অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part:24

অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part:24
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤

.
.
🍁
.
খান সাহেবকে রুমে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দিয়ে সবাইকে সবকিছু খুলে বলেছে আয়ান।তবু আয়ান অদিতির এক রুমে থাকা নিয়ে রেগে আছেন মামনি।আয়ান ধর্ম কতটুকু মানে সেটা নিয়ে মামনির মাথাব্যাথা নেই কিন্তু অবিবাহিত অবস্থায় ছেলে মেয়ে একরুমে থাকবে এটা কোন মুসলিমের কাজ হতে পারে না।উনার এই মুহূর্তে আয়ানকে কান ধরে উঠবস করাতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু নিজের ইচ্ছেকে প্রশ্রয় না দিয়ে চুপ করে বসে রইলেন তিনি।মামনির চুপ থাকা দেখেই আয়ান বুঝতে পারছে মামনি রেগে আছেন।তার নিজের গালেই চড় বসাতে ইচ্ছে করছে এবার , তারজন্য মামনি হার্ট হয়েছে তা কিছুতেই মানতে পারছে না সে।ঐশিকে ফোন দিয়েও বিস্তারিত জানিয়েছে আয়ান।অদিতিকে কোনো সমস্যায় ফেলতে চায় না সে।।ঐশিকে রিকুয়েষ্ট করেছে ওর বাবা-মা কে যেনো বিয়েতে না আনে নয়তো নতুন প্রবলেম শুরু হয়ে যাবে।ঐশিও সম্মতি জানিয়েছে।সেই সাথে এটাও বলেছে যে দেখা হলেই সে আয়ানকে শক্ত মার দিবে।তার বোনের সাথে গন্ডগোল পাকানোর শাস্তি তো পেতে হবে তাকে।আয়ানও মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়েছে।অদিতির মায়ের ঝাড়ুর বাড়ি খেয়ে মানসম্মান খোয়ানোর চেয়ে ঐশির শক্ত মার উত্তম বলেই মনে করে আয়ান।।এতোকিছু করেও শান্তি পাচ্ছে না সে….ও স্পষ্ট বুঝতে পারছে মামনি ওকে এবোয়েড করে চলছে ব্যাপারটা ওর জন্য মারাত্মক কষ্টের।মামনির এই পেঁচা মুখ দেখার চেয়ে খান সাহেবকে সব বলে দেওয়াই বেশি সহজ কাজ মনে হচ্ছে আয়ানের।
.
.
সবাই খাবার খাচ্ছে।।কিন্তু আয়ান খাচ্ছে না প্লেটে খাবার নিয়ে চুপচাপ বসে আছে।ওর খারাপ লাগছে যে মামনি তাকে একটাবারও খেতে বলছে না।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে খান সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো আয়ান….
.
মিষ্টার খান?অদিতি প্রেগন্যান্ট নয়।
.
আয়ানের হঠাৎ এমন কথায় সবাই অবাক ।মিষ্টার খান অবাকের দিক থেকে তাদের থেকে বেশ এগিয়ে।তিনি রীতিমতো “হা” করে তাকিয়ে আছেন।আয়ান আবারও মাথা নিচু করে বলে উঠলো…
.
অদিতির সাথে আমার বিয়ে হয় নি।ব্যাপারটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
.
তুমি কি আমার সাথে মজা করছো?(থমথমে গলায়)
.
এবার আয়ান মাথা তুলে তাকালো।।খান সাহেবের চোখে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠলো…
.
না করছি না।আমি সবসময় মন মর্জি মতো চলি কারো কথা শুনতে আমি বাধ্য নই।প্রথমদিন মিথ্যাটা বলি আপনার মেয়ে বিয়ের জন্য পাগলামো করছিলো তাই।আপনার মেয়েকে আপনি অনেক ভালোবাসেন মেবি সেই তাগিদে আমার সাথে জোর করে হলেও মেয়ের বিয়েটা দিয়ে দিতেন আপনি কিন্তু আমার পক্ষে তা সম্ভব ছিলো না কারন আমি আর অদিতি একে অপরকে ভালোবাসি।।খুব বেশিই ভালোবাসি।
.
