#আমার_গল্পে_তুমি
//পর্ব-৬//
#সাদিয়া
সকাল সাতটা বেজে ত্রিশ মিনিট। সাদিয়া বেডে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে। আর আদিবা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সাদিয়ার কীর্তিকলাপ পর্যবেক্ষণ করছে।
—সমস্যা কি তোর সাদি?
সাদিয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,,,
—কি সমস্যা থাকবে?
—তাহলে এমন করছিস কেন? কলেজ যাবি না? উঠ তাড়াতাড়ি।
সাদিয়া এবার মুখ গোমড়া করে বললো,
—আমি আজ যাবো না।
আদিবা এবার ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে,,
—কেন? কি হয়েছে?
—কিছু হয়নি। কিন্তু..
—কি কিন্তু?
—আজকে না কেমন একটা আজব আজব ফিল হচ্ছে।
—এ আর কি? তোর তো এমন আজব আজব ফিল দুই দিন পর পরই হয়।
সাদিয়া এবার বিরক্ত হয় আর মুখ দিয়ে ‘চ’ উচ্চারণ করে বলে,
—তুই বুঝতে পারছিস না। আজকে আমার সত্যিই আজব আজব লাগছে।
—আচ্ছা বল কেমন ফিল হচ্ছে?
সাদিয়া হাই তুলতে তুলতে বলে,
—আমার না প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে।
সাদিয়ার এমন কথায় আদিবা কটমট করে তার দিকে তাকায়। এতক্ষণে সাদিয়া কাঁথা দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে দিয়েছে। আদিবা এবার সাদিয়া কাঁথা ধরে এক টান দিয়ে কাঁথা ফেলে দিয়ে সাদিয়াকে টেনে তোকে। সাদিয়াকে বসিয়ে দিয়ে সে স্কার্ফটা পরিয়ে দিয়ে এফ্রোন হাতে নিয়ে সাদিয়ার এক হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়।
—উফফ সাদি তোর অত্যাচারে আমার শান্তি নেই। তোকে নিয়ে আমার হয়েছে যত জ্বালা। আন্টি তো তোকে এখানে পাঠিয়ে দিয়ে দিব্বি আছে। এখানে তোকে নিয়ে যত ঝামেলা আমাকে পোহাতে হয়। আমাকে তো আমার রামবলদ প্রেমিকও এতো অত্যাচার করে না তুই যাতটা করিস। তোর অত্যাচারে দেখিস আমি একদিন সন্যাস নিয়ে হিমালয় পাড়ি দিবো।
আদিবা সাদিয়ার এক হাত টেনে ধরে নিয়ে যাচ্ছে আর তাকে বকাবকি করছে। এটা আদিবার পুরোনো অভ্যাস। সাধারণ বন্ধুত্ব এমন হয় যে একজন স্কুল বা কলেজ যেতে না চাইলে অপরজনও মানা করে দেয়। কিন্তু আদিবার বিষয়টা সম্পূর্ণ আলাদা। সাদিয়া যদি যেতে না চায় তাহলে আদিবা তাকে জোর করে একপ্রকার টেনে হিচড়ে নিয়ে যায়। আদিবার কথা হলো,’তুই যাবি না কেন?আমি যাবো তাই তোকেও যেতে হবে। তুই বাধ্য যেতে।’
পনেরো মিনিট যাবত হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাদিয়া। নতুন টিচারকে ওয়েকলাম করার দায়িত্ব পড়েছিলো আদিবা আর নাদিয়ার উপর। নাদিয়ার বাবা হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় তাকে লাস্ট মোমেন্টে চলে যেতে হয়েছে। তাই ম্যাম নাদিয়ার জায়গায় আদিবার সাথে সাদিয়াকে দায়িত্ব দিয়েছে। সাদিয়া এসবে যেতে চাই নি। কিন্তু ওই যে আদিবা! এবারো তাকে সে জোর করে নিয়ে এসেছে। এখন সাদিয়ার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে সে যে কথায় চলে গেছে আল্লাহ্ মালুম।এই মেয়ে অনেকটা পাখির মতন। যখন তখন ফুড়ুৎ করে কোথায় না কোথায় চলে যায় তার টিকিটাও খুঁজে পাওয়া যায় না।
সাদিয়ার এবার রাগ লাগছে রীতিমতো। সে এই কারণেই এসবে আসতে চায় না। সে ভেবেছিলো আজকে একটা জম্পেশ ঘুম দিবে কিন্তু আদিবার জন্য তো তা হলো-ই না তার উপর এখানে এসে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। সাদিয়া এবার আদিবা খুঁজতে একটু সামনে এগোয়। সে এগোতে এগোতে মেডিক্যাল এর সামনের বাই-রোডের কাছে চলে এসেছে যা তাদের কলেজের সামনেই। যখন হাসপাতালে ভির বেশি হয়ে যায় তখন এই রাস্তাটা ব্যাবহার করা হয়।
সাদিয়া আনমনে সামনে যেতে যেতে আচমকা একটা গাড়ির সামনে চলে যায়। একটুর জন্য সে গাড়ির নিচে চাপা পড়েনি। এই ঘটনায় সাদিয়া প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। সে বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। আর একটু হলেও প্রানটা দেহ থেকে বিদায় নিচ্ছিলো।
অপর দিকে আচমকা গাড়ির সামনে কেউ এসে পড়ায় আরনাফ তাড়াতাড়ি করে গাড়ির ব্রেক কষে। ব্রেক কষেই সে সস্থির নিঃশ্বাস ফেলে। আর একটু হলেই কোনো একজনের ভব লিলা সাঙ্গ হয়ে যেত। এবার আরনাফ ভালো করে সামনে তাকায়। কোনো একজন মেয়ে চোখ বন্ধ করে তার গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বোরকার নেকাব এমন করে আটকানো যে তার চোখ দুটো দেখার জন্যও আরনাফকে এক প্রকার যুদ্ধ করতে হচ্ছে।
আরনাফ এবার সিট ব্যল্ট খুলে গাড়ির ডোর ঠেলে গাড়ি থেকে বের হয়। ছোট ছোট কদম
ফেলে সে সামনে এগিয়ে যায়। সে যত এগোচ্ছে ততই যেন তার হৃদয়স্পন্দন তার সাথে বেইমানি করে বেড়ে চলেছে। এমন প্যারাসিম্পেথেটিক ঘটনা তো তার সাথে কখনো ঘটে নি। ঘটেছে কি? কই তার তো মনে পড়ছে না। আরনাফ এখন হার্টের স্পন্দন বেড়ে যাওয়ার ঘটনার রহস্য উন্মোচন করায় ব্যস্ত। কিন্তু তার গবেষণা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। কোনো এক শ্যামকন্যার কাজল কালো চোখ দেখে সে তার কয়েকটা হৃৎস্পন্দন এবার মিস করে যায়।
কোনো মেয়ের কাজল কালো চোখ কি এতোটা মোহনীয় হতে পারে? কবির ভাষায় তো পুরুষ মানুষ নারীর বাঁকা দাঁতের হাসিতে খুন হয়। তাহলে কি কবি কাজল কালো চোখের কথা বলতে ভুলে গেছেন? নাকি বলেছিলেন যা আরনাফ জানে না?
