অস্তিত্বের খোঁজে পর্বঃ৪০

0
2401

অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ৪০



– অনিল অত্যন্ত লজ্জা পেয়ে যায়। এভাবে ২ জনকে দেখে। জলদি অনিল ওর রুমের দিকে ফিরে যায়।


– বাবা এত্ত জলদি ফিরে আসলেন! শুভ্রকে কিছু বলেছেল? ( নিদ্রা)


– নিদ্রা! পরীকে একবার জিঙ্গাসা করতো মা,,,,,, শুভ্রর শাস্তি হোক ও চায় কিনা?
যদি চায় তাহলে আমি শুভ্রকে কিছু বলতে পারব। আর যদি সেই না চায় তাহলে আমি কি করতে পারি বল!


– এই পরীর কাছ থেকে আমার অনেক কিছু শিখার বাঁকি আছে বাবা!
আপনি ঠিকি বলছেন পরীর উপর সব ডিপেন্ড করছে বলেই নিদ্রা রুম থেকে চলে যায়।


– পরী নিখুত ভাবে শুভ্রর উপর নিজের প্রভাব ফোলাচ্ছে। এবার শুভ্রর বেশ বিরক্ত লাগছে। কারন বাবার জন্য পরী এসব করছে।


– পরী! বাবা চলে গেছে অনেক আগে তাই দয়া করে আমাকে ছেড়ে দিবা? আমার কিছু কাজ আছে সেগুলো কমপ্লিট করতে হবে।


– শুভ্রর কথা শুনতেই আমার বেশ লজ্জা লেগে গেল। যাহ্ শুভ্র বুঝে ফেলেছে। এর সাথে আমি কোন দিকে পারিই না। সবসময় আমার উপরে থাকবে। এত্ত বুদ্ধি নিয়ে ঘুমাও কেমনে শুভ্র!

– কখনও বালিশ কখনও পরী নামক বউয়ের বুকে মাথা রেখে ঘুমাই। ইটস্ সিম্পল……… দয়া করিয়া আমাকে ছেড়ে দিবেন ম্যাম! কারন শুভ্রের এখন একদম সময় নাই এই রুমান্টিক কার্য কর্ম করার।

– কিন্তু শুভ্রকে ছাড়তে একদমই মন চাচ্ছিল না আমার। উফ্ আমি তো ওর সাথে অনেক রাগ করেছি তাই ওকে ছেড়ে দিয়ে বললাম দেখুন! আমার এত্ত সখ নাই আপনার সাথে রঙ্গতামাশা করার। কাজের জন্য জাড়িয়ে ধরছি হুম!

আমি আমার মেয়েকে নিয়ে বাহিরে বাবার কাছে গেলাম। কারন আমিতো বাবাকে দেখিনি শুভ্র দেখেছে আমার কিসের লজ্জা! তাই নো লজ্জা,,,,,,,,,


– এবার অনিল পরীকে দেখে লজ্জা পেয়ে কোন কথা না বলে চুপ করে বসে রইল।


– বাবা! আপনি কখন আসলেন?


– এইতো ঘন্টা খানেক আগে আসছি ,,,,,, কিছু বলবা?

– না মানে ফোনে লুডু খেলতাম আপনাকে নিয়ে। আমি খুব ভাল লুডু খেলতে পারি বাবা!
আপনি আমার সাথে কখনও পারবেন না।

– আত্ববিশ্বাস থাকা ভাল পরী! কিন্তু অতিরিক্ত আত্ববিশ্বাস থাকা মোটেও উচিত না।

– ওকে দাড়ান আমি আরও ২ জন কে ডেকে আনছি। জোড়ায় জোড়ায় খেলব কিন্তু। আমি যদি হারি তাহলে আপনাকে আপনার প্রিয় খাবার বানিয়ে খাওয়াবো আর যদি জিতি তাহলে আমাকে আপনার প্রিয় কোন স্থান ঘুরে দেখাইতে হবে কিন্তু!
রাজি আছেন?


