উত্তরণ পর্ব-৩১

0
666

#উত্তরণ
পর্ব_৩১

উজান নিজের রুমে পৌঁছোয়. প্রথমে চিফ কে ফোন করে রিসেন্ট আপডেট দিয়ে দেয় তারপর ওর এয়ারলাইন্স অফিসে মেল পাঠিয়ে কয়েকদিনের ছুটির এপলাই করে মেডিকেল গ্রাউন্ডে. ওর মাথায় হাজার একটা চিন্তা ঘুরছে۔۔۔۔ হিয়া বলেছিলো এলিমেন্টারি সিকিউরিটি পাসওয়ার্ড হলো থাম্ব ইম্প্রেসেন পরে মেন চেম্বারে ঢুকতে গেলে আলাদা পাসওয়ার্ড লাগবে. থাম্ব ইম্প্রেশন টা ক্রেক করা কঠিন না. ওটা একটা বিশেষ ধরণের ডিজিটাল থাম্ব ইম্প্রেশন যেটা বিশেষভাবে তৈরী করা হয়েছে এই মিশন টার জন্য, মেন চেম্বার পর্যন্ত সহজেই পৌঁছে যাবে۔۔۔۔۔ কিন্তু তারপর? দেখা যাক সিআইএ থেকে কি রিপোর্ট আসে۔۔

উজান নিজের ল্যাপটপে কাজ করে চলে, সময় নিজের গতিতে বয়ে চলে. একসময় একটা লোক এসে ওর খাবার দিয়ে যায়. উজান তাকে হিয়ার কথা জিজ্ঞাসা করলে সে জানায় হিয়াকে আগেই খাবার দেওয়া হয়েছে. উজানের নিজের খাবার খেয়ে অফিসে যায়, দেখে সিআইএ এখনো রিপ্লাই দেয়নি. প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে বেরিয়ে আসে উজান. নিজের রুমে যাবার সময় একবার হিয়াকে দেখে যাবার কথা ভাবে, সেইমতো হিয়ার রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়۔۔

হিয়া বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে একটা বই পড়ছিলো, পড়তে পড়তে আবার চোখ লেগে যায়. এমন সময় দরজায় নক হয়. হিয়া উঠে দরজা খুলে দেখে সেই মহিলা যার সাথে হিয়ার প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল ইন্টারোগেশন রুমে.

মহিলা: আসতে পারি?
হিয়া দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়: অবশ্যই۔۔

মহিলা: দেখতে এলাম সব ঠিক আছে কিনা۔۔

হিয়া: হ্যাঁ۔۔۔۔۔ শুধু ক্লোরোফর্মের ইফেক্টটা এখনো আছে তাই মাঝে মাঝেই ঘুম পেয়ে যাচ্ছে.

মহিলা: আজকের রাতটা ঘুমোলে আশা করি কেটে যাবে. আপনার উপর এতটা ইফেক্ট হবে বোঝা যায়নি. আসলে এর ইফেক্ট ভিক্টিমের ফিজিক্যাল স্ট্রেংথের উপর ডিপেন্ড করে. যে ডোজটা আপনাকে দেওয়া হয়েছিল সেটা উজান স্যারকে দিলে ওনাকে দু ঘন্টাও ঘুম পাড়িয়ে রাখা যেতোনা অথচ আপনার প্রায় ছয় ঘন্টা পর ঘুম ভাঙে তারপর জল খেয়ে আবার ঘন্টা তিনেক ঘুমান.

হিয়া হেসে: ভালো করেছেন ক্লোরোফর্ম দিয়ে. আজকাল স্লিপিং পিল খেয়েও ঘুম হচ্ছিলোনা. জানেন প্রায় কয়েক মাস পর এতো ভালো ঘুম হলো۔۔۔

মহিলা এবার নিজের মাস্ক খোলে. হিয়ার ভীষণ চেনা চেনা মনে হয় এনাকে, কোথায় যেন দেখেছে ঠিক মনে করতে পারেনা.

মহিলা নিজের হাত বাড়িয়ে দেয় হিয়ার দিকে۔۔۔

আরোহী: হাই۔۔۔ আমি আরোহী. আপনি আমাকে না চিনলেও দেখেছেন এয়ারপোর্টে. আমি গ্রাউন্ড স্টাফ হিসেবে কাজ করি.

হিয়ার এবার মনে পড়ে. হিয়াও নিজের হাত বাড়িয়ে দেয় করমর্দনের জন্য.

হিয়া: আপনারা এতো লোক এভাবে এয়ারপোর্টে ছড়িয়ে আছেন?

আরোহী: শুধু এয়ারপোর্টে না দেশের প্রত্যেকটা এক্সিট এন্ড এন্ট্রি পয়েন্ট এ আমারা ছড়িয়ে আছি. বিশেষত যেগুলো ইন্টারন্যাশনাল এক্সিট এন্ড এন্ট্রি পয়েন্ট. এয়ার, ওয়াটার, ল্যান্ড সর্বত্র۔۔۔

হিয়া: RAW?

আরোহী: NIA

হিয়া: NIA? মানে۔۔۔۔ Indias counter terrorist task force?

আরোহী: আপনি তো অনেকটাই জানেন দেখছি. হ্যাঁ۔۔۔আমরা দেশের আভ্যন্তরিন টেরোরিজম আটকানোর কাজ করি. কিছুজন ফ্রন্টে থেকে, তো কিছুজন আড়ালে থেকে.

