অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part:30
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
.
.
🍁
.
মা,,মানে কি??কি বলছেন এসব?
.
আব আব ম,,মানে হলো ফাহিম…
.
ফাহিম মানে??(ভ্রু কুঁচকে)
.
ফাহিম মানে হলো..ফাহিম বলছে এই কথা,,”আই ওয়ান্ট টু কিস ইউ”…. (অদিতি তাকাতেই) আমাকে নননয় আ আমাকে নয় রিয়া…রিয়াকে।।ওই তো ছাদে দাঁড়িয়ে রোমান্স করছে দেখো?..আই থিংক এই সিচুয়েশনে এমন কিছুই বলছে ফাহিম হে হে হে(জোড় পূর্বক হাসি দিয়ে)
.
অদিতি বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।।আয়ান যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো এখনি মানসম্মানের বারটা বাজতে চলেছিলো তার।।নিজের গালেই দুটো চড় লাগাতে ইচ্ছে করছে আয়ানের….অদিতির সামনে এলেই তার এসব খাপছাড়া ব্যক্তিত্বহীন মানুষের মতো কথাবার্তা মোটেও ভালো লক্ষণ নয়।।সে নির্ঘাত প্রেমে পড়ে যাচ্ছে…কিন্তু এটা তো কাম্য নয়।তাকে অদিতির থেকে দূরে থাকতে হবে…থাকতেই হবে।বাবার সাথে যা হয়েছে তা সে নিজের লাইফে রিপিট করতে চায় না।।এসব ভালোবাসা নামক আবেগ মানুষকে কখনো শান্তি দেয় না।।এ তো কেবল কষ্ট..আর এই কস্টের ভার আয়ান তার কাঁধে চাপাতে চায় না।।কিছুতেই না।।অদিতির কথায় ঘোর কাটলো আয়ানের..
.
আমি প্রেগনেন্ট হলে আপনি খুশি হতেন এমনটা কেন বললেন??
.
কককই না তো।।এমন কখন বললাম?আমি তো আরও ট..টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম।তুমি প্রেগনেন্ট হলে সবাই আমাকেই সন্দেহ করতো।।মানসম্মানের ব্যাপার…
.
আপনি তো মেয়েদের সাথে এসব করেই ঘুরে বেড়ান।।তা তো সবারই জানা…নতুন করে মানসম্মান আর কি খোয়াবেন শুনি?(মজা করে)
.
আই এম আয়ান চৌধুরী…. সো মেয়েদের টাচ করলেও তাদের ক্লাস দেখেই করি।আর তুমি আমার ক্লাসের নও…এটা তো আমার জন্য সম্মানহানিরই ব্যাপার… রাইট??
.
আয়ানের কথায় অদিতি চুপ হয়ে গেলো।কি বলবে বুঝতে পারছে না।আয়ান যে ওকে সরাসরি অপমান করছে তা স্পষ্ট। সে কি আসলেই লো ক্লাস মেয়ে?এতোটা অপমান কি তার প্রাপ্য?চাইলে এই মুহূর্তে আয়ানকে কিছু ঝাঁঝালো কথা শুনিয়ে দিতে পারে অদিতি।কিন্তু কেনো যেনো ইচ্ছেই করছে না। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকেই উঠে চলে এলো অদিতি….দু এক পা এগিয়েই মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো তার…পড়ে যেতে নিয়েও সামলে নিলো নিজেকে।।আবারও হাঁটা দিলো বাড়ির দিকে।আয়ান দোলনায় বসে পা দুলাচ্ছে।।সে ইচ্ছে করেই কষ্ট দিয়েছে অদিতিকে….কারণ সেও তো কষ্ট পাচ্ছে…ভেতরটা যে জ্বলে যাচ্ছে।।কাউকে ভালোবেসে তাকে নিজের করতে না পারার কষ্ট কি খুব কম?অদিতি কেনো ওর কাছাকাছি এলো?হুয়াই?রেলস্টেশনে অদিতির ওড়নাটা কেন আয়ানের ঘড়িতেই গিয়ে লাগলো? আয়ানকে অদিতির কোম্পানিই কেনো হায়ার করলো? এসব না হলে আজ হয়তো আয়ানকে এতোটা পুড়তে হতো না।এসবের জন্য দায়ী কে?নিশ্চয় অদিতি!!এবার অদিতিকেও জ্বলতে হবে।।প্রতিটি পদক্ষেপে ওকে জ্বলতে হবে।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে একটা সিগারেট ধরালো আয়ান।।দৃষ্টি ছাদের ওই কোনটাতে…রাতের অন্ধকারে চাঁদের হালকা আলোই ফাহিম-রিয়ার প্রণয়লিলা দেখতে খারাপ লাগছে না আয়ানের।।
.
