অভ্রভেদী_প্রণয় পর্ব_১৫

গল্পের_নাম : অভ্রভেদী_প্রণয় পর্ব_১৫ ( #crazy_for_you )
লেখনিতে :#মিমি_মুসকান

সন্ধ্যা নামছে আকাশের রঙ পরিবর্তন হচ্ছে, লাল আভা দেখা যাচ্ছে। নিশি হাতে একটা হাওয়াই মিঠাই নিয়ে হাঁটছে আর খাচ্ছে। নিশান নিশি’র পাশে পাশে হাঁটছে। সময়’টা খুব দারুন যাচ্ছে।
হঠাৎ’ই আকাশ তার রঙ আবার পাল্টালো। আকাশে এখন মেঘ জমে গেছে। কিছুক্ষণ’র মধেই জোরে বৃষ্টি নামতে শুরু করল। নিশি দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগল।
.
নিশি’র জর্জেটের কালো শাড়ি’টা ভিজে একাকার তাও সে ভিজে যাচ্ছে। নিশান ওর পাশেই দাঁড়ানো। সে তার জান পাখি’কে চোখ ভরে দেখে যাচ্ছে। নিশি চোখ বন্ধ করে বৃষ্টি’র পানি অনুভব করছে। বৃষ্টি’র পানি তার ঠোঁট ছুঁয়ে পরছে। নিশানের এবার নেশা লেগে যাচ্ছে । তার খুব মন চাচ্ছে তার জান পাখি’র ঠোঁট ছুঁয়ে দিতে। সে একনজরে তাকিয়ে আছে জান পাখি’র দিকে।

হঠাৎ’ই মেঘের গর্জন শুরু হলো।‌ নিশি ভয়ে নিশান’কে আঁকড়ে ধরল। এতোক্ষণ পর তার চোখ নিশানের দিকে গেল। নিশি নিশান’কে দেখে যাচ্ছে । নিশান আলতো করে নিশি ‘র কোমরে হাত রাখে। নিশি’র শরীর শিউরে উঠে। তার হার্টবিট বাড়তে থাকে। সে চেয়েও নিশানের থেকে আলাদা হতে পারছে। নিশান আস্তে আস্তে নিশি’র অনেক কাছে চলে আসে। নিশি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। নিশান নিশি’র গালে হাত রাখে। তারপর বৃষ্টি’র পানির মতো নিশান’ও আলতো করে নিশি’র ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। নিশি আরো শক্ত করে নিশান’কে আঁকড়ে ধরে। শুধু মাত্র কিছু সেকেন্ড’র জন্য’ই নিশান নিশি ‘র ঠোঁট দুটো ছুঁয়ে দেয়।

হঠাৎ করেই আবার মেঘের গর্জন হয়। নিশান এবার নিশি’কে ছেড়ে দেয়। নিশি নিশান’কে ছেরে দিয়ে তার সামনে দাঁড়ায় । নিশান তাকিয়ে আছে নিশি’র দিকে কিন্তু নিশি নিশানের চোখে চোখ মেলাতে পারছে না। সে দৌড়ে সেখান থেকে চলে আসে।

নিশান এতোক্ষণ নিশি’র দিকে তাকিয়ে থাকলেও নিশি’র দৌড়ে চলে যাওয়াতে তার খেয়াল হলো সে কি‌ করেছে। ততোক্ষণে নিশি সেখান থেকে চলে গেছে। নিশান পাগলের মতো খুঁজে যাচ্ছে তার জান পাখি’কে । কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না। গাড়ি’র কাছে ও নিশি নেই। এই নিশি আবার একা একা চলে যায়নি তো। এমনে’তেই রাতের অন্ধকার তার মধ্যে এই বৃষ্টি কোথায় খুঁজবে সে নিশি’কে ‌। তাও পাগলের মতো এদিক ওদিক করে খুঁজে যাচ্ছে ।

।।

এদিকে নিশি দৌড়ে যাবার সময় সামনে কয়েকজন ছেলে এসে তাকে আটকালো। ল্যামপোস্টের নিচে দাঁড়ানো নিশি । কয়েকটা ছেলে হিংস্র শেয়ালের মতো ঘিরে ধরেছে তাকে।

“নিশি : আ…আপ… আপনারা কারা?

