উড়ো পাতার ঢেউ পর্ব: ৩৬

0
444

#উড়ো_পাতার_ঢেউ
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ৩৬
_________________

ক্যানিয়ল হাত থেকে হকিস্টিকটা ফেলে দিলো।
হটিস্টিকের গায়ে র/ক্ত লেগে রয়েছে। কার র’ক্ত সেটা পার্থক্য করা দুষ্কর এখন। একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করে ব্যথায় কাতরাচ্ছে প্রত্যেকে। ক্যানিয়লও যে আঘাত পায়নি সেটা নয়। ঘাড়ে হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করার ফলে তার শুভ্র ঘাড় রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে।

হালে আছে একটা চেয়ারের সাথে আবদ্ধ অবস্থায়। তার ডান গালটা লাল হয়ে আছে র’ক্ত জমাট বেঁধে। ব্যথায় ওপাশটা অবশ এখন। ইরতিজার মতো তার ঠোঁট কে’টে র’ক্ত না পড়লেও নাক দিয়ে র’ক্ত ঠিকই পড়েছে। যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠতে ইচ্ছা করছে, তবুও সে নিশ্চুপ ক্ষুব্ধ চাহনিতে ক্যানিয়লের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখেছে। ক্যানিয়ল তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
“মেয়েদের গায়ে কখনোই হাত তুলতে চাইনি আমি। এটা আমার পছন্দ না। এই জন্য সেদিন রে’হা’ই দিয়েছিলাম তোমাকে। কিন্তু আজ তোমাকে আঘাত না করে থাকতে পারলাম না। কারণ তুমি অ’স’ভ্য’তা’মি’র সীমা অতিক্রম করেছো। ব্যাপারটা শুধু আমাদের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকা শ্রেয় ছিল। তোমার উচিত হয়নি আমার মানুষদের এর মাঝে টানা। উচিত হয়নি ওর গালের ওই লাল অবস্থার সৃষ্টি করা! যদি এটা না করতে তাহলে তোমার গালও এখন দ্বিগুণ লাল হতো না।”

হালে দাঁতে দাঁত চেপে গা’লি দিয়ে উঠলো,
“সন অব অ্যা বি…”

কথা সম্পূর্ণ করার আগেই ক্যানিয়ল আরও একটা থা/প্প/ড় বসিয়ে দিলো হালের গালে। হালের মুখ অন্যদিকে সরে গেল। অসহনীয় ব্যথারা চিৎকার করে উঠলো! যদিও হালের মুখ থেকে তেমন কোনো শব্দ নির্গত হলো না।

ক্যানিয়ল চেয়ারের দুই হাতলে ভর দিয়ে কিঞ্চিৎ ঝুঁকলো হালের দিকে। হালের চোখের দৃষ্টি তখনও ক্ষুব্ধতার পরিচয় বহন করছে। ক্যানিয়ল তার হিং’স্র চোখ জোড়া হালের চোখেতে রেখে বললো,
“আর কখনও এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা করো না। এবারের মতো আঘাতটা সামলে উঠতে পেরেছো, পরবর্তীকালে সেটা নাও পারতে পারো। কারণ আমি যথেষ্ট ভালো আচরণ বজায় রাখবো না। রাখার চেষ্টা করবো না। অবস্থা হবে খুব করুণ!”

ক্যানিয়ল ইরতিজার কাছে এসে ওর একটা হাত ধরে বললো,
“চলো।”

ইরতিজাকে নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল ক্যানিয়ল, কিন্তু কয়েক পা সামনে এগিয়েই হঠাৎ থেমে গেল ইরতিজা। ক্যানিয়ল পিছন ফিরে তাকালো। ইরতিজা ওর চোখে চোখ রেখে বললো,
“ওদের শাস্তি এখনও সম্পূর্ণ হয়নি।”

ক্যানিয়লের নেত্রতে জিজ্ঞাসু ভাব এসে হানা দিলো। ইরতিজা মেঝেতে শায়িত অবস্থায় ব্যথায় কাতরানো বেলিককে দেখিয়ে বললো,
“ও আমার সাথে নোংরা আচরণ করেছে!”

