আনকোরা পর্ব-৩৭

0
2904

আনকোরা
রূবাইবা মেহউইশ
৩৭.

বিজয় স্মরণী থেকে মিনিট দুয়ের দূরত্বে চমৎকার একটি রুফটপ রেস্টুরেন্টে বসে আছে অভিনব। হাতে তার স্টেথোস্কোপ আর একটা ফাস্ট এইড বক্স। বক্সটা একেবারে নতুন আর তাতে ঔষধপত্রও একটু আগেই কিনেছে সে। হাসপাতাল থেকে ফেরার আগেই মা ফোন করেছিলেন ঘরে যে স্টেথোস্কোপটা ছিলো সেটা খুঁজে পাচ্ছে না। বাড়িতে একটা থাকা জরুরি অন্তত যেখানে পরিবারের প্রত্যেকটা সদস্যই ডক্টর। অভিনব সেটা কিনতে গিয়েই মনে হলো তার গাড়িতে একটা ফাস্টএইড বক্স লাগবে। এ গাড়িতে প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই নেই তার আর সেজন্যই কিনেছে আজ। কিন্তু আজ চৈতী ইউনিভার্সিটি আসেনি আর দিথিও খুব ক্লিয়ারলি কথা বলতে চাচ্ছিলো। অভিনবের আরো আগেই অনুমানে ছিলো দিথির মনে যা চলছে কিন্তু কারো অনুভূতি জেনেশুনেও বাড়তে দেওয়াটা অপরাধ। আর আজ তো দিথি তাকে দেখে কিছু বলার জন্য উৎকন্ঠিত ছিলো। অভিনবের মনে হলো যে কষ্ট সে নিজে পাচ্ছে তা যেন তার কোন শত্রুও না পায়। সত্যি বলতে তার নিজেরই মায়া হয় নিজের অসহায়ত্বে সেখানে অন্য কাউকেও এমন কষ্টে জড়িয়ে না যায়। দিথিকে সে সময় আর লোকেশন জানিয়েছে। বেঁধে দেওয়া সময়েরও অনেক পর এসে উপস্থিত হলো দিথি। অভিনব কফিতে চুমুক দিতে দিতে ফোন ঘাটছিলো তখনি কানে এলো, “স্যরি একটু লেট হয়ে গেল।”

“একটু নয় আধঘন্টা।” কথাটা বলেই অভি চোখ তুলে তাকালো। তাকাতেই সে বড় রকম একটা ঝটকা খেল দিথিকে দেখে। এই মেয়েটা হয়তো অনেক বড় কোন প্রত্যাশা নিয়ে আজ এত সেজে এসেছে৷ অভিনবের মায়া হলো খুব মেয়েটার জন্য কিন্তু আজ যদি এইটুকু মায়া দেখাতে গিয়ে মেয়েটাকে কিছু না বলে তবে ভবিষ্যতে তার কষ্টটা আরো বেড়ে যাবে। দিথি শাড়ি পরে সুন্দরভাবে সেজগুজে তবেই এসেছে। চোখের কোল কাজলে লেপ্টে আছে হাত ভর্তি রিনঝিন করতে থাকা চুড়ি। অভিনব কিছু বলার আগেই দিথি চেয়ার টেনে পাশে বসলো। তারপরই সেতার স্বভাবসুলভ চঞ্চলতা বজায় রেখে বলল, “আরে বাহ্ মিস্ত্রি সাহেব আপনি কি সবসময়ই অফিসার লুকে থাকেন? সুন্দর লাগছে আপনাকে দেখে মনেই হয় না আপনি কোন গাড়ি ঠিক করার মিস্ত্রি।”

“আমি ডক্টর।”

