আমার গল্পে তুমি পর্ব-৫

0
1908

#আমার_গল্পে_তুমি
//পর্ব-৫//
#সাদিয়া

—তু্….তুমি? এখানে আমার ঘরে?

সামনে থাকা ব্যক্তিটি আরনাফের দিকে এগোতে এগোতে বললো,,

—কেন? আসতে পারি না বুঝি?

—ন্…না ঠিক তা নয়…।

—তাহলে এভাবে রিয়েক্ট করছো কেন?
সে কথা বলতে বলতে একেবারে আরনাফের কাছে চলে এসেছে। এতে আরনাফের অস্বস্তি যেন দ্বিগুণ বেড়ে গেলো।

—দে..দেখো মায়া তু..মি এখন আসতে পারো। কেউ আমাদের এভাবে দেখলে অন্য কিছু ভাবতে পারে।

—তো ভাবতে দাও যার যা ভাবার।

মায়া আরনাফের দিকে আর এক কদম বাড়াতেই আরনাফ ওয়াশরুমের দিকে দিকে চলে গেলো। আরনাফের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিলো মায়া। আঙ্গুলে চুল প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে বললো,,
—পালাও! পালাও! যত ইচ্ছে পালাও। কিন্তু মনে রেখো ঘুরেফিরে তোমাকে আমার কাছেই আসতে হবে। এই মায়ার মায়া জালে তোমাকে তো জড়াতেই হবে সুইটহার্ট। তুমি যে আমাতে আবদ্ধ। আমিই তোমার শুরু আর আমিই তোমার শেষ। আমাতেই তুমি আর তোমাতেই আমি পূর্ণ।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আরনাফের গোয়ালঘরের মতো ঘরকে মানুষের থাকার উপযুক্ত ঘর করে বেরিয়ে এলো মায়া। তাকে দেখেই আশা বলে উঠে,
—এক কাপ কফি দিয়ে আসতে এতো সময় লাগে তোর মায়া।

—আর বলো না ভাবি তোমার ভাই ঘরের যা অবস্থা করে রেখেছিলো তা দেখার পর মাথা ঘুরানো শুরু করে দিয়েছিলো আমার। তোমার ভাই এতো অগোছালো। একেক জিনিস একেক জায়গায়। উফফ! গরুর গোয়াল ঘর এর চাইতে বেশি পরিপাটি হয়।
এই আশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আফিয়া মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,

—ফুপি তুমি আমার মামাকে গরু বললে কেন?

মায়া আফিয়ার দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বললো,
—আমি কখন তোর মামাকে গরু বললাম?

—তুমি বলোনি মামার ঘর গরুর ঘর?

—হ্যাঁ বলেছি তো?

—তাহলে মামার ঘরে মামা থাকে আর গরুর ঘরে গরু তাহলে তো মামাকে গরু বলাই হলো তাই না?

আফিয়ার এমন প্যাঁচানো যুক্তি শুনে মায়া আর আশার কথা বন্ধ হয়ে গেছে। এই টুকুন একটা মেয়ের কি যুক্তি। চার বছর বয়সী মেয়ে এমন পাকা পকা কথা শিখেছে। মায়া আশার দিকে তাকিয়ে বললো,
—ভাবি তোমার মেয়েকে কি টাটা সল্ট খাওয়াও নাকি গো?

—কেন বলতো?

—না ওর বুদ্ধি দিন দিন যেমন করে বড়ছে।দেখো না টাট সল্ট এর এড এর মধ্যে দেখায় টাটা সল্ট খাও দিমাগ কা বাত্তি জ্বালাও।

মায়ার এমন কথায় আশা হেঁসে উঠলো। তার সাথে মায়া নিজেও যোগ দিলো। ওই দিকে মায়া আর আশাকে হাসতে দেখে আফিয়া কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

