অপূর্ণতায় পূর্ণতা পর্ব-৯

0
1952

#অপূর্ণতায়_পূর্ণতা
#তানজিলা_তিহা (লেখনীতে)
#পর্ব_০৯

আমি সামনে চোখ ফেরাতেই দেখলাম সেই ব্যক্তিটিকে। সাথে সাথেই চোখে মুখে নেমে পড়লো এক রাশ ঘৃণা! ঘৃণা করি আমি এই ব্যক্তিটিকে! কিন্তু মানুষ তো পাথর না! হঠাৎই চোখ দুটো বেয়ে শুরু হলো ঝুম বর্ষণ যা আজ তিক্ত। কেন আমার সামনে আসলো সে? কেন আমাকে বার বার বিষন্নতার সাগরে ডুবিয়ে দিচ্ছে সে। কেন আমার মন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে? একবার যেহেতু দূরে সরিয়েই দিয়েছে দ্বিতীয় বার সামনে এসে সেই জ্বালা কেন আবার মনে করিয়ে দিচ্ছে? তাকে আমি ঘৃনা করি। তার ছায়াও আমার সহ্য হচ্ছে না। রাগে চোখ মুখ আমার শক্ত হয়ে আসছে। রুম্পির হাত শক্ত করে ধরে সামনে পা বাড়ালাম। অযথা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকার কোন মানেই হয় না। কিন্তু দু তিন পা এগোতেই তার আহত কণ্ঠস্বর শুনে কেঁপে উঠলাম।

আমায় ক্ষমা করে দিও ইশা!

উক্ত বাক্য তার কণ্ঠস্বর থেকে ভেসে আসতেই তাচ্ছিল্যের হাসি দিলাম। বেশ তাচ্ছিল্য করেই বললাম,

আপনি কি আমাকে বলেছেন?

আমার থেকে এমন উত্তর হয়তো সে আশা করে নি। সাথে সাথেই তার মুখে দেখতে পেলাম এক আকাশ সমান বিস্ময়। কিন্তু এই মুখশ্রী আমার মনে আর জায়গা নিতে পারলো না। নিজেকে কঠিন শীলায় রূপান্তর করবো। তার আবেগ কষ্ট কিছুতেই এই শিলা গলবে না‌। কিছুক্ষণ নিরব দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে থাকলো সে। হয়তো আমার থেকে কোন অমর বাণী আশা করেছিলো! কিন্তু সেরকম কিছুই হলো না। আমি আমার পক্ষ থেকে কোন টু শব্দটিও অব্দি করলাম না। আমার পক্ষে এখানে দাঁড়িয়ে থাকাটাও বেশ বিরক্তিকর। তাই কথা না বলে পা চালানোটাকেই বুদ্ধিমতীর কাজ মনে করলাম।

চলে যাচ্ছো? আমার কথাগুলো শুনবে প্লিজ?

তার আকুতিতে কেন জানি আজ মন গলছে না। নিজেকে এই মুহূর্তে পাথর মনে হচ্ছে কঠিন পাথর যা সহজে ভাঙবে না। তার আকুতিকে প্রশ্রয় না দিয়ে ব্যস্ত কণ্ঠে উচ্চারিত হলো আমার কণ্ঠস্বর,

দেখুন মিস্টার সায়মন সাবিদ শুভ্র আমি আপনার সাথে কথা বলতে একদমই ইচ্ছুক নই। আপনার যা বলার ছিলো সেদিনই বলে দিয়েছিলেন। আমি শুনে নিয়েছি। সেদিন অনেক বার আপনাকে প্রশ্ন করেছি কিন্তু তার কোনটারই উত্তর আমি পাই নি। আমাকে উত্তর দেওয়া হয় নি!

বলে থেমে গেলাম। কিন্তু তাতে দমে গেলাম না। ফের বলা শুরু করলাম, পিছনের ঘটনাকে আর সামনে টানবেন না। আমি আমার মতো আছি আমাকে আমার মতো থাকতে দিন। আমি চাই না আমার লাইফে আপনি দ্বিতীয় বার কোন হাঙ্গামা করুন। আপনার মতো মুখোশ ধারী ভদ্র ব্যক্তিদের আমার চেনা হয়ে গেছে। যদি আশা রাখেন যে আপনার এই ইনোসেন্ট ফেস আর আকুতি আমায় ভুলিয়ে দিবে তাহলে ইট’স নট রাইট। আমি ইন্দ্রিয়া মুসকান ইশারা কখনোই এমনটা করবো না।আপনি আপনার পথ দেখুন আমাকে আমারটা দেখতে দিন। উইশ ইউর গুড লাক। বায়!

