আয়নামতি পর্ব-২৪

0
1739

#আয়নামতী
#পর্ব_২৪
#পুষ্পিতা_প্রিমা

নির্জন দুপুর। চারপাশে শান্ত পরিবেশ। এত নিস্তব্ধতার মাঝে ভেসে আসছে একটি বাচ্চার কান্নার আওয়াজ। মাথা ঝিমঝিম করে উঠলো আয়নার। অনেক্ষণ ধরে সায়ানের কান্না ভেসে আসছে। ভাবি আর রূপা কোথায়? আশ্চর্য।
বিরক্তি নিয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়লো আয়না। নামিরার ঘরের দিকে এগোতেই দেখলো কান্নার আওয়াজ উঠোন থেকে আসছে। বেরিয়ে গেল আয়না। দেখলো আয়শা বেগম পা টেনে সায়ানকে তেল মালিশ করছে। তাই কাঁদছে ছেলেটা। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকলো আয়না। এগোনো সাহস পেল না। আবার ফিরতি ঘরে চলে আসতেই নামিরার সঙ্গে দেখা। নামিরা বলল
‘ তেল মালিশ করতে গেলেই কাঁদে।
আয়না বলল
‘ হ্যা। ভাইয়া কোথায়?
‘ তোমার ভাইয়া তো শহরে গেছে। ওর চাকরিতে জয়ন আগামী সপ্তাহে। ওখানে নাকি কাজ আছে।
আয়নার মন খারাপ হয়ে গেল। ভাইয়া তাকে ইচ্ছে করে দেখা দিচ্ছেনা। নামিরা আয়নার মুখ খেয়াল করে বলল
‘ তোমার ভাইয়া যাওয়ার আগে তোমার ঘরে গিয়েছিল। তুমি ঘুম ছিলে৷
আয়না বলল
‘ ওহ।
নামিরা বলল
‘ একটা কথা বলব?
আয়না চোখ তুললো। বলল
‘ কি?
নামিরা থেমে থেমে বলল
‘ বিয়ে শুধু একটা শব্দ নয় আয়না। দুটো মানুষের বন্ধন। দুজনের উপর নির্ভর করে সম্পর্কটা ঠিক কতদূর গড়াবে। আমি জানি তুমি এই বিয়েটা মেনে নিতে পারছ না। আমি হলে আমিও মানতাম না। কিন্তু,,
আয়না বলল
‘ কিন্তু কি ভাবি? মেনে নিতে বলছ সবটা? ওনি আগে একটা বিয়ে করেছেন। আমি ওনার জীবনে প্রথমজন নই। আমি কেন কারো দ্বিতীয়জন হয়ে থাকব? আমার কিসের দায় ওনাকে মেনে নেওয়ার? ওনার মা চেয়েছেন তাই আমি ওনাকে মানতে পারব না। বিয়ে তো তাদের দোষের কারণেই ভেঙেছিল। পণ না পেয়ে বিয়ে ভাঙার কথা তারাই তুলেছিল।
নামিরা বলল
‘ ওসব পুরোনো কথা আয়না। তুমি ওদের সেদিন একটা সুযোগ দিলে আজকের দিনটা দেখতে হতো না। আমি তোমাকে মেনে নিতে বলছিনা সম্পর্কটা শুধু বলছি তুমি যে কষ্টে আছ তার থেকে কিভাবে রেহাই পাবে সেটা ভাবতে। ওনি সত্যিই অন্যায় করেছেন। আর তুমি সেই অন্যায়ের স্বীকার।
আয়না বলল
‘ আমার সাথে হওয়া অন্যায়ের শাস্তি আমি দেবই। ওই লোকের সাথে কখনোই সংসার করব না আমি।
নামিরা বলল
‘ কিন্তু ওনি যে বলল তোমাকে নিয়ে যাবে।
‘ আমি যাব না। আমি না গেলে কে আমাকে জোর করে নিয়ে যাবে? কিছুতেই যাব না আমি।
‘ যেওনা, আর এভাবে মন খারাপ করেও থেকোনা। হয়ত উপরওয়ালা তোমার কপালে সেই প্রথমজনকেই লিখে রেখেছে।
নাহলে ওনার প্রথম স্ত্রী কেন থাকলো না? তুমি সময় নাও। এমন না যে তোমাকে ওইবাড়িতে কেউ জোর করে পাঠিয়ে দিচ্ছে।

