অস্তিত্বের খোঁজে পর্বঃ২৪

0
2238

অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ২৪



– শুভ্র দরজা লক করে দিয়ে রুমে লাইট জ্বালিয়ে পরীর কাছে এসে বসল। পরী গভীর ঘুমে মগ্ন। শুভ্র এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিল যাতে পরী ঠান্ডায় আরো ওকে জড়িয়ে ধরে। অদ্ভুত অদ্ভুত বুদ্ধি সব শুভ্রর।



– শুভ্র পরীর পাশে আধাশোয়া হয়ে বসল। অনেকক্ষন পরীর দিকে তাকিয়ে থেকে ওর গলায় হাত বুলিয়ে দিল। গলায় এখনও স্পষ্ট দাগগুলো বোঝায় যাচ্ছে। আর চোখের পানির দাগ শুকিয়ে গেছে……। দেখে বোঝায় যাচ্ছে পরী অনেকক্ষন কান্না করেছে।

“পরীর একটা গুন আছে শুভ্র ওকে যেভাবেই আঘাত করুক না কেন সেটা ও মুখ বুঝে সহ্য করে যেটা শুভ্রের কাছে খুব ভাল লাগে। শুভ্র পরীর কপালে একটা কিস♥♥♥♥ করে বুকের ভিতর টেনে নিল। শুভ্রর ২ চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল,,,,, পরীকে ছাড়া ও কেমনে থাকবে। পুরো রাত পরীকে ওভাবেই নিয়ে থাকল ঘুম আর আসলনা শুভ্রর।



– ভোর বেলায় শুভ্র পরী কে ডাক দিতেই পরী আরো জাপটে ধরল শুভ্রকে।

– পরী,,,,,,,,! ওঠো….. ভোর হয়ে গেছে নামায পড়বা না?

– উমমম্ বলে চোখ খুলতেই দেখি শুভ্রের পেটের উপর পা তুলে দিয়ে ওকে জাপটে ধরে সুয়ে ছিলাম এতক্ষন।

– আল্লাহ্ কি করেছি আমি,,,,, বলেই চট করে পা নামিয়ে উঠে বসি।

– শুভ্র পরীর কান্ড দেখে মিটমিট করে হাঁসছে। এভাবে প্রায় বাঁকিটা রাত আমার পেটে পা দিয়েই সুয়ে ছিলা পরী!


– শুভ্রর কথা শুনে খুব লজ্জা পেয়ে যাই আমি। আমি চোখ ২ টা বড় বড় করে বললাম তুমি কখন আসছো শুভ্র আর আমাকে ডাকোনি কেন?


– তোমার ঘুম নষ্ট করতে চাইনি তাই,,,,,, বলেই শুভ্র উঠে ওয়াশরুমে গেল।

– আমার খুব ঠান্ডা লাগছিল তাই এসিটা অফ করে দিয়ে উঠে পড়লাম।


– শুভ্র আর আমি ২ জনেই ফজরের সালাত আদায় করলাম একসাথে।




– শুভ্র সালাত আদায় করে খাটে বসে আমাকে ডাক দিল।
পরী এখানে আসতো?



– আমি গিয়ে ওর পাশে বসতেই ও আমাকে একটানে ওর কাছে নিল এবং আমাকে নিয়ে সুয়ে পড়ল আর আমার বুকে মাথা রেখে বলল আমি এখন ঘুমাব। পুরো রাত জেগে তোমাকে পাহারা দিছি। এই জন্য তোমাকে ঘুম থেকে জাগাইনি। এখন আমি ঘুমাবো বাঁকিটা তুমি সামলাবে।



– কেন বাসায় কি ডাকাত এসেছিল তাই তুমি আমাকে পাহারা দিয়েছিলে?



– শুভ্র চট করে আমার গলায় ২ ঠোট দিয়ে একটু চাপা দিয়ে বলল,,,,,, পরী! কোন কথা না আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। আর বিরক্ত করনা তো।


– শুভ্র সকাল হয়ে গেছেতো মা যদি তোমার রুমে গিয়ে দেখে তুমি নেই তাহলে?



