অপেক্ষা লেখিকা: সামিয়া বিনতে হামিদ পর্ব-(২৭+২৮)

অপেক্ষা
লেখিকা: সামিয়া বিনতে হামিদ
পর্ব-(২৭+২৮)

২৭।
রক্তিম সকালে উঠেই তৈরি হয়ে নেয়, কারণ এয়ারপোর্টে যাবে অদিতিকে আনতে। অদিতি রক্তিমের ছোটবেলার বান্ধবী। একই সাথে স্কুল-কলেজ শেষ করেছিলো। অদিতির বাবা আর রক্তিমের বাবা দুজনই ভালো বন্ধু। অদিতি কলেজ শেষে বাবার সাথে আমেরিকা চলে যায়। পড়াশুনা শেষ, এখন ভালো ফ্যাশন ডিজাইনার। অদিতির মা নেই, বাবা মো: ইফতেখার খান অদিতিকে বড়ো করেছেন। ইফতেখার সাহেব স্ত্রীর মৃত্যুর পর আর বিয়ে করেননি, শুধুমাত্র অদিতির কথা ভেবে। অদিতি তার খুব আদরের মেয়ে।

নবনী-জুনাইয়েত দম্পতিও অদিতিকে খুব ভালোবাসেন। নবনী হোসেইন তো মনে মনে অদিতিকে ছেলের বউ করে নিয়ে আসার চিন্তা করছেন।

এদিকে রিধি সকালে উঠেই ক্লাসে চলে যায়। বাসায় এসে দেখলো নবনী অনেক ব্যস্ত।

রিধি: এতো আয়োজন করছো কেন মা? বাসায় কেউ আসবে?

নবনী: হ্যাঁ, অদিতি আসবে।

রিধি: অদিতি আপু? ওয়াও। অনেক মজা হবে।

নবনী: আচ্ছা, যা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয় মা। আমাকে একটু সাহায্য করতে হবে। অনেক কাজ।

রিধি: আমি এখন যাচ্ছি ২০ মিনিটে আসছি।

রিধি অনেক খুশি অদিতির আসার কথা শুনে। অদিতিকে সে খুব পছন্দ করে। অদিতিও রিধিকে বোনের মতো ভালোবাসে। অনেকবছর তাদের দেখাও হয় নি, কথাও হয় নি।

রক্তিমকে দেখে অদিতি দৌঁড়ে গেলো রক্তিমের কাছে আর শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।

অদিতি: ও মাই গড, রক্তিম। তুমি তো অনেক চেঞ্জ হয়ে গেলে। আই মিসড ইউ ডিয়ার।

রক্তিম অদিতিকে ছাড়িয়ে নিলো।

রক্তিম: আই মিসড ইউ টু। চলো বাসায়।

অদিতি: বাসায়? কার বাসায়?

রক্তিম: আমার বাসায়।

অদিতি: আগে লাঞ্চ করবো তারপর।

রক্তিম: হ্যাঁ, তাই তো বলছি বাসায় চলো। মা তোমার জন্য নিজ হাতে সব রান্না করেছেন।

অদিতি: বাসায় তো সবাই থাকবে। আংকেল আন্টিও থাকবে। কিন্তু আমি লাঞ্চ শুধু তোমার সাথেই করতে চেয়েছিলাম। প্লিজ আজ এতোদিন পর দেখা হলো। না করবে না কিন্তু।

রক্তিম: অদিতি অনেক সময় পাবে আমার সাথে লাঞ্চ করার। কিন্তু আজ তুমি এসেছো। ফ্রেশ হয়ে নাও বাসায় গিয়ে। মা-বাবাও অপেক্ষা করছে।

অদিতি: অনেক সময়? সারাজীবন সময় থাকলেও আজ আমি তোমার সাথেই লাঞ্চ করবো।

রক্তিমের এখন প্রচুর বিরক্ত লাগছে। কিন্তু কিছু করার নেই। অদিতি এমনই। তার যখন যা চাই তাই পাওয়া লাগবে। ছোটবেলা থেকেই অদিতির এই অভ্যাস। তবে তখন সে ছোট ছিলো। কিন্তু এখনও তার এই অভ্যাস যায়নি।

তারা রেস্টুরেন্টে বসে লাঞ্চ করে নিলো। আর এদিকে নবনী-জুনাইয়েত বসে আছেন না খেয়ে।

জুনাইয়েত: এতোক্ষণ কেন লাগছে আসতে?

নবনী: রাস্তায় জ্যাম হয়তো। ফোন করে দেখো তো।

জুনাইয়েত সাহেব রক্তিমকে ফোন দিলেন।

রক্তিম: হ্যালো বাবা।

জুনাইয়েত: কিরে এতোক্ষণ লাগছে কেন? সব ঠিক আছে তো?

রক্তিম: আমি অদিতিকে নিয়ে লাঞ্চ করতে আসলাম। তোমরা খেয়ে নাও।

জুনাইয়েত সাহেব কিছু বলার আগেই কল কেটে যায়।

নবনী: কি বলেছে?

