আমার গল্পে তুমি পর্ব-৮

0
1610

#আমার_গল্পে_তুমি
//পর্ব-৮//
#সাদিয়া

আশাকে মেহেদী কৌশলে বাসা থেকে নিয়ে এসেছে মার্কেটে যাওয়ার বাহানা দিয়ে। আরনাফের কড়া আদেশ সে না বলা পর্যন্ত আশা যেন বাসার চৌকাঠে পা না রাখে।
আরনাফ মায়া আর আফিয়া মিলে বাসাটাকে খুব সুন্দর করে ডেকোরেট করে বেলুন দিয়ে।
—ভাবি কি এখনও বাচ্চা?

মায়ার আচমকা প্রশ্নে চমকে যায় আরনাফ। সে ভ্রু কুঁচকে বললো,
—কেন বলো তো?

—এই যে ঘরটা এতো সুন্দর করে বেলুন দিয়ে সাজিয়েছো। তাই আরকি।

—শোন একটা মানুষের বয়স বাড়ে বার্ধক্য আসে এটা প্রাকৃতিক নিয়ম। বয়স বাড়লে শারীরিক পরিবর্তন আসে। কিন্তু তার মনের মধ্যে কোথাও একটা বাচ্চা লুকায়িত থাকে। বয়স হয় শরীরের মনের হয়। তার চালচলনে হয়তো তার তা প্রকাশ পায় না তাই বলে এই নয় যে তার নিজের শৈশবে ফিরে যেতে মন চায় না। বুঝলে মিস মহোমায়া!

আরনাফের ব্যাখ্যা শুনেই মায়ার মনটা কেমন জেনো ভালো হয়ে গেলো। মায়া এক দৃষ্টিতে আরনাফের দিকে তাকিয়ে আছে। আর আরনাফ মন দিয়ে কাজ করছে। আফিয়া তাকে এটা সেটা এগিয়ে দিচ্ছে। আরনাফের আশেপাশে থাকলেই মায়ার মনটা কেমন যেন করে উঠে। খুব অন্য রকম একটা অনুভূতি কাজ করে মনের মধ্যে। এই অনুভূতি গুলোর মানে মায়া আগে না বুঝলেও এখন তার কাছে কারণ স্পষ্ট। আরনাফকে সে দেখেছিলো নিজের বিশ তম জন্মদিনে। সে যেদিন আরনাফকে প্রথম দেখে ছিলো সেদিনই কেমন একটা ভালোলাগা ছেয়ে গেছিলো যুবতী মায়ার মনে। আরনাফের সব কিছুই মায়ার ভালো লাগে। এই যে আরনাফ এখন তাকে মহোমায়া বলে ডাকল তখন তার মনের মধ্যে বয়ে যায় এক অদ্ভুত প্রশান্তি।আরনাফকে নিয়ে অদ্ভুত আর উদ্ভট কথা চিন্তা করতে করতে আজান্তেই যুবতীর ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠতো সরু হাসির রেখা। সময়ের সাথে পাল্লা দিতে দিতে ভালোলাগা বাড়তে থাকে আর প্রগাঢ় হতে থাকে অনুভূতি গুলো। কবে যে ভালোলাগা ভালোবাসাতে বদলে গেলো মায়া ক্ষুন্নক্ষরেও টের পেলো না। এসব ভাবতেই মায়া হেঁসে উঠে।

—আর ইউ ওকে মহোমায়া? এমন একা একা হাসছো কেন?
আরনাফ মায়ার বাহুতে ছুড়ির নিজের অংশ দিয়ে খুঁচা দিয়ে জিজ্ঞেস করে।

—আব..হ্যাঁ আমার আবার কি হবে।

আরনাফ সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বললো,
—কিছু হয়নি বলছো?

