অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part:25

অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part:25
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤

.
.
🍁
.
আজ রিয়ার গায়ে হলুদ।।গার্ডেনের মাঝামাঝি জায়গায় ছোট্ট স্টেজ করা হয়েছে।। গার্ডেনের পরিবেশের সাথে মিলিয়ে কৃত্রিমতা পরিহার করে প্রাকৃতিকভাবে সাজানো হয়েছে চারপাশ।।ফুল,, পাতা,,হোয়াইট পিংক কাপড়ে,, হালকা লাইটিং এসব দিয়েই ডেকোরেশন করা হয়েছে।।চারপাশটা এমনভাবে সাজানো হয়েছে মনে হচ্ছে গভীর জঙ্গলের মনোমুগ্ধকর স্থানটিতে বসেছে উৎসবের বাহার।।এখনকার বিয়ের অত্যাধুনিক আয়োজনগুলোকে এবোয়েড করে অন্যরকম বিয়ের থিম ক্রিয়েট করেছে তারা।।মেয়েরা আজ সেজেছে প্রকৃতির রাণী।।হলুদ সবুজের কম্বিনেশনের শাড়ি সবার গায়ে।।সাধারন বাঙালীদের মতো শাড়ি পড়ে,, বিভিন্ন ফুল দিয়ে সেজেছে সবাই।।কৃত্রিম অর্নামেন্টস গুলোকে পরিহার করেছে স্বাচ্ছন্দ্যে,, তাতে তাদের রূপে কমতি আসে নি বরং এসেছে নতুন উজ্জলতা।।ছেলেরাও পিছিয়ে নেই ম্যাচিং করে কচুপাতা রঙের পাঞ্জাবী পড়েছে তারা গলায় ঝুলিয়েছে সাদা ওড়না।।বাচ্চারাও বাদ যায় নি তাদেরও সেইম ড্রেস।।স্টেজে বসে আছে ফাহিম তার পাশেই আয়ান ।। তার সাথে আছে আয়ানের থার্ডক্লাস ফাজলামি।।আয়ানের এসব কথায় ফাহিমেরই মাথা ঘুরে যাচ্ছে।।সে মনে মনে শুকরিয়া জানাচ্ছে যে থেংক গড রিয়া এখানে নেই।।নয়তো আয়ানের এসব কথা শুনে সে বিয়ে করার ভয়ে দরজায় খিল দিতো নির্ঘাত।।আর ভাবতো…বিয়ে এতো ভয়ঙ্কর!!!অবশেষে ভাবনার প্রহর কাটিয়ে গার্ডেনের মাটিতে পা রাখলো রিয়া।।ফাহিমের চোখদুটো যেনো রিয়ার পায়েই আটকে আছে।।লাল কার্পেটে ছড়ানো সাদা বেলি ফুলের উপর রিয়া আলতা মাখানো পায়ে হাঁটছে।।সাধারন বাঙালী মেয়েদের মতো শাড়ি পড়েছে সে।।দুই হাতে শাড়িটা হালকা উঁচু করে খুব সাবধানে হাটছে সে।।যাতে করে পায়ের পায়েলটাও দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট।।চারপাশ থেকে ছুড়ে দেওয়া গোলাপের পাপড়ি গুলো এসে পড়ছে পায়ের উপর…. ইশশ কি অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য!!!ফাহিম এবার মুখ তুলে চোখ রাখলো রিয়ার চোখে মুখে।। সাথে সাথেই ফিরিয়ে নিলো দৃষ্টি।।রিয়াকে আজ খুব ভোরের শিশির ভেজা পদ্মের মতো লাগছে।। এতোটা সতেজ,, এতোটা প্রাণবন্ত।।এই সৌন্দর্য ফাহিমের চোখে সইছে না।।চোখ যেনো জ্বলে উঠছে।।তবুও অবাধ্য চোখটাকে প্রশ্রয় দিয়ে আড়চোখে তাকালো সে….রিয়া কোনো একটা কারনে পাশে তাকিয়ে হেসে উঠলো সাথে তার চেহারায় খেলে গেলো একরাশ লজ্জা।।