)

–আছেরে ভাই,কিন্তু সেটা পড়লে নিজেরে কেমন জানি নরমাল নরমাল দেখায়!(সৌরভ)

–হ,স্টেজে তো ফ্যাশেন সো চলতেছে সে, সেখানে তুমি র‍্যম্পওয়াক করবা তাই না!আরে বেটা হলুদে বর পড়ে সাদা এতে কয় কালো না হলুদ পড়বো!বেটা আবুল যদি তুই কালো, হলুদ বা অন্য কালারের পাঞ্জাবি পড়িস না তাহলে তোরে দেখে কেউ মনেই করবো না যে তুই বর!সবাই বরকে খুজতে লেগেই পড়বো(আমি)

–কিন্তু ভাই সাদা একটু বেশিই নরমাল হয়ে যাচ্ছে না!আর এটাতে হলুদ লাগলে তো তা র্স্পষ্ট দেখা যাবে!(সৌরভ)

–এটা তো সাভাবিক!দেখা যেতেই পারে, তবে আমার মতে বরের সাদাটাই পড়া উচিত কারন হলুদে সাদা পাঞ্জাবি বররাই পড়ে, তাই সাদা পাঞ্জাবি পড়, আর যদি তোর ইচ্ছা হয় তাহলে তুই তোর পছন্দের কালারের পাঞ্জাবি পড়ে নে!(আমি)

–আচ্ছা ঠিক আছে সাদাই পড়বো,কিন্তু আমাকে মানাবে তো!(সৌরভ)

–আরে ভাই শুন,অন্য দিন সাদা পাঞ্জাবি না মানালেও হলুদের দিন বরকে ঠিকি সাদা পাঞ্জাবি মানায়!(আমি)

–ঠিক আছে আমি পড়তেছি,কিন্তু আর একটা কথা, ভাই স্টেজে যাওয়ার আমার সাথে থাকিস, আমার না কেন জানি লজ্জা লাগতেছে! (সৌরভ)

–ভাই লাগতেই পারে, এটাই সাভাবিক, লাগবে না কেন তুই কি আগেও বিয়ে করছিলি নাকি যে প্রথমে সরম লাগলেও এখন লাগবো না, আরে ভাই নতুন বরের হলুদ বিয়ে আর বিয়ের কয়েকমাস একটু লজ্জা কাজ করবেই এরপর আস্তে আস্তে লজ্জা কেটে যাবে!(আমি)

–কিরে ভাই,তুই এতো কিছু জানিস কি করে!তুই কি বিয়ে সাদি করে ফেলছিস নাকি!(সৌরভ মজা করে)

–হ করছি তো,আমার ১০টা সন্তান আছে,জানিস না,আচ্ছা বাদ দে তুই রেডি হ আমি যাই!(আমি মজা করে)

–আচ্ছা, আর দাড়া তুই রেডি হচ্ছিস না কেন!(সৌরভ)

–আরে ভাই আমি তো আর বর না যে আমার টাইম লাগবে, শুধু রুমে যাবো ব্যাগ খুলবো পাঞ্জাবি বের করবো পড়ে নিবো!(আমি)

–হ,যা তুইও তাড়াতাড়ি রেডি হ,আর নাহলে একটা কাজ কর,আমার এখান থেকে একটা পাঞ্জাবি পড়ে নে!(সৌরভ)

–ভাই সিরিয়াসলি!তোর পাঞ্জাবি আমি পড়লে আমারে কিরকম দেখাবে একটু ভেবে দেখ ভাই!😶(আমি)

কথাটা বলতেই সাথে সাথে সৌরভ হাসতে লাগলো,

–ভাই সাব, সরি ভাই ভুল হয়ে গেছে, আমার পাঞ্জাবি পড়লে মনে করবো বাবা মা ছেলের জন্য সখ করে পাঞ্জাবি কিনছে যাতে এক সাথে একটা পাঞ্জাবি দিয়ে কয়েক বছর কাটাতে পারে।এই জন্যই বলি ভাই খাওয়া দাওয়া কর একটু স্বাস্থ্য বানা!(সৌরভ)

–হইছে, মজা লইছস,খুশি!(আমি)

এরই মধ্যে মুন্নি রুমে আসলো!

–অন্তর ভাইয়া,তোমাকে রিদিকা আপু কেন জানি খুজতেছে! (মুন্নি)

–আচ্ছা ওরে বলো আসতেছি!কোথায় সে!