এবার মায়া কিছুটা ঘাবড়ে গেলো। একটা মেকি হাসি বললো,
—আ’ম এবস্যুলেটলি ফাইন আরনাফ আমার কিছু হয় নি।

—অহ্।
বলে আরনাফ আবারো নিজের কাজে মন দিলো। মায়া যেন হাফ ছেড়ে বাচঁলো।

পুরো বাসা ডেকোরেট করা শেষ হলে আরনাফ মেহেদীকে এসএমএস করে আাশাকে নিয়ে আসতে বললো। আশা রুমে ঢুকতেই তার উপর স্প্রের বর্ষণ হতে লাগলো।এক মূহূর্তের জন্য যেন আশা ফ্রিজড হয়ে গেলো। এতো সুন্দর সারপ্রাইজ দেখে আবেগে আশার চোখে পানি এসে গেছে।সে আরনাফকে জড়িয়ে ধরলো।
—হয়েছে হয়েছে আমার শার্টের ইস্ত্রি খারাপ না করে এখন কেকটা কাটতো দেখি।
আশা আটনাফের বাহুতে হালকা চাপর দিয়ে কেক কেটে সবাইকে এক এক করে খাইয়ে দিলো। হাসি আনন্দে তারা সবাই মিলে আশার জন্মদিন পালন করলো।
.
আজ শুক্রবার। সাদিয়াদের বাসায় সকাল থেকেই ব্যস্ততা। বাড়ির একমাত্র ছেলের এনগেজমেন্ট বলে কথা কোথাও কোনো কমতি রাখা চলে নাকি। সাদিয়ার মায়ের সকাল থেকে এক দন্ড থামার জো নেই। তিনি কাজ করছেন আর বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছেন। শান্ত বলেছে সাদিয়া আজকে আসবে তারই অপেক্ষা তিনি করছেন। কতোদিন হয়ে গেলো মেয়েটাকে দেখেন না যদিও রোজ ফোনে কথা হয়। তবুও মায়ের মন কি শান্ত হয়।

—আম্মু..আম্মু..

—আহ্ এভাবে চেচাচ্ছিস কেন ষাঁড়ের মতো?
বেশ বিরক্তি নিয়ে কথাটা বললো শান্তর মা মিসেস আফরোজা ইসলাম।

—তুমি আমায় ষাঁড় বললা?

—তো কি করবো তুই এভাবে চেচাচ্ছিস কেন?

—তো চেঁচাবো না। তোমাকে কখন থেকে ডাকছি তুমি শুনছোই না।

—ডাকছিলি? কেন ডাকছিলি?

—আমি একটা পাঞ্জাবিও সিলেক্ট করতে পারছি না। একটা সিলেক্ট করে দাও তো?

শান্তর কথা শুনে মিসেস আফরোজার চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। এই ছেলের নাকি বিয়ে। এখনও একটা পাঞ্জাবি সিলেক্ট করতে পারে না অথচ বউ সিলেক্ট করে বসে আছে। যত্তসব।

—তুই কি পাঁচ বছরের বাচ্চা যে আমি তোর পাঞ্জাবি সিলেক্ট করে দেবো?

—এমন করো কেন? পারি না বলেই তো তোমাকে বলছি।

—আমি পারবো না। তুমি যথেষ্ট বড় হয়েছো এখন দুদিন পর বিয়ে করবে বউ আসবে এখনও নিজের বিষয়ে এতো উদাসীন কেন তুমি?

শান্ত কোনো কিছু না বলে মুখ গোমড়া করে প্রস্থান করলো। শান্তর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মিসেস আফরোজা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার পিছু পিছু ছুটলো। কারণ তিনি জানেন তিনি পাঞ্জাবি বের না করে দিলে শান্ত তৈরি হবে না।

🍁
বাড়ির মেইন গেটের সামনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো সাদিয়া। আজ বহুদিন পর পা রাখছে সে এই বাড়িতে। মাঝে মাধ্যে আদিদের বাড়িতে যাওয়া হলেও এই বাড়িতে তার আসা একদমই হয় না। শত ইচ্ছে থাকলেও এখানে তার আসা হয় না। এতো আপমান যে সে মেনে নিতে পারে না। মাঝে মাঝে সাদিয়া বুঝে পায় না এতো কিছুর মাঝে তার দোষটা কোথায়! তার কষ্ট গুলো যেন কারো চোখে পড়ে না। সব সময় বিয়ে বিয়ে করতে করতে মাথা খারাপ করে রেখে দেয়। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাদিয়া বাড়ির দিকে পা বাড়ালো।
কলিং বেল বাজতেই মিসেস আফরোজা শাড়ির আঁচলে নিজের ভেজা হাত মুছতে মুছতে এগিয়ে গেলেন দরজার কাছে। দরজা খুলতেই তার চোখ স্থির হয়ে গেলো। এক দৃষ্টিতে তিনি তাকিয়ে আছেন সাদিয়ার দিকে।কতোদিন পর তিনি দেখছেন মেয়েকে।
—কেমন আছো আম্মু?

