অবশেষে ভালোবাসি (সিজন-২)❤part: 37

অবশেষে ভালোবাসি (সিজন-২)❤part: 37
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤

.
🍁
.
কি সমস্যা?এভাবে আমাকে উঠিয়ে আনার মানে কি ডক্টর আয়ান??(ভ্রু কুঁচকে)
.
আব..এক্চুয়েলি অনেকদিন পর ফিরলাম তো তাই ভাবলাম যে তোমার সাথে একটু দেখা করি…কথা টথা বলি দেটস ইট!!(জোড়পূর্বক হাসি দিয়ে)
.
আমার সাথে কথা বলার জন্য আপনাকে আমায় কিডন্যাপ করে নিয়ে আসতে হলো??অদ্ভুত!! অন্যকোনো ভাবে কি আপনি আমার সাথে কথা বলতে পারতেন না??
.
ওহহো মিস.ঝগড়ুটে তুমি জানো এটা আমার স্টাইল।।(অদিতির দিকে ঝুঁকে) এতো ঝগড়া করো কেন শুনি??
.
আয়ানের মুখে মিস.ঝগড়ুটে কথাটা শুনেই চমকে উঠলো অদিতি।কতোদিন পর সেই নাম!!অদিতির বুকটা যেন ঢিপঢিপ করে কাঁপছে…কেন হচ্ছে এমন??নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত করে রাগী গলায় বলে উঠলো সে-
.
আমার সাথে কি এমন কথা আপনার??কথাগুলো তাড়াতাড়ি শেষ করুন।আমায় যেতে হবে….আমার হবু বরের সাথে শপিং যাওয়ার ডেইট আজ।।আর হ্যা আপনার কিন্তু দাওয়াত রইলো যদিও ইনভিটেশন কার্ড দেওয়া হবে তবু আগেই বলে রাখছি….. আসবেন নিশ্চয়??
.
অদিতির কথায় মুচকি হাসলো আয়ান।চেয়ারে সোজা হয়ে বসে বলে উঠলো –
.
এতো দূর থেকে আমি তোমার বিয়ের খবর শুনতে আসিনি অদিতি।তোমায় কিছু বলতে এসেছি….. সেগুলো মন দিয়ে শোনো আর শপিং নিয়ে চিন্তা করো না…সময় হলে পুরো শপিং মলই না হয় কিনে দিবো তোমায়!!
.
আপনাকে কিনে দিতে হবে না,,, আমার ফিয়োন্সির শপিং মল কিনে দেওয়ার মতো ক্ষমতা না থাকলেও আমার প্রয়োজন মেটানোর ক্ষমতা তার আছে ডক্টর আয়ান!!(উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে) আমার ফিয়োন্সি নিশ্চয় আমার জন্য অপেক্ষা করছে ডক্টর…আই হেভ টু গো…. আপনার সাথে না হয় অন্য কোনোদিন কথা বলবো..(মুচকি হেসে)
.
অদিতির কথায় হাসলো আয়ান।চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে শাড়ির আঁচলটা টেনে ধরে হেঁচকা টানে নিজের কোলে বসিয়ে নিলো তাকে।ঘটনার আকস্মিকতায় অদিতি হতবাক!!বিস্ময়ভাব কাটিয়ে রাগী চোখে আয়ানের দিকে তাকাতেই বিস্মিত কন্ঠে বলে উঠলো আয়ান-
.
ও মাই গড!!! মিস ঝগড়ুটে…বিয়ে তো করছো ওই ইঞ্জিনিয়ার কে আর কোলে বসছো আমার?তোমার মতলবটা কি বলো তো??
.
আয়ানের কথায় রাগে চোখ-মুখ লাল করে কিছু একটা বলতে যাবে…. তার আগেই কোমর চেপে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠলো আয়ান-
.
চুপচাপ চেয়ারে বসে যাও জানু নয়তো এবার তো শুধু কোলে বসিয়েছি এরপর আরো অনেক কিছু করবো….কি করবো??(ভ্রু নাচিয়ে)
.
অদিতি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চেয়ার টেনে বসে হ্যান্ড ব্যাগটা টেবিলের ওপর রেখেই বলে উঠলো –
.
আপনি আগের মতো অসভ্যই রয়ে গেছেন ডক্টর!! লুচু আর মেয়েবাজ….
.
আয়ান হালকা হেসে বুকে হাত দিয়ে বলে উঠলো –
.
উফফ..ডক্টর!!সুইটু?আই থিংক তোমার মুখে এই মিষ্টি ডাকটা শোনার জন্যই আজ আমি ডক্টর….এতো কিউট করে কেন বলো গো??কামড়ে দিতে ইচ্ছে করে তো বেবি!! (চোখ টিপে)
.
আয়ানের কথা চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়েই বলে উঠলো অদিতি- “ছিহ!!”
.
অদিতির রিয়েকশনে হাসলো আয়ান।তারপর দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে টেবিলে ভর দিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে বসলো সে।।অদিতির চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো –
.
