#আয়নামতী
#পর্ব_১১
#পুষ্পিতা_প্রিমা
আয়ান বাড়ি ফিরলো রাত সাড়ে দশটার দিকে। আয়শা বেগম বিছানায় পা টেনে বসে পান চিবোচ্ছেন। আজহার সাহেব মাত্রই ঘুমিয়ে পড়েছে। আয়না ও ঘুম। নামিরা ও ঘুমোয়নি। আয়ান তাকে দেখে চমকে যাবে, ব্যাপারটা দারুণ উপভোগ্য হবে।
বাইরে চাউনির নিচে লাগানো লাল বাল্বটি মিটিমিটি জ্বলছে। গ্রামের তাদের বাড়িসহ গুটিকতক মানুষের বাড়িতে বিদ্যুৎ আছে। আয়ান দরজায় কড়া নাড়লো। নামিরা লাফ দিয়ে নামলো খাট থেকে। গায়ে ভালো করে শাড়িটা জড়িয়ে পা বাড়ানোর আগে আবার থেমে গেল। ভাবলো,
‘ আয়ান ঘরে এসেই তাকে দেখে চমকে যাবে। এখন সে যাবে না। দরজা আম্মা খুলে দিক।
নামিরা তাই গেল না। আয়শা বেগম বিছানা থেকে নামতে নামতে বললেন
‘বউয়ের ঘুম চলি আসছে মনে হয়।
আয়ান মাকে দেখলো দরজা খোলামাত্র। মায়ের সাথে প্রসন্ন হাসলো। বলল
‘ জেগে আছ আম্মা? আব্বা ঘুমায়ছে?
‘ হ ঘুম। আয় বাবু। মুখ হাত ধুইয়া ল।
আয়ান বলল
‘ আচ্ছা। আমি শার্ট পাল্টে নিই আগে।
আয়শা বেগম মাথা নাড়ালেন।
আয়ান ঘরে গিয়ে বিছানায় কাঁথা দিয়ে মোড়ানো কাউকে শোয়া দেখলো। ভুরু কুঞ্চন হলো তার। কাঁথার বাইরে কিছুটা শাড়ির আঁচল বের হয়ে থাকায় তার চিনতে অসুবিধা হলো না। তাছাড়া এই ঘরে তার মানুষটা ছাড়া আর কে থাকবে?
আয়ান আর এগোলো না। শার্ট পাল্টে মুখ হাত ধুয়ে নিল। ভেজা মুখ মুছতে মুছতে নামিরার পাশে বসলো। ডাকল
‘ মিরা?
নামিরা মিটিমিটি হেসে ফেলল কিন্তু কাঁথা সরালো না। আয়ান তার নড়াচড়া দেখে নিজে নিজে হেসে ফেলল। তোয়ালে রেখে দিল। নামিরার দিকে ঝু্ঁকে ডাকল
‘ মিরাহ?
নামিরা বলল
‘ আপনার মিরা ঘুম, শ্বশুরের ছেলে।
আওয়াজ করে হেসে দিল আয়ান। নামিরাকে ফিরিয়ে আনলো তার দিকে। বলল
‘ বেড়ানো শেষ?
নামিরা কথা বলল না। চোখ বন্ধ অবস্থায় মাথা নাড়লো। আয়ান বলল
‘ কথা বলো। কি হচ্ছে মিরা?
নামিরা চোখ খুললো না। আয়ান কিছুক্ষণ কপালে ভাঁজ ফেলে চেয়ে রইলো। এই যে সারাদিনের ক্লান্তি, বিষণ্নতা। এসব যেন মুহূর্তেই উদাও হয়ে গেল প্রিয় মানুষটার মুখ দেখে।
আয়ান তার বন্ধ চোখের পাতা ছুঁয়ে দিতেই ফট করে চোখ খুললো নামিরা। দুহাত মেলে গলা জড়িয়ে ধরে টেনে নিল আয়ানকে। গলায় মুখ গুঁজতে গুঁজতে বলল
‘ সুন্দর ছেলেটা বউ নেই তাই কালো হয়ে গেছে। মানে চেহারাটা আন্ধার হয়ে গেছে। আম্মার বাণী।
আয়ান হেসে ফেলল। বলল
‘ আমার মাথাটা ছিড়ে যাবে। কিভাবে টানছো মিরা?