আয়নার চোখে জল। আয়শা বেগম সায়ানকে নিয়ে ঘরে আসতেই আয়নাকে দেখলো। চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল
‘ বউ ধরো তোমার বাবুরে। এত বজ্জাত হয়ছে ছেলেটা। পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে মারি ফেলল আমারে। আমার বাবু কত ভালা ছিল ছোডবেলায়।
সায়ান মায়ের কোলে ঝাপ দিল। ঠোঁট টানলো। নামিরা টুপুস করে আদর করে দিয়ে বলল
‘ একদম না আম্মা। আপনার বাবু পঁচা। আমার বাবু ভালো। খুব ভালো।
সায়ান মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো।

আয়শা বেগম আঁড়চোখে আয়নার দিকে তাকালেন। বললেন
‘ রান্নাঘরে অনেক কাজ। সারাক্ষণ ঘরে ঘুমাইলে আর ভাত জুটবো না।
নামিরা বলল
‘ ওগুলো আমি করে ফেলব আম্মা।
‘ তুমি ক্যান করবা? বিয়া হইছে বলে কি আমাদের তারে বসায় বসায় খাওন লাগবো?
আয়না বলল
‘ আমি যাচ্ছি।
চলে গেল আয়না। নামিরা বলল
‘ কি করছেন আম্মা। ও এমনিতেই,,
‘ মুখে মুখে কথা কইবানা বউ। ওই মেয়ে এখন ভালা সাজতেছে, আমি তো রহমতের কাছে শুনছি বাগান দেওয়া থেকে শুরু করে সব খরচ ওই চৌধুরীর ছেলে করেছে। এত কিসের লেনাদেনা আছিলো ? আমি কি তারে এই শিক্ষা দিছি? বিয়ে ভাঙছে না ওই পোলার লগে ? তো আবার কিসের এত পিড়িত ওই পোলার লগে? বিয়া ও করছিল ওই পোলা, তারপরেও?
ভালা করছে তারে বিয়া করছে, এক্কেরে উচিত কাজ করছে। মধু মাইখা হাঁটবো, মৌমাছি কামড়ালেই দোষ?
ভালা হয়ছে শাস্তি হয়ছে। এখন আবার কোন সাহসে কয় আমি শ্বশুরবাড়ি যামু না। তার কামাই আমার খাওন লাগবো না। তারে আমি এইহানে রাখতে ও পারুম না। ওই ছেলে আসলে আমি বলুম যাতে লোকজন খাওয়ায় দাওয়ায় তার বউ সে নিয়া যায়। আমি একটা কানাকড়ি ও খরচা করতে পারুম না। সে বিয়া করছে এবার লোকজন গ্রামের মানুষরে খাওয়ায় দাওয়ায় সে যেন তার বউ ঘরে তুলে। আসুক।
নামিরা চুপ হয়ে গেল।

আয়না রান্নাঘরে যেতে গিয়ে থেমে গেল৷ সব কথা শুনলো। বাম হাতের কব্জি দিয়ে চোখ মুছলো ঘনঘন। আজ মা ও পরের মতো আচরণ করলো তার সাথে।

____________

আয়ান ফিরলো সন্ধ্যায়। নামিরা তাকে ফিরতে দেখে শরবত নিয়ে ঘরে চলে এল। আয়ান তার হাত থেকে গ্লাস নিয়ে দুই ঢোক খেয়ে বলল
‘ টুনি কোথায়?
নামিরা বলল
‘ ঘরে শুয়ে আছে।
আয়ান গ্লাস রেখে দিল। আনমনা হয়ে বলল
‘ আমি কিছুই করতে পারলাম না মিরা। সব কেমন গোলমাল হয়ে গেল। অনুরাগ চৌধুরীকে ও আমি কিছু বলতে পারব না। ওনি বলছেন ওনার সাথে টুনির কিসের চুক্তি ছিল। কিছু বুঝতে পারছিনা।
নামিরা বলল
‘ ওভাবে বলছ কেন? আম্মা ও কথা শোনালো ওকে। ভীষণ রকম কেঁদেছে বোধহয়, চোখ মুখ ফোলা।
ওনার প্রথম স্ত্রী তো ওনার জীবনে নেই৷ আমার মনে হচ্ছে আয়না ভালো থাকবে ওনার সাথে। মানুষ হিসেবে ভালো। শুধু আয়নার কাছে, আচ্ছা আয়না অত শক্ত কেন? তুমি তো ভীষণ নরম, আর ভীষণ কোমল।
আয়ান বলল
‘ ও আম্মার মতো। ভালোবাসা দেখাতে জানেনা কিন্তু ভালোবাসতে জানে খুব। আমি সবসময় চেয়েছি ওর জীবনে ভালোবাসার একজন মানুষ আসুক। যে ওকে আগলে রাখবে, ভালোবাসবে,ভালো রাখবে। আর সে ও ভালোবাসবে।
নামিরা তাকে জড়িয়ে ধরে মুখ তুলে বলল
‘ হুট করে সেই দিনটা একদিন চলে আসবে। দেখো।
আয়ান কপাল মিলালো তার কপালে। বলল
‘ তাই যেন হয়।
‘ বাবু কোথায়?
‘ শ্বশুরের মেয়ের সাথে।