– তাহলে কিছুই না,,,,আমার রুমে ভিতর থেকে চাবি পুশ করে দিছি,,,, তাই বাহির থেকে ডুকতে পারবেনা। আর এত্ত কথা কেন বল তুমি!
তুমি কি চাও আমি চলে যাই। প্লিজ ঘুমাতে দাওতো। মুখ একদম বন্ধ করে রাখবা।




– আমি আর কোন কথা না বলে চুপ করে রইলাম। ইশ্ কবে এরকম করে শুভ্র কে নিয়ে সুয়ে থাকব পারমেন্টলি ভাবে সেটা “”””””আল্লাহ্”””””””” ভাল জানে বলেই শুভ্রর চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। শুভ্র ততক্ষনে গভীর ঘুমের ভিতর তলিয়ে গেছে। মনটা চাচ্ছে শক্ত করে বুকের ভিতর জড়িয়ে ধরে রাখি।


– সকাল ৯ টার দিকে সব নাস্তা রেডী করে কাজের লোক পলাকে বলল দিদি সব রেডী করেছি। আপনি সবাইকে ডাক দেন।




– অনিতা শুভ্রের রুমে এসে কয়েকবার নক করল কিন্তু শুভ্রর কোন সাড়াশব্দ নেই। শুভ্র হয়ত ঘুমাচ্ছে বলে অনিতা নিচে আসল।
সবাই আছে কিন্তু পরী নেই দেখে পলাকে বলল,,,,,,, পলা! পরীকে ডেকে নিয়ে আয়তো। এখনও কেন আসল না মেয়েটা।



– পলা উপরে এসে পরীকে দরজায় নক করেই পরী বলে ডাকতে লাগল।



– পলা আন্টির ডাক শুনে আমি ঘাবড়ে গেলাম একটু। এখন কি করি। শুভ্রতো ঘুমাচ্ছে। ডাকতে একদম নিষেধ করছে। আমি শুভ্রকে আস্তে করে সরিয়ে দিয়ে নিশব্দে এসে দরজা খুলে বললাম,,,,,,, আন্টি শুভ্র আমার রুমে ঘুমাচ্ছে,,,,, একটু সবাই মানেজ করেন না।
শুভ্র ঘুমাইছে কিছুক্ষন আগে ওর ঘুমের প্রয়োজন তাই ওকে ডাকতে পারছিনা। আপনি যদি ব্যাপারটা দেখতেন,,, আপনি ছাড়া তো আমার কেউ নেই যে তাকে বলব।



– পরীর ছলছল চোখে করুন ভাবে তাকানো দেখে পলা আর কিছু না বলে নিচে চলে আসল। আসলেই মেয়েটার আপন বলতে কেউ নেই। আমাকেই বিস্বাস করে। এতদিন পর একটু সুখ পাইছে সেটা আমি কেমনে নষ্ট করি কথা গুলো পলা মনে মনে ভাবতেই অনিতার ডাকে ওর ধ্যান ভাঙ্গল।



– কি রে পলা! পরী আসল না?

– একটু পর আসছে বউদি,,,,,তোমরা খেয়ে নাও।

– পলার কথার ভাবসাব ভাল ঠেকছেনা তাই অনিতা নিজে পরীকে ডাকতে গেল। পলাতো ভয়ে শেষ।

– পরী দরজা খোল তো,,,,,,, বলে অনিতা দরজায় নক করল।

– মার ডাক শুনে আমি শেষ। এখন কি করি আমি। এসে যদি শুভ্রকে দেখে তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে। যা খুশি তাই হোক,,,,,দেখলে আমার জন্যই ভাল তাহলে শুভ্রর সাথে অন্তত যেতে পারবো তো বলেই ওড়না গায়ে দিয়ে দরজা খুললাম।


– অনিতা পরীর দিকে তাকিয়ে বলল তুমি খেতে গেলেনা কেন? আর রুম অন্ধকার কেন?

