আনকোরা পর্ব-৩০

0
1792

#আনকোরা
#রূবাইবা_মেহউইশ
৩০.

বৈশাখের আকাশ কখনো কালো কখনোবা শুভ্র। আজও আকাশ কালো রাতের মতোই তবে ভূলোক এখনো ভিজেনি। হয়তো বৃষ্টি নামলেও আরো সময় নেবে। চাঁদ খান আজ সকাল সকালই তৈরি হয়ে লকারের তালা খুঁজছেন। সুইটি কাল তার বাবার বাড়ি গিয়েছিলো। বিয়ের পর এটাই ছিলো প্রথমবার তার চাঁদকে না জানিয়ে বাবার বাড়ি গিয়ে থাকা। আর এই প্রথম সে নিজের ভাইদের কাছে নিজের ভাগটুকু চেয়েছে। চাঁদ জানে না সুইটির এ কথা কিন্তু সকাল সকাল সে যখন লকার থেকে জমিজমার কাগজ বের করলো তখন সুইটি বাড়িতেই ছিলো। সে আজকাল যতোটা সম্ভব এড়িয়ে চলে চাঁদকে। তবুও কাগজপত্র দেখে কৌতূহল মেটাতে প্রশ্ন করে বসলো, “এসব কাগজ দিয়ে কি হবে?”

“ভালো একটা লোক পেয়েছি বনানীতে জায়গা কিনবে। কথায় কথায় জানা হলো আমার এলাকার বন্ধুর মাধ্যমে। তাই ভাবছিলাম…”

ইতস্তত করছে চাঁদ কথাটা প্রকাশ করতে কিন্তু সুইটি অধীর আগ্রহভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কথাটা শুনতে।

“তাই কি ভাবছিলেন?”

“আমাদের বনানীর জায়গাটা বিক্রি করে দেই। সেখানে কোনকালেই যাওয়া হবে না আমাদের। এ বাড়িতে আমার জন্ম, আমার মেয়েরও জন্ম এখানেই আর সেখানকার বাড়িটা এখনো পড়ে আছে অর্ধেক কাজেই। বাবার পর তো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম সে বাড়ির কাজ এখনো অসম্পূর্ণ তাই আর ওটা করাও হবে না। তার চেয়ে ভালো বিক্রি করলে অনেক টাকা আসবে। চৈতীকে নিয়ে বিদেশে যাওয়াটা যত তাড়াতাড়ি করবো ততোই মঙ্গল।”

“আর তাই আপনি আপনার জায়গাজমির কাগজপত্র গোছাচ্ছেন?”

“হ্যাঁ”

“আর গোছাবেন না। টাকার ব্যবস্থা সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই ইনশাআল্লাহ হয়ে যাবে। আমার মেয়েকে নিয়ে আমি যথা সময়ে চলে যাবো। আপনি প্লিজ আপনার দেশ সেবায় মন দিন।”

“সুইটি! বাড়াবাড়ি করছো কিন্তু এবার। আর কত অপমান করবে আমায় বলো তো! কি মনে করো তোমরা আমাকে আমি পাষাণ!”

“এতকাল তাই জেনে এসেছি।”

“ভুল জেনে এসেছো?”

“তাহলে সঠিকটা আগেই জানিয়ে দিতেন!”

“আমার আফসোস হচ্ছে আজ তোমার মন মানসিকতা নিয়ে। আমার ধারণা ছিলো আমার স্ত্রী আমাকে বোঝে সে আমাকে শুধু ভালোই বাসে না আমাকে বুঝতেও পারে সে। দেশের প্রতি ভালোবাসা লালন করে আমি তোমাদের ছেড়ে এখানে সেখানে পড়েছিলাম ঠিকই কিন্তু প্রতিটা মুহুর্তে ছটফট করেছি তোমাদের জন্য। আমি ভাবতাম আমার করা দেশের জন্য কাজে তোমরা গর্বিত হবে কিন্তু আমি যে সারাজীবন ভুলের রাজ্যে বসবাস করেছি তা আজ জানতে পারলাম।”

চাঁদের আর্তনাদ মিশ্রিত কথাগুলো আজ সুইটিকে যেন ছুঁতেই পারছে না। সে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু চাঁদ আজ থামতে চাইছে না। সে এতদিন শুধু চৈতীর তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া উপলব্ধি করতো কিন্তু আজ বুঝতে পারলো তার জীবনের সঙ্গী তার অর্ধাঙ্গিনীও কতোটা বিমুখ তার প্রতি। হাতের কাগজ গুলো খাটের ওপর ফেলে সুইটির হাত ধরলো, “তুমি সত্যিই আমাকে নিষ্ঠুর মনে করো সুইটি?”

