একগুচ্ছ_ভালোবাসা লেখনীতে : আনিশা সাবিহা (ছদ্মবেশী) পর্ব : ১৬

#একগুচ্ছ_ভালোবাসা
লেখনীতে : আনিশা সাবিহা (ছদ্মবেশী)
পর্ব : ১৬
বিকেলে আমরা দলে দলে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় ধরে হাটছি। পা জোড়া নদীর বালিতে মাখো মাখো হয়ে যাচ্ছে বারে বারে। কিছু কিছু লাভবার্ডস দেখা দিচ্ছে হঠাৎ করে। মাঝে মাঝে কয়েকটা নৌকা আর ছোট ছোট ট্রলার দেখা দিচ্ছে। সূর্য দিগন্তে হেলে পড়াতে আকাশ নানানরকম রঙ সৃষ্টি করে সুন্দর হয়ে উঠেছে। এরই মাঝে অর্ণব হঠাৎ করেই সবার সামনে নৌশিনকে কোলে তুলে নিল। নৌশিনের মুখটা হয়েছে দেখার মতো। মেয়েটার মুখটা লজ্জায় একেবারে ছোট হয়ে গিয়েছে। আমরা সবাই মুখে হাত দিয়ে হাসছি। নেত্রা আপুনি ফাজলামির কন্ঠে বলে উঠল,,,
–“কিরে ছোটভাই? তুই তো দেখছি আজকাল বডিবিল্ডার হয়ে গেছিস।”
–“তো কি করব নেত্রাদি? আমার বউয়ের ক্লান্ত লাগছে। ওকে কিভাবে কষ্ট দিই?”
আমরা সবাই অর্ণবের কথায় ফিক করে হাসলাম। বোরহান ভাইয়া(নেত্রা আপুনির বর) দুষ্টুমির সুরে বললেন,,,
–“ওহ হো! কষ্ট দেওয়া চলবে না। ঠিকই তো। আমাদের নৌশিনকে কি করে কষ্ট দেবে আমাদের অর্ণব। বাট সবার সামনে রোমান্টিক ব্যাপার স্যাপার হয়ে গেল না শালা বাবু? নৌশিনের মুখটা তো দেখতে অবধি পারছি না।”
অর্ণব হাঁটতে হাঁটতে বলে উঠল,,,,
–“হোক না রোমান্টিক ক্ষতি কি দুলাভাই? আর নৌশিনের কথা বললে ও তো একটুতেই লজ্জায় মুখটা ছোট করে ফেলে। ওকে দেখা না দেখা এক।”
–“আচ্ছা দেখিস। নৌশিনকে নিয়ে উল্টে পরে যাস না। তুই তো নিজেই ঠিক মতো চলতে পারিস না। এখন নৌশিনকে কোলে নিয়ে ফেলেছিস। এখন তোর থেকে বেশি নৌশিনকে নিয়ে ভয় হচ্ছে আমার। তোর যা কঙ্কাল মার্কা শরীর!”

অনুরাগের কথায় সবাই হু হা করে হেসে দেয়। অর্ণব পিছন ফিরে তাকিয়ে অসহায় ভঙ্গিতে বলে ওঠে,,,,
–“ভাইয়া!”
অনুরাগ কিছু না বলে স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতে থাকে। এরই মাঝে বর্ণদার সাথে চোখাচোখি হয় আমার। সে ইশারায় আমাকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে। আমি মাথা নাড়িয়ে জবাব দিই কিছুই হয়নি। তারপর তার থেকে চোখ সরিয়ে নিতেই বোরহান ভাইয়ার দিকে চোখ পড়ে আমার। বোরহান ভাইয়া নেত্রা আপুনিকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলছেন,,,
–“চলো না। আজকে আমরাও অতীত ঘুরে আসি। আই মিন আমাকেও একটু তোমায় কোলে তুলে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া যায় না?”