– আন্টি এখনই নিচে যেতে বের হচ্ছি এই সময় আপনি এলেন বলেই বের হলাম রুম থেকে।
“””আল্লাহ””” যা আমার জন্য ভাল হয় তাই কর বলে জলদি নিচে নেমে আসলাম।



– অনিতা আর রুমে না ঢুকে মনে মনে বলল শুভ্র রুমে থাকলে পরী কখনও দরজা খুলতো না আর দরজা খোলা রেখে নিচে যেত না। তাই অনিতাও নিচে নেমে আসল পরীর পিছে পিছে।



– আমি এসে চেয়ারে বসে পলা আন্টিকে ইশারা করতেই উনি উপরে গিয়ে আমার রুমে দরজা লক করে নিচে নেমে আসল। হাফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি।



– আমি নাস্তা কমপ্লিট করে নিচেই থাকলাম। রুমে আর গেলাম না। কারন মা যা চালাক ধরে ফেলতে ২ সেকেন্ড লাগবেনা। তাই ওনার পিছ পিছ ঘুরছি।



– দুপুর ১২ টার দিকে শুভ্রর ঘুম ভেঙ্গে গেল। ও উঠে দেখে পরী নেই তাই জলদি রুম থেকে বের হয়ে ওর রুমের কাছে এসে চাবি পুস করে দরজা খুলে ফ্রেস হতে চলে গেল। (কি লুকোচুরি প্রেম জাষ্ট ওয়াও)




– আমি আর শুভ্রের কাছে যাওয়ার সুযোগ পেলাম না একবারও। মা ওর পাশে পাশেই আছে সাথে নিদ্রা আপু, অর্পিতা, দিদুন সবাই। আমি শুধু দুরে দাড়িয়ে থেকে হাংলার মত দেখছি সবাইকে। কাছে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি শুভ্র। তাই দুরে থেকেই দেখতে হচ্ছে শুভ্রকে।




– দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে শুভ্র যাওয়ার জন্য রেডী হয়ে নিচে গেল। সবাই ওকে বাহির অবদি এগিয়ে দিয়ে আসে কিন্তু আমি ওকে দেখতে অবদি পারিনি। কারন শুভ্রের নিষেধ ছিল রুম থেকে একদম বের হওয়া।



– শুভ্র গাড়িতে উঠলে অনিতা এসে শুভ্রর কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল নিজের খেয়াল রাখিস। এটা করবি না ওটা করবি না বলে অনেক কথা বলল অনিতা।


– মা আমি কি ছোট আছি! তাই এত্ত কড়া নির্দেশ দিচ্ছো?


– নিজের যখন সন্তান হবে বুঝবি,,,,,,, সন্তান কাছে না থাকার কি জ্বালা।


– শুভ্র একটা মুচকি হাসি দিয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ডাইভার কে বলল দাদা চলুন।


– শুভ্রর গাড়িটা চোখের আড়াল হতেই অনিতার চোখ ভারী হয়ে গেল। চোখের পানি মুছে বাসার ভিতর আসলো। পুরো বাসাটা খাঁ খাঁ করছে।



– পরী দিদি কি করছো?(অর্পিতা)


– বসে আছি,,,,, ভিতরে আসো অর্পিতা।


– অর্পিতা পরীর হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে বলল দাদা সবার জন্য এনেছে। তোমাকে এটা দিতে বলছে,,,,, তুমি কিন্তু এটা পড়বা কেমন। আর শোন আমার দাদা কিন্তু একটুও খারাপ না তুমি যতটা মনে কর।


– অর্পিতার কথা শুনে বুকের ভিতর মনে হয় দুমরে মুচরে যাচ্ছে।



– এমন সময় শুভ্র আমাকে কল দিল। সামনে অর্পিতা দেখে কেটে দিয়ে মাসেজ করলাম,,,,, অর্পিতা আছে সামনে।


– কল কেটে দিলে কেন! কার কল ছিল দিদি?


