একটুখানি পর্ব : ২৪

0
600

একটুখানি
#লামিয়া_চৌঃ
পর্ব:২৪
কলরব তো বাসায় থাকে না, সকাল নয়টার দিকে অফিসে চলে যায় আর আসে সন্ধ্যার পর। ইরিনও নিজের পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কূজনের সময় কাটে না বললেই হয়। বাসায় যেমন একা এখানেও সারাদিন একাই থাকতে হয় তবে সন্ধ্যার পর বেশ ফূর্তিতে থাকে। কূজন সারাদিন প্রায় শুয়ে বসেই কাটিয়ে দেয়। সে এই সময়টুকু বেশ কাজে লাগিয়েছে। ডায়েরীতে কবিতা লিখে ভরিয়ে ফেলেছে। সবগুলো কবিতাই কুহুকে নিয়ে লিখা। কুহু যদি জানতো কুহুকে নিয়ে কেউ একজন কবিতা লিখে তাহলে কুহুর বেশ ভালো লাগতো। কুহু তো এমনিতেই কবিতা খুব পছন্দ করে, আবৃতিও করে। স্কুল, কলেজে সবসময় আবৃতিতে পুরস্কারজয়ী। কূজন তো আর কুহুর কবিতার প্রতি এতো অাগ্রহের কথা জানে না। জানলে হয়তো কবিতাগুলো কুহুকে দিলেও দিতো। কূজন যে কুহুকে পছন্দ করে কূজন এটা শতভাগ শিউর এমনকি ভালোবাসে। প্রতি রাতে যে সবাই মিলে ছাদে গানের আসর বসায় সেখানের প্রতিটি গান কূজন কুহুর জন্যেই গায়। গান গাইতে গাইতে ভাবে হয়তো কুহু পাশের ছাদে দাঁড়িয়েই শুনছে। কিন্তু সেদিনের পর কুহুকে বা কুহুর বোনকে সে রাতের বেলায় ছাদে আসতে দেখেনি। পিহুকে সেদিন কেনো এতো চেনা চেনা লাগছিলো সেটা কূজন
বুঝতে পেরেছে। দুই বোনের চেহারায় অনেক মিল। দুইজন যে বোন দেখলেই বোঝা যায় যদিও পিহু মহাসুন্দরীদের দলে পড়ে। কূজন প্রায় বিকেলে ছাদেও যায়, কুহুকে দেখে ছাদে আসতে কিন্তু কোনোদিন কথা বলে না, ডাকও দেয়না। একদিন অবশ্য ইরিনকে পড়াতে যখন বাসায় এসেছিলো তখন কথা হয়েছিল। কথা বলতে ঐটুকুই কুহুর মা কেমন আছে? কূজন এখানে কেনো? ওরা কি রিলেটিভ? কুহু কোথায় পড়ে? এসব কথাই হয়েছে। ইরিন আর ইরিনের মা শুনে বেশ অবাক হয়েছিল যে কুহু আর কূজন পূর্বপরিচিত। কুহু প্রতিদিনই ছাদে যায় কিন্তু শনি,রবিতে যায় পিহু। কূজন এই বিষয়টা খেয়াল করেছে। এটা নিয়ে অনেক ভেবেছেও। কারণ খুঁজে পেয়েছে কূজন। কূজন ধারণা করে নিয়েছে পিহু আর কলরবের মাঝে কিছু একটা আছে নয়তো কলরব ছাদে যাওয়ার দিনগুলোতেই কেনো কুহুর বদলে পিহু কাপড় নিতে ছাদে আসে। তবে পিহু এসে কাপড় নিয়েই চলে যায় কোনোদিন কথা বলে না, কলরবও বলে না। কলরবের সাথে কূজনও থাকে তাই হয়তো ওরা কথা বলতে পারে না এজন্য যেদিন কলরব ছাদে যায় সেদিন কূজন ছাদে যায় না। একবার ভেবেওছিল কলরবকে কিছু জিজ্ঞাসা করবে