আমার গল্পে তুমি পর্ব-৭

0
1930

# আমার_গল্পে_তুমি
//পর্ব-৭//
#সাদিয়া

আরনাফ এখন ভীষণ বিরক্ত। তার একটাই কারণ। তা হলো তাকে তৃতীয় বর্ষের ক্লাস দেওয়া হয়েছে। তার ইচ্ছে ছিলো সাদিয়াদের ক্লাসে অর্থাৎ চতুর্থ বর্ষের ক্লাসে যাওয়ার। সে নতুন তাই মুখ ফুটে বলতেও পারছে না চতুর্থ বর্ষের ক্লাসে যাওয়ার কথা। মুখটা গোমড়া করে সে থার্ড ইয়ার এর ক্লাসের দিকে পা বাড়ায়।

চতুর্থ বর্ষের ক্লাসের সামনে যেতেই আরনাফ থমকে দাড়ায়। ঝংকার তোলা হাসির শব্দে সে স্ট্যাচু হয়ে যায়। ক্লাসে উঁকি দিতেই সে দ্বিতীয় বারের মতো নিজের হৃৎস্পন্দন মিস করে যায়।আবার সেই কাজল টানা চোখ!
আচ্ছা এতো মায়া কেন এই চোখে? এই চোখ যেন আল্লাহ্ তায়ালা পৃথিবীর সব মায়া দিয়ে তৈরি করেছে। এই মায়ায় সে যেন বার বার হারিয়ে যেতে রাজি। আরনাফ ঘোর লাগা চোখে সেই কাজলকালো চোখের দিকে তাকিয়ে আছে আর তার হাসির শব্দ শুনছে যা তার বুকে রীতিমতো ঝংকার তুলে চলেছে।

—আরে ডা.আরনাফ..

করো ডাকে ঘোর ভাঙে। পিছনে তাকাতেই সে ডা.সিফাত কে দেখতে পায়। সে ডা.সিফাতের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয়।

—আমি আপনাকেই খুজছিলাম ডা.আরনাফ।

—আমাকে? আমাকে কেন?

—আপনার তো এখন থার্ড ইয়ারের ক্লাসে যাওয়ার কথা তাই না?

—জ্বী। কিন্তু কেন?

—আসলে এখন আমার ফোর্থ ইয়ারের ক্লাসে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু থার্ড ইয়ারের ক্লাসে আমার কিছু কাজ আছে। তাই আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে কি আপনি ফোর্থ ইয়ারের ক্লাসে যাবেন?

আরনাফের কাছে ডা.সিফাতের প্রস্তাব একেবারে সোনার হরিণ পাওয়ার মতো ব্যাপার ছিলো। সে সময় নষ্ট না করে দ্রুতই রাজি হয়ে গেলো।

—আরে না না কোনো সমস্যা নেই। আপনি যান না যান। আমার কোনো সমস্যা নেই।

—ধন্যবাদ ডাক্তার।

আরনাফ খুশিতে গদগদ হয়ে চতুর্থ বর্ষের ক্লাসে ঢুকে। ক্লাসে ঢুকতেই তার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। সাদিয়া একটা ছেলের সাথে হেঁসে কথা বলছে।শুধু তাই নয় ছেলেরা কথা বলার মাঝে মাঝে সাদিয়ার হাতেও ধরছে।

—এটেনশন এভ্রিবডি।
আরনাফের উচ্চ স্বরের কথায় সবাই চুপ হয়ে যায়। সাদিয়া আরনাফের দিকে তাকাতেই দেখে আরনাফ কেমন রাগি আর অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। তা দেখে সাদিয়ার কেমন যেন অস্বস্তি শুরু হয়ে যায়। আরনাফ সাদিয়ার অস্বস্তি বুঝতে পেরে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। কিন্তু তার রাগ এক বিন্দুও কমে নি।
আরনাফ একে একে সবার পরিচয় নিয়ে নিজের ক্লাস শুরু করে।

ক্লাস শেষ করে আরনাফ চলে যায়।নিজের কেবিনে গিয়ে রাগে ফোসফাস করছে। আরনাফ নিজেও বুঝতে পারছে না সে এতো রেগে কেন আছে। আরনাফ বরাবরই একজন শান্ত স্বভাবের মানুষ।
ক্লাস শেষে সাদিয়া আর আদিবা হোস্টেলের দিকে চলে যায়। কিছু দূর যেতেই ডা.সিফাতের সাথে তাদের দেখা হয়।

—আরে সাদিয়া কেমন আছো?

