অস্তিত্বের খোঁজে পর্বঃ২০

0
2612

অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ২০




– কৌশিক ফোনে কথা বলতে বলতে নিচে নামার উদ্দেশ্য যাচ্ছিল। হঠাৎ পরীর রুমের সামনে এসে থমকে দাড়ায়। চাপা আর্তনাদ আর ধস্তাধস্তির শব্দ পেয়ে। কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে বুঝার চেষ্টা করল…… এবার বিকট একটা শব্দ হয় রুমে সেটা শুনেই কৌশিক জোড়ে জোড়ে থাবা দিতে থাকে দরজায়।




– পরী তুমি ঠিক আছো এত্ত শব্দ হচ্ছে কেন…… কিন্তু কোন উত্তর নেই…… রুমের ভিতর শুধু পরীর আর্তনাদই শোনা গেল।



– কোন সমস্যা হয়েছে বলেই কৌশিক জোড়ে জোড়ে দরজায় লাথি এবং ধাক্কা দিতে লাগল। লাথি আর ধাক্কার শব্দে বাসার সবাই এসে দেখল কৌশিকের কান্ড গুলো।
– শুভ্র পরীর নাম শুনতেই ল্যাপটপ রেখে জলদি দৌড়ে আসে…..
– দাদা কি হয়েছে এরকম করছিস কেন?
– শুভ্র পরী ঠিক নাই বলেই আবার জোড়ে ধাক্কা দিতে লাগল।
– শুভ্রর মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল…… পরী পরী বলে বার বার ধাক্কা দিতে লাগল দরজায়।




– নিতু কে এক ধাক্কা দিয়ে পরী বিছানা থেকে উঠতেই নিতু পিছন দিক থেকে পরীর চুল ধরেই দেওয়ালে একটা বাড়ি মারে। পরীর মনে হয় দুনিয়া অন্ধকার হয়ে আসে আর এদিকে বাসার সবাই বাহিরে থেকে চিল্লাচাটি করেই যাচ্ছে।




– আজ তো আমি যাবই তবে তোকে দুনিয়া থেকে বিদায় করেই যাব বলে পরীকে হিচড়ে টেনে কয়েকটা থাপ্পড় মারে এতে ও দরজার সামনে পরে। ও টলতে টলতে দরজার ছিটকি খুলে দিতে গিয়েও পারলনা। আধা খুলে গেল।
– এবার কৌশিক জোড়ে একটা লাথি মারে এতে দরজার এক ধাক্কায় পরী আছড়ে গিয়ে ওয়াড্রপের সাথে বাড়ি খায় এবং নেতিয়ে পরে।
– এদিকে পরীকে উদ্দেশ্য করে নিতু একটা ফুল দানি ছুড়ে মারে যেটা গিয়ে কৌশিকের কপালে লেগে ফেটে যায়। কৌশিকের কপাল বেয়ে ঝরঝর করে রক্ত বেয়ে পরে।




– কৌশিক সোজা গিয়ে নিতুকে ধরেই কয়েকটা থাপ্পড় লাগিয়ে বলল পাগল হয়ে গেছ তুমি। আমাদের বাসায় এসে আমাদেরই আঘাত কর?


– নিতু কোন কথায় শুনছে না ওর পরীকে মারা চাই চাই…… টেবিলের উপর যা ছিল একেকটা সব কৌশিক আর পরীকে উদ্দেশ্য ছুড়তে লাগল। কৌশিক নিতুকে এবার শক্ত করে ধরল। আর নিতু রাগে গর গর করে দাপাতে লাগল।




– শুভ্র পরীর কাছে এসে ধপ করে বসে পড়ল। আর পরীর মাথা থেকে রক্তের স্রোত বয়ে যাচ্ছে। শুভ্রর আর হুশ নাই নিথর ভাবে অপল দৃষ্টিতে পরীকে দেখছে। অধিক মনের উপর ধাক্কা পেলে যা হয়।




