অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part:31

অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part:31
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤

.
.
🍁
.
দক্ষিণের খোলা বারান্দায় দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে।পড়নে গোলাপী রঙের একটা শাড়ি…অন্ধকারে যার রং চেনা যাচ্ছে না বললেই চলে।শাড়ির আঁচল মাটিতে লুটুপুটি খাচ্ছে।এলোমেলো চুলগুলোতে চাঁদের আলো পড়ে হয়ে উঠেছে মোহনীয়।রাত প্রায় ১টা এতো রাতে এমন একটা জায়গায় কোনো মেয়ে এভাবে নিষ্পলক আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ভাবতেই গা শিউরে উঠছে রিয়াদের।মাঝরাতে আদ্রিতার জ্বালাতনে ঘুম ভেঙেছে তার….মেয়েকে শান্ত করতেই তাকে নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছিলো সে কিন্তু দক্ষিণের বারান্দার দিকে আসতেই থমকে দাঁড়াতে হয়েছে তাকে।।এতো রাতে এখানে কে দাঁড়াতে পারে??কাঁপা কাঁপা বুক নিয়ে মেয়েটির পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো সে….বাগান থেকে বেলীফুলের কড়া ঘ্রান নাকে ধাক্কা দিচ্ছে বারবার।রিয়াদ একটু ইতস্ততভাবেই বলে উঠলো-
.
এক্সকিউজ মি?
.
সাথে সাথেই পেছন ফিরে তাকালো মেয়েটি।রিয়াদের অবচেতন মন ভেবেই নিয়েছিলো ভয়ঙ্কর কিছু দেখবে…তাই মেয়েকে বুকে চেপে ধরে চোখদুটু খিঁচে বন্ধ করেছিলো সে।।কিন্তু শান্ত পরিচিত কন্ঠ কানে ভেসে আসায় চোখ মেলে তাকালো সে।।অদিতি!! এতো রাতে সে এই গা ছমছম করা বারান্দায় করছেটা কি?অদিতির কথায় ঘোর কাটলো তার-
.
রিয়াদ?এখানে কি করছো?
.
আদু জ্বালাচ্ছিলো খুব তাই ঘুরতে নিয়ে এলাম।তুমি এতো রাতে একা একা এখানে?ভয় লাগে না?(অবাক হয়ে)
.
অদিতি হাসলো।রিয়াদের আরেকটু কাছে দাঁড়িয়ে হাত মেলে দিতেই লাফিয়ে তার কোলে চলে এলো আদ্রিতা সাথে তার দাঁতবিহীন খিলখিল হাসি…ইশশ হাসিটা কি মিষ্টি..একদম সাদিয়ার মতো…!! একটু ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে মিষ্টি হেসে বলে উঠলো সে-
.
মেয়েটা দেখতে তোমার মতো হলেও স্বভাবগুলো ঠিক সাদিয়ার মতো হয়েছে রিয়াদ।
.
হুম মায়ের কার্বন কপি। আর কিছু পারুক বা না পারুক মায়ের মতো জ্বালাতে ঠিক শিখে গেছে।(মুচকি হেসে)
.
জ্বালায় কারণেই তো ভালোবেসেছিলে তাকে রিয়াদ…
.
রিয়াদ কিছু বললো না।কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না।। অদিতির সামনে সাদিয়াকে নিয়ে কথা বলা মানেই তাকে কষ্ট দেওয়া।তাই চুপচাপ গাছের মাথায় জটলা করা অন্ধকারে তাকিয়ে রইলো।।আবারও বলে উঠলো অদিতি-
.
ইশশ কি মিষ্টি মেয়ে গো তোমার।।এতো মিষ্টি হতে কে বলেছিলো শুনি?আদু হওয়ার আগে সাদিয়াকে কি কাড়ি কাড়ি মিষ্টি খাইয়েছিলে নাকি রিয়াদ?
.
রিয়াদ মুচকে হেসে বলে উঠলো- ” মিষ্টি কি খাওয়াবো?সাদিয়া নিজেই তো মিষ্টির ডিব্বা।ওর কাছে পৃথিবীর সব মিষ্টিই তেঁতো লাগবে আমার।” কথাটা বলেই চুপ হয়ে গেলো রিয়াদ। এমন কিছু বলা ঠিক হয় নি তার।অদিতি নিশ্চয় কষ্ট পাচ্ছে খুব।এমনি মেয়েটা কতো কষ্টই না পেয়েছে শুধু এবং শুধু তার জন্য!! রিয়াদ হালকা ঢোক গিলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েই বলে উঠলো-
.
একটা কথা বলবো অদিতি?
.
হুম বলো..(আদ্রিতার সাথে দুষ্টুমি করতে করতে)
.
সরি অদিতি! এখনো কি তুমি..
.
রিয়াদের কথায় চট করে তাকালো অদিতি। তারপর চোখটা আবারও নামিয়ে নিয়ে বলে উঠলো-
.
ভালোবাসি কি না জিগ্যেস করছো?
.