আয়ানের কথায় আবারও সবাই অবাক হলো।। সবার কাছেই ব্যাপারটা স্পষ্ট যে আয়ান আবারও মিথ্যা বলছে। অদিতির তো চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম, একটা ছেলে এতো গুছিয়ে মিথ্যা বলে কিভাবে?অদিতির নিজেরই বিশ্বাস করে নিতে ইচ্ছে করছে আয়ানের প্রতিটি কথা।তার কাছে মনে হচ্ছে আয়ান কোনো গল্প বলছে আর অদিতি অপেক্ষা করছে তার দ্বিতীয় পরিচ্ছদের আশায়….
.
আর তাই সেই মিথ্যা।কখনো ভাবি নি আপনার সাথে আবারও দেখা হবে।কিন্তু নিয়তির পরিহাসে হয়ে গেলো দেখা।আপনাকে কিছু বলার সুযোগই হয়ে উঠলো না।আর প্রয়োজনও মনে করি নি।।তাই চুপ করেই ছিলাম।
.
তাহলে আজ কোন প্রয়োজনবোধে বললে??(রাগী গলায়)
.
মামনির প্রয়োজনবোধে।আমার মামনি কখনো মিথ্যে বলে না।আমার জন্য তাকে মিথ্যে বলতে হবে তা আমার সহ্য হবে না।এই একটা মানুষের কাছে এসেই আমি থেমে যেতে বাধ্য।নয়তো আজও হয়তো বলতাম না সত্যটা।তাতে যার যা করার করতো আই ডোন্ট কেয়ার।
.
খান সাহেব আয়ানের কথায় রেগে গেলেও মায়ের প্রতি ওর আস্থা ও সম্মানবোধটা উনার ভালো লেগেছে।।তাই ব্যাপারটা চেপে গেলেন উনি।।একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ছোট্ট করে বললেন….”ইটস ওকে”….
.
.
🍁
.
.
ছাদের রেলিং এ বসে আছে রিয়া।তার দুপাশে হাত রেখে তার দিকে কিছুটা ঝুঁকেই দাঁড়িয়ে আছে ফাহিম।রিয়া ফাহিমের গলা জরিয়ে ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।।চাঁদের পাশের ওই উজ্জল তারাটি রিয়ার জন্য বরাবরই একটা আকর্ষনের বস্তু।।ছোট বেলায় মা বলতো ওটা নাকি বাবা।।ভাইয়ার কাছেও ওই একই কথা শুনেছে সে।মায়ের কথা কতোটুকু বিশ্বাস করেছে তা সে জানে না কিন্তু ভাইয়ের কথাগুলো বিনা দ্বিধায় বিশ্বাস করে নেওয়ায় অভ্যাস তার।।তাই ভাইয়ার এই কথাটাও চোখ বুজে বিশ্বাস করে নিয়েছে সে।।বড় হয়ে ব্যাপারটি মিথ্যা জানার পরও আগের মতোই ভালোবাসা নিয়ে তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে….ভাইয়া বলেছে তো,, ওই তো ওটা বাবা!!আমাদের বাবা!!!ফাহিম একদৃষ্টে ওর পিচ্চিটাকে দেখছে।এই ছোট্ট মেয়েটা যে ওর বউ ভাবতেই অবাক লাগছে তার।।”কবুল” শব্দটির কতো জোড়…মুহূর্তেই একটা মানুষকে কতোটা কাছে এনে দিতে পারে,,কতোটা অধিকারবোধ জাগিয়ে দিতে পারে।।আজ ফাহিমের কোনো বাঁধা নেই। রিয়ার অগোছালো চুল।বিস্ময়মাখা দুটো বড় বড় চোখ।পাতলা ফিনফিনে একজোড়া ঠোঁট।।সবকিছুই ফাহিমের কাছে এক আশ্চর্যের বস্তু,, সবই যেনো নতুন তার কাছে।।নতুন কোনো নেশা!!
.
এই পিচ্চি?
.
হুম…
.
কি দেখো এতো আকাশে?
.
দেখছি না তো লুকাচ্ছি
.
কি লুকাচ্ছো??(অবাক হয়ে)
.
