অস্তিত্বে_চাই_তোমার_ছোঁয়া সূচনা_পর্ব

১.

‘তুই আমার বউ হবি রাইট! আয় তোর বউ হওয়ার শখ মিটিয়ে দেই।’

কলেজ থেকে আংশিক দূরত্বে বটগাছের পাশে ইফদিয়ারকে বালির উপর ছুঁড়ে মারে ছেলেটি। তার থুতনী উচ্চ করে ধরে রাগান্বিত গলায় বলে,

‘তোর তেজ ইদানিং বেড়ে যাচ্ছে। সারাদিন পিছে পড়িস কেন রে? তোকে আমার ভালো লাগে না, অসহ্য লাগে বুঝিস না। নেক্সট টাইম সামনে পড়বি কসম পর্চা ডোবার পানিতে চুবাবো। মাই ফাস্ট এন্ড লাস্ট ওয়ার্নি টু ইউ।’

থুতনীর উপর থেকে হাত সরিয়ে নিল। কলেজের গেটে চোখ রেখে দ্রতবেগে নিঃশ্বাস ছাড়ছে। দম আঁটকে সজোরে ধাক্কা দিল রমণীকে। পুনরায় পড়ে বালির উপর। যার ফলপ্রসু হাতের কনুই এ আঁচড় কাটে। ছলছল চোখে সুদর্শন ছেলেটির মুখপানে চেয়ে আকুতিভরা কণ্ঠে বলে,

‘যাবিয়াজ ভাইয়া কেনো তুমি আমায় ভালোবাসো না? প্রতিবার বেহায়ার মত তোমার কাছে এই দিনটিতে চলে আসি। তাও তুমি আমায় তাড়িয়ে দাও!’

যাবিয়াজ নামক ছেলেটি নিজের দৃষ্টিকটু তীক্ষ্ম করে বাঁকা দাঁতে হেসে বলে,

‘ইউ নো হোয়াইট! ইউ সাজ এ ননসেন্স গার্ল। তোকে কখনো পছন্দ করে ছিলাম বলে বলতে পারবি।’

ইফদিয়ার টনক নড়ে উঠে। মনজুড়ে বলা কথাটি খুঁজার চেষ্টা করে। কিন্তু উত্তর শূন্য পাওয়া গেল। নজর নামিয়ে বালির দিকে দৃষ্টি রাখে। যাবিয়াজ নিজের ওষ্ঠের উপর দাঁত চেপে হাত মুঠো করে চেঁচিয়ে বলে,

‘গেট লস্ট ফর্ম হেয়ার। যদি থাকিস তাহলে ছেলেদের কোমর দেখিয়ে ঘুরিস।’

ইফদিয়ার বেহায়ার মত মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে থাকে যাবিয়াজ এর দিকে। কিন্তু ছেলেটি জাস্ট পাত্তাহীন ভাব নিয়ে নিজের পথে চলে গেল।
কলেজের ভেতরে ঢুকে পড়ে।
ইফদিয়ার ক্রোধান্বিত হয়ে উঠে দাঁড়ায়। হাতের কনুই ঝাড়তে ঝাড়তে এগিয়ে গেল। কিন্তু হাঁটার পথেও ঘটল আরেক বিপদ। শাড়ির কুচিজোড়া আলগা হয়ে যায়।
লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
পড়ে যায় ভীষণ লজ্জায়। বাঁ কাঁধে কলেজ ব্যাগ শক্তভাবে ঝুলিয়ে রেখে। ডান হাতে কুচিজোড়া চেপে হলরুমের দিকে হাঁটা শুরু করে।
হলরুমে এসে দরজা আঁটকে দিল। শাড়ির কুচিগুলো সেফটিপিন দিয়ে শুদ্ধভাবে বেঁধে নিল। আয়নার মধ্যে তার প্রতিবিম্বে অসহায়ত্ব ভাব ফুটে উঠেছে। এই অসহায়ত্বের মূল কারণটি হলো যাবিয়াজ মেশরাফ।