– আমরা যেই হই না কেন তুমি কে গো সুন্দরী

– ভাই যাই বল মেয়েটা কিন্তু হেব্বি সুন্দরী

– আজকের রাত পুরো জমে যাবে ভাই।
( বলেই তারা আগাতে থাকে নিশি’র দিকে )

নিশি তাদের এমন আগানোতে পিছুতে থাকে।

“নিশি : আপনারা সরুন আমার সামনে থেকে। যেতে দিন আমাকে।

– আরে আমরা তো সমাজসেবি । এতো রাতে একটা মেয়ে’কে কিভাবে একা ছাড়ি।

– তাও এতো সুন্দরী,হট মেয়ে’কে ।

– আসলেই কিভাবে তোমাকে একা ছাড়বো বলো তো?

“নিশি : প্লিজ আপনারা এরকম করবেন না। ছেড়ে দিন আমাকে।

– আরে ধরলাম’ই না আর এই সুন্দরী তো ছাড়ার কথা বলছে । ( সবাই জোরে জোরে হাসতে শুরু করে)
.
নিশি পিছুতে পিছুতে হঠাৎ’ই কারো সাথে ধাক্কা খায়। কেউ আছে তার পিছনে । তার সাথে ধাক্কা লাগার পর থেকেই নিশি’র হার্টবিট বাড়তে থাকে। শরীর শিউরে উঠছে। শরীরের প্রত্যেক’টা অঙ্গ কাঁপতে থাকে।‌ বুঝতে আর বাকি রইল না এটা নিশান। ল্যামপোস্টের আবছা আলোতে মাথা উঁচু করে নিশি দেখলো নিশান তার দিকে তাকিয়ে আছে। নিশি দৌড়ে নিশানের পিছনে লুকিয়ে তাকে আকঁড়ে ধরল।

– আরে এটা আমার মাল তুই আসলি কোথা থেকে ।

– হয়তো ওর প্রেমিক টেমিক হবে দেখ

– সমস্যা নাই ভাগাভাগি করতে আমরা রাজি আছি কি বল তোরা ( হেঁসে )

নিশানের তাদের কথা শুনেই মাথা খারাপ হয়ে গেল। সে তাদের বলবে কি তার আগেই গান বের করে সামনের ছেলেটার মাথা বরাবর একটা গুলি করল। গুলির আওয়াজে সবাই এখন শান্ত হয়ে গেছে। নিশি আরো শক্ত করে এবার নিশান’কে ধরে রেখেছে। তার ভাবতেই ভয় লাগছে নিশান কাউকে মেরে ফেলেছে।

নিশান আরো একটা গুলি করে সেটা একজনের পায়ে লাগে। সাথে সাথে সবাই পালাতে ‌থাকে । নিশান তাদের ধরতে যাবে তখনই নিশি নিশান’কে থামিয়ে দেয়। নিশান এবার তাড়া হুরা করে নিশি’কে চেক করতে।

“নিশান : জান…জান পাখি তুমি ঠিক আছো। কিছু হয় নি তো তোমার। দেখি দেখি… কিছু হয় নি তো বলো না। আমি দেরি করে ফেলেছি আসতে। কে বলেছিলো তোমাকে একা আসতে হুম বলো আমাকে ( ধমক দিয়ে ) যদি এখন আমি না আসতাম কি হতো তুমি ভাবতে পারছো। পাগল হয়েগেছিলাম তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে আমি। কত কত জায়গায় খুঁজেছি আমি। কোথায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না আমি। জানো আমার অবস্থা’টা কি হয়েছে তখন। কিছু বলছো না কেন তুমি কি হলো তোমার?

নিশি মনোযোগ দিয়ে নিশানের প্রত্যেক’টা কথা শুনতে থাকল। নিশান ওকে জান পাখি বলেছে। হ্যাঁ ও ঠিক শুনেছে নিশান ওকে জান পাখি বলেছে। নিশানের মুখে জান পাখি শুনেই নিশি’র সেই দিনের স্বপ্নের কথা মনে পরে গেল। ভয়ে তার হাত পা জমে গেছে। সেদিনের সেই ভয়াবহ স্বপ্ন তার সামনে সে বুঝতেই পারছে না কিছু।

নিশি’র কোনো জবাব না পেয়ে নিশান আলতো করে নিশি’র গালে হাত রেখে বলে…
“নিশান : জান পাখি তুমি ঠিক আছো তো…

নিশি তাড়াতাড়ি করে বলে…
“নিশি : আমি বাসায় যাবো!