জুনাইয়েত সাহেবের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। এ কেমন অভদ্রতা? বাইরে খাওয়ার ইচ্ছে থাকলে আগেই বলতে পারতো রক্তিম।

নবনী: কি বলেছে বলছো না কেনো?

জুনাইয়েত: তারা রেস্টুরেন্টে খেয়ে নিচ্ছে। আমাদের অপেক্ষা করতে মানা করেছে।

নবনী: কি বলছো? এতোকিছু করলাম!

জুনাইয়েত: ঠিকমতো কথা বলার সময় নেই তোমার ছেলের। কলটায় কেটে দিয়েছে।

নবনী: হয়তো গাড়ী খারাপ হয়েছে, অদিতির ক্ষিধে পেয়েছে তাই খেয়ে নিচ্ছে। আসতে আসতে দেরী হয়ে যেতে পারে ভেবে।

রিধির মন খারাপ হয়ে যায়।

মনে মনে ভাবছে,
রক্তিম অদিতি আপুকে নিয়ে বাসায় আসলেও তো পারতো। বাইরে লাঞ্চ করছে কেন? কি করছে তারা দুজন?

রিধির মন ছটফট করছে। রক্তিমের পরিবর্তিত ব্যবহার, আর এখন অদিতিকে নিয়ে বাইরে একা একা লাঞ্চ করা। এসব মানতে পারছে না রিধি। খারাপ লাগার কি আছে? সেও তো কতোবার ইফতির সাথে বাইরে লাঞ্চ করেছিলো। তখন রক্তিম অনেক রাগ করতো। আজ বুঝতে পারছে রক্তিম এমন কেন করতো। সে নিজেও তো সহ্য করতে পারছে না রক্তিমের সাথে অন্য কাউকে।

এদিকে অদিতি রক্তিমের ফোন কেড়ে নেওয়াতে জুনাইয়েত সাহেবের কল কেটে গিয়েছিলো।

রক্তিম: অদিতি, করছো কি তুমি?

অদিতি: একটা মিনিট তুমি আমার সাথে একা থাকতে পারবে না? ওইখানেও ফোনে কথা বলছো। এতোবছর পর দেখা, কিন্তু তুমি তো আমার চেয়ে বেশি ফোনটাকেই সময় দিচ্ছো।

রক্তিম: বাবার ফোন ছিলো। তোমার কথায় জিজ্ঞেস করছিলো।

অদিতি: আংকেল এতো অধৈর্য হয়ে যাচ্ছে কেনো? অদিতি এসেছে সাথে নিয়ে এসেছে সারপ্রাইজ। সারপ্রাইজের জন্য অল্প একটু অপেক্ষা করাই যায়।

রক্তিম দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আর মনে মনে বলছে,
এই ন্যাকামো গুলোর চেয়ে রাস্তায় জ্যামে বসে থাকা ভালো ছিলো।

অদিতি: এই রক্তিম, তুমি কিছু বলছো না কেন? আমাকে দেখে কোনো কমেন্ট করলে না? আমাকে কেমন লাগছে দেখতে?

রক্তিম অন্য দিকে তাকিয়ে বলল,
রক্তিম: ভালো।

অদিতি রক্তিমের গালে হাত রাখলো। রক্তিম চমকে উঠল, আর সাথে সাথেই সরিয়ে দিলো অদিতির হাত।

অদিতি: রক্তিম, তুমি এমন অপরিচিতদের মতো ব্যবহার করছো কেন? তুমি অনেক পালটে গিয়েছো।

রক্তিম: অদিতি এটি আমেরিকা না। বাংলাদেশ, এখানের সংস্কৃতি আলাদা।

অদিতি: এখানে কেউ হাত ধরে পাশাপাশি হাঁটে না? রেস্টুরেন্টে গলায় ঝুলে থাকে না?

রক্তিম: তুমি বুঝতে পারছো না।

অদিতি: আমি দেখেছি রক্তিম। আর মনে আছে যখন আমরা কলেজ শেষে রেস্টুরেন্টে যেতাম, তখন কতো ক্লোজ কাপল পাশাপাশি বসে থাকতো। তারা বুঝি এলিয়েন?

রক্তিম: অদিতি, আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড না।

অদিতি: এখন না, কিন্তু হয়ে যাবে।

রক্তিম: অদিতি, তোমার বাচ্ছামো স্বভাব এখনো যায় নি!

অদিতি রক্তিমের মুখের সামনে এসে বলল,
অদিতি: তুমি ছিলে না তাই, কে বুঝাবে আমায় বলো? তুমি থাকলে হয়তো বুঝতে পারতাম আমি বড়ো হচ্ছি।

রক্তিম মাথা নিচু করে বসে আছে। নিরবতা ভেঙে অদিতি বলল,
অদিতি: বললে না যে, কেমন লাগছে আমাকে?

