একটুখানি পর্ব : ২৫

0
568

একটুখানি
#লামিয়া_চৌঃ
পর্ব:২৫
কলরব বেশ কিছুদিন ধরে কুহুর দেখা পাচ্ছে না। অসম্ভব বিরক্তিকর লাগছে সবকিছু। পিহুকে ছাদে দেখলেই মুডটা খারাপ হয়ে যায়। ইরিনকে তো সপ্তাহে তিন দিন পড়ায় এর মাঝে একদিন পড়ায় শুক্রবারে। সেদিন অবশ্য কুহুকে কলরব একনজর দেখে। ইরিনের রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে এক পলক দেখেই চলে আসে। দেখতে অবশ্য সমস্যা হয় না কারণ ইরিনের পড়ার টেবিলের পাশেই ড্রেসিংটেবিল ড্রেসিংটেবিলের আয়নাতেই কুহুকে স্পষ্ট দেখা যায়। কলরব ভেবে পাচ্ছে না কুহু কেনো এখন ছাদে যায় না। কুহুর ফ্যামিলিতে কোনো সমস্যা হয়নি তো? কলরবের বিষয়টা কি কুহু তার ফ্যামিলিকে বলে দিয়েছে? নাকি ওর ফ্যামিলি কোনোভাবে জেনে ফেলেছে? নাহ্ জানেনি, জানলে নিশ্চয় ইরিনকে পড়াতে আসতে দিতো না। তাহলে কেনো কুহু ছাদে আসে না? রিকশা ঠিক করে দিয়েছিল এজন্য? না এজন্য হবে কেনো? হতেও তো পারে কারণ কুহু যদি ভেবে থাকে কলরব ওকে ফলো করে? আসলে কলরব তো কুহুকে ফলো করেনি। কুহুর কলেজের সামনেই কলরবের এক বন্ধুর বাসা। সেদিন কলরব বন্ধুর বাসায় গিয়েছিল আসার পথে কুহুকে দেখেছিলো হাঁটতে। হয়তো রিকশা পাচ্ছে না দেখে একটু দূরেই বাইক থামিয়ে কলরব কুহুকে দেখছিলো। কুহু কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলে কলরবও কিছুটা সামনে যেয়ে বাইক থামিয়ে পিছন থেকে কুহুকে দেখছিলো। যতদূর পর্যন্ত কুহুকে দেখা যায় ততদূর পর্যন্ত কলরব তাকিয়ে থাকতো। যখনই আর দেখা যেত না তখনই কিছুটা এগিয়ে যেত। কুহু একটা রিকশা পেয়ে রিকশা ঠিক করছিলো হয়তো রিকশাওয়ালা বেশি দাম চেয়েছে তাই রিকশায় উঠেনি। কলরব ব্যাপারটা লক্ষ্য করে কুহু কিছুটা সামনে যেতেই রিকশাওয়ালাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করে। ডাবল ভাড়া চেয়েছে শুনে ধমক দিয়ে বলে,
– এই একটুখানি রাস্তা কতো টাকা বললেন?
– পঞ্চাশ টাকা।
– ঐ আপা কতো বললেন?
