অবশেষে ভালোবাসি (সিজন-২)❤part: 41

#অবশেষে ভালোবাসি (সিজন-২)❤part: 41
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤

.
🍁
.
ছাড়ি ওমার হাম মার মারকে জি লিয়ে
এক পাল তো আব হামে
জিনে দো জিনে দো…
ছাড়ি ওমার হাম মার মারকে জি লিয়ে
এক পাল তো আব হামে
জিনে দো জিনে দো…
না না না
না না না
না না
না না না না
গিভ মি সাম সানশাইন
গিভ মি সাম রেইন
গিভ মি আনাদার চান্স
আই ওয়ান্না গ্রো আপ ওয়ান্স এগেইন।।
বাচপান তো গেয়া
জাওয়ানি বিহ গেয়ি
এক পাল তো আব হামে
জিনে দো জিনে দো…
.
গিটারের তালে তালে ভাঙছে আয়ানের বুক।।গানের প্রতিটি লাইনের সাথে বেরিয়ে আসছে জীবনের প্রতিটি ক্ষোভ।।চোখ দুটো আটকে আছে হালকা ফরসা হয়ে আসা ফ্যাকাশে আকাশটাতে।।চারদিকে পাখির কিচিরমিচির শব্দ…পাখিদের জন্যও নতুন এক সকাল আর নতুন এক আশার সূচনা হতে চলেছে…কিন্তু আয়ানের ক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণই বিপরীত…আজ তার আশা,,ভরসা,, সুখ সবই বিলীন হয়ে যাচ্ছে…এই সকালের আলোটা তার জন্য যে দুঃসহ এক ব্যাথা।।জীবনের প্রথম মনে হচ্ছে এই রাতটা না কেটে থমকে গেলেই হয়তো ভালো হতো।।চারদিকটা অন্ধকারে ঢেকে থাকলেই হয়তো সে একটা আশা খুঁজে পেতো।।কিন্তু এই আলোটার সাথে সাথে যে তার আশাটাও বিলীন হয়ে যাচ্ছে….একেবারে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে সে।আর কয়েকটা ঘন্টা মাত্র…তারপর…তারপর….!! নাহ আর ভাবতে পারছে না আয়ান।।হঠাৎ করেই কাঁধে কারো হাতের ছোঁয়ায় থেমে গেলো আয়ান।।ঠিক তখনই কানে এলো একটা মিষ্টি কন্ঠ…
.
দাদাভাই!!
.
শব্দটা কানে যেতেই চোখের কোন বেয়ে দু’ফোটা পানি ঝরে পড়লো গালে।।ডানহাতে কাঁধ থেকে হাতাটা নিয়ে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে সামনে টেনে আনলো সে….গিটারটা পাশে রেখে আলতো হাতে হাতটা ধরে চেপে ধরলো নিজের গালে।।ভেজা ভেজা লাল চোখে তাকালো সামনে দাঁড়ানো মানুষটার দিকে…..
.
আমি আলিয়া কে খুব মিস করছি রিয়া…!!আজ ও থাকলে হয়তো আমি এভাবে হেরে যেতাম না।।ও আজ বেঁচে থাকলে…নিশ্চয় তোমার মতো প্রাণোচ্ছল হতো।।কতো আবদার থাকতো ওর,,,আমার একটা সম্বল হতো ও।।আমায় নিশ্চয় এভাবে হেরে যেতে দিতো না….হেরে যাওয়ার আগেই হাতটা চেপে ধরে বলতো…”দাদাভাই তুই পারবি তো।” একজন বোনের ভাই হতে পারাটাও খুব ভাগ্যের ব্যাপার রিয়া….রিয়াদ খুব লাকি।।খুব।
.
আমি তো তোমারও বোন দাদাভাই!!আমি তোমার জন্য তোমার আলিয়া…নই কি?
.
আয়ান এবার সোজা হয়ে বসলো….পাশে একটু সরে গিয়ে রিয়াকে বসিয়ে দিলো।।রিয়ার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। মেয়েটা কাঁদছে….আয়ান ভ্রু কুঁচকে অবাক হয়ে বললো-
.
কাঁদছো কেন রিয়া?
.
আয়ানের প্রশ্নের উত্তরে পেছন থেকে কেউ একজন বলে উঠলো –
.
তার দাদাভাইয়ের কান্নায় কাঁদছে ও….
.