“তাই বুঝি!” হেসে উঠলো দিথি। তার মনে হলো অভিনব মজা করছে তার সাথে। অভিনব বুঝতে পারলো মেয়েটা বিশ্বাস করেনি। সে ওয়ালেট থেকে নিজের ভিজিটং কার্ডটা সামনে রাখলো। দিথি তখনো বিশ্বাস করতে পারছে না তা তার চোখেমুখে স্পষ্ট।

“সি দিস।”

দিথি কার্ড হাতে নিয়ে দেখলো নাম অভিনব খন্দকার। হার্ট সার্জন,,,, দিথি কার্ডটা রেখে দিলো সামনে থাকা টেবিলের ওপর। অভিনব নিজের ফোনে তার হাসপাতালের সোশ্যাল একাউন্টে ডক্টর লিস্ট বের করে ধরলো দিথির সামনে। অভিনবের নামের পাশে তার একটি চমৎকার হাস্যজ্জ্বল ছবি। মাত্র কয়েক সেকেন্ড তারপরই আবার দিথির চোখেমুখে দিপ্তি খেলে গেল। অভিনব ডক্টর হোক অথবা গ্যারেজ ম্যাকানিক তাতে তার কিছু যায় আসেনা। তার ভালো লাগে অভিনবকে ভালো লাগে অভিনবের কথা বলা, হাসি মুখ আর তার প্রাণচঞ্চল চোখ দুটো। দিথি যখন প্রস্তুতি নিলো নিজের মনের কথা বলার তখনি অভিনব বলে উঠলো, “আমি তোমাকে কিছু কথা বলার জন্য ডেকেছি এখানে। আশা করি তুমি আমার কথা শুনবে এবং বুঝবে। তোমাকে কোনভাবে হার্ট করার কোন ইনটেনশন নেই আমার।”

দিথি আর মুখ খুলল না। সে শুধু কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে রইলো অভিনবের মুখের দিকে।

“আমি চৈতীকে ভালোবাসি অনেক আগে থেকেই।”

অভিনবের কথাটা বিস্ফোরণ ঘটালো কয়েক সেকেন্ড এর জন্য দিথির কানে। সে অসহায় চোখে অভিনবকে দেখছে। অভিনব আবারও বলল, “আমি জানতাম না চৈতী বিবাহিত। তাকে প্রথম দেখেই ভালো লাগে। আমি বিয়ের প্রস্তাব পাঠাই আর তখনি জানতে পারি সে বিবাহিত৷”

এ পর্যায়ে দিথি স্বাভাবিক হয়ে প্রশ্ন করলো, “আপনি তাহলে চৈতীর পরিচিত তবে সেদিন কেন মিথ্যে বললেন?”

“মিথ্যে বলিনি। আমি চৈতীকে চিনলেও সে ঠিকঠাক চেনে না।”

অভিনব এরপর দিথিকে মোটামুটি রকমের বর্ণনা করলো তার নিজের সম্পর্কে, চৈতীকে ভালোবাসার ব্যাপারে। দিথি এরপর আর কোনরকম প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। হাসিমুখে বিদায় নেয় অভিনবের কাছে কিন্তু অভি তো জানে মন ভাঙার যন্ত্রণা কতটুকু। আপাতত সে চেষ্টা করবে যতোটা সম্ভব দিথির দৃষ্টি সীমানার বাইরে থাকতে। চৈতীকে এক পলক দেখার লোভ তো সংবরণ করতে পারবে না কিন্তু আড়ালে থেকে দেখতে কোন ক্ষতি তো নেই!

