#অপরাধী
#লেখক_অন্তর
পর্ব_৮
,
,
,
সরবত নাস্তা দিতে ব্যস্থ আমি, এরপর এক ট্রে সরবত নাস্তা নিয়ে আমি হাসি মুখে কয়েকজনে কাছে গেলাম সেখানে নাস্তা দিতে লাগলাম আর কয়েকজনকে নাস্তা দিতে গিয়েই আমার যে হাসি খুশি মুখ ছিলো তা আর রইলো না, মুহুত্তের মধ্যেই হাওয়া হয়ে গেলো। হাসিটা উড়ে গেলো শুধু তাই না বরং আমার হোসই উড়ে গেলো।কারন নাস্তা দিতে এতোটাই ব্যস্থ হয়ে পড়ছিলাম যে আমি খেয়ালই করি নাই যে, রুমে কে কে আছে বা আমার পরিচিত কেউ আছে কি না,বা আমাকে আগে চেক করে নেওয়া দরকার ছিলো কিন্তু নাস্তার বিলি করতে যে এই মানুষগুলোর সামনে গিয়ে পড়বো তা ভাবনার বাহিরে ছিলো আমার, আর আমি আগেই বলছিলাম সেই মানুষগুলোর সামনে আসতে চাই না যারা আমাকে ভুল বুঝছিলো,কিন্তু শেষমেষ কিনা এদের সামনে পড়বো তা আমার ভাবনার বাহিরে ছিলো,আর যাদের দেখে আমার হোস উড়ে যায় তারাও অবাক চোখে এক নজরেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে, তারা আর কেউই নয় আমার নিজের আপন বোন ও তার স্বামী মানে আমার দুলাভাই।
তাদের দেখেই আমার শরীর স্থীর হয়ে গেলো,কিন্তু কি করবো তা ভেবে পাচ্ছি না আমি!কারন রুমে শুধুবতারাই নয় বরং আরো লোক জন ছিলো, না পারবো থাকতে না পারতেছি পালাতে,কি করবো মাথা কিছুতেই কাজ করছে না, পরে আমি আর কোনো কিছু না করে তাদের সুন্দর মনে নাস্তাটা দিয়েই কেটে পড়লাম আর তাদের দেখে এমন ভান করলাম যেন তাদের আমি চিনিই না।তাদের দেখে কোনো রিয়েকশনই করলাম না, বরং শান্ত ভাবেই সেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।রুম থেকে বের হতেই আমার চলার গতি বারিয়ে দিলাম আর সোজা ছাদে চলে গেলাম।আমি কি করে এতোটা বোকা হয়ে গেলাম, আমি তো তাদের এলাকায় আসছি তাহলে কিভাবে ভুলে গেলাম তারা এখানে আসবেই,আমি তো চাইছি তাদের থেকে আড়ালে থাকতে, আমার একবার চেক করে নেওয়া দরকার ছিলো রুমের মধ্যে কে কে আছে আমিও খুশির ঠেলায় ভালো ভাবেই ধরা খাইছি,না আমি আর সেখানে যাবোই না আমি প্রয়োজনে অন্য কোথাও চলে যাবো কিন্তু তাদের সামনে আর যেতে চাই না যদি তারা ফাংশনে আমাকে নিয়ে কোনো উল্টা পাল্টা কিছু করে বা মেহমানদের সামনে আমাকে নিয়ে কোনো সিন ক্রিয়েট করে পরে বিয়ের আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে সাথে সকলের সামনেও আমি খারাপ হয়ে যাবো।এর চেয়েও ভালো আমি কোনো এক কোনায় গিয়ে আড়াল থাকি। আমি এই সব ভাবতেছি তখনি দেখলাম আমার মোবাইলে কল বেজে উঠে,দেখলাম রিদিকা কল দিচ্ছে, কিন্তু রিসিব করার মতো সেই মনমানসিকতা নেই আমার,তাই রিসিব করলাম না, একের পর এক কল আসতেছে তো আসতেছে, কিন্তু মোবাইল সাইলেন্ট করে রাখছি,আর চুপচাপ ছাদের মধ্যে এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছি, আপু দুলাভাইকে দেখে আমার সেই অতিতের কথা মনে পড়ে গেলো,আর সেই অতিতের কথা মনে পড়তেই চোখ দিয়ে পানি বেয়ে পড়ছে, কারন তারা আমার সাথে কি করছিলো, যে আপুর কাছে আমি ছোট থেকে বড় হইছিলাম সেই আপুই আমাকে খারাপ ভাবলো, আর আমার সব চেয়ে কষ্ট লাগলো আপুর চড়টা, যা আমাকে দিছে আমার প্রতি ঘৃনা ভরা মন নিয়ে।