#আমার_গল্পে_তুমি
//পর্ব_৯//
#সাদিয়া
প্রেম হচ্ছে এক প্রকার নেশা। পৃথিবীতে প্রেমে পড়ার মতো মধুর অনুভুতি অন্য কোনো কিছুতে হতো পারে না। তবে এক বারে প্রেমে পড়ার চেয়ে ধীরে ধীরে, আস্তে আস্তে প্রেমে পড়ায় মজা বেশি। এক্ষেত্রে আপনি বুঝতে পারবেন আপনি ধীরে ধীরে অতল সাগরে তলিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু আপনার কিছু করার থাকবে না। প্রেমে পড়ার সকল সাইড ইফেক্ট জানা সত্ত্বেও আপনি এর থেকে দূরে যেতে পারবেন না। শত চেষ্টা করেও পারবেন না।
শান্ত খুব অদ্ভুত ভাবে সারার প্রেমে পড়েছিলো। তখন সে কানাডায় থাকে। সবে মাত্র মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে। একদিন সাদিয়ার আইডি থেকে মাই ডে তে দুটো ছবি দেওয়া হয়। দুটোর একটা ছবিতে একজন মেয়ের একটা চোখ দৃশ্যমান। এই চোখ দেখেই প্রথম শান্তর মনে প্রেমের দোলা লেগেছিলো। উঠতে বসতে ওই চোখ তাকে বিরক্ত করতো। না সে ঘুমিয়ে শান্তি পেতো আর না জেগে থেকে। সাদিয়ার আইডিতে তখন প্রায়শই ওই মেয়ের ছবি দেখতে পেতো শান্ত যদিও মুখ সম্পূর্ণ দেখতে পেতো না তবুও বুকের বা পাশে দোলা ঠিকই লাগতো।
শান্ত অস্বস্তি নিয়ে একদিন সাদিয়াকে ছবির মেয়েরটির কথা জিজ্ঞেস করতেই সাদিয়া শান্তকে সারার কথা বলেছিলো। শান্ত তখন কৌশলে সাদিয়ার থেকে সারার নম্বর আদায় করে নেয়। ব্যাস কাজে লেগে পড়ে সে। এর কিছু দিনের মধ্যেই সে সারাকে নিজের মনের কথা বলেছিলো। সারা প্রথমে রাজি হয়নি শান্ত তাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে রাজি করিয়েছিলো।
ছাঁদে দাঁড়িয়ে পুরোনো দিনের কথা ভাবছে শান্ত। সে সারাকে বড্ড বেশি ভালোবাসে। তার জীবনে ভালোবাসার মানুষের সংখ্যা খুব কম। ছোটবেলায় বাবা-মা হারিয়ে চাচা-চাচীর সংসাররে জায়গা হয়েছে তাদের। চাচা-চাচী না থাকলে হয়তো তারাও থাকতো না। চাচা-চাচী আর বোনের পরে সারা শান্তর জীবনে নিজের জায়গাটা পাকাপোক্ত করে নিয়েছে খুব ভালো ভাবে।
—কি ভাবছো?
কারো কথায় ভাবনার ছেদ ঘটে শান্তর। পাশে তাকিয়ে দেখে সারা হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
—ভাবছি তো কতো কিছুই। তুমি কোনটা শুনতে চাইছো?
—আমি আপাতত একটাও শুনতে চাইছি না। শুনো বিয়ের ডেড কিন্তু বেশি দূরে না। শপিং করা আমরা কালকে থেকেই শুরু করবো।
—কালকে থেকেই?
—হ্যাঁ। তুমি জানো কতো কিছু কিনতে হবে?তাই আগে থেকেই শুরু করতে হবে। তুমি কিন্তু ছুটি নিবে বলে দিলাম।
—শপিংয়ে যাওয়ার জন্য ছুটি নেওয়ার কি আছে? এক ঘন্টায় পুরোশপিং মল কিনে ফেলা যায়।
শান্তর কথায় সারা বোকা বোনে যায়। এই ছেলে এক ঘন্টায় বিয়ের শপিং করবে।সিরিয়াসলি! সারাকে এমন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে শান্ত বলে,
—এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
—না ভাবছি।
শান্ত এবার সারাকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলে,
–কি ভাবছো?