“আমরা সমুদ্রে যাবো যাবো যাবো।”

“জেদ কোরো না ঐশী। তোমার অবস্থা দ্যাখো। এই শরীরে অত দূরে যাওয়া সম্ভব না সোনা প্লিজ। তোমার ডেলিভারির পর আমরা বাবুকে নিয়ে একসাথে যাবো।” দিশান আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ঐশীকে বোঝাতে কিন্তু মেয়েটা কিছুতেই বুঝছে না। কনসিভ করার পর থেকেই ঐশীর প্রচুর মুড সুইং হচ্ছে সেই সাথে সকাল- বিকাল দুবেলাই দিশানের সাথে কোন না কোন ব্যপারে রাগ করছে। শান্ত শীতল স্বভাবের ঐশীর এত পরিবর্তন প্রথম অবস্থায় নিতে পারছিলো না দিশান। কিন্তু যতোই ঐশীর পেটের আকৃতি বড় হচ্ছে, তার হাঁটাচলা শ্লথ হচ্ছে ততোই দিশান স্বাভাবিকভাবে মেনে নিচ্ছে সব। সারাদিন অফিস করে বাড়ি ফিরে রাতে আবার ঐশীর ফরমায়েশ খাটছে সুন্দর করে। কিন্তু আজ আর সে ফরমায়েশ না আবদার করছে কক্সবাজারের যাওয়ার। এই শরীরে ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিপদজনক তার ওপর এখন আবার ঝড় বাদল লেগেই আছে নিয়মিত। দিশান কতরকমভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছে ঐশীকে। খাটের হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বসে বুকের ওপর আলতো করে ঐশীর মাথাটা ধরেছে। ঐশী মন খারাপ করে রইলো। রাগ কমে গেছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না তবুও দিশান তার মাথায় চুমু খেয়ে খুব আদুরে গলায় বলল, “এই ঝড় বৃষ্টির মৌসুমে গাড়ি জার্নি করা অনেক বিপদজনক তুমি কি আমাদের বাবুকে নিয়ে বিপদে পড়তে চাও?”

একটু আগেই তপ্ত হওয়া মেজাজ আবার ঠান্ডা হয়ে গেল ঐশীর। সে এক হাতে দিশানকে জাপটে ধরে মাথা ঝাকালো না সে যাবে না। কিন্তু প্রমিস করালো বাবু হয়ে গেলেই তারা কক্সবাজার যাবে। দিশানও সম্মতি জানিয়ে আলতো স্পর্শে চুমু খেলো ঐশীকে। রাতের তখন দশটা বেজে গেছে। বাড়িতে সবাই প্রায় এ সময়েই যার যার ঘরে থাকে। দিলশাদের শারীরিক, মানসিক উন্নতি যত হচ্ছে ততোই বাড়িতে শৃঙ্খলা ফিরছে। এখন আবার ঐশীকে দেখলেও ঘাবড়ায় না বরং একটু দূর থেকেই ময়নাকে বিভিন্নভাবে ঐশীর যত্ন নিতে বলে দেয়। আজও ঐশী দোতলায় যাওয়ার পর ময়নাকে বলল দিশানের নিচ তলার আগের ঘরটা ঝেড়ে পরিষ্কার করে রাখতে৷ দিশানকে বলবে এখন থেকে যেন নিচেই থাকে তারা। দোতলায় দিশার ফ্ল্যাটে ময়নাকে পাঠিয়ে দিবে নইলে তারা আবার একা হয়ে যাবে। দিশা তার স্কুল আর টিউশনি মিলিয়ে ভালো ইনকাম করে। আবির ডিভোর্সের কাগজ এখনো সাইন করেনি। তার এক কথা ডিভোর্স হলে মেয়ে তার কাছে থাকবে। দিশানও কম নয় সেও বলে দিয়েছে ডিভোর্স হোক বা না হোক আয়শাকে সে ওর মত বদমাশের কাছে দিবে না৷ আয়শার দাদা নিজেও দিশানকে সাপোর্ট করছে নিজের ছেলের চরিত্র ঠিক নেই বলে। নেশা করে, পরনারীতে আসক্ত এমন মানুষ নিজের মেয়ের খেয়াল কখন রাখবে! উল্টো মেয়েটা পরে থাকবে আয়া আর দাদীর কাছে তাতে তার মানসিক বিকাশে কতোটা বিপর্যস্ততা বিদ্যমান তা আন্দাজ করা যায়। তাই আর শেষ পর্যন্ত আবির বেশি বাড়াবাড়ি করতে পারছে না। হয়তো বাধ্য হয়েই অতি দ্রুতই ডিভোর্স কার্যকর হবে। দিশা কষ্ট পায় খুব। সে যত খারাপই হোক ভালো তো তাকে সত্যিই বেসেছিলো দিশা। কষ্ট হয় কিন্তু নিজেকে সামলে নেবে ঠিক। নিজের জন্য না হোক মেয়ের জন্য অন্তত তাকে সামলে নিতে হবে।