—জ্বী স্যার আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি কেমন আছেন?

সিফাত মুচকি হেঁসে বলে,
—আলহামদুলিল্লাহ। আজকের দিন কেমন কাটলো তোমাদের?

—জ্বী ভালো।

—মন দিয়ে পড়াশোনা করবে। সামনে তো তোমাদের এক্সাম তা প্রিপারেশন কেমন তোমাদের।

—জ্বী স্যার ভালো। দোয়া করবেন।

ডা.সিফাতের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে বিদায় নেয় তারা। ডা.সিফাতের তাকানো সুবিধার লাগে না খুব একটা আদিবার কাছে। আদিবার সন্দেহ যদি সত্যি হয় তাহলে….

হোস্টেলে এসে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নেয় দুই বান্ধবী। আজে আদিবার প্রেমিক আদিত্যর জন্মদিন। জন্মদিন উপলক্ষে আদিবা আদিত্যর জন্য সারপ্রাইজ প্ল্যানিং করেছে। সন্ধ্যা হতেই আদিবা সাদিয়াকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। পথে তাদের সাথে সারাও জয়েন করে। তারা তিনজন মিলে একটা রেস্তোরাঁয় যায়। তিনজন মিলে খুব সুন্দর করে রেস্তোরাঁটা ডেকোরেট করে।
—শোন সাদি এই রামবলদ আসার সাথে সাথে স্প্রে দিবি বুঝছিস আর সারা তুই বেলুন ফাটাবি।

আদিবার কথায় সাদিয়া আর সারা দুজনে একসাথে বলে উঠে,,
—যথাজ্ঞা মহারানী আদিবা।

সাদিয়া পার্টি স্প্রেটা ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে দেখছে। হঠাৎ আদিবা চিৎকার করে উঠে,
—সাদিরে দরজা খুলছে দেখ।
আদিবার চিৎকারের সাথে সাথে সাদিয়া স্প্রে করে দেয়। সামনে থাকা ব্যক্তিকে চেনার উপায় নেই। একদম স্প্রে দিয়ে একেবারে সাদা ভুত হয়ে গেছে। তা দেখে সাদিয়া খিলখিল করে হেঁসে উঠে।

—হুয়াট দ্যা হেল..
কারো চিৎকারে সাদিয়া নিজের হাসি থাকিয়ে দেয়। সামনের ব্যক্তি নিজের মুখের স্প্রে সরাতেই সাদিয়া কয়েকটা শুকনো ঢোক গিললো। সামনের ব্যক্তিটির লাল চোখ দেখে সাদিয়া প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। তার কন্ঠনালি থেকে পাকস্থলী পর্যন্ত শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।

সামনে থাকা ব্যক্তি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,
–এটা কি করলে তুমি ষ্টুপিড?

— স…সরি স্যার।

—সরি মাই ফুট।
আরনাফ রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওখানে মায়া এসে উপস্থিত হয়।
—আরে আরনাফ তোমার এই অবস্থা কেন?

আরনাফ সাদিয়ার দিকে ইশারা করে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
—এই ইডিয়েট করেছে আমার এই দশা।

মায়া একবার চোখ তুলে তাকায় সাদিয়ার দিকে। তা দেখে সাদিয়া কাচুমাচু করে বলে,
—স..সরি আমি আসলে বুঝতে পা..পারিনি উনি এসেছেন। ভুল করে উনার উপর স্প্রে করে দিয়েছি।

—ডাফার গার্ল দেখবে না আগে কে আসছে না আসছে।

—আহ আরনাফ ও তো বলছে ওর ভুল হয়ে গেছে। তাহলে ওকে এতো বকছো কেন।

আরনাফ এবার রেগে মায়ার দিকে তাকায়।মায়া আমতা আমতা করে বলে,,
—ঠিক আছে তুমি ওয়াশরুমে গিয়ে ঠিকঠাক হয়ে আসো। তোমাকে উদ্ভট লাগছে দেখতে।
মায়ার কথায় সাদিয়া হেঁসে উঠে। আরনাফ রেগে তাকাতেই সে মুখে আঙুল দেয়।আরনাফ কিছুক্ষণ রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যায়।