“নিশান : চলো।
নিশান নিজের গায়ের জ্যাকেট’টা খুলে নিশি’র গায়ে পরিয়ে। নিশি চুপচাপ পরে নেয় কারন তার মাথায় এখন অনেক প্রশ্ন ঘুরছে কিন্তু সেটা বলার মতো কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না সে। নিশান নিশি’র হাত ধরে তাকে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। তারপর নিশি’র সিটবেল বেঁধে গাড়ি র্স্টাট দেয়। নিশি এতোক্ষণ শুধু মাথা নিচু করেই বসে ছিলো। নিশান কোনো কথা বলে না সে নিশি’কে সময় দিতে চায় নিজের ভালোবাসা বোঝার জন্য।
গাড়ি সোজা এসে নিশি’র বাসার সামনে থামে। বাসার সামনে গাড়ি আসতেই নিশি গাড়ি থেকে নেমে এক দৌড়ে বাসার ভেতর চলে যায়। নিশানের দিকে একবার ফিরেও তাকায় না।
.
নিশি কলিং বেল বাজাতেই ফারহানা বেগম এসে দরজা খুলেন। তিনি এসে নিশি’কে এই অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস করেন..

“ফারহানা : কি হয়েছে নিশি তোর এই অবস্থা কেন?

“নিশি : কি.. কিছু না মা। আসলে একটু বৃষ্টি’তে ভিজলাম তাই..

“ফারহানা : আচ্ছা তাড়াতাড়ি ভিতরে এসে ‌চেন্জ করে নে নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে।

“নিশি : হুম।
.
নিশি সোজা ঘরে এসে বাথরুমে ঢুকে যায় । কিছুক্ষণ আয়নায় তাকিয়ে থাকে। ঠোঁটে’র দিকে তাকাতেই নিশানের কথা মনে পরে তার। তার এই ঠোঁটে কিছু সেকেন্ড’র জন্য ছুঁয়েছে নিশান । পানি দিয়ে ইচ্ছে মতো ঘসছে সে ঠোঁট দু’টোকে। ভাবতেই কেমন লাগছে,এতোদিন যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছে তাকে এভাবে ধোঁকা দিলো সে। কেন? আর কিভাবে। এখন তাকে মুখ দেখাবে কি করে নিশি। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায় নিশি’র। চোখ দুটি বন্ধ করতেই নিশানের সেই গুলি করার দৃশ্য ভেসে ওঠে তার সামনে। দেওয়ালে আঁটকে থাকে সে। শাওয়ার অন করে ভিজতে থাকে। কতোক্ষণ এভাবে ছিলো জানা নেই তার।
ফারহানা বেগম এর ডাকে ঘোর কাটে নিশি’র ।

“ফারহানা : কিরে আর কতোক্ষণ থাকবি। বের হ এবার ডিনার ও তো করতে হবে আবার কাল অফিস ও আছে।

নিশি আবার ভাবতে লাগল।‌ আসলেই তো অফিসে যেতে হবে কিন্তু কাল সে ছুটি নিয়েছে তাই কাল অফিসে যাবে না । পরেরদিন Resign letter নিয়ে যাবে। আর করবেনা সে জব ওই অফিসে।‌
ওয়াশরুম থেকেই বের হতে দেখে ফারহানা বেগম রুম গোছাচ্ছেন।

“ফারহানা : এতোক্ষণ লাগে বুঝি তোর গোসল করতে হুম।‌ চুল গুলো থেকে এখনো পানি পরছে। ( তাওয়াল নিয়ে নিশি’র চুল মুছতে মুছতে ) এখন আয় খেতে আয় ‌।

“নিশি : মা আমি খেয়ে এসেছি।

“ফারহানা : ও খাবার এখনো আছে বুঝি তোর পেটে আর তুই যে কি খাবার খেয়েছিস আমার জানা আছে।