নাহ।এখনও কষ্ট পাও কি না জিগ্যেস করছি।অদিতি? আমি তোমার কাছে অপরাধী। হয়তো ক্ষমা করতে পারবে না কখনো কিন্তু একটাবার ভাবো…আমার ১২ বছরের ভালোবাসার মানুষটি আমায় ভালোবাসে এই কথাটা জানার পরও কি আমি তোমাকে খুশি করতে পারতাম?আমার মনে একটা না পাওয়া থেকে যেতো,, চাপা আর্তনাদ থেকে যেতো তাতে তুমিও সুখি হতে পারতে না।হয়তো রেসপন্সিবিলিটিটা পালন করতাম।কোনো একদিন হয়তো ভালোও বাসতাম কিন্তু সেই ভালোবাসাটা কি বাধ্য হয়ে বা জোড় করে করা ভালোবাসা হতো না?আমরা ১বছর একসাথে ছিলাম অদিতি…কখনো নিজ থেকে তোমার হাতটিও ধরি নি।নিজ থেকে কখনো ফোন করি নি….আসলে আমি পারি নি।।তবুও আমি দোষী কারণ আমি তোমার মনে আশা জাগিয়ে ছিলাম।কারো স্বপ্ন ভাঙার অধিকার আমার নেই জানি তবু ভেঙেছি সেজন্য আমায় ক্ষমা করো অদিতি।।আমি সাদিয়া আর আদ্রিতাকে হারাতে চাই না।ওদের ছাড়া আমি বাঁচবো না…ওরা দুজন মিলেই আমার জীবন… প্লিজ আমার উপরের রাগ থেকে ওদের ওপর নারাজ থেকো না…কখনো ওদের অভিশাপ দিও না।।যা হওয়ার আমার হোক মাথা পেতে নিবো….কিন্তু ওদের টেনো না প্লিজ।।তোমার নিশ্চুপতা… তোমার চুপচাপ সব ছেড়ে দেওয়াটাই যে কতো বড় বোঝা আমার…তোমায় বোঝাতে পারবো না অদিতি!!!
.
তুমি শুধু শুধু গিল্টি ফিল করছো রিয়াদ…আমি ক্ষমা করেছি তোমায়।প্রথম প্রথম রাগ লাগলেও পরে ভেবেছি…তোমার ডিসিশনটাই ঠিক ছিলো…নয়তো তিনটি জীবন নষ্ট হয়ে যেতো…নয়তো মরে মরেই বাঁচতে হতো আমাকে।।(তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে) সুলমেট তো উপরওয়ালায় বানিয়েছে রিয়াদ… তোমায় দোষারোপ করে কি লাভ?
.
আয়ান ভাইয়া অনেক ভালো অদিতি।(মাথা নিচু করে) তোমায় খুব ভালো রাখবে দেখো।ইউ ওলওয়েজ ডিজার্ভ সামওয়ান হু ইজ বেটার দেন মি…আর আয়ান ভাইয়া আমার থেকে অনেক বেটার।
.
মিষ্টার আয়ানের কথা আসছে কোথা থেকে রিয়াদ?আমাদের পথ দুদিকে।আমাদের ক্লাস দু’রকম। আমরা আলাদা দুটো মানুষ!!
.
অদিতি উনি তোমায় ভালোবাসেন।আমি বিশ্বাস করি উনি তোমায় ভালোবাসেন।তোমার বিপদে যার হাতটা সবার আগে পাবে সে হয়তো আয়ান ভাইয়াই!!
.
হয়তো!! এই হয়তো শব্দটা খুব খারাপ রিয়াদ…খুব খারাপ।সব শেষ করে দেয় মুহূর্তেই।৪ বছর আগে আমি ভেবেছিলাম হয়তো তুমি ভালোবাসবে আমায়…আর স্বপ্নগুলো ভেঙে গেলো।।নতুন করে আর কোনো হয়তোকে সঙ্গী করতে চাই না আমি।।কোনো ভালোবাসা বা বন্ধনে বিশ্বাস রাখতে চাই না আমি।।হেরে গেছি…ভেঙে গেছি আমি রিয়াদ(টলমলে চোখে)
.
না ভাঙো নি তুমি। সবার জীবনের গল্পের পাতা এক হয় না অদিতি। আমি তোমার যোগ্য ছিলাম না…কখনোই না। তোমায় এগোতে হবে…..এভাবে বেঁচে থেকে কি লাভ?জীবনটাকে একটা সুযোগ দাও।।সবাই যে বলে জীবনের প্রথম ভালোবাসাটাই সব হয়…বাকিগুলো মিথ্যে তাহলে সেটা ভুল অদিতি।কারণ প্রথম ভালোবাসায় সব হলে মানুষের জীবনে দ্বিতীয় ভালোবাসাটা কোনো কালেই আসতো না।।হাজারও মানুষ নতুন করে বাঁচার আশা করতো না।।প্লিজ অদিতি….নিজেকে এভাবে শেষ করো না।।প্লিজজজ…
.
কথাটা বলেই আদ্রিতাকে কোলে নিয়ে হাঁটা দিলো রিয়াদ…অদিতি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও দেয়ালে ঠেস দিয়ে আকাশের দিকে তাকালো।।আকাশটায় কি আলো!!তাহলে অদিতির চারপাশেই কেনো এতো অন্ধকার?? কেনো?
