আমার গল্পে তুমি পর্ব-৪

0
2000

#আমার_গল্পে_তুমি
//পর্ব-৪//
#সাদিয়া

ফজরের আজানের মধুর সুরে ঘুম ভাঙে সাদিয়ার। সে উঠে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নেয়। কালকে তার মাগরিব আর এশার নামাজ পড়া হয়নি। তার উপর আজকে তার পরীক্ষা আছে। এটার পড়াও বাকি রয়ে গেছে। নামাজ পড়ে এক পাতা কুরআন পড়ে সে টেবিলে বই নিয়ে বসে। এটা তার রোজকার রুটিন। ফজরের নামাজ শেষে এক পাতা হলেও কুরআন তাকে পড়তে হয়। এতে করে মনটা ফ্রেশ লাগে।

সকাল আটটায় আদিবা সাদিয়াকে টেনে ডাইনিংয়ে নিয়ে যায়। সাদিয়া খেতে চাইছিলো না। আদিবা তাকে জোর করে খাইয়ে দেয়।খাওয়া শেষ হলে তারা কলেজের উদ্দেশ্য ছোটে। আজকে পরীক্ষা শেষে আবার ওয়ার্ডেও যেতে হবে। কতো প্যারা উফফফ!

আপরদিকে, সকাল সকাল আরনাফের মুডের বারো দুগুনে চব্বিশটা বেজে আছে। ঘুম থেকে উঠতেই আরনাফের বোন তাকে জানিয়ে দেন আজকে তার ননদ আসছে। আশার ননদকে আরনাফ একদম সহ্য করতে পারে না। কেমন চিপকু টাইপ মেয়ে। সবসময় গায়ের সাথে এমন ভাবে সেটে থাকে মনে হয় কেউ সুপার গ্লু দিয়ে চিপকে দিয়েছে। তার আসার খবর শুনেই আরনাফ তার মুখ গোমড়া করে রেখেছে।

—মামা তোমার মুখ এমন কেন?

আফিয়ার কথায় আরনাফ হেসে উঠে। তাকে কোলে নিয়ে বলে,
—কেমন আম্মাজান?

—হুতু পেঁচার মতো।

আরনাফ ভ্রু কুঁচকে বললো,
—হুতু পেঁচা?

—হে,বাবাই আম্মুকে কিসি দিতে গেলে আম্মু যদি না করে দেয় তাহলে বাবাইয়ের মুখও এমনও হয়ে যায়। তখন আম্মু বাবাইকে হুতু পেঁচা বলে।

আফিয়ার কথা শুনে আশার স্বামী মেহেদী বিষম খায়। সে পানি খেতে এসেছিলো।মেয়ের এমন কথা শুনে বেচারা এক দৌড় দিলো। ওই দিকে আরনাফ মেহেদীর দৌড় দেখে হেসে দিলো।
মেহেদীকে দৌড়ে আসতে দেখে আশা প্রশ্ন করলো,,
—মেরাথন হচ্ছে নাকি? এ মন করে দৌড়াচ্ছো কেন?

—আর বলো না তোমার মেয়ে তো মান সম্মান সব বিনাশ করে দিলো।

আশা ভ্রু কুঁচকে বললো,,
—কেন? কি করেছে মেয়ে?

—আরনাফ কে গিয়ে বলছে তুমি কিসি দিতে না দিলে নাকি আমার মুখ হুতু পেঁচার মতো হয়ে যায়।

মেহেদীর কথায় আশা উচ্চ স্বরে হেসে উঠে। আর মেহেদী আশার দিকে আসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকে। বাচ্চা আর বাচ্চার মায়ের জ্বালায় বেচারার একেবারে নাজেহাল অবস্থা। কিন্তু এই দুটো মানুষের মধ্যেই যে তার প্রাণ। এই মানুষ দুটোকে ছাড়া সে তার অস্তিত্বের কথা চিন্তাও করতে পারে না।

