একটুখানি পর্ব : ৫২

0
471

একটুখানি
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ৫২
– তুমি যে এসেছো আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে
না।
কলরবের কথায় কুহু হাসলো। বেশ জোরেই
হাসলো। কলরব কুহুর হাসির শব্দ মন দিয়ে শুনছে। কুহু
যতক্ষণ হাসলো কলরব ঠিক ততক্ষণ কুহুর দিকে
পলকহীনভাবে তাকিয়ে রইলো। কুহু হাসি থামিয়ে
আস্তে করে বলল,
– উফ্ আমার এই রাক্ষসী হাসিটা নিয়ে আর পারি না।
কেউ যদি শুনে ফেলে তাহলে কি হবে বলুন
তো?
– কি আর হবে? ভাববে কোকিলের ডাক কুহু
থেকে আমার ফুলটুশীর হাসির শব্দ বেশি সুন্দর।
মানুষ শুনলে সমস্যা হবে না তবে কোকিল শুনতে
পেলে হিংসায় মরে যাবে।
কলরবের কথা শোনে কুহু আবারো হাসতে
লাগলো। কলরব আবারো মন দিয়ে কুহুর হাসির শব্দ
শুনছে। কুহু কোনোরকম হাসি থামিয়ে বলল,
– আপনি প্লিজ চুপ করুন তো নাহয় কেলেঙ্কারি
হয়ে যাবে।
– কেনো হবে?
– এই তো আমার হাসির শব্দ শুনে যে কেউ এসে
পড়বে। তারপর দেখবে রাতের অন্ধকারে আমরা
ছাদের পিছন দিকটায় বসে আছি। আমাদের তখন কেউ
নিশ্চয় পূজো করবে না।
কলরব কুহুর আরেকটু কাছাকাছি এগিয়ে বসে বলল,
– তাহলে আসলে কেনো ফুলটুশী?
কুহু বলল,
– চাঁদ দেখতে এসেছি।
কলরব গগণবিহারী হাসি হেসে বলল,
– ইটস্ অমানিষা কুহু!
কলরবের কথা শুনে কুহুর চেহারা পুরোনো
কাগজের মতো বিবর্ণ হয়ে গেল। কুণ্ঠিত গলায়
বলল,
– আপনাকে এই কয়েকদিন না দেখতে পেয়ে
হাপিয়ে উঠেছিলাম। সপ্তাহের এই পাঁচটা দিনে আমার
অবস্হা নাজেহাল হয়ে পড়ে।ইরিনকে যে সময়ে
পড়াতে যাই আপনি অফিসে থাকেন। আর শুক্র, শনি
ছাড়াও বিকেলে ছাদে আসতে পারেন না। ফোনে
কথা বলেও পোষায় না আমার। আপনাকে কাছ
থেকে দেখতে ইচ্ছে করে। তাই আজ যখন
আপনি বললেন ছাদে দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছেন মন
মানেনি আমার। উদভ্রান্তের মতন ছুটে এসেছি।
কুহুর জবাব শুনে কলরবের বুকের মধ্যে ছ্যাঁৎ
করে উঠলো। আচ্ছন্ন গলায় বলল,
– ফুলটুশী তোমার ভয় করছে না?
কুহু বিরক্তির শব্দ করে বলল,
– আমি ভূতে বিশ্বাসী না। তাছাড়া অন্ধকারও ভয় পাই না।
– আমি আমার কথা বলছি কুহু।
– নাহ্ আপনি ফাজিল হলেও ভদ্র ফাজিল তাই ভয় হয়না।
কলরব বিড়বিড় করে বলল,
– ভদ্র ফাজিল বাহ্!