– ত্রিশ টাকা।
– বেশিই তো বললেন পঁচিশ টাকার ভাড়া উনি ত্রিশ টাকা বলেছেন। যান উনাকে ডেকে রিকশায় তুলুন।
রিকশাওয়ালা কুহুকে রিকশায় উঠানোর জন্য যেতে নিলেই কলরব রিকশাওয়ালাকে থামিয়ে বিশ টাকা দিয়ে বলে,
– ঐ আপার কাছ থেকে ত্রিশ টাকা নিয়ে নিবেন আর আমারটা বলার দরকার নেই।
– আইচ্ছা ভাই।
কলরব রিকশাওয়ালার সাথে চড়া গলায় কথা বলে নিজেই হতবাক হয়ে যায়। তাই ডেকে টাকাটা দিয়ে দেয় যদিও না দেয়াটাই উচিত ছিল। আসলে কুহুর কাছে ডাবল ভাড়া চেয়েছে শুনেই মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কলরব অবশ্য খুব সহজে রাগে না কিন্তু একবার রাগলে খবর আছে।
কিন্তু রিকশাওয়ালাকে ধমক দিয়ে নিজেরই খারাপ লাগছিলো। এই ছোটখাটো বিষয়ে কলরব কখনোই রাগে না বরং সে রাগের মাঝেও খুব বড় বড় কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যদিও রেগে গেলে সবাই তাকে অনেক ভয় পেয়ে যায়। কেনো পায়? রেগে গেলে কলরব কিছুটা ধমক দিয়ে সবার সাথে কথা বলে তাই হয়তো যেমন এই রিকশাচালকও পেয়েছে। কলরব এই ছোট একটা বিষয়ে কেনো রেগে গেল? কুহুর সঙ্গে জড়িত ঘটনা বলে কি? নাকি সে ধীরে ধীরে কুহুর মতো হয়ে যাচ্ছে? ছোটখাটো বিষয় নিয়ে হুট করে রেগে যাওয়া তো কুহুর অভ্যাস, কলরবের নয়। তাহলে কলরবকে ধীরে ধীরে কুহুর মতো হয়ে যাচ্ছে? প্রেম কি মানুষকে এতোটাই বদলে দিতে পারে? কলরব আনমনেই হাসলো। কিন্তু ভাবছে কুহু কেনো ছাদে আসে না? কুহুর তো জানার কথা না যে কলরব রিকশা ঠিক করে দিয়েছে। কলরব ইচ্ছে করেই ভাড়াটা মিটিয়ে দেয়নি পিছে আবার কুহু বুঝে যায়। তাহলে কি রিকশাওয়ালা বলে দিয়েছে নাকি কুহু সেদিন কলরবকে দেখেছিলো। যদি রিকশাওয়ালা বলে থাকে তাহলে রিকশাওয়ালার খবর আছে। কলরব ঐ ব্যাটাকে বাস্কেটবল বানিয়ে খেলবে। কিন্তু রিকশাওয়ালার তো বলার কথা না, কেনো বলবে সে? ধমক দিয়েছিলো তাই কি? কিন্তু সেরকম ধমক তো দেয়নি বেশ ভদ্রভাবেই কথা বলেছিলো সে, আপনি করে সম্বোধন করেছিল, শুধু বলেছিলো বেশি দাম চেয়েছেন। আর কিছু তো বলেনি যদিও রিকশাওয়ালা ওকে ভয় পেয়েছিলো। আসলে কলরব রেগে গেলে ওর মাঝে একটা গাম্ভীর্য চলে আসে যেটা দেখে সবাই ওকে ভয় পেয়ে যায়। নাহ্ কলরব অনেক ভেবে দেখেছে রিকশাওয়ালা কুহুকে কথাটা বলেনি আর এই ঘটনার কিছুদিন আগে থেকেই তো কুহু ছাদে আসতো না যদিও বা রাতে গান শুনতে এসে ধরা পড়ে গিয়েছিলো। কলরব লাঞ্চ টাইমে বসে বসে কথাগুলো ভাবছিলো। হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেয় আজকে বিকেলের আগেই অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নিবে আর পরীক্ষা করবে কুহু কি শুধু কলরব যেদিন ছাদে যায় সেদিন ছাদে যায় না নাকি অন্য দিনগুলিতেও এমন। যেই ভাবা সেই কাজ। বিকেলের দিকে কলরব ছুটি নিয়ে বাসায় চলে আসে। কূজন তখন ইরিন আর কলরবের বাবার সাথে বসে তাদের ছবি আঁকার কাহিনী শুনছে। কলরবকে দেখে সবাই প্রায় অবাক হলো। কলরব সবার জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দেখে বললো,