রাতের খাওয়া আজ অনেক বেশিই দেরি হয়ে গেছে। চৈতী সন্ধ্যে থেকে বায়না ধরেছে ঘরে বানানো কাচ্চি খাবে আর আলু বোখারার চাটনি খাবে। সুইটি দেখলো ঘরে তার সব রকম মশলা এখন নেই তাই চৈতীকে বলছিলো বাইরে থেকে আনুক আজ। দু একদিনের মধ্যে রান্না করে খাওয়াবে৷ ঘরে বানানো কাচ্চির আবদার থাকতো সবসময় দিহানের পক্ষ থেকে। সুইটির রান্নার হাত ভালো তার ওপর শ্বশুর বাড়িতে তার সকল বাচ্চার খাবারের আবদার সুইটি সবসময়ই পূরণ করতো। বিয়ে হয়ে আসার পর তাকে সর্বপ্রথম আবদার পূরণের জন্য জ্বালিয়ে খেয়েছিলো দিহান। তখন তার শ্বশুর বাড়িতে বাচ্চা বলতে ছিলোই দিহান আর দিশান৷ বাকিরা সবাই পরে জন্মেছে সুইটি তাদের জন্ম হওয়া দেখেছে, কোলেপিঠে নেওয়া সবই করেছে। কিন্তু তার আবদার বলা যায় আবদার নয় অনেকটা শ্বশুরের মত আদেশ করতো বিভিন্ন রকম খাবারের। তারমধ্যে কাচ্চিটা ছিলো বিশেষ। আজ চৈতীর আবদার আর জেদ দেখে চোখ দুটো ছাপিয়ে জল গড়ালো তার। মনে হচ্ছিলো এই বুঝি দিহানও এসে বলবে, ” দু ঘন্টা পর এসে যেন দেখি কাচ্চি হয়ে গেছে।”

কখনো কখনো তো রান্না করা সম্ভব না হলে সুইটি ড্রাইভারকে দিয়ে হোটেল থেকে আনিয়ে বলতো নিজে রান্না করেছি। দিহান মুখে দিয়েই বলতো, “মিথ্যে কথা বলা শিখে গেছেন না! আমি এক্ষুনি মামাকে চিঠি লিখবো।”