– সবইতো আমার প্রিয় হয়ে গেল পরী! হারলেও প্রিয় জিতলেও প্রিয়। তোমার তো এতে কোন লাভ নেই।


– আছে বাবা আছে। পরীর মত চিন্তা করে দেখুন। এতে আমার কি ফায়দা আছে বলেই পরী নিদ্রার রুমের দিকে পা বাড়াল।

– পরী নিদ্রার রুমে গিয়ে ওদের ডাকল কিন্তু নিদ্রা বলল আমি খেলব না তার থেকে তোমার দাদা কে নিয়ে যাও ও ভাল খেলে।

– ওকে,,,,,,,,না খেল। দাদা! বাবার রুমে যানতো আমি আসছি বলেই পরী শুভ্রের কাছে গিয়ে জান্নাতকে ওর কোলে দিয়ে বলল আমি বাবার সাথে এখন লুডু খেলব। দয়া করিয়া আপনার কন্যারে সামলান। আমি পারতাম না ওরে সামলাইতে।


– শুভ্র পরীর কথা শুনে রেগে গেল। পরী আমি কাজ করছিতো!


– জানিনা আপনি কি করছেন। নিজের মেয়েকে নিজেই সামলায়তে হয় জনাব বলে পরী চলে আসলো মুচকি হেঁসে।
লে কেমন লাগে। তোমার কন্যাকে দিয়েই তোমারে শায়েস্তা করব মি. শুভ্র!

– শুভ্র জান্নাতকে নিয়ে সব কাজ বন্ধ করে ওকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে গেল। কথা বলছে আর বিভিন্ন কোরআনের আয়াত শিখানোর চেষ্টা করছে। আর জান্নাত অস্পষ্ট ভাবে বাবার সাথে মুখ মিলিয়ে বলে যাচ্ছে।

শুভ্র চেষ্টা করে অনেক কিছু শিখাইতে। বেশিভাগ সময় ইংলিশেই কথা বলে জান্নাতের সাথে। যাতে ইংলিশে পাকা হয় ছোটবেলা থেকে।



– শুরু হয়ে গেল খেলা। অনিল আর অর্পিতা,,,,,,,,, আর এদিকে কৌশিক আর পরী। নিদ্রা শুধু বসে এদের খেলা দেখছে। খেলা জমে গেছে। কেউ কাউকে কোন ছাড় দিচ্ছে না। শেষে অর্পিতা আর অনিল মিলে পরীর ৪ টা কড়িই কেটে দিল। পরীর সব কড়ি ঘরে। ছক্কাও উঠছেনা।


– পরীর মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছেনা। মনে হয় কখন যেন কান্না করে দিবে। এটা দেখে অনিল হেঁসে বলল,,,,,,,, পরী! কচু শাক দিয়ে ইলিশের মাথা রেঁধে ফেল কেমন?


– এবার পরী কেঁদেই ফেলল। আপনি কচু শাক খাওয়ার লোভে তাই বলে আমার ৪ খানা কড়িই কেটে দিলেন?
আমি এখন এই চার চারটা রাজপুত্র নিয়ে কিটা করি!


– অনিল সহ সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল পরীর কথায়। এটা কি মেয়ে রে,,,,,যে লুডুর ৪ টা কড়িকে রাজপুত্র বলছে!


– এই পরী চিন্তা করছো কেন তোমার দাদা আছেতো বলেই কৌশিক খেলা চালিয়ে গেল। এবার কৌশিক অত্যান্ত কৌশলে চাল দিতে থাকল। কিন্তু পরীর যখন পোয়া উঠল আবার বলে উঠল আমার দুখিনী পড়ছে।


– পরীর কড়ি সম্পর্কে এমন অদ্ভুদ নাম শুনে নিদ্রা জোড়ে হেঁসে উঠল। এই পরী! তুমি বড়ই অদ্ভুদ।

– শেষে পরীরা হেরে গেল। ওরা বাবা মেয়ে জিতে গেল।

– কৌশিক পরীর অবস্থা দেখে বলল এত্ত সিরিয়াস ভাবে কেন নিচ্ছো! পরের বার আমরা জিতব।


– অনিতা এসে সবাইকে রাতের খাবারের জন্য ডেকে গেল। সবাই উঠে ডাইনিং রুমে চলে গেল।


– অনিতা শুভ্রের রুমে গিয়ে দেখল শুভ্র সুয়ে আছে আর জান্নাত ওর বাবাকে গালে পিঠে চুমা খাচ্ছে আর বা,,,,,বা বলে অস্পষ্ট ভাষায় অনেক কথা বলছে। শুভ্র ও কথার জবাব দিচ্ছে আর হেঁসে যাচ্ছে।


– অনিতা পাশে এসে বলল,,,,,,, জান্নাত কিন্তু তুই বলতেই পাগল। পরীকেও চায়না তুই থাকলে। আচ্ছা শুভ্র! পরী কি আর পড়াশুনা করবেনা?


