অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part:26+27
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
.
.
🍁
.
আজ রিয়ার গায়ে হলুদ।।গার্ডেনের মাঝামাঝি জায়গায় ছোট্ট স্টেজ করা হয়েছে।। গার্ডেনের পরিবেশের সাথে মিলিয়ে কৃত্রিমতা পরিহার করে প্রাকৃতিকভাবে সাজানো হয়েছে চারপাশ।।ফুল,, পাতা,,হোয়াইট পিংক কাপড়ে,, হালকা লাইটিং এসব দিয়েই ডেকোরেশন করা হয়েছে।।চারপাশটা এমনভাবে সাজানো হয়েছে মনে হচ্ছে গভীর জঙ্গলের মনোমুগ্ধকর স্থানটিতে বসেছে উৎসবের বাহার।।এখনকার বিয়ের অত্যাধুনিক আয়োজনগুলোকে এবোয়েড করে অন্যরকম বিয়ের থিম ক্রিয়েট করেছে তারা।।মেয়েরা আজ সেজেছে প্রকৃতির রাণী।।হলুদ সবুজের কম্বিনেশনের শাড়ি সবার গায়ে।।সাধারন বাঙালীদের মতো শাড়ি পড়ে,, বিভিন্ন ফুল দিয়ে সেজেছে সবাই।।কৃত্রিম অর্নামেন্টস গুলোকে পরিহার করেছে স্বাচ্ছন্দ্যে,, তাতে তাদের রূপে কমতি আসে নি বরং এসেছে নতুন উজ্জলতা।।ছেলেরাও পিছিয়ে নেই ম্যাচিং করে কচুপাতা রঙের পাঞ্জাবী পড়েছে তারা গলায় ঝুলিয়েছে সাদা ওড়না।।বাচ্চারাও বাদ যায় নি তাদেরও সেইম ড্রেস।।স্টেজে বসে আছে ফাহিম তার পাশেই আয়ান ।। তার সাথে আছে আয়ানের থার্ডক্লাস ফাজলামি।।আয়ানের এসব কথায় ফাহিমেরই মাথা ঘুরে যাচ্ছে।।সে মনে মনে শুকরিয়া জানাচ্ছে যে থেংক গড রিয়া এখানে নেই।।নয়তো আয়ানের এসব কথা শুনে সে বিয়ে করার ভয়ে দরজায় খিল দিতো নির্ঘাত।।আর ভাবতো…বিয়ে এতো ভয়ঙ্কর!!!অবশেষে ভাবনার প্রহর কাটিয়ে গার্ডেনের মাটিতে পা রাখলো রিয়া।।ফাহিমের চোখদুটো যেনো রিয়ার পায়েই আটকে আছে।।লাল কার্পেটে ছড়ানো সাদা বেলি ফুলের উপর রিয়া আলতা মাখানো পায়ে হাঁটছে।।সাধারন বাঙালী মেয়েদের মতো শাড়ি পড়েছে সে।।দুই হাতে শাড়িটা হালকা উঁচু করে খুব সাবধানে হাটছে সে।।যাতে করে পায়ের পায়েলটাও দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট।।চারপাশ থেকে ছুড়ে দেওয়া গোলাপের পাপড়ি গুলো এসে পড়ছে পায়ের উপর…. ইশশ কি অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য!!!ফাহিম এবার মুখ তুলে চোখ রাখলো রিয়ার চোখে মুখে।। সাথে সাথেই ফিরিয়ে নিলো দৃষ্টি।।রিয়াকে আজ খুব ভোরের শিশির ভেজা পদ্মের মতো লাগছে।। এতোটা সতেজ,, এতোটা প্রাণবন্ত।।এই সৌন্দর্য ফাহিমের চোখে সইছে না।।চোখ যেনো জ্বলে উঠছে।।তবুও অবাধ্য চোখটাকে প্রশ্রয় দিয়ে আড়চোখে তাকালো সে….রিয়া কোনো একটা কারনে পাশে তাকিয়ে হেসে উঠলো সাথে তার চেহারায় খেলে গেলো একরাশ লজ্জা।।ছোট ছোট দাঁতগুলো সূর্যের ঝিলিকে জ্বলজ্বল করে উঠলো মুক্তোর মতো।।আহা কি মায়া! ফাহিম মনের অজান্তেই ডান হাতটা বামপাশের বুকের উপর চেপে ধরলো…তার হার্টবিট যেনো মিস হয়ে যাচ্ছে বারবার।।