নেত্রা আপুনি চোখ গরম করে তাকায় ভাইয়ার দিকে। সাথে সাথে ভাইয়া হালকা ঢক গিলে নেয়। আপুনি চোখ সরিয়ে হাঁটতে থাকে। ভাইয়া মিনমিনে গলায় বলে ওঠেন,,,,
–“কুমড়োকে কোলে তুলতে চাইলাম সে উঠতে চাইলো না। কি করার মানুষের ভালো করতে নেই।”
বোরহান ভাইয়ার কথা শুনে হাসতে গিয়েও হাসতে পারলাম না আমি। মুখ টিপে হাঁটতে লাগলাম। এখন হাসতে গেলে নির্ঘাত ভাইয়া আর আপুনির মানসম্মান ফালুদা হয়ে যাবে। তখনই আপুনি রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো বোরহান ভাইয়ার দিকে। রাগে কটমট করতে করতে যথাসম্ভব আস্তে করে বলল,,,,
–“কি বললে তুমি আমাকে? তুমি আমাকে ইন্ডাইরেক্টলি ইনসাল্ট করলে? এমন করতে পারলে তুমি বোরহান? এখন বয়স হয়েছে বলে তোমাকে আমায় কুমড়ো লাগছে? আমি আশা করিনি।”
কথাটা বলে ভাইয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে পাশ কাটিয়ে দ্রুত হেঁটে সামনে গেল আপুনি। এবার না হেসে থাকতে পারলাম না আমি। ফিক করে হেসে দিলাম। আমার হাসিতে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন অনুরাগ। অদ্রিজাকে এপাশ থেকে ওপাশে কোলে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন,,,
–“কি সমস্যা? মাথার বাকি তার গুলোও কি ছিঁড়ে ফেলেছো?”
–“মানে? কি বলতে চাইছেন? আমার মাথার তার ছিঁড়া?” (রেগেমেগে)
অনুরাগ হালকা ঘুমের হাই তুলতে তুলতে অলস ভঙিতে বললেন,,,
–“এনি ডাউট? যদি তোমার মাথার তারগুলো ছিঁড়া না হত তাহলে কি একা একা হাসতে?”
আমি রাগে মুখ ফুলিয়ে তুললাম। কত বড় সাহস! আমাকে এভাবে ইনসাল্ট করলেন উনি ভাবা যায়? এই ছেলে মানুষ মানে ঘর শত্রু বিবিশন! মানে এরা যেন নিজের বউকে ইন্ডাইরেক্টলি ইনসাল্ট করতেই পছন্দ করে। এই লোকটা যদি আমার জায়গায় থাকত তাহলে তো হু হা করে হাসতেন। নাকি হাসতেন না? হয়ত হাসতেন না। উনি হাসতে জানেন নাকি? আমি বিরক্তিকর সুরে বললাম,,,
–“হুহ। সবাই তো আপনার মতো রসকষহীন মানুষ না। যে সারাদিন নিজের মুখটা বেলুনের মতো ফুলিশে রাখতে পছন্দ করে। যার হাসিতে এক গাদা এলার্জি থাকে! আমি ওইরকম মানুষের তালিকায় নেই বুঝলেন?”
কথাটা বলে জুতো খুলে হাতে নিলাম আমি। সাথে সাথে অনুরাগ কপাল ভাঁজ করে বললেন,,,
–“এখন জুতো খুলছো কেন?”
–“নদীর তীরে এভাবে না হাঁটলে নদীর তীরে হাঁটার আসল মজাটাই পাওয়া যায় না বুঝলেন?”
কথাটা শেষ হতে যতসময়। উনার রাগমাখা ধমক দিতে দেরি নেই।
–“এই মেয়ে! এটা কি গ্রামের নদীর তীর ভেবেছো? যে খালি পায়ে হাঁটবে? এটা শীতলক্ষ্যা নদী। এখানে অনেকরকম আর্বজনা সহ কাঁচের টুকরোও থাকতে পারে তো। আর তুমি জুতা খুলে বসে আছো?”