অথচ সে বলতো সে নাকি আমাকে ভালো করে চিনে,কারন ছোট থেকেই আমি আপুর আদরের ভাই ছিলাম আমার হাবভাব সবই আপু জানে,কিন্তু সে আমাকে কেমন চিনলো তার প্রমান দিয়ে দিলো সে দিন।যে আপুর হাত আমার গাল চোখ মুছে দেওয়ার জন্য দিতো,সেই হাতেই আমাকে চড় চিলো।আর সেই দিনই তার প্রতি আমার মনে যতো ভালোবাসা স্নেহছিলো সবই চলে যায়। আমি আপুর সেই সকল কথা ভাবছি যে কি করে সে আমাকে এভাবে অবিশ্বাস করলো।যে আপুর মুখে আমি সব সময় মিষ্টি গলায় ডাক শুনতাম সেই আপু আমাকে ঘৃনা ভরা মুখে অনেক কথা বলল ও আমাকে জানোয়ার বলল।আপন মানুষগুলোর কাছ থেকে যখন কেউ খারাপ কথা শুনে তখন কারই বা না খারাপ লাগবে আর যদি সেই মানুষ গুলো জীবিনের অংশ হয়ে থাকে তাহলে তো পূরা কলিজায় চিড়ে ফেলে সেই কথা গুলো,আপুর কথাগুলো আমার এতোটাই খারাপ লাগছিলো সেই দিন পারতেছিলাম না আমি কোনো এক কোনায় গিয়ে কান্না করতে কিন্তু বলে না ছেলেদের কান্না করতে নেই,তারপরেও কথাগুলো বেশি খারাপ লাগাতে আড়ালেই কেদে গেলাম।আর আপু শেষ কথা বলছিলো আমার মতো জানোয়ার নাকি তার ভাই হতে পারে না, এই কথাটা যদি কোনো বোন তার ভাইকে বলে তাহলে তার খারাপ লাগবেই না কেন!সে আমাকে তার ভাই হওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে দিলো।আমি দেখলাম বারবার আমার মোবাইলে কল আসতেছে তবে এবার দেখি সৌরভ কল দিচ্ছে! তাই রিসিব না করে থাকতে পারলাম না।
–হ্যালো, হ্যা বল!(আমি)
–কিরে কই তুই!ভাই তোর কি বলছিলাম, আমার সাথে থাকতে বলছিলাম না, কিরে ভাই কিছুক্ষন পরেই তো অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে,ভাই প্লিজ তারাতারি আয়!(সৌরভ)
–সৌরভ আমি একটু ব্যস্থ আছিরে, এক কাজ কর তোর ফ্রেন্ড সার্কেল দের বল তোর সাথে থাকতে, (আমি)
–ধুর বেটা,তুই আয় কারন তোর কথাবার্তা শুনে যা বুঝলাম তোর এই সিচুয়েশন সামলানোর অনেক এক্সপিরিয়েন্স আছে, আমার ফ্রেন্ডরা এই সব জানে না,ভাই তুই আয়!(সৌরভ)
–ভাই সিচুয়েশন সামলানোর কিছুই নেই জাষ্ট যাবি আর স্টেজে বসবি এতোটুকুই!(আমি)
–আমি এতো কিছু জানি না মোট কথা তুই এখনি রুমে আয়, নাহলে সালার স্টেজরে গুল্লি মারি, আমি যাবোই না!(সৌরভ)
–আচ্ছা, আসতেছি,তুই রুমে থাক!(আমি)
বলেই কল কেটে দিলাম,কি এক পরিস্থীতির সম্মুখীন করলা খোজা, যতো চাই আড়ালে থাকতে ততোই তুমি আমাকে সকলের সামনে প্রকাশ করতে ব্যস্থ,আমি কি একটু শান্তি পাবো না,এখন কিছুই করার নেই আমার সৌরভ একটা খালি কল দিচ্ছে এই দিকে রিদিকা কল দিচ্ছে এই দিকে আপু দুলাভাইয়ের জন্য আড়ালে থাকতে চাইতেছি কোন দিকে যাবো আমি!কি করবো ভেবে পাচ্ছি না,এখন সৌরভের কাছে না গেলে সে নাকি স্টেজে যাবে না,এখন সেখানে গেলেও সমস্যা,না যেতেই হবে কিছুই করার নেই,এখন শুধু আল্লাহর উপর ভরসা।এরপর আমি চোখ মুখে ছাদ থেকে সোজা সৌরভের রুমে গেলাম।
রুমে প্রবেশ করতেই দেখি রুমে রিদিকা মুন্নিও উপস্থিত। আর সৌরভ আমার দিকে তাকায় আছে!
