অসুখের নাম তুমি” পর্ব:৪

0
1393

#অসুখের_নাম_তুমি
#সোনালী_আহমেদ
৪র্থ পর্ব

চৈত্র মাস।প্রকৃতি ও পরিবেশের আবহমানতায় বাংলাদেশে চৈত্র মাস রুদ্র বৈভব নিয়ে আসে। চৈত্রের রুদ্র দাপটে ক্রমেই শেষ হয় মৃদুমন্দ উদাসী হাওয়ার মখমল পেলব বাসন্তী দিন, স্বপ্নমেদুর রাত্রি আর রঙিন উৎসবময়তার চালচিত্র।
রাতের হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টির পর মাঠঘাট জলমগ্ন হলেও ভোরেই রোদ্রের প্রখর তান্ডব শুরু হওয়ায় শুকিয়ে খা খা করছে।
তাই তো সকাল ভোরেই সৌহার্দের দাদী তার বোনের বাড়ী ত্যাগ করে নিজ বাড়ী চলে আসেন। সঙ্গে বোনের নাতনিকেও নিয়ে এসেছেন।

এক কালে বোনকে কথা দিয়েছিলেন তার নাতিকে বোনের নাতিনের সহিত বিবাহ দিবেন। যদিও এই কথা সুচনা অর্থাৎ বোনের নাতিনের জানা হলেও সৌহার্দের জানা নয়।
সরাসরি সৌহার্দকে কিছু না বলিলেও ইশারা ইঙ্গিতে নানান কিছু বুঝিয়েছিলেন তার দাদী।

সৌহার্দের দাদীর বয়স সত্তরের ও বেশি। লাঠি ভর দিয়ে চলাফেরা করেন। তবুও সংসারে তার কথার উপর কেউ কথা বলে না। লিনা এত খারাপ হওয়া স্বত্তেও শাশুড়ির উপর কথা বলতে পারে না। কারণ তার স্বামী সব কথা শুনলেও মায়ের কথার উপর কথা বলা শুনতে পারে না। তবে শাশুড়িকে যে পাত্তা দেয় তা কিন্তু না। লিনার স্বামী না মাকে কিছু বলে আর না বৌকে! সে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে।

জমিলা বেগম বোনের সাথে কথা বলে নাতনিকে সঙ্গ করে নিয়ে এসেছেন। সৌহার্দকে তার বিয়ের খবর সাথে বউকে দেখিয়ে চমক দিবেন বলেই এনেছেন। এসব কথা বোনকে বলে বুড়ি মুচকি মুচকি হাসছিলো।

সৌহার্দ আর অল্প কয়দিন দেশে থাকবে তারপরেই তো বিদেশ চলে যাবে, তাই তিনি সৌহার্দ দেশে থাকতে থাকতে আকদ টা পড়িয়ে ফেলতে চান। তার বয়স হয়েছে,নিঃশ্বাসের ও বিশ্বাস নেই। কবে প্রাণপাখি বেরিয়ে যাবে ঠিক নেই! সেজন্যই বেঁচে থাকতে থাকতে বিয়ে টা দেখতে চান।
পরে সৌহার্দ যখন আবার দেশে আসবে তখন না হয় বিয়ে করে ঘরে বউ নিয়ে আসবে।

বুড়ি মনের বাসনা মনের ভেতর রেখেই মুচকি মুচকি হাসছিলো। সূচনাকে তার বড্ড মনে ধরেছে, মেয়েটা বেশ সংসারী। একসময় সজীবের বউ করার ইচ্ছা পৌষণ করেছিলেন,কিন্তু লিনা তার সাথে সুমির বিয়ে করিয়ে নেয়। এ ব্যাপারে তার মত অমত দুটোই ছিলো। প্রথমে মানেন নি কারণ তিনি তো সূচনার জন্য তাকে ঠিক করেছিলো,পরক্ষণে সুমির দিকটা দেখে আর অমত থাকেন নি। তাই সূচনার জন্য তিনি সৌহার্দকে ঠিক করেছেন।