_______________

বাড়িতে সবটা জানানোর কথা ছিল পরের দিনই কিন্তু আনহিতার অসুস্থতা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল অনুরাগ জানানোর সুযোগটুকু পায়নি। প্রায় টানা এক সপ্তাহ পর আনহিতাকে ঘরে আনা হলো। অনুরাগ চেয়েছিল আনহিতাকে আনন্দমোহন কুটিবাড়িতে রাখবে, আয়নাকে ওখানেই তুলবে। কিন্তু কোনোকিছুই সম্ভব হলো না শায়খ চৌধুরীর জন্য। ওনি জেনে গিয়েছেন সবটা আর অনুরাগের উপর চড়াও হলেন। যে মেয়ে বিয়ের আসরে তাদের অপমান করে তাড়িয়ে দেই সে মেয়েকে তিনি কখনোই ঘরে তোলার কথা দূরে থাক ছেলেবউ হিসেবে মানবেন না।
অনুরাগ তখনও নির্বিকার। অনিমা তো রাগে ফোঁসফোঁস করে উঠলো। তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন এখন তাকে কথা শোনাতে পিছপা হবে না। ওই মেয়ের এমন কি আছে যা লুবনার নেই। পড়ালেখায়, পরিবার, রূপ গুণ সবকিছু দিয়ে লুবনায় সেরা ওই মেয়ের চাইতে। তারপরও ভাই কি করলো এটা? মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো তাদের। তবে শায়লা বেগম আর আনহিতা বেশ চুপচাপ। কারণ সবকিছুর মূলেই তো এ-ই দুজন। কি আর বলবে তারা। শায়লা বেগম নাতিকে উপদেশ দিলেন
‘ দাদুভাই তোমার বউকে ঘরে তোলো খুব তাড়াতাড়ি। বিয়ে করেছ, এক সপ্তাহ চলে গেল দেখতে ও যাওনি। এ ভারী অন্যায়। লোকজন খাইয়ে দাইয়ে নিয়ে আসো।
অনুরাগ চুপচাপ। শায়খ চৌধুরী বললেন
‘ আমার কথার কোনো দাম নেই? ঠিক আছে আমি থাকব না এই বাড়িতে? তোমরা থাকো।
আনহিতা শান্ত চোখে চেয়ে থাকেন। অনেক্ক্ষণ পর বলেন
‘ ছেলের ভালো না চাইলে চলে যাও। আমি ওকে ঘরে তুলব।
সবাই অবাক। অনিমা বলল
‘ মা তুমি? তুমি মেনে নিলে ওই মেয়েকে?
আনহিতা মেয়ের দিকে তাকালেন সরু চোখে। অনিমা হনহনিয়ে চলে গেল সেখান থেকে। নতুন দুজন কাজের বুয়া কানপেতে শোনে দুজনেই ফিসফিস করে বলে
‘ বিয়া কইরা বউ রাইখা আসছে? বাপরে বাপ এই চৌধুরীরা সব পারে। চুপিচাপি প্রথম বউডারে তালাক দিল। আবার আরেকডা আনতাছে। কে জানে সেটারে কবে তালাক দেয়?
অপরজন বলল
‘ আরেহ এইটা এদের নাকানিচুাবানী খাওয়ায় ছাড়বো। এইডা ওই মাইয়্যা যে বিয়া ভাঙছিল। পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আছিলো না তার বাপ। ভাইডা তো মরা থেকে ফিরে আইছে। শুনোনাই সারা গেরামে ছড়ায় পড়ছিল কথাডা। ওই বেডার বইন লাগে।

