#অবশেষে ভালোবাসি (সিজন-২)❤part: 39
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
.
🍁
.
গাড়িতে চুপচাপ বসে আছে অদিতি।মাথাটা কেমন ধপধপ করছে তার।তার পাশেই বসেছে আদনান।সামনের সিটে আয়ান ও ঐশি।।আয়ান হাসি হাসি মুখে ড্রাইভ করে চলেছে…দুনিয়ার সব মজার কথাগুলো যেনো কেউ তার ঝুলিতেই ঢেলে দিয়েছে পরম যত্নে।এই কয়েক ঘন্টায় আদনানের সাথে মিশে গেছে কতো সহজে।।আদনানও আয়ানকে পেয়ে খুব খুশি….আড্ডায় আড্ডায় মেতে উঠেছে তিন জনে…যেনো কতো কালের বন্ধু তারা।।অদিতিই শুধু চুপচাপ বসে, জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে।।আয়ানের কথাগুলো শুনতে ইচ্ছে করছে না তার….আয়ানের কথাগুলোই যে তার মাথাব্যথার মূলীভূত কারণ।।এতো সুন্দর করে কথা বলে কেন ছেলেটা?সে কি বুঝে না ওর মুখের প্রতিটি শব্দে অদিতির বুক কাঁপে।।হঠাৎ করেই আয়ানের কন্ঠে ঘোর কাটলো তার।হকচকিয়ে ওদের দিকে ফিরে তাকালো সে-
.
কি ব্যাপার অদিতি?তোমার কি মাথাব্যাথা করছে?আর ইউ ওকে?এভাবে চুপচাপ বসে আছো কেন?(চিন্তিত হয়ে)
.
আয়ানের কথায় অদিতির দিকে ফিরে তাকালো আদনান।অদিতির মধ্যে মন খারাপের কোন ছাপ খুঁজে পাচ্ছে না সে।এই মেয়েটাকে গত ৯ টা মাস ধরে এমনই মুখ গোমরা করে থাকতে দেখেছে সে।।ওর বয়সের মেয়েদের থেকে একটু বেশিই গম্ভীর ভাবে!!একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো সে-
.
ওর মন খারাপ নয় মিষ্টার আয়ান।ও বরাবরই একটু গম্ভীর।বেশি কথা একদমই পছন্দ করে না।।সবসময়ই চুপচাপ।
.
আদনানের কথার গুরুত্ব না দিয়ে এসির পাওয়ারটা একটু বাড়িয়ে দিয়ে মাথাব্যাথার বাম টা এগিয়ে দিলো আয়ান।অদিতি দু’মনা হয়ে পড়লোও এক পর্যায়ে নিয়েই নিলো।।আপাতত এই বামটার যে বড্ড প্রয়োজন তার…সত্যিই মাথাটা ব্যাথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে তার।।এটা না লাগালে হয়তো শপিং এ মনোযোগই দিতে পারবে না।কিন্তু আয়ান কি করে বুঝলো ওর অস্বস্তি?? কই আদনান তো বুঝলো না।।অদিতিকে বাম নিতে দেখে অবাক চোখে বলে উঠলো আদনান-
.
তোমার মাথাব্যথা করছে অদিতি?কখন থেকে?বলো নি কেন?চলো আগে ডক্টরের কাছে যাই…তারপর শপিং…আ..
.
আদনানের কথায় মুচকি হাসলো অদিতি।ছেলেটা ওকে নিয়ে সবসময়ই কেমন ব্যস্ত হয়ে পড়ে…হয়তো ভালোও বাসে….আয়ানও বাসে।তবে দুজনের মধ্যে বিস্তর তফাৎ একজন বলার আগেই বুঝে যায়…আরেকজনকে বুঝিয়ে বলতে হয়…কিন্তু ভালোবাসাটা একই…নিস্বার্থ!!একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাসিমুখেই বলে উঠলো অদিতি-
.
আপনি ব্যস্ত হবেন না আদনান সাহেব।আমি ঠিক আছি…সামন্য মাথা ব্যাথা…এতেই ঠিক হয়ে যাবে। ডক্টর লাগবে না….বেশি হলে বলবো আপনাকে….চিন্তা করবেন না।
.
অদিতির কথায় যেনো আস্বস্ত হতে পারলো না আদনান।তবু মুখ কাচুমাচু করে বলে উঠলো –
.
বলো কিন্তু….
.
হুম বলবো…
.
আয়ান গাড়ির গ্লাসে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তার দৃষ্টি পেছনে বসা অদিতির চোখে মুখে। খুব ইচ্ছে করছে অদিতির মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরে মাথায় হাত বুলাতে….কিন্তু সব ইচ্ছে তো পূরণ হওয়ার নয়…কিছু ইচ্ছে যে অপূর্ণই রয়।।
.