ফাহিমের কথায় ঘাড় ঘুরিয়ে একবার পেছনে তাকিয়েই আবারও রিয়ার দিকে ফিরে তাকালো সে।।তার চোখে-মুখে বিস্ময়… তার জন্য কেউ কাঁদছে? ভাবতেই গা শিউরে উঠছে তার।।এই পৃথিবীতে ওর জন্য কাঁদার মতো কাউকে পাওয়া গেলো তবে….. ভাগ্য তার সাথে কি নির্মম পরিহাষটায় না করছে…. যাদের সে চেয়েছে তাদেরকে দূরে ঠেলে দিয়ে আনএক্সপেক্টেড কিছু মানুষের ভালোবাসা তাকে জুটিয়ে দিয়েছে।ভাগ্য কি তবে তারসাথে গেইম খেলছে?এক অদৃশ্য খেলা!!একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিয়াকে একহাতে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলে উঠলো আয়ান-
.
এই পাগলী কাঁদছো কেন??স্টপ ক্রাইং
.
তাহলে তুমি কাঁদছো কেনো??সারা শরীরে এমন রক্তে মাখামাখি হয়ে বসেই বা আছো কেন?অদিতি আপু শুনলো না তোমার কথা??
.
রিয়ার কথায় তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো আয়ান।।ডানহাতে চুলে আঙ্গুল চালিয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি আটকানোর চেষ্টা চালালো।তারপর ফুস করে একটা শ্বাস ছেড়েই বলে উঠলো সে…
.
ও আমার কথা শুনবে এই আশা করাটায় আমার ভুল ছিলো রিয়া।।ওই সৃষ্টিকর্তায় আজ পর্যন্ত আমার একটি কথা শুনলো না সেখানে পৃথিবীর সামন্য মেয়ে আমার কথা শুনবে….ভাবলে কি করে??যখন ছোট ছিলাম,,,দরজার ফাঁক দিয়ে বাবা-মার ঝগড়া দেখতাম।।তাদের উচ্চস্বরে কথা বলা….কখনো ভয়ে আঁতকে উঠতাম আমি…শুয়ে শুয়ে শুধু একটায় প্রার্থনা করতাম…যেনো বাবা-মার মাঝে সব ঠিক হয়ে গিয়ে ওরা আবারও আমার আর ফাহিমের মতে পাক্কাওয়ালা বেস্টু হয়ে যাক।কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আমার কথা শুনে নি।।(নাক টেনে) মা যখন চলে গেলো আমি আবারও প্রার্থনা করেছিলাম,, মা যেনো জলদি ফিরে এসে আমার কপালে চুমু খেয়ে আবারও বুকে জড়িয়ে নেয় আমায়।।কিন্তু মা ফিরে নি…সৃষ্টিকর্তা সেবারও শুনে নি আমার কথা।।আলিয়া যখন শ্বাসকষ্টে ছটফট করছিলো বাবা ডক্টরদের সাথে দৌড়াচ্ছিলো…আমি করিডোরের একটা কোনে গুটিশুটি হয়ে বসে আমার বোনকে ভিক্ষা চেয়েছিলাম…কিন্তু!!(একটু থেমে) তাহলে বলো…আমার কথা শুনে আমার বুকে ঝাপিয়ে পড়বে এই আশাট করাটা কি আমার ভুল নয়?অবশ্যই ভুল…মারাত্মক ভুল রিয়া…মারাত্মক ভুল।
.
না ভুল নয়।ভালোবাসা কখনো ভুল হতে পারে না।আমি তোমার কষ্টটা বুঝতে পারছি দাদাভাই…কারণ এই মর্মান্তিক কষ্টটা আমিও ফিল করেছি….মৃত্যুর থেকেও যন্ত্রণাদায়ক এই কষ্ট।।তোমাকে এই কষ্টে ডুবে শেষ হয়ে যেতে দিবো না আমি।কিছুতেই না….আমি যাবো…এখনই যাবো।।অদিতি আপুকে উত্তর দিতে হবে..কেন এতো পুড়াচ্ছে তোমায়?? কেন??
.
কথাটা বলেই ওঠে দাঁড়ালো রিয়া।।মাথাটা ঘুরছে তার।।শরীরটা ভালো না কাল রাত থেকেই।হঠাৎ ওঠে দাঁড়িয়ে শরীরের ব্যালেন্স না রাখতে পেরে পড়ে যেতে নিলেই ফাহিম খপ করে ধরে ফেললো তাকে।।দুই হাতে বুকের সাথে চেপে ধরে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললো-
.