ওর ইচ্ছে হচ্ছে রিয়ার কানে ফিসফিসিয়ে বলতে-” এভাবে হেসো না প্লিজ…মরে যাবো তো আমি!!” কিন্তু বলা হলো না।।রিয়া কাছাকাছি আসতেই কাঁপা-কাঁপা হাতটা বাড়িয়ে দিলো তার দিকে।।রিয়াও হাসিমুখে হাত বাড়ালো।।রিয়ার হাতের স্পর্শে ফাহিমের শরীরে একটা শিহরন খেলে গেলো।।রিয়ার হাতের কাঁপনটাও স্পষ্ট।।রিয়ার সাদা কোমল হাতটাও রেঙেছে লাল টকটকে আলতায়।।আলতার সৌন্দর্য টা যে কতোটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তার উদাহরণ দিতেই যেনো রিয়ার হাতটা মারাত্মক সুন্দর লাগছে।।কি টকটকে লাল!! ফাহিমের কাছে মনে হচ্ছে তার হাতের ছোঁয়ায় রিয়ার এই দুধ সাদা শরীরে দাগ লেগে যাবে।।ওর মোমের মতো শরীর গলে যাবে।।শেষ হয়ে যাবে সবকিছু….!রিয়া পাশে বসেই ফিসফিস করে বলে উঠলো…
.
এই শুনুন?(অসহায় কন্ঠে)
.
হুম বলো..
.
আমার মনে হচ্ছে আমি সেন্সলেস হয়ে যাচ্ছি।
.
রিয়ার কথায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো ফাহিম।।উদ্ধিগ্ন কন্ঠে বলে উঠলো…
.
তোমার শরীর খারাপ লাগছে রিয়া?সকালে খেয়েছিলে?নিশ্চয় খাও নি?এমন বাচ্চামো কেন করো বলো তো?চলো আগে আমি তোমায় খাওয়াবো তারপর তুমি রেস্ট নিবে।।এসবের দরকার নেই,,তুমিই আমার জন্য বেশি ইম্পোর্টেন্ট তার বাইরে কিচ্ছু না।।চলো,,হাঁটতে পারবে?কোলে নিই?(অস্থির হয়ে)
.
ওসবের জন্য নয়…(হাত খামচে ধরে)
.
তাহলে? (ভ্রু কুচকে)
.
আপনার জন্য..
.
আমার জন্য?আমি কি করলাম?(অবাক হয়ে)
.
আপনাকে মারাত্মক সুন্দর লাগছে।।আই কান্ট কন্ট্রোল মাই সেল্ফ।।দেখুন আমার হাত-পা কাঁপছে।।ইচ্ছে করছে মরে যাই।।একদম মরে যাই!!
.
ফাহিম কি বলবে বুঝতে পারছে না।।রিয়া এমন কিছু বলবে ভাবতেই পারে নি সে।।মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে নিজের মনেই হেসে ওঠলো সে।।হায়রে বাচ্চা বউ তার!!ফাহিমের এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে কেন সে রিয়াকে আরো আগে পেলো না?আরো বাচ্চা বাচ্চা অবস্থায় পেলো না??তাহলে আরো বেশিক্ষণ ভালোবাসা যেতো ওকে।।তার কাছে মনে হচ্ছে রিয়াকে ভালোবাসার সময়টা খুব কম হয়ে গেছে।।ভালোবাসাটাও কম হয়ে গেছে।।আরো ভালোবাসতে চাই সে…অনেক বেশি!!ওর ছোট্ট মমের পুতুলটাকে একদম বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখতে চায় সে।।
.
.
.
ওই ওই??(মাথায় টোকা মেরে)
.
সমস্যা কি আপনার??ওই ওই কি হ্যা??আমার কি নাম নেই?
.
আছে তো বলবো?
.
অবশ্যই বলবেন।আমার বাবা মা নামটা রেখেছেই বলার জন্য।। আলমারিতে তোলে রাখার জন্য তো নয়।
.
বলছিলাম কি? আমার হাজার বাচ্চার মা?তোমায় আজ ব্যাপক হটি হটি লাগছে(চোখ টিপে)
.
আয়ানের কথাটা শুনেই অদিতির মাথায় রক্তে উঠে গেলো।।কথার কি ছিড়ি!!!
.
এই হাজার বাচ্চার মা মানে কি?হ্যা?