দিহানের স্মৃতি মনে করে সুইটি আর দাঁড়াতে পারছিলো না চৈতীর সামনে। সে দৌঁড়ে ঘরে ঢুকে ডুকরে কেঁদে উঠলো। চাঁদ ঘরে বসেই কোন কাজ করছিলেন। সুইটির কান্না দেখে পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে? তাতেই সুইটির কান্না বেড়ে গেল৷ অস্পষ্টভাবেই সে দিহানের কথা বলেছিলো। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে সবটা শুনলো চৈতী কিন্তু এত কান্নার কারণ বোধগম্য হচ্ছে না তার। নিজের ঘরে ঢুকে সে তন্নতন্ন করে আলমারি খুঁজলো, নিজের টেবিল, বইখাতা এমনকি খাটের ম্যাট্রেস তুলেও অনেক খোঁজাখুঁজি করলো। কিন্তু কিছুই নতুন বা তার অজানা, অপরিচিত কিছুই মিলল না যা দেখে সে কিছু তো মনে করার চেষ্টা করবে। শুধু বারবার মনে হচ্ছে দিহান সম্পর্কিত কিছু তো আছে যা তার মনে হওয়া দরকার৷ তার মনে পড়া দরকার। এত ঝাপসা স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকা দায়। চৈত্যের খরতাপ আর চাতকের মত তৃষ্ণার্ত মন আর একটা মানুষকে জীবন থেকে নাই করে দিয়ে বাঁচা যায় না। তার চেনা প্রত্যেকটা মুখ সে অসংখ্যবার দেখে এ কয়েক মাসে শুধু ওই অতি পরিচিত অপছন্দনীয় মানুষটারই কোন চিহ্ন খুঁজে পাচ্ছে না সে৷ কিন্তু কেন! কেন? অনেক বড় একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন আসে তার মনে যখনই দিহান নামটা মনে পড়ে। রাত সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে অথচ আজ আর কারো খাওয়া হবে না। সুইটি নিজেকে সামলাতে পারছে না। দিহানকে সে অনেক বেশি ভালোবাসতো, স্নেহ করতো তেমনটা নয় কিন্তু তবুও দিহানের মৃত্যুটা হঠাৎ হঠাৎই ভঙ্গুর করে দেয় সবাইকেই৷ চাঁদ সুইটিকে থামিয়ে চৈতীর কাছে গেল। চৈতীর পড়ার টেবিলে বসে মাথা ঠেকিয়ে ফোন টিপছে। হয়তো কিছু ভাবছে তা দেখে চাঁদ ডাকলো, “চৈতী মা! আয় আমরা বাইরে যাই।”
চৈতী নিঃশব্দে উঠে দাঁড়ালো। আলমারির ড্রয়ার থেকে একটা হিজাব নিয়ে পেঁচিয়ে নিলো মাথায়। নিজের সেলফোনটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। চাঁদ বাড়ির গ্যারেজ থেকে তার গাড়িটা বের করলো। চৈতী নিঃশব্দে গাড়িতে উঠে বসলো৷

“সিট বেল্ট লাগাও মা।” চাঁদের কন্ঠস্বর নরম শোনালো৷ চৈতী সিট বেল্ট বাঁধার সময় বলল, “বড় ফুপির বাড়ি যাবো।”

মাত্রই গাড়ি গেইট পেরিয়ে বের হয়েছিলো তাদের। চৈতীর কথা শুনে চাঁদ ব্রেক লাগালো৷ চৈতীর মুখের দিকে আতংকিত চোখে তাকাতেই চৈতী আবারও বলল, “থামলে কেন বাবা! আমি ফুপিকে দেখতে যাবো এখনই।”

“কাল সকালে যাই! এখন তো তারা ঘুমিয়ে পড়েছে।”

“তবুও যাবো।”