মিরা ছেড়ে দিল। উঠে বসে আবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আয়ানকে। আহ্লাদী সুরে বলল
‘ শ্বাশুড়ি মা মিস করেছে। শ্বাশুড়ি মায়ের ছেলে কেন মিস করেনি আমায়?
আয়ান তার মাথার উপর চিবুক রাখলো। চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলল
‘ তুমি বুঝবে না, বুঝবে না মিরা। বাচ্চা মেয়ে এখনো।
নামিরা আর ও একটু গুঁজে গেল। বলল
‘ একদম না শ্বশুরের ছেলে। আমি বাচ্চার মা হবো কিছুদিন পর।
আয়ান বলল
‘ তাই নাকি? বাহ বাহ খুব ভালো। উন্নতি হয়েছে তোমার।
নামিরা লজ্জা পেয়ে গেল। বলল
‘ যাহহ, সবসময় মজা করে। খারাপ ছেলে।
______________
আছরের আযানের নামাজ শেষ করে বাগানবাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিল আয়না। চারায় পানি দিতে হবে। অতবড় বাগানে একা পানি দিয়ে কুলাতে পারবে না রেণু। রাস্তায় হাঁটার সময় একটা ছোট খাটো মিনি কার দেখলো আয়না। এগিয়ে আসছে। সে আজ বোরকা পড়েনি। গায়ে ফুলহাতা ড্রেস পড়া ছিল। তাই পড়েনি। বেশি তো দূর না। কিন্তু গাড়িতে অনুরাগকে দেখে অস্বস্তি লাগলো। মুখটা ঢেকে নিল ওড়না দিয়ে। অনুরাগ গাড়ি থামালো। আয়নাকে ডেকে বলল
‘ এই পিচ্চি এদিকে এসো।
আয়না চমকে গেল। ভাবলো সে আবার পিচ্চি কখন হয়ে গেল? মাথামোটা বেটা একটা।
আয়নাকে কোনো কথা বলতে না দেখে আবার জোরে ডাকল অনুরাগ।
‘ এই মেয়ে তোমাকে ডেকেছি। কানে শোনো না?
আয়না তাকালো। ভালো করে মুখ ঢাকতে ঢাকতে বলল
‘ বলেন।
অনুরাগ যা বলতে চাইলো তা বলল না। ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলো আয়নাকে। কিছুক্ষণ পর বলল
‘ আয়নামতী না? আরেহ আয়নামতীই তো। কেমন আছ আয়নামতী? আরেহ তুমি তো পুরো একটা বাচ্চা মেয়ে। এখন তো আর ও বাচ্চা বাচ্চা লাগছে।
আয়না মুখ খুললো না। আবার ভাবলো
‘ বিয়ে টিয়ে করে এই লোকের মুখের ভাষা ও তো পুরাই পাল্টে গেল। আপনি আপনি করতো না? নাকি পিচ্চি পিচ্চি লাগছে বলে তুমি তুমি শুরু করেছে।
অনুরাগ বলল
‘ আয়নামতী কথা বলা ভুলে গিয়েছ নাকি?
আয়না ওড়নাটা মুখ থেকে খানিকটা সরালো। রসিকতা করে বলল
‘ আপনি তো বিয়ে টিয়ে পায়চাওয়ালা থেকে আর পাওচাওয়ালা হয়ে গিয়েছেন চৌধুরী সাহেব। এই রাস্তায় দেখা টেকা ও যায় না।
অনুরাগ কিঞ্চিৎ হাসলো। বলল
‘ এমনি ইদানীং বেশি ব্যস্ত ছিলাম। আর পায়চাওয়ালা মানে কি? পয়সাওয়ালা হবে।
আয়না বলল
‘ ওহ হ্যা পেঁচা ওয়ালা।
অনুরাগ ভুরু কুঞ্চন করলো। বলল
‘ তোমার কি অবস্থা? বাগানের ফুল ধরেছে? আমার ফুলগুলো কখন পাব?