পরীক্ষা আর ক্লাস শেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে মেডিকেল এর ক্যান্টিনে এসে বসে সাদিয়া আর আদিবা। আধঘন্টার মধ্যেই আবার তাদের ওয়ার্ড শুরু। তাই আর তারা কেউ হোস্টেলে যাই নি। ক্যানটিনে হালকা কিছু খেয়ে তাদের আবার ওয়ার্ডে ছুটতে হবে। মেডিকেল লাইফটা সাদিয়ার কাছে একটা প্যারা ছাড়া কিছুই না। তবে সে ভাবে, মানুষের সেবা করার জন্য এটাই তার জন্য ভালো আর উত্তম মাধ্যাম। ফোনের আওয়াজে ধ্যান ভাঙ্গে সাদিয়ার।ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে তর বড় ভাই ফোন দিয়েছে।

—আস্সলামু আলাইকুম ভাইয়া।

—ওয়া আলাইকুম সালাম বোন।কেমন আছিস?

—আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া। তুমি কেমন আছো? আর বাসার সবাই কেমন আছে?

—এই দিকে আলহামদুলিল্লাহ সব ঠিকঠাক। শোন বোন তুই কি একটু বাসায় আসতে পারবি?

—আজকে?

—না না আজকে না। শুক্রবার দিন একটু আসতে পারবি?

—এমনিতে তো শুক্রবার দিন আমার বন্ধই থাকে। আচ্ছা আমি চেষ্টা করবো।

—চেষ্টা না তোকে আসতে হবে।

সাদিয়া এবার সন্ধিহান হয়ে বললো,,
—এই শুক্রবার দিন কি আছে বলো তো?

—আরে ডাফার ভুলে গেলি শুক্রবার দিন সারার বাবা-মা আসবে বিয়ের কথা পাকা করতে।

—ওহ্ শীট! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।

—জ্বী জনাবা আপনি ভুলে গেছেন।তুই আসবি কিন্তু।

—জ্বী জ্বী জনাব আমাকে তো আসতেই হবে।

—এই তো আমার লক্ষী বোন। আর শোন তোর সাথের বান্দরনীকেও নিয়ে আসিস।

—হাহা ওকে ভাইয়া। আচ্ছা ভাইয়া রাখছি এখন আমাকে আবার ওয়ার্ডে যেতে হবে।আল্লাহ হাফেজ।

—-আল্লাহ হাফেজ।

ফোন ব্যাগে ঢুকিয়েই এক ছুট দিলো সাদিয়া।আদিবার কাছে আসতেই প্রশ্নের বর্ষন শুরু হলো।

—কিরে কার সাথে কথা বলছিলি?

—আরে ভাইয়া ফোন করেছিলো।

—তা কি বললো তোর ডাক্তার ভাই?

—গেস হুয়াট?

আদিবা ইশারায় বুঝালো সে জানে না।সাদিয়া এবার দাঁত কেলিয়ে বললো,
—এই শুক্রবার সারাদের পরিবার আসছে বিয়ের দিন ঠিক করতে।

—তোর বলদ ডাক্তার ভাই বিয়ে করবে? রিয়েলি?

সাদিয়া আদিবার বাহুতে হালকা চাপর দিয়ে বললো,
—এই মেয়ে তোর সমস্যা কি হু? সবসময় ভাইয়ার পিছনে কেন লাগিস? তোর আর কোনো কাজ নেই না।

আদিবাসী সাদিয়ার কথায় পাত্তা না দিয়ে বললো,
—জানিস আমি ভেবে পাই না এই সারা তোর বলদা ভাইয়ের মধ্যে কি এমন দেখেছে যে তাকে বিয়ে করার জন্য লাফাচ্ছে!

—সারা যা দেখেছে তা যদি তুই দেখতি তাহলে সারার সাথে সাথে তুইও লাফাতি।

—ছিঃ আমি তোর ভাইকে বিয়ে করর জন্য লাফাবো। সিরিয়াসলি? শোন শান্ত ভাইয়াকে আমি নিজের ভাইয়ের চোখে দেখি। শান্ত ভাইয়া আমার বড় ভাইয়ের অভাব পূরণ করেছে। কিন্তু সমস্যা একটাই তোর ভাই বলদ।

—আবার সেই এক কথা। এই জন্যই ভাইয়া তোকে বান্দরনী বলে ডাকে। তুই এমন কেন বল তো?