রক্তিম: হুম সুন্দর।

অদিতি: এই রক্তিম, তখন ওদিকে তাকিয়ে বলেছো এখন নিচের দিকে? তুমি মেয়েদের মতো লজ্জা পাচ্ছো কেন বলোতো? থাক বলতে হবে না।

অদিতি মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।

রক্তিম মুচকি হেসে অদিতির দিকে তাকিয়ে বলল,
রক্তিম: সুন্দর লাগছে। চুলগুলো লম্বা হয়েছে অনেক।

অদিতি: তোমার জন্য করেছি লম্বা। তোমার লম্বা চুল পছন্দ, তাই না?

রক্তিম এবার ভালোভাবে অদিতিকে দেখলো। অনেক সুন্দর মেয়েটি, অদ্ভুত মায়া মেয়েটির মুখে, কিন্তু তার রিধির চেয়ে বেশি কখনো না। চোখ সরিয়ে বাইরের দিকে তাকালো।
এই পড়ন্ত বিকেলে লালচে আভায় ডুবন্ত পরিবেশটিতে রিধির সাথে থাকলে অনেক ভালো লাগতো। কখনো পাশাপাশি হাত ধরে হাটতে পারে নি, কখনো একসাথে বৃষ্টিতে ভেজা হয়নি, কখনো সূর্য স্নান করেনি তারা। কিন্তু এসব কিছু তারা একা একা অনুভব করেছিলো। কড়া রোদে রক্তিম যখন ফুটপাতের রাস্তা দিয়ে হাটতো, তখন মনে হতো পাশে রিধির হাতটি থাকলে এই কড়া রোদটিও যেন শান্ত আর মিষ্টি অনুভূতির প্রকাশ ঘটাবে। প্রচন্ড বৃষ্টিতে যখন রাস্তাঘাট জনমানব শূন্য থাকবে তখন সে বৃষ্টির ছোঁয়া আটকাতে জানালা টেনে না দিয়ে রিধির হাত ধরে চলে যাবে ছাদে। বৃষ্টিতে ভেজা স্নিগ্ধা রিধিকে সে দেখবে দুচোখ ভরে।

অদিতি রক্তিমকে অন্যমনস্ক হয়ে থাকতে দেখে বলল,
অদিতি: উফ, রক্তিম, তুমি মন কোথায় ফেলে এসেছো?

রক্তিম: বাসায়।

অদিতি: কি?

রক্তিম: মানে বাসায় চলো। মা-বাবা অপেক্ষা করছে। আর আংকেল বলেছিলেন বাসায় পৌঁছে ফোন করতে। তার আদরের মেয়েকে এখনো শহরের অলিতে গলিতে বসিয়ে রেখেছি। জানলে পরের টিকেট কেটে নিয়ে যাবেন।

অদিতি: তুমি সাথে আছো জানলে বাবা কোনো চিন্তা করবেন না। আর বাবা আমাকে আর নিয়ে যাবেন না। আমি এখন থেকে বাংলাদেশেই থাকবো তোমার সাথে।

রক্তিম: মানে?

অদিতি: তোমাদের বাসায় থাকবো। আমার দেশে কি কোনো আত্মীয় আছে? বাবা দেশে না আসা পর্যন্ত তোমাদের বাসায় থাকছি।

রক্তিম: ওহ।

অদিতি মনে মনে বলছে,
অদিতি: এখন থেকে তোমার বাসা-ই আমার বাসা। কতো অপেক্ষা করেছি তোমার জন্য জানো? একটিবার তোমাকে দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। তোমায় বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি। এখন আর ভয় নেই রক্তিম। বাবাকেও বলে এসেছি তোমার মেয়ে রক্তিমকে খুব ভালোবাসে। এখন আমাকে নিয়ে যাবে না তোমার কাছ থেকে কেউ। তোমার থেকে দূরে গিয়েই বুঝেছি, তুমি কি ছিলে আমার জীবনে। বুঝতে পেরেছি ভালোবাসা কি? আর আমার ভালোবাসা কে?

ভালোবাসার এই ত্রিমাত্রিক সমীকরণের কি সমাধান হতে পারে তা একমাত্র অপেক্ষার সমাপ্তিতেই বুঝা যাবে। এতো গুলো অস্তিত্বের অপেক্ষা। কারো জীবনে আসবে পূর্ণতা, কারো জীবনকে দিয়ে যাবে হতাশা।

অদিতি আর রক্তিম বাসায় আসলো। রিধি তাদের একসাথে দেখে মনে মনে অনেক কষ্ট পায়। অদিতিকে দেখে নবনী-জুনাইয়েত খুব খুশি হলেন। তার জন্য গেস্ট রুম ঠিক করলো নবনী।

নবনী: মা কিছু লাগলে বলবে।

অদিতি: জি, অবশ্যই। আমি কিন্তু লজ্জা পেয়ে বসে থাকবো না। এটিতো আমারও বাসা তাই না? আমি তো আপনার মেয়ের মতো।