ছোট ছোট দাঁতগুলো সূর্যের ঝিলিকে জ্বলজ্বল করে উঠলো মুক্তোর মতো।।আহা কি মায়া! ফাহিম মনের অজান্তেই ডান হাতটা বামপাশের বুকের উপর চেপে ধরলো…তার হার্টবিট যেনো মিস হয়ে যাচ্ছে বারবার।।ওর ইচ্ছে হচ্ছে রিয়ার কানে ফিসফিসিয়ে বলতে-” এভাবে হেসো না প্লিজ…মরে যাবো তো আমি!!” কিন্তু বলা হলো না।।রিয়া কাছাকাছি আসতেই কাঁপা-কাঁপা হাতটা বাড়িয়ে দিলো তার দিকে।।রিয়াও হাসিমুখে হাত বাড়ালো।।রিয়ার হাতের স্পর্শে ফাহিমের শরীরে একটা শিহরন খেলে গেলো।।রিয়ার হাতের কাঁপনটাও স্পষ্ট।।রিয়ার সাদা কোমল হাতটাও রেঙেছে লাল টকটকে আলতায়।।আলতার সৌন্দর্য টা যে কতোটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তার উদাহরণ দিতেই যেনো রিয়ার হাতটা মারাত্মক সুন্দর লাগছে।।কি টকটকে লাল!! ফাহিমের কাছে মনে হচ্ছে তার হাতের ছোঁয়ায় রিয়ার এই দুধ সাদা শরীরে দাগ লেগে যাবে।।ওর মোমের মতো শরীর গলে যাবে।।শেষ হয়ে যাবে সবকিছু….!রিয়া পাশে বসেই ফিসফিস করে বলে উঠলো…
.
এই শুনুন?(অসহায় কন্ঠে)
.
হুম বলো..
.
আমার মনে হচ্ছে আমি সেন্সলেস হয়ে যাচ্ছি।
.
রিয়ার কথায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো ফাহিম।।উদ্ধিগ্ন কন্ঠে বলে উঠলো…
.
তোমার শরীর খারাপ লাগছে রিয়া?সকালে খেয়েছিলে?নিশ্চয় খাও নি?এমন বাচ্চামো কেন করো বলো তো?চলো আগে আমি তোমায় খাওয়াবো তারপর তুমি রেস্ট নিবে।।এসবের দরকার নেই,,তুমিই আমার জন্য বেশি ইম্পোর্টেন্ট তার বাইরে কিচ্ছু না।।চলো,,হাঁটতে পারবে?কোলে নিই?(অস্থির হয়ে)
.
ওসবের জন্য নয়…(হাত খামচে ধরে)
.
তাহলে? (ভ্রু কুচকে)
.
আপনার জন্য..
.
আমার জন্য?আমি কি করলাম?(অবাক হয়ে)
.
আপনাকে মারাত্মক সুন্দর লাগছে।।আই কান্ট কন্ট্রোল মাই সেল্ফ।।দেখুন আমার হাত-পা কাঁপছে।।ইচ্ছে করছে মরে যাই।।একদম মরে যাই!!
.
ফাহিম কি বলবে বুঝতে পারছে না।।রিয়া এমন কিছু বলবে ভাবতেই পারে নি সে।।মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে নিজের মনেই হেসে ওঠলো সে।।হায়রে বাচ্চা বউ তার!!ফাহিমের এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে কেন সে রিয়াকে আরো আগে পেলো না?আরো বাচ্চা বাচ্চা অবস্থায় পেলো না??তাহলে আরো বেশিক্ষণ ভালোবাসা যেতো ওকে।।তার কাছে মনে হচ্ছে রিয়াকে ভালোবাসার সময়টা খুব কম হয়ে গেছে।।ভালোবাসাটাও কম হয়ে গেছে।।আরো ভালোবাসতে চাই সে…অনেক বেশি!!ওর ছোট্ট মমের পুতুলটাকে একদম বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখতে চায় সে।।
.
.
.
ওই ওই??(মাথায় টোকা মেরে)
.
সমস্যা কি আপনার??ওই ওই কি হ্যা??আমার কি নাম নেই?
.
আছে তো বলবো?
.