অদিতি?আমার লাইফ সম্পর্কে তোমার সবই জানা।।আমার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে শুরু করে আমার ক্যারেক্টার এব্রিথিং।আমি কখনো কাউকে আমার ফ্যামিলি সম্পর্কে বলি না বাট তোমায় বলেছি,,, কেন যে বলেছি তা আমি নিজেও জানি না।।(ছোট্ট শ্বাস ফেলে) ছয় বছর বয়সে মার করা ধোকা আমার মনের মধ্যে একটা ছাপ ফেলে দিয়েছিলো।।ঘৃণার ছাপ।।মার চলে যাওয়ার পরের দিনই ৬ দিনের পিচ্চি বোনটা মারা গেলো শ্বাস কষ্টে,,তখন পৃথিবীটাকে আরো বেশি নিষ্ঠুর মনে হয়েছিলো আমার… বাবা কি ভীষণ রকম কেঁদেছিলো সেদিন।।বাবা নিজেই ভেঙে পড়েছিলো অনেক।।সেই থেকে আমি একটা বিকৃত মানুষিকতা নিয়ে বেড়ে ওঠি…. আমার মনে হতো সব মেয়েরাই ধোঁকাবাজ…তারা শুধু খেলতে জানে,,ছেলেদের মন নিয়ে খেলা…..তাহলে ওদের কে নিয়ে খেলা করতে দোষ কি?? আমাদেরও তো উচিত ওদের নিয়ে খেলা করা!!হয়তো আমি পুরোটায় ঢুবে যেতাম অন্ধকারে কিন্তু মামনির জন্য পারি না।।মামনি আমায় একজন মানুষ হিসেবে তৈরি করে তুলেছে…উনি আমায় বলতেন,, “আয়ান?মেয়েদের রেসপেক্ট কর,,ওরা মায়ের জাতি ওদের নিয়ে খেলতে নেই সোনা!!” মামনির সব কথা শুনলেও এই কথা মেনে নিই নি কখনো….যেখানে আমার নিজের মা ধোঁকাবাজ সেখানে যে মায়ের জাতি মানেই আমার কাছে ধোঁকাবাজ হবে এটাই স্বাভাবিক।।তাই মেয়েদের মন ভাঙা নিয়ে আফসোস হয় নি কখনো…বরং শান্তিই লেগেছে…তারপর একসময় তুমি এলে আমার জীবনে….ওই রেলস্টেশনে প্রথম দেখলাম তোমায়…সাদা রঙের জামায় যেনো স্বর্গীয় কোনো রাজকন্যা!! হয়তো ক্রাশ খেয়েছিলাম সেদিন।।তারপর ধীরে ধীরে তোমার কাছে আসা….তোমার সাথে দুষ্টুমি,, মজা,,তোমাকে জ্বালানো সবই খুব ভালো লাগতে শুরু করে আমার।।সব সময় তোমার আশেপাশে থাকাটা একটা অভ্যাস একটা নেশা হয়ে দাঁড়ালো আমার।।তুমিই একমাত্র মেয়ে যার সাথে কথা বলার পর ভাবতাম…কষ্ট পেলো না তো ও??
.
এটুকু বলেই থামলো আয়ান।আবারো চেয়ারে গা এলিয়ে দিলো সে।ছাদের দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকেই চোখ বুজে নিলো সে।।অদিতি একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে আয়ানের মুখের দিকে।।আয়ান ঠিক কি বলতে চাইছে বুঝতে পারছে না সে….তার দৃষ্টি আটকে আছে আয়ানের কপালে….হালকা ঘামে সিল্কিচুলের কিছুটা লেপ্টে আছে কপালে…অদিতির ভয়ঙ্কর একটা ইচ্ছে জাগছে এবার।।ওই কপালের, চুলগুলো আলতো হাতে সরিয়ে দিয়ে ঘামগুলো শাড়ির আঁচলে খুব যত্ন করে মুছে দিতে ইচ্ছে করছে তার।।সুযোগ বুঝে কপালে তার গোলাপী নরম ঠোঁট জোড়াও ছুঁইয়ে দিতে ইচ্ছে করছে খুব।।ইশশ কি বাজে চিন্তা তার!!!অদিতি নিশ্চয় খুব বাজে মেয়ে…নয়তো এমন অদ্ভুত ইচ্ছে হবে কেন তার??কই আদনানকে দেখে তো হয় না এমন….কথাটা ভেবেই কান্না পেয়ে যাচ্ছে অদিতির….কেন হচ্ছে এমন?কেন??আয়ান চোখ বুজা অবস্থায় বলে উঠলো-
.
