একটুখানি পর্ব : ৩১

0
598

একটুখানি
#লামিয়া_চৌঃ
পর্ব:৩১
কলরবের মায়ের ইচ্ছে হলো একটুখানি ঢং দেখিয়ে কিছু একটা বলবে। কিন্তু বললেন না। ছোটবোনের হাজবেন্ডের সাথে রঙ তামাশা মানায় না। সাহরার আফসোস হতে লাগলো কেনো তিনি বড় হলেন। ছোট হলে কূজনের বাবা দুলাভাই হতো তখন বেশ মজা করতে পারতেন। নিজের ইচ্ছাটা দমিয়ে রাখলেন নিজের মাঝেই। তারপর বললেন,
– কেনো কি করেছিলাম আমি?
তারপর একটু ভাবলেন। মনে মনে খুব করে চাইছেন রসিকতা করতে তাই আর পেরে উঠলেন না নিজের সঙ্গে। রসিকতার সুরে বলেই ফেললেন,
– কেনো আপনার বিয়ের ঘটকালি করেছি তাই??? বিয়ে থেকে তো সব পুরুষ মানুষই পালাতে চায় তাই বলে এখনও???????
তারপর বিস্ময়ের চাহনি নিয়ে তাকালেন হাসনাদ সাহেবের দিকে। হাসনাদ সাহেব দাঁত দিয়ে নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে বললেন,
– আপনি কি আমার সঙ্গে মজা করছেন?
– ধরে নিন তাই।
কলরব মায়ের এরকম আচরণে অভ্যস্থ কিন্তু কূজনের বাবার সঙ্গেও যে তিনি এমন করতে পারেন ভেবেই অস্ফুট স্বরে বললো,
– উফ্ ড্রামাকুইন!
হাসনাদ সাহেব আঙ্গুল দিয়ে কপালের ঘাম মুছে বললেন,
– আমি ইরিনের সাথে দেখা করেই চলে যাব। ওর জন্য একটা গিফ্ট কিনেছিলাম, সেটা সে ফিরিয়ে দিয়েছে। গিফ্টটা দিয়েই চলে যাব।
কলরবের মা আন্তরিকতার সাথে বললেন,
– আরে এখনই চলে যাবেন মানে কি? দুই তিন দিন থেকে তারপর যাবেন। ওদের বাবা খুব খুশি হবে আপনাকে দেখলে।
আর নিকটআত্মীয়ের বাসায় এসে এভাবে চলে যাওয়া যায় না।
হাসনাদ সাহেবের মাথার উপর দিয়ে মনে হলো ঘূর্ণিঝড় গেল। চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়লো।মনে মনে ভাবলেন বাহ্বা মহিলা তো! কি বলে, কি করে কিছুরই ঠিক নেই। কলরব নিঃশব্দে দীর্ঘশ্বাস ফেললো কিন্তু কিছু বললো না। কিন্তু মায়ের সবগুলো কথা খুটিয়ে খুটিয়ে বিশ্লেষণ করলো। কলরব আর কূজন সবটাই জানে কিন্তু ইরিন কিছুই জানে না। কলরব আসার সময় দেখে এসেছে ইরিন ঘুমোচ্ছে। কলরব ভাবতে ভাবতে খেয়ালই করলো না হাসনাদ সাহেব কখন বেরিয়ে গেছেন। হাসনাদ সাহেব তরতর করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলেন। গাড়ির সামনে যেয়ে গাড়িতে পা দিয়ে লাথি বসালেন। তারপর ব্লাডি হেল বলে শামসু ডেকে বললেন পানির বোতল দিতে। শামসু হাসনাদ সাহেবকে হঠাৎ এমন রূপ ধারণ করতে দেখে ভয় পেয়ে গেল। পানির বোতল বাড়িয়ে দিতেই হাসনাদ সাহেব চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন,
– হাতে ব্যাথা করে তোমার? বোতলের মুখটা খুলে দিতে পারোনি?
শামসু তাড়াতাড়ি করে বোতলের মুখ খুলে গাড়ির জানালা দিয়েই হাসনাদ সাহেবের দিকে বোতল বাড়িয়ে দিল। হাসনাদ সাহেবের হাত কাঁপছিল তাই বোতল নেওয়ার সময় পানি কিছুটা শার্টের হাতায় পড়েছে। গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে অর্ধেক বোতল খালি করলেন। তারপর একটু সাইড হয়ে মাথায় পানি ঢাললেন। শামসু তাড়াতাড়ি করে গাড়িতে থেকে নেমে গাড়ির পিছনে রাখা টাওয়াল হাতে দৌড়ে গেলেন হাসনাদ সাহেবের দিকে। পুরো বোতল খালি করেই বোতলটা ছুঁড়ে ফেললেন রাস্তায়। তারপর হাত বাড়িয়ে টাওয়াল নিয়ে মাথা মুছলেন। তারপর টাওয়ালটা শামসুর কাঁধে রেখে বললেন,
– থেঙ্কস।
হাসনাদ সাহেবের মুখে হাসি দেখে শামসুও হাসলো। একটি আগের হাসনাদ সাহেবকে বড্ড অচেনা লাগছিল তার। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে শামসু বললো,
– স্যার কূজন ভাইরে বা মেডামরে খবর দিমু? আফনের শরীর কি বেশি খারাপ।
– আরে না না শরীর খারাপ না। তুমি যাও গাড়িতে বসো আমি এখনই আসছি।
– ঠিক আছে স্যার।
..
