একটুখানি পর্ব : ৩২

0
670

একটুখানি
# লামিয়া_চৌঃ
পর্ব: ৩২
কুহুর বাবা তৈয়ব সাহেব কুহুর মুখোমুখি বসে আছেন। কুহু হাসি হাসি চেহারা করে বাবাকে বললো,
– আব্বু কিছু বলবে নাকি?
– হুম বলবো।
– বলো!
– তোর মা আর পিহু আসুক তারপর বলবো।
– ঠিক আছে।
কুহুর মা কবরী এলেন চা নিয়ে। পিহু আর কুহু পাশাপাশি বসে চা খাচ্ছে সাথে ওদের কথার খই ফুটছে। তৈয়ব সাহেব সাবলীলভাবেই কুহুকে বললেন,
– তোর কি কাউকে পছন্দ?
বাবার এমন সরাসরি প্রশ্নে কুহু হতভম্ব হয়ে গেল সাথে লজ্জাও পেল। পিহু আড়চোখে বাবা আর বোনের দিকে তাকালো। দুইজনের ভাবভঙ্গি বোঝে নিয়ে চুপ থাকা শ্রেয় মনে করলো। কুহুর বাবা আবারো বললেন,
– পছন্দ থাকলে বলে দে। উপযুক্ত হলে সমস্যা নেই। সেখানেই বিয়ে দিব।
কুহু লজ্জা পায়নি একটা ভাব করলো। লজ্জাটা লুকিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বললো,
– বাবা তুমি না বলতে চাকুরী করার আগে বিয়ে দিবে না?
– আহা আগে শোন। তবে ছেলে যদি আমার পছন্দ নাহয় মানে ফ্যামেলি আর ছেলে কি করে না করে সেসব মিলে গেলে আমার কোনো আপত্তি থাকবে না।
আর সমস্যা নেই তো জব পেয়ে যাবি। ফোর্থ ইয়ার না? আর বেশি সময় নেই। এমনিতেও স্কুলে জব করতে পারিস। আর তোর মায়ের কাছ থেকে শুনলাম কিন্ডারগার্টেন এর একটা জব নাকি হয়েছে তোর?
– হুম আগামী মাস থেকে করবো।
– ভালো এর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। চাকুরী পেয়েছিস শুনেই তো বিয়ের চিন্তাভাবনা করছি। নাহয় আজকালকার দিনে নিজের বল না থাকলে কিছুই হয়না। পড়াশুনা শেষ করে ভালো জবই পাবি। প্রাইমারির ফর্মটা এনেছিস না?
– হুম।
– আশা করি ঐটাও হয়ে যাবে। তাই বিয়ের কথা ভাবছি।
কুহু কি বলবে ভেবে পেল না। তৈয়ব সাহেব আবার বললেন,
– কিরে বললি না যে পছন্দ আছে কিনা?
কুহু বললো,
– না নেই।
কুহুর কথা শুনে পিহু অবাক হলো। বাবা বললেন,
– তাহলে আমি আমার পছন্দ মতো ছেলে দেখি কেমন?
কুহু অস্ফুট স্বরে বললো,
– বাবা তোমার ইচ্ছা কিন্তু এখন না হলে হয় না?
– এই বয়সেই সাধারণত আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের মেয়ে বিয়ে দিতে হয়। বড় তো হয়েছিস বুঝিসই সামাজিক একটা চাপ থাকে।
কুহু আর কিছু বললো না, চুপ করে রইলো। কুহুর বাবা বললেন,
– আমি উঠছি একটু বাইরে যেতে হবে।
তিনি উঠে দাঁড়িয়েও কুহুর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে বললেন,
– সত্যি তো কোনো পছন্দ নেই তো?
– না।
– তাহলে তো হলোই আর টেনশনের কিছু নেই ছেলে তোর পছন্দ হলেই তারপর ভেবে দেখবো।
কুহুর মা কুহুর বাবাকে ইশারায় চুপ থাকতে বললেন। মনে মনে একশো একটা গালি দিয়ে বললেন,
“পাগল নাকি বুদ্ধি সব হাঁটুর নীচে। মেয়েকে বারবার অস্বস্তিতে ফেলছে। এসব কথা তো মায়েরাই জিজ্ঞাসা করে।”
কিন্তু মুখে এসব বললেন না।
তৈয়ব সাহেব চলে গেলেন। কুহুর মাও আর কিছু বললেন না। পরে মেয়েকে আলাদা ডেকে কথা বলবেন।
..