– অনিতা এসে শুভ্রকে ধাক্কা মেরে বলল শুভ্র! ওকে ধর জলদি ওর চিকিৎসা দরকার…….. না হলে অঘটন ঘটে যাবে।

– শুভ্র পরীকে তুলে দ্রুত নিচে চলে গেল এবং কারে উঠাইয়ে গাড়ী স্টার্ট দিল।



– অনিল দৌড়ে আসতেই দেখে শুভ্র গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেছে……. অনিলও দ্রুত আর একটা গাড়ি নিয়ে শুভ্রকে অনুসরন করে।




– নিদ্রা ঘুম থেকে উঠে চিৎকার চেঁচামেচির শব্দে। এক পা ২ পা করে এগিয়ে এসেই দেখে পরীর রুম থেকে শব্দগুলো আসছে। ও দ্রুত রুমে ঢুকেই দেখে নিতুকে শক্ত করে কৌশিক ধরে আছে আর ওর কৌশিকের কপাল বেয়ে রক্ত পড়ছে।


-কৌশিক বলে নিদ্রা দ্রুত ওর কাছে যায়।

– নিতাই জলদি নিতুর বাবা- মা আর সাথে পুলিসের এসআইকেও কল দিয়ে বাসায় আসতে বলে।

– নিতু এবার শান্ত হয় এবং ঐ অবস্থায় বসে পড়ে। কৌশিক ছেড়ে দেয় নিতুকে।

– নিদ্রা জলদি কৌশিককে ড্রেসিং করাতে ব্যাস্ত। আর কাঁদছে।

– নিদ্রা আমার কিছুই হয়নি পরীকে আজ ও শেষ করে দিয়েছে। মেয়েটার যে কি অবস্থা গড জানে। আমি যদি না আসতাম নিতু পরীকে এতক্ষন যে কি করত ভাবতেই গায়ে কাটা দিচ্ছে।





– শুভ্র আসলামের হসপিটালে এসে থামে এবং পরীকে কোলে নিয়ে দ্রুত হসপিটালে ঢুকে যায়। রাস্তায় আসার সময় আসলামকে সব জানিয়েছে শুভ্র তাই আসলাম সব রেডী করেই রাখছিল।

– আসলাম জলদি ওর কাজ শুরু করে দেয়। বেশ ডিপ
ভাবে কেটে গেছে তাই রক্ত ক্ষরন ও বেশ হয়েছে।

– শুভ্র ওর রক্তের গ্রুপ কি জানিস কারন পরীক্ষা করার মত আর সময় নেই।

– o+

– ওকে বলেই আসলাম চলে গেল। পরীকে রক্ত দেওয়া হলো।




– অনিল এসে শুভ্রর পাশে বসে পড়ল। সব ঠিক হয়ে যাবে বাবা চিন্তা করিস না। শুভ্র শুধু চুপ করে কথা গুলো শুনল।




– বাসায় নিতুর বাবা-মা আর ওর বড় ভাই এসেছে। একটু পর এসআই ও আসল।

– নিতাই সেন বেশ গম্ভীর গলায় বলল আপনাদের মেয়ে আজ যা করেছে…. ওকে পুলিশে দেওয়া ছাড়া কোন উপায় নাই আমাদের।

– নিতুর মা বলে উঠল আমার মেয়ে দোস করেছে মানছি…….. কিন্তু শুভ্র ওর সাথে যে অন্যায় করেছে সেটা কি বলবেন? আপনারা যদি ওকে পুলিশে দেন আমারাও আপনাদের নামে আমাদের সম্মান হানি করার জন্য মামলা দিব।


– এবার নিতু বেশ জোড় দিয়ে বলে উঠল………. হবু স্ত্রীকে রেখে অন্য একটা মুসলিম মেয়ের সাথে পরকিয়া সম্পর্কে কি বলবেন আপনারা…..!আপনারা তো কিছু বলবেন না শুভ্রকে তাই এই ব্যবস্থা।


