আমি সেই চারুলতা পর্ব-৩৮

0
1216

#আমি_সেই_চারুলতা
#Shuvra_Priya (স্নেহা)
#পর্বঃ৩৮
_______________________

মিলির চোখের সামনে রয়েছে তার নগ্ন ছবি। ছবিটি দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেলো সে। মিলি নিশ্চিত এমন কোন ছবিতে সে নেই। আর সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় ছবিগুলো সেন্ড করেছে অভি। অভির সাথে তার এখনো এমন কোনো সম্পর্ক হয়ে ওঠেনি, অভির বাবাবার জোড়াজুড়ির পরেও না। এরজন্য কয়েকবার বিচ্ছেদ হলেও মিলি কখনোই রাজি হয়নি। তবে এই ছবি? তবে অভি কি তাকে ধোকা দিলো? মিলি হন্তদন্ত হয়ে ফোন লাগালো অভিকে। বেশিক্ষণ সময় লাগলো না ফোনটা তুলতে।
– কেমন আছো বেবস? সব ঠিকঠাক তো?
– অভি তুমি! তুমি ওই ছবিটা কোথায় পেলে? আমার সরলতার এমন সুযোগ নিলে তুমি?
– শাট আপ মিলি। আমি কেনো তোমার সরলতার সুযোগ নেবো? তুমিই তো ছবিটা তুলে আমাকে পাঠিয়েছো।
– মিথ্যা বলবেনা অভি।
– মিথ্যা কেনো বলবো বলো তো? আচ্ছা তুমি আগে ছবিটা ভালোভাবে দেখো। দেখো ছবিটা তুমি নিজে তুলেছো।
মিলি স্তব্ধ হয়ে আবার লক্ষ্য করে ছবিটা সত্যিই তার হাতে তোলা। এমনকি ছবিটি নকলও নয়।
– কি হলো বেবস? দেখেছো?
– এখনই ছবি ডিলিট করো অভি।
– কেনো করবো? আমার যদি তোমাকে দেখতে ইচ্ছে হয় তবে আমি এই ছবিটি দেখবো।
– একদম বাজে বকবেনা। ছবিটি ডিলিট করবে কি না বলো?
– আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি এসে করে দিয়ে যাও।
– কোথায় আসবো?
– বাসায় চলে এসো।
মিলি সম্মতি জানিয়ে ফোন রেখে দিতেই হাসিতে গড়িয়ে পড়লো অভি এবং স্মৃতি।
– এই বোকা মেয়ের সাথে তুমি প্রেম করছো জেনেই আমার হাসি পাচ্ছে অভি।
– বাদ দাও। এতগুলো মেয়ে থাকতে তুমি মিলিকে টার্গেট করলে কেনো?
– সোনার রাজ্যে এক রানীই মানানসই।

অভির বাড়িতে যেতে হলে কিছু গলি ক্রস করতে হয়। গলি গুলো অতিরিক্ত নিরব। কাক পক্ষীও সেখান দিয়ে উড়ে যায়না। প্রতিবার অভিই এসে তাকে নিয়ে যায় তবে আজ সে আসেনি। মিলি ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেলো গলিটার ভেতর। গলির ভেতর দুজন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। মিলি হকচকিয়ে গেলো। ছেলেগুলো মিলিকে দেখেই বিশ্রী একটা হাসি দিয়ে বললো,
– আপনিই মিলি?
মিলি কোনো জবাব দিলো না। কে জানে এই লোকগুলো তার নাম জানলো কিভাবে?
– আসেন আমাদের সাথে। আমাদেরই আপনাকে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
– আমি একাই যেতে পারবো।
– আরে আসেন তো।
দুজনেই একপ্রকার মিলির হাত ধরে টানাটানি শুরু করলো। মিলি হাজার চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারছেনা। বেশ জোরে জোরে চিৎকার করলেও কেউ এলোনা। ব্যাপারটা স্বাভাবিক, এখানে কেউই আসেনা। তারা একপ্রকার জোর করেই মিলিকে নিয়ে যেতে চাইলো নিজেদের গাড়িতে কিন্তু এমন সময়েই একটি মেয়ে মোটা গাছের ডাল নিয়ে আঘাত করলো একজনের মাথায়। সে অজ্ঞান না হলেও মাথা থেকে র*ক্তক্ষরণ শুরু হলো। মিলি অবাক বিষ্ময়ে খেয়াল করলো মেয়েটি সুহাসিনী। সুহাসিনী এখানে কি করছে?