আর এক মুহুর্তও অপেক্ষা করলাম না। পা চালিয়ে চলে আসলাম। পেছনের ব্যক্তিটিকে দেখার প্রয়োজন মনে করলাম না। তার কথাকেও ততটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করলাম না। রুম্পি তো হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টি পর্যবেক্ষণ করলেও কিছু বললাম না। কিছু না বলাটাকেই শ্রেয় মনে করলাম। কিছু বলতে গেলেই পিছনের সেই তিক্ত ইতিহাস আমায় টানতে হবে। যা মোটেও চাচ্ছি না আমি‌। আমি যেখানে বার বার সামনে এগুতে চাচ্ছি সেখানে বার বার কেন এই পিছুটান?

ধীরে ধীরে পা চালাচ্ছি‌। পিন পিন নিরবতা বিরাজমান এই ক্ষণে। রুম্পি বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে। ওর এহেন বললাম, এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? খেয়ে ফেলবি নাকি?

জানু সত্যি করে বল তো ওটা তুই ছিলি নাকি তোর উপর জিনে আছড় কাটছে?

আশ্চর্য! আমার উপর জিন কেন আসবে?

না দোস্ত আমার একদম বিশ্বাস হচ্ছে না।

কেন? বিশ্বাস না হওয়ার কি আছে?

রুম্পি কিছুক্ষণ নিরব থাকলো। এরপর বললো, ইশা সত্যি খুব অবাক হয়েছি। কিন্তু এর মাঝে ভালো লাগাও আছে। আমার জানুটা সব কিছু বুঝতে পেরেছে। আমি তো তোকে আগেই বলেছিলাম।

আমি অন্ধ ছিলাম‌। সময়ের বিবর্তনে সব পরিষ্কার হয়ে এসেছে। যেই মানুষটা আমার সামনে অন্য নারীর হাত ধরতে পারে তাকে কেন মনে রাখবো আমি?

রুম্পি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, আ’ম প্রাউড অফ ইউ জানু‌। সত্যিই খুব খুশি হয়েছি।

_____________________

সময়ের স্রোতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি দিনকে দিন। অসংখ্য বইয়ের স্তূপে ধামাচাপা পড়ে আছি। অসংখ্য বইয়ের মেলে মাথা ঘুরানোর অবস্থা প্রায়। কলম আর বই দুটোই নড়াচড়া করে চলেছি। পড়াশোনার নাম গন্ধটিও নেই। বই দেখেই মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে। বহু দিন বাদে এই স্তূপে মন দিয়েছি। মন বসতে তো একটু সময় লাগবেই। আপন ইচ্ছেয় বই নাড়ছি কিন্তু কেন জানি বার বার ভাবনার সাগরে মত্ত হয়ে যাচ্ছি। কি যে ভাবছি তা নিজেও বুঝতে পারছি না। এসব ভাবনা আদ্যও কি আমার জন্য কল্যাণকর?

আমার ক্ষীণ ক্ষণের ভাবনায় ছেদ পড়ল ফোনের টুং টাং রিংটোনে। ফোনটা হঠাৎ করেই উচ্চ শব্দে চেঁচিয়ে উঠলো। হঠাৎ আওয়াজে বিরক্তিকর ভাবটা ফুটে ফুটে উঠলো। বেশ বিরক্ত হয়ে হাতের এক পাশে পড়ে থাকা ফোনটা তুলে কানে নিলাম। সালাম দিয়ে সরাসরি জিজ্ঞাস করলাম কে বলছেন? ফোনের ওপাশের ব্যক্তিটি বললো, মাত্র সপ্তাহ খানেকে ভুলে গেলেন ইশারা?