লজ্জা লুকাচ্ছি।এইযে আপনি কখন থেকে আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন।তাতে আমার লজ্জারাঙা প্রজাপতিরা চারপাশে পাখা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে।।তাদেরকে মিষ্টি শাসনে ওই তারার পেছনে লুকাচ্ছিলাম।(লাজুক হাসি দিয়ে)
.
উহুমম।।লুকানো চলবে না।।তোমার লজ্জাটাও দেখতে চাই আমি।ওটাতে আমার অধিকার আছে।তোমার ওপরের একবিন্দু অধিকার ছাড়তেও রাজি নয় আমি।।একফোঁটাও না।।খবরদার আবারও লুকানোর চেষ্টা করলে মামলা দিয়ে দিবো তোমার নামে…
.
তাই??তো মামলায় কি লেখবেন?(মুচকি হেসে)
.
লিখবো…লিখবো যে…
.
হুম হুম কি লিখবেন??
.
.
ছাদের দরজায় দাড়িয়ে ওদের দেখছিলো অদিতি।।ওদের দুজনকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ বলে মনে হচ্ছে আজ।”ভালোবাসা” খুবই অদ্ভুত এটা জিনিস।কাউকে স্বর্গীয় সুখ এনে দেয় তো কাউকে এনে দেয় নরকীয় যন্ত্রণা।। অদিতি ধীর পায়ে হাঁটা দিলো গার্ডেনের দিকে।ওদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের সাক্ষী হতে চাই না সে।।দোলনায় দোল খাচ্ছে অদিতি।চারপাশে নির্জন নিস্তব্ধতা। হালকা ঠান্ডা হাওয়ায় কেঁপে উঠছে শরীর।।তবুও উঠে যাচ্ছে না সে।। এভাবেই ভালো লাগছে তার।এই খাপছাড়া জীবনের চাপা কষ্টগুলোকে এই নিস্তব্ধতায় একটু হলেও মুক্ত করতে পারছে সে।।কষ্টগুলো গা ভাসিয়ে উড়ে বেড়াক।।একটু জিড়িয়ে নিক অদিতি বড্ড ক্লান্ত সে।।রিয়ার মতো বাচ্চা মেয়ের ভালোবাসাও এতোটা গভীর হতে পারে যা ফাহিমের মতো কেউ একজনকেও নড়ে চড়ে উঠতে বাধ্য করতে পারে,, ব্যাপারটা ভাবতেও অবাক লাগে অদিতির।।ফাহিমের মতো প্রেম-ভালোবাসায় উদাস ছেলেটাও কাউকে কখনও এতোটা চাইতে পারে তা যেনো অদিতির কল্পনারও বাইরে ছিলো।।তবু ওসব ঘটছে কারন ভালোবাসা নামক আবেগটা মানুষকে বদলাতে বাধ্য করে।নিজের মনেই হেসে উঠলো অদিতি,,রিয়ার মতো বাচ্চা মেয়েও ভালোবাসার খেলায় জিতে গেলো অথচ অদিতি?? সত্যিই ভালোবাসা কখনো বয়স দেখে হয় না।কখনোই না।হঠাৎই পাশ থেকে বলে উঠলো কেউ…” মন খারাপ?'” কিছুটা চমকে গিয়ে পাশে তাকিয়েই আয়ানকে দেখতে পেলো অদিতি।কখন যে তার পাশে এসে বসেছে খেয়ালই করে নি সে।।চাঁদের হালকা আলোয় গাছের অগোছালো ছায়ায় কি অদ্ভুত সুন্দর লাগছে ছেলেটিকে যেন কোনো দেবদূত।
.
কি হলো? বললে না তো মন খারাপ?
.
নাহ তো?(চুলের খোপা করতে করতে)
.
খোলে রাখো চুলগুলো,, ভালো লাগছে।চাঁদের আলোটা তোমার চুলে খুব বেশি বেমানান লাগছে না বরং ভয়ংকর সুন্দর লাগছে তোমায়।
.
অদিতি চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ বসে রইলো।আয়ানের বলা “ভয়ংকর সুন্দর” কথাটা ঘুরে বেড়াচ্ছে তার মাথায় ।কেউ তাকে কখনো এভাবে বলে নি।আয়ানের কথায় চোখ ঘুরিয়ে তার দিকে তাকালো অদিতি…
.
