অবশেষে ভালোবাসি (সিজন-২)❤part: 40

অবশেষে ভালোবাসি (সিজন-২)❤part: 40
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤

.
🍁
.
রাত প্রায় দুটো।ঢাকা নামক ব্যস্ত শহরটি ঘুমের রাজ্যে পরিনত হয়েছে তখন।চারদিকে সুনসান নীরবতা।এ যেনো শহরের এক নতুন রূপ….কোনো উচ্ছল তরুনীর হঠাৎ থেমে যাওয়ার এক দৃশ্য।এই নিস্তব্ধ পরিবেশে একতলা একটা বাড়ির সামনে লাল চোখে তাকিয়ে আছে একটি ছেলে।চোখে তার হাজার আকুতি.. হাজারও তৃষ্ণা। ফর্সা মুখে নাকটা টকটকে লাল হয়ে আছে গরমে নাকি কান্নায়..কে জানে??গায়ে নীল রঙের শার্ট…পরনে সাদা রঙের জিন্স…শার্টের ওপরের দু থেকে তিনটি বোতম খোলা হওয়ায়…সেখানে রক্তের ছাপ স্পষ্ট। ছেলেটা এক দৃষ্টিতে একতলার দক্ষিণের ঘরটির দিকে তাকিয়ে আছে….চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে বার বার।ওখানেই তো আছে ওর ভালোবাসার মানুষটি… অদিতি!!কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে দেয়াল টপকে বাড়ির সীমানায় ঢুকে পড়লো সে…অদিতির রুমটা একতলার একদম কোণায়…রুমের সাথে লাগোয়া একটি খোলা বারান্দা।আয়ান বারান্দার ওয়ালটা টপকে বারান্দার ভেতরে গিয়ে দাঁড়ালো।দরজায় ধাক্কা দিয়ে দেখলো, দরজা লাগানো…অনেক চেষ্টা করেও খুলতে না পেয়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো সে…জানালাটা খোলাই ছিলো শুধু পর্দাটা টেনে দেওয়া।।হয়তো এই অসহ্য গরমে হালকা বাতাস আসা যাওয়ার সুবিধার্থেই জানালাটা খুলে রাখা হয়েছে….আয়ান পর্দাটা একটু সরিয়ে ভেতরে তাকালো ঘরটা একদম অন্ধকার….বাইরের থেকেও বেশি অন্ধকার…আরেকটু ঝুঁকে দেখতে গেলেই পা লেগে পাশে রাখা ফুলের টবটা কাত হয়ে দেয়ালের সাথে লেগে অদ্ভুত একটা শব্দ করে উঠলো।সাথে সাথেই দরজা খুলে বেরিয়ে এলো কেউ।।আয়ান একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে মানুষটির দিকে…অদিতি!!পাতলা একটা টপের সাথে ঢোলা প্লাজু পড়ে আছে সে…চুলগুলো হাত খোঁপা করা…চাঁদের আলো গায়ে পড়ায় কেমন একটা মূর্তি মূর্তি ভাব চলে এসেছে তার মাঝে।অদিতি এদিকে সেদিক তাকিয়ে শব্দের উৎসটা খুঁজতে লাগলো।হঠাৎ করে জানালার পাশে কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চেঁচিয়ে উঠতেই আয়ান দৌড়ে গিয়ে মুখ চেপে ধরলো তার।অদিতি অবাক দৃষ্টিতে আয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।চাঁদের আলো আয়ানের বাম পাশটাকে আলোকিত করে তুলেছে।আলো-আঁধারির মাঝে আয়ানকে কেমন অদ্ভুত লাগছে অদিতির কাছে…যেনো বদ্দ উম্মাত।মুখ চেপে ধরেই কিছুক্ষণ নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আয়ান।।তারপর নেশাভরা কন্ঠে বলে উঠলো –
.
ভালোবাসি!!একটু ভালোবাসবে আমায়??আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি অদু… আই এম গেটিং ম্যাড….
.
অদিতির চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে….এক,দুই করে অসংখ্য ফোঁটায় ভিজে যাচ্ছে আয়ানের হাত।।আয়ানের কন্ঠে বলা “অদু” ইশশ কি সুন্দর করেই না উচ্চারণ করলো নামটা।।কারো কথায় এতোটা আবেগ কি থাকতে পারে??এতোটা??অদিতির চোখে পানি দেখে ব্যস্ত হয়ে পড়লো আয়ান-
.