– অনিতা এবার মুখ খুলল। এই মেয়ে তোমার চরিত্র আগে ঠিক কর তারপর শুভ্রকে নিয়ে কথা বলবে। তোমার সম্পর্কে সব কথা শুভ্র আমাকে বলেছে।

– আপনি একদম চুপ করবেন.. যেমন মা তেমন তার ছেলে……. আপনার ছেলে পরীকে নিয়ে ফস্টিনষ্টি করবে সেটা আপনাদের বাড়ীর অনেকে দেখেও চুপ থাকলে আমি থাকব না। নিজের ছেলের চরিত্র আগে ঠিক করুন তার পর আমাকে বলুন বলেই অনিতাকে যাইচ্ছা তাই বলে কথা শুনায় নিতু।



– স্যার আপনার নাতির দোষও কম দেখছি না। একটা মেয়ের সাথে বিয়ে হবে তাকে রেখে অন্য জনের সাথে অবৈধ সম্পর্ক করবে সেটা কোন মেয়েই সহ্য করবেনা। আপনাদের সমস্যা আপনারা মিটিয়ে নেন।




– আসলাম এসে শুভ্রকে বলল আরে পাগল এত্ত ঘামছিস কেন…..! একটু ডিপ কেটে গেছে। কিছু হবেনা। জলদি ওর সেন্স ফিরবে চিন্তা করিস না।

” শুভ্র মাথা তুলছে না কারন ওর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।

– অনিল আসলাম কে বলল বাবা মেয়েটা সেরে যাবেতো! কোন ইফেক্ট পড়বেনা তো?


– না আঙ্কেল কিছু হবেনা। কয়েক জায়গায় আঘাত ছাড়া আর তেমন কিছু না। ও গুলো ধীরে ধীরে ভাল হয়ে যাবে। ওর সেন্স আসলে ওকে আজ রাতে কিংবা কাল সকালে নিয়ে যেতে পারবেন। কোন চিন্তা করবেন না ও ঠিক আছে আঙ্কেল।




– এমন সময় অনিলের কাছে কল আসল নিতাইয়ের।

– হ্যাঁ বাবা বলেন…..

– অনিল পরী কেমন আছে…….

– জ্বী বাবা ভাল আছে……. কিছুক্ষন পর হয়ত সেন্স ফিরবে।

– শুভ্রকে ফোনটা দে তো?

– শুভ্র চোখ মুছে বলল দাদু কিছু বলবেন?

– তুই এখনি বাসায় আয় বলে সব খুলে বলল নিতাই।

– শুভ্র কথাগুলো শুনে পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেল। জলদি বাসায় চলে আসল। পরীর কাছে ওর বাবাকে রেখে।





– শুভ্র এসে দেখল জল অনেক দুরে গড়িয়ে গেছে। নিতাই সেন বলে দিছে নিতুর যদি কোন দোষ না থাকে তাহলে আজই শুভ্রের সাথে নিতুর বিয়ে হবে তাও রেজিস্ট্রি করে। নিতাই সেন এক কথার মানুষ…..


– সব রেডী করে রেখেছে নিতুর বড় দাদা। শুধু শুভ্রের অপেক্ষায়।

– বাসায় একপ্রকার ঝগড়া চলে গেল ২ পক্ষের মধ্য। কারন শুভ্র কোন প্রমান দ্বাড় করাতে পারছেনা। যাই বলছেনা কেন….. সব নিতু বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে সব কিছু শেষ করে দিচ্ছে।


– শুভ্র আর কিছু না বলে ওর রুমে চলে গেল। নিতু তো মহা খুশি যাক ওর কষ্ট সার্থক তার পর পরীর এমন হাল করবে যেটা ও ভাবতেও পারবেনা।




– শুভ্র ওর আই প্যাডটা এনে সোজা এসআই এর হাতে দিয়ে বলল এবার দেখুন তো! এমন যদি আপনার সাথে হত তাহলে আপনি কি এই মেয়েকে বিয়ে করতেন? বলেই নিতুর উপলের সাথে বিশেষ মুহুত্বের কিছু ভিডিও দেখাল।