–আপু আমার রুমে আছে!(মুন্নি)

–আচ্ছা ওরে বলো কিছুক্ষন পরে আসতেছি!(আমি)

–না ভাইয়া এখনি যাইতে বলছে কি জেন কাজ আছে! (মুন্নি)

–ঠিক আছে আসতেছি(আমি)

মুন্নি চলে গেলো,আর আমিও সৌরভকে রেডি হতে বলে চলে গেলাম রিদিকার কাছে, জানি না হঠাৎ করে কেন ডাক দিলো সে!আমিও মুন্নির রুমের দিকে গেলাম রুমের কাছে গিয়ে দরজায় নক করলাম!

–রিদিকা,রুমে আছো!(আমি)

–হ্যা ভিতরে আসো!(রিদিকা)

আমিও ভিতরে গেলাম, ভিতরে গিয়ে রিদিকাকে দেখে নিমিশেই টাস্কি খেয়ে গেলাম, কারন রিদিকা সেজে গুজে বসে আছে, আমি তাকে দেখে তো পূরাই অবাক হয়ে গেলাম কারন সে হলুদ শাড়ি পড়ছে যেটাতে সবুজ রঙ্গের পায়ের আছে মানে যে শাড়িগুলো সাধারনত মেয়েরা হলুদে পড়ে সেটাই পড়ছে সে, কি বলবো আমি তাকে যা লাগতেছে আমার চোখ সরাতেই পারছি না!

–এই এই কি দেখো হ্যা!(রিদিকা)

কথাটা বলতেই আমার ঘোর কাটলো!

–না মানে কিছু না, আমাকে ডাকছিলা নাকি!(আমি)

–হ্যা ডাকছি, এই দিকে আসো! (রিদিকা)

আমিও রিদিকার কাছে গেলাম, কাছে যেতেই সে আমাকে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিলো!

–যাও এটা পড়ে আসো!(রিদিকা)

–এটা পড়ে আসতে মানে!কি এটা!আমাকে দিচ্ছো কেন!(আমি)

–এটা যাই হোক না কেন,আর আমার ইচ্ছা হইছে তাই দিচ্ছি!(রিদিকা)

–ইচ্ছা হইছে মানে,আর কি এটা, (আমি)

–এটা পাঞ্জাবি,এখন আর কথা বলিও না যাও চুপচাপ এটা পড়ে আসো!(রিদিকা)

–পাঞ্জাবি বুঝলাম কিন্তু আমি পড়বো কেন!(আমি)

–তোমাকে দিচ্ছি কেন মানে, এটা তোমাকে পড়তে দিচ্ছি ব্যাস পড়বা এতো প্রশ্ন করতেছো কেন!(রিদিকা)

–সরি আমি এটা নিতে পারবো না (আমি)

–নিতে পারবা না মানে!আমি দিছি মানে নিতেই হবে! আর কথা বলে আমাকে রাগিও না, (রিদিকা প্রায় রেগে)

–আরে অন্তর ভাইয়া এতো সুন্দর করে দিছে তোমাকে পড়ে আস না, অনেক সক করেই দিছে তোমাকে!(মুন্নি)

–কিন্তু আমি তো চাই না, আর আমার লাগবেও না, (আমি)

–মানে তুমি এটা পড়বা না তাই তো!(রিদিকা রেগে)

–হ্যা,আমি এটা পড়তে পারবো না (আমি)

–ঠিক আছে, যেহুতু এটা পড়বাই না তাহলে এটাকে এভাবে রেগে দেওয়ার কোনো মানেই হয় না, (রিদিকা)

বলেই রিদিকা কোথায় যেন চলে যার আবার ফিরে আসে,দেখলাম তার হাতে লাইটার!

–আরে লাইটার নিলের কেন!(আমি)

–যেহুতু এটা পড়বাই না তাই এটা এভাবে রেখে দেওয়ার মানেই হয় না তাই এটাকে পুড়ে ফেলাই ভালো!(রিদিকা)

বলেই লাইটারের আগুন জালায়!

–লাষ্টবার বলতেছি এটা পড়বা কি না! (রিদিকা লাইটারে আগুন ধরিয়ে প্যাকেটের সামনে নিয়ে)

–আচ্ছা আচ্ছা পড়বো,এই দিকে দেন!(আমি)

–এই তো,লাইনে আসছে, আমি জানি তো কিভাবে কি করলে তোমাকে লাইনে আনা যাবে, এই নাও,যাও এটা পড়ে আসো!(রিদিকা আমাকে প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে)

আমিও নিয়ে নিলাম আর চলে গেলাম নিজের রুমে এরপর প্যাকেট খুললাম দেখলাম এখানে একটা হলুদ পাঞ্জাবি আছে তার সাথে দুটো সেন্টু গ্যাঞ্জি আর পায়জামা আছে, আমি পাঞ্জাবি র সাইজ দেখলাম সে আমার সাইজেরই পাঞ্জাবি আনছে, কিন্তু প্রশ্ন হলো সে কখন আনলো এটা আর এর চেয়েও বড় প্রশ্ন সে কেনই বা আমাকে এই সব দিলো।কিছুই মাথায় ডুকতেছে না আমার।