মিথ্যা না বলে মন খারাপ কেনো সেটা বলো তো। তোমার চোখ বলে দিচ্ছে তোমার মন খারাপ।।ভালোবাসার মানুষটিকে মনে পড়ছে?কাউকে ভালোবাসতে?
.
আয়ানের কথায় অবাক চোখে তাকালও অদিতি।”না” কথাটা বলতে গিয়েও আয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে থেমে গেলো সে।।চোখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়েই বলে উঠলো…”হুমম”
.
কি হলো তার?ছেড়ে গেছে তোমায়?
.
(তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে) সে কখনো আমায় ধরলে তো ছাড়বে?আমি তাকে আকড়ে ধরেছিলাম বাঁচার আকাঙ্খায় কিন্তু ছেড়ে দিতে হয়েছে।।
.
কেনো??ও তোমায় ভালোবাসতো না?
.
না….ও ছিলো অন্যকারো ভালোবাসা।।আমি তার জন্য জাস্ট রেসপন্সিবিলিটি ছিলাম।।(মুচকি হেসে)কারো রেসপনসেবলিটি হয়ে থাকতে চাই নি তাছাড়া ও তার ভালোবাসাটাকেই বেছে নিয়েছিলো।ওর ডিসিশানটা হয়তো ঠিক ছিলো তাই ও আজ সুখে আছে,,বউ বাচ্চা নিয়ে জীবনটাকে উপভোগ করছে আর আমিও তো ভালো আছি।।এটলিস্ট মরে মরে তো বাঁচতে হয় নি। (দীর্ঘশ্বাস ফেলে)
.
ছেলেটা কি রিয়াদ?(সামনের দিকে তাকিয়ে)
.
আয়ানের কথায় চমকে উঠলো অদিতি।।রিয়াদের কথা তো আয়ানের জানার কথা নয় তাহলে কিভাবে?
.
আআআপনি?কিভাবে?
.
আয়ান হাসল।দোলনায় গা এলিয়ে দিয়ে, দোলনাটাকে একটু দুলিয়ে দিয়ে বলে উঠলো সে….
.
সাদিয়া আর রিয়াদকে কাছাকাছি দেখলে তোমার যে কষ্ট হয় সেটা তোমার মুখ দেখলে বুঝা যায় অদিতি।প্রথমদিন স্টেশনে তোমাদের দুজনের অস্বস্তি থেকেই আচ করতে পেড়েছিলাম কিছুটা।।বান্ধবীর হাজবেন্ডের সাথে যে সহজ ব্যবহার সাধারনত দেখা যায় সেটা তোমাদের মধ্যে ছিলো না।আর আস্তে আস্তে সবই পরিস্কার হয়ে গেলো।।(দীর্ঘশ্বাস ফেলে) এখনো ভালোবাসো ওকে?(চোখে চোখ রেখে)
.
না বাসি না।।
.
ভেবে বলছো?
.
চোখ দেখে বুঝতে পারছেন না?আপনি নাকি চোখের ভাষা বুঝেন।(মুচকি হেসে)
.
আয়ান অদিতির চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। অদিতির কথাটা বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে আয়ানের।
.
রিয়াদকে ভালোবাসতাম।কিন্তু এখন ভালোবাসার কারন নেই।তাই ভালোবাসাটাও নেই তবু একটা মায়া থেকে গেছে এতটুকুই।যে জিনিসটা আমার ছিলো না তাতে মায়া ধরে রাখার মানে হয় না।।তিনবছরে অনেকটাই কেটে গেছে আর এই কদিনে বাকিটাও কেটে গেছে মনে হচ্ছে(হালকা হেসে)
.
তবু ছাপটা রয়েই গেছে তাই না?মায়ার ছাপ?
.
অদিতি হাসলো।কিছু বললো না।কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না।।দুজনেই চুপচাপ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।।আকাশে মস্ত এক চাঁদ উঠেছে।।ছাদের কোনে দাঁড়িয়ে আরও দু’জোড়া চোখ তাকিয়ে আছে আকাশে।। মস্ত চাঁদটা শুধু সাক্ষী হয়েই থেকে যাচ্ছে কারো ভালোবাসার তো কারো দীর্ঘশ্বাসের!!!!
.
.
#চলবে🍁🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here