একটুখানি পর্ব : ৪১

0
495

একটুখানি
— লামইয়া চৌধুরী
পর্বঃ ৪১
কুহু মায়ের রুমে উঁকি দিয়ে দেখলো মা নামজ
পড়ছেন। কুহু দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলো নামাজ
শেষ হওয়ার। মায়ের নামাজ শেষ হতেই কুহু
রুমের ভিতর ঢুকলো। তারপর আস্ত করে বললো,
– আম্মু! আব্বু কি মসজিদে??
– হুম। কিছু বলবি?
কুহু মায়ের কথা শোনে ঢোক গিললো। হঠাৎ
মনে হলো কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে তার। গলার
কাছে এসে সব শব্দ আটকে যাচ্ছে।
কুহুর মা বিছানায় বসতে বসতে বললেন,
– কি হলো কি বলবি বলে ফেল।
কুহুর ভয়ে বুক কাঁপছে। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে
না। কীভাবে মাকে ব্যাপারটা বোঝাবে
সে?? মাকে কীভাবে বলবে কথাটা?? আমি
কলরবকে ভালোবাসি মা। ছিঃ মায়ের সামনে
ভালোবাসা নিয়ে কথা বলতে পারবে না সে।
তাহলে কীভাবে?? মা আমি কূজনকে না
কলরবকে বিয়ে করবো। এভাবে বলবে?? নাহ্
কলরব নাহ্ বলবো ইরিনের ভাই। নাহ্ এভাবেও
না। অনেক ভেবেও বুঝতে পারছে না কীভাবে
কি বলবে। বুকের ভিতর চাপা একটা কষ্ট হচ্ছে।
মনে হচ্ছে কলরবকে হারিয়ে ফেলবে। কুহুর
শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়া হঠাৎ বেড়ে গেল। হাত
পাও কাঁপতে শুরু করলো। কুহু মায়ের সামনে
দাঁড়িয়ে ছিল। কুহুর মা মেয়ের এই অবস্হা
দেখে কুহুকে টেনে বিছানায় বসিয়ে জড়িয়ে
ধরে বললেন,
– কি হলো আমার আম্মার??
কুহু এবার মাকে জড়িয়ে কেঁদো দিল।
কুহুর মায়ের এবার ভয় হচ্ছে। এই বয়সী
মেয়েদের নিয়ে যে কতো বড় সমস্যা তা
মেয়ের মা ছাড়া অন্য কেউ জানে না। কবরীর
প্রেশারও হাই হয়ে যাচ্ছে। উনি মেয়েকে
আঁকড়ে ধরে বিছানা ছেড়ে দাঁড়ালেন। তারপর
মেয়ের মুখ দুহাত দিয়ে উপরে তুলে বললেন,
– আমাকে বলো আম্মা। কি হয়েছে তোমার??
আম্মু সব ঠিক করে দিব।
কুহু মাকে ছেড়ে দিয়ে হাত দিয়ে চোখ মুছলো
তারপর চুপ করে বসে রইলো। কুহুর মা আবার কুহুর
পাশে বসে আস্হা মেশানো কণ্ঠে বললেন,
– আম্মা আমার তুমি শুধু একবার বলো। না বললে
আমি বুঝবো কি করে???
কবরী মেয়েদের তুই তোকারি করলেও
সিরিয়াস মোমেন্টে তুমি ছাড়া কথা বলতে
পারেন না। কবরী রীতিমতো ঘামছেন। ভিতরে
বাহিরে সর্বাঙ্গে মেয়ের চিন্তায় পাগল হয়ে
যাচ্ছেন। কাঁপা স্বরে বললেন,
– কুহু আম্মা আমার বলো না কি হয়েছে??
কূজনকে ভালো লাগে না?? কাকে ভালো
লাগে?? আম্মুকে বলো। আর তোমার আব্বুও তো
সেদিন বললোই…
কুহু মায়ের কথায় ফুঁপিয়ে কেঁদে বললো,
– আম্মু আমি.. আমি….
কবরী এইবার ধমকে উঠে বললেন,
– তুমি না বললে বুঝবো কি করে??
কুহু মায়ের কাছ থেকে নিজেকে ছাঁড়িয়ে
নিয়ে বললো,
– তুমি আমাকে ধমকাচ্ছো কেনো আম্মু??
দরকার নেই শোনার। যা ইচ্ছা তাই করো।
তারপর উঠে দাঁড়ালো বিছানা ছেড়ে। কবরী
চোখ বন্ধ করে মেজাজ শান্ত করলেন তারপর
মেয়ের হাত ধরে টেনে মেয়েকে থামিয়ে
বললেন,
– সরি আম্মাজান আর বকবো না।
কুহু চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।
তারপর কাঁপা স্বরে বললো,
– তুমি বকবে না তো?
– নাহ্ একদম না।
– রাগ করবে??
– না রাগও করবো না।
কুহু চোখ বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে বললো,
– মা আমি কূজনকে বিয়ে করবো না। আমি..
আমি.. আমি….