– আর বলনা কাষ্টমার কেয়ার থেকে কল আসছে তাই কেটে দিলাম। তুমি কি জানি বলছিলা সেটা বল।


– জানো দিদি দাদা যখন দেশের বাহিরে স্কলারশিপ নিয়ে যায় তখন আমি ক্লাস ফাইভ এ পড়তাম। যাওয়ার দিন দাদার কোলে চড়ে খুব কেঁদেছিলাম। কিন্তু আজ বড় হয়েছি বলে সেটা পারলাম না।


– শুভ্রর কোলে কি এখনও চড়তে ইচ্ছা করে তোমার অর্পিতা?


– আরে চড়তে চাইলেই কি চড়া যায় বলেই অর্পিতা হেঁসে উঠল।



– কেন তোমার কৌশিক দার কোলে চড়নি কখনও!


– কৌশিকদা কে কখনও তেমন কাছে পাইনি তো আমরা। দেশের বাহিরেই বেশি কাটিয়েছে। তাই শুভ্রদার সাথে আমার বেশি মিল বলেই অর্পিতা আমার হাত ধরে বাহিরে টেনে নিয়ে গেল। একটু শুভ্রটার সাথে কথা বলব সেটাও হলো না।



– অর্পিতা আমাকে নিয়ে দিদুনের রুমে গেল। দাদু সুয়ে আছে আর দিদুন নিদ্রা আপুর সাথে গল্প করছে।


– আমাকে দেখে দিদুন আজ কিছু বলল না। আমি একটু সাহস পেয়ে বললাম,,,,,, বিমলা সুন্দরী কিটা কর?


– ঐ ছুড়ি ফাজলামি বাদ দিবি? না তোর ব্যবস্থা নিব।


– কি ব্যবস্থা নিবা সুন্দরী! তোমার বরের সাথে আমাকে বিয়ে দিবা বুঝি?


– দাদু তো আমার কথা শুনে হাহাহা করে হেঁসে উঠল। বাহ্ কি কপাল আমার এই বয়সেও সুন্দরী মেয়েরা আমার পিছে পরে আছে……


– পরী দিদি দাদুর সাথে তো আমি লাইন মারী এবং অনেক জিনিসপত্র আদায় করি তুমি এতে কেন ভাগ নিচ্ছো?(অর্পিতা)


– এটা প্রতিযোগিতা অর্পিতা! যে পাবে সে লুফে নিবে দাদুকে তাই না দাদু? ( নিদ্রা)


– ঠিক বলছো নিদ্রা,,,,,, বলেই নিতাই বিমলার দিকে তাকালো।


– বিমলাকে ইনসাল্ট! ঐ তোরা সবাই বের হ আমার রুম থেকে বলে চিল্লাচাটি করল কিছুক্ষন দিদুন।


– আহ্ বিমলা তুমি রেগে যাচ্ছো কেন,,,,, সবাই একটু আনন্দ করছে করতে দাও।( নিতাই)


– সবাই মিলে অনেকক্ষন আড্ডা,,,, হাসি,,,,,, তামসা সব করল।



– রাতে শুভ্র এসে পৌছায় ওর গন্তব্য স্থলে। ২ টা রুম, ছোট্ট ডাইনিং রুম,কিচেন, বেলকুনি, বাথরুম বেশ ছোটখাট একটা ফ্লাট। খুব একটা খারাপ না।

শুভ্র গোসল সেরে চেঞ্জ করে আগে ওর মাকে কল দেয়। মায়ের সাথে কথা বলতেই কলিং বেল বেজে ওঠে। কলটা কেটে দিয়ে লুকিং গ্লাসে দেখে কয়েকজন। ওর স্টাফ ছিল সেগুলো। দরজা খুলে দিয়ে তাদের সাথে বিভিন্ন কথায় মগ্ন হয়ে যায়। এদিকে পরী কল দিতেইছে। শুভ্র ফোনটা সাইলেন্ট করে আবার তাদের সাথে কথা বলে।