দুজনের কথোপকথনে ভাটা পড়ে যায় শায়খ চৌধুরীর গর্জনে। দুজন কাজে লেগে যায়।
অতঃপর অনুরাগ সিদ্ধান্তঃ নিল আয়নামতীকে ঘরে তুলবে। বাপের প্যারা ম্যানেজ এবার বউয়ের প্যারা শুরু।

___________

চৌধুরী বাড়ির ছেলে নিজের টাকায় লোকজন খাইয়ে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীর মেয়েকে ঘরে তুলছে কথাটা রটে গেল সারাগ্রামে। নামিরার পরিবারের সবাই এসেছে বিয়ে উপলক্ষে। খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে স্কুলের পাশে তোলা নতুন ক্লাবঘরে। রাতে কয়েকজন মুরব্বি নিয়ে আয়নাকে নিয়ে আসতে যাবে। ক্লাবঘর থেকে আয়নাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে খাবার। রূপা এতটাই খুশি। নতুন জামা পড়ে একবার ঘরে, আরেকবার ক্লাবে। ক্লাবে বেশিক্ষণ টিকতে পারলোনা অমির জন্য। ছেলেটা সারাক্ষণ তাকে এটা ওটা নিয়ে খোঁচাতে থাকে। রূপার ভালো লাগেনা।

অনুরাগ দেখলো সে। আয়নাকে এসে বলল
‘ আপা আমি ছোটসাহেবকে দেখছি। একদম তোমার বর বর লাগতেছে। আমি কি এখন দুলাভাই ডাকব?
আয়না চুপ করে বসে রইলো। জবাব দিল না। সন্ধ্যার দিকে সাজানোর মেয়ে আসলো। আয়নাকে আবার নতুন বধূ রূপে সাজালো। আয়না তখন ও পাথুরে মূর্তি। আয়শা বেগম আর নামিরা অনেকবার এসে দেখে গেল। আয়ান ও এসে দেখে গেল। সাজানো শেষে আজহার সাহেব মেয়ের পাশে এসে বসলেন। বললেন
‘ মাশাল্লাহ কি সুন্দর লাগতেছে আনারে।
আয়না শক্ত। আয়ান ও এসে বসলো। ডাকল
‘ টুনি?
আয়না চোখ তুললো না। কথা বললো না। আজহার সাহেব মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন
‘ আমি তো তোরজন্য এই ছেলেকে শুরুতেই বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু উপরওয়ালা সব কেমন যেন এলোমেলো করে দিল। ভালো থাক মা।
আয়নার গলার কাছে এসে কি যেন আটকে থাকলো। বুক ভার হয়ে এল। কথা বললো না সে তারপরও। আয়শা বেগম ছলছল চোখে এককোনায় দাঁড়িয়ে রইলেন। মেয়ের সামনে যাওয়ার সাহস হলোনা।
অনুরাগের বাড়ি থেকে আসলো অনেকে। খালাতো ভাই,মামাতো ভাই কয়েকজন মুরব্বিরা ও। অনুরাগ তো আছেই। আনহিতা আর শায়লা বেগম ও এল। এলনা অনিমা আর শায়খ চৌধুরী।
আয়শা অবাক হয়েছে শায়লা বেগম আর আনহিতা বেগমকে দেখে। এদের পা পড়লো কেমনে এই গরিবের ঘরে?
আয়নার পাশে এসে বসলো তারা। আয়নার মুখ থমথমে। চোখ উদ্দেশ্যেহীনভাবে কোথাও নিবদ্ধ। শায়লা বেগম প্রথমবার ডাকলেন
‘ নাতবউ?
আয়না চোখ তুলে চাইলো। আবার চোখ সরিয়ে নিল। হু হা করলো না। অনুরাগ একদম সোজাসুজি সেই ঘরে ঢুকে আসতেই অনেকে চলে গেল। সে শক্ত হয়ে বসে থাকা আয়নাকে দেখে বিড়বিড় করে আওড়ালো,
‘ মাশাল্লাহ নাগিনীকে বেশ লাগছে।
শায়লা বেগম নাতিকে ঠোঁট উল্টে বুঝালেন
‘ কথা তো বলেনা।
অনুরাগ চোখ বন্ধ করে আশ্বস্ত করে বুঝালো
‘ বউদের কথা বলতে নাই বেশি।