তারপর ভৎসনার সুরে বলল,
– আমি মোটেও ভদ্র না। আমার চিন্তাধারা খুব বেশি
পরিমাণে অভদ্র। যেমন ধরো আমার এই মুহূর্তে
তোমার সাথে ঘেঁষে বসতে ইচ্ছে করছে।
তোমার হাতে হাত রাখতে ইচ্ছে করছে। আরো
অনেককিছু ইচ্ছে করছে বললে রেগে যাবে।
তারপর হুটহাট আমাদের বিয়েটা ভেঙে দিবে। এই
ভয়ে চিন্তাগুলো জব্দ করে রেখেছি।
কুহু অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে লাজুকভাবে হাসলো।
তারপর কলরবের দিকে না তাকিয়েই বলল,
– সাধে কি আর ভদ্র ফাজিল বলি।
কলরব আহ্লাদ করে বলল,
– জানো আমি তো আমাদের কয়টা ছেলেমেয়ে
হবে, কি নাম রাখবো সব ঠিক করে ফেলেছি।
কুহু কলরবের কথা শোনে হা হয়ে রইলো। তারপর
লজ্জা পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো আর বলল,
– আমি আসছি আম্মু পরে বকা দিবে।
কলরব কিছু বলল না। চুপ করে কুহুর লজ্জা দেখলো।
কুহু কিছুক্ষণ জবাবের অপেক্ষা করে চলে গেল।
কুহু চলে যাওয়ার পরো কলরব বেশ কিছুক্ষণ
কুহুদের ছাদে বসে রইলো। তারপর যখন উঠে
দাঁড়ালো চলে যাওয়ার জন্য তখন দেখলো কুহু
আবার ফিরে আসছে। কলরব কুহুকে হেঁটে
আসতে দেখে আনমনে হাসলো। কারণ সে
যেন কুহু আসবে বলেই বসে ছিল। কুহু এসেই
কলরবের মুখোমুখি দাঁড়ালো। পায়ের পাতায় ভর
দিয়ে উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে কলরবের টিশার্ট খামচে
ধরলো কুহু। তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে
ফিসফিসিয়ে বলল,
“ভালোবাসি ভালোবেসে যাব বহুদূর,
তোমারে না দেখিলে কেঁদে উঠে বুক।
তোমার উফ্ বলা লাগে মধুর,
তোমার কষ্টে ভিজুক চিবুক।”
কলরব এতোটাই অবাক হয়েছে যে চোখের
পলক ফেলতে ভুলে গেছে। যতক্ষণে
চোখের পলক পড়লো ততোক্ষণে কুহু দৌড়ে
পালিয়েছে। কলরব আনমনেই নিজের টিশার্টে
একবার হাত বুলালো তারপর নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিলো
যে জায়গাটায় কুহু খামচে ধরেছিল। কলরব মুচকি
হেসে নিজেদের ছাদের দিকে পা বাড়ালো।
রেলিং পার হয়ে যাওয়ার সময় পড়ে যেতে নিলো
সে। সামলে নিলো নিজেকে তারপর হেসে
বলল,
– কলরব এই তো শুরু। এই একটুখানিতেই তোর এই
অবস্হা হলে বাকি জীবন পার করবি কীভাবে?
বাসায় যেয়েই কলরব মোবাইল হাতে নিয়ে কুহুকে
ফোন করলো। কুহু ফোন ধরছে না তাই কলরব
মেসেজ পাঠালো।
” তুমি আমাকে তুমি করে বললে?”
কুহু রিপ্লাই করেছে,
– জ্বি না মিস্টার ইবনাত কলরব। ঐটা কবিতার ছন্দ ছিল।
– যাই ছিল আমাকে শেষ করে ফেলেছে।
ফুলটুশী তুমি প্লিজ এই আপনি বলাটা ছাড়ো।
– কেনো আগে তো হুশ ছিল না? এখন কেনো?
– আসলেই আমি কেমন যেন ভুলো মনের হয়ে
গেছি। সারাক্ষাণ খালি তুমি আর তুমি। আমি যে এবার বিসিএস
এর রিটেনও টপকাতে পারবো না আমি শিউর। এখন
আমার তোমার মতন একটা টিচার লাগবে।কুহু কলরবের
মেসেজ পড়ে হাসতে হাসতে পিহুর উপর গড়াগড়ি
খাচ্ছে। পিহু বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। তারপরো
ধাক্কিয়ে কুহুকে সরাতে পারছে না। নিরুপায় হয়ে
বসে রইলো পিহু।
কুহু মেসেজের রিপ্লাই করলো,
– আমি কিন্তু বেশ রাগী টিচার। ইরিনকে জিজ্ঞাসা
করে দেখবেন?
