অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part:35

অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part:35
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤

.
.
🍁
.
খাটের কোণে চুপচাপ বসে আছে রিয়া।মনটা বেশ খারাপ তার…আয়ান কেন ফোনটা অফ করে রেখেছে?ফোনটা অন রাখলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেতে?? খুব??রিয়ার এই মুহূর্তে আয়ানের মাথায় এক বালতি গোবর ঢেলে দিতে ইচ্ছে করছে…কিন্তু সমস্যাটা হলো গোবরটা পাবে কোথায়?আচ্ছা ঢাকার বাজারে কি কোথাও গোবর বিক্রি হয়??গ্রামে নাকি হয়…তাহলে এখানে হয় না কেন??ধেৎ ভালো লাগে না।।ফাহিম ভার্সিটি থেকে ফিরেছে মাত্র…দরজায় দাঁড়িয়েই রিয়ার কাঁচুমাচু মুখ দেখে হেসে ফেললো সে।। ভেতরে গিয়ে হাতের কোট আর ব্যাগটা সোফায় রেখে টাই এর নাটটা ঢিল করতে করতে বলে উঠলো –
.
মহারানীর কি মুড সুয়িং হচ্ছে??যা যা বলেছিলে সব এনেছি…ব্যাগে আছে বের করে নাও….
.
ফাহিমের কথায় একচুল পরিমানও নড়লো না রিয়া।ঠোঁট উল্টে ঠাঁই বসে রইলো।।ফাহিম এবার ভ্রু কুঁচকে তাকিয়েই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিয়ার সামনে ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে রিয়ার হাতটা টেনে নিলো নিজের হাতে।।নরম গলায় বলে উঠলো –
.
বেশি খারাপ লাগছে?বমি হয়েছে আরো?কিছু খাবে? আনবো?টক?ঝাল?নয়তো মিষ্টি?
.
কিচ্ছু হয় নি ঠিক আছি।।
.
তাহলে এভাবে মুখ ফুলিয়ে রেখেছো কেন?(গালে হাত দিয়ে)
.
আয়ান ভাইয়াকে কি কোনোভাবেই আনা যায় না দেশে?উনাকে অদিতি আপুর সামনে দাঁড়াতে হবে।উনার ফিলিংস থাকুক বা না থাকুক উনাকে সিচুয়েশন টা ফেইস করতে হবে…আর মাত্র ৪৫ টা দিন!! তারপর সবই তো শেষ হয়ে যাবে…প্লিজ কিছু একটা করুন…কিছু একটা!!
.
কি করবো আমি বলো??ওকে তো ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না…সব যোগাযোগ অফ..
.
আমি কিছু জানি না…আপনাকে কিছু একটা করতেই হবে…উনাকে দেশে আনতেই হবে প্লিজজ!!
.
রিয়া?পাগলামো করো না।আমি নিজেই যেতাম কেলিফোর্নিয়া কিন্তু তোমাকে এই অবস্থায় রেখে কিভাবে যাই বলো?তোমার শরীর দিন দিন খারাপ হচ্ছে।দুদিন যাবৎ যেভাবে বমি করছো….নো রিয়া আই কান্ট!!
.
ফাহিমের কথায় মুখটা কালো হয়ে এলো রিয়ার।।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে…তার নিজের শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না আজকাল।।খেতেও পারছে না তেমন….কিন্তু ওর এই কষ্টটা তো সাময়িক…আর কয়েকমাস পরই কেটে যাবে কিন্তু অদিতির বিয়েটা হয়ে গেলে তো দুটি জীবনে কষ্টটাই হয়ে উঠবে প্রধান!!এটা কি হতে দিতে পারে রিয়া??
.
🍁
.
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে অদিতি।এই ৩/৪ টা বছরে কতোকিছু পেরিয়ে এলো সে।এতো কষ্ট নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানো টা কতোটা যে কঠিন ছিলো তা অদিতি জানে।তবু সে উঠে দাঁড়িয়েছে…নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।।কিন্তু তবুও কতোটা অসম্পূর্ণ সে!! আদনান ভালো ছেলে।অদিতি জানে আদনান ভালো রাখবে তাকে তবু কোথাও যেন কিছু নেই।।কিছু একটা নেই!! সেই কিছু একটার জন্যই মনটা যে মাঝে মাঝেই কেঁদে ওঠে তার।চিৎকার করতে ইচ্ছে করে…সব ছেড়ে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।।ও কি সত্যি ভালো আছে??নাকি এতোসব কিছু একটা নাটক…নিজের সাথেই করা এক ভয়ানক নাটক!!!এই নাটকটায় যেনো আজ জীবনের অংশ হয়ে গেছে তার।।রোবটের মতো হেসে চলেছে কতো কাল জুড়ে…নেই কোনো অভিযোগ!! নেই কোনো অভিমান!!কিচ্ছু নেই…কিচ্ছুটি না!! এই তো ২৫ ডিসেম্বর!! রিয়াদ আর অদিতির এনিভার্সারির দিনটা…প্রায় ৪ বছর আগের কথা…সেদিন থেকেই তো হাসতে ভুলে গিয়েছিলো অদিতি… প্রাণখুলে হাসি!! আয়ান এসে সেই হাসিটাকে ফিরিয়ে এনেছিলো প্রায়…কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারলো কি??বরং নিজেই হারিয়ে গেলো…
.