– অফিসে আজ কাজের চাপ কম তো তাই এসে পড়েছি।
– ভাইয়া তুমি খেয়েছো? বাবাও খায়নি মাত্র স্কুল থেকে ফিরলো এখনই খাবে, তুমিও সাথে খেয়ে নাও।
– না ইরিন আমি খেয়ে এসেছি।
কলরব আর কিছু না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেল। কফি কালার এর একটা টিশার্ট আর কালো ট্রাউজার পরে এগুলো ছাদের দিকে। কূজন
ভেবেছিলো ছাদে যাবে কিন্তু কলরবকে ছাদে যেতে দেখে আর যায়নি। ভেবে নিয়েছে পিহুর সাথে কথা বলতেই হয়তো আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরেছে।
কলরব ছাদের সিঁড়িতে যেয়ে দাঁড়িয়ে কুহুদের ছাদের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রেখেছে। ইচ্ছে করেই ছাদে যায়নি কারণ কুহু কোনোভাবে দেখে ফেললেই কলরবের কষ্ট বিফল হয়ে যাবে। প্রায় দশ বারো মিনিট অপেক্ষা করার পর কলরবের ঠোঁটে হাসি ফুটলো। কুহু ছাদে এসেছে তার মানে সে কলরব থেকে পালানোর জন্যেই এমন করছিলো। কলরব পা টিপে টিপে যেয়ে রেলিং এর কাছে দাঁড়ায়। কুহু তখন একমনে নিজের কাজ করছিলো। কলরব বেশ সুন্দর করে বললো,
– ফুলটুশি তোমার নামটা কি জানা যাবে?
কুহু হঠাৎ কলরবের কণ্ঠ শুনে ভয় পেয়ে যায় আর আল্লাহ্‌ মাবুদ বলে ফিরে তাকায়। কলরবকে দেখেই কুহুর হাতে থাকা কাপড়গুলো পড়ে যায়।
কলরব এটা দেখে হুহুহু করে
অট্টহাসিতে মেতে উঠে। তারপর বলে,
– নামটা কি আমাকে বলা যায় না ফুলটুশি?
কুহু দাঁতে দাঁত চেপে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে কাপড়গুলো তুলতে থাকে।
কলরব আবারো বললো,
– আমি হেল্প করবো? তুমি চাইলে আমাদের রেলিং টপকে তোমাদের ছাদে এসে তোমাকে হেল্প করতে পারি।
– আজব!
– উহু কলরব! আচ্ছা আমি আসছি…
– এই না না আমার হয়ে গেছে।
কলরব হালকা হেসে বললো,
– ফুলটুশি তুমি আমাকে এতো ভয় পাও কেনো?
– কোথায় ভয় পাই?
– তাহলে পিহুকে ছাদে পাঠাও কেনো তাও আবার আমি যেদিন যেদিন আসি সেদিনগুলোতে?
কুহু আর কিছু বললো না।
চুপচাপ চলে যেতে নিলে কলরব বললো,
– পিহুকে জিজ্ঞাসা করলাম সে কিছুই বললো না, তুমি নিজেই বলো আসল ঘটনা কি?
কুহু কলরবের কথায় থমকে দাঁড়ায় তারপর দুই মিনিট সময় নেয় কিছু একটা ভেবে বলার জন্য কিন্তু কি বলবে ভেবে না পেয়ে চুপচাপ হাঁটা ধরে। কলরব এইবার একটু চেঁচিয়েই বললো,
– ফুলটুশি আমি কি তোমার বাবার কাছে আমার বায়োডাটা পৌঁছে দিতে পারি?
কুহু এই কথা শুনে দৌড়ে নীচে নেমে গেল।
কলরব কুহুকে বললো,
– আস্তে ফুলটুশি আস্তে নামো।
কলরবের একথা শুনে কুহু যখন আরো তাড়াতাড়ি করে দৌড়ে চলে গেল তখন কলরব হাসতে লাগলো সেই গগনবিহারী হাসি।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here