উনার ধমকে আমি আশেপাশে তাকালাম। সবাই থেমে আমার আর অনুরাগকে ঢ্যাপ ঢ্যাপ করে দেখছে। বর্ণদাও একই ভাবে তাকিয়ে আছে। বেশ অপমানিত বোধ করলাম। চোখে পানি চিকচিক করতে লাগল অপমানে। লোকটা তো ঠিক ভাবেই বুঝাতে পারত! এভাবে অপমান না করলে চলছিল না? নাক টেনে গটগট করে হেঁটে এগিয়ে গেলাম সামনে। পিছনে বর্ণদার কন্ঠ শুনতে পেলাম।
–“নুড়ি থাম!”
কারো কথা শুনতে ইচ্ছে করল না। তাই পিছু ফিরে দেখলাম না। অর্ণব আর নৌশিন আরো অনেক আগে এগিয়ে গেছে। আমিও সেই পথ ধরেই হাঁটতে থাকলাম। কিন্তু বেশিক্ষণ হাঁটা হলো না। পায়ে কিছু একটা বিঁধল। তীক্ষ্ণ চিৎকার দিয়ে উঠলাম। ডান পা তুলতেই লাল বর্ণের রক্ত দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। পায়ে বিঁধে আছে ছোট্ট কাঁচের টুকরো। যেটা বের করার সাহসটুকু হচ্ছে না। অনুরাগ অদ্রিজাকে আপুনির কোলে দিয়ে উনি আর বর্ণদা দৌড়ে এলেন। অনুরাগ এসেই আমাকে আরেকবার ধমক দিলেন।
–“দেখছো নেত্রাদি? এমনি এমনি ওকে ধমক দিইনি আমি। অযথা আমাকে দোষারোপ করছিলে।”
আপুনি হেঁটে এগিয়ে এসে বললেন,,,,
–“তাই বলে ধমক না দিলেও তো পারতি।”
–“হ্যাঁ হ্যাঁ এখনও তো ওর সাইডই নিবি।”
আমি তাদের কথপোকথন শুনতেই নিজের ডান পায়ে আবারও জোরেসরে ব্যাথা লাগতেই চমকে পায়ের দিকে তাকালাম। বর্ণদা অলরেডি কাঁচের টুকরো বের করে ফেলেছে। হাতে নিয়ে সেটা দূরে ফেলে দিয়ে দাঁড়িয়ে নিজের প্যান্ট ঝাড়তে ঝাড়তে বলল,,,
–“ডান। ভাগ্যিস অনুরাগ ভাই আর নেত্রা আপুর কথপোকথনে ব্যস্ত ছিলি। নাহলে তো জীবনেও তোর পা থেকে কাঁচের টুকরো বের করা যেত না।”
কথাটা বলে হেলে আমার পায়ে নিজের রুমাল বেঁধে দিলো বর্ণদা। হঠাৎই অদ্রিজার জোরে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে কান্না করে চলেছে। মনে হয় মেয়েটা রক্ত দেখে ভয় পেয়েছে। পায়ের জুতো পড়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে গেলাম অদ্রিজার কাছে। অদ্রিজাকে কোলে তুলে নিতেই আপুনি জোর গলায় বলে উঠলো….
–“দেখেছো মেয়ের কান্ড? নিজের পায়ে লেগেছে তোমার। এভাবে অদ্রিজাকে কতদূর নিয়ে হাঁটবে?”
–“যতদূর হাঁটা যায় আপুনি।”
কথাটা বলে সামনে দিকে ঘুরতেই আমি বিস্ময়ের ছোঁয়া দিয়ে কোলে তুলে নিলেন অনুরাগ তাও অদ্রিজা সমেত। অদ্রিজা আমার কোলে, আমি অনুরাগের কোলে। সো মাচ ফানি! এক রাশ লজ্জা নিয়ে আশেপাশে তাকালাম। আপুনি আর ভাইয়া হেঁসে কুটিকুটি। বর্ণদাও হাসছে। কিন্তু তার হাসিটা স্বইচ্ছাকৃত হাসি নয়। সেটা জানি। ক্লাস সেভেনে পড়া নীলও হাসছে। শুধু তাই নয় আশেপাশের মানুষজন সবাই আমাদের দিকে রসগোল্লা ন্যায় চোখ করে তাকিয়ে আছে। ওদের দৃষ্টি দেখে নিচু হয়ে গেলাম আমি। অনুরাগ হাঁটতে হাঁটতে বললেন,,,
–“নো মোর টক। আশা করি কোলে নিয়েছি কেন এমন ডাফার মার্কা কুয়েশ্চন করবে না। আজ হয়ত বর্ণই কোলে নিত তোমাকে। কিন্তু সেটা ভালো দেখাবে না সবার সামনে তাই আমি….”