—তোমার কতো ট্যালেন্ট।
—মানে?
—মানে তুমি একঘন্টায় বিয়ের শপিং কমপ্লিট করার কথা ভাবছো!
—হ্যাঁ তো কি হয়েছে এতে?
—জনাব সব কিছু এতো সহজ না।
শান্ত সারার চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে বলে,
—আপনি আছেন তো সব কিছু সহজ হয়ে যাবে।
—তাই?
শান্ত কিছু বলতে যাবে তার আগেই ছাঁদে আগমন ঘটে সাদিয়ার।
—ভাই….য়াআ। সরি সরি আমি কিছু দেখি নি।
শান্ত আর সারা তড়িৎগতিতে দূরে সরে যায় ।সাদিয়াকে দেখে সারা লজ্জায় শেষ।ইশ!এই মেয়ে এখন তার ইজ্জতের ফালুদা বানাবে।
সাদিয়া দাঁত কেলিয়ে সারার দিকে তাকিয়ে শান্তকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—ভাইয়া কি করছিলে? রোমান্স করছিলে বুঝি রোমান্স?
শান্ত সাদিয়ার কান টেনে দিয়ে বলে,
—অসভ্য মেয়ে মুখে কিছু আটকায় না।
—বাহ্ রে তোমরা রোমান্স করতে পারো আর আমি বললেই দোষ। নট ডান ভাইয়া।
—আমি কি পাশের বাসার ভাবির সাথে রোমান্স করছিলাম নাকি। করছিলাম তো নিজের হবু বউয়ের সাথেই নাকি।
—ভাইয়া সারা এখনো তোমার বউ হয় নি সো এখন নো রোমান্স।
—ইশশ বললেই হলো নাকি। আমার বউয়ের সাথে আমি যা খুশি করতে পারি।
সাদিয়া দাঁত কেলিয়ে বললো,
—হ্যাঁ পারো শুধু রোমান্স ছাড়া।
সারা আর এখানে দাড়াতে পারলো না। সে দ্রুত ছাঁদ থেকে নেমে গেলো। এদের ভাই বোনের মুখে লাগাম নেই কোনো। সারা চলে যেতেই সাদিয়া শান্তর দিকে তাকিয়ে বলে,
—তোমার হবু বউ লজ্জা পেয়েছে। হিহিহি।
—তুই অনেক দুষ্টু হয়ে গেছিস।
—তাই?
—হু।
—আমি ভালো ছিলাম কবে।
বলেই এক দৌড় দিলো সাদিয়া। সাদিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হেঁসে উঠে শান্ত। আজকে অনেকদিন বাদে নিজের বোনকে এমন হাসিখুশি দেখছে। বোনকে হাসিখুশি দেখে শান্তর মনে এক প্রশান্তি বয়ে গেলো।আদির মৃত্যুর পর মেয়েটাতো হাসতেই ভুলে গেছে। শান্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
—আদি! কেমন আছিস? নিশ্চয় অনেক ভালো আছিস, তাই না? জানিস তোকে খুব মনে পড়ে রে। খুব মনে পড়ে। তোকে একবার জরিয়ে ধরার তীব্র ইচ্ছা কাজ করে মনের মধ্যে। কিন্তু তা তো সম্ভব নয়। তুই এতো স্বার্থপর কেন রে? চলে গেলি দূরে। কেন চলে গেলি? তুই জানিস তুই একটা উচ্চমানের বেইমান। তুই আমাকে কথা দিয়ে ছিলি তুই আমার বোনকে কখনো কাঁদাবি না। অথচ দেখ আজ আমার বোনের চোখের প্রতিটি অশ্রু কণার একমাত্র কারণ তুই। কথা দিয়ে কথা রাখিস নি তুই। তুই আমার বিশ্বাস ভেঙেছিস। তুই খুব খারাপ। খুব খারাপ তুই। আই জাস্ট হেইট ইউ।
বলতে বলতেই শান্তর গাল ভিজে গেলো।আদির মৃত্যুতে শান্ত শোক পালনের সু্যোগ পায়নি। তাকে একা হাতে সবকিছু সামলাতে হয়েছে। যেহেতু আদির লাশ বাংলাদেশে পাঠানো হয়নি তাই তাকেই কানাডাতে সবকিছু করতে হয়েছে। এক্সিডেন্টে আদির চেহারা পুরোপুরিভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।চেহারা দেখে চেনার কোনো উপায় ছিলো না। আদির সাথে থাকা মেডিকেল আইডি কার্ডের সাহায্যে তার লাশ শনাক্ত করতে হয়েছিলো। যার সবটাই শান্ত নিজে করেছে।
শান্ত বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে চোখের পানি মুছে ছাঁদ থেকে প্রস্থান করলো। নিচে যেতেই শান্তর চক্ষু চড়কগাছ। সে কি আদো ঠিক দেখছে? নাকি এটা তার মনের ভ্রম? হ্যাঁ ভ্রমই হবে। আবার সত্যিও হতে পারে!