নবনী: হ্যাঁ, হ্যাঁ। মেয়ের মতো কে বলেছে? তুমি তো আমার মেয়েই।

অদিতি: তাহলে আমাকে তুমি করে বলবেন না। রক্তিম আর রিধির মতো আমাকেও তুই করে বলতে হবে।

নবনী: তাহলে আমাকেও আন্টি ডাকতে পারবি না। মা বলে ডাকবি।

অদিতি নবনীকে জড়িয়ে ধরে বলল,
অদিতি: সরি মা, লাঞ্চে ছিলাম না। কি করবো বলো, তোমার ছেলের সাথে একা একা লাঞ্চ করার ইচ্ছে ছিলো। পুরোনো স্মৃতি তাজা করতে চেয়েছি। আর আমার দেশে আসার প্রথম দিন স্মরণীয় রাখতে হবে না, বলো?

নবনী: রাগ করি নি। মা কি কখনো রাগ করে থাকতে পারে?

অদিতি: কিভাবে বুঝবো রাগ করো নি?

নবনী: কিভাবে বুঝাতে পারি তোকে?

অদিতি: আজ রাতে আমাকে খাইয়ে দেবে কিন্তু। মায়ের হাতে খাওয়ার স্বাদ নিতে চাই। রক্তিমতো অনেক পেয়েছে মায়ের আদর। আমি এবার ভাগ বসাতে এসেছি। খাইয়ে দেবে তো?

নবনী: আমার মেয়েকে আমি খাইয়ে দেবো না? অবশ্যই খাইয়ে দেবো। কি খেতে চাস?

অদিতি: ডাল-ভর্তা দিয়ে খাবো। অনেক মিস করি ডাল-ভর্তা। বানাবে আমার জন্যে?

নবনী: এইটুকুই?

অদিতি: এটুকুই আমার জন্য অনেক কিছু।

নবনী: আচ্ছা করবো।

এদিকে রিধি রাগে ফুলছে। আর না পেরে রক্তিমের রুমে এসে দরজায় ঠোকা দিলো।

রক্তিম রিধিকে দেখে বলল,
রক্তিম: কি চায়?

রিধি: ভেতরে আসতে চায়।

রক্তিম: আমি এখন ক্লান্ত। যা বলার বলে চলে যাও।

রিধির মাথা এখন আরো খারাপ হয়ে যায়। রুমে ঢুকে রক্তিমের সামনে এসে দাঁড়ায়।

রিধি: আপনি এতো খারাপ? মা-বাবা কতোক্ষণ বসে ছিলো আপনাদের জন্য, জানেন? আর আপনি ইচ্ছে মতো বাইরে ঘুরছিলেন?

রক্তিম: আমি ঘুরবো কি ঘুরবো না এটি আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার ব্যাপারে নাক গলাতে আসবে না।

রিধি দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
রিধি: আপনি কোথায় গিয়েছেন তা জানার ইচ্ছেও নেই আমার। আমি মা-বাবার কথা ভেবে বলছি। তারা কষ্ট পেয়েছিলো।

রক্তিম: মা-বাবা আমার, সো আমি জানি কখন কি করতে হবে। আর তুমি যেভাবে অধিকার দেখাচ্ছো মনে হচ্ছে তুমিই তাদের একমাত্র মেয়ে! আমাকে তো কুঁড়িয়ে এনেছে! তাই না?

রিধির চোখ ছলছল করে উঠলো।

রিধি: রক্তিম। কি বলছেন আপনি?

রক্তিম: আজ আছো কাল থাকবে না। বুঝেছো? বিয়ে হয়ে গেলে বাকী যা অধিকার আছে তার মায়াও চলে যাবে।

রিধি কিছু না বলে চলে গেলো।
রক্তিম তার বিয়ের কথা বলেছে? রক্তিম তো ভালোবাসতো তাকে। সেই রক্তিম কিভাবে তার ভালোবাসার মানুষটিকে বলতে পারলো, বিয়ে দেবে অন্য কোথাও? তার মানে কি এখন রক্তিম চায় না আর তাকে? রক্তিম কি এখন রিধিকে ভুলে গেছে?
রিধি রুমে এসে এসব কথা ভাবছে।

অশ্রু আজ বাঁধা মানছে না রিধির। গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে। এই অশ্রু শুধুই রক্তিমকে হারানোর ভয়ের প্রকাশ।

রিধির মন বার বার বলছে,
রিধি: রক্তিম আমাকে আগের মতো কেন ভালোবাসছে না? আমি কী করবো এখন? আমার আর ভালো লাগছে না কিছু। কোনো ভুল হয়েছে আমার? আমি আর রাক্ষস বলবো না রক্তিম তোমাকে। প্লিজ এমন করো না আমার সাথে। আমি তোমাকে ছাড়া ভালো থাকবো না। আমি কখনো বিয়েও করবো না। চিরকুমারী থাকবো। তাও তোমায় ছেড়ে কোথাও যাবো না। কোথাও না।

অদিতি রিধির রুমে আসলো রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে।

অদিতি: রিধি। ঘুমিয়ে পড়ছো?