আয়না বলল
‘ পরে পরে। এখনো ফুল ধরেনি। দেরী আছে। আমার বাগানের দিকে এখন আপাতত নজর দিয়েন না তো। নজর লেগে গেলে শেষ।
অনুরাগ বলল
‘ ঠিক আছে দিলাম না। তবে তাড়াতাড়ি ফুল চাই আমার। দেরী হলে বাগান তুলে নিয়ে যাব।
আয়না কোমরে হাত দিয়ে বলল
‘ মারেম্মা দেইখা লমু, কেনগরি বাগান তুইল্লা লইয়্যা যান।
অনুরাগ নাক তুলে বলল
‘ ছিঃ এগুলো কেমন ভাষা আয়নামতী? তুমি লেখাপড়া জানা মেয়েমানুষ।
আয়না বলল
‘ আপনি ও তো শিক্ষিত পুরুষমানুষ। অচেনা অজানা মহিলারে পিচ্চি ডাকেন কোন সাহসে? আবার তুমি তুমি করেন।
অনুরাগ এবার বেশ হতভম্ব। সে কখন আয়নামতীকে আপনি বলতো। তুমি তুমিই তো বলতো। নাকি কুহেলীকে ডাকতে ডাকতে সব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে? আয়নামতী তো কুহেলীর ও অনেক ছোট, তাহলে তুমি বলতে পারবে না কেন? আয়নামতী মেয়েটা এত কঠিন কেন?
অনুরাগ বলল
‘ আরেহ তুমি বলা ও যেই, আপনি বলা ও সেই। বাদ দাও ওসব কথা।
আয়না বলল
‘ বাদ দিলাম। এবার বলুন পণ কত নিয়েছেন শ্বশুরবাড়ি থেকে?
অনুরাগ বলল
‘ নিয়েছি আবার দিয়ে ফেলেছি।
আয়না মাথা নাড়ালো। বলল
‘ এসবই সম্ভব আপনাকে দিয়ে। কিন্তু এর চাইতে বেশি কিছু না। বন্ধ করে দিন না এই রীতি। পরিবার থেকে,সমাজ থেকে। পারবেন না? পণ রীতি, বাল্যবিবাহ, নারী অত্যাচার, কথায় কথায় তালাক,কারণে অকারণে বহুবিবাহ। এই সব বন্ধ করার জন্য কিছু করতে পারেন না? সমাজের মানুষ আপনাদের আদর্শ মানে। সম্মান করে। আপনারা চাইলেই তো এসব কুসংস্কার, এইসব অন্যায় কমে যেতে পারে। তাহলে চুপ করে থাকেন কেন? ভালো লাগে এসব দেখতে? সইতে পারেন কিভাবে? আপনি তো পারেন। পারবেন। তাহলে চুপ থাকেন কেন?
অনুরাগ চুপচাপ শুনলো আয়নার কথা। কি চমৎকার ধ্যানধারণা মেয়েটার! কি ধারালো বুদ্ধি! আসলে এভাবে তো কখনো ভাবা হয়নি। আয়নামতী এতটা ছোট মানুষ হয়ে ও এতকিছু কিভাবে জানে?
অনুরাগকে চুপ করে থাকতে দেখে আয়না বলল
‘ প্রফেসর আপনি এই দেশে আছেন?
অনুরাগ চোখের পলক ফেলল। বলল
‘ তোমার সামনেই আছি। আচ্ছা বলোতো তোমার মাথায় এত চমৎকার বুদ্ধি গুলো আসে কোথা থেকে?
আয়না হাসলো। আঙুল ঘুরিয়ে চোয়ালে ঠেকিয়ে বলল
‘ ম্যাজিক।
অনুরাগ হাসলো। বলল
‘ আয়নামতীর ম্যাজিক। রাইট?