এখন নয়…সকালে যাবো আমরা।তখন কথা বলো তুমি।এখন রেস্ট নিতে হবে তোমায়…
.
পাগল আপনি?এতো লেইট করলে চলবে কি?চলবে না তো…সব তো শেষ হয়ে যাবে।।এই কষ্টটা যে কতোটা যন্ত্রণার তা আমি আপনাকে ভালোবেসে বুঝেতে পেরেছি স্যার।।এই কষ্টটা মানুষকে একদম পিষে দেয়…শেষ করে দেয়…
.
হুম জানি রিয়া।কিন্তু…
.
ফাহিমের কথার মাঝেই কেউ বলে উঠলো-
.
তবু তোমায় রেস্ট নিতে হবে রিয়া মা!!সুস্থ না থাকলে দাদাভাইয়ের বাসরের দায়িত্ব কে নিবে শুনি??
.
কথাটা কানে যেতেই দরজার দিকে ফিরে তাকালো তারা।।আয়ানও ঘাড় ঘুরিয়ে মানুষটিকে দেখেই ওঠে দাঁড়ালো….. মামনি!!ওদের এভাবে স্তব্ধ হয়ে থাকতে দেখে টলমলে চোখে এগিয়ে এলেন মামনি।আয়ানের গালে হাত রেখে বলে উঠলেন –
.
এতো কষ্ট সইছিস…মামনিকে মনে পড়ে নি তোর?আমার ছেলে দুটো কেমন বড় হয়ে গেছো দেখো।।মামনিকে এখন দরকারই পড়ে না তাদের…
.
এটুকু বলতেই হুট করেই মামনিকে জড়িয়ে ধরলো আয়ান।।মামনি তার পিঠে হাত রাখতেই ডুকরে উঠলো আয়ান-
.
আমার ওকে চাই মামনি।ওকে এনে দাও তুমি….প্লিজ মামনি এনে দাও না ওকে!!
.
আয়ানের কথায় মুচকি হাসলো মামনি।মাথায় হাত বুলিয়ে ধীর গলায় বললেন-
.
অনেক দিন পর আগের মতো আবদার করলি তুই।আগে কেন করিস নি এই আবদার??এতো দেরি কেনো?আজ যে অদিতির বিয়ে….(চিন্তিত মুখে)
.
আমি কিছু জানি না মামনি।ওকে আমার চাই…দিবে না আমায়??(করুণ কন্ঠে)
.
আমি তোর মা আয়ান।।তোর হাসিটার জন্য যেমন সবটা ছাড়তে রাজি আমি।।তেমনি তোর সুখের জন্য পুরো পৃথিবীর সাথে লড়তেও রাজি।।অদিতিকে আমার ঘরেই আনবো…তোর জন্য আনবো…ওকে তো আসতেই হবে!!(দীর্ঘশ্বাস ফেলে)
.
আয়ান মামনির কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে চুপচাপ।কতোদিন পর বুকটা শান্ত লাগছে তার।।আচ্ছা?মায়েরা কি সত্যি ম্যাজিক জানে?তাদের প্রতিটা স্পর্শই কেমন ম্যাজিকের মতো কাজ করে….হাজারও কষ্টেও মায়ের বুকের আশ্রয়টা কতো শান্তির!!শুধু জন্ম দিলেই মা হয় না….মাতৃত্ব প্রতিটি মেয়ের মাঝেই তো সুপ্তভাবে থেকে যায়…তাই তো হাজারও কষ্টে হতাশ হয়ে শেষ আশ্রয়টা সবাই সেখানেই খুঁজতে যায়।।কিন্তু আফসোস…কিছু মাতৃত্বহীন নারীর আগ্নেয়গিরিতে ভস্ম হয়ে আজ অনেক সন্তানই দিশাহারা…ডাস্টবিনের ময়লা।।মামনি হালকা হাতে চুলে হাত বুলিয়ে চলেছেন…..কপালে খানিক চিন্তার ভাজ…ছেলেকে সে কথা তো দিয়েছে কিন্তু আদৌ কি সম্ভব এই চাওয়া??একটু বেশিই কি দেরী হয়ে যায় নি??এখন কিভাবে পারবে সে??
.
#চলবে…
.
(জানি পার্ট ভালো হয় নি।।একটা লং গ্যাপ গেলো তো।।নেক্সট থেকে ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here