রিধি: অদিতি আপু। আসো না। বসো, বসো। না, আমি তাড়াতাড়ি ঘুমায় না। রাত জাগার অভ্যাস আছে আমার।

অদিতি: কি করো রাত জেগে?

রিধি: মুভি দেখি।

অদিতি: ওয়াও। জানো রক্তিম একদম বোরিং একটা ছেলে। রাত জাগার অভ্যাস নেই। মুভি দেখে না। বাইরে ঘুরতে যায় না। আমার না একদম অসহ্য লাগে। আচ্ছা সারাদিন কি করে বাসায়?

রিধি: উনি তো অফিসে চলে যায় সকালে উঠে। সারাদিন অফিসেই থাকে। মাঝে মাঝে অফিসে যান না। সেদিন বাসায় বসে বসে পুরোনো খেলা দেখেন।

অদিতি: পুরোনো খেলা? সিরিয়াসলি! দাঁড়াও, ওর রসের অভাব হয়েছে। এখন আমি বুঝিয়ে দেবো রস কি?

রিধি: মানে?

অদিতি: তুমি ওসব বুঝবে না। এখনো বয়স হয়নি তোমার।

রিধি মনে মনে বলছে,
রিধি: আমার অনেক বয়স হয়েছে। সুপ্ত অবস্থায় আছি এখন। যখন সুপ্ত বয়স ছেড়ে দেবো তখন রিধিকে আর কে আটকায়? ভার্সিটিতে একবার উঠলেই হয়। তখন রিধি ফ্রি বার্ড। প্রতিদিন রক্তিমের সামনে সেজে গুজে বের হবো বাসা থেকে। তখন জ্বলে পুড়ে মরবে ডাস্টবিনের পলিথিনটা। বুড়ো রক্তিম, তোমার বয়স শেষ। এখন রিধির বয়স শুরু।

অন্যদিকে রক্তিম রিধির ছবি সামনে নিয়ে বসে আছে।

রক্তিম: সরি প্রেয়সী আমার। অপেক্ষায় রেখেছি তোমাকে। কিন্তু বলো, আর কি করবো? সোজাসুজি ভালোবাসায় তো তোমার মন কোনো সাড়া দেয় নি। এখন একটু উলটো রাস্তা ধরেছি তোমার মনে যাওয়ার জন্যে। যেদিন তুমি বলবে আমায় ভালোবাসি, সেদিন সমাপ্তি ঘটবে এই অপেক্ষার। সেদিন পূর্ণতা পাবে আমার বহুদিনের ভালোবাসা।

সকালে উঠেই অদিতি রক্তিমের রুমে গিয়ে গল্প জুড়ে দিলো। রিধি ঘুম থেকে উঠেই দেখলো রক্তিমের রুমের দরজা বন্ধ। ভেতর থেকে অদিতি আর রক্তিমের হাসির শব্দ আসছে। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না রিধি। চোখ বন্ধ করে কানে হাত দিয়ে চলে যাওয়ার সময় নবনীর সাথে ধাক্কা খেলো।

নবনী: রিধি, কি করছিস?

রিধি: সরি, মা।

নবনী: আচ্ছা, যা নাস্তা করে নে। আমি আর তোর বাবা আজ বাসায় থাকবো না। তোদের বড়ো চাচা আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আল্লাহ যাতে এবার সুস্থ করে দেন তাকে। আর এদিকে তোর পরীক্ষা, আর অদিতিও এসেছে, তাই তোদের নিচ্ছি না।

রিধি: আচ্ছা মা।

দুপুরের আগে নবনী-জুনাইয়েত বের হয়ে গেলো।

দুপুরের লাঞ্চের সময় রক্তিম নিজের জন্য আর অদিতির জন্য খাবার নিয়ে রুমে চলে যাচ্ছে। রিধি রক্তিমকে রুমে খাবার নিয়ে যেতে দেখে বলল,

রিধি: কোথায় যাচ্ছেন?

রক্তিম: তোমাকে বলার প্রয়োজন মনে করছি না।

রিধি: ডাইনিং ছেড়ে কেউ বেডরুমে বসে লাঞ্চ করে না।

রক্তিম: আমার ইচ্ছে। তোমার সমস্যা কোথায়?

অদিতি এসে বলল,
অদিতি: কি হয়েছে রক্তিম?

রক্তিম: কিছু না।

অদিতি: চলো ক্ষিধে লেগেছে। রিধি, সরি ডিয়ার। তুমি একা একা খাবে এখন। আসলে আমি আর রক্তিম কিছু পারসোনাল কথা বলছিলাম। তোমার সামনে তো বলা যাবে না। তুমি তো এখনো পিচ্ছি, তাই।

রিধি রক্তিমের উপর রাগ করে আর খায় নি কিছু। মনে মনে গালি দিয়ে যাচ্ছে রক্তিমকে।

বিকেলে রক্তিম আর অদিতি তৈরি হয়ে নিলো বাইরে বের হবে।

তাদের বাইরে যেতে দেখে রিধি বলল,
রিধি: আপনারা কোথায় যাচ্ছেন?