– অনেক রাত অবদি আলোচনা সেরে ওরা চলে যেতেই একজন খাবার নিয়ে এল।

– স্যার আপনার খাবার………

– ওকে রেখে যান।

– লোকটি খাবার রেখে চলে গেল।

– খাবার কমপ্লিট করে সব জিনিসপত্র গোছাইতে রাত ১ টা বেজে গেল।

– শুভ্র একটা সিগারেট ধরিয়ে বেলকুনিতে এসে দাড়াল। খুব সুন্দর বাতাস বইছে। শুভ্রর মনটা জুগিয়ে গেল ঝির ঝির বাতাসে।
শুভ্র সিগারেট টা শেষ করে এসে ফোনে হাত দিয়েই দেখে ১০০+ কল স্কীনে উঠে আছে।

শুভ্র পরীকে কল দেয় কিন্তু রিসিভ হয়না। কয়েক বার কল দিল তাও রিসিভ যখন হলনা তখন শুভ্রর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। পরীকে মাসেজ করল।।

” আমি ভাল করেই জানি তুমি ফোনের সামনে বসে আছো কল রিসিভ করো।”



– শুভ্র আবার কল দেয় কিন্তু এবারও রিসিভ হয়না। এবার শুভ্রর রাগ চরম পর্যায়ে উঠে গেল। আবার মেসেজ করল।


“””” কল ধরবি না সারা জিবনের জন্য কথা অফ করে দিব আজকেই””””।


– এবার কল ঢুকতেই রিসিভ হল। পরী প্রথমে সালাম দিল তার পর চুপ।

– শুভ্র সালাম নিয়ে বলল স্যরি কাজ ছিল। রুমে অনেকে ছিল তাই কল রিসিভ বা ব্যাক করতে পারিনি। তবুও কোন কথা নেই।



– পরী,,,,,,! বলেই একটা ধমক দিল শুভ্র। সমস্যা কি তোর। আমার কি সময়ের মূল্য নাই তোর পিছে পুরো রাত জেগে থাকব? নেট অন কর ভিডিও কল দিচ্ছি বলেই কল কেটে দিল শুভ্র।



– নেট অন করতেই কল আসল। পরী কল রিসিভ করে
চুপ করে বসে আছে।



– কি রে তোর মুখ দেখা যায়না কেন….. আমি কি রুম দেখার জন্য কল দিছি বলতেই পরী ওর মুখের দিকে ক্যামেরা আনতেই শুভ্র দেখল একটা শাড়ী পড়ে আছে, হাতে চুড়ি। অল্প সল্প সাজ আর চোখ দিয়ে অনরবত জল পড়ে যাচ্ছে বলে কাজলটা ঢেপসে গেছে। এটা দেখে শুভ্ররই খুব খারাপ লাগল।



– অহ্ “””আল্লাহ্””” আমার বউ এগুলো কি সাজ দিছে…… একদম বাজে দেখাচ্ছে। যাও ওগুলো তুলে ফ্রেস হয়ে আমার সামনে আসো। এগুলো সাজগোজ আমার একদম ভাল লাগেনা। আর চোখে কখনও কাজল দিবানা। এমনি তোমার চোখ সুন্দর ওটা দিলে তোমায় ভুত ভুত লাগে।
৫ মিনিট সময় দিচ্ছি একদম সিম্পল ভাবে আসো।



– ৫ মিনিটের অধিক সময়ের পর পরী ক্যামেরার সামনে দাড়াল।



– এই তো একদম পারফেক্ট। স্যরি সোনা বলেই কয়েকটা ফ্লাই কিস♥♥♥♥ করল শুভ্র।


– সাজ গোজ কেন করেছিলা পরী!
” জানো না সাজ গোজ আমার একদম পছন্দ নয়।



– পরী স্বাভাবিক ভাবে বলল বর বাহিরে থাকলে নাকি তার সামনে সেজে যেতে হয় তাই সাজছিলাম।



– কে বলছে তোমাকে! আমার কাছে তোমাকে ন্যাচারাল ভাবেই বেশ লাগে। আর তাছাড়া যে যাকে ভালবাসবে তার সামনে সাজের প্রয়োজন পরে না সে এমনিই তোমায় ভালবাসবে। আমি কি তোমার সামনে সব সময় কোট প্যান্টশার্ট পরে বসে থাকলে বুঝি তুমি আমায় বেশি ভালবাসবা?