– তা তো জানি। তারপরো আমার তোমাকে চাই।
– সকাল সন্ধ্যা বকা খেতে রাজি??
– হুম আলবাদ রাজি। শুধু রাতে একটুখানি আদর খাওয়ালে
চলবে।
কলরবের মেসেজ পড়ে কুহু লজ্জা পেল। পিহু
এবার বোনের উপর হেসে গড়াগড়ি খেলো। পিহু
কুহুর হাত থেকে মোবাইল নিয়ে লিখলো,
– দেওয়া যাবে না।
– তোমার দেওয়া লাগবে না। আমি হলাম ডাকাতসর্দার।
ডাকাতি করতে জানি।
পিহু আর কথা বাড়ালো না। মোবাইল কুহুর হাতে দিয়ে
মুচকি হাসতে হাসতে চলে গেল।
কুহু লজ্জায় আর একটা মেসেজও করলো না। চুপচাপ
মোবাইল নিয়ে বসে রইলো। কলরব একের পর
এক মেসেজ দিয়েই যাচ্ছে। রিপ্লাই না পেয়ে
কল দিচ্ছে। কুহু কয়েকবার ফোন কেটে দিল। কল
কেটে দেওয়ায় কলরব মেসেজ দিল,
– ফুলটুশী! তুমি রাগ করেছো? সরি কান ধরেছি। ভুল
হয়ে গেছে আর কোনোদিন বলবো না। প্লিজ
রাগ করো না। ফোন ধরছো না কেনো? প্লিজ
অন্তত রিপ্লাই দাও।
কুহু কলরবের এই মেসেজ দেখে মাথায় হাত দিয়ে
বলল,
– এই ছেলে নিশ্চিত বিসিএস এ ফেইল। ছাগলটা এটাও
বুঝে না যে আমি রাগ করিনি লজ্জা পাচ্ছি।
কলরব একের পর এক সরি লিখে মেসেজ করেই
যাচ্ছে। কুহু হতাশ হয়ে রিপ্লাই লিখলো,
– আপনি জীবনেও ক্যাডার হতে পারবেন না। ছাগল
একটা। এখন ঘুমিয়ে পড়ুন। আগামীকাল সকালে না
আপনার ঢাকা যাওয়ার কথা? দেরি করছেন কেনো?
ডিনার করে ঘুমিয়ে পড়ুন।
মেসেজটা সেন্ড করে কুহুর মন খারাপ হয়ে
গেল। পনেরো দিন কলরবকে দেখতে পাবে না
সে। কলরবেরও মেসেজটা দেখে মন খারাপ
হলো। কুহুকে লিখলো,
– ফুলটুশী কাল সকাল সাতটায় একবার ছাদে এসো।
যাওয়ার আগে তোমার সাথে একবার দেখা করে
যেতে চাই।
– আসবো!

কুহুর ছাদে যাওয়ার কথা সকাল সাতটায়। কুহু ছয়টার দিকেই
ছাদে চলে এলো। কলরবকে দেখার জন্য মন
ভীষণ ছটফট করছিল। পারে না রাতে এসেই দাঁড়িয়ে
থাকে। ছাদে এসেই সিঁড়িঘরের সাইড দিয়ে পিছন
দিকটায় চলে গেল। এখন ওরা আর দুই ছাদে দাঁড়িয়ে
কথা বলে না। এখানে এসে পাশাপাশি বসে কথা বলে।
পিছনদিকটায় যেতেই কুহু দারুণ রকমের অবাক হলো।
কলরব পিলারের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।
কুহু ভেবে পেল না কলরব এতো সকালে এখানে
কেনো? আরো তো এক ঘণ্টা বাকি। কলরবের
মুখোমুখি বসে আস্তে করে ডাকলো,
– শুনছেন?