কিছুক্ষণ আগের কথা……

আজ স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে প্রকৌশলী কেন্দ্র হতে ভার্সিটির স্টুডেন্টস ভিজিটে এসেছে। অনুষ্ঠান উপলক্ষে মূলত তাদের আসা। যাবিয়াজ কলেজে যেতে চাই নি। কিন্তু সিনিয়র আর স্টুডেন্টস লিডার হওয়ায় ভদ্রতার কাতিরে গেল। ইফদিয়ার তার অপেক্ষায় গেটে দাঁড়িয়ে ছিল। যখন ভিজিটর্স এল আগমন শুরু হলো। নিজেকে আড়াল করে ফেলে সে। সবাই ভেতরে চলে যায়। পরন্তু যাবিয়াজ ফোন টিপে এক মনে হেঁটে আসছিল। এর সুযোগ লুটে নিল ইফদিয়ার। চট করে যাবিয়াজ এর গলা আঁকড়ে ধরে লাজুক কণ্ঠে বলে,

‘যায়াজ সোনা বউ বানাও না।’

যাবিয়াজ শুনে মুখ তুলে তাকায়। সেই বেহায়া মেয়েকে দেখে বজ্রপাতের ন্যায় রাগ ঝাড়ে।

যাবিয়াজ মেশরাফ হলো প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিভাগের ছাত্র। দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয়েছে কিছুদিন হলো। ২১ বছর বয়সী যুবক। ঈষৎ হলদেটে গড়নে আলতো সাদা রঙ মিশ্রিত, ঘন নীলাভ বর্ণের চোখের মণি, নাকের পাশে ছোট একটি ঘন কালো তিল স্থান পেয়েছে, স্পাইক করা চুল, তীক্ষ্ম ভ্রুযুগল দেখে বোঝা যায় রাগ নিয়ে থাকে সারাক্ষণ, বাঁকা হাসি ওষ্ঠজোড়ে বহমান। যার ফলে প্রিমোলার দাঁতের অংশভাগ দৃষ্টিনন্দন হয়। তার চালচলনে মেয়েদের অবস্থা কাহিল। কিন্তু তার স্বভাবে মেয়েরা বেশি কষ্ট পায়। যাবিয়াজ মেয়েদের ক্রাশ নামে এক প্রকার বাঁশ। সে বাঁশ দিতে পছন্দ করে। যদি মেয়েরা স্বেচ্ছায় কিছু করতে আসে। ব্যস মহাভারত অতিষ্ঠ করে ফেলবে। গম্ভীর, বদরাগী হওয়ায় মেয়েরা ভয়ে মিশে না। সে শুধু নিজের বন্ধুমহলের সঙ্গে হাসিতে মেঁতে থাকে।

ছেলেটির ভাবনায় ডুবে থাকায় বান্ধবীকে খেয়াল করে নি ইফদিয়ার। স্বয়ং তিয়ানা এসে জাপ্টে ধরে। তার জাপ্টে ধরার বদ অভ্যাসটা কখনো পরিবর্তন হবার নয়। এমনে জাপ্টে ধরায় ইফদিয়ার ভয়ে চিৎকার দিল। তিয়ানা ভ্রু কুঁচকে বিরক্তিসূচক কণ্ঠে বলে,

‘দোস্ত তোর ভাবা ছাড়া আর কোনো কাজ নাই। যখন তখন ভাবতে থাকিস কেন। কলেজের বার্ষিক জয়প্রতা অনুষ্ঠান শেষের পথে আর তুই এখানে হা করে ভাবতেই আছিস।’

ইফদিয়ার গাল ফুলিয়ে তিয়ানার হাত খিঁচে ধরে অভিমানী কণ্ঠে বলে,

‘আমি হা করে ভাবি তো তুই গু খাইয়া ভাবিস।’

‘ইয়ে লো আমি কি করলাম! এজন্য সবাই বলে, মানুষের ভালো করতে নেই, পরবর্তীতে খোঁটা নিজেকে খাইতে হয়।’

তিয়ানার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি ফেলায় সে বেচারী হকচক খেয়ে গেল। ইফদিয়ার হাত ধরে বাচ্চামো চেহারায় বলে,

‘সরি এবার চল মহারাণী না হলে আমাদের লাভার বাবু তোর লাভে অজ্ঞান হবে।’

‘ধ্যাঁত কিসের লাভার ঐ টাকলু বেটা আমার কিছু লাগে না যতসব।’