আয়না নাকতুলে বলল
‘ একদম নাহ। যান যেদিকে যাচ্ছেন। আমার কাজ আছে।
অনুরাগ গেল কিন্তু মাথা থেকে আয়নামতীর বলা কথাগুলো নামলো না। আসলেই কি সে পারবে? আয়নামতী তো বলল পারবে। তারমানে পারবে।
____________
প্রায় বারো দিন পর, কুহেলী শ্বশুরবাড়ি ফিরলো। আনহিতা বেজায় অসন্তোষ। শায়লা বেগম ও। অনিমা পারেনা কেলানি দিতে। কুহেলী আনহিতার কাছে ক্ষমা চাইলো। বলল
‘ আমাকে ক্ষমা করুন মা। আমি আর না বলে যাব না কোথাও। আপনার পারমিশন নিয়ে যাব এবার থেকে।
আনহিতার মন খানিকটা গলল কিন্তু সে তা দেখালো না। বরং শক্ত হয়ে থাকলো। অনিমা বলল
‘ আসতে না আসতে ঢং দেখানো শুরু হয়ে গিয়েছে তোমার? শোনো তোমাকে এই বাড়ির বউ করে এনেছি সিনেমার কাজ করার জন্য নয়। এরকম মেয়ে আমার আব্বার হাতে আর ও একটা ছিল। বেশি উড়বে না একদম। এই রূপের গরম দেখাবে না। রূপ আমাদের ও আছে, আমরা সিনেমাতে তো যায়নি।
কুহেলী বলল
‘ শুধু রূপ থাকলে হয় না, গুন ও থাকতে হয়। যা আপনার নেই।
অনিমার রাগ তরতরিয়ে বাড়লো। বলল
‘ মুখ সামলে কথা বলো মেয়ে। বেয়াদবি করবে না। ভুলে যাবে না কার বাড়িতে দাঁড়িয়ে কথা বলছো।
কুহেলী বলল
‘ আমি জানি, আমি কোথায় দাঁড়িয়ে কথা বলছি। আপনি নিজেকে দেখুন তো, আপনি কোথায় দাঁড়িয়ে কার সাথে কথা বলছেন। এটা আমার স্বামীর বাড়ি। আপনি তো নিজের শ্বশুর বাড়ি কখন গেলেন সেটা ও বোধহয় মনে নেই।
অনিমা রাগে গিজগিজ করলো। বলল
‘ বেয়াদব মেয়ে। মা তুমি কিছু বলছ না কেন? ভাই কোথায়? সে জানে তার বউ বেয়াদবি করছে আমার সাথে।
কুহেলী মুখ মোচড়ে ফিরে দাঁড়ালো । আনহিতা কিছু বলল না। অনিমা বলল
‘ তোর মতো ফকিন্নি এই বাড়ির বউ হয়েছে সেটা ও সাতকপাল। কুকুরের পেটে ঘি সহ্য হয় না কথাটা এমনি এমনি বলেনি। তোর পেটে ও ঘি পড়েছে, সেগুলো উগলে দেওয়ার সময় হয়েছে তাই তুই এমন করছিস। বেশি উড়ছিস। উড়তে থাক। পীপিলিকার পাখা গজে মরিবার তরে।
কুহেলী আনহিতাকে বলল
‘ আপনি চুপ করে আছেন কেন মা? আমার বাবা দুইলাখ টাকা দিয়ে বিয়ে দিয়েছে কি এভাবে অপমানিত হওয়ার জন্য? আপনার মেয়ে যা নয় তা বলছে আমাকে। উনি আসুক আজ, আমি জিজ্ঞেস করব আমি এই বাড়িতে থাকব নাকি অন্য কোথাও উঠবো।
