অবশেষে ভালোবাসি (সিজন-২)❤part: 37

অবশেষে ভালোবাসি (সিজন-২)❤part: 37
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤

.
🍁
.
ড্রয়িং রুমের সোফায় পা গুটিয়ে বসে আছে রিয়া।।হাতে রাখা রিমোটটা বার বার টিপাটিপি করছে সে…কিন্তু ভালো কিছু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মোটেই।।আচ্ছা টিভি তে কি আজকাল আর ভালো কোনো অনুষ্ঠান হয় না ?নাকি রিয়া যখন দেখতে বসে তখনই সব মজার মজার শোগুলো শেষ হয়ে যায়?কথাটা ভেবেই ভ্রু কুঁচকালো রিয়া।ফাহিম একপা সোফায় তুলে খাবারের প্লেটটা কোলে রেখে গালে হাত দিয়ে রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।।প্রায় দু’ঘন্টা চেষ্টা করে কয়েকটা ফলের টুকরো খাওয়াতে পেরেছিলো সে….সেগুলোও আধাঘন্টা আগে বমি করে বের করে দিয়েছে রিয়া।।ফাহিম বুঝতে পারছে না এভাবে খেলে রিয়া বাঁচবেটা কিভাবে??আর ওর ভেতর থাকা ওদের পুচঁকোটায় বা ভালো থাকবে কিভাবে??বাচ্চা জন্ম দেওয়ার সময় মেয়েদের কষ্ট হয় জানা ছিলো ফাহিমের কিন্তু কনসিভ করার কয়েক মাসের মধ্যেই যে এমন ভয়ানক অবস্থা হতে পারে ভাবতেই পারে নি ফাহিম।।গত চারমাসে “বেবি এন্ড বেবি’স মাদার ” এর উপর সকল আর্টিকেল,, বই,, জার্নাল পড়ে শেষ করেছে ফাহিম।।নিজের সবটুকু দিয়ে রিয়াকে আগলে রাখছে,,রিয়ার অত্যাচারও সহ্য করছে হাসি মুখে তবু মাঝে মাঝে বাঁধ ভেঙে যায় ওর।।মাঝরাতে হঠাৎ জেগে ওঠে রিয়া যখন কান্না করে ফাহিমের কলিজাটা যেনো ছিঁড়ে যায়।।নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয় তখন….কিন্তু ফাহিমেরই বা কি দোষ তাতে?রিয়ার জেদের কাছে হার মেনেই তো এই ডিসিশনটা নিতে হয়েছে তাকে।।কি হতো দুটো বছর ওয়েট করলে??ফাহিম কি মরে যেতো ততদিনে??কতো ইচ্ছে ছিলো বিয়ের পর রিয়াকে নিয়ে কতো জায়গায় ঘুরবে….পুরো দেশটা একদম চষে বেড়াবে দুজন কিন্তু তা আর হলো কই?বেড়ানো তো দূর এখন তো ফাহিমের ভার্সিটি যাওয়ায় মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ দুটো বুজে সোফায় গা এলিয়ে দিলো ফাহিম।।রিমোটটা পাশে রেখে ফাহিমের দিকে ঘুরে বসে করুণ কন্ঠে বলে উঠলো রিয়া-
.
আপনি আমার উপর বিরক্ত হয়ে পড়েছেন তাই না??
.
রিয়ার কথায় চোখ মেলে তাকালো ফাহিম।।ঘাড় ঘুরিয়ে শান্ত দৃষ্টিতে রিয়ার দিকে তাকালো সে….গোলাপী রঙের শাড়িতে ভারি মিষ্টি লাগছে ওকে,,,মুখটা শুকিয়ে আরো বাচ্চা বাচ্চা ভাব চলে এসেছে চেহারায়।। বড় বড় চোখগুলোতে অভিমানের মেঘ।।আচ্ছা,,এই মেয়েটার উপর কি কখনো বিরক্ত হতে পারবে ফাহিম ??ফাহিমকে চুপ করে থাকতে দেখে আবারও বলে উঠলো রিয়া-
.
আজকাল খুব জ্বালাচ্ছি তাই না?আপনি একটা কাজ করুন আমাকে বরং চিটাগং রেখে আসুন।।ওখানে মা,ভাবি,ভাই আর পুচকিটাও তো আছে…আমি বেশ থাকবো।।এমনিতেও আমার জন্য ঠিকঠাকভাবে ভার্সিটি যাওয়া হচ্ছে না আপনার।। তারচেয়ে আমি কিছুদিন চিটাগাং থেকে আসি….আপনিও এদিকটা সামলে নিতে পারবেন তাছাড়া ওদের সাথেও তো দেখা হয় না অনেকদিন।।রেখে আসুন না আমায় প্লিজ!!(ম্লান হেসে)
.