– মা! বউদির সাথে একদিন বাহিরে গিয়ে ওর ভিতর কতটা চেঞ্জ আসছে সেটা আমি বেশ বুঝতে পারছি। আর ওর মাথায় যে কুবুদ্ধি আমায় আস্ত রাখবেনা। ও এতেই বেশ। ওর পরিবর্তন আমার জন্য অত্যন্ত কষ্ট দায়ক।

যেভাবে আছে সেভাবেই থাকতে দাও। আর ওতো একটা পড়া চোর। একবার পড়া থেকে মাফ পাইছেনা! আর একবার বইলো যদি ও পড়তে চায় তখন আমাকে বলতে এসো। মাঝে প্রায় ২ বছর গাপ গেছে উন্মুক ছাড়া ওকে আর কোথাও ভর্তি করা যাবেনা।


– আচ্ছা চল নিচে। খাবার দিচ্ছি বলেই জান্নাতকে নিয়ে অনিতা চলে যায়।


– হুমহ্ তুমিতো আর তোমার বউমারে চিনো না মা!আমার সাথে লাগতে বলো ওকে কোমড় বেঁধে লাগবে আর পড়ার কথা বললে চুপসে যাবে। এ সেই রকমই মেয়ে। ওর মত মেয়ে দুনিয়াতে এক পিসই আছে। কারন শুভ্রকে জ্বালানোর জন্য এই একটা মেয়েই পয়দা হয়েছে দুনিয়াতে।




– সবাই খেতে বসেছে। অনিতা! কাল পরী আমার জন্য স্পেশাল রান্না করবে। ওকে কিন্তু হেল্প করবানা। ও চালেঞ্জ করছিল। হেরে গেছে তাই ওকেই করতে হবে বলে অনিল পরীর দিকে তাকাল।


– পরী কিছু না বলে শুধু হাঁসল। পরী একটা কথা চিন্তা করে দেখল এই কয়েক দিনে শুভ্রর অঝাল তরকারি গুলোতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে ও। সিলেট থাকতে শুভ্র চ্যালেঞ্জ করেছিল এটা ওকে নাকি রেগুলার খেতে হবে। মনে হয় সব কথাই ফলে গেছে। সেটা ইচ্ছা হোক কিংবা অনিচ্ছাকৃত হোক। ফলেছে তো!


– শুভ্র এসে কারো সাথে কোন কথা না বলে খেয়ে উঠে চলে গেল। শুভ্র ছাদে এসে সিগারেট ধরাল।

রুমে আর খেতে পারেনা জান্নাতের জন্য। অনেকক্ষন ছাদে কাটিয়ে দিল। তারপর নিচে এসে দেখে জান্নাত ঘুমিয়ে গেছে সাথে পরীও। কিন্তু জান্নাকে দোলনায় কেন সুয়ে রাখছে পরী!


– সোফায় জান্নাতের সব জিনিস। তারমানে শুভ্রকে আজ বেডে শুতে হবে!
পরী! তোমার চ্যাল আমি বুঝিনা ভাবছো?
আমিও বা কম কিসের। শুভ্র ফ্লোরেই জায়গা করে সুয়ে পড়ল।


– শুভ্র নিচে শুইলো! আড়াই বছরের বেশি সময় হবে শুভ্র আমার কাছে এক বিছানায় পুরো রাত শোয় না। সময়টাই সেরকম ছিলনা হয়ত। কিন্তু এখন!
এখনতো শুতে পারতো আমার কাছে? চোখে পানি চিকচিক করছে পরীর।


– আমি সোজা গিয়ে শুভ্রের গা থেকে কম্বল কেড়ে নিয়ে বললাম উপরে শোবে আসো।

– বিরক্ত করো না তো! আমার খুব ঘুম পাইছে পরী…….


– কিসের ঘুম বলেই শুভ্রের হাত ধরে টানতে লাগলাম। কিন্তু একটুও নড়াইতে পারলাম না। ক্লান্ত হয়ে অবশেষে বললাম,,,,,,,,শুভ্র ভাল হবেনা কিন্তু তুমি উঠবা?


