আমার বোনু পর্ব-১৪

0
1921

#আমার_বোনু
#Part_14
#Writer_NOVA

আদিল পানির গ্লাস আর ঔষধ এনে অথৈ এর দিকে বাড়িয়ে দিলো। কিন্তু মুখে কোন কথা বললো না। অথৈ কান্না চোখে ওর দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে রাখলো। সে ঔষধ খাবে না এমন একটা ভাব। আদিল পাশে বসে জোর করে ঔষধগুলো খাইয়ে দিয়ে বললো,

— নিজেকে কষ্ট দিতে ইচ্ছে হলে দিতে পারো। তবে একটা শর্ত আছে। আমার বাচ্চার কোন ক্ষতি যাতে না হয়। যদি তোমার কারণে ওর অসুবিধা হয় তাহলে তোমার খবর আছে।

অথৈ ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদতে লাগলো। কয়েকদিন যাবত অথৈ এর ওপর আদিল পূর্বের থেকে বহুগুণ বেশি যত্নশীল হয়ে গেছে। কিন্তু মুখে বেশি একটা কথা বলে না। বললেও গম্ভীর কন্ঠের কাঠ কাঠ জবাব। আদিল খালি গ্লাসটা হাতে নিয়ে চলে যেতে উদ্যত হলে অথৈ থমথমে কন্ঠে বললো,

— আমাকে কি মাফ করে দেয়া যায় না?

আদিল পেছন ফিরে বললো,
— ঘুমানোর সময় হয়েছে ঘুমাও।

— তুমি আমার কথার উত্তর দাও।

— আমি আবারো বলছি অথৈ। তুমি প্রেগন্যান্ট। তাই আমি তোমাকে এতো সেবাযত্ন করছি। নয়তো আমি যে কি করতাম নিজেও জানি না। তোমার কাছে একটাই অনুরোধ তুমি আমার বাচ্চার ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ করো না। তাহলে কিন্তু অনেক খারাপ হয়ে যাবে।

— আদি প্লিজ আমাকে একটা সুযোগ দাও।

আদিল ভ্রুকুটি কুঁচকে বললো,
— তোমাকে তো আমি সুযোগ দিয়েছিই অথৈ। আমি বলেছি তোমায় ডিভোর্স দিবো না। তোমায় আগের থেকে বেশি যত্ন নিবো। সেটা অবশ্য আমার বাচ্চার জন্যই। তবে তোমার সাথে আমার প্রয়োজন ছাড়া কোন কথা হবে না। তুমি আমায় চোখের সামনে দেখতে পারবে কিন্তু ছুঁতে পারবে না। এটাই তোমার শাস্তি। তবে তুমি ডিপ্রেশনে গিয়ে আমার বাচ্চার কোন সমস্যা করতে পারবে না।

অথৈ করুন সুরে ডেকে উঠলো,
— আদি!

আদিল হালকা ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো,
— বোন তার ভাইকে ভাবীর কাছ থেকে নিয়ে যাবে। বিষয়টা কিন্তু একেবারে অযাচিত ও অযৌক্তিক। অথচ তোমায় এমনভাবে কানপড়া দিয়েছে যে তুমি সেই বিষয় নিয়ে মাতামাতি শুরু করে দিয়েছিলে। তোমার কি সামান্য কমন সেন্স নেই? ওহ থাকবে কি করে? তুমি তো তখন হিতাহিত জ্ঞনশূন্য হয়ে গেছো। কথা বাড়িয়ো না। চুপচাপ শুয়ে পরো।

আদিল কিছু দূর গিয়ে আবার ফিরে এসে বললো,
— তবে একটা কথা জানো কি অথৈ? মেয়েরা মেয়েদের বড় শত্রু। কথাটা মানুষ এমনি এমনি বলে না। আমি তার প্রমাণ পেয়ে গেলাম। তোমার বান্ধবীর না তোমার সুখটা সহ্য হচ্ছিলো না৷ তাই তোমাকে এমন কানপড়া দিয়েছে। আর তোমার নিজেরো বোধহয় সহ্য হচ্ছিলো না। ঐ যে একটা প্রবাদ আছে না, “সুখে থাকতে ভুতে কিলায়”।তোমাকেও ভুতে কিলিয়েছে। তোমার মাথা থেকে ভুত নামানোর জন্য আমাকে তো এতটুকু স্টেপ নিতেই হবে।

অথৈ ঠোঁট চিপে কান্নাটা আটকে নিলো। পাশ ফিরে শুয়ে পরলো। আদিল খালি গ্লাস নিয়ে নিচে চলে গেলো। কিছু সময় পর এসে দেখে অথৈ ঘুমিয়ে গেছে।আদিল এগিয়ে এসে অথৈর শরীরে কাঁথা টেনে দিলো। তারপর লাইট বন্ধ করে অথৈ কে জড়িয়ে ধরে সেও শুয়ে পরলো।

— মাসফি বস!