কিনা। তারপর আর এই সম্পর্কে কথা বলেনি। কলরব বলার হলে ওকে নিজ থেকেই বলতো। তাছাড়া কারো ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে টানাহেঁচড়া করা কূজনের কাছে অপছন্দনীয়। কূজন অনেকদিন ধরে ভাবছে ভালোবাসার কথা কুহুকে জানিয়ে দিবে কিন্তু ভেবে পাচ্ছেনা কীভাবে। মেসেঞ্জারে? কিন্তু কুহু মেসেজ পাঠালে রিপ্লাই দিতে অনেক দেরি করে, মনে হয় যেন না পারতে খুব ভেবে চিন্তে রিপ্লাই দেয়। কূজনের সবচেয়ে কাছের বন্ধু ওর বাবা কিন্তু বাবাকে কি আদৌ কূজন এমন কথা বলতে পারবে? এটা কি বলা সম্ভব? বাবা কখনোই মাইন্ড করবে না কিন্তু কূজনের অস্বস্তি বোধ হবে। কূজনের এখন আফসোস হচ্ছে কেনো তার এতো বন্ধুবান্ধব নেই। থাকলে আজ এমন কথাগুলো শেয়ার করতে পারতো। দুই একজন যারা ফ্রেন্ড আছে তারা সেরকম ঘনিষ্ঠ না তারপরো শেয়ার করতেই পারে। এটা তেমন অস্বাভাবিক কোনো বিষয় না কিন্তু কূজন কারো সাথে সহজে কিছু শেয়ার করতে পারে না। নিজের দুঃখগুলোও না, ফিলিংসও না। তবে নিজের সুখটুকু মানুষকে উজাড় করে বিলিয়ে দেয়। ছোট একটা মধুর স্মৃতি সবাইকে হাজারবার বলে বেড়ায় কিন্তু মরে গেলেও নিজের কষ্টের কথাগুলো বলে না। ইরিনকে আবার কূজনের খুব ভালো লাগে, ওর সাথে কেনো যেন সব কথা বলতে ইচ্ছে হয় কিন্তু ও তো ছোট তাই সব শেয়ার করতে পারে না। বাবার পর বোধহয় ইরিনকেই কূজন এতো ভালোবাসে। ইরিনের মতো ছোট একটা বোন পেয়ে কূজনের নিজেকে খুব লাকি মনে হয় আবার আফসোসও হয় ইরিন যদি ওর আপন বোন হতো, তাহলে কতো ভালো হতো। সবসময় ইরিনকে নিজের সাথে রাখতে পারতো। বাবার যদি ইরিনদের ফ্যামিলির প্রতি রাগ না থাকতো কূজন তাহলে এই কাজটাই করতো। ইরিনকে নিজেদের বাসায় নিয়ে যেতো। বাবা যে কেনো এতো বছর আগের একটা বিষয় নিয়ে পড়ে আছে কূজন তা বুঝে উঠতে পারে না। বাবা তো কোনোদিন বুঝিয়ে বলেনি তাহলে কূজন বুঝবে কি করে? আচ্ছা বাবা যদি জেনে যায় খুব রাগ করবে, এটা কি সে ঠিক করছে? বাবাকে না জানিয়ে এখানে থাকছে। বাবা তো জানে ফাইনাল এক্সাম শেষ তাই বন্ধুদের সাথে ট্যুরে গিয়েছে। বাবার সাথে কথা বলতে খুব ইচ্ছে করছে কূজনের। মোবাইল চার্জে দিয়ে রেখেছিল। চার্জ দেওয়া বন্ধ করে কূজন হাসনাদ সাহেবকে কল দেয়।
– হ্যালো! কূজন কেমন আছো?
– ভালো বাবা। তুমি কেমন আছো?
– আমিও ভালো। কেমন হচ্ছে ট্যুর?
– ভালো খুব ভালো।
– এজন্যই তো বলি বাবা মাকে এখন সপ্তাহ পার হলে কল দেওয়া হয় তাইনা?