আদিবা এবার নিজের সবকয়টা দাঁত বের করে বললো,
—এই ধর আবেগের ঠ্যালায়।

কথা বলতে বলতে দুজনেই ওয়ার্ডে চলে আসলো। আজকে ওয়ার্ডের ক্লাস ভালোই হয়েছে। মাঝে মাঝে ওয়ার্ডে আসলে অনেক ফানি ইনসিডেন্ড ঘটে। যেমন,সব স্টুডেন্ড তো এফ্রোন পড়া থাকে তাই অনেক পেশেন্ট তাদের ডাক্তার ভেবে নিজেদের বিভিন্ন সমস্যার কথা বলতে থাকে। সাথে এটাও জিজ্ঞেস করে তারা ঠিক কিভাবে হবে। তখন স্টুডেন্টদের একটাই জবাব, ঔষধ খাবেন ঠিক করে। অনিয়ম করবেন না। এতেই যেন পেশেন্টরা খুশি হয়ে যায়। তবে সব পেশেন্ট যে হয় তা কিন্তু নয়। কোনো কোনো পেশেন্ট তো রুষ্টও হয়।

ক্লাস,পরীক্ষা আর ওয়ার্ড শেষে রুমে এলো সাদিয়া। এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।আজে সে বড্ড ক্লান্ত। শরীর আর চলছে না।আদিবা ফ্রেশ হয়ে এসে সাদিয়াকে ঠেলে ওয়াশরুমে পাঠায় ফ্রেশ হতে। আর আদিবা যায় নিচে খাবার আনতে। সাদিয়া ফ্রেশ হয়ে এসে নামাজ পড়ে নেয়। তারপর খাবার খেয়ে বিছানায় শুয়ে লম্বা ঘুম। এটা তার খুব দরকার। কালকে আবার কলেজে অনেক কাজ আছে। কলেজে একজন নতুন টিচার আসছে। তাকে ওয়েলকাম করতে হবে। তিনি আবার বিদেশ ফেরত ডাক্তার। বাইরে থেকে ডাক্তারি পাশ করে ওখানের এক বছর প্র্যাকটিস করেছেন। আর বাংলাদেশে এসেছেন দুইবছর হয়েছে। সে আগে সোহরাওয়ার্দীতে কাজ করতো। অল্প সময়ে ভালো রেপুটেশনের জন্য তাকে এই হাসপাতালে আনা হচ্ছে। এসব ভাবতে ভাবতেই চোখের পাতায় ঘুম হানা দেয়।

আজকে হসপিটাল থেকে আরনাফ একটু তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এসেছে। রুমে এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দেয় সাথে চোখটা বন্ধ করে নেয়। তার শরীরটা কেমন জানি ম্যাচম্যাচ করছে। তার উপর জ্বর জ্বর ভাব।সাথে মাথাটাও ধরেছে। কফি হলে ভালো হতো।
চোখ বন্ধ থাকা অবস্থাতেই সে নিজের রুমে দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির অস্তিত্ব টের পায়। তার নাকে কড়া কফির গন্ধ আসতেই সে মুচকি হেঁসে উঠে বসে। বিছানার সাইড টেবিল থেকে কফির মগটা নিয়ে তাতে চুমুক দিয়েই চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়। দ্বিতীয় চুমুক দিয়ে বলে,

—আপু তোর হাতের তৈরি কফির কোনো জবাব নেই। জাস্ট অসাধারণ। তবে আজকের কফিটার টেস্ট কিছুটা আলাদা। বাট নট সো ব্যাড।

কোনো জবাব পায় না আরনাফ।কিন্তু জিনিসপত্র গোছগাছ করার শব্দ ঠিকই কানে আসছে তার।

—কিরে আপু আজকে এমন সাইলেন্ট মুডে কেন? মেহেদী ভাইয়ার সাথে ফাইট করে আসছিস নাকি? উমমম তাই হবে।

এবারো জবাব নেই। আরনাফ বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতেই দ্বিতীয় ব্যক্তিটি তার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। তাকে দেখেই আরনাফের মুখ থেকে কফি অটোমেটিক বের হয়ে যায়। সে বিষম খায়।

—তু্….তুমি? এখানে আমার ঘরে?

চলবে…..ইনশাআল্লাহ❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here