আমায় ছেড়ে যেতে চাইছো রিয়া?
.
আরে তা হবে কেন??(হাসার চেষ্টা করে)এক জায়গায় থেকে থেকে আমি নিজেও তো বোর।এই ইট পাথরের ঢাকা শহরের থেকে চিটাগাং এর মুক্ত বাতাসে বেশি ভালো থাকবো আমি।।তাছাড়া এই সময়টায় বাবার বাড়িতেই তো থাকতে হয়…..বেবি হওয়ার পর তো চলেই আসবো।
.
ফাহিম এবার নড়েচড়ে বসলো।।ওকে ছেড়ে সাত সাতটা মাস আলাদা থাকতে চাইছে রিয়া…ভাবতেই দম বন্ধ হয়ে আসছে ওর…রিয়া কি পাগল হয়ে গেছে ??ফাহিম যে মরে যাবে সে খেয়াল কি তার আছে??প্লেটটা টেবিলে রেখে আরাম করে বসে শান্ত গলায় বলে উঠলো সে –
.
তুমি যদি নিতান্তই ঘুরতে যেতে চাও…তো যাও।।বাট আমাকেও সাথে নিতে হবে তোমায়।।যতদিন তুমি সেখানে থাকবে আমিও থাকবো কিন্তু তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত নয়।।
.
আশ্চর্য আপনি কেন?আপনার ভার্সিটির কি হবে?তাছাড়া আমি তো আপনার সুবিধার জন্যই যেতে চা…
.
রিয়াকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে আরেকটু চেপে বসে রিয়ার কোমর জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো ফাহিম-
.
তুমিই আমার সবচেয়ে বড় সুবিধা রিয়া….তুমি না থাকলেই যতো অসুবিধা।। শ্বাস নিতে অসুবিধা,, ঘুমোতে অসুবিধা,,গোসলে অসুবিধা… আর আর..
.
ফাহিমের কথায় খিলখিল করে হেসে উঠলো রিয়া…পেটে লাগা সুড়সুড়িতে হাসির মাত্রা যেনো বেড়ে গেলো কয়েক গুণ।ঠিক তখনই পেছন থেকে বলে উঠলো আয়ান-
.
কি রে?পাব্লিক প্লেসেও রোমান্স শুরু করে দিয়েছিস?মান ইজ্জত আর রাখলি না দেখি..
.
ঘাড় ঘুরিয়ে আয়ানকে দেখেই লাজুক হাসি দিলো রিয়া।।লজ্জায় লাল হয়ে ফাহিমের থেকে সরে বসতে গেলেই আরো শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো ফাহিম।।আয়ানের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে উঠলো সে-
.
বন্ধু আমাদের বাড়িটাই রোমান্স হাউজ…ঘরে বাবা মার রোমান্স পর্ব চলছে…. এখানে আমাদের দুজনের…. বাগানেও দেখ গিয়ে কেউ না কেউ প্রেম চালিয়ে যাচ্ছে।।এর মধ্যে আপাতত তুইই একখান হতভাগা বান্দা..
.
ফাহিমের কথায় হাসলো আয়ান।ওদের সামনের সোফায় বসতে বসতে বলে উঠলো –
.
আর দহন বাড়িয়ে দিস না রে দোস্ত….. তোদের দেখে প্রেম প্রেম থেকে সোজা বিয়ে বিয়ে পাচ্ছে আমার….ইশশশ সে যদি বুঝতো!!(বুকে হাত দিয়ে)
.
আয়ানের কথায় দুষ্টু হেসে চোখ টিপে বলে উঠলো ফাহিম-
.
শুধুই বিয়ে বিয়ে পাচ্ছে?ফুলশয্যা পাচ্ছে না??
.
ফাহিমের কথায় চোখ বড় বড় হয়ে গেলো রিয়ার।।ছি কি সব কথা বলে এরা!!রিয়ার পেটের ওপর রাখা ফাহিমের হাতটিতে চিমটি কাটতেই লাফিয়ে উঠলো ফাহিম…হাতটা একটু ঝাড়া দিয়ে রিয়াকে আরো শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠলো সে-
.
এটাই তো পারবা…আর তো কিছু পারো না।।একটা চু..
.
একদম চুপ!! আরেকটা কথা বললে এই রিমোট দিয়েই মাথা ফাটিয়ে দিবো বলে দিলাম।(চোখ রাঙিয়ে)
.
দেখছিস আয়ান?শুধু মারামারি,,বিন্দুমাত্র রোমান্টিকতা নাই ।।সারাদিন বাচ্চাদের মতো বিহেভ করলে কি হবে….বাচ্চাদের মতো টুকটুক করে চুমু খেতে জানে না সে….বলি মাথা টাথা না ফাটিয়ে বরকে একটু চুমু টুমুও তো খেতে পারো নাকি??