–কিরে ভাই, তোরে তো সেই লাগের পাঞ্জাবিটায়!ভাই সাব আজকেই অনুষ্ঠানে যতোগুলো মেয়ে আসবে তোরে দেখে ফিদা হয়ে যাবে রে মামা!(সৌরভ)
সে আমার কাছে মজা করতেছে কিন্তু আমার মজা করার মন মানসিকতা নেই, আমি চুপচাপ নিস্তব্দ হয়ে দাঁড়ায় আছি।কারন আমার মধ্যে কি চলতেছে সেটা কেবল উপরওয়ালা ও আমিই জানি।
–ভাইয়া, বাদ দেন তো,আর এই তোমাকে কয়বার কল দিছি, রিসিব করো নাই কেন (রিদিকা)
–আমি এমনে এমনে বেড়াচ্ছিলাম না কাজে ব্যস্থছিলাম, পরে ফ্রি হয়ে দেখি সৌরভ কল দিছে, তারপর রিসিব করে কথা বললাম!(আমি)
–এক মিনিট দাড়া, তোর চোখে কেন!তুই কি কান্না করতেছিলি(সৌরভ)
–আরে কই,কান্না করতেছিলাম, কাজ করতে করতে হঠাৎ করে চোখে কি জেন ডুকে যায় তাই চোখে পানি,দাড়া আমি একটু চোখে পানি দিয়ে আসি,চোখ চুলকাচ্ছে৷ (আমি)
এরপর আমি ভালো করে মুখ ধুয়ে নি, তারপর তাদের কাছে যাই!
–সৌরভ ভাইয়া, আপনি আর অন্তর একত্রে দাড়ান দুজনের কয়েকটা ছবি তুলে নি!দুজনকেই সেই লাগতেছে! (রিদিকা)
–হ্যা,এই অন্তর, আয় আমার পাশে দাড়া কয়েকটা ছবি তুলে নি!(সৌরভ)
–ধুর ভাই,ভালো লাগে না ছবি তুলতে!(আমি)
–চুপ বেটা,সালা আয় তো!(সৌরভ)
এরপর সৌরভের জোরাজুরিতে তার পাশে দাড়ালাম আর রিদিকাও ছবি তুলতে ব্যস্থ,ছবি তোলার পর,আমি খাটের মধ্যে বসতে যাবো তখনি সৌরভ ডাক দেয়!