– আমি চাই নি ওর সম্মান যাক কিন্তু আজ ও এমন কাজ করেছে যে ওর মত মেয়ের কোন সম্মান পাওয়ার কোন যোগ্যতা নেই।


– এসআই সব দেখে বলল স্যরি ম্যাম আপনাকে আমাদের সাথে যেতে হবে বলেই ২ টা মহিলা পুলিশ নিতুকে টেনে হিচড়ে নিয়ে গেল বাসা থেকে।

– আপনি কি এমন দেখলেন যে আমার মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছেন।( নিতুর বাবা)


– পুলিশের তো যা মুখ…… সবার সামনে বলল আপনার মেয়ের বেশ্যাগিরির পর্নোগ্রাফী দেখলাম তাই কোন ছেলেই আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাইবে না। আপনার মেয়ের কলিসির ফুটা রেখে অন্যর কলসি ফুটো করতে চাবে আর সেটা মি. শুভ্র বসে বসে দেখবে? একদম কোর্টে দেখা হবে…… বাই।





– শুভ্র নিতুর বাবা কাছে গিয়ে বলল আমার সম্মান নিয়ে এতক্ষন খেলতে ব্যাস্ত ছিলেন। আপনার মেয়ে আমার মাকে যাইচ্ছা তাই বলল আপনি একবারও নিষেধ করেন নি। আপনি কেমন শিক্ষা দিয়েছেন মেয়েকে যে আমার মায়ের শিক্ষার প্রশ্ন তোলে!



– এবার কৌশিক বলে উঠল আপনার মেয়ে পাগল হয়ে গেছে ওকে একটা ভাল সাইক্রেটিক ডাক্তার দেখান। না হয় পাবনাতে দিয়ে পাঠান…… সেটাও না পারলে বলুন আমি নিজে আপনাদের সাহায্য করব ছিটের ব্যবস্হা করতে।




– নিতুর বাবা- মায়ের মুখ দিয়ে কোন কথা বের হল না। শুধু লাষ্টবার বলে গেল। স্যার আমার মেয়ের জিবন নষ্ট হয়ে যাবে….. আমরা বাহিরে মুখ দেখাইতে পারবনা। দয়া করে এমনটা করবেননা ওর সাথে বলেই চলে গেল।




– রাত ১০ টার পর অনিল পরীকে নিয়ে বাসায় এল। মেয়েটার চোখমুখ একদম শুকিয়ে গেছে।
– অনিতা সবার সামনে শুভ্রকে থ্রেড দিয়ে বলল তোকে যেন পরীর আসপাশ না দেখি। তোর জন্য একের পর এক ওর জিবনে বিপদ আসতেই ছে।
তুই সব নষ্টের মূল।

– আমি করুন ভাবে শুভ্রর দিকে তাকালাম। ওকে ছাড়া আমি কেমনে থাকব।





– শুভ্র লজ্জায় চুপ করে আছে মাথা নিচু করে।
– আমি রুমে এসে বসে পড়লাম। সব শেষ করে দিল নিতুটা।



– সবার কড়া চোখের নজরে শুভ্রর সাথে কথা বলা তো দুরে থাক দেখা অবদি সম্ভব হয়না। জাষ্ট খাবার টেবিলে দেখা হয়। কিন্তু কেউ কারো দিকে তাকায় না।
তবে রাতে ভিডিও কলে কথা হয় ২ জনের মধ্য প্রচুর। এতেই অনেক আমার জন্য।



– একদিন শুভ্র বাসায় ফেরে নি তখনও। বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। আমি অনেকবার কল দিছি কিন্তু রিসিভ করেনি। এদিকে ৯ টা বেজে গেছে তাও ফিরছেনা। টেনশন বেড়েই চলছে আমার।


– মাও খুব টেনশন করছে বার বার কল দিচ্ছে কিন্তু কল ধরছেনা শুভ্র।

– প্রায় রাত ১১ টার দিকে কাক ভেজা হয়ে বাসায় ফিরল শুভ্র। আমি শুধু ওকে দেখে রুমের ভিতর ঢুকলাম।




– শুভ্র এত্ত দেরী হল কেন? আর ভিজে গেছিস তো…..!