আনহিতা অনিমাকে টেনে নিয়ে গেল। বলল
‘ কি করছিস অনি? তোর শরীর খারাপ করবে।
অনিমা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গটগট পায়ে হেঁটে চলে গেল।
আনহিতা কুহেলীর কাছে দৌড়ে এসে বলল
‘ না বউমা তুমি এসব বলবে না সোহাগকে। আমি আমার ছেলেকে ছাড়া থাকতে পারবনা। আমার ছেলেকে ছোট থেকে আমি একমুহূর্তের জন্য ও চোখের আড়াল করিনি। এখনো ভার্সিটির পাশে বাসায় সে একদিন কিংবা দুইদিন থাকে। তারপর আবার চলে আসে। তুমি এমনটা করতে পারো না।
কুহেলী বলল
‘ আমাকে ক্ষমা করবেন মা। আপনার মেয়ে যে বাড়িতে থাকছে এই বাড়িতে থাকা সম্ভব নয় আমার পক্ষে।
আনহিতা কপাল চাপড়ালেন। এ কেমন মেয়েকে বউ করে ঘরে তুললো সে? তার সাধাসিধে ছেলেটার কপালে শেষমেশ এমন বউ জুটলো? সে বেশি কঠোর ও হতে পারছেনা। যদি পণের কথাটা অনুরাগকে বলে দেয় এই মেয়ে। আর কথায় কথায় আলাদা থাকার কথা বলছে।
শায়খ চৌধুরী অনিমার মুখে সবটা শুনে রেগে গেলেন। তার বাড়িতে থেকে তার মেয়ের সাথে বেয়াদবি? ওই মেয়ের সাহস কি করে হয়? কুহেলী নিজের ঘরে বসে সব শুনলো। এই বুড়ো নিজের মেয়ের দোষ দেখে না? পরের মেয়ের দোষ খুঁজে বেড়ায়?
রাতের দিকে অনুরাগ বাসায় ফিরলো। দেখলো সবার মুখ থমথমে। অনুরাগের হাতে কুহেলীর জন্য শাড়ি, চুড়ি, নুপূর আর গলার মালা। একজোড়া জুতো। অনিমা আঁড়চোখে ভাইয়ের দিকে তাকালো। অনুরাগ এগিয়ে এসে বোনের হাতে একটা শপিং ব্যাগ দিয়ে বলল
‘ আপা তোর জন্য এটা। এখানে একটা শাড়ি আছে। একজোড়া জুতো ও নিয়েছি।দেখিস।
অনিমা বলল
‘ ওগুলো কার?
অনুরাগ বলল
‘ কুহেলীর।
ভেতরে ভেতরে ফুসলো অনিমা। অমি মায়ের পাশে অবস্থায় বলল
‘ মামা তুমি জানো, আমি মামিকে দেখেছি টেলিভিশনে। নাইস লেগেছে।
অনিমা সপাটে চড় বসালো ছেলের গালে। বলল
‘ বেশি ফটরফটর করবে না অমি।
অনুরাগ রেগে গিয়ে বলল
‘ কি সমস্যা তোর। ওর গায়ে হাত তুললি কেন? আশ্চর্য!
অনিমা চলে গেল। অমিকে নিয়ে গেল আনহিতা।
অনুরাগ ঘরে চলে গেল। কুহেলী তাকে দেখে দৌড়ে এল। অনুরাগের হাত থেকে শপিং ব্যাগ কেড়ে নিয়ে বলল
‘ সবুজ কালার শাড়িটার জন্য সবুজ চুড়ি এনেছেন?
অনুরাগ বলল
‘ হ্যা।
‘ লাল চুড়ি আনেননি?