মায়ের ডাকে কলরবের ভাবনায় ছেদ পড়লো।
– কিরে ইরিন কি করছে?
কলরবের টনক নড়লো। তারপর বললো,
– ঘুমোচ্ছে।
কলরব সামনে তাকিয়ে খেয়াল করলো হাসনাদ সাহেব নেই। একটুও অবাক হলো না। এটাই তো হওয়ার ছিল। তারপর দুই হাত দুদিকে বাড়িয়ে মাকে প্রশ্নবিদ্ধ করলো কলরব।
– মা বেশি হয়ে গেলো না?
– কি আমার ড্রামা?
কলরব হেসে ফেললো। তারপর ট্রে ভিতরে নিয়ে যেতে লাগলেই মা বললো,
– কি করছিস?
কলরব নাটকীয়ভাবে বললো,
– তোমাকে হেল্প!
কলরবের মা ছেলের গাল টিপে বললেন,
– ওলে বাবালে! আমার ছেলেটা তাহলে বোঝাতে চাইছে যে আমাকে হেল্প করার জন্য হলেও কাউকে দরকার।
কলরব বললো,
– উফ্ফো নতুন নাকি? আমি তো সবসময়ই তোমাকে হেল্প করি।
কলরবের মা ছেলের চুলে হাত বুলিয়ে বললেন,
– উফ্ বাপের মতো কতো লম্বা হয়েছিস নাগাল পাওয়া যায় না তোর।
– আচ্ছা সরো এখন এগুলো কিচেনে রেখে আসি।
– লাগবে না বললাম তো।
কলরব বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
– কেনো?
তখনই হাসনাদ সাহেব বাইরে দাঁড়িয়ে কলিংবেল চাপলেন। দরজা খুলাই ছিল। তিনি যাওয়ার পর আর লাগানো হয়নি। তারপরও ভদ্রতা দেখালেন তিনি।
কলরবের মা ফিসফিস করে বললেন,
– এই জন্য।
কলরব পিছন ফিরে দেখলো হাসনাদ সাহেব দাঁড়িয়ে।
তিনি সেখানে দাঁড়িয়েই নির্বিকার ভাবে বললেন,
– ইরিনের সাথে দেখা করবো বলেছি শুধু। কিছু বিষয় ক্লিয়ার করা দরকার। যেমন ধরুন ইরিন কূজনকে ভুল বুঝছে সেটা ওকে বোঝাতে হবে। তাছাড়া আমিও তখন জানতাম না ইরিন আপনার মেয়ে তাই উল্টাপাল্টা ভেবে বসেছি। কূজন আর ইরিন যে শুধুই ভাইবোন তা যে আমি জানতাম না সেটা ওকে জানিয়ে দিতে এসেছি।
কলরবের মা মিথ্যে ভাব দেখানো ভঙ্গিতে বললেন,
– এতো কিছু জানার দরকার নেই।
হাসনাদ সাহেব এবার আর অবাক হলেন না। তিনি গম্ভীর হয়ে বললেন,
– কি করলে আপনার মেয়ের সাথে দেখা করার এপয়েন্টমেন্ট পেতে পারি?
কলরবের মা হেসে বললেন,
– জাহরার রেফারেন্স আর কূজনের সরাসরি এন্ট্রেন্স।
হাসনাদ সাহেব ভাবলেশহীনভাবে বললেন,
– ঠিকাছে কূজন আজ বিকালের মধ্যেই হাজির হয়ে যাবে। আমার আজ বিকালে মিটিং আছে তাই আমি কাল সকালে এসে ইরিনের সাথে কথা বলবো। কথা শেষে তিনি চলে যেতে নিলেন। কলরবের মা বাধা দিয়ে বললেন,
– চা টা খেয়ে যান। আগামীকাল আপনার সোনার হরিণ আপনাকে শুধু চা না পায়েশ রেঁধেও খাওয়াবে। হাসনাদ সাহেব আর না করলেন না। ভিতরে এসে সোফায় বসলেন। কলরবের মা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া চা গরম করে আনলেন। হাসনাদ সাহেব চা খেয়েই চলে গেলেন। কলরব পুরো ঘটনা দেখে মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– ড্রামা কুইন মা আমার তবে গ্রেট!
কলরবের মা কলরবের কলার নাচিয়ে বললেন,
– তোর বউটা খুব সহজ সরলরে কলরব। খুব ভালো নাচাতে পারবো।
কলরবও মজা করে বললো,
– ভালোই হলো আমি বিনা টিকিটে হিরোইনের নাচ দেখতে পারবো।
..
কূজন খুব খুশি। গতকাল রাতে লাগেজ থেকে সব জিনিশপত্র নামিয়ে রেখেছিল। আজ আবার লাগেজ গুছাচ্ছে তবে একটুও বিরক্ত লাগছে না। খালামণি যে কীভাবে সব ম্যানেজ করে কূজন ভেবে কূল পায় না। কূজন খুব খুশি আজ। লাগেজ গুছাচ্ছে আর গুনগুন করে গাইছে,
” ধীরে ধীরে সে মেরে জিন্দেগী মে আনা
ধীরে ধীরে সে মেরে দিলকো চোরা না
তুমসে পিয়ার হামে হে কিতনা জানে জানা
তুমকো মিলকার হে তুমকো বাতানা।”
কূজন সব গুছিয়ে নিল। ডায়েরীটা ও নিতে ভুললো না সে। লাগেজ গুছিয়ে মা- বাবাকে বলে রওনা হলো ফেণীর উদ্দেশ্যে।
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here