সুইটি কিছুই বলছে না। তার চোখ ছলছল করছে কি বলবে সে চাঁদকে! সে সত্যিই মনের মধ্যে আজীবন কষ্ট লালন করে এসেছে চাঁদকে নিয়ে। যৌবনে স্বামী সঙ্গ তার হাতে গোনা কিছুদিন। প্রতিবারই চাঁদ বাড়ি এলে সে দিন গুণতো আর ক’দিন থাকবে মানুষটা! মেয়ে হওয়ার পর প্রথম প্রথম ভাবতো চাঁদ এবার নিশ্চয়ই অনেক গুলো দিন পাশে থাকবে৷ কিন্তু বিধিবাম! মেয়ের জন্মের তিনমাসের মাথায় সে প্রথম মেয়ের মুখ দেখেছে৷ আর সেবারই সুইটি বুঝে গেছে এ মানুষটা সংসারের মায়ায় কোনদিন বাঁধা পড়বে না। সে দেশের মানুষ পরিবারের নয়। সুইটি প্রকাশ করতে পারতো না কিছু কিন্তু তার শ্বশুর তো বার কয়েক বলেছিলো, “চাঁদ সোনা, বৌমা আর চৈতীকে নিয়ে যা সঙ্গে। তুই বদলি হয়ে যেখানে যেখানে যাবি তারা সঙ্গেই যাবে। কিন্তু না, তখনও সে স্পষ্ট বলেছে মেয়ের আর ক’বছর তারপরই পড়ালেখা শুরু করবে তাকে আমি এ শহর ও শহরে ঘুরিয়ে পড়াশোনায় ক্ষতি করতে দেবো না। এই শেষ তারপর আর সুইটি কোনদিনও মনের মধ্যে লালন করেনি মানুষটার সঙ্গে থাকার চিন্তা। এখন তো মেয়েটাও বড় হয়ে গেছে সুইটি এখন একা সংসারও করতে জানে৷ তাহলে এখন কি দরকার এই মানুষটার পাশে থাকার! লাগবে না তার চাঁদের সহায়তা। সে একাই পারবে তার মেয়েকে নিয়ে দেশ বিদেশ ঘুরতে। বাবার বাড়ির যে সম্পত্তি তার নিজের ভাগে তাতেও কম পড়বে না চৈতীর চিকিৎসায়। সুইটি কঠিন হয়ে গেছে। যে সুইটিকে সবাই জানতো এই মহিলাটি সে যেন একদমই নয়। চাঁদের হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে সে চলে গেল ঘর ছেড়ে। চাঁদও থেমে থাকেনি। কাগজপত্রগুলো একটা ফাইলে পুরে বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে। যাওয়ার পথে হাসপাতালে ফোন করে জেনে নিলো ডক্টর অভিনব খন্দকার আজ কয়টায় আসবে। রিসেপশনিস্ট জানালো তিনি কাল রাত থেকেই হাসপাতালে আছেন।

