একটুখানি পর্ব : ৩৬

0
523

একটুখানি
— লামইয়া চৌঃ
পর্বঃ৩৬
হাসনাদ সাহেব কুহুদের ড্রয়িংরুমে বসে
আছেন। কুহুর মা নিজে এসে নাস্তা দিয়ে
গেছেন আর বলে গেছেন কুহুর বাবা এখনই
আসছেন। প্রায় সাথে সাথেই কুহুর বাবা এলেন।
সালাম দিয়ে হাসনাদ সাহেবের মুখোমুখি হয়ে
অন্য সোফায় বসলেন। হাসনাদ সাহেব কুহুর
বাবা থেকে সালাম এক্সপেক্ট করেননি।
কারণ উনার মেয়ে বয়সে ছোট হয়েও সালাম
জানালেন না। কেমন যেন অসামাজিক মনে হল
পিহুকে। কুহুও কি এমন??? নাও তো হতে পারে।
দুই বোনের যে মিল থাকবে তা স্বাভাবিক
কিন্তু আচার ব্যবহার ভিন্নও তো হতে পারে।
সাহরা, জাহরাও তো দুইবোন। তবে দুইজন দুই
মেরুর বাসিন্দা। আর কুহু যেমনই হোক সেটা
নিয়ে হাসনাদ সাহেবের কোনো আপত্তি নেই।
নিজের প্রিন্স এর খুশিই উনার কাছে সব কিছু।
ছেলের খুশির জন্য পারবেন না এমন কোনো
কাজ নেই। তৈয়ব সাহেবের কথায় হাসনাদ
সাহেবের ভাবনায় ছেদ পড়লো।
– ভাই আমার কাছে এসেছিলেন??
– জ্বি ভাই আপনার সাথে কথা বলতে এসেছি।
আসলে বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার উয়াইফ
থাকলেও ভালো হয়।
তৈয়ব সাহেবের কপালে সামান্য ভাঁজ পড়লো।
পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন জ্বি
আমি আসতে বলছি।
কুহুর মা আসতেই হাসনাদ সাহেব আবার কথা শুরু
করলেন।
– আমি একজন বিজনেসম্যান। এক্সপোর্ট
ইনপোর্টের বিজনেস। আমার উয়াইফ হাউজ
উয়াইফ। আমাদের এক ছেলে। আহসানউল্লাহ
থেকে….
হাসনাদ সাহেবের পুরো কথা শেষ না হওয়ার
আগেই ফোন বেজে উঠল।
– এক্সকিউজ মি!
– না ভাই ঠিক আছে আপনি কথা শেষ করুন
আমরা অপেক্ষা করছি।
হাসনাদ সাহেব কথা শেষ করেই ফোন রেখে
আবার বলতে শুরু করলেন।
– ওহ্ যেটা বলতে নিয়েছিলাম ভালোই হয়েছে
ফোনটা এসেছে। আমার ছেলের রেজাল্ট
বেরিয়েছে। কূজন আহসানউল্লাহতে ট্রিপল ই
থেকে পাশ করে বেরিয়েছে। এখনই জানতে
পারলাম। এখন সে আমার সাথে বিজনেস
করবে। তাছাড়া আমি প্লটের ব্যবসাও করি।
আসলে ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছে
করেছি। এখন ছেলে বিজনেস করতে চাচ্ছে
তাই এটাও করতে দিচ্ছি। আমরা কুমিল্লায়
থাকি। আমি আসলে এখানে এসেছি বিয়ের
প্রস্তাব নিয়ে। আপনার মেয়ে কুহুকে আমি
ছেলের বউ করে রাখতে চাই।
কুহুর বাবা মা যা ভেবেছিলেন তাই। কুহুর বাবা
জিজ্ঞেস করলেন,
– আপনি আমার মেয়েকে কোথায় দেখেছেন??