কণ্ঠস্বর উপলব্ধি করতেই ফোনের স্ক্রিনে চোখ রাখলাম। ‌ফোনের আলোতে জ্বলজ্বল করছে অরিদ্র নামটা। বেশ আশ্চর্য হচ্ছি এই মুহূর্তে। আমি কি স্বপ্ন দেখছি? না এটা স্বপ্ন হতে পারে না।

কেমন আছেন ইশারা?

এই তো আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?

আমি সবসময়ই ভালো থাকি।

আমি তার আওয়াজ শোনায় অপেক্ষায়! কিন্তু দুপাশেই পিন পিন নিরবতা বিরাজমান। কিয়ৎক্ষণ বাদে নিরবতা কাটিয়ে তিনি বললেন, কি করছেন? ফ্রি নাকি বিজি?

“বিজিও না ফ্রিও না।”

তিনি হেসে ফেললেন। “তাহলে কি?”

“বইয়ের স্তূপে হাবুডুবু খাচ্ছি।”

“তা তো একটু খেতেই হবে। এখন একটু বেশি পড়াশোনা করতে হবে।”

আমি ছোট করে “হুম” শব্দ করলাম। ওপাশের শব্দের অপেক্ষায় রইলাম!

তিনি ব্যস্ত কণ্ঠে বললেন, আচ্ছা ইশারা এখন রাখি। আজ একটু ব্যস্ত।

বলতে দেরি তার ফোনটা কাটতে দেরি হলো না। মুহূর্তেই ক্ষোভে ফেটে পড়লাম। যেহেতু ব্যস্তই ছিলো এতো ভঙ্গিতার কি প্রয়োজন? যেহেতু কথা বলতে পারবে না সেহেতু ফোন করারই কি দরকার ছিলো? আমি কি বলেছিলাম আমাকে ফোন করে আমার খবর নিতে? এক আকাশ অভিমান নিয়ে বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজলাম। এটা খুব বুঝতে পারছি এ লোক ভারি যন্ত্রনাদায়ক!

অনেকটা সময় বইয়ের মাঝেই কাটিয়ে দিলাম। টেবিল থেকে উঠে দেখলাম ঘড়ির কাঁটা ঠিক আটটার ঘরে। এতোটা সময় পার হয়ে গেলো কখন? একটুও টের পেলাম না। পাশেই এক কোণে পরে থাকা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম দুটো মিস কল। সন্ধ্যা সাতটায় দেওয়া হয়েছে। অরিদ্রই দিয়েছে। ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসির রেখা ফুটে উঠলো। কিন্তু কেন এই হাসি তা আমার অজানা! হৃদ কুটিরে এক প্রশান্তির হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। এ এক শীতল হাওয়া যাতে আছে কিছু ক্ষুদ্র অনুভূতি।

বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম। আবছায়া অন্ধকারে ঢাকা আকাশে রূপোর থালার আঁকারের চাঁদটা ভেসে বেড়াচ্ছে। চন্দ্রতিথিতে উজ্জলতা বয়েছে চারপাশে। স্নিগ্ধ পরিবেশ। আকাশের দিকে চেয়েই গানের সুর টানলাম। মৃদু কণ্ঠে গাইতে শুরু করলাম।

কেন মেঘ আসে হৃদয়ও আকাশে,
তোমারে দেখিতে দেয় না………

কিন্তু হঠাৎই থেমে গেলাম। কেন জানি মনে হচ্ছে এখানে অপর পক্ষও বিদ্যমান। আমার অনুমান শক্তিকে সত্য প্রমাণিত করে অপর পক্ষ বলে উঠলো, থামলেন কেন ইশারা? গাইতে থাকুন। ভারি মিষ্টি গান তো আপনি!

চলবে…….

(রিচেক হয় নি। অনুগ্রহ করে ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গত কয়েকদিন গল্প না দেওয়ার জন্য আমি খুবই দুঃখিত। ব্যক্তিগত কিছু সমস্যা তার উপর অসুস্থতা! সব মিলিয়ে প্রচুর পরিমাণে মানসিক চাপে ছিলাম। তাই লিখতে পারি নি দিতেও পারি নি। আমি দুঃখিত। গল্পটা অতি দ্রুত শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করবো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here