ঐশীকে তার বাবার বাড়িতে রেখে দিশান দ্রুতই বেরিয়ে এসেছে। শ্বাশুড়ি মা অনেক জোর করেছেন নাশতার জন্য কিন্তু দিশান শোনেনি তাই ঐশীই বলল, ” ওকে যেতে দাও মা জরুরি কাজ আছে তার।”
দিশান শ্বশুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা নিজেদের এলাকার বাজারে গেছে। প্রথমে ভালো একটা হোটেল থেকে সবার জন্য পরোটা, সবজি নিয়ে আবার পাউরুটি আর কলাও কিনলো। বাবা হোটেলের খাবার খেতে পারেন না তাই পাউরুটি, জেলি,কলা এসবই ভরসা। বাড়িতে ফোন করে জানলো জেলি আছে তাই আপাতত এসব নিয়েই বাড়ি ফিরলো। দিলশাদ তখনো ঘুমে তাই দিশানই মাকে ডেকে তুলে নাশতা করালো। সবার নাশতা শেষ হওয়ার পরপরই বাড়িতে দিশানের ছোট খালা সঙ্গে তার ছোট ছেলে এলো। দিলশাদ ছোট বোন দিথিকে দেখে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। দিথিও কাঁদছে বোনকে জড়িয়ে। দিলশাদের এখন সব মনে পড়ছে স্বাভাবিকভাবে কিন্তু সবাই জানে এই স্বাভাবিকতা ক্ষণস্থায়ী। দিথি কিংবা দিশা যখনই আসে তখনই দিলশাদ এভাবে কাঁদে আর কাঁদতে কাঁদতে সে একটা কথাই বলে, “আমার অভিশাপ লেগেছে সব আমার পুড়ামুখের ফল। আমিই তো বলেছি দিহান তার সন্তানের মুখ দেখবে না তাই তো চলে গেছে কেউ কাউকে না দেখে। আমি খু*নি আমাকে মেরে ফেল। বি/ষ দে আমায় কেউ নিজের সন্তানকে খেয়েছি আমি।”
দিলশাদের আর্তনাদ তখন তার আশপাশের প্রত্যেকটা মানুষকে কাঁদিয়ে দেয়। আজও তাই হচ্ছে দিশান আর থাকলো না মা আর খালার পাশে। সে চোখ মুছতে মুছতেই নিজের ঘরে গেল। আলমারি খু্লে অফিসে যাওয়ার জন্য কাপড় বের করতে গিয়ে দুটো কাগজ পড়লো। দেখে অনেকটা হাসপাতালের প্রেসক্রিপশন মনে হলো তার। দিশান কাগজ দুটো উঠিয়ে নাম চেক করেই অবাক হলো। ‘ঐশী রহমান’ মানে ঐশীর প্রেসক্রিপশন আর দ্বিতীয় কাগজটাতে চোখ যেতেই সে আনন্দে কিছু সময় স্তব্ধ হয়ে রইলো। ঐশী প্রেগন্যান্ট আর রিপোর্টও আরো এক সপ্তাহ আগের। তারমানে ঐশী গত সপ্তাহে তাকে এক জায়গায় যাবে বলতে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথাই বলেছিলো। কথাটা মনে পড়তেই আবার মন খারাপ হয়ে গেল। চারদিকে বিষন্নতার দেয়াল এতোটাই উঁচু হয়েছিলো যে, সে ঐশীর দিকে ফিরে তাকানোর সময়টাই পায়নি অনেকটা দিন। নিজেদের প্রথম সন্তানের আগমনটাও সে জানানোর সুযোগ দেয়নি ঐশীকে। এখন বুঝতে পারলো কাল ঐশীর অভিমানে বলা কথাগুলোর কারণ। নইলে ঐশী কখনোই এই অবস্থাতে পরিবার ছেড়ে দূরে যাওয়ার কথা ভাবতো না। সাংঘাতিকরকম অপরাধবোধ আষ্টেপৃষ্ঠে ধরলো দিশানকে। ঐশী যে রিপোর্টগুলো অভিমান করেই তার কাপড়ের ভাজে রেখে গেছে বুঝতে আর দেরি হলো না। সে আর এক সেকেন্ডও দেরি না করে ঐশীকে কল দিলো। ঐশীও যেন জানতো দিশান এখনই তাকে ফোন দেবে তাই রিং বেজে উঠামাত্রই রিসিভ করলো।

“ফোন হাতেই বসেছিলে?”

দিশান প্রশ্নটা করা মাত্রই ঝরঝর করে কেঁদে উঠলো ঐশী। কত আকাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত ছিলো তাদের প্রথম সন্তানের আসার সংবাদটা দুজন একসাথে জানবে। ঐশী হাসপাতালে যাওয়ার পর টেস্ট করার কথা শুনেই বুঝতে পারলো তার আন্দাজটাই ঠিক হবে। আর তাইতো সেদিন দিশানকে বলেছিলো সঙ্গে যেতে। কিন্তু চোখের সামনে বাড়ির এমন দূর্দশা, দিশানের ব্যস্ততায় আটকে যাওয়া দেখে সে আর দিশানের অপেক্ষা করেনি। এক সপ্তাহে কত বার যে সে অপেক্ষায় ছিলো কথাটা বলার কিন্তু কখনো বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, কখনো মা বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন কখনোবা ব্যবসায়ের কাজে ঢাকা টু খুলনা জার্নি করে বাড়ি ফিরছে। সব মিলিয়ে ঐশীরও মনোবল ভেঙে যাচ্ছিলো এভাবে। আর তাই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরেই তো বাড়ি চলে গেল। কিন্তু এখন আর ভালো লাগছে না। এই পরিবার তো তারই পরিবার। দিশানের মা-বাবা তারও মা-বাবা বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ,বস্তু সবই তার আপন। দিশান খুশিতে কিছু বলবে তার আগেই ঐশী বলল, “আমি বলেছি বলেই আমাকে বাপের বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে?”