চাঁদ জানে চৈতীকে কিছুতেই প্রেসারাইজ করা যাবে না। চেয়েও আর কোন কথা বলতে পারলো না চাঁদ খান। গাড়ি চলল দিহানদের বাড়ির পথে আর চাঁদ খানের মনও চলল অস্থির ভাবনায়। সেখানে গিয়ে কোন কিছুর সম্মুখীন কি হতে হবে এত রাতে! বড় আপা আবারও অসুস্থ হয়ে গেলে অথবা চৈতী! জীবনের খেয়া ঢেউয়ের মাঝে কতরকম বিপদের ভয় দেখায়। সে ভয় কাটিয়েই মাঝি এগিয়ে চলে তীরে। আজ হয়তো চাঁদ নিজেও তেমন ঢেউয়ে ভয়ে কাবু হচ্ছে হয়তো একসময় এই ভয়ের সাথে পাল্লা দিয়েই এগিয়ে যাবে তীরে। আজ চৈতী কিংবা বড় আপা কেউ একজন দিহানের স্মৃতি আগলে পুনরায় অসুস্থ হবে আবার হতে পারে কেউ একজন আরও সামলে যাবে! ওপরওয়ালা তো যা করেন সবেতেই কোন না কোন মঙ্গল নিহিত৷ আজও হয়তো কিছু খারাপের মাঝেই ভালো কিছু ঘটবে। রাত তখনও বারোটা বাজতে পাঁচ মিনিট বাকি যখন চাঁদ খানের গাড়ি পৌঁছালো দিহানদের বাড়িতে। গাড়ি থেকে নেমে চৈতী আর কোনদিকে না তাকিয়ে সোজা বাড়ির গেইটে গিয়ে কলিংবেল বাজালো পরিচিত হাতে। চাঁদ খান এগিয়ে আসতে আসতে অবাক হলো চৈতী নিজেই লন পেরিয়ে গেইটে এসে কলিংবেল বাজালো! তবে কি তার সব মনে পড়েছে? বেশিক্ষণ ভাবার সময় পায়নি চাঁদ তার আগেই গেইট খোলার আওয়াজ পেল। দিহানের বাবা গেইট খুলছেন৷ চৈতী ফুপাকে দেখে সালাম দিয়েই ভেতরে ঢুকে গেল। বিষ্ময়ে হয়তো খেই হারিয়েছেন দিহানের বাবা। তিনি ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন দরজায়। চাঁদ এগিয়ে গিয়ে সবটা বলতেই তিনি ফিরে তাকালেন চৈতীকে দেখতে। কিন্তু চৈতী নেই চোখের আশেপাশে। কোথায় গেল! কথাটা বলতেই দেখলেন বসার ঘর পেরিয়ে একটু বা দিকে আলোকরশ্নি। বুকটা মোচর দিয়ে উঠলো দিহানের বাবার। দিহানের ঘরে বাতি জ্বলছে! দুজনে আবার সেদিকেই এগোলেন। কি আশ্চর্য কান্ড! চৈতী খাটে শুয়ে আছে চোখ বন্ধ করে। থমকে গেলেন দুজন বাবাই। বুকটা হু হু করে কেঁদে উঠছে দুজনেরই। মন থেকে নাকি অতীতের স্তর হারিয়ে গেছে মেয়েটার। সেই হারানো মনটাও অবচেতনে এসে লুটিয়ে পড়েছে তার অতীতে। বাড়ি ভর্তি কতগুলো কামরা অথচ তার মন তাকে টেনে এই কামরাতেই নিয়ে এসেছে। চাঁদ ফোন বের করে সুইটিকে কল দিয়ে বলল তারা আজ রাতে ফিরবে না। চাঁদ খান জোর করে তার দুলাভাইকে নিজের ঘরে পাঠিয়ে বসে রইলো বসার ঘরে। ঘুম তার কিছুতেই আসবে না তাই বসার ঘরে আলো জ্বেলে বসে রইলো গা এলিয়ে। চৈতীর কোন শব্দ আসছে না কানে। হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে সে অথবা অতীতের ভীড়ে ঢুকে পড়েছে তার মনকে শান্ত করতে।

শেষ রাতে বিনা গর্জনে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। পাতার গা ধুয়ে সতেজ করে তুলছে বৃষ্টি আজ৷ চৈতীর ঘুম ভাঙলো পর্দা সরে ছিঁটে আসা বৃষ্টির পানি চোখে মুখে পড়তেই। ঘরে আলো নেই অথচ সে বাতি না নিভিয়েই ঘুমিয়েছিলো। হয়তো লোডশেডিং ; সে নিজের বালিশের চারপাশে হাতড়ে ফোনটা পেল। ফোনের স্ক্রীণ লাইট জ্বালাতেই চোখে পড়লো পরিচিত একটা নাম্বার থেকে আসা ছোট্ট বার্তা, “অভিনব তোমাকে ভালোবাসে।”

চলবে
(রিচেক করা হয়নি। ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here