–এই অন্তর, তুই আর রিদিকা প্রায় সেইম কালারের ড্রেস আপ করছিস,এক কাজ কর দুজনেই একসাথে দাড়া তোদের কয়েক ছবি তুলে নি, এরপর আমরা ৪ জনেই গ্রুপ সেইলফি নিবো!(সৌরভ)
–আরে ভাই এমনে গ্রুপ সেলফি নে না!(আমি)
–কেন, আমার সাথে ছবি তুলতে কোনো সমস্যা আছে!(রিদিকা)
–জি হ্যা,আমার gf দেখলে রাগ করবে!(আমি)
–বউ থাকতে আবার gf কে খুজো কেন!(রিদিকা)
–বউ থাকিতে আবার gf কে খুজি কেন মানে!(আমি)
–মানে বুঝতে হবে না!(রিদিকা)
–ধুর, তোরা এই সব দিবি,কিছুক্ষন পরেই আমাদের যেতে হবে, ভাই তারাতারি কয়েকটা ছবি তুলে নেই!(সৌরভ)
এরপর সৌরভ আমার আর রিদিকার কিছু ছবি তুলে নেয় তারপর তারা গ্রুপ সেল্ফি নিতে ব্যস্থ!কিন্তু আমার মনে অন্য কিছুই চলতেছে,তারা খুব হাসি খুশি মুহুত্ত পার করতেছে তবে আমি তাদের উপরে হাসি রূপটা দেখাচ্ছি কিন্তু ভিতরে যে কষ্টটা আছে তা কেবল আমি ও উপরওয়ালাই জানে!এরই মধ্যে আংকেল রুমের দরজায় আসে আর বলে সৌরভকে নিয়ে স্টেজে যেতে এরপর চলে যায়।আমি কি করে সেখানে যাবো তা ভেবে পাচ্ছি না কারন সেখানে মেহমানদের মধ্যে আপু দুলাভাইও থাকবে। কিন্তু না যেয়েও পারবো না, কারন সৌরভ যেভাবে ফোর্স করছে আমাকে না গিয়েও পারবো না।এরপর আমি আগে রিদিকা ও মুন্নিকে পাঠিয়ে দিলাম এরপর সৌরভকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগি,এরপর সোজা তাকে নিয়ে স্টেজে বসিয়ে দি!আর আমিও যেতে লাগি।
–ঐ কই যাস!ভাই আমার সাথে থাক!(সৌরভ)
–আরে ভাই আমি আছি,তুই জাষ্ট রিলেক্স কর।আমি এখানেই আছি যা লাগবে আমাকে ইশারা দিবি ওকে!(আমি)
এরপর আমি স্টেজ থেকে নেমে স্টেজের পাশেই দাঁড়িয়ে আছি, এর মধ্যে দেখলাম রিদিকাও মুন্নি স্টেজে গেলো আসলে আমি অনেক বিয়ের হলুদে দেখছি যে বরকে তার বোনেররা একটা রাখি পড়ায়, ঠিক সেটাই রিরিকা ও মুন্নি করতেছে, রাখি পড়ানো শেষ এরপরেও তারা বসে আছে যা দেখে সৌরভ আমার দিকে তাকায়ছে! আমি ইশারা দিয়ে বললাম টাকার জন্য বসে আছে তারা,কিন্তু এতে বুঝতেছে না পরে আমাকে স্টেজে যাইতে বলে আমিও গেলাম।সৌরভ আস্তে করে আমাকে বলতে লাগে
–কিরে কি বলতেছিস আর এই গুলো, এভাবে তাকায় আছে কেন!(সৌরভ)
–টাকা নিবার জন্য বসে আছে! বুঝোস না, বোনেরা রাখি বাধে আর বাধার উপহার সরূপ তাদের কিছু হাত খরচ দেওয়া লাগে! (আমি)
–ও এই বেপার!তো কত দিমু!(সৌরভ)
–দুই দুই করে ৪ দে!(আমি)
–মানে দুজনকে ২শ করে ৪শ দিবো!(সৌরভ)
–ধুর বেটা, ২টাকা করে দুই জনে ৪টাকা দিয়ে বিদাই কর,তবে হ্যা টাকা এমন ভাবে দিবি ভিতরে কত আছে তা যেন না দেখা যায়!(আমি)
–ঠিক আছে দাড়া! (সৌরভ)