🍁
.
আদ্রিতা কাঁদছে…শুধু কাঁদছে বললে ভুল হবে একে ভুবন বিদারণ চিৎকার বলা যেতে পারে।সাদিয়া কাঁদো কাঁদো মুখে বসে আছে আদ্রিতার কান্নার উৎস খুঁজে পাচ্ছে না সে।একঘন্টা যাবৎ কোলে তোলে অনেক চেষ্টা চালিয়েছে,, সব চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ায় এখন চুপচাপ বসে আছে।তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে যেকোনো টাইম সে নিজেই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিবে।ফাহিম..রিয়া..অদিতি…ফাতেমা সবাই চেস্টা করে ফেলেছে ফলাফল জিরো।সকাল থেকে রিয়াদের দেখা পায় নি সাদিয়া।।রিয়ার বিয়ে নিয়ে চরম বিজি সে…বউ, বাচ্চার খবর নেওয়ার সময় আছে নাকি তার?একদমই নেই।রিয়াদ এই মুহূর্তে সামনে থাকলে হয়তো কেঁদে কেটে বন্যা বানাতো সাদিয়া…কিন্তু সাহেবের দেখা মিললে তো।।এই মুহূর্তে সাদিয়ার নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মানুষ মনে হচ্ছে।।তারও প্রায় আধাঘন্টা পর রিয়াদ এলো।।হাতে এতোগুলো ফাইল পত্র। হয়তো অফিসে গিয়েছিলো।আদ্রিতাকে এভাবে কাঁদতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো সে।সাদিয়াকে পাশে এভাবে মুখ ভার করে বসে থাকতে দেখেই দিলো এক ধমক।।মেয়ে কাঁদছে মা এভাবে শান্তিতে বসে থাকবে কেন??এবার সাদিয়াকে পায় কে?মেয়ের সাথে সেও গলা মেলালো কান্নায়।রিয়াদ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে।।সে হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না…একটা বাচ্চাকে সামলানো যায় দু দুটো বাচ্চাকে তো আর সামলানো সম্ভব নয়।।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাড়াহুড়ো করে মেয়েটাকে কোলে তুলে নিলো রিয়াদ।ইশশ…কাদঁতে কাদঁতে শ্বাস আটকে আসছে মেয়েটার।।চোখের জলে ভিজে যাওয়া ছোট্ট গাল টাতে নাক ঘষতে ঘষতে আধুরে গলায় বলে উঠলো রিয়াদ-
.
প্রিন্সেস?বাবাই কাঁদছো কেন সোনা?আমার বাবাইটার কি মন খারাপ?পেট ব্যাথা করছে??হুম…
.
ব্যাস এটুকু বলতেই মেয়ে চুপ।।সাদিয়া অবাক দৃষ্টিতে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে আবারও ঠোঁট উল্টে কাঁদতে লেগে গেলো।।বাবা- মেয়ে দুজনেই যে বদের হাড্ডি তা বুঝা হয়ে গেছে সাদিয়ার।।দু’ ঘন্টা ধরে এতো চেষ্টা করেছে থামার নাম নেই বাপের কোলে উঠেই চুপ?কি বজ্জাত মেয়ে…মায়ের প্রতি ভালোবাসা তো দূর একটু দয়া মায়াও নেই।দয়া থাকলে কি এভাবে বকা শুনাতো তাকে??মেয়েকে এভাবে চুপ হয়ে যেতে দেখে মুচকি হাসলো রিয়াদ।।হাসিমুখেই এগিয়ে গেলো সাদিয়ার দিকে…এবার বড় বাচ্চার কান্না থামানোর পালা!!!