– মা গাড়ীটি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। দেড় ঘন্টা হেটে ম্যাকারকে গাড়ির কাছে পাঠিয়ে দিয়ে বাসায় ফিরছি বলেই হাঁচি ফেলতে শুরু করল।



– আর গাড়ি?

– অমিত দা নিয়ে আসবে।( ডাইভার)

– ওকে তুই চেঞ্জ কর আমি খাবার গরম করে আনছি।

– খাবনা মা…… আমার শরীর খুব খারাপ লাগছে……মনে হয় জ্বর আসবে।

– আচ্ছা আমি আসছি তুই চেঞ্জ কর বলেই অনিতা চলে গেল।

– শুভ্র কোন মতে চেঞ্জ করেই কম্বল মুড়ী দিয়ে সুয়ে পড়ল। নাকমুখ মনে হয় বন্ধ হয়ে আসছে ঠান্ডায়।




– আমি শুভ্রকে কল দিব কি দিবনা সেটাই ভাবছি এমন সময় অর্পিতাকে দেখে বললাম অর্পিতা একটু শোন!


– কিছু বলবে পরী দিদি! দাদার খুব গায়ে জ্বর এসেছে তাই মা দাদার কাছে যেতে বলল।

– খুব জ্বর এসেছে শুভ্রর? মেডিসিন নেয়নি!

– এসেই দাদা সুয়ে পড়েছে দিদি…….. বলে অর্পিতা চলে গেল।

– কথা গুলো সুনে আমার অস্থিরতা বেড়েই গেল। রুমের ভিতর পায়াচারী করতে লাগলাম। যদি একটু শুভ্রর কাছে যাইতে পারতাম।




– অর্পিতা শুভ্রের কাছে বসে আছে এমন সময় অনিতা এসে বলল কাল না তোর পরীক্ষা যা জেগে থাকতে হবে না আমি আছি।


– অর্পিতা চলে যেতেই অনিতা শুভ্রের গায়ে হাত দিল। জ্বরে ছেলেটার গা পুড়ে যাচ্ছে। শুভ্র….. শুভ্র একটু কথা বল…..
“”
– শুভ্র নাক টেনে শুধু হুম বলে।

– কিছু খেয়ে মেডিসিন নে……..

– ও শুধু মাথা নাড়িয়ে না করল।

– অনিতা এসে জলপট্টি দিতে লাগল। বার বার ওর কপাল মুছে দিচ্ছে ঠান্ডা পানি দিয়ে।




– আমি নামাযে দাড়িয়ে গেলাম। আল্লাহ্ ওর সাথে দেখা করার একটা ব্যবস্থা করে দাও দয়া করে।
– অনিতা এবার জোর করে শুভ্রকে জাষ্ট একটু সুপ খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে দিল।



– রাত ১ টা বেজে গেছে তাও ছেলেটার জ্বর কমার কথা নেই। বেশ দুশ্চিন্তায় আছে অনিতা।

– মা!

– শুভ্রর ডাকে অনিতার ধ্যান ফিরল।
– কিছু বলবি বাবা?

– একটু পরীকে ডেকে দিবে?

– শুভ্রের মুখের পরীর নাম শুনেই অনিতা একটু রেগে বলল ওকে কি দরকার?

– ডাকো না মা?

– পরী এত্ত রাত অবদি জেগে নেই….. ও হয়ত ঘুমাচ্ছে বলেই আবার শুভ্রের গায়ে হাত দিল। নাহ্ জ্বর কমার কথাই নাই দেখছি। আর একটা মেডিসিন দিব নাকি মনে করতেই শুভ্র আবার বলল মা পরী ঘুমাইনি এখনও।


– শুভ্র এত্ত রাত অবদি ও কেন জেগে থাকবে জ্বরে ভুলভাল বকছিস…….