আমি পাঞ্জাবি পায়জামা পড়ে নিলাম আর সেটা পড়ে আয়নার সামনে দাড়ালাম দেখলাম পূরাই অবাক কারন আমার সাইজের পাঞ্জাবি মানে সাইজে কোনো কম বেশি নেই,সাইজ একদম পার্ফেক্ট।হলুদ পাঞ্জাবি ও সাদা পায়জামা পড়া অবস্থায় নিজেকে দেখে হিমু হিমু ফিল আসতেছে। আমি পূরাই থ হয়ে রইলাম।এরপর আমি হাল্কা করে চুল ঠিক করে নিলাম তারপর সোজা মুন্নির রুমের দিকে গেলাম।

–আসতে পারি!(আমি)

–জী আসেন, (রিদিকা)

আমি রুমে প্রবেশ করলাম, রুমে প্রবেশ করতেই দেখলাম মুন্নিও রিদিকা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে,তারা এমন ভাবে তাকিয়ে আছে মনে হয় কোনো অবাকর কিছু দেখে ফেলছে তারা!

–আরে আজব, এভাবে কি দেখেন!জানি আমাকে আদু ভাইয়ের মতো লাগতেছে!(আমি)

–কি বললে তুমি,কিসের মতো লাগতেছে!(রিদিকা রেগে)

–আরে আজব, কথায় কথায় এভাবে রেগে যাও কেন!(আমি)

–অন্তর ভাইয়া, আপনাকে কিন্তু হেব্বি লাগতেছে!(মুন্নি)

–এই মুন্নি এভাবে নজর দিবি না বলে দিলাম,(রিদিকা)

–আরে আপু সত্যি ভাইয়া অনেক সুন্দর লাগতেছে, পাঞ্জাবিটা বেশ মানাইছে তাকে!(মুন্নি)

–তাহলে এক কাজ করে আমার আর ওর কয়েকটা ছবি তুলে দে!(রিদিকা)

–আচ্ছা আপু!(মুন্নি)

রিদিকা মোবাইল বের করে মুন্নিকে দিলো তখনি আমি আংকেলের ডাক শুনতে পেলাম,

–সরি লেডিস, আমি গেলাম আমার ডাক আসছে!আপনাদের সাথে পড়ে দেখা করতেছি!(আমি)

বলেই আংকেলের কাছে চলে গেলাম,

–আংকেল আমাকে ডাকছেন!(আমি)

আমার কথা শুনে আংকেল আমার দিকে তাকালো,সেও আমার দিকে তাকায় আছে,

–আরে আংকেল আমাকে ডাকছেন!(আমি)

–আরে বাবা, তোমাকে তো অনেক সুন্দর লাগতেছে পাঞ্জাবিটায়,ওহ,হল রুমে গেষ্ট আসছে তুমি একটু যাও দেখো তাদের কি লাগে না লাগে! (আংকেল)

–আচ্ছা আংকেল আমি যাচ্ছি!(আমি)

এরপর আমি হল রুমে গেলাম সেখানে দেখলাম বহুত মানুষ তাই আমিও সেখানে গিয়ে মেহমানের আপ্পায়নের কাজে ব্যস্থ হয়ে পড়ি কাজের লোকরা মেহমানদের সরবত নাস্তা দিচ্ছে আর আমিও তাদের সাথে আছি তাদের কাজে সহযোগিতায়,

দেখলাম এক রুমের থেকে মেহমান্দের আওয়াজ পাচ্ছি তাই আমিও দুজনকে নিয়ে নাস্তা সরবত সহ সেই রুমে যাই আর সেখানেও প্রায় ১০ জনের মতো ছিলো তাদের সরবত নাস্তা দিতে ব্যস্থ আমি এরপর এক ট্রে সরবত নাস্তা নিয়ে আমি হাসি মুখে কয়েকজনে কাছে গেলাম সেখানে নাস্তা দিতে লাগলাম আর কয়েকজনকে নাস্তা দিতে গিয়েই আমার যে হাসি খুশি মুখ ছিলো তা মুহুত্তের মধ্যেই হাওয়া হয়ে গেলো।

চলবে…………..
ভুলক্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।আর লাইক ও গল্প ভিত্তিক কমেন্ট করে পাশে থাকুন।সেয়ার করুন আর পরর্বতি পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন।
পার্ট 8
https://www.facebook.com/groups/315195763809014/permalink/398329612162295/

পার্ট 6
https://www.facebook.com/groups/315195763809014/permalink/398329315495658/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here