এশার নামাজ পড়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে সাদিয়া। হাতে তার ওয়ান টাইম কফির মগ। কফি থেকে ধোঁয়া উড়ছে। হাতের কফি ঠান্ডা হচ্ছে সে দিকে তার খেয়াল নেই। তার দৃষ্টি কিছু দূরে থাকা এক জোড়া কপোত-কপোতীর দিকে। কি সুন্দর একজন আপনজনের হাতের আঙ্গুলের ভাজে আঙ্গুল রেখে হাটছে। ছেলেটা মাঝে মাঝে মেয়েটার সামনে আসা চুল সরিয়ে দিচ্ছে আর মেয়েটা মুগ্ধ হয়ে ছেলেটার দিকে তাকাচ্ছে। ভালোবাসা মনেই কি মুগ্ধ হয়ে যাওয়া নয়! তাদের দেখে মনে হচ্ছে তারা নতুন বিবাহিত দম্পতি। ইশশশ কতো সুখী তারা! একে আপরকে ভালোবাসে পাশাপাশি হাঁটছে।

পৃথিবীতে প্রেমে পড়ার মতো সুন্দর অনুভূতি আর কিছুতে হয় না। প্রেম এমন একটা জিনিস যা একজন মানুষকে ভেতর থেকে পরিবর্তন করে দেওয়ার মতো ক্ষমতা রাখে!একটা পাথরের মতো শক্ত মানুষকে সে অনায়েশে নরম মাটিতে পরিণত করতে পারে। প্রেম বিধাতার আশীর্বাদ স্বরূপ।
প্রেমে সবাই পড়ে। কেউ বিয়ের আগে আর কেউবা বিয়ের পরে। বিয়ের আগে আর পরে প্রেমে পড়ার মধ্যে একটা সুক্ষ্ম পার্থক্য দেখা যায়। বিয়ের আগে একজন অপরজনের ভালো আর আকর্ষণীয় দিক দেখে প্রেমে পড়ে। আর বিয়ের পর সে তার জীবন সঙ্গীর ভালো খারাপ দুটো দিকেরই প্রেমে পড়ে।
তবে প্রেমে সবাই পড়তে পারে। কিন্তু সেই প্রেমকে সবাই ধরে রাখতে পারে না। প্রেম সত্যিই এক অদ্ভুত সম্মোহন।

সাদিয়া দূরের কপোত-কপোতীদের দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললো আর মনেমনে তাদের জন্য অনেক দোয়া করলো যাতে তাদের জুটি সারাজীবন অক্ষয় থাকে।

ভালোবাসার দহন বড় দহন। এটা কিছুটা রসায়নের দহন বিক্রিয়ার মতোই। আচ্ছা প্রেম ভালোবাসাও তো এক প্রকার রসায়ন তাই না? শুধু পার্থক্য একটাই রসায়নের দহন চোখে দেখা যায়। আর প্রেমের দহন অদৃশ্য। এই অদৃশ্য দহনে জ্বলে পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে গেলেও তা চোখে দেখা যায় না। কিন্তু এই অদৃশ্য দহনে জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাওয়ার মধ্যেও এক ধরণের আত্নীক তৃপ্তি আছে।যা সবাই উপলব্ধি করতে পারে না। যারা সেই আত্নীক তৃপ্তিকে উপলব্ধি করতে পারে তদের কাছে এই দহনটা মধুর মতো আর যারা পারে না তাদের কাছে এটা সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছুই না।

সাদিয়া ভালোবাসার দহনে জ্বলছে পুড়ছে। কিন্তু কেউ তা দেখতে পাচ্ছে না। মুখে একটা প্লাস্টিক স্মাইল ঝুলিয়ে রাইলেই মানুষ ভালো সে না জানি কতো সুখে আছে! আসলেই কি সে সুখে আছে? সুখে থাকা কি এতো সহজ?
সাদিয়া মনে মনে ভাবে,,
—এতোটাও কঠিন হয়তো নয়।

আদিবার ডাকে সে নিজের ভাবনার জগৎ থেকে বাইরে আসে। আদিবা তাকে খেতে ডাকছে। সে হাতের কফিটার দিকে একবার তাকিয়ে সেটা রাস্তায় ছুড়ে মারে আর রুমের দিকে পা বাড়ায়।