– না বাবা মায়ের সাথে কথা হয়, মা প্রতিদিন ফোন করে।
– আমিও চাই করতে কিন্তু করি না কারণ বন্ধুদের সাথে মজা করতে গিয়েছো তাই তোমার টাইম ওয়েস্ট করি না।
– না বাবা সমস্যা নেই।
– তোমার রেজাল্ট কখন দিবে?
– সামনের মাসের তেরো তারিখ।
– রেজাল্ট নিয়ে টেনশন করবে না। রেজাল্ট যাই হোক তাতে তোমার কিছু যায় আসে না।
– বাবা তুমি যদি এমন না হয়ে কড়া হতে তাহলে আমিও খুব ভালো রেজাল্ট করতাম।
– তুমি কি কখনো বাজে রেজাল্ট করেছো? কখনো ফেইল করেছো?
– না তা করিনি কিন্তু খুব একটা ভালোও করিনি।
– তোমাকে তো বাইরে পড়াতে চেয়েছিলাম তুমিই বললে আমাদের ছেড়ে কোথাও যাবে না, দেশেই থাকবে।
– তোমাদের ছেড়ে বাইরে যেয়ে পড়ে থাকতে পারবো না।
– তুমি যেভাবেই চাইবে সেভাবেই সব হবে। আফটার অল আমার প্রিন্স বলে কথা।
– হুম প্রিন্স।
– পড়া তো শেষের দিকে চাকরী করবে নাকি আমার ব্যবসায় যোগ দিবে?
– ব্যবসা করারই ইচ্ছে।
– আমিও মনে প্রাণে এটাই চাইছিলাম।
– তুমি খুশি হলেই আমি খুশি।
– আমাকে খুশি করার জন্য আবার নিজের ইচ্ছা দমিয়ে রাখোনি তো?
– না এটা আমার নিজের মতামত, তোমাকে খুশি করার জন্যে নয় বাবা।
– দেখো কিন্তু আমার জন্যে নিজের উপর কিছু চাপিয়ে নিবে না।
– তুমি অনেক বেশি ভালো বাবা।
– এতোটাও ভালো না তবে বাবা হিসেবে খুব ভালো। হা হা হা।
– আচ্ছা বাবা একটা কথা বলি?
– বলো।
– তোমার আত্মসম্মান খুব বেশি তাই না?
– হঠাৎ?
– না থাক এমনিতেই বললাম আরকি। তুমি কি এখন অফিসে?
– হুম মিটিং করছিলাম।
– ওহ্ শিট বাবা তুমি সবসময় এমন করো কেনো?
– কি করি?
– তুমি বলবে না তোমার জরুরি মিটিং চলছে।
– তুমি আর তোমার মায়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে আর কিছুই না।
– ওহো বাবা আমি ফোন রাখছি পরে কথা বলবো।
– আমার বেশ ভালো লাগছে ফোন কেটো না।
– না বাবা অফিস আওয়ারে আর বেশি কথা বলবো না, রাতে আবার কল দিব।
– এই যে তুমি কিন্তু বেশ কড়া ছেলে।
– হা হা হা।
– তুমি শব্দ করে হাসা শুরু করলে কবে থেকে?
কূজন কলরবের সাথে থেকে থেকে এই অভ্যাস বানিয়ে নিয়েছি। বাবাকে তো আর এটা বলা যাবে না তাই বললো,
– তুমি যাতে বুঝতে পারো আমি হাসছি তাই এভাবে হাসলাম আরকি।
– তাহলে ভিডিও কল দেই?
– না না এখন রাখছি পরে কথা হবে।
কল কেটেই কূজন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। ভিডিও কল দিলে তো বাবা সন্দেহ করতো তাই তাড়াতাড়ি কল রেখে দিলো। কয়দিন যে এভাবে লুকিয়ে থাকবে আল্লাহই জানে। আর খালামণিরাও যেতে দেয় না কূজন দুই নৌকায় পা দিয়ে আতঙ্কে আছে এখন, অনেকটা শাখের করাত।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here