অদিতি: রক্তিমের সাথে ঘুরতে যাচ্ছি। আসতে দেরী হবে। ডিনার করে আসবো। তাই না রক্তিম?

রক্তিম: হ্যাঁ। চলো দেরী হয়ে যাচ্ছে।

রিধি: ডিনার করে আসবেন? অনেক রাত হবে তাহলে। আমার ভয় লাগবে বাসায়। আমিও যাবো।

অদিতি: তুমিও যাবে? চলো তাহলে। অনেক ভালো হবে।

রক্তিম: দাঁড়াও রিধি৷ তোমার যেতে হবে না। বাসায় থাকো।

অদিতি: রক্তিম, আমরা ডিনার করে আসবো। রাত হবে অনেক। ভয় পাবে। পিচ্ছিতো এখনো।

রিধিও অদিতির সাথে ঠোঁট ফুলিয়ে মাথা নাড়লো।

রক্তিম: পিচ্ছি? আর ও? বদের হাড্ডি একটা। চলো অদিতি দেরী হয়ে যাচ্ছে।

রিধিকে কিছু বলতে না দিয়ে তারা চলে গেলো। রিধি হাঁ করে তাকিয়ে আছে।

রিধি: আমি বদের হাড্ডি? তুমি বদ, রক্তিমের বাচ্চা। তুমি জলহস্তী, গন্ডার, ডাইনোসর, পৃথিবীর বিশ্রী বিশ্রী সব প্রানী হচ্ছো তুমি। আই হেইট ইউ রক্তিম।

রক্তিম সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে হাসছে।
আর মনে মনে ছন্দ মেলাচ্ছে,
আহা কি আনন্দ!
কাটছেনা দিন মন্দ।
রিধির মনের রন্ধ্র
রক্তিমের ছোঁয়ায় বন্ধ।
বাজছে সুর ছন্দ।
চারদিকে প্রেমের গন্ধ।
আই লাভ ইউ মাই প্রেয়সী,
তোমার জন্যই তো করছি এমন রেষারেষি।

২৮।
রক্তিম আর অদিতি চলে যাওয়ার পর থেকে রিধি চুপচাপ বসে আছে। বুকের ভেতর কেউ যেন হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করছে বার বার। রক্তিমের এমন পরিবর্তন সহ্য করতে পারছে না রিধি। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমে এলো। রাত আটটা বাজছে। রিধি জানে তারা ডিনার করেই আসবে। তাই আর কিছু রান্না করলো না। তবে প্রচুর ক্ষিধে পেয়েছে তার। দুপুরেও রক্তিমের সাথে রাগ করে কিছু খায় নি। পড়তেও মন চাইছে না রিধির। তাই মুভি দেখার প্ল্যান করলো।

রিধি হরর মুভি তেমন একটা দেখে না, কারণ সে রাতে একা থাকে। তবুও আজ কি মনে করে সে হরর মুভি দেখতে বসে গেল।
টানা আধা ঘন্টা দেখার পর ভয়ে তার আত্মা শুকিয়ে যায়। গা শিরশির করছে এখন। আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। না কেউ নেই।

মনে মনে বলছে,
রিধি: রিধির বাচ্চা রিধি কি করেছিস তুই? ভয় লাগছে তো এখন! ওই কুনোব্যাঙ এখনো আসছে না কেন অদিতি আপুকে নিয়ে? আমি এখন কি করবো?

ভাবতেই ভাবতেই খুব জোরে শব্দ হলো আর সব বাতি নিভে গেলো। পুরো ঘর অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়লো। রিধি ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠল। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলো ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ হয়েছে। তাই বিদ্যুৎ চলে গেছে। রাস্তাঘাটে মানুষ জড়ো হয়েছে এই কারণে। বাসায় মোমবাতি ছিলো না। হাতের পাশে টর্চও ছিলো না। আর এদিকে মোবাইলের ব্যাটারি ডাউন হয়ে যায়। মাত্র পাঁচ পারসেন্ট চার্জ দেখে সে তাড়াতাড়ি রক্তিমকে ফোন দেয়, কিন্তু রক্তিম কল রিসিভ করছে না। রিং যাচ্ছে তবুও ধরছে না। ব্যাটারি লো হওয়ার কারণে মোবাইলে টর্চও জ্বালানো যাচ্ছে না। এখন রিধির খুব কান্না পাচ্ছে। কয়েকমিনিট পর মোবাইলও বন্ধ হয়ে যায়। মোবাইল টা শক্ত করে হাতে নিয়ে সে টেবিলের নিচে গিয়ে বসে থাকে।
রিধির মাথায় ঘুরছে বাসায় এখন ভুত আসলে তাকে খুঁজে পাবে না তো!