তিয়ানা হু হু করে হেসে ইফদিয়ার সঙ্গে অনুষ্ঠানে প্রবেশ করে। তারা মঞ্চের সামনে বসেছে। এখানে সবার বসার সিট বরাদ্দ করে রাখা হয়েছে। বিধায় তিয়ানা আর ইফদিয়ার সিট একে অপরের সঙ্গে পড়েছে।
তিয়ানা মজা নেওয়ার পাশাপাশি তাকিয়ে দেখে একটি ক্যাফ খুলা আছে। সেখানে খাবারের যাবতীয় জিনিস আয়োজন করে রাখা হয়েছে। ইফদিয়ার কে অপেক্ষা করতে বলে সেখানে গেল।

মঞ্চের খানিক সামনের দিকে দৃষ্টি দিল। তৎক্ষণাৎ চোখাচোখি হলো যাবিয়াজ এর সঙ্গে ইফদিয়ার। অসহায়ের মত লজ্জায় মাথা নত করে ফেলে। যা দেখে যাবিয়াজ বিরক্তিতে মনে ‘ব’ উচ্চারণ করে। মঞ্চে শুরু হয়েছে আঞ্চলিক নাটক।
দুজন স্বামী-বউ নাটকের সাজ নিয়ে বেশভূষায় প্রকাশ করছে আঞ্চলিকতা।
ইফদিয়ার বেশ বোরিং ফিল করছিল। তার উপর তিয়ানা কে না দেখে রাগে ভ্রু কুঁচকে এলো। বিরক্তির ন্যায় উঠে পড়ে।
বিড়বিড় করে তিয়ানাকে অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে বলে,

‘তিয়ুর ঘরে তিয়ানী যাবি তুই কিনতে, আসতে লাগাবি একবছর। একবার হাতে পায় এমন কেলানি দিবো। জীবনে কেনার তৃষ্ণা মিটিয়ে দেবো। বজ্জাত মহিলা।’

তিয়ানাকে ক্যাফে একটা ছেলের সঙ্গে ফটরফটর করতে দেখে রেগে গেল। তিয়ানা হেসে হেসে যখন পরখ করে ইফদিয়ার কে। তখন ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে ছেলেটাকে বলে,

‘আ…বাবু তুমি এখন যাও। রাতে কল দেবো। ঘূর্ণিঝড় আসতেছে।’

ছেলেটি বেক্কলের ন্যায় মুখ করে বলে,

‘ঘূর্ণিঝড় ভার্সিটির মধ্যে কেমনে আসবে?’

‘আরে ভাই ভাগ তো। নাহলে আমার সঙ্গে তুইও মরবি রে গাধা।’

ছেলেটি অবুঝের মত চেহারা করে চলে গেল। ইফদিয়ার হেসে বুকের উপর হাত গুঁজে সরু দৃষ্টি নিয়ে বলে,

‘তোর কি ফ্লাটিং করার শখ কখনো মিটবে না?’

‘দেখ দোস্ত এখন বয়সটাই ফ্লাটিং, সিটি বাজানোর, প্রেম করার। সেখানে তোর মত হ্যাবলা হলে আর জামাই বানানো লাগবে না।’

ইফদিয়ার দ্বিগুণ রেগে বলে,

‘তোর ফ্লাটিং এর চৌদ্দ গুষ্ঠি কিলাই। মানছি আমি ভদ্র মেয়ে। তাই বলে অপমান শুনাবি।’

‘শোকরিয়া আদায় কর আল্লাহর। যে শুধু শুনাচ্ছি দেখাচ্ছি না বলে মেহেরবাণী জানা বোন।’

‘তবে রে হারামজাদী।’

ইফদিয়ার তিয়ানাকে ক্যাফের বাহিরে গিয়ে ছুটাছুটি করতে থাকে। পাঁচতলার ছাদ থেকে খুব সূক্ষ্ম আবেগে চেয়ে আছে যাবিয়াজ। রমণীকে তার মনমাঝাড়ে দারুণ লাগে। কাছে আসতে লাগে বিরক্ত। এর বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তি কি হতে পারে কে জানে?
হয়ত কোনো পীড়ন দেওয়ালের মত চলে আসে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ছাদের দেওয়ালে হেলান দিল।

২.

স্ত্রীর উপর তেঁতো মনভাব নিয়ে চড় লাগিয়ে দিল জনাব আহসান। মিসেস জাবিয়া খাতুন চোখ নামিয়ে চোখের জল ছেড়ে দিলেন। কিন্তু ভাবান্তর হলো না আহসানের মুখমন্ডলে। বিরক্তির কণ্ঠে বলে উঠেন।

‘ইউ আর মাই ওয়াইফ। তোর উচিৎ ছিল মদের বোতলগুলো রেখে দেওয়া। তুই শা*লী কু*ত্তী মহিলা কি করলি? সোজা নালার পানিতে ফেলে দিলি। তোর হাতে বাধেঁ নাই ব্যাপারটা?’