______________

কাজী নতুন করে বিয়ে পড়ালো। তারপর নতুন যাত্রায় পা রাখলো আয়না। বাবা ভাই আর মা ভাবলো মেয়েটা চেঁচিয়ে কাঁদবে। দৌড়ে এসে ঝাপটে ধরবে কিংবা বুক ভাসিয়ে দেবে কান্নাজলে। তেমন কিছুই হলো। একটু ও কাঁদলো না আয়না। কারো সাথে দুটো কথা ও বললো না। শুধু সায়ানকে মনভরে আদর করলো। বুকে জড়িয়ে ধরে রাখলো কতক্ষণ? আর রূপাকে।
সবাইকে ভুল প্রমাণ করে নিজ থেকেই গাড়িতে গিয়ে বসলো। ওই যে গাড়ি ছাড়লো তখন পিছু ফিরে দেখলো একরাশ অভিমান আর চোখভর্তি জল নিয়ে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে কতগুলো মানুষ!
ভাবছে হয়ত মেয়েটা এত পাষাণ কেন?
আর ও একজন ছোট্ট মানুষ মায়ের কোলে থাকা অবস্থায় পিটপিট করে তাকিয়ে রইলো গাড়িটার দিকে৷ তারমতে তাকে গালভরে আব্বা ডাকা মানুষটা চলে যাচ্ছে কেন? গাড়িটা অদৃশ্য হতেই নিজে নিজেই হাউমাউ করে কেঁদে দিল আয়শা বেগম। কেউ আর থামাতে পারলো না। সারারাত কাঁদলো। আর অন্যদিকে আয়না কাঁদলো নতুন ঘরে পা রাখার সাথে সাথে। একদম একলা নীরবে, নির্জনে। কেউ না দেখে মতো। কত কথা যে হলো নতুন বউ ঘরের দরজা বন্ধ করে রেখেছে বলে। আয়নার তো সেদিকে খেয়াল নেই। তবে নিজ থেকেই সে দরজা খুলে দিল। বলল সে শাড়ি পাল্টানোর জন্য দরজা বন্ধ করেছে।
তার নিজের ঘরে তাকে যখন নিয়ে যাওয়া হলো তখন দেখলো ফুলেফুলে ভর্তি ঘরটার আনাচকানাচ। সবাই সরে পড়তেই বিছানার চাদর খামচে ধরে টেনে নিচে ফেলে দিল আয়না। এক এক করে সব ফুল মাটিতে ফেলে দিল। অনুরাগ এসে দেখলো ঘরটার বাজে অবস্থা। নিজ হাতে পরিষ্কার করলো সে। আয়না তখন ও মেঝেতে বসা। অনুরাগ বুঝতে পারলো তার মনের অবস্থা। হাজারো অভিযোগ তার নামে সেটা সে জানে।
আয়না বলল অনেক্ক্ষণ পর
‘ কুহেলী আপনাকে না ঠকালে আমার কথা আপনার মনেই থাকতো না। দিব্যি তার সাথে সংসার করে যেতেন। কুহেলী ঠকিয়েছে বলে এখন আমাকে দরকার পড়লো।
অনুরাগ বসলো তার সামনে। বলল
‘ নদীর একূলকে ভাঙতে হয় ওকূল গড়ার জন্য। কুহেলীকে আমার জীবনে আসতেই হতো তোমাকে আসার জন্য। না হলে তোমার মূল্য বুঝতো না আমার পরিবারের কেউ, হয়ত আমিও। কুহেলীর মতো প্রতারক আমার জীবনে আসার জন্য অনেকটা দায়ী তুমিও। তুমি আমাকে একটা সুযোগ দিতে পারতে।
হ্যা আমি সংসার করতাম কুহেলীর সাথে। ভালো ও থাকতাম। যদি তার মাঝে আয়নামতীকে খুঁজে পেতাম। আয়নামতীকে খুঁজে পেলে আর এই আয়নামতীকে মনে রাখার কি দরকার?
আয়না চোখ তুলে তাকালো। বলল
‘ কেন আপনি আমাকে খুঁজবেন তার মাঝে?
অনুরাগকে কিছু বলতে দিল না আয়ন। বলল
‘ আমি মিথ্যে সংসার করার অভিনয় করতে পারব না আপনার সাথে।
‘ তুমি অভিনেত্রী নও। অভিনেত্রী কুহেলী ছিল।
‘ সত্যি সত্যি ও পারব না।
‘ বললাম তো অভিনয় করতে হবে না। এমনি থেকো।
‘ এমনিও পারব না।
‘ এমনিও পারতে হবে না। শুধু থেকো।
আয়না চুপচাপ বসে রইলো।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here