.
ফাহিমের কথায় রাগী চোখে তাকালো রিয়া,,,পারলে যেন চোখ দিয়েই চিবিয়ে খেয়ে ফেলে তাকে।।কি অসভ্য ছেলে…আয়ানের সামনেও যা তা বলে চলেছে সেই কখন থেকে…ওদের খুনসুটিতে না হেসে পারলো না আয়ান….হাসিমুখে বলে উঠলো সে-
.
বিয়ের এগারো মাসের মাথায় বাবা হতে চলেছিস..আর কতো রোমান্স চাস শালা!!আমি তো এখনও পাত্রীকেই রাজি করাতে পারছি না।
.
আয়ানের কথায় অদিতির কথাটা চট করেই মাথায় চলে এলো রিয়ার।।ঝটপট প্রশ্ন ছুঁড়লো সে-
.
অদিতি আপুকে বলতে পেড়েছিলেন?? কি বলেছে সে?(কৌতূহলী হয়ে)
.
নো রেসপন্স!! (দীর্ঘশ্বাস ফেলে)
.
আয়ানের কথায় ভ্রু কুঁচকালো ফাহিম-
.
নো রেসপন্স মানে কি?
.
নো রেসপন্স মানে নো রেসপন্স।। কিছু না বলেই উঠে চলে গেছে,,, আমার দিকে ফিরেও তাকায় নি…
.
কিচ্ছু বললো না??(অবাক হয়ে)
.
রিয়ার কথায় মাথা নিচু করে হ্যা বললো সে।যার অর্থ না কিচ্ছু বলে নি ।ফাহিমের কাছে ব্যাপারটা খুবই বিরক্তিকর মনে হচ্ছে….কেউ তাকে প্রোপোজ করলো আর সে হ্যা বা না কিছু না বলেই চলে যাবে??এ কেমন অদ্ভুত কথা??এটলিস্ট চিন্তা করার জন্য টাইম চাইতে পারতো।।বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে বলে উঠলো ফাহিম-
.
তুই ওকে আটকালি না?এমনি যেতে দিলি?
.
হুম দিলাম।ওর স্তব্ধ হয়ে বসে থাকাটা আমাকে খুব পুড়াচ্ছিলো রে।।তাই আর…(মাথা নিচু করে)
.
আয়ানের কথায় দীর্ঘশ্বাস ফেললো রিয়া।এতো ভালোবেসেও কেন যে মানুষ নিজের অনুভূতিগুলো থেকে পালিয়ে বেড়ায় বুঝতে পারে না রিয়া….আয়ানের জীবন সম্পর্কে ছোট্ট ভুল ধারনা কি তবে ভেঙে টুকরো করে দিবে তিনটি জীবন?জীবনটা কি এতোটাই নিষ্ঠুর???
.
🍁
.
গতকাল আয়ানের কথাগুলো শোনার পর থেকে একপ্রকার অস্বস্তি কাজ করছিলো অদিতির মনে। তাই সেদিন আর শপিং এ যাওয়া হয় নি ।গতকাল আদনানের কথা না রাখতে পারায় আজ অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নিয়েছে অদিতি।সকাল সকালই রেডি হয়ে নিয়েছে সে…তার ভাঙা মনের সামান্য ছাপও আদনানের সাথে গড়া সম্পর্কটাতে ফুটিয়ে তুলতে চায় না সে…একটুকুও না।।এসব ভাবতে ভাবতে রুম থেকে বেরুতেই আৎকে উঠলো সে…আয়ান!!অদিতিকে দেখে খুশি খুশি মুখে একরাশ আবেগ টেনে নিয়ে বলে উঠলো ঐশি-
.
এই অদি?আদনান বললো সবাইকে নিয়েই নাকি মার্কেটে যাবে।।তাই ভাবলাম আয়ানও যাক সাথে…কতোদিন পর এলো ছেলেটা…কি বলিস ঠিক করেছি না?
.
ঐশির কোনো কথায় যেনো কানে ঢুকছে না তার।।মাথাটা ভো ভো করছে খুব!!শাড়ির আচলে কপাল ও নাকের আশেপাশের ঘামটা মুছে নিলো সে।।জীবনটা কি অদ্ভুত খেলা দেখাচ্ছে তাকে….যেখান থেকে পালাতে তার এতো আহাজারি বারবার সেখানেই কতো যত্ন সহকারে আটকে যাচ্ছে সে….এ কেমন গোলকধাঁধাময় জীবন তার??একটু কি স্বস্তির নিশ্বাস পাওনা নয় তার??
.
#চলবে🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here