জিকু ডাকতেই মাসফি নামের ছেলেটা ফাইলের থেকে চোখ তুলে তাকালো। প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

— কিছু বলবে?

জিকু মাথা ঝাঁকালো। মাসফি কপাল কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। জিকু যেই মুহুর্তে মুখ খুলবে সেই মুহুর্তে সে বললো,

— জিকু, তোমায় একটা কাজ দিয়েছিলাম আমি।

জিকু দ্রুত উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে বললো,
— সেই কাজের কথা বলতে এসেছিলাম আমি।

মাসফি নড়েচড়ে বসলো। চেয়ার ডানে-বামে নাড়াতে নাড়াতে বললো,
— হুম বলো।

জিকু দম ছেড়ে বললো,
— মির্জাদের একমাত্র দূর্বলতা তাদের বোন। পাঁচ ভাইয়ের একমাত্র বোন। বোনকে তারা নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। বোনের দিকে যারা বাজে দৃষ্টিতে তাকাবে তার চোখ উপড়ে ফেলতে দ্বিতীয়বার ভাববে না।

মাসফি মুখে রহস্যময় হাসি টেনে বললো,
— আই লাইক ইট।

জিকু মাসফির কথা শুনতে পায়নি। তাই একটু জোরে চেচিয়ে বললো,
— জ্বি বস! কিছু বললেন?

মাসফি টেবিল থেকে পেপারওয়েটটা নিয়ে চেয়ার থেকে উঠে গেলো। পেপারওয়েট ওপরে ছুঁড়ে দিয়ে আবার হাতের মুঠোয় পুরে নিয়ে খেলতে লাগলো। কাচের দেয়ালের সামনে গিয়ে বাইরের ঘন অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবলো। সাথে সাথে বাইরের নিকেষ কালো আধারের মতো তার মুখটাও আঁধারে ছেয়ে গেলো। মুখ শক্ত করে বিরবির করে বললো,

— যেই আগুনে আমি এতদিন পুড়েছি তোরাও সেই আগুনে পুরবি। যাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।

কথাগুলো বলতে বলতে বাম হাতটা কাচের দেয়ালের ওপর রাখলো। মুখটা তার রাগে রক্তিম বর্ণ ধারণ করছে। জিকু এক পলকে মাসফির দিকে তাকিয়ে রইলো৷ তার বসের মতিগতি সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না। হঠাৎ তাদের রুমের দরজায় এক মহিলা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে বললো,

— মাসফি বাবা, অদিতি মায় অনেক পাগলামি করতাছে। ওরে কিছুতেই থামান যাইতাছে না।

মাসফির রক্তিম বর্ণ মুখে নিমিষেই চিন্তার ভাজ পরলো। পেপারওয়েটটা ছুঁড়ে জিকুর হাতে দিলো। জিকু অল্পের জন্য ক্যাচ মিস করতো। আর ক্যাচ মিস হলে পুরো নাক ফাটতো। কারণ মাসফি না দেখেই জিকুর নাক বরাবর পেপারওয়েটটা ছুঁড়ে মেরেছিলো। পেপারওয়েট ছুঁড়ে মাসফি এক সেকেন্ডও দেরী করেনি৷ দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেছে।

কলেজ ছুটি দিয়েছে আধা ঘণ্টা হবে। এখনো ঊষাকে নিতে কেউ আসেনি। ঊষা বিরক্তিতে কলেজ গেইটের সামনের দিকে পায়চারি করছে। তার ইচ্ছে করছে পায়ে হেঁটে কিংবা রিকশা করে বাসায় চলে যেতে। বাসের কথা একবার মনে আসতেই সেদিনের কথা ভেবে আৎকে উঠলো। তারিন ওর সাথে রাগ করে কলেজ আসেনি। ও থাকলে দুজন বকবক করতে করতে যাওয়া যেতো। ঊষা বিরক্তি নিয়ে এদিক সেদিক তাকালো৷ কলেজ পুরো ফাঁকা।

হঠাৎ ঊষার মনে হলো সে রূপান্তিকে দেখলো। কিন্তু রূপান্তি ওকে দেখে মাথা নিচু করে অন্য দিক দিয়ে চলে গেলো। ঊষা কিছুই বুঝলো না। রূপান্তির এমন ব্যবহারে সে অবাক হয়ে আপনমনে বললো,

— এই রূপান্তি এত ভালো কবের থেকে হলো🤷‍♀️?