কুহু এতোটুকু বলার পর আবার বাকশক্তি হারিয়ে
ফেললো। ওর চিন্তাজগত মায়ের হাতে চড়
খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলো।
ইচ্ছে হচ্ছে দৌড়ে পালিয়ে যেতে কিন্তু পা
গুলো সঙ্গ দিচ্ছে না। মায়ের দিকে তাকাতেও
পারছে না সে। অপরদিকে কবরী থতমত খেয়ে
বসে আছে। মেয়েকে কি বলবে বুঝতে পারছেন
না। এই মেয়েকে নিয়ে তিনি দূর্ভোগে
পড়েছেন। এই মেয়ে কখন কি বলে না বলে
নিজেই জানে না। কোনো সেন্স নেই।
ছোটবেলায় পড়ে ব্যাথা পেয়েও বুঝতো না
যে ব্যাথা পেয়েছে। উনি নিজে দেখে তারপর
মলম লাগিয়ে দিতেন। আজো তাই করতে হবে
উনাকে। মনে মনে প্রস্তুতি নিয়ে ফেললেন
তিনি। তারপর ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে
মেয়েকে উদ্দেশ্যে করে বললেন,
– ঠিকা আছে কাঁদিস না কূজনের বাবাকে না
করে দিব।
মায়ের কথা শোনে কুহুর বুক থেকে পাথর সরে
গেল। কুহু আল্লাহকে মনে মনে ধন্যবাদ
জানাতে লাগলো। ঠিক তখনই কবরী আবারো
বলতে শুরু করলেন,
– তুই তো বলেছিস কাউকে তোর পছন্দ না
তাহলে সমস্যা কোথায় তোর?
কূজন আর কলরবই তো ঠিকাছে ওরা বাদ। আমার
আম্মাজানের জন্য তাহলে অন্য ছেলে
দেখবো। এবার খুশি তো?? আমার মেয়ের জন্য
কি পাত্রের অভাব হবে নাকি???
কুহু মায়ের কথা শোনে ভয়ার্ত চোখে মায়ের
দিকে তাকালো। বুকের মধ্যে তার ঢিপঢিপ
আওয়াজ হতে লাগলো। মনে হলো পৃথিবী উল্টে
যাচ্ছে। কুহু নিজের ঠোঁটের সাথে আন্দোলন
করে অস্ফুট স্বরে বললো,
– আম্মু ইরিনের ভাই….
কবরী ভ্রু কুঁচকে মেয়ের দিকে তাকালেন। কুহু
মায়ের তাকানো দেখে ভয়ে চুপসে গেল। ঢোক
গিললো সে। তারপর বিনাবাক্যে পা
বাড়ালো রুম ছাড়ার জন্যে। কবরী পিছন থেকে
আস্তে করে বললেন,
– কুহু! তুই আর কলরব কি একজন আরেকজনকে
পছন্দ করিস???
কুহু মায়ের কথায় হাঁটার গতি আরো বাড়ালো।
কুহুর মা মেয়ের অবস্হা দেখে সম্মোহিত হয়ে
বললেন,
– তাহলে কলরবের সাথেই তোর বিয়ে ঠিক
করছি।
কুহু না চাইতেও তাঁর পা দুটো থমকে গেল।
নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে সে মায়ের
দিকে ফিরে তাকালো। পরমূহুর্তেই সে নিজের
ঘরের উদ্দেশ্যে দৌড় দিল। কুহুর মা হালকা
হাসলেন। তারপর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।
অনেক বড় ভুল করা থেকে আল্লাহ বাঁচিয়েছেন
উনাকে। মেয়ের চোখে একটু আগে কলরবের
সাথে বিয়ের কথা বলার পর যে কৃতজ্ঞতা ভরা
চাহনী আর ঠোঁটের কোণে খেলে উঠা রঙধনু
তিনি দেখেছেন তাতে তাঁর হৃদয় প্রশান্তিতে
ছেয়ে গেছে।
..
কলরব মসজিদ থেকে বের হয়ে
এলোমেলোভাবে রাস্তায় হাঁটছে। আর
বিড়বিড় করে বলছে,
– ফুলটুশী আপনি কেমন আছেন?? আপনাকে
আপনি বলতেও ভালো লাগে। তবে তুমি করে
বললে কেমন যেন মায়া মায়া লাগে। আচ্ছা
কখন আপনাকে হাতে ধরে ধরে বাস্কেটবল
শিখাতে পারবো?? এতদিন তো বাস্কেটবল
শিখাইনি শুধু বল ছোঁড়াছোঁড়ি করেছি। মিস কুহু
আরিজা আপনি কি জানেন আপনার ভ্রুগুলো
কতো সুন্দর?? আর আপনার চোখে কেমন যেন
মায়া আছে? এতো মিষ্টি কেনো আপনি?
আমি বরাবরই ঝাল পছন্দ করি। এই প্রথম কোনো
মিষ্টি ভালো লাগলো। মিষ্টির নামকরণটা
কিন্তু মহান কলরব ইবনাতই করেছেন। ফুলটুশী
নামক মিষ্টিতে এই ঝালবাবু উবে গেছেন।
কলরব বিড়বিড় করা থামিয়ে নিজের মাথায়
টোকা দিয়ে বললো,
– মিস্টার কলরব ইবনাত আপনি তো দেখছি
পুরো পাগল হয়ে গেছেন। এভাবে চললে
কোনো মেয়ের বাপ মেয়ে দিবে না আপনার
কাছে।
তারপর নিজে নিজেই কলরব নিজের বলা কথা
শুধরে নিয়ে বললো,
– কোনো মেয়ের বাপ না শুধু কুহুর বাপ।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here