.
বাচ্চা বুঝো না??বাচ্চা মানে হলো…
.
শাট আপ!!আরেক বার যদি আমায় এসব বলেছেন তো খবর আছে।।আপনার এইসব কথায় কতোটা সাফার করতে হয়েছে উফফ!!আপনি আবারও শুরু করেছেন?(রাগী গলায়)
.
চিল বেবি।।রাগ করছো কেন।রেগে গেলো তোমায় আরো বেশি হট লাগে।(চোখ টিপে)
.
ইউ আর জাস্ট ইম্পসিবল।। আপনি কি সুস্থ মানুষের মতো কথা বলতে পারেন না??
.
ইশশ…মিস ঝগড়ুটে!!আশেপাশে এতো সুন্দর সুন্দর মেয়ে থাকলে কি আর সুস্থ থাকা যায়??মনে তো প্রেম প্রেম ভাব চলে আসে তো….তাই প্রেম রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ি আরকি।।(শয়তানী হাসি হেসে)
.
অদিতির ইচ্ছে করছে এই পাগলের ডাক্তারের মাথাটা ফাটিয়ে দুই ভাগ করে দিতে।।অসভ্য ছেলে।।এভাবে কেউ কথা বলে?দেখে যতটা জেন্টলম্যান মনে হয় ব্যবহার ওতটাই লুচুমার্কা।অদিতি দাঁড়িয়ে বিরবির করছে আর আয়ান পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েদের সাথে ফ্লার্টিং করছে।।অদিতি কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই অদিতির মা সামনে এসে দাঁড়ালেন।।উনির চোখ দুটো খুশিতে চিকচিক করছে।অদিতি মায়ের এতো আনন্দের কোনো কারন খুঁজে পাচ্ছে না তাই বিরক্তি নিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়েই বলে উঠলো….
.
কি হয়েছে মা??তোমায় এতো খুশি খুশি লাগছে কেন?
.
বুঝলি অদিতি।ওই যে গোল্ডেন কালার শাড়ি আছে মহিলাটার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার।
.
তো?
.
তো মানে?তোর কাছে ব্যাপারটা আনন্দের লাগছে না?
.
ওই মহিলার ছেলে ডাক্তার হোক বা ইঞ্জিনিয়ার হোক তাতে তোমার আনন্দে নাচানাচি করার কোনো কারন দেখছি না মা।।
.
কারণ অবশ্যই আছে। আমি রুবিনা জান্নাত বিনা কারনে লাফালাফি করি না।।
.
তো কারনটা বলবা প্লিজ??(বিরক্তি নিয়ে)
.
মহিলাটা তোকে পছন্দ করেছে।নিজে থেকে এসে তোর বিয়ের জন্য প্রোপোজাল দিয়েছে।।ভাবতে পারছিস?
.
না ভাবার মতো তো কিছু হয় নি মা?তোমার ভাব দেখে মনে হচ্ছে মঙ্গল গ্রহের কোনো প্রানী এসে আমায় বিয়ে করতে চাইছে।।তোমার এতো আগ্রহের কোনো কারনই খুঁজে পাচ্ছি না আমি।।
.
তুই তো কোনোদিনই আমার কোনো কাজে কারণ খুঁজে পাস না।হুহ
.
অদিতি কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই আয়ান অদিতিকে টেনে নিয়ে একটা মেয়ের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো।।অদিতির মা তো চরম অবাক,, তার মেয়েকে একটা ছেলে এভাবে টানাটানি করছে হচ্ছে টা কি??উনিও কিছুটা এগিয়ে গেলেন।।অদিতিকে একহাতে জড়িয়ে ধরতে দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো তার।।তুমুল রাগ নিয়ে কিছু একটা বলতে যাবেন ঠিক তখনই আয়ান মেয়েটিকে লক্ষ্য করে বলে উঠলো…
.
এক্চুয়েলি আই লাভ দিস গার্ল।শী অলসো লাভ মি।।ইউ নো হোয়াট?আমরা তো চুপিচুপি বিয়েও করে নিয়েছি।।এন্ড নাও শী ইজ প্রেগনেন্ট।।
.
হোয়াট??বাট আয়ান আমি তোকে ভার্সিটি লাইফ থেকে ভালোবাসি আর তুই এভাবে হুট করে বিয়ে করে নিলি??আই রিয়েলি লাভ ইউ।
.