অবশ্যই বলবেন।আমার বাবা মা নামটা রেখেছেই বলার জন্য।। আলমারিতে তোলে রাখার জন্য তো নয়।
.
বলছিলাম কি? আমার হাজার বাচ্চার মা?তোমায় আজ ব্যাপক হটি হটি লাগছে(চোখ টিপে)
.
আয়ানের কথাটা শুনেই অদিতির মাথায় রক্তে উঠে গেলো।।কথার কি ছিড়ি!!!
.
এই হাজার বাচ্চার মা মানে কি?হ্যা?
.
বাচ্চা বুঝো না??বাচ্চা মানে হলো…
.
শাট আপ!!আরেক বার যদি আমায় এসব বলেছেন তো খবর আছে।।আপনার এইসব কথায় কতোটা সাফার করতে হয়েছে উফফ!!আপনি আবারও শুরু করেছেন?(রাগী গলায়)
.
চিল বেবি।।রাগ করছো কেন।রেগে গেলো তোমায় আরো বেশি হট লাগে।(চোখ টিপে)
.
ইউ আর জাস্ট ইম্পসিবল।। আপনি কি সুস্থ মানুষের মতো কথা বলতে পারেন না??
.
ইশশ…মিস ঝগড়ুটে!!আশেপাশে এতো সুন্দর সুন্দর মেয়ে থাকলে কি আর সুস্থ থাকা যায়??মনে তো প্রেম প্রেম ভাব চলে আসে তো….তাই প্রেম রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ি আরকি।।(শয়তানী হাসি হেসে)
.
অদিতির ইচ্ছে করছে এই পাগলের ডাক্তারের মাথাটা ফাটিয়ে দুই ভাগ করে দিতে।।অসভ্য ছেলে।।এভাবে কেউ কথা বলে?দেখে যতটা জেন্টলম্যান মনে হয় ব্যবহার ওতটাই লুচুমার্কা।অদিতি দাঁড়িয়ে বিরবির করছে আর আয়ান পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েদের সাথে ফ্লার্টিং করছে।।অদিতি কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই অদিতির মা সামনে এসে দাঁড়ালেন।।উনির চোখ দুটো খুশিতে চিকচিক করছে।অদিতি মায়ের এতো আনন্দের কোনো কারন খুঁজে পাচ্ছে না তাই বিরক্তি নিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়েই বলে উঠলো….
.
কি হয়েছে মা??তোমায় এতো খুশি খুশি লাগছে কেন?
.
বুঝলি অদিতি।ওই যে গোল্ডেন কালার শাড়ি আছে মহিলাটার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার।
.
তো?
.
তো মানে?তোর কাছে ব্যাপারটা আনন্দের লাগছে না?
.
ওই মহিলার ছেলে ডাক্তার হোক বা ইঞ্জিনিয়ার হোক তাতে তোমার আনন্দে নাচানাচি করার কোনো কারন দেখছি না মা।।
.
কারণ অবশ্যই আছে। আমি রুবিনা জান্নাত বিনা কারনে লাফালাফি করি না।।
.
তো কারনটা বলবা প্লিজ??(বিরক্তি নিয়ে)
.
মহিলাটা তোকে পছন্দ করেছে।নিজে থেকে এসে তোর বিয়ের জন্য প্রোপোজাল দিয়েছে।।ভাবতে পারছিস?
.
না ভাবার মতো তো কিছু হয় নি মা?তোমার ভাব দেখে মনে হচ্ছে মঙ্গল গ্রহের কোনো প্রানী এসে আমায় বিয়ে করতে চাইছে।।তোমার এতো আগ্রহের কোনো কারনই খুঁজে পাচ্ছি না আমি।।
.
তুই তো কোনোদিনই আমার কোনো কাজে কারণ খুঁজে পাস না।হুহ
.
অদিতি কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই আয়ান অদিতিকে টেনে নিয়ে একটা মেয়ের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো।।অদিতির মা তো চরম অবাক,, তার মেয়েকে একটা ছেলে এভাবে টানাটানি করছে হচ্ছে টা কি??উনিও কিছুটা এগিয়ে গেলেন।।অদিতিকে একহাতে জড়িয়ে ধরতে দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো তার।।তুমুল রাগ নিয়ে কিছু একটা বলতে যাবেন ঠিক তখনই আয়ান মেয়েটিকে লক্ষ্য করে বলে উঠলো…
.