বাড়ীতে প্রবেশ করেই তার ছোট নাতিনকে খেলনা দিলেন। হাট-বাজার ঘুরে ঘুরে খুঁজে এনেছেন তিনি।এই নাতিন তার হাতে ভর দেওয়া লাঠির মতো। দাদী পাগল নাতি। লিনার তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে সিয়ামের জন্যই অধিক পরিমাণ টান জমিলা বেগমের।

খাবার টেবিলে বসে আছেন জমিলা বেগম। ইতোমধ্যে দুবার সৌহার্দকে ডেকেছেন তিনি।

নাতি আসা পর্যন্ত নাস্তা মুখে দিবেন না তিনি। অতঃপর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ঢুলুমুলু শরীর নিয়ে নিচে নেমে আসে সৌহার্দ। তাকে দেখতে পেয়েই জমিলার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে।

সৌহার্দ দাদীকে দেখে অবাক হয়ে যায়। প্রায় দৌড়ে এসে সালাম দিয়ে দাদীকে জড়িয়ে ধরে।

—‘হয়েছে, হয়েছে আর পা ছুঁতে হবে না। এদিকে আয়। এইখানে বস তো। ‘

সৌহার্দ দাদীর পাশে বসলো। জমিলা বেগমের হাত সৌহার্দের শরীরে লাগতেই তিনি প্রায় চিৎকার করেই বললেন,–‘ ও মা! কি হয়েছে তোর? গা দেখি পুড়ে যাচ্ছে। ‘

সৌহার্দ দুষ্টু হেসে বলে,–‘ তুমি ছিলে না যে তাই। এখন তুমি এসেছো, তোমার উষ্ণতায় গা ঠিক হয়ে যাবে।’

জমিলা বেগম তার কান টেনে বলেন,–‘ তাই নাকি!’

সৌহার্দ কান ছাড়িয়ে নিতেই তিনি বলেন,–‘ যে জিনিস নিয়া আসছি,আমারে আর লাগবো না।’

সৌহার্দ দাত কেলিয়ে বলে,–‘ সত্যি? কই দেখি তো,কি নিয়া আসছো?’

–‘ সবুর,সবুর! সবুরেই মেওয়া মিলে!’

সৌহার্দ নিঃশব্দে হাসলো। দাদীর পাশের চেয়ার টা টেনে বসতেই জমিলা হাসি মুখে বলে ওঠে, ‘ নাতি,আজ এত দেরী হইলো কেনো নামতে?’

জমিলার মুখের বাক্য সৌহার্দের কানে পৌঁছাতেই সেকেন্ডে তার মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেলো। তার রেশমির কথা মনে পড়ে গেলো। দাদী তো রেশমির কথা জানে না। সে কীভাবে কী দাদীকে বলবে?

এতক্ষণ টেবিলের অপর প্রান্তে বসে সবকিছুই দেখছিলো লিনা। জমিলার প্রশ্ন তার কালো মুখে পলকেই হাসি ফুটিয়ে দিয়েছে।

খাবারের প্লেট টা হালকা আওয়াজ করে সামনে এনে বললো,–‘ মা,আপনার নাতি আপনার জন্য চমক রেখেছে। সে জন্যই দেরী।’

—‘তাই নাকি? সেটা কি?’

—‘ একটু পরেই দেখতে পাবেন মা। আমি শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারি, আপনি একদম চমকে যাবেন।’

জমিলা বেগম কপাল কুচকে তাকালেন। লিনার মতি গতি ভালো ঠেকছে না তার। এদিকে সৌহার্দের কপালে ঘাম জমতে লাগলো।
চাচী উল্টাপাল্টা বলার আগে তাকেই সব বুঝিয়ে বলতে হবে।

সে বলে,–‘ দাদী ,আমি না খুব বড় এক কাজ করে ফেলেছি।’

—‘ কি করেছিস?’