কলরব চোখ বন্ধ রেখেই বলল,
– আমার নামটা পছন্দ হয় না?
কুহু সরে কলরবের পাশে বসে বলল,
– খুব পছন্দ হয়, নাম ধরে ডাকতেও ইচ্ছে হয়।
কলরব চোখ খুলে তাকালো। তারপর কুহুর দিকে
ফিরে বসে বলল,
– তাহলে ডাকো না কেনো?
– ডাকবো। বিয়ের দিন থেকে তুমি করে বলবো
আর নাম ধরেও ডাকবো।
– ধন্যবাদ ফুলটুশী।
কলরব কথা বলতে বলতে পিছন থেকে একটা
মাঝারী সাইজের বেতের ঝুড়ি বের করে কুহুর
সামনে রাখলো।
কুহু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ঝুড়িটার দিকে। ঝুড়ি
ভর্তি নানান রঙের রেশমি চুড়ি রাখা। কুহুকে অবাক
চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে কলরব বলল,
– এগুলো কিন্তু তোমার জন্য না।
কলরবের কথা শুনে কুহু আগের চেয়েও বেশি
অবাক হলো। অবাকের চেয়ে বেশি রাগ হলো
কুহুর। রাগে মনে মনে নিজের হাত কামড়াতে
লাগলো। চোখ ভর্তি মেঘ গুলোর মাঝে ঢুকাঢুকি
শুরু হয়ে গেল। কুহু যখন রাগ প্রকাশ করতে পারে না
তখন কুহুর কান্না চলে আসে। এখনো কান্না চলে
আসছে কুহুর। কোনোরকম আটকে রাখলো
চোখে। কলরব কুহুর অবস্হা দেখে তাড়াতাড়ি করে
বলল,
– বোকা মেয়ে কাঁদছো কেনো? আমি বলতে
চেয়েছিলাম এগুলো আমার ফুলটুশীর জন্য।
কলরবের কথা শুনে কুহুর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে
পড়লো। ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।
তারপর নিজের মাথায় নিজে টুকা দিয়ে বলল,
– পুরাই গাধী আমি।
কলরব গগণবিহারী হাসি হেসে বলল,
– তা ভুল বলোনি।
কুহুও কলরবের সাথে তাল মিলিয়ে হাসলো। তারপর
বলল,
– আপনার চুড়ি পছন্দ?
কলরব ডানে বায়ে মাথা নেড়ে বলল,
– নাহ্ আমার লিপস্টিক পছন্দ। সেদিন তোমার হাত ভর্তি
চুড়ি দেখে চুড়ি কিনতে ইচ্ছে হলো।
কুহু কলরবের দিকে রাগী লুক দিয়ে বলল,
– আস্ত ফাজিল আপনি।
– দেখলে তুমি কিন্তু অতোটাও বোকা না ফুলটুশী।
কুহু ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
– ফাজিলদের ইনট্যানশন সব মেয়েরাই বুঝে।
কলরব কান ধরে বলল,
– সরি বাবা ঐটা মজা করে বলেছিলাম। আমার আসলে
আয়না পছন্দ। দাঁড়াও তোমার জন্য একটা ছেট আয়না
এনেছি।
কলরব পকেটে থেকে একটা ছোট আয়না বের
করলো। কাঠের ফ্রেমে বাঁধাই করা ছোট আয়না।
– হাত বাড়াও।
কুহু হাত বাড়িয়ে দিতেই কলরব কুহুর হাতে আয়নাটা
রেখে বলল,
– আয়নাটায় যখন তুমি নিজেকে দেখবে মনে
করবে আমার চোখ দিয়ে দেখছো।
কুহু মুচকি হেসে বলল,
– আচ্ছা জনাব।
– আরে তোমাকে তো আমাদের
ছেলেমেয়েদের নামগুলোই বলা হয়নি।
কুহু লজ্জা পেয়ে বলল,
– প্লিজ চুপ করুন।
কলরব হাত নেড়ে বলল,
– আহা শুনোই না। আমাদের একটা ছেলে হবে।