সাদিয়া কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে দেখে কোনো এক লোক তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। সাদিয়া এতে ভয় পেয়ে যায় কিছুটা কিন্তু তা প্রকাশ করলো না। সে কিছু না বলেই ওখান থেকে এক প্রকার ছুটে পালায়।
সাদিয়ার যাওয়ার দিকে আরনাফ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। সে নিজের মনেই বলতে থাকলো,
—এমন ভালো পালালো কেন? ভুত দেখলো নাকি? নাকি ভয় পেলো? আর ভয় কেন পাবে? আমাকে দেখে? কিন্তু আমি তো কিছু করি নি। তাহলে সে এমন করলো কেন? আর কে এই মেয়ে? গায়ে আবার এফ্রোন জড়ানো।ও কি ডাক্তার নাকি স্টুডেন্ট? উমমম শরীরের গড়ন দেখে তো মনে হয় না ডাক্তার। যে পেকাটির মতো শরীর তার!
—একি আরনাফ সাহেব আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? চলুন চলুন কলেজের দিকে চলুন।
আরনাফ নিজের ভাবনার দোকান বন্ধ করে সামনে এগিয়ে যায়।
ওইদিকে সাদিয়া আদিবার কাছে এসে হাঁপাতে থাকে। সাদিয়ার এমন হাঁপানো দেখে আদিবা বলে,
—কিরে হাঁপানি রুগীর মতো এমন করে হাঁপাচ্ছিস কেন?
—সব তোর জন্য হয়েছে বদ মেয়ে একটা।
—আমি আবার কি করলাম আজব তো।
—তুই তখন আমাকে একা ফেলে কোথায় চলে গিয়েছিলিস?
—আরে আমি তো একটু ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম।
সাদিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই ডা.হাবিবের আগমন ঘটে। সাদিয়া আর আদিবাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—তোমরা দুজন এখানে দাঁড়িয়ে গল্প কেন করছো? তোমাদেরকে কি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো?
—স..সরি স্যার।
—থাক এখন সরি বলার সময় নেই। যাও তাড়াতাড়ি।
আদিবা আর সাদিয়া দুজনই দৌড় দিলো।
🍁
সাদিয়া ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে ভাবছে,
—এই চোখ নষ্ট লোক এখানে কেন? এখানে তো আমরা নতুন স্যারকে ওয়েলকাম করতে আসছি। নতুন স্যারের জায়গায় এই নষ্ট চোখওয়ালা লোক কি করে? তার মানে কি এই লোকই আমাদের নতুন স্যার! তওবা তওবা। এই নষ্ট চোখওয়ালা লোক যদি আমাদের টিচার হয় তাহলে তো আর আমাদের পাশ করা লাগবে না। হায়রে কপাল!
সাদিয়াকে স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আদিবা ফিসফিস করে বলে,
—ওই সাদি স্যারকে ফুলটা দে তাড়াতাড়ি। স্যারকে আর কত দাঁড় করিয়ে রাখবি। পরে স্যার যদি আমাদের উপর একবার রেগে যায় তাহলে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন এখানেই শেষ।
আদিবার কথা শুনে সাদিয়া তাড়াতাড়ি করে আরনাফের হাতে ফুলের তোড়াটা দিয়ে দেয়। সাদিয়ার কাজে আরনাফের প্রচন্ড হাসি পায় কিন্তু সে যথাসম্ভব নিজের মুখের গাম্ভীর্যতা বজায় রেখে বললো,
—কোন ইয়ার তোমরা?
—জ্বী স্যার আমরা ফোর্থ ইয়ার।
—দুজনেই?
—জ্বী স্যার।
—আচ্ছা যাও ক্লাসে যাও।
অনুমতি পেয়েই সাদিয়া এক প্রকার পালিয়ে যায় ওখান থেকে। আরনাফ সাদিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। তার মাথায় একটাই প্রশ্ন,
—এত পালাই পালাই করে কেন এই মেয়ে?
সাদিয়া দৃষ্টির বাইরে চলে যেতেই আরনাফ নিজের কেবিনের দিকে পা বাড়ায়।
#চলবে…..ইনশাআল্লাহ ❤️