সৌহার্দ আমতা আমতা করে বলতেই নিচ্ছিলো তখনই সুমি আর রেশমি সেখানে উপস্থিত হয়।

মাত্রই গোসল সেরে এসেছে রেশমি। ঘরের উল্টো দিক দিয়ে সুমির সাহায্যে কলের পাড়ে গিয়ে গোসল করেছে। সুমি এসে দাদীকে সালাম করে নাস্তা এগিয়ে দিলো।

জমিলা বেগম প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন রেশমির দিকে। সুমি ইশারায় রেশমিকে বলে, পা ছুঁয়ে যেনো সালাম করে।

পরপর দুবার ইশারা করার পর রেশমি বুঝতে পারে। সালাম পর্ব চুকতেই জমিলা বেগম রেশমির দিকে তাকিয়ে বলেন,—‘ তুমি কেডা? তোমারে তো চিনতেছি না।’

এবার লিনা হেসে ওঠলো। সে প্রস্তুতি নিয়ে বসেছে খেলা দেখতে। রান্নাঘরের দিকে কয়েকবার উঁকি দিলো সূচনাকে দেখতে।
মেয়ে টা নিজ হাতে নানানরকম পিঠা বানিয়ে এনেছে। সেগুলোই চুলোয় গরম করতে গিয়েছে। লিনার তর সইছে না,এখনো আসছে না কেনো? দুর, ব্যাঙ্গ!

রেশমি নম্রতার সাথে জবাব দে,–‘ রেশমি। আমার নাম রেশমি।’

—‘ সেটা বুঝবার পারছি। কিন্তু তুমি কার কে হও?’

রেশমি জবাব দেওয়র আগে জমিলা বেগম আবার নিজে নিজে বলে উঠেন,—‘ সুমির সাথে আসছো? ওহ, তুমি সুমির সই? তা এত সকালে যে ,কোনো বিশেষ দরকার?’

রেশমি নির্বাক হয়ে তাকায়। এ বুড়ি নিজেই সব ভাবছে,নিজেই বলছে। তাহলে নিজেই ভাবোস না কি দরকারে আসছি।মনে মনে বেশ তর্ক করলো রেশমি।

—‘না, না। আমি উনার সই না।’

—‘ওহ। তাহলে কে?’

রেশমি মুখে ভীষণ লজ্জা ফুটিয়ে বলে ওঠে,–‘ আ্ আমি উনার বউ।’

সৌহার্দকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে কথাটি বলে রেশমি। ঠিক তখনই উপস্থিত হয় সূচনা। পায়ের বাটি হাতে নিয়ে বেশ হাসিখুশি মুখেই আসছিলো। মনে মনে বেশ লজ্জাও পাচ্ছিলো সৌহার্দের সামনে আসতে। কিন্তু রেশমির কথা শুনতেই থমকে গেলো। হাতে থাকা পায়েসের বাটি টা ছুটে নিচে পড়ে গেলো। মুহূর্তেই বিকট আওয়াজ ঘটলো। সবাই একসাথে সূচনার দিকে তাকালো।

চলবে!

দুটো বিষয় বলার ছিলো..
আগামিকাল থেকে তো রোজা তাই ঠিক এ সময়ে গল্প দিতে পারবো কি না নিশ্চিত নই। সময়ের হেরফের হবে। আরেকটা বিষয় আমি আঞ্চলিক ভাষা টা বাদ দিয়ে চলিত ভাষায় লিখেছি। বেশ কয়েকজনের এ ভাষাগুলোরর সংমিশ্রণ পছন্দ ছিলো না,তাদের পড়তে নাকি বেশ বেগ পেতে হয়েছে। গল্প টা কি আপনাদের ভালো লাগছে,আমি তো নতুন তাই ঠিক ঠাক লিখতে পারছি না। তবুও আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here