– না মা ও ঘুমাইনি…. তুমি যাও ওকে একটু ডেকে দাও প্লিজ।

– অনিতা বাধ্য হয়ে পরীর রুমে এসে দেখে স্যতি ও ঘুমাইনি। রুমে লাইট জ্বলছে। দরজা খুলে ভিতরে গিয়ে দেখে মেয়েটা কেবল নামায পরে জায়নামায গুছিয়ে রাখছে।

– পরী তুমি ঘুমাওনি?

– অনিতার কথা শুনে পরী পিছন ফিরে বলল না আন্টি আমিতো তাহাজ্জুদ পড়ছিলাম…… কিছু বলবেন?

– না মানে যদি কিছু না মনে কর একটা কথা বলতাম।

– বলেন আন্টি কোন সমস্যা নেই।




– তুমি কি মনে করবা সেটাই ভাবছি……. আসলে শুভ্রর তো খুব জ্বর এসেছে ও একটু তোমাকে ডাকছে। বেশিক্ষণ থাকতে হবেনা কয়েক মিনিট ওর সাথে কথা বলেই চলে এসো মা। শুধু শুধু তোমার ঘুমের ডিসর্টাব করলাম।


– মার কথাগুলো শুনে মনে হচ্ছে এক দৌড়ে শুভ্রের কাছে যাই। কিন্তু নিজেকে কন্টোল করে বললাম ওকে আমি যাচ্ছি।

– অনিতা ওখান থেকে ঠাকুর ঘরে চলে গেল কিছু আনতে।




– আমি শুভ্রর রুমে গিয়ে মনে মনে বললাম আল্লাহ্ তোমাকে লাখ লাখ শুকরিয়া আমি ওর কাছে আসতে পেরেছি।

– আমি শুভ্রর পাশে বসে ওর কপালে হাত দিতেই ও বলল এত দেরী করলা কেন পরী?

– আমি শুভ্রর কপালে একটা কিস করে বললাম ভুল হয়ে গেছে সোনা…. আর এমন হবেনা।


– এবার শুভ্র চোখ খুলে দেখল পরী কাঁদছে। পরীর কান্নাটাও শুভ্র কাছে বেশ ভাল লাগে।

– পরী আমার বুকে একটু হাত দাও তো?

– আমি ওর বুকে হাত দিলাম। প্রচন্ড গা গরম ওর। আমি আবার হাত উঠাতেই শুভ্র আমার হাত চেপে ধরে বলল রাখনা একটু…. তুমি এত্ত কিপ্টা কেন আদর করতে……..!


– কই আমি কিপ্টামো করলাম………. বল আমায় কি কি করতে হবে!


– শুভ্র আমার হাত নিয়ে ওর পুরো শরীরে বুলাতে লাগল। শেষে যখন আমার হাত ওর নাভির কাছে নিয়ে যায় তখন আমি চট করে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে পড়লাম। কারন কিছুক্ষন পর মা আসবে। তাছাড়া শুভ্রের মতিগতি ভাল ঠেকছেনা।




– আমি উঠে বেলকুনিতে গেলাম। খুব বৃষ্টি হচ্ছে। এই টাইম টাই প্রচুর বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির মৌসুম তাই অঝোরে বৃষ্টি পড়েই চলছে। আমি খানিক পর রুমে এসে বেলকোনির থাই লাগাতেই শুভ্র পিছন দিক থেকে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে।




– আমি ওকে বললাম শুভ্র মা আসবেতো ছেড়ে দাও। ও বলল আসুক।
– শুভ্র তুমি ঘোড়ের মধ্য আছো তাই বুঝতে পারছোনা মা যদি একটু কিছু আন্দাজ করে তাহলে কিন্তু আমাদের পস্তাতে হবে!