★★★

শিহাব এখনো সেই ছবিটির দিকে তাকিয়ে আছে। চারুলতার ষড়যন্ত্রকারী বোধহয় সে-ই কিন্তু শিহাবের মন মানতে চায়না। একটা মানুষ এত নিখুঁত অভিনয় কিভাবে করে আর তার কথা নাহয় বাদই দেওয়া যায় কিন্তু তার পাশে যে আরো একজন আছে তার কি হবে? ও চারুর কোনো ক্ষতি করতে পারে এইটা শিহাব কল্পনাতেও আনতে পারেনা তবে কোনো উত্তর নেই। রাজশাহীতে আছে এখন সে। শিহাব কয়েকজনকে পাঠিয়েছে রাজশাহী থেকে তাকে নিয়ে আসতে। শিহাবের কাজের প্রয়োজন নেই, স্বর্ণলতার জীবন তার কাছে অধিক মূল্যবান। সময় কোনোভাবে কাটছেনা বিধায় মাইন্ড ডায়ভার্ট করার জন্য শিহাব অফিসে এসে বসেছে তবে এখানেও জ্বালাতন করছে সুহাসিনী নামের মেয়েটি। সুহাসিনীর কথা ভাবতেই সুহাসিনী জাদুর মতো শিহাবের কেবিনে উপস্থিত হয়ে গেলো, শিহাব কিছুটা চমকে গেলেও সুহাসিনীকে বুঝতে দিলোনা।
– চলুন না শিহাব।
– কোথায় যাবো?
– কোথাও থেকে ঘুরে আসি।
– এখন সম্ভব নয় সুহাসিনী। তুমি প্লিজ চলে যাও।
– যাচ্ছিনা।
– তোমাকে একটা প্রশ্ন করি?
– করুন।
– ধরো, তোমার এক আপন মানুষ তোমার ভালোবাসার মানুষটির ক্ষতি করতে চায়। তুমি কি করবে সুহাসিনী?
– হঠাৎ এমন প্রশ্ন?
– এমনি।
– কোনো কারণ ছাড়া একজন আরেকজনের কোনো ক্ষতি করেনা শিহাব। আমি সেই কারণটা উদঘাটন করবো। যে দোষী হবে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবো।
কারণ? আসলেই কি কোনো কারণ আছে এর পেছনে? দোষ তবে কার? চারুলতা বাচ্চা একটা মেয়ে। প্রতিবাদী মনোভাবের হলেও সহজ সরল। তার কি আদেও কোনো দোষ থাকতে পারে? সে সবচেয়ে বড় দোষ করেছে শিহাবের সাথে। বছরের পর বছর অপেক্ষা করেও সে পায়নি স্বর্ণলতাকে। কিন্তু স্বর্ণলতার আর কোনো দোষ থাকা পারে তা মানতে শিহাব নারাজ।
– আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি শিহাব। এইবার চলুন ঘুরে আসি। ঘুরে আসলে মন ভালো হবে।
– আমি স্বর্ণলতাকে ভালোবাসি সুহাসিনী।
– বিয়ের পর আমাকেও বাসবেন।
– আমি পারছিনা সুহাসিনী। নিজের সাথে কত যুদ্ধ করা যায়?
– একবার আপন করেই দেখুন না শিহাব। ভালোবাসার খামতি রাখবোনা আমি।
– এত ভালোবেসেও তো ভালোবাসা পাচ্ছোনা সুহাসিনী। তবে কেনো ভালোবাসো?
– আপনি কেনো স্বর্ণলতাকে ভালোবাসেন?
– উত্তর নেই।
– আমাকে ভালোবাসার চেষ্টা করা যায়না শিহাব?
– আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
– তাহলে চলুন ঘুরে আসি। উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরবো। যেখানে দুচোখ যায়।
শিহাব আর মানা করলো না। দেখা যাক, ওর সাথে কোথাও গেলে স্বর্ণলতার পোকাটা মাথা থেকে বের হয় কি না! এই কষ্টের জীবন আর নিতে পারছেনা সে।