আমি।চিন্তা করলাম বিয়ে বাড়ি তাই এটাকে একটু মজার করা প্রয়োজন তাই এই বুদ্ধিটা দিলাম।
সৌরভও দুই টাকার দুইটা নোট নিয়ে ডান হাতের মুঠে নেয় ও তাদের দিতে লাগে!আর রিদিকাও সুন্দর করে মুঠে নিয়ে নেয়,বুঝতেই পারে নাই তাদের কতো ধরাইছি আমরা,এরপর রিদিকা মুট খুলে দেখে তাদের আমরা ২টাকার ২টা নোট ধরাই দিছি!যা দেখে রিরিকা ও মুন্নি পূরাই রেগে যায়। আর আমাদের এই কান্ড সেখানে উপস্থিত সকলেই দেখতেছে ও হাসতেছে।
–এটার মানে কি ভাইয়া!৪টাকা!দিলেন এটা কি ধরনের ফাইজলামি! এতো সুন্দর করে আমরা দুই বোনে আপনাকে রাখি পড়িয়ে দিলাম আর আপনি কিনা!(রিদিকা)
–আরে তোমরা সুন্দর করে রাখি পড়িয়ে দিছো আর সেও খুশি মনে তোমাদের বকশিশ দিলো,এতে তো রাগার কিছুই নেই!(আমি)
–রাগার কিছু নেই মানে,এই ফাইজলামিটা নিশ্চই তুমি শিখাই দিছো,দাড়াও তোমাকে পরে দেখতেছি আগে ভাইয়াকে দেখি,ভাইয়া এটা কিন্তু ঠিক না, আমি আপনাকে বিশ্বাস করে মুঠের টাকাটা নিছি এখন এখানে যে দুনাম্বারি করবেন তা জানতাম না!(রিদিকা)
–সরি আমারটা আমি দিয়ে দিছি,এখন আর দিতে পারবো না যদি আগেই এক্সকিউজ দিতা তাহলে কিছু একটা করা যেত কিন্তু নিয়ে নেওয়ার পর এখন এটা বলে আর লাভ হবে!(সৌরভ)
–না ভাইয়া এটা হবে না,আমি এতো কিছু জানি না, টাকা না দিলে বিয়েই করতে দিবো না! (রিদিকা)
–সৌরভও দেখে নিবো আমি থাকতে বিয়ে কেমনে না হয়!(আমি)
–আরে সৌরভ দিয়ে দে বেচারিদের এভাবে হতাশ করিস না!(আংকেল)
–না আংকেল দেওয়া হবে না, এই গুলো রাখি বাধার নামে লুট করার ধান্ধা, এই সৌরভ এই ২টাকা রাখিটা খুলে দিয়ে দে!(আমি)
–দুই টাকা রাখি না এটা,আর তাছাড়াও রাখি বাধতে আমাদের যে শক্তি খরচ হইছে সেটা!আমরা টাকা চাই মানে চাই!(রিদিকা)
–এহ কি কষ্ট হইছেরে বাবা,জাষ্ট একটা গেরোই তো দিছে তাতে আবার কিসের কষ্ট,হুদাই টাকা মারার ধান্ধা!(আমি)
–তুমি কিন্তু বেশি করতেছো,মাথা গরম করিও না নাহলে সোজা এবার তোমার কপালে দুঃখ আছে! বেশি করবা তো এবার টাকা তোমার থেকেও নিবো!(রিদিকা)
–আরে অন্তর হইছে আর করিস না, আর সৌরভ দিয়ে দে রে বাবা, কেন এই মেয়েগুলোকে এভাবে হতাশ করতেছিস!(আংকেল)
–দে সৌরভ দিয়ে দে,এই আধুনিক ভিখারিরা যেভাবে ভিক্ষা খুজতেছে, দিয়েই দে, থাক আর মজা নেওয়া ঠিক হবে না(আমি)
–এই কি বললা তুমি!আমরা ভিখারি!(রিদিকা রেগে)
–ও তোমর ভিখারি না, তাহলে সৌরভ টাকা দেওয়া লাগবে না,তারা টাকা চায় না!(আমি)
–থাক অন্তর আর মজা নিস না, আর এই নাও তোমাদের বকসিশ!(সৌরভ বলেই রিদিকার হাতে ৫০০টাকার ২টা নোট ধরিয়ে দিলো!