সাদিয়ার কথায় ঘোর ভাঙে তার। তিনি সযত্নে মেয়েকে বুকে জরিয়ে নিলেন। সাদিয়াও মাকে জরিয়ে ধরলো। ইশশ কতো দিন পর মায়ের উষ্ণতা পেলো সে।

—কেমন আছিস মা?

—আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো?

—তোকে দেখে ভালো হয়ে গেছি।

আলতো হাসলো সাদিয়া।
—আব্বু কোথায় দেখছিনা যে।

—তোর আব্বুর কথা আর বলিস না। সকাল থেকে চার কাপ চা সাবার করেছে। আবার যখন চেয়েছে দেই নি ওমনি গাল ফুলিয়ে বেরিয়ে গেছে বাহিরে চা খেতে।

মায়ের কথায় সাদিয়ার মাথায় হাত। এখন মাত্র সকাল দশটা এরই মধ্যে চার কাপ চা শেষ করে আরো চাচ্ছে।

—আম্মু আব্বু তো আগে এতো চা পাগল ছিলো না। কি হলো বলো তো?

—কি আর হবে বুড়ো বয়সে ভিমরতি হয়েছে আর কি হবে। যত্তসব আমার হয়েছে যত জ্বালা।

মায়ের কথায় প্রথমে ঘাবড়ে যায় সাদিয়া পরে নিজেকে সে সামলে নেয়।

—কিরে বুড়ি কেমন আছিস?

—আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো?

—আমি মাস্ত।

—পড়ালেখার কি খবর তোর? ক্লাস ওয়ার্ড মিলিয়ে ব্যস্ততা কেমন?

—আর বলো না এতো প্যারা সামলাতে সামলাতে আমি শেষ। একটু ফুরসত নেই।

—সামলেনে আর তো মাত্র কটা দিন।

—হ্যাঁ সেই এগুলো শেষ হলে বাঁচি।

মিসেস আফরোজার ডাক পড়লে দুই ভাই বোনের কথার সেখানেই সমাপ্তি ঘটে।

.
ড্রয়িং রুমে চলছে জোরদার আড্ডা। এই আড্ডায় বসে বসে রীতিমত বিরক্ত হচ্ছে শান্ত। সে বুঝতে পারছে না সারার পরিবার এখানে আড্ডা দিতে এসেছে নাকি নিজের মেয়ের বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে। আর আড্ডা তো যে সে আড্ডা নয় একেবারে জমিয়ে আড্ডা যাকে বলে। আর আড্ডার টপিক! সারার বাবার কোন দূর সম্পর্কের খালাতো ভাইয়ের বন্ধুর বিয়ের অনুষ্ঠানে তারা কিভাবে বউয়ের বাড়ির মুরগী চুরি করেছিলো তাই বলা হচ্ছে! ভাবা যায়। এতো বোরিং টপিকে আড্ডা দিতে শান্ত তার ইহজীবনে কাউকে দেখেনি। সারাকেও আশেপাশে দেখা যাচ্ছে না। যাবে কি করে সে তো বান্ধবী পেয়ে সব ভুলে বসে আছে। শান্তর বিরক্তি তরতর করে বেড়ে চলেছে। বিরক্তিতে তার এখন চেঁচাতে মন চাইছে। কিন্তু নাহ্ সে এমন কিছু করলো না। বরং সে চুপচাপ বোরিং আড্ডায় বেদনাদায়ক একেকটা হাসি দিতে লাগলো।

#চলবে….ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here