ক্যানিয়লের দৃষ্টি মুহূর্তেই ইরতিজার থেকে ঘুরে গিয়ে শান্ত ক্ষিপ্র রূপ নিয়ে তাকালো বেলিকের দিকে। ওর নিঝুম হিং’স্র চোখ জোড়া দেখে বেলিক আরও জড়োসড়ো হয়ে গেল ভয়ে। ক্যানিয়ল জিজ্ঞেস করলো,
“কী করেছে ও?”

কথাটা বলতেই ঘেন্না বোধ হচ্ছে ইরতিজার। কিন্তু ক্যানিয়লকে বিষয়টা জানানো উচিত বলে মনে করছে। বেলিকের এত কম মার খাওয়া তার কাছে দৃষ্টিকটু লাগছে। বেলিক যদি আরও আঘাত পেতো তাহলে দৃশ্যটা আরও বেশি দৃষ্টি নন্দন হতো। ইরতিজা রোষপূর্ণ হয়ে বলে উঠলো,
“ও আমার মাথার হিজাব খুলে ফেলেছে! আমার চুল শুঁকেছে! আমার ঠোঁট স্পর্শ করেছে!”

ক্যানিয়লের চোখে দ্বিগুণ হিং’স্রতা জেগে উঠলো। ক্ষণকাল সে একইভাবে তাকিয়ে রইল বেলিকের দিকে। তারপর হঠাৎ এগিয়ে এলো বেলিকের কাছে।
বেলিক ভয়ে মিইয়ে যাচ্ছে। ক্যানিয়লের চোখে এই মুহূর্তে মানবিকতার ছোঁয়া মিললো না। ওর নিষ্প্রাণ আঁখি জোড়ায় তাকিয়ে বেলিকের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। ক্যানিয়লের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠেছে। বেলিককে বললো,
“অন্যের গার্লফ্রেন্ডের সাথে বেয়াদবিই সহ্য করতে পারি না, সেখানে আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে বেয়াদবির সাজা কী হতে পারে সেটা মাথায় রাখা উচিত ছিল তোমার।”

অকস্মাৎ ক্যানিয়ল বেলিকের চুল শক্ত মুষ্টিতে চেপে ধরলো। ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠলো বেলিক। ক্যানিয়ল শুধালো,
“তোমার চুলগুলো আমার শরীরে জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে।”
এই বলে আরও জোরে চেপে ধরলো। ওদিকে বেলিকের আ’র্ত’না’দও খুব জোরে শোনা গেল। ক্যানিয়ল বেলিককে ছেড়ে দিয়ে এগিয়ে এলো ইরতিজার দিকে। ইরতিজা অবাক! কথাটা জানার পরও ক্যানিয়ল বেলিককে কিছু না বলে, না মে’রে এভাবে ছেড়ে দিয়েছে?

“তুমি ওকে মা’রলে না কেন?” ক্যানিয়ল নিকটে আসা মাত্রই প্রশ্ন ছুঁড়লো ইরতিজা।

ক্যানিয়ল উত্তর না দিয়ে ওর এক হাত ধরে যেতে উদ্যত হলেই ইরতিজা হাত ছাড়িয়ে নিলো। বেলিকের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বললো,
“ওকে তুমি এভাবে ছেড়ে দিতে পারো না। ওর শরীরে আরও আ’ঘা’তের চিহ্ন থাকা প্রয়োজন।”

ক্যানিয়ল কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইল নিশ্চুপ, তারপর ইরতিজাকে টেনে নিয়ে বেরিয়ে এলো। গাড়িতে উঠে বসা মাত্রই ইরতিজা বললো,
“তুমি কেন মা’র’লে না ওকে? ওকে আরও মা’র’ধ’র করা প্রয়োজন ছিল। কেন মা’র’লে না তুমি? এমনি সময় তো অন্যদের খুব মা’র’তে পারো, তাহলে আজ কেন নয়?”