আমি উনার মুখের কথা কেঁড়ে নিয়ে বললাম….
–“তাই আপনিই কোলে নিয়েছেন বাধ্য হয়ে। নিজের ইচ্ছেতে তো আমায় কোলে নেন নি তাই না?”
অনুরাগ নিজের মুখটা গম্ভীর করে ফেললেন। উনার এই গাম্ভীর্যের মাঝে রয়েছে হাজারো রহস্য! হুট করে নীল আপুনিকে বলে উঠল….
–“আম্মু আম্মু। আমি কবে এভাবে আমার বউকে কোলে নেব?”
–“তুই আগে বড় হ বাবা। এখন না হয় তোর ছোট মামা আর বড় মামাকে দেখে শিখে নে।”
কথাটা বলে বোরহান ভাইয়া পেটে হাত দিয়ে হো হো করে হাসলেন। সাথে নেত্রা আপুনিও মিষ্টি হাসি দিলো।
অবশেষে দেখা গেলো একটা ফুচকার দোকান। সেখানে নৌশিন ফুসকা খেয়ে চলেছে। পাশেই অর্ণব বসে অসহায় ভঙিতে ফুসকা চাইছে কিন্তু নৌশিন নিজের খাওয়ায় মগ্ন। আসলে এই সময় যা হয় আর কি!
অনুরাগ আমাকে আর অদ্রিজাকে নিয়ে গিয়ে সেখানে বসাতেই অর্ণব দাঁড়িয়ে মাথা চুলকিয়ে বলে উঠল….
–“আসলে ভাইয়া হয়েছে কি! নৌশিনের খিদে পেয়েছিল তাই।”
অনুরাগ পকেটে হাত দিয়ে অর্ণবের কথায় পাত্তা না দিয়ে নৌশিনের কাছে গিয়ে নম্র গলায় বলে উঠলেন,,,
–“খিদে কমেছে নৌশিন? নাকি অন্যকিছু খাবে?”
–” না ভাইয়া। খিদে কমেছে। আপনিও বসুন না।”
–“হ্যাঁ হ্যাঁ তা তো অবশ্যই বসবো। (অর্ণবের দিকে তাকিয়ে) আর অর্ণব নৌশিনকে নিয়ে তোকে বাহানা দেবার দরকার নেই বুঝলি?”
কথাটা বলে চেয়ার টেনে বসে পড়লেন অনুরাগ। সবাই একে একে বসে পড়ল। আরো ৪ প্লেট ফুচকা অর্ডার দিয়ে মিনিট পাঁচেক পরই উঠে গেলেন অনুরাগ। উফফ…এই লোকটা একটা জায়গায় শান্তি করে বসে থাকতেও পারে না। কয়েক সেকেন্ড পরই অনুরাগের পেছন পেছন উঠে গেল বর্ণদা। ওয়াও! আজকাল দেখছি অনুরাগের সাথে থেকে থেকে এই ছেলের মাঝেও অনুরাগ নামক রোগটা পার হচ্ছে। একটা ভেংচি কাটতেই আমাকে ফুচকার প্লেট দিয়ে গেল। আমি একটা ফুচকা মুখে দিতেই অদ্রিজা আমার মুখের ফুচকার দিকে চেয়ে রইল। তারপর ফুসকার প্লেটের দিকে ছোট ছোট হাত দিয়ে ইশারা করল সে। আমি ওর মাথায় চুমু খেয়ে আদুরে গলায় বললাম….
