অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part:36

অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part:36
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤

.
.
🍁
.
বিছানায় ঠেস দিয়ে বসে আছে রিয়া…ফাহিম ল্যাগেজ থেকে রিয়ার মেডিসিন বের করছে।ওর কপাল হালকা কুঁচকানো… ভুল করে কোনো মেডিসিন ফেলে আসে নি তো?ঠিক তখনই তিন কাপ কফি নিয়ে রুমে ঢুকলো আয়ান।রিয়াকে একটা কাপ এগিয়ে দিতে দিতে বলে উঠলো –
.
এখন কেমন আছো রিয়া?
.
রিয়া হাসলো।কফিটা হাতে নিয়ে মুখে দিতে দিতে বললো –
.
ভালো! আসার পর আর বমি টমি হয় নি।।আচ্ছা ভাইয়া, এখানে কি টক জাতীয় কিছু পাওয়া যাবে?
.
তুমি খাবে আর পাওয়া যাবে না তা কি হয়??(মুচকি হেসে)আমি এক্ষনি ব্যবস্থা করছি ডার্লিং..
.
থেংকিউ ভাইয়া…
.
নিজের কফিটা হাতে নিয়ে রিয়ার পাশে বসতে বসতে বলে উঠলো ফাহিম।
.
বুঝলি আয়ান?আমাদের হিরো একদম তোর মতো হবে….আরে মাত্র ৪ মাসেই বাবা-মা দুজনেরই নাজেহাল অবস্থা করে দিয়েছে।(রিয়ার পেটে ঠোঁট রেখে) এই যে চ্যাম্প?এতো কেন জ্বালাচ্ছো মামনিকে?বেরিয়ে এসো মাইর হবে….
.
ফাহিমের কথায় আয়ান রিয়া দু’জনেই হেসে উঠলো –
.
এই?আপনি ওকে এখনি বকছেন?একদম বকাবকি করবেন না তো।।মা-বাবাও তো আপনাকে বকে না….তাহলে আপনি ওকে কেন বকছেন??
.
আরে বাবা!! ছেলে আমার মতো গুড বয় হলে তো আর বকা লাগে না…এই বাঁদরটার মতো হলে শুধু বকা না…মাইরও চলবে।এত্তো বড় সাহস আমার বউকে ব্যাথা দেয়!!!
.
ফাহিমের কথায় আবারও একপত্তন হেসে নিলো সবাই।হঠাৎ হাসি থামিয়ে বলে উঠলো আয়ান-
.
হঠাৎ এতো তাড়াহুড়ো করে এখানে আসার কারণ কি রিয়া?
.
রিয়া স্মিত হেসে কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বললো-“কারণটা অদিতি আপু” অদিতির নামটা শুনেই চমকে উঠলো আয়ান।বুকের মাঝে তীরের মতো লাগলো নামটা।নিজেকে সামলে নিয়ে বলে উঠলো-
.
অন্যের ওয়াইফ আমাদের মাঝের কারণ কেন হতে যাবে রিয়া?
.
অন্যের ওয়াইফ টা যে এখনও হয়ে ওঠে নি… তাই!!
.
মানে?(অবাক হয়ে)
.
আর মাত্র ৩০ দিন ভাইয়া…৩০ দিন পর উনি অন্যকারো হবেন।।ইউ হেভ জাস্ট থার্টি ডেইস।ভাইয়া?সুখটা কখনো নিজে থেকে ধরা দেয় না।আপনি চুপচাপ বসে থাকবেন আর আশা করবেন ভালোবাসা নামক জিনিসটা আকাশ থেকে টুপ করে আপনার হাতে এসে পড়বে তা কিন্তু নয়।ভাইয়া?ভালোবাসা কোনো হেলাফেলার জিনিস নয়?কবিরা বলে কি জানেন?ভালোবাসা হলো এক তপস্যা…যারা পায় তারা ভাগ্যবান আর যারা পায় না তারাও সুখের অধিকারী…তপস্যা করেও না পেলে তাতে দুঃখ নামক শান্তি আছে…তাতেও সুখ।ভালোবাসার জন্য মাঝে মাঝে কেঁদেও সুখ….যখন আপনি জানবেন অন্যপাশের মানুষটিও আপনাকে এতটাই ভালোবাসে….এতোটাই চায়!!ভাইয়া?এই তপস্যাটা না করে ভালোবাসা পেয়ে যাবেন ভাবলেন কি করে?সবসময় কষ্ট থেকে দৌড়ে পালালে কষ্টটা সুখে পরিণত হবে না…কষ্টের সামনে দাঁড়িয়ে মাথা উঁচু করে ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বলতে হবে আই অলসো লাভ ইউ….দেখবেন কষ্টটা নিজে থেকেই সরে যাচ্ছে….কারণ তাকে আপনি ইঞ্জয় করছেন।।আর আপনি তো জানেনই…. জঘন্যতম সময়গুলো অনেক লম্বা হয়….লাইফের জঘন্যতম দিনগুলোকেও যদি ইন্টারেস্টিং বানিয়ে দেওয়া যায় তো… দেখবেন কোথাও রাত নেই…চোখটা খুললেই ভোর!!