– বললাম তো না। এক কথা কত বার বলতে হয়। আমি ঘুমাবো বলেই শুভ্র আমার হাত থেকে কম্বলটা কেড়ে নিয়ে সুয়ে পড়ল।


– অহ্ আমাকে আর তোমার ভাল লাগেনা তাইনা? নতুন কাউকে পেয়ে গেছ নিশ্চয় ! আমার থেকে রুচি উঠে গেছে তো! তাই আমাকে আর ভাল লাগে ? আমিও বুঝতে চাইনা ছ্যাছড়ার মত বার বার তোমার কাছে যাই।


– পরী! একদম বাজে কথা বলবেনা আমার ভাল লাগছেনা। যাও ঘুমিয়ে পড় অনেক রাত হয়ে গেছে।

– ঘুমের নিকুচি করছি আমি বলেই রুম থেকে বের হয়ে আসলাম আর বাহির থেকে দরজা আটকে দিয়ে ছাদে এসে কান্না করতে লাগলাম।


– শুভ্র তো জলদি উঠে দরজা খুলতে গিয়ে আর খুলতে পারেনা। ♥আল্লাহ্♥ একটু বদমাইশি করতে গিয়ে এ কি করে ফেললাম। ওর মাথার যে স্ক্রু ঢিলা কি করতে যে কি করে ♥আল্লাহ্♥ ভাল জানে।

কাকে ডাকব এই সময় সবাইতো ঘুমিয়ে পড়ছে। আর লজ্জারও বিষয়। বউ এত্তরাতে বাহির থেকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে চলে গেছে।
শুভ্রর অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।



– এক ঘন্টার বেশি সময়ের পর আমি আবার রুমে ঢুকলাম । এসে দেখি শুভ্র বেডে সুয়ে আছে। অবাক হলাম না। ও এই রকমই বলে সুয়ে পড়লাম।


– কেবল ঘুম আসছে আর এমন সময় কারো স্পর্শে ঘুম ভেঙ্গে গেল।


– বাহিরে কেন গিয়েছিলি তাও দরজা বন্ধ করে দিয়ে! শুভ্র প্রচন্ড রাগী চোখে পরীর ২ হাত চেপে ধরে কথা গুলো বলল।


– উমমমহ্ ছাড়ো বলছি। সুখে গিয়েছিলাম ছাদে। তোমাকে শায়েস্তা করতে হবে না!


– আবার তুই এই রাতে ছাদে গেছিস! তোকে ছাদে যাইতে নিষেধ করছিলাম না?


– তুমি কেডা! যে তোমার কথা শুনতে হইবো?

– এই ভাষা ঠিক কর বলছি। তাছাড়া এখানেই তোকে খুন করব। কতবার নিষেধ করছি শুদ্ধ ভাষায় কথা বলবি।

– কর খুন আমি কি নিষেধ করছি বলে পরী নিজের হাত শুভ্রের কাছ থেকে ছুটিয়ে পাশ ফিরে সুয়ে পড়ল।

– পরী! পড়ালেখা করবা নতুন করে?

– পরী পিছন দিক ফিরে বলল,,,,,, একদম না অনেক কষ্ট ছুট পাইছি পড়াশুনা থেকে আর পড়তে পারবনা। আমার ভাল্লাগেনা পড়ালেখা করতে। শুভ্র নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেই আমার বেশি ভাল লাগে।

– যদি কখনও আমি বদলে যাই তখন কি করবা পরী? নিজেরতো একটা লাইফ আছে তোমার….

– মা ও তো ইন্টার পাশ বাবা কি তাকে ছেড়ে গেছে নাকি? তাছাড়া দিদুনকেও তো দাদু ছেড়ে যায়নি তাহলে তুমি কেমনে ছেড়ে যাবা শুভ্র!
আমার লাইফ তুমি। তোমাকে ছাড়া আমি শূন্য।


– শুভ্রর চোখে পানি এসে গেল। আমার অত্যাধিক শিক্ষিত বউয়ের দরকার নাই পরী! আমি তোমাকে এভাবে দেখেই পছন্দ করছি তাই এভাবেই চাই। আর জান্নাত! ওকে আমরা হাফেজী লাইনে পড়াব। কি ঠিকতো?