–“ফুচকা খাবে অদ্রিজা বাবু?”
অদ্রিজা কিছু না বলে হাত পা নাড়াতে শুরু করল।
–“কিন্তু তুমি তো চিবুতে পারবে না সোনা!”
কথাটা বলে নরম দৃষ্টিতে তাকালাম আমি। ও আমার দিকে টলটল দৃষ্টিতে তাকাল। উপায় না পেয়ে নিজের হাতে ফুচকা ভেঙে নিয়ে হাতে একটু গুঁড়ো গুঁড়ো করে নিয়ে ওর মুখের সামনে ধরতেই ও মুখে নিয়ে নিল ফুচকা। ওর মুখের রিয়েকশন দেখতে ব্যস্ত আমি। মুখটা জড়িয়ে জড়িয়ে খাচ্ছে মেয়েটা। নিজের জিহ্বা দিয়ে আলতো শব্দ করছে। আমি ওর কান্ডতে হেঁসে দিলাম।

ফুচকা খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষে অর্ণব আশেপাশে তাকিয়ে বলে উঠল,,,
–“ভাইয়া আর বর্ণ ভাই কোথায় গেল? নতুন ভাবি কিছু জানো?”
–“না তো। উনারা দুজন কোথায় উঠে চলে গেল। হয়ত আশেপাশেই আছে।”
অর্ণব ফুচকওয়ালা মামাকে টাকা এগিয়ে দিয়ে উঠে নৌশিনকে ধরে বলল….
–“এখন তো অন্ধকার হয়ে আসছে। ফার্মহাউজে ফিরতে হবে।”
–“আচ্ছা তোমরা বসো আমি দেখে আসছি।”
কথাটা বলে উঠে ডান পায়ে কম চাপ ফেলে হাঁটার চেষ্টা করলাম আমি। আপুনি বলে উঠল,,,
–“আরে অনুশ্রী! তুমি উঠছো কেন? তোমার তো পা কেটেছে। তুমি বসো তোমার বোরহান ভাইয়া যাচ্ছে।”
আমি মাথা নাড়িয়ে বলে উঠলাম….
–“সমস্যা নেই আপুনি তাছাড়া ভাইয়া আর তোমার খাওয়া হয়নি। অর্ণব একটু অদ্রিজাকে কোলে নিবে? আমি দেখে আসি!”
অর্ণন এগিয়ে এসে অদ্রিজাকে কোলে নিল। আমি আস্তে আস্তে হাঁটতে হাঁটতে অনেকটাই দূরে এসে পড়লাম। আশেপাশে তাকিয়েও এই দুটো ব্যক্তির কুলকিনারা পেলাম না আমি। রাগ হলো খুব। আরো এগোতেই হঠাৎই কয়েকটা পিচ্চি বাচ্চা এসে আমার সামনে দাঁড়াল। আমি থেমে গেলাম। ওদের দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালাম। ওদের হাতে বড় বড় মোটা কাগজ। আমি কিছু বলার আগেই ওরা এক সারিতে দাঁড়িয়ে কাগজ খুলে দাঁড়াল এক এক করে।
আমি পড়ার চেষ্টা করলাম। প্রথমজনের হাতের কাগজে লিখা ‘ভা’, দ্বিতীয় জনের হাতের কাগজে লিখা ‘লো’, তৃতীয় জনের হাতের কাগজে লিখা বা, চতুর্থ জনের হাতের কাগজে লিখা ‘সি’। আমি অস্ফুটস্বরে বললাম,,,
–“ভালোবাসি!”
পরের আবারও এক ঝাঁক বাচ্চা এসে দাঁড়াল। নিজেদের কাগজ মেলল। তাদের সবার কাগজে একটা একটা করে অক্ষর লিখা। সব মিলিয়ে পৃথিবীর এক ম্যাজিক্যাল বাক্য তৈরি হয়। সুন্দরতম বাক্য তৈরি হয়। আমি বিস্মিত সুরে বললাম,,,
–“তুমি আমার #একগুচ্ছ_ভালোবাসা!”