– আমি দেখিনি আমার ছেলের সাথে ট্রেনে
দেখা হয়েছে আপনার মেয়ের। কুহু আমার
ছেলেকে হেল্প করেছিল।
কুহুর মা বেশ অবাক হয়ে গেলেন। ভাবছেন যে
জিনিসটা নিয়ে মেয়েকে ছোটবেলা থেকে
বুঝিয়ে এসেছেন আজ সে জিনিসটাই তার
মেয়ের কপাল খুলে দিয়েছে। ছোটবেলা
থেকেই বান্ধবীদের উপকার করতে যেয়ে
বোকার মত নিজে ফেঁসে যেত। তাই সবসময় না
করতো কাউকে হেল্প করতে।
কিন্তু মেয়েটা তার অভ্যাস আদৌ ছাড়তে
পারলো না। বিয়ে হোক বা না হোক তবে তার
মেয়ের গুনটা যে সবার চোখে পড়ছে এটা
ভাবতেই করবীর মন খুশিতে ভরে গেল। সেবার
তো নীরাকে হেল্প করতে যেয়ে নীরার
মায়ের কাছে কত কথা শুনলো। তারপরো
নীরাকে আজ অব্দি কিছু বলেনি কুহু। পিহুর মতন
এত বুদ্ধিমতি না হলেও কুহু যে গুনবতী তা মনে
প্রাণেই বিশ্বাস করেন কুহুর মা।কুহুর মা এসব
ভাবছেন তখনই হাসনাদ সাহেব কুহুর মায়ের
দিকে কূজনের বায়োডাটা বাড়িয়ে দিলেন।
কুহুর মা বায়োডাটা হাতে নিলেন। সাদা খাম
থেকে বায়োডাটা বের করলেন। খামের ভিতর
কূজনের দুইটা ছবিও রাখা আছে। তিনি সবার
আগে ছবি দুইটা দেখলেন। একটা ওদের
ফ্যামিলি পিক। দেখেই বুঝলেন ওদের
লিভিংরুমে বসে তোলা। ওরা যে বেশ ধনী খুব
সহজেই বোঝা যাচ্ছে। পরের ছবিটা দেখলেন
তিনি। কূজনের সিঙ্গেল ছবি। ভার্সিটির
ক্যাম্পাসে গিটার নিয়ে গান গাইছে। এমন
একটা ছবি। গিটারিস্ট না হয়েও অনেকে
গিটার নিয়ে ছবি তুলে কিন্তু বোঝাই যাচ্ছে
ছেলেটা আসলেই গিটার বাজাচ্ছে। কূজনের
হাসি হাসি চেহারা দেখে কুহুর মা একনজরেই
কূজনকে পছন্দ করে ফেললেন। বায়োডাটা
খুলেও দেখলেন। তবে পুরোটা দেখলেন না।
প্যাটার্নাল ব্যাকগ্রাউন্ড দেখেই হা হয়ে
গেলেন। দাদা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের
অধ্যাপক ছিলেন। কূজনের দুই চাচাই
ক্যাবিনেট সচিব। একজন চাচীর নিজস্ব ফ্যাশন
হাউজ আছে। অন্যজন হাউজ ওয়াইফ। ফুফা
কাস্টম অফিসার। ফুফু সরকারি কলেজের
প্রফেসর। সবার ছেলে মেয়েই বিদেশে
পড়াশুনা করে বিদেশেই স্যাটেলড। কুহুর
মায়ের বিশ্বাস হচ্ছে না এমন ঘর থেকেও
তাদের মত মধ্যবিত্তের মেয়ের জন্য বিয়ের
প্রস্তাব আসতে পারে। কুহু বেশ সুন্দর তবে মহা
সুন্দরী তো না। তারউপর পড়াশুনাও সাধারণ।
আগ্রহ নিয়ে পরের পাতায় মেটারনাল
ব্যাকগ্রাউন্ড দেখতে যাবেন ঠিক তখনই কুহুর
বাবা ইশারায় এভাবে বায়োডাটা দেখতে
নিষেধ করলেন। করবীর মাথায়ও বিষয়টা
আসলো। এভাবে উনার সামনে বসে উনার
ছেলের বায়োডাটা দেখাটা কেমন যেন
দেখায়। উনি তো দেখার জন্যই দিলেন পরে
দেখলেই হয়।
কুহুর বাবা বললেন,
– ভাই আমি আপনাকে পরে জানাবো। আমার
মেয়ে তো বাসায় নেই ওর খালার বাসায়
বেড়াতে গিয়েছে। আসলে মেয়ের মতামতের
ও একটা বিষয় আছে। তারপর ওর চাচা আর
মামাদের সাথে কথা বলতে হবে। মেয়ের
গার্জিয়ান তো আমি একা নই।
হাসনাদ সাহেব হেসে বললেন,
– অবশ্যই মেয়ের মতামতই তো ইম্পর্টেন্ট। আর
আপনার ফ্যামিলির সঙ্গেও বুঝে শোনে
দেখবেন।
– ভাই আপনি তো আমাদের ব্যাকগ্রাউন্ডই
জানেন না। আসলে মেয়ের বায়োডাটাও
এখনো বানাইনি। আমি টিএনটিতে জব করি।
– আপনার ফ্যামিলি ইম্পর্টেন্ট না। কুহু
ইম্পর্টেন্ট আমার জন্য। আচ্ছা আজ উঠি
আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় থাকবো।
যাওয়াী আগে হাসনাদ সাহেব কুহুর বাবাকে
নিজের কার্ড দিয়ে গেলেন। হাসনাদ সাহেব
বেশ ফুরফুরে মেজাজে বের হলেন। একে তো
কূজনের রেজাল্ট বেরিয়েছে। আর কূজনের
আগে তিনিই জানেন। কূজনকে সারপ্রাইজ
দিবে বলে ভার্সিটির কম্পিউটার
অপারেটরকে তিনি আগেই টাকা দিয়ে
রেখেছিলেন যেন রেজাল্ট সবার আগে
উনাকেই জানিয়ে দেয়। তারউপর কূজনের
সিজিপিএ বেশ ভালো। সবচেয়ে ইম্পর্টেন্ট
ব্যাপার হলো কুহুর মায়ের চেহারা দেখেই
বোঝা গিয়েছে উনি হতভম্ব হয়ে আছেন। তাঁর
প্রিন্সকে ফিরিয়ে দিবে এমন কেউ অন্তত
বাংলাদেশে নেই বলে হাসনাদ সাহেবের
ধারণা।
.