ক্যানিয়ল গাড়ি স্টার্ট করে বললো,
“চুপ করো ইজা। এই মুহূর্তে কিছু শুনতে ভালো লাগছে না।”

ইরতিজার ভিতরটা খুব আঘাতপ্রাপ্ত হলো। যা তার দু চোখে জল এনে দিলো। সে ভেবেছিল কথাটা জানার পর ক্যানিয়ল বেলিককে খুব মা’র’ধ’র করবে, কিন্তু ক্যানিয়ল তেমন কিছুই করেনি। হিজাব খুলে ফেলা, চুলের ঘ্রাণ শোঁকা, এই ব্যাপার দুটো জীবনের কুৎসিত মুহূর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম! এমন কুৎসিত কাজ এর আগে কেউ করেনি তার সাথে। ক্যানিয়লের কারণে আজ সে আ’ঘা’ত পেয়েছে, এ জন্য কোনো অভিযোগ নেই তার ক্যানিয়লের প্রতি। সব অভিযোগ একটা কারণেই, সেটা হলো ক্যানিয়ল কথাটা জানার পরও কেন মা/র/লো না বেলিককে? তবে কি ক্যানিয়ল তাকে ভালোবাসে না? এ জন্যই কি তার সাথে কে কি করলো না করলো এই নিয়ে যায় আসে ক্যানিয়লের? ইরতিজার নয়ন আরও ভার হয়। ঝরে পড়ে নয়ন নির। সিদ্ধান্ত নিলো ক্যানিয়লের সাথে চলতি পথে আর একটা কথাও বলবে না সে।

গাড়ি এসে থামলো একটা শপের সামনে। ক্যানিয়ল বেরিয়ে গেল, ইরতিজাকে নামতে নিষেধ করলো। হঠাৎ এখানে কেন গাড়ি দাঁড় করানো হলো বুঝতে পারছে না ইরতিজা।
কিছু সময় পরই ফিরে এলো ক্যানিয়ল। তার হাতে একটা শপিং ব্যাগ। গাড়িতে উঠে ব্যাগ থেকে বের করলো একটা হিজাব। হিজাবটা পরম যত্নের সাথে জড়িয়ে দিলো ইরতিজার মাথায়।
ক্যানিয়লের এই কাজটায় ইরতিজার মনের সকল অভিমান কেটে গিয়ে এক ফালি রোদ্দুর ছড়িয়ে পড়লো মন সাম্রাজ্যে। সে পলকহীন মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে ছিল ক্যানিয়লের দিকে। এর মাঝেই ক্যানিয়ল দুই হাতের আলতো ছোঁয়ায় তার মাথাটা নিজের নিকটে নিয়ে গেল। ওষ্ঠাধর ছোঁয়ালো ইরতিজার মাথায়।
ইরতিজা এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল। থমকে গেল তার হৃদস্পন্দনও। দু চোখে বিস্ময়ের ঘোর ছায়া নেমে এলো। ক্যানিয়ল বললো,
“বেলিকের করা কাজ চরম ভুল ছিল! আমি নিশ্চয়ই এ ভুল ক্ষমা করবো না।”

ইরতিজা বিস্ময় থমথমে মুখে তাকিয়ে আছে। ক্যানিয়লের কথা তার কর্ণকুহরে প্রবেশ করলেও মনে প্রভাব ফেলার ক্ষমতা দেখাতে পারেনি। একটু আগের ঘটে যাওয়া ঘটনাটায় সে বাকরুদ্ধ, অভিভূত এবং স্তব্ধ!

পথে আর কোনো কথা হলো না দুজনের মাঝে। ইরতিজা বাড়িতে ঢুকলো মুখ ঢাকা অবস্থায়। বাড়ির লোক ভাবছে সে এতক্ষণ সাজিদের সাথে ছিল। কিন্তু এতক্ষণে যে তার জীবনে কত কী ঘটে গেছে তার প্রত্যক্ষদর্শী ছিল একমাত্র সে। বাড়িতে মুখ ঢেকে প্রবেশ করলেও অসাবধান বশত নওরিনের সামনে তার মুখ প্রকাশ পেয়ে গেল। অপ্রস্তুত হয়ে গেল ইরতিজা। ইরতিজার ঠোঁট দেখে কেমন চোখ সরু করলো নওরিন। তার মন প্রথমেই ভুল ভেবে নিলো ক্ষতটা দেখে। পর মুহূর্তেই তার খেয়ালে এলো ইরতিজার গাল লালচে হয়ে আছে। সে এবার বিস্মিত হলো। সে ধরে নিলো ইরতিজার ঠোঁটের ক্ষত এবং গালের এমন লালচে বর্ণ, উভয় কারণের পিছনেই সাজিদ আছে। সে ইরতিজাকে জিজ্ঞেস করলো,
“এনিথিং রং?”