আমার বিস্ময়ের যেন পাখনা জগিয়েছে। ডানা মেলে উড়ে উড়ে তারা আকাশ ছুঁয়ে চলেছে।

এরইমাঝে তাড়াহুড়ো করে ছুটে এলেন অনুরাগ। বাচ্চাদের দেখে সে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। গলা খাঁকারি দিয়ে বলে উঠলেন….
–“অনুশ্রী। তুমি এখানে?”
–“হ্যাঁ আমি তো এখানে। আপনাদের এসেছিলাম কিন্তু এসব কি?” (সন্দেহি দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
উনি বাচ্চাদের হাতে থাকা কাগজগুলো পড়ে বললেন,,,
–“আই ডোন্ট নো। আই থিংক এসব বর্ণের কাজ।”
আমার একটু সন্দেহ হলো। বর্ণদার কাজ? খানিকটা ফিচেল গলায় বললাম,,,
–“আই থিংক? মানে আপনি সিউর না? ও তো আপনার সাথেই ছিল।”
উনি একটি থতমত খেলেন। আমার দিকে এক পলক তাকালেন। উনার চোখে কিছুটা সংশয়। হালকা কেশে বললেন,,,,
–“হ্যাঁ ছিল তো। বাট আমি একটু আগে একা হাঁটতে চলে গিয়েছিলাম তখনই হয়ত ও এসব করেছে।”
–“আচ্ছা আপনি দাঁড়ান আমি বর্ণদাকে জিজ্ঞেস করে উনাকে নিয়ে আসছি।”
কথাটা বলে যেতে নিলাম আমি সামনের দিকে। কিন্তু অনুরাগ আমার হাত টেনে ধরতেই টাল সামলাতে না পেরে উনার বুকে মাথাটা লাগল। বাচ্চাগুলো চলে গেল। ওদের ডাকতে গিয়েও ডাকতে পারলাম না। ওরা দৌড়ে চলে গেল। ওদের থেকে হয়ত জানতে পারতাম এই কাজটা কার! এই বিষয়টা জানতে মনটাই ঝড় উঠে গিয়েছে। উথাল-পাতাল করছে। অনুরাগ আমাকে কোলে তুলে নিয়ে ধমকের সুরে বললেন,,
–“আমি বললাম তো বর্ণের কাজ এটা। বিশ্বাস হচ্ছে না কেন? এখন লাগা পা নিয়ে তোমায় যেতে হবে না বর্ণকে ডাকতে। আমি ওকে ফোন করে ডেকে নেব।”
কথাটা বলে ফুচকার দোকানটার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন উনি আমায় নিয়ে। আমি উনার দিকে এক মনে তাকিয়ে থাকলাম। উনার এই ধমক টা কি আমার পায়ে যাতে না লাগে সেকারণে ছিল? নাকি আমি যাতে বর্ণদার সাথে এই বিষয়টা নিয়ে প্রশ্ন করতে না পারি সেই বিষয়ে ছিল?

সেখানে পৌঁছে বর্ণদাকে ফোন করে নিলেন অনুরাগ। বর্ণদা মিনিট দশেক পরই চলে এলেন। তারপর সবাই মিলে আবারও চললাম ফার্মহাউজের উদ্দেশ্যে।
রাতে আর নিচে নামা হলো না আমার। কারো সাথে দেখা করাও হলো না। বর্ণদাকে প্রশ্ন করাও হলো না। অনুরাগের কথা আমার পায়ে লেগেছে তাই বাইরে যাওয়া চলবে না এবং হাঁটাচলা করা চলবে না। রাতে ঘরে খাবার খেয়ে অদ্রিজাকে ঘুম পাড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়লাম।
সকাল সকাল ঘুমটা ভাঙল চিৎকার চেঁচামেচিতে। বিরক্ত হয়ে উঠে বসলাম আমি। চিৎকার টা আসছে নিচে থেকে। দ্রুত পায়ে নিচে নেমে গেলাম আমি।

চলবে….🍀🍀
বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here