‘ এনেছি।
কুহেলী সব বের করলো। অনেক খুশি হবে ভাবলো অনুরাগ। কিন্তু তা না কুহেলীর চেহারা কালো করে বলল
‘ কালো চুড়ি তো আনেননি? আপনি জানেন না আমি কালো চুড়ি পড়তে ভালোবাসি।
অনুরাগ বলল
‘ আচ্ছা, এগুলো পড়ো। পরে এনে দেব।
কুহেলী বলল
‘ পরে কখন? কাল? আমার তো পরশু একটা শর্ট ভিডিও শুট আছে। এগুলো পরীক্ষার মতো। আমি চাইছিলাম কালো শাড়িটা পড়ব সাথে কালো চুড়ি। এখন তো সব নিজের থেকে পড়ে যেতে হবে। প্রমোশন বাড়লে ওরা ড্রেস চয়জ করে দেবে।
অনুরাগ বলল
‘ আচ্ছা কালই এনে দেব।
কুহেলী খুশি হলো। ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো অনুরাগকে। তারপর ছেড়ে দিয়ে বলল
‘ ধন্যবাদ আপনাকে। আমাকে এত সাপোর্ট করার জন্য।
অনুরাগ বলল
‘ তা ঠিক আছে। এখন বলো বাড়িতে কি কোনো ঝামেলা হয়েছে?
কুহেলী সবটা খুলে বলল।
ভাবলো অনুরাগের সহানুভূতি পাবে কিন্তু না শায়লা বেগমের কাছে কি যেন শুনে এসে অনুরাগ বেজায় রেগে গেল তার উপর। বলল
‘ আপা একটু রাগী, একটু বকতেই পারে তাই বলে তুমি বেয়াদবি করবে? ও আমার বড় আপা। আমাকে স্নেহ করে, চোখে হারায়। আমাকে ভালোবাসে, তুমি ও ভালোবাসা পেতে। কেন বেয়াদবি করেছ?
কুহেলী ভড়কে গেল। বলল
‘ কোথায় বেয়াদবি করেছি, ওই একটু।
অনুরাগ বলল
‘ মুখে মুখে তর্ক করা বেয়াদবি নয়? দেখো কুহেলী আমি বেয়াদবি সইবো না। তোমাকে স্বাধীনতা দিচ্ছি তারমানে এই না, বেশি বাড়াবাড়ি করবে। আর আলাদা হওয়ার কথা কি করে বলো তুমি? এরকম করতে থাকলে সিনেমার কাজে ও যেতে দেবনা। মনে রেখো। সবকিছুর আগে আমার পরিবার। ওরা তোমাকে দেখেশুনে পছন্দ করে এনেছে। তুমি নিজ দোষে ওদের কাছে খারাপ হচ্ছো।
কুহেলী কান্নায় ফেটে পড়লো অনুরাগের কথা শুনে। বলল
‘ আমাকে বাইরে যেতে বাঁধা দিবেন না প্লিজ। আমি আপনার বোন আর মায়ের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেব দরকার হলে।
অনুরাগ বলল
‘ ঠিক আছে। আর যাতে বলতে না হয়।
অনুরাগ চলে গেল তারপর পরই। কুহেলী বসে পড়লো। কাঁদতে কাঁদতে বালিশ ভিজালো।
তার একদিন পর শহরে তার একটা শুটিং ছিল। প্রমোশন পাবে সে এই ভিডিওটা বের হলে। অনুরাগের সাথে বের হলো সে। আনহিতার পারমিশন নেওয়ায় কিছু বললো ও না আনহিতা। অনিমা তো দেখা ও দিল না। শায়লা বেগম চুপচাপ দেখছে। লজ্জায় তার মাথা কবে কাটা গেছে। চৌধুরী বাড়ির বউ এভাবে বেপর্দা চলাফেরা করছে? ছিঃ। রঙবেরঙের শাড়ি পড়ে টেলিভিশনে নিজেকে প্রদর্শন করছে? দাদুভাই কি এটা ভালো করছে? তার উচিত না নিজের বউকে এভাবে ছেড়ে না দিয়ে, ঘর সংসারে মনোযোগী করার। একটা বাচ্চা কাচ্চা হয়ে গেলে ও হতো। এই মেয়েকে ঘরমুখো করার এই একটাই পন্থা। সন্তানের দিকে তাকিয়ে হলেও এসব ছাড়বে। কি দরকার ওসব নোংরা কাজ করে টাকা পয়সা কামাইয়ের? তার নাতি কি কম কামাই নাকি?
চলবে,,,,,,,,,,