আমি হয়তো তোমার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম সেদিন!!ওই পিকনিকের দিনে তোমার হাসিতে পাগল হয়ে গিয়েছিলাম আমি অদিতি…জাস্ট পাগল।।তখন থেকে তোমার থেকে দূরে সরার প্রচেষ্টা আমার…আমি ভেবেছিলাম তুমি আমার জীবনে এলে আমার জীবনটাও বাবার জীবনের মতো শেষ হয়ে যাবে।।আমি এমন কোনো সন্তানের বাবা হতে চাই নি যে সন্তান আমার মতোই কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকবে,,,নিজের মাকে ঘৃণা করবে।।কিন্তু নিয়তির খেলায় আবারও তোমার সাথে দেখা হলো আমার….সেদিন কোম্পানির মিটিং রুমে তোমায় দেখে যে কতোটা খুশি হয়েছিলাম আমি,,বোঝাতে পারবো না তোমায়।। মনে হয়েছিলো প্রতিদিন যে সময়টাকে খুব মিস করতাম সেই সময়টা শুধুই তুমি।।তোমার সাথে চাইল্ড হোমে কাটানো প্রতিটি দিন ছিলো স্পেশাল…কিন্তু এই ফিলিংসটা যে আসলে কি তা বুঝতে পেরেছিলাম ফাহিমের বিয়েতে।।তোমার দিকে কেউ তাকালে রাগে শরীর জ্বলে যেতো আমার…মাঝে মাঝে মনে হতো খুন করে ফেলি তোমায়….কেন তাকাবে তোমার দিকে ওরা??তুমি তো আমার!!সেদিন তোমার মার সামনে তোমাকে নিজের বউ বলার কারণ হলো ওই আন্টিটা তোমার বিয়ের কথা বলেছিলো তা মোটেও সহ্য হয় নি আমার।।তোমাকে কেউ নিজের ছেলের বউ হিসেবে চিন্তা করছে তাও মেনে নিতে পারছিলাম না আমি।।কারণ অদিতি তো শুধু আমার তাই না??যখন বুঝলাম পাগলের মতো ভালোবাসি তোমায়..তখনই বাবার কথা মনে পড়লো…মনে পড়লো মার দেওয়া ধোঁকার কথা।।তুমিও নিশ্চয় আমায় ছেড়ে চলে যাবে??তাহলে তো আমি মরে যাবো অদিতি…. শেষ হয়ে যাবো।।তাই তোমার সাথে খারাপ বিহেভ করতে লাগলাম…কিন্তু তাতে আমার কষ্টটা যেনো আরো বাড়তেই লাগলো,,তোমার শুকনো মুখটা বুকে চাকু মারতে লাগলো বারবার…তাই বিয়ের পরের দিনই চলে গেলাম ইউএস…..মামনি-ফাহিম সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলাম তোমায় ভুলবো বলে।।কারণ ওদের কথা মনে হলেই তো তোমার কথা মনে পড়তো আমার…..জানতে ইচ্ছে করতো কেমন আছো তুমি??(একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে) অবশেষে একদিন বাবা এক থিওরি শুনালো আমায়…ডিমের থিওরি!!সেদিন প্রথম মনে হলো আমি ভুল করছি…রিয়ার দেওয়া চিঠি পড়ে বুঝতে পারলাম…আমার অদিতি কখনোই আমার সন্তানের ঘৃণার মা হবে না…সে তো হবে পৃথিবীর বেস্ট মাদার…আমার বেস্ট জীবনসঙ্গী! কারণ আমার অদিতি তো শুধু ভালোবাসতে জানে…কষ্ট দিতে তো সে জানে না।।কিন্তু যেদিন তোমার কাছে ছুটে আসবো জানতে পারলাম তুমি অন্যকারো…ভেঙে গুড়িয়ে গিয়েছিলাম সেদিন…মরে যেতে ইচ্ছে করছিলো।।তাই আবারও বন্ধ করলাম যোগাযোগ…. কিন্তু রিয়া নামের ইঞ্জিলটা আমাকে আবারও আশা দিলো….বললো তুমি এখনো আমার…শুধুই আমার!!
.
এবার চোখ খুলে তাকালো আয়ান।আবারও টেবিলে ভর দিয়ে বসলো আয়ান….অদিতির চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো –
.
একটু ভালোবাসা দিবে আমায় অদিতি?একটু বাঁচাও আমায়….এই বুকটাতে একটু হাত রাখো না প্লিজ..বড্ড ব্যাথা করে এখানটায় তুমি ছোঁয়ে দিলেই শান্তি।।একটু ছোঁবে আমায়??(টলমলে চোখে)
.
অদিতি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।সামনে বসা মানুষটার ভেতর এতো অনুভূতি লুকিয়ে ছিলো… ভাবতেই পারে নি সে।।তার কি খুশি লাগছে?? নাহ!!কিছুতেই খুশি লাগতে পারে না তার….সে তো শুধু আদনানের আমানত…ওর হবু বউ!! ইশশ এই শব্দটা আজ এতো ভারি লাগছে কেন অদিতির??অদিতি কোনো কথা না বলে আয়ানের ডাক উপেক্ষা করে হাঁটা দিলো গেইটের দিকে…এখানে তো আর থাকা চলবে না তার…সে তো শুধু আদনানের…শুধুই তার…আয়ান থেকে দূরে থাকতে হবে তার…অনেক দূরে…!!আয়ান টলমলে চোখে অদিতির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে…এই মেয়েটাকে তো তার চায়….একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার হলেও চায়!!
.
#চলবে🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here