“ভুল হয়ে গেছে আমার। ”

“না আমার ভুল হয়েছে আমাকে মাফ করে দাও।”

“এভাবে বলছো কেন বলোতো। আর তুমি আগে কান্না থামাও। অফিস থেকে ফেরার পথে নিয়ে আসবো তোমায়।” দিশান হাসতে হাসতেই বলছে কিন্তু ঐশীর কান্না থামছে না। সে আবেগ তাড়িত হয়ে এখনই বাড়ি ফিরতে চাইছে। দিশান জোর করেই বলল একটা দুপুর থাকো প্রমিস বিকেলেই নিয়ে আসবো। দিশান চাইছে আরেকটু সময় থাকুক ঐশী বাড়ির এই পরিবেশ থেকে দূরে এতে তার মানসিক স্বস্তি আসবে। কিন্তু কে জানতো মেয়েটার সকল স্বস্তি এই বাড়ির অসুস্থ পরিবেশটাতেই এখন বিরাজ করে। দিশান অফিসে যাওয়ার ঘন্টা দুই বাদেই ঐশী ফোন করে জানালো সে বাড়ি এসেছে৷ দিশানও তাই বিকেলে হাতে সময় নিয়ে গেল হাসপাতালে চৈতীকে দেখতে। কেবিনের সামনে যেতেই থমকে গেল দিশান। মামা আর মামী ঝগড়া করছে! কন্ঠস্বর নিচু অথচ দুজনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া চলছে। দিশানের জীবনে সে তার মায়ের ঝগড়া দেখেছে বাবার সাথে বহুবার কিন্তু সেই ঝগড়া একতরফা। মা হাজারো কথা শুনিয়েছে বাবা চুপচাপ শুনে নিঃশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে যেত। খালামনি খালুর সাথে ঝগড়া করলে খালু দু চার কথা বলে চুপ হয়ে যেতেও দেখেছে কিন্তু তার মামী মানুষটাকে সে আজীবন শীতল একটা বরফের পাহাড়ই ভেবে এসেছে। আজ সেই পাহাড়টা কেমন করে হঠাৎ নিরব আগ্নেয়গিরির রুপ ধারণ করলো তা বুঝে এলো না! দিশান এগিয়ে সামনে যেতেই সুইটি বলল, “তোমার মামাকে বলে দাও জন্মদাতা হিসেবে দু’বেলা মেয়েটাকে দেখে যায় তাই অনেক। এর বাইরে যেন আর কিছুই করার অধিকার না দেখায়।”