আর দুইটা মেয়ে হবে। মেয়েগুলো যমজ হলে
ভালো হয়। না হলেও সমস্যা নেই।
কুহু লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছে। দৌড়ে পালিয়ে যেতে
ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু চলে গেলে কলরবকে মন
ভরে দেখা হবে না। তাই জড়োসড়ো হয়ে বসে
আছে। চেহারায় ঈষৎ লালচে ভাব চলে এসেছে
কুহুর। কলরব সেটা দেখে আরো মজা পাচ্ছে আর
নিজের কথা চালিয়ে যাচ্ছে।
– ফুলটুশী আমাদের ছেলেটার নাম হবে কুহুরব।
কুহু আর কলরব মিলিয়ে। সুন্দর না? আর মেয়ে দুইটার
নাম হবে কিচির আর মিচির।
পছন্দ হয়েছে তো? পছন্দ না হলেও আমি
এগুলো রাখবো। বহু কষ্ট করে এই নামগুলো
খুঁজে বের করেছি। প্রথমে তো আয়না,
দর্পণ,আরশি এসব আসছিল মনে। পরে ঐগুলো
কেমন যেন পুরোনো পুরোনো মনে
হচ্ছিলো তাই বাদ দিয়ে দিয়েছি। আসলে হয়েছে
কি আমি না তোমার সাথে সাথে আয়না থুক্কু আয়না
বললে আবার রেগে যাবে। আমি
ড্রেসিংটেবিলের প্রেমে পড়েছি। তাই বলে কি
ছেলেমেয়ের নাম ড্রেসিংটেবিল রাখবো নাকি?
কুহু নীচের দিকে তাকিয়ে কলরবের কথাগুলো
কোনোভাবে গিলছিল। কিন্তু কলরবের কথা যেন
ফুরায় না। তাই বাধ্য হয়ে কথা ঘুরানোর জন্য বলল,
– আপনার না সকাল সাতটায় আসার কথা ছিল?
– আমি তো সেই ফজরের নামাজ পড়ে মসজিদ
থেকে সোজা এখানে এসে পড়েছি। ও হ্যাঁ বাসায়
গিয়েছিলাম এগুলো নিয়ে আসতে। তোমারো
তো আরো পরে আসার কথা ছিল। এতো তাড়াতাড়ি
যে?
– চাঁদ দেখতে এসেছি।
কুহু কথাটা বলেই হেসে দিল। কুহু হাসছে, শব্দ করে
হাসছে আর কলরব মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে কুহুর
দিকে। কলরব কুহুর হাসির শব্দের সাথে সাথে বলল,
– ফুলটুশী সবসময় এমন হাসিখুশি থাকবে। তোমার
হাসিতেই বোধহয় আমার বুকের পাঁজর হাসে। আর
তোমার কান্নায় অন্তরাত্মা পর্যন্ত কাঁদে।
কোনোদিন তোমার চোখের পানি দেখতে চাই
না। তোমার কষ্ট আমার মোটেও সহ্য হয় না আর
হবেও না। দেখো না তোমার জন্য কাঁচের চুড়ি
আনিনি পাছে কোনোদিন হাত কেটে ফেলো।
কুহু কলরবের শেষ কথাটা শুনে কেঁদে দিল।
চোখে অশ্রধারা বইতে লাগলো তার। কিন্তু চেহারায়
এক অনাবিল উচ্ছাস। কাঁদতে কাঁদতেই বলল,
– এতো ভালোবাসেন আমায়?
কলরব উত্তর দিলো না। শুধু তাকিয়ে রইলো কুহুর
দিকে।

কুহু ছাদে দাঁড়িয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে।
কলরব বাইকে বসে কুহুর দিকে একবার তাকালো।
তারপর হাত নেড়ে হেসে বলল,
– আল্লাহ হাফেয ফুলটুশী!
কুহুর গলা ধরে এলো। কাঁপা গলায় কলরবকে হাত
নেড়ে বিদায় জানিয়ে বলল,
– খোদা হাফেজ!
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here