🍁
রাতে খাবার টেবিলে মুখ গোমড়া করে বসে আছে আরনাফ। তার ডান পাশে বসেছে মায়া আর বাম পাশে আফিয়া। সবাই খাবার খেতে ব্যস্ত। শুধু খেতে পারছে না আরনাফ। তার একমাত্র কারণটা হচ্ছে মায়া। কারণ সে খাচ্ছে কম আরনাফের দিকে তাকাচ্ছে বেশি। এভাবে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলে কি আর খাওয়া যায়। শুধু তাকিয়ে থাকলেও একটা কথা ছিলো কিন্তু মায়া তো শুধু তাকিয়ে থাকায় থেমে থাকে নি। বার বার আরনাফকে এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে আর একটু পর পর জিজ্ঞেস করছে তার কিছু লাগবে কি না।

—একি আরনাফ তুমি খাচ্ছো না কেন? তোমার কি কিছু লাগবে?

আরনাফ মেকি হাসি দিয়ে বলে,
—না না ঠিক আছে। তুমি খাও।
একটা রুটির টুকরো মুখে দিয়ে আরনাফ বিড়বিড় করে বলে উঠে,,
—শান্তি লাগবে শান্তি যা তোমার মতো পেত্নী দিতে পারবে না।

—কিছু বললে আরনাফ?

—ন..না কিছু বলি নি খাও তুমি খাও।
এবার আরনাফ এক গ্লাস পানি খেয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।

—কোথায় যাচ্ছো আরনাফ?

—আসলে ভাইয়া আমার পেট ভরে গেছে।

—সেকিরে তুই তো কিছুই খেলি না।

—আসলে আপু খেতে ইচ্ছে করছে না।
এতটুকু বলে আরনাফ আর দাঁড়ালো না।সোজা নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে একটা লম্বা নিঃশ্বাস নিলো। আজকে ঘরটাকে কেমন কেমন জানি লাগছে। একটু অচেনা অচেনা ঠেকছে। আর এমন হবে না-ই বা কেন সে তো তার রুটা কখনো গুছিয়ে রাখে না। আশা যদি মধ্যে মধ্যে গুছিয়ে দেয় তহলেই গুছানো থাকে। বড্ড আগোছালো সে। তার এই আগোছালো জীবনে খুব গোছালো একজনকে খুব করে প্রয়োজন তার। খুব করে প্রয়োজন। ভাবতে ভাবতেই বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পরলো আরনাফ। বিছানায় শুয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সে ঘুমের রাজ্য ঘুরতে গেলো।

আরনাফ!! এই আরনাফ! আরনাফ শুনছো?আমি তোমাকে ডাকছি,তুমি কি তা শুনতে পাচ্ছো না? এত নিষ্ঠুর কেন তুমি? আমার অনুভূতি গুলোকে কেন অবহেলা করো তুমি? তুমি জানো না তুমি ছাড়া আমি নিঃশ্ব। আমি যে তোমার প্রতিক্ষায় দিন গুনছি। তেমার অপেক্ষায় অর্ধযুগ পার করেছি। কেন এমন অপেক্ষায় রাখছো আমায় তুমি? তুমি কি জানো না অপেক্ষা মৃত্যুর চাইতেও কঠিন! তুমি ছাড়া যে বেঁচে থাকার কথা ভাবও আমার জন্য অন্যায়। জঘন্যতম অন্যায়।
কথা বলতে বলতে আর পিছাতে পিছাতে অবয়টি হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।

আরনাফ লাফ দিয়ে উঠে বসে। সে তরতর করে ঘামছে। এমন স্বপ্ন সে মাঝে মাঝেই দেখে। কখনো কেউ তাকে ডাকে আবার কখনো কান্না করে আবার হয়তো বা কখনও অবয়টির কাছে ফিরে যাওয়ার আকুতি জানায়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে চারটা বাজে। এরমধ্যেই চারিদিক থেকে আজানের ধ্বনি কানে আসছে।আরনাফ কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়। ওজু করে এসে ফজরের নামাজ পড়ে ছাঁদে যায়।

আরনাফ ছাঁদে কিছুক্ষণ হাঁটা-হাটি করে নিচে নেমে আসে।

#চলবে……ইনশাআল্লাহ❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here