কাঁদছো কেন অদু??ব,,ব্যাথা লেগেছে??সসসরি সসরি…আর হবে না।।
.
কথাগুলো বলেই দু’পা পিছিয়ে দাঁড়ালো আয়ান।মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে সে।অদিতি নীরব দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে…বুকে গড়িয়ে পড়া রক্তে নীল শার্টের একপাশটা ভিজে কালচে রঙ ধারণ করেছে…অদিতি কাঁপা হাতে ওদিকে ইশারা করে বলে উঠলো –
.
রররক্ত!!ককককেন…কি হয়েছে আআপনার?
.
আয়ান এখনও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে….আবারও চারপাশে অস্বস্তিকর নীরবতা…হালকা বাতাসের সাথে খুব নীরবেই মিশে যাচ্ছে দুজন নর নারীর নিশ্বাসের শব্দ!!অদিতি এবার কাঁপা কাঁপা পায়ে এগিয়ে গেলো..পায়ের নুপুরদুটো রিনিঝিনি শব্দ তুলে ইতি টানলো বিষাক্ত নীরবতার….কাঁপা হাতে শার্টের কলার ধরে একটা টান দিয়েই বলে উঠলো -“কি হলো?কথা বলছে….” এটুকু বলেই থেমে গেলো সে…বুকের একপাশে কি নিষ্ঠুর ভাবে কাটা হয়েছে, দেখেই আত্মা কেঁপে উঠলো অদিতির। আরেকটু খেয়াল করতেই বুঝতে পারলো অদিতি কিছু একটা লেখা হয়েছে তাতে….কিন্তু রক্তের আড়ালে লেখাটা ঠিক বুঝা যাচ্ছে না।।রক্তে মাখামাখি আয়ানের বুক দেখে অদিতির মাথাটা ঘুরে উঠলো মুহূর্তেই….কোনোরকম নিজেকে সামলে নিয়েই ছুট লাগালো ঘরে….কিছুক্ষণের মাঝে ফিরে এসেই আয়ানকে টেনে পাশের সোফায় বসিয়ে দিলো সে।।এতোক্ষণে বারান্দায় আলো জ্বালানো হয়ে গেছে….আয়ানের এমন উশকুখুশকু পাগল পাগল চেহারা অদিতির ভেতরটা যেনো খুবলে খাচ্ছে।তবু নিজেকে শক্ত করে…স্যাভলনে তুলো ভিজিয়ে কাঁটা স্থানটা পরিষ্কার করতে লাগলো সে।কাঁটা স্থানে স্যাভলনের ছোঁয়া পেয়েই কেঁপে উঠলো আয়ান…সাথে সাথেই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো অদিতির…ক্রমাগত ফু দিয়ে চলেছে সে…সাথে সেই কান্না…যেনো ব্যাথাটা তারই লাগছে…হ্যা!!সত্যিই তার লাগছে…বুকে লাগছে,,খুব জোরে লাগছে,,ভীষন জোরে।।একটা মাস ধরে ক্রমাগত বিভিন্ন পাগলামো করে চলেছে আয়ান।।আর আজ!!অদিতি রক্তগুলো পরিষ্কার করতেই আয়ানের বুকে ভেসে উঠলো আঁকা বাঁকা অক্ষরে লেখা তার নাম “অদু”। লেখাটা দেখা আবারও ডুকরে উঠলো সে….কিন্তু আয়ান নিশ্চুপ।চুপচাপ শুধু অদিতিকেই দেখে চলেছে সে….এ দেখার হয়তো শেষ হবে না কখনো….এই দেখাই সারাটা জীবন কল্পনায় পুড়ে পুড়ে মারবে তাকে।ভালোবাসা খুব যন্ত্রণার…. আর এই যন্ত্রণার মাধ্যমেই এই ভালোবাসাটা পায় পরিশুদ্ধতা।।আয়ান এবার নড়ে চড়ে বসলো…টলমলে চোখে অদিতির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো –
.