কূজন কলরবদের বাসার ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। বাসায় যায়নি সোজা এখানে এসেছে। হাতে ডায়েরি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কুহুর জন্য অপেক্ষা করছে। কুহু যদি এসে চলে যায় তাহলে কুহুকে দেখা মিস হয়ে যাবে।
তাই এখানে দাঁড়িয়ে আছে। কুহু তো আসছে না। কেনো আসছে না ভেবে পাচ্ছে না সে। কুহুদের ছাদে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকিয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করলো। তারপর বাবাকে কল দিল।
হাসনাদ সাহেব ফোন রিসিভ করে ভাবলেশহীনভাবে হ্যালো বললেন।
কূজন বাবার কণ্ঠস্বর শুনেই বুঝতে পারলো বাবা এখনো রেগে আছে।
কূজন শান্ত কণ্ঠে বাবাকে বললো,
– বাবা একটা কথা বলার ছিল।
– বলো।
– বাবা আমি না কথাটা কাউকে বলিনি তোমাকেই প্রথম বলছি।
হাসনাদ সাহেব কৌতূহল বোধ করলেন কিন্তু প্রকাশ করলেন না।
স্বাভাবিক হয়েই বললেন,
– আমাকে আবার কি কথা বলবে তুমি??? তোমার মা আর খালামণিকে না বলে আমাকে কি কিছু বলা যায় নাকি?
কূজন আহত স্বরে বললো,
– বাবা!
– বলো কি বলবে?
– বাবা আমি না কাউকে পছন্দ করি।
হাসনাদ সাহেব এবার আর নিজের কৌতূহল দমিয়ে রাখতে পারলেন না। আগ্রহভরে জানতে চাইলেন,
– কেমন পছন্দ???
কূজন একটুখানি ভেবে অস্বস্তিতে বললো,
– বাবা মানে আসলে…
হাসনাদ সাহেবের রাগ পুরো উবে গেছে। তিনি ছেলেকে সাহস দেবার মতো করে বললেন,
– আচ্ছা নো প্রব্লেম মাই প্রিন্স। তুমি শুধু বলো কাকে ভালো লেগেছে?
– বাবা ঐ যে ট্রেনে একটা মেয়ে আমাকে হেল্প করেছিল না?
– ওহ্ আমি তো তেমাকে জিজ্ঞাসাও করেছিলাম।
– হুম কিন্তু তখন ওকে আসলে..
তারপর সব খুলে বললো। হাসনাদ সাহেব খোশমেজাজে বললেন,
– ভালোবাসার কথা জানিয়ে দেয়া ভালো। তুমি মেয়েটাকে বলে দাও তুমি ওকে পছন্দ করো। আর আমি তো কাল ইরিনের সাথে দেখা করতে আসছিই তখন নাহয় ওদের বাসায় যেয়ে ওর বাবা মার সাথে কথা বলবো।
কূজন অবাক হয়ে বললো,
– এখনি????
– এখন নয়তো কখন? ওর বিয়ে হয়ে যাবার পর?
– আমি তো মাত্র পড়াশুনা শেষ করলাম। রেজাল্টও তো এখনো দেয়নি, আগামী সপ্তাহে দিবে।
– আরে বাবা আমার এতো সবকিছু কার? আর তুমি তো বিজনেসই করবে চাকরির সমস্যা তো আর নেই।
– তারপরো…
– না না শুনো ওকে এখনি বলে দাও।
কূজন দেখলো পিহু এসেছে তাই বললো,
– ঠিক আছে এখন রাখছি।
– ওকে মাই প্রিন্স।
কূজন ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বিনম্র স্বরে বললো,
– এক্সকিউজ মি!
পিহু ফিরে তাকালো। দেখলো কূজন হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। পিহু জিজ্ঞাসা করলো,
– আমাকে বলছেন?
– জ্বি একটু প্রয়োজন ছিল। কাইন্ডলি একটুখানি সময় দিতে পারবেন?
পিহু কূজনের কথা বলার স্টাইল দেখে মনে মনে বললো বেশ ভদ্রতা জানে।
তারপর বললো,
– বলুন।
কূজন হাতের ডায়েরিটা পিহুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
– প্লিজ এটা একটু কুহুকে দিবেন।
পিহু হতভম্ভ হয়ে তাকিয়ে রইলো কূজনের দিকে।
কূজন অনুনয় করে বললো,
– প্লিজ একটু দিয়ে দিবেন কি? অনেক উপকার হতো।
পিহু ডায়েরিটা নিতে চাচ্ছে না কিন্তু এতো অনুনয় করে বলেছে নাও করতে পারছে না। তারপরো পিহুর মতো মেয়ে অন্যের কিছু দ্বারা সহজে প্রভাবিত হয় না। তাই কূজনকে বললো,
– আপুরটা আপুর কাছেই দিবেন।
– ঠিক আছে থেঙ্ক ইউ।
কূজন পিহুকে আর কিছু বললো না। পিহু চলে যেতে নিল তারপর কি মনে করে যেন আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো,
– ঠিক আছে দিন।
কূজন ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বললো,
– অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here