🍁
.
রাত প্রায় ১১ টা।ক্যালিফোর্নিয়ার রাস্তায় গাড়ি দৌড়িয়ে বাড়ি ফিরছে আয়ান।৷আকাশে বিশাল একটা চাঁদ উঠেছে আজ।এই বিদেশের মাটিতেও ওই চাঁদটাকে বড্ড আপন মনে হচ্ছে তার।।চাঁদের ওই শুভ্র আভায় যেনো ফুটে উঠছে অদিতির মুখ।।পৃথিবীর অন্যকোনে কোন এক বাড়ির ছাঁদে দাঁড়িয়ে অদিতিও হয়তো এই চাঁদটাকেই দেখে চলেছে একদৃষ্টিতে।কিন্তু আফসোস! আজ তার পাশে আয়ান নেই আছে অন্যকেউ। পাতলা শাড়ি গেলে পেটের মাঝখানে রাখা হাতটা আজ অন্যকারো।।আজ অদিতি অন্যের ঘরের শোভা…অন্যের আকাঙ্ক্ষার আর স্বপ্নের বস্তু।এতো কিছুর মাঝে আয়ান কোথায়??কোথাও নেই সে…এনগেজমেন্টের একমাস পেরিয়ে গেছে অদিতির… এতোদিনে হয়তো বিদেশ ভ্রমনের নাম করে হানিমুনটাও হয়ে গেছে তাদের।কথাটা ভাবতেই বুকে জ্বালা ধরে গেলো আয়ানের।আচ্ছা..তার বুকটাকে কি কেউ এসিড ঢেলে পুড়িয়ে দিলো??এতো জ্বলছে কেন বুকটা???গাড়িটা পার্ক করে…লিফ্টে উঠতেই আয়ানের মনে হলো আজ কিছু একটা ভালো হবে তার সাথে…সামথিং উইল বি গুড ফর হিম।কিন্তু কি সেটা??চিন্তিত মুখে লিফ্ট থেকে বেরিয়েই নিজের এপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়ালো আয়ান। দু’বার কলিংবেল বাজাতেই খুলে গেলো দরজা।কপাল কুঁচকে একরাশ আলসেমী নিয়ে ভেতরে ঢুকতেই অবাক হলো সে…রিয়া!! দুর্বল শরীর নিয়ে সোফায় বসে আছে রিয়া।।সারা শরীর রক্তশূন্য তার..দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভীষন অসুস্থ সে।।তারপাশেই চিন্তিত মুখে একরাশ ক্লান্তি নিয়ে বসে আছে ফাহিম!! আয়ান বিস্ময় নিয়ে বলে উঠলো-
.
রিয়া ফাহিম?তোরা?কখন এলি?আর রিয়ার কি হয়েছে??ইজ শী ওকে??
.
শালা!! এতোক্ষণে আসার সময় হলো?ইচ্ছে তো করছে খুন করি তোকে।অসুস্থ বউকে নিয়ে বাংলাদেশ থেকে চলে এলাম আর তুই??
.
আরে..জানাবি তো!! আমি নিজে রিসিভ করতাম…(সোফায় বসতে বসতে)
.
একটা ঘুষি দিবো শালা হারামি!! ১ মাস ধরে কনটিনিউয়াসলি কন্ট্রাক করার চেস্টা করছি বাট সাহেবের কোনো খবর নেই।।১১ টা মাস ধরে যোগাযোগ অফ করে রেখেছিস… মাঝে একদিন ফোন দিলি তাও কিছু না বলেই কাট!! আমরা কেমন আছি জানতে ইচ্ছে করে নি একবার??এরমাঝে মা যে মাইন্ড এট্যাক করেছিলো সেই খবরটাও তোকে দেওয়ার উপায় ছিলো না আমার।।দু’মাসের জন্য প্যারালাইসড্ ছিলো…মা কতোবার তোকে দেখতে চেয়েছিলো জানিস??খুব তো মামনি মামনি করিস….এই তোর মামনির প্রতি ভালোবাসা আয়ান!! যখন আমার পাশে তোকে প্রয়োজন ছিলো তখন তুই ছিলি না আয়ান…এতোটা স্বার্থপর কিভাবে হলি তুই??কিন্তু আমি স্বার্থপর হতে পারি নি।।আমার বাচ্চা বউকেও বুঝাতে পারি নি….অসুস্থ শরীর নিয়ে ছুটে এসেছে এখানে…৪ ঘন্টার জার্নিতে ৫/৬ বার বমি করেছে…ওর দিকে জাস্ট তাকানো যাচ্ছে না…
.
রিয়া দুর্বল গলায়,, ফ্যাকাশে মুখে হালকা হাসি টেনে নিয়ে বলে উঠলো- “আহ্ থামুন না? এসেই ঝগড়া শুরু করে দিয়েছেন।”
.
রিয়ার কথায় রাগ কন্ট্রোল করে চুপ করে বসে রইলো ফাহিম।আয়ান স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।।এতোকিছু ঘটে গেছে এই কদিনে??মামনি!! নিজেকে সত্যিই খুব সেলফিশ লাগছে তার…খুব!! নিজের দুঃখ ভুলতে গিয়ে নিজের কাছের মানুষগুলোকে এতোটা কষ্ট দিয়ে দিয়েছে সে?? মানুষরা হয়তো এমনিই হয়..
.
#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here