🍁
.
শাওয়ারের নিচে হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে চিৎকার করে কাঁদছে অদিতি।।কেন এই কান্না?কেন এই আহাজারি, জানে না অদিতি।শুধু জানে কাঁদতে হবে…ভীষন কাঁদতে হবে…এই বুক ভরা দুঃখগুলোকে সবার অগোচরে চোখের জলে ভাসাতে হবে।।আয়ানকে ভালোবাসে কি না জানে না অদিতি…..তবুও ওর আশেপাশে থাকাটা কেন এতো জ্বালায় ওকে?শপিং থেকে ফেরার সময় ভেবেছিলো কাঁদবে না সে,, কিছুতেই কাঁদবে না….কিন্তু গাড়ি থেকে নামার পর শপিং ব্যাগগুলো অদিতির হাতে দিতে দিতে আয়ানের বলা কথাটা আর দমিয়ে রাখতে পারে নি তাকে….”ল্যাপ্টানো কাজলে খুব সুন্দর লাগছে তোমায়…আমার মায়াবতীটা যে এতোটা মায়ায় জড়ানো জানা ছিলো না তো আমার।” আদনানও প্রসংশা করে …কিন্তু এভাবে তো কখনোই নয়….আয়ান কেন বললো এভাবে??কেন কেঁপে উঠলো অদিতির শরীর??এই কেঁপে উঠার মাশুল দিতেই যে এই এক ঘন্টা যাবৎ কান্না করে চলেছে সে।।এই অযাচিত কম্পন মেটানোর কতো প্রচেষ্টা তার….তবু যেনো এই নামহীন কষ্টগুলো দলা পাকিয়ে আটকে আছে গলায়..যেনো নিঃশ্বাসটা বন্ধ করে এখনই মরে ফেলবে তাকে।।রক্তজবার মতো লাল চোখ নিয়ে তিনঘন্টার মাথায় ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে এলো অদিতি।।বিছানায় পড়ে থাকা শপিং ব্যাগগুলোতে এখনও আয়ানের স্পর্শ লেগে আছে….ঘরের বাতাসে আয়ানের শরীরের গন্ধটাও যেনো প্রকট…এই গন্ধে অসুস্থ হয়ে পড়ছে অদিতি…নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে…চোখদুটো আবারও ঝাপসা হয়ে আসছে রঙহীন কান্নার চাপে….!!
.
🍁
.
বিছানায় মাথা নিচু করে বসে আছে আয়ান।ওর হাতে অদিতির বিয়ের কার্ড।।রঙচঙে ওই কার্ডটির দিকেই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে…কিন্তু দৃষ্টিটা কেমন ঝাপসাটে….বুকেও কেমন চিনচিনে ব্যাথা করছে তার…অদিতির নামের পাশে আদনানের নামটা দেখেই যেনো নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে…..অদিতিদের বাড়িতে যাওয়ার পর অদিতি নিজ হাতেই দিয়েছিলো এটা…বুকের ব্যাথাটা আড়াল করে হাসিমুখেই গ্রহণ করেছিলো সে…কিন্তু এখন যে বুকটা ফেটে যাচ্ছে।।অদিতিকে হারানোর ভয়ে চোখের জলগুলোও বাঁধ ভাঙছে ক্রমাগত….অদিতিকে ছাড়া বেঁচে থাকাটা দিনকে দিন কেমন অসম্ভব হয়ে উঠছে …. চোখ বন্ধ করলেই তার মায়াভরা চোখদুটো জ্বালা ধরায় বুকে….হাহাকার করে উঠে শরীরের প্রতিটি রন্ধ্র!!কার্ডটিকে দূরে ছুঁড়ে ফেলে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো আয়ান…পাশের রুম থেকে ফাহিম-রিয়ার চাপা হাসির শব্দ ভেসে আসছে….ফাহিম আজ খুব খুশি…রিয়া নাকি আজ পুরো দু’প্লেট ভাত খেয়ে ফেলেছে…বমিও করে নি সারাদিনে।।এই অল্পতেই যে এতোটা খুশি হওয়া যায় তা ফাহিমকে না দেখলে জানতোই না আয়ান।।হয়তো ভালোবাসাটা এমনই ভালোবাসার মানুষের একটি স্বস্তির নিশ্বাসই পাশের মানুষটির হাজারও খুশির কারণ হয়ে দাঁড়ায়….করে তুলে সবচেয়ে সুখী!!আয়ানও চায় সুখী হতে….অদিতির হালকা কষ্টে অস্থির হতে….প্রকৃতি কি সেই সুযোগটা দেবে তাকে??ভালোবাসার পাগলামোতে মেতে উঠার সুযোগ!!
.
#চলবে🍁