“নিশি : না মা আজ আমি অনেক খেয়েছি এখন আর খাবো না ঘুমাবো একটু।

“ফারহানা : হ্যাঁ কাল তো আবার অফিস ও আছে।

“নিশি : না মা কাল ছুটি নিয়েছে ভার্সিটিতে যাবো তাই।

“ফারহানা : ওহ্ আচ্ছা‌ ঠিক আছে।
.
ফারহানা বেগম বের হয়ে যায় রুম থেকে। নিশি এসে বেলকনিতে দাঁড়ায়। ভাবতেই থাকে সে কিন্তু তার ভাবনা যেন শেষই হয় না।‌ ভাবতে ভাবতে কোন সময় যে ঘুমিয়ে পরে এই খবর থাকে না তার।
.
অন্ধকার রুমে হাত পা বাঁধা রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে সেই ছেলে গুলো। নিশান একটা রড নিয়ে সেই রুমে ঢোকে। নিশান’কে দেখেই তাদের আত্না যেন বেড়িয়ে যায়। তাদের মধ্যে একজন’কে তখনই মেরে ফেলেছিলো নিশান। আরেকটা পায়ে গুলি করেছিল। সেও এখানে। তাদের’কে ইচ্ছে মতো পিটাতে থাকে সে।
নিশানের রাগ এখনও কমেনি। এরমধ্যে একজন প্রবেশ করে সে রুমে। নিশান ওকে উদ্দেশ্য করে বলে…

– ওদের শরীরে যেন গরম পানি ফেলা হয়। তারপর জঙ্গলে ছেড়ে আসো এদের। হিংস্র পশুগুলো ছিড়ে খাবে ওদের। তাহলে তাদেরও পেটের ক্ষুধা মিটবে।

এত ভয়াবহ শাস্তির কথা শুনে সবাই কেঁদে ওঠে। চিৎকার করে বলে তাদের ভুল হয়ে গেছে। এরকম আর কখনও হবে না।

নিশান জোরে হেসে হেসে বলে..
আসলেই এরকম আর কখনও হবে না। কারন এরকম কাজ করার জন্য তোরা বেঁচে’ই থাকবি না।
একজন’র চুলের মুঠ করে বলে….
আমার জান পাখি’র দিকে নজর দিয়েছিল না তুই। হুমম আরো কতো কি না বলেছিলে এতো সহজে কিভাবে ছেড়ে দেবো তোদের আমি বল..!

গার্ড’দের কাজ দিয়ে চলে আসে নিশান। বাসায় এসেই কলিং বেল বাজাতেই চিরচেনা একটা মুখ এসে দরজা খোলে। নিশান’কে দেখে যেনো তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। আদর করে ঘরে ঢোকায় নিশান’কে।
নিশান ঘরে ঢুকে তাকে জরিয়ে ধরে। এতোদিন পর প্রিয় মানুষ’কে দেখে তারও অনেক ভালো লাগে। নিশান শান্ত গলায় বলে ওঠে…
“নিশান : অনেক ক্ষুধা লেগেছে আমার। একটু খাইয়ে দেবে আমাকে মা!

“মা : হুম হাত মুখ ধুয়ে আয় আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
হ্যাঁ এটা নিশানের মা। নিশান বাসায় এসেছে আজ এতোদিন পর। অনেক’টা হালকা লাগছে তার মায়ের সাথে এভাবে কথা বলতে পেরে। অনেক কথা বলা’র আছে তার।
নিশান হাত মুখ ধুয়ে এসে বসে। নিশানের মা খাবার প্লেট হাতে নিয়ে বসে আছে। ‌নিশান এসে বসে পরে তার মায়ের পাশে। তিনি খাওয়াতে থাকে নিশান’কে। নিশান বসে বসে বলতে থাকে আজকের ‌ঘটা সব ঘটনা।
তার জান পাখি’কে নিয়ে ঘোরার কথা।‌ তার জান পাখি’কে জান বলে ডাকা সব। ছেলের কথা শুনে মা মুচকি হাসেন।‌ তারপর বলে..

– অনেক রাত হয়েছে এখন ঘুমাতে যাও।
“নিশান : হুম।

চলবে…….

আগের পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/387248842996894/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here