—ওর কথায় কিছু মনে করো না। আসলে আজকে ওর বোনের জন্মদিন তো সেই জন্য আমরা কেক নিতে এসেছিলাম। তুমি দেরি করিয়ে দিলে তাই রেগে গেছে একটু।
সাদিয়া মায়ার কথায় অবাক হয়ে বলে,
—এটাকে একটু রেগে যাওয়া বলে। উনার চোখ দেখেই আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। মাগো মা কি রাগ।

—তার জন্য আমি দুঃখিত।

—আরে আপু তুমি কেন সরি ফিল করছো। ভুলটা আমার ছিলো। আমিই না দেখে অকাজটা করেছি। আমার সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।
সাদিয়ার কথায় মায়া একটা কিউট হাসি দিয়ে আরনাফের পিছু পিছু চলে গেলো।
মায়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সাদিয়া বললো,
—আপুটা কতো ভালো আর এই ব্যাটা এত্তো বজ্জাত। আমি তো সরি বলেছিলাম নাকি।কিন্তু নাহ্ তার তো বকা দেওয়া লাগবে আর ঝগড়া বাধানো লাগবে। ব্যাটা বিশ্ব খারুস।অসহ্য একেবারে।
আকারণেই যেন মায়াকে ভালো লেগে গেলো সাদিয়ার। এটা তার পুরোনো আভ্যাস। কাউকে তার অকারণেই ভালো লাগে যেমন তেমনি অকারণে অসহ্যও লাগে। বাজে অভ্যাস তাই না?

এবার সে আদিবার দিকে তাকিয়ে বললো,
—আজকে কি আদিত্য ভাইয়া আসবে নাকি এভাবেই বসে থাকবো।

আদিবা নখ কামড়াতে কামড়াতে বললো,
—আজকে যদি ওই রামবলদ না আসে তাহলে ব্রেক আপ।

আদিবার কথায় সারা বলে,
—আদিত্য ভাইয়ার সাথে তোর প্রতিদিন কতবার ব্রেকআপ হয়?

আদিবা একটা ইনোসেন্ট হাসি দিলো। কিছু বলতে যাবে তার আগেই হুড়মুড় করে আদিতয় ঢুকলো। তাকে দেখেই আদিবা রেগে তার দিকে তাকালো তা দেখেই আদিত্য কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে বললো,
—আ..আসলে আমি আগেই আসতাম কিন্তু..

আদিবা ভ্রু দুটো যথাসম্ভব কুঁচকে বললো,,
—কিন্তু?

আদিত্য আরো কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে বললো,,
—কিন..কিন্তু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

আদিত্যর কথায় সাদিয়া আর সারা শব্দ করে হেঁসে উঠে। ওই দিকে আদিবা আদিত্যর দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে,
—একে দেখে কে বলবে যে ও একজন মেডিকেল টপার? এতো ঘুমকাতুরে হয়েও কিভাবে মেডিকেলে ভর্তি হতে পেরেছে কে জানে? ভর্তি হয়েছে তো হয়েছে মেডিকেলে নিজের স্টুডেন্ট জীবনও তার শেষ প্রায় এক বছর! এই ছেলেকে কি আমি সাধে রামবলদ বলি। ঘুমের কাছে তার পুরো পৃথিবী ফিকে। এতো ঘুম আসে কই থেকে এই ছেলের?

আদিত্য আসহায় বাচ্চার মতো আদিবার দিকে তাকিয়ে আছে। আদিত্যর মুখ দেখে আদিবার প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে। বাচ্চা ছেলের হাত থেকে কেউ তার প্রিয় জিনিস নিয়ে গেলে তার মুখ যেমন দেখতে লাগে আদিত্যর মুখটা দেখতে এখন অনেকটা ওই রকম লাগছে। আদিবা কোনো রকম নিজের হাসি আটকে আদিত্যকে গিফটা দিলো আর কেকটা কাটতে বললো। আদিত্যও কোনো কথা না বাড়িয়ে কেকটা কাটলো। কিছুক্ষণ মজা মস্তি করে সাদিয়া আর সারা চলে গেলো। আদিবা আর আদিত্য কিছুক্ষণ রাতের শহরে ঘুরতে চায় বলে তাদের একা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

#চলবে…..ইনশাআল্লাহ
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা কেমন হয়েছে নিজের মতামত জানাতে ভুলবেন না যেন❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here