হিয়া: আচ্ছা একটা কথা বলুন তো۔۔۔۔ক্যাপ্টেন চ্যাটার্জী এয়ার ফোর্সের লোক না NIA এর?

আরোহী: উজান স্যার এয়ারফোর্স এর উইং কমান্ডার۔۔۔হার্দিক স্যারও তাই ছিলেন.

হিয়া: তাহলে ওনারা NIA এর সাথে কিভাবে যুক্ত?

আরোহী: ডিফেন্সের নিজস্ব ইন্টেলিজেন্স টিম থাকে. NIA এর যখন প্রয়োজন হয় তখন এই ইন্টেলিজেন্স টিমের সাহায্য নেয়. শুধু এয়ারফোর্স না, আর্মি আর নেভি ও আছে. কাজ শেষ হয়ে গেলে ব্যাক টু প্যাভেলিয়ন.

হিয়া: আপনি NIA এর অফিসার?

আরোহী: হ্যাঁ, তবে আমরা পুলিশ অর্গানিজশন হলেও রেগুলেটেড বাই হোম মিনিস্ট্রি.

হিয়া: তার মানে দেশে কোনো একটা বড় টেরোরিজম একটিভিটি হতে চলেছে আর আমি অজান্তেই তাতে ইনভল্ভড হয়ে গেছি.

আরোহী: হুম তবে আপনি টেরোরিজম এক্টিভিটির পার্ট নন বরং সেটাকে আটকানোর চাবিকাঠি বলতে পারেন. আপনার উপর আক্রমণ গুলো এই জন্যই হচ্ছিলো.

হিয়া: আপনারা সব জানতেন?

আরোহী: ক্যাপ্টেন কাশ্যপের মৃত্যুর পর চব্বিশ ঘন্টা আমাদের নজর ছিল আপনার আর মিসেস কাশ্যপের উপর. তখন অবশ্য ওরা এইভাবে আপনার উপর আক্রমণ করতে শুরু করেনি শুধু নজর রাখছিলো. কারণ তখনও ওরা জানত না আপনি সত্যি কানেক্টেড কিনা. উজান স্যারকে আপনার সাথে দেখার পর ওরা সিওর হয় আপনার কানেক্টিভিটি নিয়ে, না হলে আর যেই আসুক উজান স্যার আসতেন না. তখনি আপনার উপর এটাক গুলো হতে থাকে. তবে আপনাকে বাঁচানোর জন্য The Jaguar was always there….

হিয়া চমকে ওঠে: (মনে মনে: জাগুয়ার۔۔۔লেপার্ড۔۔হ্যাঁ দুটোতো একই প্রায়. তার মানে ভুল আমার, আমিই গুলিয়ে ফেলেছি) আপনারা ক্যাপ্টেন চ্যাটার্জী কে জাগুয়ার বলেন কেন?

আরোহী: আরে সেটা আমরা জুনিয়াররা ওনাকে আড়ালে ডাকি. আসলে ওনার একটিভিটি গুলো সেরকমই, তবে নাম টা ওনার গাড়ীর থেকে ধার করা. গাড়ির লোগো টা দেখবেন, বিশেষ পার্থক্য নেই ওই লোগোটা আর উজান স্যারের মধ্যে, বিশেষত অপারেশনের সময় (বলে হাসে)

হিয়া হাসে: (মনে মনে: এক্সাক্টলি۔۔۔ এই মিল টা আমার অবচেতন মন আগেই বুঝেছিলো কিন্তু আমি কেন বুঝতে পারিনি? আমার মন আমায় প্রত্যেক মুহূর্তে আগাম সচেতন করেছিল. ঠিকই বলেন ক্যাপ্টেন চ্যাটার্জী, আমি সত্যিই একটা ইডিয়ট) বুঝলাম۔۔۔ আচ্ছা আমাকে তো অনেক আগেই তুলে আনতে পারতেন ইন্টারোগেশনের জন্য. এতদিন অপেক্ষা করার কারণ কি?

আরোহী: দেখুন সিনিয়ার অথোরিটি যা ঠিক করবেন সেভাবেই আমরা এগোবো.

হিয়া: আপনি আমাকে এতো কথা বললেন কোনো প্রব্লেম হবেনা নিশ্চয়۔۔۔

আরোহী: আমি সেটুকুই বলেছি যেটুকু আমার বলার অথোরিটি আছে, আর যেটুকু আপনার জানার এক্তিয়ার আছে.

এমনসময় পেছনে গমগমে গলায় কেউ বলে: Thank you so much officer۔۔۔۔۔ওনার এক্তিয়ার টা বরং আমি ঠিক করি۔۔۔

দেখা যাক উজানের সত্যিটা জানার পর–হিয়া কি পদক্ষেপ নেয়!!!!

(**এই গল্পে RAW, NIA, CIA এর মতো Govt. intelligence Organization এর নাম ব্যবহার করা হয়েছে গল্পের প্রেক্ষাপট সাজাতে. তবে খুব সামান্য কিছু তথ্য রইলো NIA সম্পর্কিত, আশা করি কেউ বিরক্ত হবেন না–আর পাঠকগণ আপনারা সবাই মনে করে কমেন্ট করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here