.
বাহ্ আমার বাচ্চা বউ বড় হয়ে গেছে গো…(রিয়াকে জড়িয়ে ধরে)
.
ফাহিমের কথায় আবারও হাসলো রিয়া।আয়ান চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে।রিয়া আবারও বলে উঠলো-
.
ভাইয়া?অদিতি আপুর সামনে গিয়ে আপনাকে দাঁড়াতে হবে।নিজের মনের অনুভূতিগুলো ঢেকে না রেখে খোলে দেখাতে হবে সবটা।।গরজ তো আপনারই ভাইয়া…একটু প্রাণখোলে হাসার গরজ…উনাকে ছাড়া পারবেন তো হাসতে?ভাইয়া?ব্রাজিলিয়ান লেখক পাউলো কোয়েলহো’র “দ্য আলকেমিস্ট ” বইটা পড়েছেন?ওখানে একটা লাইন আছে।লাইনটা কি জানেন?? “When you really want something, the universe conspires in your favour” ভাইয়া তাই বলি কি?মন থেকে অদিতি আপুকে চেয়েই দেখুন না…দেখবেন পুরো ব্রক্ষ্মান্ড আপনার পক্ষে ষড়যন্ত্র করছে…..লেটস ট্রাই….পৃথিবীর সবাই আপনার জন্যই তো হাত বাড়িয়ে দিয়েছে…এবার শুধু এগিয়ে যাওয়ার অপেক্ষা!! তুমি পারবে দাদাভাই!!
.
রিয়ার মুখে “তুমি” আর “দাদাভাই” শব্দ দুটি শুনে চমকে উঠলো আয়ান।টলটলে চোখে মাথা তুলে তাকালো।।মুহূর্তেই আলিয়ার কথা মনে পড়লো তার…তার ৫ দিনের পিচ্চি বোনটা!!যে নবজাতক শিশুটাকে ছুঁড়ে ফেলে গিয়েছিলো মা…তার পরেরদিনই শ্বাস কষ্টের স্বীকার হয়ে মরে গেলো বোনটা।।তার ছোট্ট বোনটা ৬ দিনের মাথায়ই হারিয়ে গেলো…আজ বেঁচে থাকলে হয়তো রিয়ার মতোই ডাকতো তাকে ” দাদাভাই!” ইশশ ওই মহিলার জন্য সব শেষ হয়ে গেলো তার…আয়ান কাঁপাকাঁপা গলায় বললো- ” ক্যান আই হাগ ইউ??” রিয়া মুচকি হাসলো।।ফাহিম হাসিমুখে বললো-” এই সাবধানে আমার বউ” আয়ান রিয়ার পাশে বসতে বসতে টলমলে চোখে হাসি মুখে বলে উঠলো –
.
আর আমার বোন।।(রিয়াকে একহাতে জড়িয়ে নিয়ে)লাভ ইউ বেবি!!মাই লিটল বেবি…আমি কি তোমায় অলি বলে ডাকতে পারি??
.
রিয়া মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।।আয়ানের স্পর্শে আজ রিয়াদকে খুঁজে পাচ্ছে রিয়া।।রিয়াদও এতোটা ভালোবেসেই বুকে টেনে নেয় তাকে।।ফাহিমও মুচকে হেসে দুজনকে জড়িয়ে ধরলো….” আমাকেও ভালোবাসা দে একটু”
.
🍁
.
আয়ান চেয়ারে বসে আছে ঠিক তার সামনে বসে আছে অদিতি।।অদিতি এখনো শকড্… আয়ান মুখ কাঁচুমাচু করে এদিকওদিক তাকাচ্ছে।।অফিসের সামনে থেকে একরকম তুলে আনা হয়েছে অদিতিকে।।নো স্যাটেলমেন্ট সরারসি কিডন্যাপ!!আয়ানের তো অলওয়েজই তাড়াহুড়ো এবারও তার ব্যতিক্রম নয়…এয়ারপোর্ট থেকে সোজা অদিতির অফিসের সামনে থেকে উঠিয়ে নিয়েছে তাকে….কি সাংঘাতিক!!
.
#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here