ইরতিজা কী উত্তর দেবে বুঝতে পারছে না। নওরিন তাকে দেখে কী ভাবছে কে জানে! কিন্তু মিথ্যা একটা গল্প তো বানাতেই হবে। ইরতিজার মন বিচলিত, কিন্তু সে চেহারা যথেষ্ট দৃঢ় রেখে বললো,
“আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে…গাড়ি থেকে নামার সময় পড়ে গিয়েছিলাম। যার কারণে এই…”
ইরতিজা স্পষ্টতরভাবে সব কথা শেষ করলো না।
নওরিনের দৃষ্টি সন্দিহান। বোঝাই যাচ্ছে সে ইরতিজার কথা বিশ্বাস করেনি। দু চোখে সন্দেহের প্রকাশ, মুখে বললো,
“ঠিক আছে, ফ্রেশ হয়ে নাও।”

নওরিন চলে গেল। হাফ ছেড়ে বেঁচেও যেন বাঁচতে পারলো না ইরতিজা।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ইরতিজার ক্যানিয়লকে মনে পড়ছিল। গাড়িতে থাকাকালীন দৃশ্যটা বার বার ভেসে উঠছিল চোখে। হিজাবটা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখছিল। এই হিজাবে ক্যানিয়লের ওষ্ঠ পরশ লেগে রয়েছে! ভালো লাগার রিম ঝিমঝিম বৃষ্টি হঠাৎই কোথা থেকে এসে যেন ছুঁয়ে দিলো ইরতিজাকে। এর মধ্যেই শুনতে পেল রুমের ভিতর মোবাইলটা বাজছে। ইরতিজা বেরিয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে। সাজিদের নামটা দেখে কিঞ্চিৎ বিস্মিত হলো। কল রিসিভ করে কানে লাগাতেই সাজিদ বললো,
“কোথায় কোথায় আ’ঘা’ত পেয়েছেন ইরতিজা?”

“বুঝলাম না। কীসের আ’ঘা’তের কথা বলছেন?”

“কেন? আমার গাড়ি থেকে নামার সময় যে পড়ে গেলেন, সেই আ’ঘা’ত!”

ইরতিজা চমকে উঠলো,
“আপনি জানলেন কীভাবে?”

“আমার গাড়ি থেকে পড়ে গেলেন, আমার সামনে, আর আমি জানবো না?”

সাজিদের কণ্ঠে ব্যাঙ্গাত্মক ভাব। ইরতিজা বুঝতে পারলো নওরিন কথাটা জানিয়েছে সাজিদকে। কারণ কথাগুলো তো সে নওরিনকেই বলেছিল।

“আসলে…”

সাজিদ ইরতিজাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
“আপনার আসল কথা রাখুন, সত্যি কথা বলুন। মিথ্যা কেন বলেছেন আপনি? আপনি তো গাড়ি থেকে নামার সময় পড়েননি। তাহলে কেন এই মিথ্যা বলা?”

চু’রি করতে গিয়ে ধরা পড়ে যাওয়া চো’রের মতো ফিল হচ্ছে ইরতিজার। কী বলবে এখন? সে কণ্ঠকে যথেষ্ট সবল রেখে বললো,
“আমি কি আসামি? পুলিশের মতো জেরা করছেন কেন আমাকে?”

“আপনি আসামি নন, কিন্তু আমার হবু স্ত্রী আপনি। আপনাকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ তো করতেই পারি।”

“পারেন না। আমার উপর কোনো অধিকার নেই আপনার। আমি আপনাকে অনেক আগেই বলে দিয়েছি আপনাকে আমি বিয়ে করবো না। যেখানে আমাদের বিয়েটাই হবে না, সেখানে এমন জিজ্ঞাসাবাদ করার মাধ্যমে অধিকার দেখানোর চেষ্টা করবেন না।”

“আমি যদি বলি আমাকে আপনার বিয়ে করতেই হবে, তাহলে?”