আহসান বলে মিসেস জাবিয়ার চুল টেনে ঝাড়ি দিতে লাগেন। কিন্তু পরক্ষণে দরজার বাহির থেকে টমটম এর ‘পিপ পিপ’ শব্দে সেরে দিলেন।
সোজা সোফায় গিয়ে বসে পড়েন। পত্রিকার হাতে নিয়ে সাধু সেজে অভিনয় শুরু করলেন। মিসেস জাবিয়া তখনো ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন। এতে চোখ রাঙিয়ে তাকালেন আহসান। মিসেস জাবিয়া ভীতি মনে রান্নাঘরে চলে গেলেন। মেয়ে বাসায় প্রবেশ করার আগে মুখমন্ডল পরিষ্কার করে নিলেন।
রান্নাঘরে কাজের বুয়া হালিমা ওষ্ঠ চেপে নিজের মালকিনকে বলে,

‘জাবিয়া আফা হান্না থামান। মাইয়া দেহিলে বড় সাহেব আরো মারিবো।’

জাবিয়া চুপটি করে শুনে বলে,

‘মেয়ে আছে বলেই তো আমার অস্তিত্ব আছে। না হলে সেই কবে কাফন জড়িয়ে নিতাম।’

‘আফা এমন কইবেন না। দেখবেন একদিন সব ঠিক হইব।’

জাবিয়া উত্তরে তাচ্ছিল্যের হাসি দিল। এই ‘একদিন’ আসতে আসতে যদি মরণ হয়ে যায়। দরজা ঠেলে হাসিমুখে ভেতরে প্রবেশ করে তাদের মেয়ে। আহসান শয়তানি হেসে মেয়ের সামনে এসে দাঁড়ায়। ইফদিয়ার বাবাকে দেখে মুখটা কাঙ্কালের ন্যায় করে নিল। হাসিটা যেন উবে গেল।
‘বাবা’ নামক মানুষটাকে সে ঘৃণার চোখে দেখে। আহসান হাসি বজায় রেখে বলেন,

‘মা আমার টাকা এনেছিস?’

ইফদিয়ার ক্রোধ বেড়ে যায়। ব্যাগ থেকে এক হাজার টাকা বের করে হাতে ধরিয়ে রুমে চলে গেল। আহসান টাকা নিয়ে সোজা বেরিয়ে পড়েন। এখন মদ কিনে গিলার পরই বাসায় ফিরবেন। ইফদিয়ার কান্না চেপে মেঝের উপর বসে পড়ে।
তার জীবনটা স্বাভাবিক নয়। নরক লাগে এই বাসায়। টিনের ছাদের নিচে পরিবার হয়ে থাকলেও ভেতরে নিযার্তন ছাড়া কিছু পায় না।

আহসান বুহিয়ান আর জাবিয়া খাতুন এর মেয়ে ইফদিয়ার বুহিয়ান। এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী । বয়স ১৬ হয়েছে। দুধে আলতা গায়ের রঙ, ঘন কালো রঙের চোখের মণি, উষ্ণ রেশমি চুল, মুচকি হাসি দিলে প্রাণবন্ত রুপসী মনে হয়, ভ্রুযুগলে তৃপ্ততা ফুটে উঠে। মেয়ের চঞ্চলতায় প্রতিবেশীরা বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু প্রতিবার নাকচ করে দেয় ইফদিয়ার। সে চাই প্রতিষ্ঠিত হতে। স্বপ্ন একটাই একজন সফল ডাক্তার হওয়া। তার মাকে এই নরক থেকে বের করে সুন্দর বাড়ি আর জীবন করে দেওয়াই যেন মূল লক্ষ্য। এর পরিবর্তে তার মনের কোণায় সুপ্ত অনুভূতি সবসময় টান হয়ে উঠে। সেটি হলো জীবনসঙ্গী হিসেবে যাবিয়াজ কে পাওয়া। সে জানে না আদৌ পাওয়া সম্ভব কিনা। তবুও তার প্রার্থনার ইতি নেই।