.
.
🍁
.
ছাদের রেলিং এ পিঠ লাগিয়ে বসে আছে ফাতেমা অর্থাৎ মামনি।তার কোলে মাথা রেখে মাদুরে শুয়ে আছে আয়ান আর ফাহিম।।দুজনেরই দৃষ্টি আকাশে…চাঁদের পাশের ওই ঝলমলে তারাটির দিকে।আয়ানের চোখে রাজ্যের অসহায়ত্ব আর ফাহিমের চোখে শান্তি… মামনি দুই ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে চলেছে অনবরত…মনটা অস্থির তার…তার আয়ান যে ভালো নেই তা যে স্পষ্ট।। দুজনের কপালেই চুমু দিয়ে বলে উঠলেন তিনি-
.
আয়ান?কি হয়েছে রে বাবা?বলবি না আমায়?
.
আয়ান চমকালো না চুপচাপ শুয়ে রইলো।সে জানতো মামনি বুঝবে…এই মহিলাটা কিভাবে যেনো ওর মনের ব্যাপারগুলো বুঝে যায় সহজেই… ওকে চুপ করে থাকতে দেখে ফাহিমই বলে উঠলো-
.
মা?ও অদিতিকে ভালোবাসে।ওদের বিয়েটা দিয়ে দাও তো….
.
ফাহিমের কথা কানে যেতেই অস্বাভাবিক জোড় দিয়েই বলল উঠলো আয়ান..
.
নাহ!! আমি ভালোবাসি না ওকে।ফাহিম?উল্টাপাল্টা কথা বলবি না একদম।মামনি?আমি পরশোই ইউএস যাবো।কালই তো ফাহিমের বিয়ে শেষ….প্লিজ মামনি…
.
মামনি মামনি করলেই হবে?আমি তোকে যেতে দিলে তো যাবি নাকি?কাল বিয়ে শেষ হতেই তুই দেশ ছাড়বি…. তা আমি কিছুতেই হতে দিবো না।।দরকার হলে বিয়েই করবো না..(মুখ গোমরা করে)
.
নট্যাংকিবাজ…বিয়ে তো আগেই করে নিয়েছিস…সো ঢংটা কমিয়ে কর।।বুঝার চেষ্টা কর প্লিজ…এখানে আর মন টিকছে না আমার।।বাবার কাছে যাবো বাবাও তো একা মামনি…
.
অদিতিকে ফেলে যাবি আয়ান??
.
মামনির কথায় চমকে উঠলো আয়ান।নিজেকে সামলে নিয়েই বলে উঠলো সে-
.
আমি তো কখনো ওকে ধরি নি মামনি….তাই ফেলে যাওয়া কথাটা আসছে না।।আমার লাইফে ও কখনো ছিলো না।।আর ওকে আমি চাই ও না।।মামনি?মার মতো কেউ আমার জীবনটাও শেষ করে দিক এমনটা আমি চাই না।।এইতো বেশ আছি…শত শত মেয়েদের ভীরে।।কি দরকার একজনকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার??স্বপ্নগুলো অনেক কষ্ট দেয় মামনি যা বাবাকে দিচ্ছে….জানো মামনি??বাবা আজও মাঝরাতে মার ফেলে যাওয়া বেনারসিটা বুকে চেপে কাঁদে….এতোটা কষ্ট কি তার পাওনা ছিলো??বাবা পেরেছে আমি পারবো না মামনি…আমার ওতো ধৈর্য নেই…
.
অদিতি ওমন নয় আয়ান…ও তো..
.
প্লিজ মামনি…তুৃমি এটলিস্ট এমনটা বলো না…প্লিজ!! (টলমলে চোখে)
.
মামনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে রেলিং এ মাথা ঠেকালেন।ফাহিমেরও বুক চিরে বেরিয়ে এলো একটা দীর্ঘশ্বাস।।দুজনের মনে একই প্রশ্ন..আয়ান ভালো থাকবে তো??
.
🍁
.
যার যার মতো তৈরি হচ্ছে সবাই।পার্লারের মেয়েরা এসে সাজিয়েছে কনে কে।এখন বাকি সবাইকে সাজাতে ব্যস্ত তারা।ফাহিম শেরওয়ানি পড়ে চুলগুলো ঠিক করছিলো মাত্র ঠিক তখনই পাশের জানালার কাছে ধপ করে শব্দ হলো….ফাহিম চমকে উঠে তাকিয়েই অবাক।রিয়া??লাল বেনারসি পড়ে টুকটুকে বউ সেজে জানালা গলিয়ে বরের রুমে ঢুকে পড়েছে সে…ভাবা যায়??ফাহিম কিছু বলার আগেই কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে উঠলো রিয়া-” লাফ দিতে গিয়ে পায়ে ব্যাথা লেগেছে…. আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে না থেকে কোলে নিন আমায়।” ফাহিম তখনও অবাক চোখে তাকিয়ে আছে….
.
#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here