– শুভ্র কেবল পরীর গায়ে হাত দিছে ওমনি পরী হাত ঝিটকানি দিয়ে ফেলে দিয়ে বলল বেডে যায়গা দিচ্ছি তাই বলে শরীরে না। তোমার সাথে আমার ঝগড়া চলছে সেটা কিন্তু ভুলে যাবেনা একদম।


– আচ্ছা দিলাম না,,,,,,,, তুমিই এমনি আসবা আমার কাছে। তখন কিন্তু আমি ইচ্ছা মত তোমাকে ব্যবহার করব । এখন আসলানা তো! পরে টের পাইবা।

– কক্ষনও না। আমিতো যাবইনা।

– ওকে ডিয়ার সেটা একটু পরেই দেখা যাবে।
১০ মিনিট সময়ও লাগবে না আমার কাছে তোমাকে নিয়ে আসতে বলেই শুভ্র উঠে গেঞ্জিটা খুলে ফেলে ।


– পরী এবার উঠে বসল। এই লোভ দেখাও কেন। পোষাক পড় বলছি। নো চিটিং।


– ওকে বলতেই একটা কল আসল শুভ্রর ফোনে। এত্ত রাতে কল তাও ভিডিও কল। ও মাই গড তন্নী!
এটা কেমন করে সম্ভব মিরাক্কেল ভাবে সঠিক সময়ে কলটা আসল?

বেশ! বউকে কাছে নিয়ে আসার সোর্স পাইছি।
কল রিসিভ করে বলল,,,,,, হাই তন্নী তুমি এত্ত রাতে কল দিছ!


– শুভ্র! আমি সিরিয়াস তুমি নাকি বিয়ে করেছো? তোমার মেয়েও নাকি আছে?


– শুভ্র কলটা চট করে কেটে দেয়। ফোনটা বন্ধ করে দিয়ে লাইট অফ করে সুয়ে পরে। নিজের কাজের জন্য কারো মন নিয়ে খেলা শুভ্রের একদম পছন্দ না। কারন তন্নী শুভ্রকে খুব ভালবাসত।


– তন্নীর কথা শুনে পরী তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। ওর সাথে কথা বলছিল শুভ্র! খুব খারাপ,,,,,,,

ঐ তুমি জানা স্বত্বেও কেন ওর ফোন রিসিভ করছো?

————————–?

– উমমমহ্ শুভ্র! কথা বলছনা কেন?

—————————?

– পরী এবার বেড থেকে নেমে শুভ্রর দিকে এসে দেখল ও চোখ বন্ধ করে আছে। সেটা দেখে আরও রেগে গেল।

– শুভ্র! আমি কিছু বলছি আর তুমি চুপ করে আছো?

– শুভ্র চোখ খুলে হাত ইশারা করে বলল আমি এখন ঘুমাব তাই নো ডিসর্টাব।

– আমার ঘুম ছুটিয়ে দিয়ে ঘুমানো হচ্ছে! ঘুমানো বের করছি দারাও বলে শুভ্রের বুকে কয়েকটা কিল দিয়ে বললাম ” বউ কাছে থাকতে অন্য মেয়ের সাথে কথা বলা?”


– শুভ্র এবার পরীকে এক টানে বুকের ভিতর নিয়ে ঘড়িতে চেয়ে বলল ৬ মিনিট সময় লাগছে পরী আমার কাছে তোমাকে আনতে। এবার কি হবে?


– পরী শুভ্রের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বসে পড়ল।

কি হবে মানে! রোমান্স হবে………… সেটা আর বলতে আছে নাকি বলেই পরী শুভ্রর ২ চোখের উপর ২টা কিস করল।
তুমি ভাল করেই জানো শুভ্র! তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবনা আমি তবুও কেন কষ্ট দাও আমাকে? তোমার উপর শুধু আমার হক আছে। আর কারো না বলেই ফিকরে কান্না করতে লাগল পরী।


– এই চুপ! কই কষ্ট দিলাম। তোমার সাথ কি আমি কখনও ছাড়ছি! তোমার পিছে পিছেই আসি তোমার কাছে একটু ভালবাসা পেতে এবং দিতে।

– উমম ধমক দেও কেন! একদম আমাকে ভাল বাসো না তুমি……
মিথ্যা বলে কেন ভুলাচ্ছো আমায়!