ইফদিয়ার ব্যাগটা সরিয়ে কাবার্ড থেকে একটি বক্স বের করে। বক্সটি খুলে সেখানে রাখা লকেটটি হাতে নিল। বুকের মাঝে চেপে ধরে কান্নামিশ্রিত গলায় বলে,

‘আই লাভ ইউ যায়াজ। আই রিয়েলী লাভ ইউ। আপনাকে পেতে যদি সাগরে ডুব দিতে হয়। তাহলে সেটাও দেবো। একনিষ্ঠতায় তুমি প্রিয়।’

ইফদিয়ার লকেটটা সযত্নে রেখে দিল কাবার্ডে। আকাশী রঙের থ্রি-পিচ বের করে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। কিছুক্ষণ পরে তার টিউশনের স্যার আসবে।

দরজায় কটকট শব্দে ইফদিয়ার তোয়াল মাথায় পেঁচিয়ে কাপর ঠিক করে খুলে দিল। নিজের মাকে হরমড়িয়ে ঢুকতে দেখে খানিক চমকে উঠে। মায়ের গালে ফোলা ভাব দেখে বুঝতে বাকি রইল না যে ফোলা ভাবটা চড়ের কারণে। মাকে টেনে বসিয়ে ব্যথানাশক মলম বের করে। গালে যত্ন করে লাগিয়ে দিয়ে অনুরোধক কণ্ঠে বলে,

‘আম্মা কাল থেকে প্লিজ তুমি আব্বার মদের বোতল ফেলে দিও না। প্রতিবার ফেলে চড় খাওয়াটা কি খুব জরুরি। দেখো না ঐ নিষ্ঠুর আব্বা তোমাকে তব্দা বানিয়ে দেয়।’

মিসেস জাবিয়া ম্লান হেসে বলেন,

‘তোর আব্বারে ছাড় দিলে তো মৃত্যু ডেকে আনবে নিজের। তখন সংসারটা থেমে যাবে। তোর পড়াশুনা থেমে কাঙ্কাল হতে হবে।’

ইফদিয়ার কপাট রেগে কিছু বলে না। কারণ সত্য তার মায়ের কথাটা। কিন্তু তার অপছন্দ বিষয় হলো আহসানের মদ গিলাটা।
‘কুহ কুহ’ কাশির শব্দে চোখ গেল দরজায়। টিউশনী স্যার চলে এসেছেন। হাতে উচ্চতর গণিত আর ইংলিশ বই চেপে ধরেছেন। মিসেস জাবিয়াকে দেখে সৌজন্যমূলক কণ্ঠে সালাম দিলেন। মিসেস জাবিয়া পড়ার জন্যে বসতে বলে চলে গেলেন নাস্তার আয়োজন করতে। ইফদিয়ার সংকোচে মাথায় তাড়াতাড়ি ঘোমটা টেনে নিল। টিউশনী স্যারের হরবড়িয়ে রুমে প্রবেশ করাটা সে মুটেও সহ্য করে না। তবুও আহসান সাহেবের পূর্বপরিচিত হলেন জনাব নাহেম উল্লাহ স্যার। মানে তার টিউশন স্যার।
দাঁত কেলিয়ে হেসে তিনি ইফদিয়াকে বলেন,

‘আরে ইফু এমনে ঘোমটা টেনে নিজেকে ঢেকে রাখো কেনো? দেখতে একদম বুড়ি লাগে। এখন যেভাবে উড়না হালকাভাবে গায়ে পেঁচিয়ে ছিলে সেভাবে রাখবে। রাখলে ফকাফক সুন্দ্রী লাগে।’

স্যারের লাগামহীন কথাগুলি ইফদিয়ার মনে ভীতির সাথে ঘৃণা তৈরি করছে। উনার মুখের মধ্যে পারলে তো এস্টাপ্লার করে দিতো সে। মনের ইচ্ছা দমে রেখে পড়তে বসে।

চলবে…….

অস্তিত্বে_চাই_তোমার_ছোঁয়া সূচনা_পর্ব
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)

( আসসালামুয়ালাইকুম নতুন গল্প নিয়ে এলাম। নতুন গল্পে রেসপন্স ভালো পেলে নেক্সট আসবে। আপনাদের মতামত কমেন্ট করে জানান। প্রথম পর্ব পড়ে গল্প বিচার করবেন না। ধর্য্য ধরে পড়ুন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here