সরি আনিকা।।আমি বিয়েটা না করলেও ভেবে দেখতাম বাট নাও ইটস ইম্পসিবল।। তুই বরং অন্যকাউকে খুঁজে নে।
.
প্লিজ আয়ান ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড।। আমি তোকে ৫ বছর ধরে খুঁজছি।তুই তো আমার নাম্বারটাও ব্লক করে দিছিস।।আর ইউএস গিয়ে নাম্বারটাও চেঞ্জ করে ফেলেছিস।।আমি ফাহিমকে অনেকবার বলেছি তোর নাম্বারটা যেনো দেই কিন্তু শেষ পর্যন্ত না দিয়েই ভেগে গেছে।।
.
সো স্যাড…
.
আয়ানের কথায় অদিতি তেমন শকড না হলেও তার মা চরম রকম শক খেয়েছে।।যাকে বলে হার্ট আট্যাক টাইপ শক।।তার মেয়ে প্রেগনেন্ট আর সে জানে না??ছি ছি,,অদিতি তার সাথে এমন টা করতে পারলো??না এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।।কিছুতেই না।।
.
🍁
.
কি হয়েছে?ডেকছো কেন?তাড়াতাড়ি বলো কাজ আছে তো…
.
হাহ্।।কাজ আছে মানে কি?কাজ আছে বলে বউয়ের দিকে তাকানো যাবে না?
.
তুমি কি এখন ঝগড়া করার জন্য ডেকেছো আমায় সাদিয়া??
.
আমি ঝগড়া করছি??(অবাক হয়ে)হ্যা,, এখন তো ঝগড়ায় লাগবে।।আমি তো ঝগড়ুটে।(মুখ ফুলিয়ে)
.
আমি সেটা বলি নি সাদিয়া।বাট তুমি এই মুহূর্তে যা করছো তা ঝগড়া ছাড়া কিছুই না।।
.
তুমি আসলেই যাচ্ছে তাই।।এতো সুন্দর একটা ওয়েদারে সবাই রোমান্টিক কথা বলছে।।আর তুমি ঝগড়া করছো??এত্তো সুন্দর করে যে সাজলাম সেদিকে তো খেয়াল নেইই আবার রোমান্স।।অসহ্য…সরো সামনে থেকে।।সবাই ঠিকই বলে বিয়ের পর আর ভালোবাসা থাকে না।।থাকবে কেমনে আশেপাশে এতো সুন্দরী মেয়ে থাকতে পুরনো বউ এ ভালোবাসা আসবে কেমনে?বুঝি তো…
.
এই তো শুরু হইছে।।সাদিয়া তুমি না টাইমিং বুঝো না।।দেখছো কতো বিজি আছি তবুও…
.
সাদিয়া আর দাঁড়ালো না।।চুপচাপ সেখান থেকে চলে এলো।।তার এবার কান্না পাচ্ছে সে ভীষনরকম কান্না পাচ্ছে।কিন্তু সেই কান্নাটা কারো কাছে প্রকাশ করতে চাইছে না।।কেনো জানি রিয়াদের কথায় খুব খারাপ লাগছে তার।মনে হচ্ছে রিয়াদ তাকে আগের মতো ভালোই বাসে না।।একটুও বাসে না।।এই যে সে সেখান থেকে চলে এলো কই একটা বার তো আটকানোর চেষ্টা করলো না।।
.
.
#চলবে…🍁
.
(কেউ গল্পের জন্য অপেক্ষা করে থাকবেন না,,ধন্যবাদ)
#অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part:27
.
.
🍁
.
অদিতির মার মাথায় পানি ঢালছে ঐশি পাশে অপরাধী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অদিতি।।অদিতি আয়ানের উপর ভীষনরকম ক্ষেপে আছে কিন্তু আয়ানের তা নিয়ে কোনো মাথাব্যাথা আছে বলে মনে হচ্ছে না।বরং সে খুবই আগ্রহ নিয়ে ব্যাপারটা দেখছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে ব্যাপারটায় সে ভীষন মজা পাচ্ছে।।অদিতির বাবা পাশের চেয়ারে চিন্তিত মুখে বসে আছেন স্ত্রীর উদ্ভট সব কথা বিশ্বাস করবেন কিনা বুঝে উঠতে পারছেন না।ছোট মেয়ের প্রতি তার যথেষ্ট ভরসা আছে…সে একজন বুদ্ধিমতী মেয়ে….কিছু না ভেবেই প্রেগনেন্ট হয়ে বসে থাকার মেয়ে অদিতি নয়।।তাই স্ত্রীর কথার তেমন গুরুত্ব তিনি দিচ্ছেন না।।আধা ঘন্টা পানি ঢালার পর অদিতির মা কিছুটা স্টেবক হলেন…তার পর পরই শুরু হলো উনার আহাজারি “এটা কি হয়ে গেলো গো” “আমার সর্বনাশ হয়ে গেলো গো” আরও কতো কি।।অদিতির বাবা বিষয়টায় চরম বিরক্ত।উনি কপাল কুঁচকে স্ত্রীর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই বলে উঠলেন….