বাসায় মেহমান এলে পিহুর একদমই সহ্য হয় না।
বিরক্তি তখন তুঙ্গে থাকে। তাই তখন নিজের
ঘর ছেড়ে সে বেরই হয়না। চুপচাপ ঘরে বসে
থাকে। আজও এর ব্যতিক্রম হয়নি। চুপচাপ বসে
ক্যামিস্ট্রি পড়ছিল। পানির পিপাসা
পাওয়ায় ডাইনিং এ গিয়েছিল পানির জন্য।
ডাইনিংরুমে যাওয়ার সময় হালকা পাতলা
কথা কানে এসেছে তার। বড়দের কথায়
কোনোকালেই সে কান দেয় না। কুহু হলে
নিশ্চই কান খাড়া করে কথা শুনতো। কুহুর আবার
বড়দের আজাইরা প্যাঁচাল শুনতে ভালো লাগে।
পিহু যতদূর শুনেছে বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে।
নিশ্চই কুহুর বিয়ে নিয়েই হচ্ছে। যেহেতু কুহুকে
এসে খোঁজ করেছেন আবার সবাই এখন কুহুর
বিয়ে নিয়ে ভাবছেন তাই পিহু বুঝে নিল
বোনের বিয়ের কথা চলছে। তবে বেশি কিছু
শুনতে পারেনি ফোন এসেছিল কলেজের
ম্যামের। তবে বেশ করেই বুঝতে পারছে
কোনো বড় ধরনের সমস্যা হবে। পিহু বারান্দায়
দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। হঠাৎ দেখলো হাসনাদ
সাহেব ওদের বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে
কলরবদের বিল্ডিং এ গেল। এটা দেখেই পিহুর
চোখ বড় বড় হয়ে গেল। কোনোরকমে
মেডামের সাথে কথা বলে মায়ের কাছে
গেল। করবী ছোট মেয়েকে সব বললেন। পিহু
নরমাল ভাব নিয়ে বললো,
– কই দাও তো বায়োডাটা। আর ছেলের ছবিটা
দেখি।
– ওয়ারড্রবের উপর রেখেছি।
– আচ্ছা আমি দেখছি।
পিহু বায়োডাটা নিয়ে নিজের রুমে ফিরে এল।
এসব বায়োডাটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করা, মজা
করা এসব করে কুহু। ওদের যেকোনো কাজিনের
বিয়েতে সবার আগে কুহু দুইটা জিনিস খুব
ইন্টারেস্ট নিয়ে দেখে। এক বায়োডাটা আর
দ্বিতীয়ত ইনভিটেশন কার্ড। আর পিহু জীবনেও
এসবে নজর দেয় না। কিন্ত এই প্রথম এত
ইন্টারেস্ট নিয়ে বায়োডাটা খুললো।
বায়োডাটা পড়লো তারপর ছবি দেখে পুরো
শিউর হলো যে কূজনই কুহুর জন্য বিয়ের প্রস্তাব
পাঠিয়েছে। পিহু বিড়বিড় করে বললো,
– কলরব যদি আগুনের গোলা হয় এই কূজন হলো
হীম শীতল বরফ। কলরব থেকে একটুখানি বেশি
এগিয়ে সে।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here