– শুভ্র আবার পরীকে বুকে টেনে নেয়।

♥আল্লাহ্♥ র কসম খেয়ে বলছি যতবার দুরে যাবি তত বারই তোকে এভাবেই নিজের কাছে আষ্ঠেপৃষ্ঠে টেনে নিয়ে আসবো। বার বার আমার বানিয়েই ছাড়ব। কারন শুভ্রের পরী নামক এই দেবীটাকে শুভ্র খুব ভালবাসে। এক মুহুত্বও ছাড়তে রাজি না আমি। পরীর উপর শুধু শুভ্রের রাজত্ব বলেই শুভ্র পরীর বুকে মুখ ডুবাল ।


– উমমহ্ শুভ্র ছাড়ো! আমি জানি তুমি কাল সব ভুলে যাবে। আবার আমাকে কষ্ট দিবা।


– পরী! কষ্ট ছাড়া ভালবাসা জমেনা। I Love You My Devi বলেই শুভ্র পুরো পুরি পরীর নেশায় মগ্ন হয়ে গেল। একের পর এক কিস♥♥♥♥ করেই যাচ্ছে শুভ্র। আজ মনে হয় পাগল করে ছাড়বে পরীকে শুভ্র।


– I Love You too my………….আর বলার সুযোগ দিলনা শুভ্র তার আগেই পরীর ঠোট ওর দখলে। এখন আর কোন কথা শুনবে না শুভ্র পুরোপুরি পরীকে চায় সে। পরিপূর্ন দুটি হৃদয় ভালবাসায় আবার সিক্ত হয়ে গেল।



– পরদিন শুভ্র অফিসে কাজ করছিল। এমন সময় অনিল ওকে কল দিয়ে ওর অফিসে শুভ্রকে যেতে বলল। শুভ্র বুঝল পরীর ব্যাপারে বাবা ওকে কিছু বলবে হয়ত। তাই শুভ্র আর দেরি না করে ওর বাবার অফিসে চলে আসল।


– শুভ্র প্রায় ৪৫ মিনিট বসে আছে তবুও বাবার দেখা নাই। শুভ্র চুপ করে ওয়েট করছে ওর বাবার জন্য। আরও ১৫ মিনিট পর শুভ্রকে নিয়ে অনিল অফিস থেকে বের হল। শুভ্র জানেনা ওর বাবা ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।


– ২ ঘন্টার পথ পেরিয়ে নিজে ড্রাইভ করে শহর থেকে একদম বাহিরে চলে আসল অনিল। এর ভিতর শুভ্র একটা কথাও বলেনি। শুধু চারপাশ দেখছিল। এই প্রথম ওর বাবা ওকে সময় দিচ্ছে। কখনও বাবাকে কাছে পায়নি শুভ্র।
শুভ্রকে সবসময় এড়িয়েই চলেছে ওর বাবা। প্রাকৃতিক পরিবেশটা শুভ্রের খুব ভাল লাগছে।


– আরও খানিকটা সময় পরে ওরা একটা বাংলোতে আসল। দারোয়ান গেট খুলে দিতেই ভিতরে ঢুকল গাড়ি। গাড়ী থেকে ২ জনেই নেমে একটা ছোট্ট দিঘীর কাছে এসে সিড়ির উপর শুভ্র কে নিয়ে বসে পড়ল অনিল।

– পরিবেশটা অপূর্ব। ঢাকার বাহিরে অনেকটা নির্জন জায়গায়। এত্ত সুন্দর একটা বাংলো জাষ্ট ওয়াও।

– শুভ্র! এটা আমার সব থেকে প্রিয় জায়গা। পরীকে নিয়ে আসার কথা ছিল কিন্তু ওর এখনও সময় হয়নি তাই তোকে নিয়ে আসলাম।

– বাবা! এটা কি আমাদের বাংলো?

– অনিল কোন কথার জবাব না দিয়ে বলল,,,,,,,, পরীর পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ নেই। তুই হয়ত জানিসনা যেদিন ওকে প্রথম সিঁদুর পড়িয়েছিলি সেদিন ওর উপর কতটা ঝড় ঝাপটা এসে আঘাত করেছিল। ও সুইসাইড অবদি করতে গিয়েছিল। হয়ত তোর সাথে ওর আবার মিল হবে বলে আজ ও এখানে।

– আসলেই শুভ্র জানতোনা পরী সুইসাইড করতে গিয়েছিল। শুভ্রর চোখে জল চলে আসল কিন্তু বাবার সামনে নিজেকে সর্বোচ্চ কঠোর ভাবেই উপস্থাপন করল।


– তখন অনেকটা সন্ধা হয়ে গেছে। অনিল অনিতাকে কল দিয়ে বলল,,,,,,,, শুভ্র একটা কাজে ওর কাছে আছে ফিরতে দেরি হবে। বাহিরে থেকেই খেয়ে যাবে। তারা যেন খেয়ে নেয়।