.
কি সমস্যা রমা?তুমি ছাগলের মতো ভ্যা ভ্যা করছো কেন?
.
কি? আমি ছাগলের মতো ভ্যা ভ্যা করছি??তুমি বুঝতে পারছো কি হচ্ছে??আরে…অদিতি যে প্রেগনেন্ট হয়ে বসে আছে সে খেয়াল তোমার আছে??আমার কতো বড় সর্বনাশ হয়ে গেলো, ভাবতে পারছো তুমি??
.
না ভাবতে পারার মতো তো কিছু হয় নি রমা।তোমার এক্সাইটমেন্ট দেখে মনে হচ্ছে তুমিই প্রেগনেন্ট হয়ে গেছো।।যে প্রেগনেন্ট সে তো শান্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে।।ওকে দেখে কি তোমার মনে হচ্ছে না যে সামথিং ইজ ফিসি?
.
কি বলতে চাও তুমি??
.
তোমাকে আমি কিছুই বলতে চাই না।।আমাদের সোসাইটিতে দুইধরনের মহিলা আছে,, এক. মাথামোটা মহিলা। দুই. চিকন মাথার মহিলা।।আর তুমি হলে মোটা মাথার মহিলা,, এসব মহিলাদের আমি কিছু বলতেই চাই না।।কারন তারা বুঝে কম নাচে বেশি।
.
তুমি কিন্তু অপমান করছো।
.
একদমই নয়।আমি তোমাকে রিয়েলিটিটা বলছি।এনিওয়ে অদিতি? এন্ড ইউ?? (আয়ানের দিকে তাকিয়ে) ব্যাপারটা কি সত্য না মিথ্যা??
.
আয়ান মুচকি হেসে বলে উঠলো…”আপনার কি মনে হয়.. ব্যাপারটা সত্য?”
.
আমার মনে হওয়া না মনে হওয়া দিয়ে কিছু যায় আসে না।। আমি সত্যটা জানতে চাইছি।।ইয়েস অর নট।
.
মিথ্যা।
.
মিথ্যা?তাহলে সত্য কতটুকু?(ভ্রু কুচঁকে)
.
এখানে কোনো সত্যই নেই।
.
মিথ্যে বললে কেন..??
.
মেয়েটার আক্রমণ থেকে বাঁচতে।।কোনো মেয়ের বিরুদ্ধে কোনো ছেলে লড়তে পারে না।।মেয়েদের জন্য যোদ্ধা হিসেবে মেয়েরায় যথাযোগ্য।
.
অদিতির বাবা স্থির দৃষ্টিতে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছেন।আয়ানের মুখ হাসি হাসি,,এতো কিছুর পরও তারমধ্যে কোনো অপরাধবোধ কাজ করছে না বরং সে মজা পাচ্ছে।অদিতির বাবার এই মুহূর্তে আয়ানকে অপছন্দ করা উচিত।।ভয়ঙ্কররকম অপছন্দ।কিন্তু কেনো জানি তিনি তা পারছেন না।।অদ্ভূত কোনো কারনে আয়ানকে তার ভালো লাগছে।কিন্তু কারনটা খুঁজে পাচ্ছে না সে।।কি কারণ হতে পারে??
.
.
🍁
.
.
আমার নজর কিন্তু তোমার কোমরের শেইপের উপরই আগে পড়েছিলো।
.
ফাহিমের কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালো রিয়া।রাত ১ঃ০০ বাজে…সারাদিনের ধকলের পর এখন তাদের ঘুমানো উচিত কিন্তু ফাহিমের জেদের সামনে হার মেনে ছাদের কর্নিশে এসে দাঁড়াতে হয়েছে তাকে।।পাশে আছে ফাহিম।
.
