একটুখানি
#লামিয়া_চৌঃ
পর্ব :৭
কলরবের মা চলে যেতেই কুহু মাকে ডেকে বললো,
– মা ওরা কারা? কেনো এসেছিলেন?
– পাশের বিল্ডিং এর আপা এখানকার হাই স্কুলের শিক্ষক। উনার হাজবেন্ড আবার হেডটিচার।
– কেনো এসেছিলেন?
– ঐ যে উনার মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন তোর কাছে পড়ানোর জন্য।
– তুমি কি বললে?
– কি বলবো আর? তুই তো কোচিং সেন্টারেও পড়াস আর পড়ানো তো ভালো তাই বলেছি তুই আগামীকাল থেকেই ইরিনকে পড়াতে যাবি।
– পড়াবো ভালো কথা কিন্তু ওদের বাসায় যেয়ে কেনো পড়াতে হবে? পড়তে চাইলে বাসায় এসে পড়বে আমি ওদের বাসায় যেতে পারবো না।
– গেলে কি হবে?
– না আমার ভালো লাগে না।
– আচ্ছা বলে দেখবো।
..
কলরবের বাবা ইফতেখার সাহেব বাসায় বসে পেপার পড়ছিলেন। ইফতেখার সাহেবের অভ্যাসই হলো সময় পেলে পেপার পড়বেন। একবার পড়ে ফেলা পেপারও তিনি কয়েকবার করে পড়েন। স্ত্রীকে বাসায় ঢুকতে দেখেই ইফতেখার সাহেব পেপারটা ভাঁজ করে রাখতে রাখতে আহ্লাদী সুরে বললেন,
– মাস্টারনি কোথায় গিয়েছিলে তুমি?
– মাস্টার ঠিক করতে।
– কার?
– কার আবার তোমার ছেলেমেয়ের।
– ইরুর জন্য হলে ঠিক হতো কিন্তু কলরবের জন্য আবার কিসের মাস্টার দরকার? এখন তো ছেলের জন্য বউ খোঁজা ফরজ।
– তাই করতে গিয়েছিলাম বাবা।
– ইরু তুইও না বেশি কথা বলিস যা বাবার জন্য চা করে নিয়ে আয়।
– তাড়াতাড়ি ছেলেকে বিয়ে করাও তারপর পুত্রবধূকে দিয়ে নিজেদের ফরমায়েশ পূরণ করো। তোমাদের লজ্জা হওয়া উচিত পরের ঘরের আমানতকে দিয়ে এভাবে কাজ করাও।
ইরিনের কথা শুনে তার বাবা মা দুজনই হেসে দিলো।
ইরিন চা করতে চলে গেলেই ইফতেখার সাহেব বললেন,
– ইরু তখন কি বললো?
– আরে ওর কথায় কান দিও না তো পাগলি পুরাই।
– একদম তোমার মতো হা্হাহাহা।
..
ইরিন ভাইয়ের রুমে বিছানায় বসে আছে আর কলরবের কান্ড দেখছে। কলরব একটার পর একটা কাপড় বের করছে তারপর আবার সেগুলো ছুঁড়ে ফেলছে।
– কি হলো ভাইয়া একটাও কি পছন্দ হচ্ছে না?
– উহু।
– আজ কোন মুভির হিরো হতে যাচ্ছো?
– আশিকি 2 এর রাহুল জেকার এর মতো হওয়ার চেষ্টা করছি। একদম ডিস্টার্ব করবি না।
কলরব প্রায় আধা ঘণ্টা সময় নিয়ে আদিত্য কাপুর সাজলো তারপর ইরিনকে জিজ্ঞাসা করলো হলো নাকি?
– হুম হয়েছে আসলেই আদিত্য আদিত্য একটা লুক আছে তোমার মাঝে।
– আমার মনে হয় না আছে আসলে কথা হচ্ছে আমি একেক সময় একেক রকম থাকি। নিজস্ব কোনো ড্রেসআপ সেন্স নেই।
– হতে পারে তারপরো তোমাকে কেনো যেন আদিত্য আদিত্য লাগে।
– ধন্যবাদ বোনটু।
– হেয়ার জ্যাল?