ভয়ে প্রচুর ঘামছে রিধি। গলার পানি শুকিয়ে গেছে। প্রচন্ড গরমে মাথা ঘুরছে রিধির, তার উপর সে কিছু খায়ও নি।

রাত দশটায় রক্তিম অদিতিকে নিয়ে বাসায় এলো। রক্তিমের ফোন সাইলেন্ট ছিলো। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো রিধির অনেকগুলো মিসড কল।

রাস্তায় মানুষজনের কথাবার্তা শুনে রক্তিম বুঝে গিয়েছে অনেকক্ষণ বিদ্যুৎ ছিলো না। দেরী না করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠল। কয়েকবার জোরে দরজা ধাক্কা দেওয়ার পরও যখন রিধি দরজা খুলছে না তখন এক্সট্রা চাবি দিয়ে বাসায় ঢুকলো।

অদিতি: রিধি এই অন্ধকারে অনেক ভয় পেয়েছে হয়তো। আমি তো কখনো একা থাকতেই পারতাম না।

রক্তিম রিধি রিধি বলে ডাক দিচ্ছে, কিন্তু কোনো সাড়া আসছে না। রক্তিম রিধির রুমে গিয়ে রিধিকে খুঁজে পেলো টেবিলের নিচে। ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে সে। প্রচুর ঘামে জামা কাপড় ভিজে গেছে রিধির। এরই মধ্যে বিদ্যু চলে আসে। রাজিয়া রহমান নিজেই আসেন রিধিকে দেখতে।

রাজিয়া: দুর্বলতার কারণেই এমনটি হয়েছে। হয়তো ও সকাল থেকে কিছু খায় নি। রক্তে শর্করার অভাব হলেই এমন হয়। আর পড়াশুনার বেশি চাপ নিচ্ছে হয়তো। সামনে তো ওদের এক্সাম। স্যালাইন দিলেই হবে। খাওয়া দাওয়ার অনিয়ম না করলেই সুস্থ থাকা যাবে। ওর খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে নজর রাখবে।

রক্তিম: জি আন্টি, ধন্যবাদ।

রাজিয়া: এটা আমার দায়িত্ব। আর রিধি আমার মেয়ের মতোই। ধন্যবাদ দিতে হবে না।

এরপর রিধিকে স্যালাইন দেওয়া হয়।

পরের দিন সকালে রিধির ঘুম ভাঙে। মাথা অনেক হাল্কা লাগছে তার। রক্তিম গতকাল সারারাত রিধির পাশে বসে ছিলো। এক মিনিটের জন্যও ঘুমায় নি।

রক্তিম রিধিকে উঠে বসতে দেখে বলল,
রক্তিম: তুমি বিশ্রাম নাও। আমি নাস্তা বানিয়ে আনছি।

রিধি শান্ত গলায় বলল,
রিধি: লাগবে না। কুঁড়িয়ে পাওয়া জিনিসের এতো যত্ন করতে নেই। আমি তো অদিতি আপুর মতো বাবার আদরের মেয়ে না। আমি তো অনাথ। এতো দয়া দেখাতে হবে না। আপনি যান। আমি ফ্রেশ হবো এখন।

রক্তিম কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।
রক্তিম: আমি অদিতিকে ডাকছি। তোমার কিছু লাগতে পারে হয়তো।

রিধি এবার জোরেই বলল,
রিধি: প্লিজ, আমার কারো সাহায্যের দরকার নেই। আপনি যান।

রক্তিম কিছু না বলে চলে গেলো। রিধিকে কষ্ট দিয়ে নিজেই কষ্ট পাচ্ছে এখন।

অদিতি রক্তিমের গা ঘেঁষে বসে পড়ল সোফায়। রক্তিমের খুব বিরক্ত লাগছিলো। ঠিক ওই সময় ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হলো রিধি। রিধিকে দেখেই অদিতির হাত শক্ত করে ধরলো রক্তিম।

অদিতির চোখে চোখ রেখে বলল,
রক্তিম: কি খাবে নাস্তায়? আজ নিজের হাতে তোমার জন্য নাস্তা বানাবো। আফটার অল আমার বান্ধবী এতোবছর পর এসেছে।

অদিতি মুচকি হেসে বলল,
অদিতি: ওহ মাই ডিয়ার রক্তিম, তুমি কতো কেয়ার করো আমার। কিন্তু এখন রিধির যে শরীর খারাপ! চলো ওর প্রিয় খাবার বানিয়ে ওকে সারপ্রাইজ দেই। আমার না সারপ্রাইজ দিতে অনেক ভালো লাগে।

রিধি কিছু না বলে রান্নাঘরে চলে গেলো। রিধি চলে যেতেই রক্তিম অদিতির হাত এক ঝটকায় ছেড়ে দিলো।

অদিতি: আর ইউ ওকে রক্তিম? কি হয়েছে? কতো সুন্দর করে হাতটি ধরেছিলে। ভালো লাগছিলো আমার।