.
🍁
.
রাত ২ টো। এত্তো মানুষের মাঝে শুয়ে থেকে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো রিয়ার।।অনেক কষ্টে ১ টার দিকে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমাতে পেড়েছিলো সে।।কিন্তু কিছুক্ষণ পরই ফোনের ভাইব্রেশনে ঘুম ছুটে গেলো তার।।রিয়ার এই মুহূর্তে ফোনটাকেই আছাড় মারতে ইচ্ছে করছে।।বিরক্তি দমন করে কোনো রকম আধবোঝা চোখে ফোনটা কানে নিলো সে।ফোনটা কানে নিতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলো….
.
এই রিয়া?
.
হুম(অস্পষ্ট স্বরে)
.
ঘুমোচ্ছিলে বুঝি?
.
নাহ নাচতেছিলাম।(রাগী গলায়) ঘুম ভাঙিয়ে জিজ্ঞেস করছেন ঘুমিয়েছিলাম কি না??
.
ওহ সরি জান।।আমি তো টেনশনে ঘুমোতে পারছি না তাই তোমাকে কল করলাম।
.
টেনশন?(ভ্রু কুচঁকে) কিসের টেনশন??
.
বেবির টেনশন!! আজ আদ্রিতাকে দেখলে?কি চেঁচায়। আল্লাহ সাদিয়া তো সামলাতেই পারছিলো না।।তুমি যে বাচ্চা তুমি তো আরও পারবে না।।এখন কি হবে?
.
আজব তো…বাচ্চা সামলানোর মতো বয়স আমার হয়েছে তাছাড়া আমি কি সারাজীবন বাচ্চা থাকবো নাকি??(বিরক্তি নিয়ে)
.
আমি কতো ভেবে রেখেছিলাম বিয়ের একবছর পর আমাদের একটা বেবি থাকবে।।ইশশ আমার ইচ্ছেটা পূরণ হলো না আর।।আমার খুব খারাপ লাগছে….
.
ফাহিম নন-স্টপ কথা বলে যাচ্ছে।এদিকে রাগে রিয়ার গা জ্বলে যাচ্ছে।।এতো রাতে ঘুম ভাঙিয়ে কেউ এমন আগলা টেনশনের কথা তার প্রেয়সীকে শোনায় বলে রিয়ার জানা ছিলো না।।তার গম্ভীর বরটা যে এতো কথা বলতে পারে, তা কে জানতো??
.
🍁
.
এইযে পাগলের ডাক্তার?(হাসি মুখে)
.
আমাকে বলছো?(ভ্রু কুঁচকে)
.
হ্যা…এখানে আপনি ছাড়া আর কে আছে শুনি??
.
অদিতির কথায় আয়ান তার ঠিক সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।।পকেটে হাত দিয়ে স্ট্রেট দাঁড়িয়ে বলে উঠলো-
.
আমার নাম আয়ান।আমাকে সে নামে ডাকলেই খুশি হবো মিস. অদিতি!
.
আয়ানের কথায় মুখের হাসি মুছে গেলো অদিতির।।প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত এতো স্ট্রিক্টলি কথা বলতে দেখে নি অদিতি।।ব্যাপারটাকে হজম করে নিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে বলে উঠলো-
.
সরি! এক্চুয়েলি মেহেদী আনা হয় নি এখনো।।সবাই ওয়েট করছে।আপনি কি মেহেদী আনার ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন প্লিজ?আসলে রিয়াদ ব্যস্ত খুব।
.
ওয়েট ওয়েট…আমাকে কি তোমার কাজের লোক মনে হয় মিস.অদিতি?তোমার এসব ফালতু কাজ নিজের কাছে রাখো…যত্তোসব আজাইরা….
.
কথাটা বলেই পেছন ফিরে হাঁটা দিলো আয়ান।অদিতি স্থির দৃষ্টিতে আয়ানের যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে।।একদিনেই এতো পরিবর্তন!!!
.
#চলবে..🍁