– না না আমি ওগুলো নেটে পড়েছিলাম। তাই সাজুগুজু করেছিলাম। আর তোমার এই থ্রী কোয়াটার প্যান্ট এবং ট্রী শার্ট পড়ে থাকাটা আমাকে বড্ড তোমার কাছে টানে শুভ্র♥♥♥♥।



– ঔ নেটই সব শেষ করে দিছে অনেকটা সবাইকে। I love you pari♥♥♥♥



– I love you toooo my heart ♥♥♥♥

শুভ্র দেখতো আমার পিঠে কি যেন হইছে বলেই ব্লাউজ টা খুলে পরী পিঠটা দেখাল শুভ্রকে।



– শুভ্র ভাল করে দেখে বলল রাশ বের হইছে তো সোনা। কি খাইছো আজ!


– ইলিশ খাইছি আর বেগুন ভাজি।


– তুমি জানোনা তোমার ফুড আর্লাজি আছে। আর কি কোন মেনু ছিলনা খাবারের! সেগুলো খাইতে……


– আমার মনে ছিল না শুভ্র……


– ওকে ব্লাউজ টা পরে নাও আর ফোনটা নিয়ে লাইট অফ করে আমার রুমে যাও জলদি। আর আমার রুমের চাবিটা নিও।


– আমি সব কমপ্লিট করে লাইট অফ করে দরজা খুলতেই শুভ্র বলল আস্তে শব্দ কর।



– আমি নিশব্দে রুম থেকে বের হয়ে দরজা বন্ধ করে শুভ্রর রুমে গিয়ে দরজা লাগাতেই একটু শব্দ হয়।



– পরী! কি করছো শব্দ করতে নিষেধ করলাম না?


– আমি জ্বীভে কামড় দিয়ে স্যরি বলে লাইট জ্বালালাম।



– এবার চিৎকার কর যা খুশি তাই কর শব্দ বাহিরে যাবেনা। সাউন্ড প্রুভ করা রুম। তাই কোন শব্দ বাহিরে যাবেনা।
ওখানে চাবি আছে ওটা নিয়ে আলমারিটা খোল।



– আমি ওর কথামত আলমারি খুলে একটা ল্যাপটপ, গিফট্ পেপারে মোড়ানো একটা বক্স আর কিছু সপিং ব্যাগ বের করলাম। এবং শুভ্র একটা মেডিসিন বক্স দেখিয়ে দিয়ে ওখান থেকে একটা মেডিসিন এর নাম বলল এবং সেটা খাইতে বলল।


– আমি খেয়ে ল্যাপটপ সেটিং করে ল্যাপটপ দিয়ে কথা বলতে লাগলাম।



– বড় স্কীনে পরী কে পুরটাই দেখে শুভ্রর বেশ ভাল লাগছে। পরী বক্সটা খোল তো…. কিছু একটা আছে। আমাকে একটা মেয়ে গিফট্ করছে বলেই শুভ্র হেঁসে উঠল।


– কিহ্ মেয়ে! বলেই জলদি আমি বক্সটা খুলে দেখি ঝালের জিলাপী….. এগুলো আমার♥! বলেই শুভ্রর দিকে তাকালাম।



– নাহ্ ওগুলো তো আমার বউ এর জন্য…. পাক্কা ৩ ঘন্টা ধরে পরিশ্রম করে পাইছি ওগুলো। বউয়ের পছন্দ বলে কথা।



– ধুর আমিই তো তোমার বউ বলেই খেতে লাগলাম। কারন এই জিনিসটা আমার খুব প্রিয়।



– পরী! এমন শব্দ করে খাচ্ছো যেন মনে হচ্ছে কারো হাড় চিবিয়ে খাচ্ছো।



– আমি খাওয়া অফ করে দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম হিংসে হচ্ছে শুভ্র?


– নাহ্ ,,,,,, কিন্তু কিছুতো একটা হচ্ছে।

– পরী,,,,,, তুমি খাও আমি একটু আসতেছি।

– ওকে বলে খেতে লাগলাম।

– শুভ্র কিছুক্ষন পর এসে দেখে পরী বসে আছে।
তোমার খাওয়া শেষ?