–এই তো পেয়ে গেছি,থ্যাংইউ ভাইয়া,আর এই তোমাকে পরে দেখতেছি আমি!(রিদিকা)
বলেই সেই টাকা নিয়ে মুন্নিকে সহ স্টেজ থেকে নেমে গেলো আর আমিও সরে গেলাম এরপর শুরু হলো হলুদ লাগানোর কার্যক্রম,স্টেজে গিয়ে সকলেই হলুদ লাগাতে ব্যস্থ প্রথমে বরের বাবা মা, এরপর তার আত্মীয় সজন,তারপর পাড়ার প্রতিবেশি একের পরে এক সকলেই গেলো আর আমিও স্টেজের সাইডে দাড়িয়ে দেখতে লাগলাম,তখনি মনে পড়লো যে আপু দুলাভাইও এখানে উপস্থিত, আমি আনন্দের মুহুত্ত গুলোতে এতোটাই মগ্ন হয়ে ভুলেই গেছি তারাও এখানে আছে।তারা কি আমাকে স্টেজে দেখছে নাকি!আর যদি দেখেও থাকতো তাহলে আমার সামনে আসতো! নাকি আমাকে এতোই ঘৃনা করে যে মুখমুখি হতেও চায় না,যদি তা হয় তাহলে আমার জন্যই ভালো কারন তারা এখন আমাকে এখন ঘৃনা করুক বা আমাকে ভালোবাসুক আমার কিছুই যায় আসে না, আমি শুধু তাদের আমার চোখের সামনে দেখতে চাই না এতো টুকুই,আমিও এবার কিছুটা সস্তি নিয়ে সেই অনুষ্ঠানটা উপভোগ করতে লাগি,এর মধ্যেই আংকেল আমার কাছে আসে।
–অন্তর, স্টেজে যাও আর সৌরভকে হলুদ লাগাও যাও!(আংকেল)
–আরে আংকেল লাগবে না, (আমি)
–আরে যাইতে বলছি না এতো কথা বলো কেন!(আংকেল)
–আরে বাবা যাও,এই কয়েক দিনে দেখলাম তুমি সৌরভের অনেক ক্লোজ হয়ে গেলে, প্রতিটা ক্ষেত্রেই সৌরভ তোমার থেকে পরামর্শ নেয়,তোমার কথা শুনে,আর এখন স্টেজে না গেলে সেও মন খারাপ করবে, যাও বাবা!(আন্টি)
–আরে আন্টি, আমি এখানেই ঠিক আছি!(আমি)
আমি দেখলাম সৌরভ আমাকে ইশারা দিয়ে স্টেজে আসতে বলতেছে। আমিও গেলাম,
–কিরে ডাকলি কেন!(আমি)
–ডাকছি কেন মানে,কিরে সবাই হলুদ লাগালো তুই আমাকে হলুদ লাগালি না কেন!(সৌরভ)
–আরে ভাই আমি হলুদ লাগানোর কি আছে! সবাই লাগাইছে এটাই অনেক!(আমি)
–যে আমাকে সামাল দিলো আমার পাশে ছিলো,সেই আমাকে হলুদ লাগাবে না, এটা কোনো কথা হইছে মিয়া!সালা হলুদ দে আর লাগা!(সৌরভ)
–আরে ভাই!(আমি)
–যা বলছি তাই কর, আজাইরা বকিস না তো!(সৌরভ)
কি আর করবো আমি হলুদের বাটি থেকে হাল্কা হলুদ নিয়ে লাগিয়ে দিলাম।এরপর মিষ্টি মুখ করিয়ে দিলাম সেও আমাকে মিষ্টি খাইয়ে দিলো,এরপর আমি উঠতে যাবো তখনি সৌরভ হলুদের বাটি থেকে হলুদ নিয়ে আমার পূরা মুখে লাগিয়ে একাকার করে দিলো!আমিও পূরাই বেক্কেল হয়ে গেলাম।সৌরভ এই রকম কিছু একটা করবে তা আমি মোটেও আসা করি তাই এই সালা থেকে!
–সালা,হারামী কি করলি এটা!(আমি)
–হা হা হা, এটা সার্প্রাইজ ছিলো মামা,তোর হলুদে থাকবো কিনা জানি না তাই আজকে আমার হলুদের সাথে তোর হলুদটা সারাই দিছি হা হা হা হা।(সৌরভ)
সালা আমার পূরা মূখের বারোটা বাজাই দিলি,কি শক্রিতামি করছি তোর সাথে, কিভাবে পারলি আমার সাথে কাজটা করতে!সালা,নাকেও মধ্যেও ডুকে গেছে! ধুর বেটা, কেন যে আমি স্টেজে আসলাম,ধুর সালা!(আমি)
আমি সোজা স্টেজ থেকে নেমে যাই আর আমার এই অবস্থা দেখে মেহমান ও বাকিরা সেই লেভেলের হাসতেছে আমার উপর!আমি আস্তে করে ওয়াসরুমের দিকে যাচ্ছি তখনি রিদিকাও উপস্থিত। আর আমাকে দেখে প্রচুর হাসতেছে সে!