সাউন্ড বক্সে জোরে জোরে গান বাজছে “ম্যারা সাইয়্যা সুপারস্টার ” আর গানের তালে তালে সাদিয়া সারা নেচে চলেছে। না না এগুলোকে নাচ বললে ভুল হবে। ভুল নয় অন্যায় হবে গুরুতর অন্যায়। কারণ এগুলো কোনো নাচের কাতারে পরে বলে শান্তর মনে হচ্ছে না। সাদিয়া আর সারাকে দেখে মনে হচ্ছে বর্ষা কালে বৃষ্টির পানিতে ব্যাঙ লাফাচ্ছে। শান্তর প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে এদের এমন ভাবে লাফাতে দেখে। এরা এমন ভাবে লাফাচ্ছে যদি টাইলসে স্লিপ করে পরে যায় তাহলে হাড় একটাও আস্ত থাকবে না। শান্ত আস্তে করে গিয়ে সাউন্ড বক্সটা বন্ধ করে দিলো। গান বন্ধ হয়ে যেতেই সাদিয়া আর সারা নাচও বন্ধ হয়ে গেলো। সারা হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
—এই সাদি গান কে বন্ধ করলো?
—আমি কি জানি কে বন্ধ করেছে।
—আমি বন্ধ করেছি।
তৃতীয় কোনো ব্যক্তির আওয়াজে দুজনেই পিছনে তাকালো। শান্ত পকেটে হাত ঢুকিয়ে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শান্তকে দেখে দুজনেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।
— কেন বন্ধ করলা।
—তোমরা দুজন এমন ব্যাঙের মতো লাফাচ্ছো কেন?
—কি! আমরা ব্যাঙের মতো লাফাচ্ছি?
—হ্যাঁ। কেন তোমরা কি নিজেদের বাদর মনে করেছিলে নাকি?
শান্তর কথায় রাগে সারার কান দিনে যেন ধোঁয়া বের হচ্ছে। সারা রেগে শান্তর চুল টেনে ধরলো।
—আরে কি করছো? চুল ছাড়ো আমার।
—তোমার এতো বড় শাহস তুমি আমাদের ব্যাঙ আর বদরের সাথে তুলনা করো।
—আচ্ছা বাবা সরি আর বলবো না। এখন চুল ছাড়ো। এই সাদু সারাকে বল না চুল ছাড়তে।
এবার সাদিয়া সারার হাত থেকে শান্তর চুল ছাড়াতে ছাড়াতে বলে,
—সারু ছাড় ভাইয়ার চুল। ভাইয়া আর বলবে না কিছু।
সারা এবার শান্তর চুল ছেড়ে দিয়ে বলে,
—মনে থাকে যেন কথাটা।
শান্ত মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
—ইশশ আমার মাথার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে একেবারে।
সারা কিছু না বলে একটা মুখ ভেঙছি দিয়ে চলে যায় আর শান্ত তার যাওয়ার দিকে মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে থাকে।
#চলবে…..ইনশাআল্লাহ