– হুম….. শুভ্র আমাকে কিস করবা একটু!

– করলাম তো কিছুক্ষন আগে বাবা……..

– নাহ্ বলে শাড়ীটা সরিয়ে বলল এখানে কর,,,,,,,,

– শুভ্র ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল ওর কান্ড দেখে। এই সেইদিন এত্ত শাস্তি দিলাম তাও তোমার সখ মিটেনি? অন্য কেউ হলে ভয়েই আমার কাছে আসত না আর কিস করাতো দুরেই থাক।।।।

– নাহ্ মেটেনি,,,,,,,,, নাও শুরু করে দাও শুভ্র।

– নাহ্,,,,,, তোমার এত্ত বেহাপানা কেন?

– কই,,,,,,, আমি কি আর কিছু চাইছি নাকি?

– কিছু চাইলেও আর পাবানা পরী।

– গাল ফুলিয়ে বসে থাকলাম কিছুক্ষন তার পর একটা বালিশ নিয়ে সুয়ে পড়লাম। আর শুভ্র আমার দিকে তাকিয়েই আছে। থাকুক না,,, আমার কি তাতে বলেই চোখ বন্ধ করলাম এবং একটু পর ঘুমিয়ে পড়লাম।



– শুভ্র পুরো রাত জেগে পরীকে দেখার একটা নেশা হয়ে গেছে। শাড়ীটা অনেকটা হাটুর কাছে চলে আসছে। মনে হয় একটা দেবী সুয়ে আছে। অপূর্ব লাগছে ঘুমন্ত পরীকে। শুভ্র উঠে গিয়ে কিছু কাগজপত্র নিয়ে এসে কাজ করছিল আর মাঝে মাঝে
পরীকে দেখছে।




– ঘন্টা ২য়েক না যেতেই পরী কেমন যেন করতে থাকে মনে হয় ভয়ঙ্কর কিছু স্বপ্ন দেখছে। লাফ দিয়ে ধরপড় করে উঠে বসে ঘামতে লাগল।


– পরী,,,, এই পরী কি হয়েছে আমি আছিতো। আমার দিকে তাকাও। কি হইছে সোনা,,,,, খারাপ স্বপ্ন দেখছো?

– কে কার কথা শোনে মেয়েটা ঘেমেই চলছে আর কেঁপে উঠছে।


– পরী! বলে একটা জোরে ধমক দেয় শুভ্র। এতেই ও শুভ্রর দিকে তাকায়।

– শুভ্র হাত দিয়ে ইশারা করে বলে বাজে স্বপ্ন দেখছো?



– হুম বলে অনেকক্ষন চুপ করে থেকে তারপর বলল,,,,, কয়েকটা লম্বা লম্বা সাপ আমাকে ধাড়ানি বলেই জ্বিভে কামড় দিয়ে বলল স্যরি দৌড়ানি দিছে আমাকে। কিং কোবরা, ব্লাক মামবা সাথে বিশ্রী একরকম বেঁটে মানুষ ও ছিল। ওরা আমাকে ধরতে আসতেই জেগে গেলাম।



– ভাল করছে। আর একটু সাপে দৌড়ানি দিতে পারলনা তোমাকে,,,,! তাহলে উচিত শিক্ষা হত। ভুতের মুভি দেখবা না! দেখ ভালো করে দেখ। চিন্তা করনা আমি আরও ভয়ঙ্কর কিছু পাঠিয়ে দিব নি। বসে বসে দেখ আর রাতে স্বপ্নে চিল্লে চিল্লে ওঠ। আহ্ কি সুন্দর ভয়ঙ্কর দৃশ্য। বডি গার্ড আছেতো একটা শুভ্র নামের। পুরো রাত পাহারা দিবে তাইনা!



– শুভ্রর কথা শুনে লাইন কেটে দিলাম। শুধু খোচা মারা আমাকে। এবার কাকে মারবি মার!
চলবে——

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here