“আমার এমন কোনো বাধ্য বাধকতা নেই। যখন আমি বলেছি বিয়েটা করবো না, তখন অবশ্যই এটা ওই ‘না’ শব্দতেই আটকে থাকবে।”

ওপাশটা অনেকক্ষণ নিঝুম রইল। এরপর হঠাৎ নীরবতার জাল ছিদ্র করে সাজিদের কথাগুলো ধারালো ফ’লা’র মতো এসে আ’ঘা’ত করলো ইরতিজাকে।
“আপনার ঠোঁটের ওই ক্ষত কি আপনার প্রেমিকের কারণে সৃষ্টি হয়েছে ইরতিজা?”

“মানে?”

“আপনার প্রেমিক চুমু খেয়েছে আপনাকে, এটাই তো?”

ইরতিজা রাগে ফেঁটে পড়ে বললো,
“নিজের মন গড়া মতো যা তা কথা বলা বন্ধ করুন সাজিদ। আপনি লিমিট ক্রস করে যাচ্ছেন!”

সাজিদ ইরতিজার কথায় কর্ণপাত না করে বললো,
“আপনার বাবা চান আমাদের বিয়েটা হোক। আর আপনি আপনার বাবার চাওয়াকে অগ্রাহ্য করতে পারবেন না এটা ভালো করেই জানেন। আর সবচেয়ে বড়ো কথা হলো আপনার প্রেমিক একজন ক্রিশ্চিয়ান।”

ইরতিজার কাছে সত্যিই অসহ্য লাগছে বিষয়টা। সাজিদ এখনও জোনাসকে তার প্রেমিক ভাবে! ইরতিজা আর এই ভুল বোঝাবুঝিটা নিতে পারছে না। বললো,
“আপনাকে একটা সত্যি কথা বলবো। এটা আসলেই সত্যি। মিথ্যার কোনো অবকাশ নেই এখানে। জোনাস আমার প্রেমিক নয়। না আগে কখনও ছিল। আমরা আগে জাস্ট বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম। হ্যাঁ, মাঝখান থেকে ও আমাকে প্রোপোজ করেছিল। আর সেটা করার পর থেকে আমদের বন্ধুত্বের সেই সুন্দর সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে গেছে! আমদের সম্পর্কটা এখন বন্ধুতেই নেই, সেখানে আপনি প্রেমিক কী করে ভাবলেন? এটা একান্ত আপনার ভুল ধারণা। এছাড়া কিছু নয়।”

“আমি সহ্য করবো না ইরতিজা। আগে আপনার প্রেমিকের ব্যাপারটা কষ্ট হলেও সহ্য করতে পারতাম। কিন্তু এখন? এখন পারি না। রাগ হয়, হিংসা হয়, কষ্ট হয়। আপনি দূরে থাকুন জোনাসের থেকে। না হলে আমাকে এগিয়ে আসতে হবে। আমি চাই না আপনি কষ্ট পান। আমি আপনাকে ঠিক তখনই বিয়ে করতে চেয়েছি, যখন আপনি চাইবেন এই বিয়েটা হোক। আমাকে এগিয়ে আসতে বাধ্য করবেন না। একটা অসুখী সম্পর্কের সৃষ্টি হোক আমি চাই না।”

কল কাটলো সাজিদ।
সাজিদের কথাগুলো ইরতিজাকে বিমূঢ় করে রাখলো কিছুক্ষণ। সে অন্যমনস্ক অবস্থায়ই বললো,
“আমি কখনও চাইবো না বিয়েটা হোক। আর একটা অসুখী সম্পর্কের সৃষ্টি হোক সেটা তো কখনোই চাইবো না।”

ইরতিজা হাত থেকে মোবাইলটা বিছানায় ফেললো। হিজাবটার দিকে তাকিয়ে রইল অনেকক্ষণ। দেখতে দেখতে হঠাৎ একটা হৃদয় ছেড়া নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো ভিতর থেকে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here