ঘুরতে ঘুরতে একটা পর্যায়ে সুহাসিনী ক্লান্ত হয়ে যায় বিধায় শিহাব গিয়েছিলো পানি আনতে। তখনই সুহাসিনী নারী কণ্ঠের চিৎকার শুনতে পায়। কণ্ঠস্বর চেনা লাগতেই সেখানে এগিয়ে যায় সে। সেখানে গিয়েই সে দেখতে পেলো মিলির সাথে দুজন মানুষের ধস্তাধস্তি চলছে। সুহাসিনী কোনোমত একটা গাছের ঢাল জোগাড় করে লোকটার মাথায় মারলেও সে অজ্ঞান হলোনা। ক্ষিপ্র গতিতে সে সুহাসিনীকেও আঘাত করতে যাবে এমন সময়েই চলে আসে শিহাব। শিহাব লোক দুটোকে চেনে, তারাও খুব ভালো করেই চেনে শিহাবকে তাই তারা ঝামেলা না করে দ্রুত মিলিকে ছেড়ে দিয়ে গাড়িতে উঠে গেলো। শিহাব দ্রুত এগিয়ে গেলো মিলির দিকে।
– কি হয়েছে মিলি? তুই এখানে কেনো? আর ওরা তোর পেছনে লাগলোই বা কিভাবে?
– তুমি ওদের চেনো?
– বাদ দে। তুই এখানে কেনো?
মিলি উপায়ন্তর না পেয়ে অভির কথা খুলে বলে শিহাবকে। শিহাব অতিরিক্ত পরিমাণে রেগে গেলেও শান্ত থেকে মিলিকে বলে অভির সাথে দেখা করাতে। কিন্তু মিলি চমকে উঠে বললো,
– নাহ! ওর সাথে দেখা করা যাবেনা। তুমি বাড়ি ফিরে যাও। ওর সাথে দেখা করা যাবেনা।
শিহাব অবাক হলো। কেনো দেখা করা যাবেনা অভির সাথে? কিসের এত উদ্বিগ্নতা তার?

বিঃদ্রঃ আমি সত্যিই খুব দুঃখিত এতদিন পর এইটুকু একটা পর্ব দেওয়ায়। পরীক্ষার মাঝেই ঠান্ডা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়ি আমি। কোনোমতে পরীক্ষাটা দেই। ঔষধ খাচ্ছি তবে ভালো হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছেনা। আমি কথা দিয়েছিলাম ২১ তারিখ দেবো, তাই কথা রাখতে অসুস্থতার মাঝেই লিখলাম। রিচেকও হলোনা। কালকে ৩৮ পর্বের বর্ধিতাংশ দেবো। সবার কাছে আবারও দুঃখিত। আজকের পর্বটা একটু ভালো করে পড়বেন। কারণ বলছি না তবে এন্ডিং-এ কাজে দেবে। আর অনেকদিন পর লিখলাম। একটু রেসপন্স করবেন, যারা পায়নি তাদের পেতে সুবিধা হবে। সকলকে ধন্যবাদ।

____________________

To Be Continue
®️শুভ্রা আহমেদ প্রিয়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here