– তোর নিজের মায়ের কথা কি একটুও জানতে মন চায়না! সে কোথায় আছে কেমন আছে। কেন তোর কাছ থেকে দুরে? (অনিল)

– এমন সময় মাগরিবের আযান দেয়। বাবা আমি নামায পড়ব। চলো এখান থেকে।

– শুভ্রকে নিয়ে বাংলোর ভিতরে ঢুকল অনিল। শুভ্র ওযু করে নামায পড়ে নিল। অনিল ডাইনিং রুমে বসে শুভ্রর জন্য অপেক্ষা করছিল। শুভ্র সেখানে বসে বলল
বাবা! মা কষ্ট পাবে যদি এসব কথা জানে। তার থেকে এসব কথা না তোলায় ভাল।


– এবার অনিল শুভ্রর সামনে বসে ফুফিয়ে কেঁদে উঠল। শুভ্র আমি আর পারছিনা। অনেক বছর ধরে তোর জন্য কথা গুলো জমিয়ে রাখছি শুধু তোকে বলব বলে আর তুই শুনতে চাচ্ছিস না!



– তবুও শুভ্র কঠিন ভাবে চুপ করে থাকে। এমন সময় একটা মহিলা ৫০ বছর বয়স হবে এসে বলল দাদা সব রেডী করে রাখছি খাবার খাবেন আসেন।


– আচ্ছা তুমি যাও আমরা আসছি। শুভ্র একটু অবাক হল কারন এই মহিলাটাও কাঁদছিল। শুভ্র কিছুই বুঝতে পারছেনা কি হচ্ছে সব।


– অনিল শুভ্রকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে পড়ল। সব শুভ্রের পছন্দের খাবার। কিন্তু বাবা তো কোনদিন শুভ্রের কোন পছন্দই জানে না তাহলে এত্তসব জানলো কিভাবে। খাবার টেবিলের পাশে আরও ২ দম্পতী দাড়িয়ে ছিল। একই বয়স প্রায় তাদের। শুভ্র এবার বলল আপনারাও বসেন। আমরা সবাই একসাথে খাই।


– দাদা,,,,,,, আপনার ছেলেটা একদম দিদির মত হয়েছে। একই স্বভাব আমাদের ছাড়া কখনও খেতে বসেননি তার ছেলেও এমন কাজ করছে বলেই অপর মহিলা ডুকরে কেঁদে উঠল।

– শুভ্রর বুকের ভিতর কষ্ট হতে লাগল। তার মানে এখন ওর মায়ের বাসায় আছে শুভ্র। এবার শুভ্র উঠে বলল,,,,,,,,বাবা বাসায় যাবো। চল আমার খিদা নাই।

– শুভ্র! বলেই কঠিন গলায় অনিল ওর দিকে তাকিয়ে চোখ গরম করল।

– শুভ্র আবার বসে পড়ল। সকলের সাথে খাবার খেয়ে নিল চুপ করে।


– শুভ্রকে নিয়ে একটা রুমে গেল অনিল। এখানে আমি আর তোর মা বেশ সময় কাটিয়েছি। এখানেই তোর জন্মের সূচনা। এখানে যারা আছে তাদের নিয়ে তোর মা থাকত যখন আমি থাকতাম না কাছে। তাছাড়া তোর মা যখন বাংলাদেশে আসতো এখানেই থেকে গেছে।

– উনি এখন কই বাবা! তাকে দেখছি না যে।

– অনিলের কলিজা মোচড় দিয়ে উঠল শুভ্রের কথা শুনে। শুভ্রকে নিয়ে বেডরুমে গেল অনিল যেখানে মাধুরী আর ও থাকত।

– শুভ্র রুমের ভিতর ঢুকলে অনিল সব লাইট জ্বলায়। শুভ্র ওর বাবার সাথে যাকে দেখলো মনে হয় শুভ্রের পুরো দুনিয়া অন্ধকার হয়ে আসল। বাবা! কাজল আন্টি তোমার সাথে?