সত্যি মরে যাবো অদু।প্লিজ….আমাকে একটা সু্যোগ দাও…শুধু একটা সুযোগ!!
.
অদিতি নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। কঠিন গলায় বলে উঠলো –
.
কাল আমার গায়ে হলুদ ডক্টর আয়ান তারপর বিয়ে।।।প্লিজ চলে যান!!দেশ ছেড়ে চলে যান।।এমন পাগলামো করার কোনো মানে হয় না।আমি আপনাকে অনেকবার বলেছি আজও বলছি…আপনাকে ভালো বাসি না আমি…বাসি না।
.
তাহলে কাঁদছো কেন?তোমার এই চোখের এই জল কার জন্য অদু?(টলমলে চোখে)
.
আ আমি কাঁদছি না।প্লিজ চলে যান আপনি।আমার পথটা আরো কঠিন করে দিবেন না প্লিজ।
.
এবার উঠে দাঁড়ালো আয়ান।।অদিতিকে একটানে নিজের কাছে এনে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো সে-
.
মজা করো আমার সাথে?আমার ধারনায় ঠিক ছিলো, তোমরা সব মেয়েরা একরকম সব মেয়ে…যখন বুঝতে পারো কোনো ছেলে তোমাদের পাগলের মতো ভালোবাসে তখনই শুরু করো তোমাদের খেলা।নির্মম খেলা।তোমাদের এই খেলায় আমি,,আমার বাবা,,আরো কতো কতো ছেলেরা ধ্বংস হয়ে যায়।।রিয়া ভুল বলেছিলো…তুমিও ফেইক,,তুমিও আমার মায়ের মতো আমায় শুধু কষ্টই দিতে জানো।কি করি নি তোমার জন্য?একটা মাস ধরে পাগলের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছি…আর আজ তুমি আমাকে ভালোবাসার গল্প শুনাচ্ছো??আমার দুর্ভাগ্য কি জানো?আমি আমার মায়ের মতো তোমাকে ঘৃণাও করতে পারছি না অদিতি,, পারছি না।।মা একবার আমাকে ভেঙে দিয়ে গেছে প্লিজ তুমি আমায় এভাবে গুড়িয়ে দিও না।।পায়ে ধরি অদি…প্লিজ একটু ভালোবাসো আমায়।ওকে ওকে ভালোবাসতেও হবে না…জাস্ট আমার সাথে থাকবে…আমার হয়ে আমার সাথে থাকবে…এটুকু আপাতত আমার জন্য করো…প্লিজ অদু প্লিজ..
.
আ আ আমি আদনানকে ভাভাভালোবাসি ওকেই বিয়ে করবো।চলে যান আপনি…প্লিজ গো…
.
কথাটা বলেই এক দৌড়ে ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো সে।আয়ান কিছুক্ষণ স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকেই টলে উঠলো।দরজার দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দু’জনের চোখেই পানি,,ক্রমাগত ঝড়ে চলেছে শুধু ভালোবাসার মানুষটির জন্য….তবু কতো দূরে তারা।আবারও হয়তো কিছু ভুল হচ্ছে….আবারও হয়তো হচ্ছে কিছু ভুল বুঝাবুঝি… এর পরিণতি কি হবে… কে জানে এর ভয়ানক পরিণতি ঠিক কতোটা ভয়ানক হতে পারে..ঠিক কতোটা??কাল সকালে অদিতির গায়ে হলুদ….বিকালেই বিয়ে।সব কেমন তাড়াহুড়ো করে হয়ে যাচ্ছে চারপাশে….অায়ান আর ভাবতে পারছে না…আর কয়েকটা ঘন্টা তারপরই তার অদিতি হবে অন্য কারো ঘরের…!!উফফ বুকটা এতো জ্বলছে কেন?এই কাঁটা ছেঁড়ার চেয়েও ভয়ঙ্কর ব্যাথা হচ্ছে কোথাও….মাথাটা ঝিমঝিম করছে তার…এবার হয়তো আর শেষ রক্ষা হবে না…হবে না…হবে না….এসব ভাবতে ভাবতেই অগোছালো পায়ে হাঁটতে লাগলো আয়ান….গন্তব্যহীন এই চলার কি শেষ হবে কখনো??
.
#চলবে🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here