– তা তো দিবোই।
– আচ্ছা তুমি প্রতিদিন এতো সময় নিয়ে কাপড় চুজ করো কেনো? আবার আমাকে বলো আমি সাজতে সময় নেই।
– জানি না তবে ছেলেবেলা থেকেই আমার অভ্যাস। তবে এটার পিছনে মায়ের হাত আছে। মা ছোটবেলা থেকেই আমাকে এভাবে গড়ে তুলেছে।
– হুম তুমি তো মায়ের আদরের ছেলে।
– আর তুই?
– আমি তো বাবার ইরু আর ভাইয়ের আদরের বোন।
– আচ্ছা পড়তে যাবি কখন থেকে?
– আজ বিকেলেই যাব।
– আমি আগেই জানতাম কুহু কখনো এখানে আসবে না।
– তুমি কি ভাবির মনের কথা পড়তে জানো?
– না তবে ওর চোখ দেখে একটুখানি বুঝি।
– আচ্ছা ভাবির কোন জিনিসটা তোমার বেশি ভালো লাগে?
কলরব হেসে ইরিনকে বললো,
– সেটা কি তোর জানা খুব বেশি প্রয়োজন?
– না ঠিক তা না তবে জানতে ইচ্ছে হলো আরকি।
– ওর জোড়া ভ্রু গুলো আর একটা ব্যাপার আছে যেটা খুব ভালো লাগে। কুহু খুব হেল্পফুল। আসলে কুহুর এই ব্যাপারটাই আমাকে মুগ্ধ করেছে। আর ভ্রু তো সেদিন খেয়াল করলাম।
– ওহ্।
– আচ্ছা এতো সময় নিয়ে রেডি হলে কোথায় যাচ্ছো?
– এক বন্ধু আসবে ঢাকা থেকে অনেক বছর পর দেখা। ওর সাথেই মিট করতে যাব।
– ঠিক আছে সাবধানে যেও।
..
কুহু আর পিহু দুজন মিলে কূজনের আইডি ঘাটাঘাটি করছে। প্রোফাইল পিকের সাথে সাথে ক্যাপশনে দুই তিন লাইনের কথা লিখা। পিহু খুব বিরক্তি নিয়ে পড়ছে আর চোখ মুখ কুঁচকাচ্ছে।
“আমার শূণ্য খাঁচা কু্ঁড়েঘরে
তোমার সিংহাসন
কবে তুমি আসবে বলো
করবে আরোহণ”
পিহু লাইনগুলো পরার পরই কুহুকে উদ্দেশ্য করে বললো এই ছেলে দেখি তোর মতো পাগল ছাগল। ট্রেনে বসে বসে তোরা আসলে কি করেছিস বলতো। আমার তো মনে হয় এই অদ্ভুত বসে বসে কবিতা লিখেছে আর তুই আবৃতি করেছিস।
” দুই পাগলের হইলো মেলা ট্রেনে এসে
ও তোরা যাস নে ও পাগলের দেশে।”
হিহিহিহাহহাহাহিহিহাহুহু
কুহু পিহুকে ধমকে বললো তুই চুপ করবি? দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছিস তুই। এতো মেচিউরিটি ভালো না।
– তোর মতো ভেবলি থাকবো নাকি?
কুহু পিহুকে বালিশ দিয়ে মারতে শুরু করলো আর পিহুও করলো পাল্টা আক্রমণ। দুই বোন মারামারি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে বসে হাপাতে থাকলো তারপর কুহু বললো,
– যাই বলিস ভালোই কবিতা লিখে।
– আমি এর থেকে আরো ভালো লিখতে পারবো।
– যে মেয়ে প্রতিভাবানকে প্রতিভবন পড়ে সে নাকি কবিতা লিখবে মরে যাই! মরে যাই!
– তোর ঢং বন্ধ কর আপুণি।
– মেচিউর গার্ল হিহি।
– মেচিউরই তো।
– আচ্ছা আচ্ছা তা তো স্বীকার করিই।
চলবে…