–হা হা হা দেখলে তো,যার জন্য এতো কিছু করলা শেষ মেষ সেই কিনা এই হাল করলো তোমার!(রিদিকা)
–মজা নিতেছো! নাও ভালো করেই নাও!(আমি)
–এই এই দাড়াও (রিদিকা)
বলেই রিদিকা মোবাইল বের করে আমার সেই অবস্থায় একটা ছবি তুলে নেয়!
–এটা কি করলাম,ছবি তুললা কেন!এমনেও মেঝাজ প্রচুর খারাপ হয়ে আছে তার উপর আবার ছবি তুললা বেশি মজা লাগতেছে তাই না দাড়াও!(আমি)
বলেই আমি আমার গালে হাত দিয়ে গালের থাকা হলুদ হাতে লাগিয়ে নি আর সাথে সাথে রিদিকাকে লাগিয়ে দিলাম, আমাকে ভালো করেই ও বেশি করেই হলুদ লাগাইছে সৌরভ তাই গালেও হলুদ বেশিই ছিলো আর সেটাই আমার কাজে দিলো এবার!
–এই এই কি করলা এটা!(রিদিকা)
–কেন এতোক্ষন তো সেই মজা নিতে ছিলা এবার আরো ভালো করে মজা নাও!এবার নিজেরও ছবি তুলে নাও কেমন!(আমি)
–তোমাকে তো আমি!(রিদিকা)
বলেই দিলো দোড়ানি আমিও দোড়াচ্ছি আর দোড়ে আমার রুমে ডুকে পড়ি দরজা আটকে দি,সেও বাহিরের থেকে চিল্লাচ্ছে কিন্তু আমি কোনো পাত্তা না দিয়েই মুখ ধুতে চলে গেলাম, মুখ ধুয়ে এসে দেখলাম দরজায় কোনো আওয়াজ পাচ্ছি না, তাই আস্তে করে দরজা খুললাম আর দেখতে লাগলাম রিদিকা আছে না গেছে না সে গেছে আমিও রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম,বাহিরে গিয়ে দেখি সকলেই হইহুল্লাতে ব্যস্থ আমিও গেলাম সেখানে সেখানে নাচ গান চলতেছে সাথে হলুদের বাকি কার্যক্রম গুলো চলতেছে, সকলেই হলুদের প্রোগ্রামে মেতে আছে।হলুদের প্রোগ্রাম শেষ হলো,এখন সকলকে ঘুমানো খুবই জরুরী তাই সকলে আস্তে আস্তে করে চলে যেতে লাগে আর যারা আত্মীয়সজন ছিলো তারা বাড়িতেই থেকে যায়,যেহুতু বাড়িতে অনেক মানুষ তাই সৌরভ ভাই বলে রাতে তার সাথে থাকতে কারন আমার রুমে অন্যকয়েজনকে থাকতে দেওয়া হবে তাই আমিও না করতে পারলাম না, তাই সৌরভ ভাইয়ের রুমে চলে যাই ঘুমাতে।
সকাল বেলা
আমার ঘুম ভাঙ্গলো বটে তবে চোখে এখনো ঘুম,কিন্তু চোখ মেলতেই পারতেছি না আমি!আস্তে আস্তে করে চোখ খুলতে চেষ্টা করতে লাগলাম আর আস্তে আস্তে চোখ খুললাম, চোখ খুলতেই আমি পূরাই হতাশ হয়ে গেলাম।
চলবে…………..
ভুলক্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।আর লাইক ও গল্প ভিত্তিক কমেন্ট করে পাশে থাকুন।সেয়ার করুন আর পরর্বতি পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন।
পার্ট 9
https://www.facebook.com/groups/315195763809014/permalink/399278782067378/
পার্ট 8
https://m.facebook.com/groups/315195763809014/permalink/398329468828976/