– ও কাজল না। সী ইজ মাই ওয়াইফ মাধুরী। তোকে মিথ্যা বলা হয়েছিল। অনেক কাহিনী বলতে চাচ্ছিনা এখন।

– শুভ্র ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ল এটা ওর মা! উনিতো দুনিয়াতেই নেয়। শুভ্র অনেকবার তার করুন কাহিনী কাজল আন্টির বাবা- মা সহ তার পরিবারের কাছ থেকে শুনেছে। কোন মানুষ যে এত্ত কষ্ট পেয়েছে একটা মানুষের জন্য আর সেটা তার বাবা এবং সে ছিল। তার সব ছিল কিন্তু ভালবাসার মানুষ ছিলনা।
এটা আমার মা!


– শুভ্র কতটা বছর তার বাসায় কাটিয়েছিস কিন্তু মাকে চিনতে পারিসনি। তোর তো অনেক মেধা! তবুও কেন বুঝতে পারিস নি। কেন তোকে অন্যর কাছে শুনতে হল তোর মাধুরী নামে একটা মা আছে! কেন আমাকে তোকে এখানে নিয়ে এসে তোর মাকে দেখাতে হল।


– বাবা! আমার একটা মা আছে। তার আরও ২ টা নিজের সন্তান আছে তার থেকে আমি তার কাছে প্রিয় সন্তান। তুমি কখনও আমায় সময় দাওনি। তুমিতো নিজের সন্তানকে ভালবাসছো কিন্তু আমার মা জানতো যে, আমি তার গর্ভে জন্মাইনি তবুও আমি তার পুরো দুনিয়া। তাই আমার মা সর্ম্পকে ২য় ধারনা আমার কখনও জন্মায়নি। আমার ভাল লাগছেনা বাসায় চলো। রাত হয়ে যাচ্ছে।


– খাবার গুলো কিন্তু তোর মায়ের প্রিয় ছিল। তাই শেষ যেদিন তোর মায়ের সাথে খেয়েছি সব মেনু আজ করা হয়েছে। সব ঠিক আছে কিন্তু তোর মায়ের জায়গায় তুই। অনিতা তোকে এত্ত চেষ্টা করেছে খাবার ব্যাপারে তার মত করতে কিন্তু সে সফল হতে পারেনি তুই মাধুরীর মতই খাবার খাস।


– বাবা বাসায় চল এই প্রথম কঠিন ভাবে বলল শুভ্র ওর বাবাকে এবং সাথে নিয়ে গেল। শুভ্র বাসার পথে গাড়ী নিয়ে রওনা দিল। এবার নিজেই ড্রাইভ করছে আর অনিল বার বার চোখ মুছে যাচ্ছে।

– শুভ্র তুই অনেক কঠিন মানুষ। শুধু কঠিন না অত্যাধিক নিষ্টুর ও। তোর মায়ের জন্য একটুও কষ্ট হচ্ছেনা!

– না,,,,,, বলেই রাত ১১ টার দিকে বাবাকে নিয়ে বাসায় ফিরল শুভ্র।

ডাইনিং রুমে এসে শুভ্র বলল,,,,,,,,বাবা! মা যদি কিছু টের পায় আমার থেকে খারাপ কিন্তু কেউ হবেনা। বাসা থেকে বের হয়ে চলে যাব। আর কখনও বাসায় আসবনা। এখন সব তোমার হাতে।


– শুভ্র রুমে এসে দেখে জান্নাত ঘুমিয়ে গেছে। আর পরী ব্যালকুনিতে দাড়িয়ে আছে। শুভ্র শার্টটা খুলে ওয়াসরুমে গিয়ে গোসল সেরে থ্রী কোয়াটার প্যান্ট আর ট্রী শার্ট পরে পরীর কাছে গেল।

অসংখ্য বার কল আর মাসেজ দিয়েছে পরী। শুভ্র ইচ্ছা করেই পরীর সাথে কন্টাক্ট আর করেনি পুরো দিনে।


– পরী! ডিনার করেছো?

– নাহ্,,,,, আর আমি না করলেই বা কি! আমারতো খোজ নেওয়ার কেউ নাই বলে নাক টানলো পরী। কারন ও নিশব্দে কান্না করছে।


– শুভ্র আর কিছু না বলে রুমে এসে লাইট অফ করে শুয়ে পড়ল।

– শুভ্রের ব্যবহারে পরী অত্যন্ত কষ্ট পেয়ে কেঁদে উঠল ফুফিয়ে।

চলবে——

বিদ্রঃ আজ অনেক কষ্ট করছি এই পর্ব সাজাতে। প্রায় পুরোটা দিনই ব্যয় করছি। কেমন হইছে জানাবেন সবাই। সব পাঠকের প্রতি ভালবাসা রইল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here