– শুভ্র আমার ঘাড়ের কাছে এসে বলল প্লিজ সোনা বলেই কানের পিঠে একটা কিস করল এবং আস্তে করে কানের লতিতে কামড় দেয়। আমার পুরো শরীরে যেন বিদ্যুত চমকালো।

– ও আমাকে ছেড়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।


– আমি ওর কাজ গুলো দেখে জাষ্ট অবাক এই না ওর জ্বর এসেছে তার মধ্য ঠিকছে ফিলিংস দেখাচ্ছে। কিন্তু আমাকে ওর কথায় সায় দিলে চলবে না…. কারন মা যদি এসে দেখে দরজা বন্ধ তাহলে আর রক্ষা নেই।



– শুভ্র পরীকে একটানে বুকে নিয়ে বলল কি সব সময় ওড়না পরে থাকো আমার সামনে….. খুলে রাখতে পারোনা বলেই ওড়না টান মেরে ফ্লোরে ফেলে দিল। আমি তো এর ব্যাবহারে অবাক। শুভ্র…..! তুমি কিন্তু নষ্ট খারাপ হয়ে গেছ ….. ছাড় আমায়……..




– অনিতা শুভ্রর রুমে এসে দেখে দরজা বন্ধ……
দরজা বন্ধ কেন বলেই কেবল নক করবে এমন সময় পরীর আওয়াজ পায়….. শুভ্র ছাড়ো আমায়। শব্দটি শুনে অনিতার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরে। তার মানে পরী ভিতরে। ভগবান কেন আমি বদজ্জাত টার কথা শুনে মেয়েটাকে ওর রুমে পাঠাইলাম। এই যদি মেয়েটার কোন ক্ষতি করে ফেলে তাহলে নিজেকে কখনও ক্ষমা করতে পারবনা। কিন্তু অনিতার আর দরজায় ডাকার সাহস পায় না। লজ্জায় নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।




– শুভ্র পাগলের মত কিস♥♥♥♥ করে চলছে….. থামার কোন নাম নেই।।।।।

– আমি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম…. শুভ্রর শরীর প্রচন্ড গরম……নিঃস্বাস ভারি হয়ে আসছে আমার…….


– শুভ্র… শুভ্র দেখ যা করছো ভেবে করছোনা এত্ত নষ্ট হলে কবে থেকে হুম?

– আমি নষ্ট খারাপ সেটা শুধু তোমার জন্য, গালি দাও মারো যা খুশি তাই কর কিন্তু আজ তোমাকে আর ছাড়ছি না বলেই খাটে আমাকে ফেলে দিল।


– শু……..ভ্র আর বাকিটা কথা শেষ করতে দিলনা পুরোটাই আমি তার দখলে…… সে এখন কিছু শুনতে চায়না এমনকি কোন বাহনা অবদি না। আমিও আর কতক্ষণ এভাবে থাকব আমিও ওকে কিস♥করতে লাগলাম। ২টি রূদয় আজ তাদের পবিত্র ভালবাসা সম্পূর্ন রূপে পরিপূর্নতা পেল।




– ভোরের দিকে আমার ঘুম ভাঙ্গল। শুভ্র আমাকে জড়িয়ে ধরে সুয়ে আছে। আমি আস্তে আস্তে উঠে শুভ্রর গায়ে হাত দিয়ে দেখলাম ওর গায়ে ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়িয়ে গেছে। ওকে ডাক দিয়ে উঠিয়ে বললাম আমি চলে যাচ্ছি……..

– শুভ্র আমার হাত ধরে বলল কই যাচ্ছো?

– আমার রুমে যাচ্ছি………

– শুভ্র আমার আরও কাছে এসে বলল আর একটু থাকনা…. আমার খুব ভাল লাগবে……।

– কি আর করা ওর কাছে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই ও একটু পর আবার ঘুমিয়ে পরে। আজ সাপ্তাহিক ছুটি তাই ভাল করে ঘুমাক আমি এই ফাকে বের হয়ে এলাম জলদি……..হয়ত মা আসবে। জানিনা আজ কি কপালে আছে বলেই চলে আসলাম।
চলবে——

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here