রক্তিম: নাস্তা খাবে না? চলো।

অদিতি আর রক্তিম রান্নাঘরে আসলো। দুজন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। অদিতিতো টিকটিকির মতো রক্তিমের সাথে লেগে আছে। আর রক্তিম অদিতির দিকে তাকিয়ে হাসছে আর কথা বলছে। রিধি আর সহ্য করতে না পেরে চলে গেলো রান্নাঘর থেকে।

এদিকে বিকেলে অদিতি আর রক্তিম অনেকক্ষণ ছাদে সময় কাটায়। রিধির পড়ায় একদমই মন বসছে না। রক্তিমকে এখন তার সামনে চায় যেকোনো মূল্যে। তাই ছাদে উঠল রক্তিমকে ডাকতে।
তারা দুইজন বসে মোবাইলে গেমস খেলছে। অদিতিকে রিধি অনেক পছন্দ করতো কিন্তু এখন তার অদিতিকে ভিলেন মনে হচ্ছে।

মনে মনে অদিতিকে বকে যাচ্ছে,
রিধি: কি চিপকু রে বাবা, সুপারগ্লু লাগিয়ে এসেছে আমেরিকা থেকে। যত্তসব, আর ছেলে পায় নি। আমার রক্তিমের সাথেই তাকে লেগে থাকতে হয় সারাদিন।

রক্তিম আর অদিতির সামনে এসে দাঁড়ালো রিধি।

রিধি: আমার পড়া মাথায় ঢুকছে না। আপনি যদি একটু বুঝিয়ে দিতেন।

রক্তিম: তোমার না শরীর ভালো না? এখন পড়তে হবে না। বিশ্রাম করো।

রিধি: আমার শরীর যথেষ্ট ভালো আছে এখন।

রক্তিম: আমি এখন ব্যস্ত আছি দেখছো না?

অদিতি: আহা, রক্তিম, বুঝিয়ে দাও না।

রক্তিম: তুমি একা একা বিরক্ত হবে না?

অদিতি: না, তোমার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো ভাবতে ভাবতেই সময় কেটে যাবে।

রিধি এসব কথা শুনে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে থাকে রক্তিম আর অদিতির দিকে।

রক্তিম অদিতির কথায় হাসি ফেরত দিয়ে রিধির দিকে তাকিয়ে বলল,
রক্তিম: চলো।

রক্তিম রিধির রুমে ঢুকতেই রিধি দরজা বেঁধে রক্তিমের সামনে এসে দাঁড়ায়।

রক্তিম: দরজা বেঁধে দিয়েছো কেন? অদিতি কি ভাববে?

রিধি: আপনারা যখন দরজা বেঁধে হাসাহাসি করেন তখন আমি কি ভাবতে পারি মাথায় থাকে না?

রক্তিম: তোমার ভাবাভাবি নিয়ে আমার কোনো আসে যায় না।

রিধি: আপনি আমাকে মিথ্যে বলেছেন কেন?

রক্তিম: কি মিথ্যে বলেছি?

রিধি কাঁদোকাঁদো গলায় বলল,
রিধি: আমাকে ভালোবাসেন কেন বলেছিলেন?

রক্তিম: এসব বহু আগের কথা। মানুষের পছন্দ পাল্টাতে পারে।

রিধি: ছিঃ, আমি ভেবেছি আপনি অন্যদের মতো না। কিন্তু সুন্দর মেয়ে দেখে আপনিও গলে গিয়েছেন। অদিতি আপু আমার চেয়ে সুন্দরী তাই আপনার এখন আমাকে ভালো লাগছে না। যান, লাগবে না আপনার পড়া। আপনি চান আমি চলে যায়, তাই না?

রক্তিম: চলে তো আর যাচ্ছো না। বিয়ে হলেই মুক্ত হবো।

রিধি এবার খুব শব্দ করে কেঁদে দিলো। নিজেকে আর আটকাতে না পেরে রুম থেকে বের হয়ে, সোজা বাসা থেকেই বেরিয়ে গেলো।

অদিতি রিধিকে চলে যেতে দেখে বলল,
অদিতি: এই রক্তিম তুমি এতো খারাপ কেনো? পিচ্ছি মেয়েটিকে বকা দিয়েছো! ইশ। কোথায় গেলো এখন?

রক্তিম রিধির পেছন পেছন বের হলো। এখন আর ভালো লাগছে না রক্তিমের৷ হয়তো বেশিই বলে দিয়েছে। রক্তিম বুঝতে পেরেছে রিধিও তাকে ভালোবেসে ফেলেছে।
এখন রিধির রাগ ভাঙিয়ে সব কিছু খুলে বলবে রক্তিম। বলবে এতোদিন যা করেছে তা শুধু রিধির সুপ্ত ভালোবাসাকে জাগিয়ে তোলার জন্য। রক্তিম আজ রিধিকে সব বলে দেবে। বলে দেবে কতোটা ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছে রিধির জন্য।

চলবে–

আগের পর্ব:
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/374360357619076/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here