সুইটির কথা শেষ হবার সাথে সাথেই চাঁদ হাত তুলল থাপ্পড় দেওয়ার উদ্দেশ্যে আর তখনি দিশান তাদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে মামাকে আটকালো। চাঁদ যতোই কঠোর হোক না কেন সে কখনো স্ত্রী- সন্তানের গায়ে হাত দেওয়ার মত নিচু কাজ করার পক্ষপাতী নয়। বিয়ের আজ প্রায় পঁচিশ বছরেও সে কখনো সুইটির সাথে রেগে কথা বলেনি। হ্যাঁ, তবে তার আচরণে গাম্ভীর্য বরাবরই উঁচু মাপের ছিলো আর সুইটিও পূর্বে অতিশয় নরম স্বভাবের ছিলো। কিন্তু আজকের আচরণ দুজনেরই স্বভাবের বিপরীত যা দিশানকে অবাক করেছে। সে কিছু বলার আগেই চাঁদ বলল, “ওকে কিছু বল দিশান। কেন বারবার আমার কাঠিন্যতায় প্রশ্ন তুলছে সে। চৈতী আমার মেয়ে, আমার রক্ত তার জন্য যতখানি মায়া সুইটির লাগে আমারও তার চেয়ে কম লাগে না। সে প্রকাশ করতে পারে আমি তা পারি না। আমার দেশপ্রেম নিয়ে খোঁটা দিচ্ছো তুমি অথচ এই দেশপ্রেম আমার জীবনে তোমাদেরও আগে এসেছে। আমি হয়তো তোমাদের কখনো প্রকাশই করতে পারিনি তোমাদের প্রতি আমার ভালোবাসাটা।” বলতে বলতেই গলার স্বর কেঁপে উঠল তাঁর। দিশানও বুঝতে পারছে দুটো ফ্যামিলি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে একটা দূর্ঘটনায়। জীবনের কিছু কিছু সময় বোধহয় প্রত্যেকেরই আসে এমন দূর্বিষহ মুহূর্ত। সুইটিও নিজের মধ্যে নেই যেন। সে নিজেই বিষ্মিত তার আচরণে। কি করছে এসব সেও কি দিলশাদের মত মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছে! দিশান কিছু বলতে চাইল মামাকে কিন্তু কিছুই বলা হলো না। দীর্ঘকায় সুঠাম মানুষটা আজ ঝড়ে নুয়ে পড়া গাছের মত ভেঙে পড়েছে একদম। সুইটিও চৈতীর অবস্থার পরিবর্তন না দেখে মনোবল ভেঙে যাচ্ছে তার। সন্ধ্যের মধ্যে ফিরে গেল দিশান মামাকে শান্ত করে। সুইটিও আর তর্কে জড়ায়নি। রাত বাড়তেই আবার অভিনব এলো হাসপাতালে তবে এবার সে ভালো একটা খবর নিয়ে এসেছে। আজ রাতে চাঁদ, সুইটি দুজনেই বসেছিলেন চৈতীর কেবিনে। অভিনব তাদের পেয়ে হাসিমুখেই খবরটা দিলো। চৈতীর আর সুইটির ভিসা তৈরি হয়ে গেছে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার। মেডিকেল ট্রিটমেন্ট বলেই ভিসায় সমস্যা হয়নি। যে হাসপাতালে চৈতীর চিকিৎসা হবে সেখানেও তার কন্টাক্ট হয়েছে। প্রথমে পেশেন্ট নিয়ে ডক্টর রাশেদ যাবেন সাথে সুইটি। আর অন্যরা কেউ যেতে চাইলে তাদের ব্যবস্থা আলাদা করতে হবে। কথাটা শুনে চাঁদ প্রথমে খুশি হলেও সেই খুশিটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি চৈতীর সাথে তার যাওয়া হচ্ছে না ভেবে। অভিনব বেশি সময় থাকলো না কেবিনে। সে এক পলক চৈতীর সেলাইয়ের দাগময় গালটার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো। মাথার সেলাই চিহ্নগুলো বাদ দিয়ে বাকি মাথাটায় ছোট ছোট চুলগুলোতে চোখ টিকলো না তার। প্রথম দেখাতেই সে চুল, নাক আর চৈতীর উচ্চতাকে ঘিরে দারুণভাবে আকর্ষিত হয়েছিলো। আজ সেই আকর্ষণগুলো কেমন ম্লান হয়ে গেছে অথচ অভির বুকের ভেতর এ নিয়ে কত হাহাকার। কাউকে ভালোবাসলে তাকে পেতেই হবে এমন বোধ অভির নেই। সে যাকে ভালোবাসে তাকে আপন করতে চায়। আপন না হলে জোর করা কেন! কিন্তু আজ এই ছেঁড়া কাটা ক্ষত ভর্তি মুখটা দেখে বুকটা একদম খালি হয়ে গেল৷ ইচ্ছে করছিলো আলতো করে তাকে জড়িয়ে ধরে বুকের খাঁচাটায় বন্দী করে রাখে আজীবন৷ কিন্তু এই ভাবনাও তার জন্য নিষিদ্ধ। সে এখন অন্য কারো বিধবা স্ত্রী। সময় বড় নিষ্ঠুর; কখন কাকে কোন পরিস্থিতে এনে দাঁড় করায় তা বোঝা মুশকিল।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here