এক্চুয়েলি আই লাভ দিস গার্ল।শী অলসো লাভ মি।।ইউ নো হোয়াট?আমরা তো চুপিচুপি বিয়েও করে নিয়েছি।।এন্ড নাও শী ইজ প্রেগনেন্ট।।
.
হোয়াট??বাট আয়ান আমি তোকে ভার্সিটি লাইফ থেকে ভালোবাসি আর তুই এভাবে হুট করে বিয়ে করে নিলি??আই রিয়েলি লাভ ইউ।
.
সরি আনিকা।।আমি বিয়েটা না করলেও ভেবে দেখতাম বাট নাও ইটস ইম্পসিবল।। তুই বরং অন্যকাউকে খুঁজে নে।
.
প্লিজ আয়ান ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড।। আমি তোকে ৫ বছর ধরে খুঁজছি।তুই তো আমার নাম্বারটাও ব্লক করে দিছিস।।আর ইউএস গিয়ে নাম্বারটাও চেঞ্জ করে ফেলেছিস।।আমি ফাহিমকে অনেকবার বলেছি তোর নাম্বারটা যেনো দেই কিন্তু শেষ পর্যন্ত না দিয়েই ভেগে গেছে।।
.
সো স্যাড…
.
আয়ানের কথায় অদিতি তেমন শকড না হলেও তার মা চরম রকম শক খেয়েছে।।যাকে বলে হার্ট আট্যাক টাইপ শক।।তার মেয়ে প্রেগনেন্ট আর সে জানে না??ছি ছি,,অদিতি তার সাথে এমন টা করতে পারলো??না এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।।কিছুতেই না।।
.
🍁
.
কি হয়েছে?ডেকছো কেন?তাড়াতাড়ি বলো কাজ আছে তো…
.
হাহ্।।কাজ আছে মানে কি?কাজ আছে বলে বউয়ের দিকে তাকানো যাবে না?
.
তুমি কি এখন ঝগড়া করার জন্য ডেকেছো আমায় সাদিয়া??
.
আমি ঝগড়া করছি??(অবাক হয়ে)হ্যা,, এখন তো ঝগড়ায় লাগবে।।আমি তো ঝগড়ুটে।(মুখ ফুলিয়ে)
.
আমি সেটা বলি নি সাদিয়া।বাট তুমি এই মুহূর্তে যা করছো তা ঝগড়া ছাড়া কিছুই না।।
.
তুমি আসলেই যাচ্ছে তাই।।এতো সুন্দর একটা ওয়েদারে সবাই রোমান্টিক কথা বলছে।।আর তুমি ঝগড়া করছো??এত্তো সুন্দর করে যে সাজলাম সেদিকে তো খেয়াল নেইই আবার রোমান্স।।অসহ্য…সরো সামনে থেকে।।সবাই ঠিকই বলে বিয়ের পর আর ভালোবাসা থাকে না।।থাকবে কেমনে আশেপাশে এতো সুন্দরী মেয়ে থাকতে পুরনো বউ এ ভালোবাসা আসবে কেমনে?বুঝি তো…
.
এই তো শুরু হইছে।।সাদিয়া তুমি না টাইমিং বুঝো না।।দেখছো কতো বিজি আছি তবুও…
.
সাদিয়া আর দাঁড়ালো না।।চুপচাপ সেখান থেকে চলে এলো।।তার এবার কান্না পাচ্ছে সে ভীষনরকম কান্না পাচ্ছে।কিন্তু সেই কান্নাটা কারো কাছে প্রকাশ করতে চাইছে না।।কেনো জানি রিয়াদের কথায় খুব খারাপ লাগছে তার।মনে হচ্ছে রিয়াদ তাকে আগের মতো ভালোই বাসে না।।একটুও বাসে না।।এই যে সে সেখান থেকে চলে এলো কই একটা বার তো আটকানোর চেষ্টা করলো না।।
.
.
#চলবে…🍁
.
(কেউ গল্পের জন্য অপেক্ষা করে থাকবেন না,,ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here