রূপান্তিকে নিয়ে বেশি ভাবলো না। তার এখানে একা দাঁড়িয়ে থাকতে একটু ভয় ভয় করছে। উত্তর দিকের দেয়ালের পাশে বখাটেদের দেখা মিলে। দিনে-দুপুরে জুয়া খেলা, গাঁজা খাওয়া আর মেয়ে দেখলে উত্যক্ত করা এদের প্রধান কাজ।রাস্তার ডান পাশ, বাম পাশ আবারো দেখলো। না, কোন ভাইয়ের আসার নাম-গন্ধ নেই। মোবাইল বের করে অরূপের নাম্বার ডায়াল করলো। অপরপাশ থেকে শোনা গেলো,

— আপনি যেই নাম্বারে ডায়াল করেছেন তা এই মুহুর্তে ব্যস্ত আছে। অনুগ্রহ করে একটু পর আবার চেষ্টা করুন।

ঊষা চরম বিরক্তিতে মোবাইল বন্ধ করে দিলো। সিদ্ধান্ত নিলো একাই চলে যাবে। গটগট পায়ে হাঁটতে লাগলো। কিছু দূর পর ঠাওর করতে পারলো সে কতবড় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেয়ালের পাশ ঘিরে যাওয়ার সময় বখাটে ছেলেদের নজর পরে যায়। দুপুরের প্রখর রোদে রাস্তায় মানুষ নেই। মাঝে মাঝে দু-একটা রিকশা, গাড়ির শা গতিতে চলে যাচ্ছে। ঊষা ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে সামনে এগুতে লাগলো। কিন্তু বিধি বাম! ছেলেগুলো ওকে ঘেরা দিয়ে ফেললো। ঊষা ভয়ে এবার ঘামতে লাগলো। মনে মনে ভাবলো পিছিয়ে দিবে একটা দৌড়। তবে সেই সুবিধা করতে পারলো না। একটা ছেলে এসে ওড়না টেনে ধরলো।ঊষা মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে লাগলো। ঊষা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকাতে লাগলো। ছেলেগুলোর মধ্য একজন বিচ্ছিরি একটা হাসি দিয়ে ঠোঁট চোখা করে চুমু দেখালো। তখুনি পাশ থেকে একজন আগন্তুক বলে উঠলো,

— আরে বস আস্তে ওড়না ধরেন। মেয়েটা ব্যাথা পাচ্ছে তো।

লিডার দেখতে ছোকরাটা ভ্রু কুঁচকে ব্যক্তিটার দিকে তাকালো। যে ছেলেটা ঊষার ওড়না ধরেছে সেই ছেলেটাকে আগুন্তক ছেলেটা এক পলক দেখে নিলো। লিডার ছোকরাটা তার সাথের জনকে বললো,

— দেখতে নিরইব্বা কে আইছে।

নিরব নামের ছেলেটা দৌড়ে সেদিকে গেলো। ঊষা তাকিয়ে ছেলেটাকে দেখার জন্য উঁকি দিলো।তবে নিরবের কারণে মুখ দেখতে পারলো না। নিরব এগিয়ে গেলে সেই ব্যক্তিটা মুখের মধ্যে একটা পাঞ্চ মারলো।মুখ থুবরে নিরব পরে গেলো। আগুন্তক ভাব নিয়ে শার্ট ঝাড়া মেরে বললো,

— ত্যারা বাপ আয়া!

~~~রাখতে জানলে আর থাকার ইচ্ছে থাকলে কেউ কখনো হারায় না❤️।

কিছু কথাঃ
অনেকেই অথৈ-কে সাপোর্ট করছেন। বলছেন ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। আচ্ছা আপনাদের সাথে আমি একমত। ওকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। অবশ্যই ওকে সাথে সাথে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত ছিলো যদি সে প্রেগ্ন্যাসির কারণে এমনটা করতো তাহলে। অন্যের উস্কানিতে যে মেয়ে নিজের ননদের সাথে এমনটা করে তার কি আদোও এত সহজে ক্ষমা করা উচিত? অযাচিত একটা বিষয় নিয়ে মাতামাতি করাও বা ঠিক? “বোন তার স্বামীকে কেড়ে নিবে।” কথাটা একেবারে অযৌক্তিক নয় কি? জানেন এই টাইপের মেয়েদের জন্য যে একটা সুন্দর সংসার নষ্ট হয়ে যায়? যারা অন্যের উস্কানিতে একটা সুন্দর সংসারে অশান্তি লাগিয়ে ধ্বংস করে দেয়, তারাও বা কোন মন-মানসিকতার মানুষ? এখন যদি অথৈ এর এই অপরাধকে আদিল প্রশ্রয় দিতো তাহলেই তো সংসারটা ভেঙে যেতো। ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ্ব লেগে যেতো। আর আদিল তার স্ত্রীকে মূল্য দেয় না তাও বা আপনাদের আগ বাড়িয়ে কে বলেছে? আমি কিন্তু এই ঘটনার প্রথম দিকেই বলেছি আদিল তার স্ত্রীকে যথেষ্ট সময় দেয়, অনেক কেয়ারও করে।একটা পুরুষের কাছে বোনের জায়গায় বোন, স্ত্রীর জায়গায় স্ত্রী। কারো সাথে তো কারো জোড়া নয়। তবে একটা কথা সত্যি মাঝে মাঝে কিছু কুটনি টাইপের বোনের জন্য ভাবীর সংসার নষ্ট হয়। আবার কিছু কুটনি টাইপের ভাবীর কারণে বোন তার ভাইয়ের চোখের বিষ হয়। নিজের চোখেও এমনটা দেখেছি।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here