মানে??
.
মানে টা সিম্পল।তোমার কোমরের শেইপের উপর আম ক্রাশড।প্রথম যদিন শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখি সেদিনই চোখে পড়ে ব্যপারটা।
.
কিহ?আপনি এতো বাজে?মেয়েদের কোমরের দিকে তাকিয়ে থাকেন??আর কতো মেয়ের হাত, পা,কোমর,বুক,মুখ, চোখের উপর ক্রাশ খাইছেন শুনি?(রাগী গলায়)
.
অন্যকোনো মেয়ের কোমর বা শরীরের অন্যকোনো জায়গায় তাকায়নি। তোমার দিকে কোনো তাকিয়েছিলাম তা এই মুহূর্তে বুঝতে পারছি না।।তুমি যখন শাড়ির আঁচল পেচিয়ে পেছনে হাত নিয়ে দাঁড়াতে তখন খুব সুন্দর লাগতো।।তখন…. আমার ভয়ঙ্কর সব ইচ্ছে করতো।তাই দূরে থাকার ট্রাই করতাম
.
ভয়ঙ্কর ইচ্ছেটা কি?জানতে পারি?
.
না পারো না।
.
কেন??
.
কারন আমি চাচ্ছি না তুমি জানো।।শুনলে লজ্জা পাবে।
.
পাবো না লজ্জা বলুন আপনি।
.
ফাহিম মুচকি হেসে রিয়াকে একহাতে জড়িয়ে নিয়ে বলে উঠলো…. “বাসর ঘরে প্রেকটিক্যালি দেখাবো।।জাস্ট ওয়েট”
.
ফাহিমের এটুকু কথাতেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলো রিয়া।।লজ্জা রাঙা চোখে তাকালো আকাশের দিকে।।একগুচ্ছ মেঘ এসে ডেকে দিলো চাঁদকে।।হয়তো মেঘও বুঝতে পেরেছে রিয়ার লজ্জার গভীরতা।। তাই হয়তো চাঁদকে আড়াল করে রিয়ার লজ্জা লুকোতে সাহায্য করতে চাইছে তারা।
.
.
.
বাইরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে সাদিয়া।।আকাশে চাদঁ ও মেঘের লুকুচুরি খেলা দেখছে সে।।আজ তার মনটা বড্ড খারাপ।কেনো খারাপ তা সে বুঝতে পারছে না।।হয়তো বুঝেও বুঝতে চাইছে না।।আজ কেনো জানি মাকে খুব মনে পড়ছে।।মনে হচ্ছে মাকে জড়িয়ে ধরে তারপাশে শুলে নিমিষেই ঘুম নেমে আসতো চোখে।।কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না…এতো চাপাচাপিতে মার কাছে গিয়ে শোয়া যাবে না আর এখন সে তো নিজেই বাচ্চার মা।।পিচ্চিটাকে তো আর যেখানে সেখানে শুইয়ে দিতে পারে না।।এই মুহূর্তে তার খুবই কান্না পাচ্ছে খুব।মনে হচ্ছে এই এত্তোবড় পৃথিবীতে সে একদম একা।একদম!!হঠাৎই কোমরে কারো স্পর্শ পেলো সাদিয়া।পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে রিয়াদ… ওর কোলে ঘুমন্ত আদ্রিতা।সাদিয়া একবার তাকিয়েই চোখ ঘুরিয়ে নিলো আকাশের দিকে।।চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়লো একফোঁটা জল।
.
আমার জানপাখিটা কি রাগ করেছে??
.
…………………………..
.
সরি!!সরি!!সরি!!
.
…………………………..
.
এভাবে চুপ থেকোনা প্লিজ।তুমি তো বুঝো আমায় বলো??কতো কাজের চাপে আছি আমি।তারপরও কেনো রাগ করছো?আচ্ছা বাবা!!এত্তোগুলো সরি।।আর কখনও হবে না এমন কান ধরছি।।
.
সাদিয়া চুপ।।কোনো কথা নেই মুখে শুধু চোখ দিয়ে বেয়ে পড়ছে নোনাজল।এই তিনবছরে কখনও রিয়াদের থেকে এমন ব্যবহার পায় নি সে।।অলওয়েজ সাদিয়াকে বাচ্চাদের মতো আগলে রেখেছে রিয়াদ।।ওর সব আবদার মেনে নিয়েছে হাসিমুখে।।আজই প্রথম তারমুখে বিরক্তি দেখেছে সাদিয়া।।যা মেনে নিতে পারছে না…. অভ্যস্ত নয় সে!!রিয়াদ বুঝতে পারছে সাদিয়া কাঁদছে। এই মুহূর্তে নিজেকে ঠাডিয়ে দুটো চড় মারতে ইচ্ছে করছে তার।।কি দরকার ছিলো ওভাবে বলার??
.
সাাদিয়া কেঁদো না প্লিজ।আমার কষ্ট হচ্ছে ….. আই প্রমিজ,, আর কখনো এমন বিহেভ করবো না আমি।।সরি তো বাবা।কান্না থামাও না।নয়তো আমার প্রিন্সেসও কান্না জুড়ে দিবে।।প্লিজ কান্না করো না।।আচ্ছা…দুই তিনটা চড় থাপ্পর মারো আমায়,,শাস্তি দাও তবু কেঁদো না।।
.
সাদিয়া কিছু না বলে চলে যেতে নিলেই তার হাত ধরে ফেললো রিয়াদ।আদ্রিতাকে তার কোলে দিয়ে সাদিয়াকে কোলে তোলে নিলো রিয়াদ।।হঠাৎ এভাবে কোলে নেওয়ায় চমকে উঠলো সাদিয়া।খুব শক্ত করে আদ্রিতাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো সে…যেনো মেয়েটা পড়ে না যায়।।তারপর চোখ মুখ শক্ত করে বলে উঠলো সে…
.
কি হচ্ছে এসব?নামাও বলছি।বাড়ি ভর্তি মানুষ…
.
সবাই ঘুমিয়ে গেছে। এখন তো দেড়টারও বেশি বাজে।।
.
তুমি নামাও আমি আমি ঘুমোতে যাবো।।
.
কই ঘুমাবে?তুমি তো এতো মানুষের মধ্যে ঘুমোতে পারো না।।তারওপর আদ্রিতাও আছে সাথে।।
.
তো তুমি কি আমায় কোলে নিয়ে ঘুম পাড়াবা নাকি আজিব!!(রাগী গলায়)
.
তুমি চাইলে তাই করবো।।(মুচকি হেসে)
.
ঢং না করে নামাও আমায়।।এতো ভালোবাসা দেখাতে হবে না।
.
নামাবো ওয়েট।।আর ভালোবাসা তো ছোট থেকে দেখিয়ে আসছি সোনা আজ নতুন কি?
.
সাদিয়াকে চিলেকোঠায় নিয়ে নামিয়ে দিলো রিয়াদ।।সাদিয়া খেয়াল করলো চারপাশটা বেশ ঝকঝকে পরিষ্কার।। পাশে রাখা খাটটাও সুন্দর করে গুছানো হয়েছে।।কিন্তু রিয়াদ তাকে এখানে কেনো আনলো?
.
এখানে কেনো?(অবাক হয়ে)
.
আজ আমার জানপাখি আর আমার প্রিন্সেসকে নিয়ে আমরা এখানে থাকবো।। এখানে কেউ নেই তোমার ঘুমে সমস্যা হবে না।।চলো জটপট শুয়ে পড়ো কাল অনেক কাজ।।আদুকে আমার কাছে দাও….
.
সাদিয়া নিজের অজান্তেই হেসে দিলো।।রিয়াদ আদ্রিতাকে একপাশে শুইয়ে দিয়ে সাদিয়া কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে চাদর টেনে দিলো।।সাদিয়া একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে শুধু রিয়াদের ওই ক্লান্তিমাখা মুখ…..
.
.
.
আপনি আমার ধারে কাছেও আসবেন না।।অলওয়েজ উল্টা পাল্টা কাজ করতে থাকেন।।মা যদি হার্ট আট্যাক করতো তো কি হতো শুনি??(রাগী গলায়)
.
হসপিটালে নিয়ে যেতাম।(ইনোসেন্ট হাসি দিয়ে)
.
ইউ আর জাস্ট ইম্পসিবল!!
.
ইয়াহ,,আই নো।।তো মিস ঝগড়ুটে?? চলো বিয়ে করে নেই।।
.
আয়ানের কথায় অবাক চোখে তাকালো অদিতি৷। আয়ান কি সিরিয়াসলি বলছে?নাকি ফাজলামো করছে ওর সাথে??
.
#চলবে❤