এক গুচ্ছো কদম পর্বঃ১৯

0
1123

#এক_গুচ্ছো_কদম
#পর্বঃ১৯
লিখাঃসামিয়া খান

“মি.মৃদুল আমি আপনার সম্পর্কে আ্যনালাইসিস করে এটা জানতে পারলাম যে আপনার মেয়ের মায়ের নামের জায়গায় যার নাম আছে নাতো সে আপনার স্ত্রী, আর না সে আপনার মেয়ের বায়োলজিক্যাল মাদার।এম আই রাইট?”

জার্নালিস্টের করা প্রশ্নে কোনরকম ইন্টারেস্টেড দেখালো না মৃদুল।চমৎকারভাবে সাজানো ব্লুগেনের গ্লাসে একটা ছোট চুমুক বসালো।গ্লাসটা টেবিলের উপরে রেখে মৃদুল তার সামনে বসে থাকা চমৎকার গঠনশৈলী নারীর দিকে দৃষ্টিপাত করলো।

“মিস,আই থিংক আপনাকে যে পেপারটা দেওয়া হয়েছিলো সেখানে ক্লসগুলোতে বলা ছিলো।ইউ কান্ট আস্ক মি এনি পার্সোনাল কোয়েশ্চেন।”

“আই নো মি.মৃদুল।বাট আপনার সম্পর্কে সবার জানার একটু অতীব আগ্রহ।মাত্র দুই বছরের মধ্যে শেয়ার ইন্ডাস্ট্রি একদম কাঁপিয়ে দিয়েছেন।”

“আই থিংক আমি এটা জানি।আপনি নতুন কিছু বলেন।”

“নতুন কিছু আমি তখুনি বলতে পারবো। যখন আপনি আমাকে নতুন কিছু সম্পর্কে অবগত করবেন।”

“ওকে ক্যারি অন। আই উইল ট্রাই টু আন্সার ইওর কোয়েশ্চেন।”

“প্রথমে শুধু এটুকু বলেন আপনি এতো হ্যান্ডসাম কীভাবে হলেন?”

প্রশ্নটা শুনে সামনে থাকা তরুণীর দিকে চোখ তুলে তাঁকালো মৃদুল।মেয়েটার মতিগতি ভালো লাগছে না।ইন্টারভিউ এর অনুমতি দিয়ে বিপদে পরলো কীনা কে জানে।

“আমি এতো সুন্দর কেনো তা জানিনা।আমি আগে এরকম ছিলাম না।অগোছালো, ভুড়ীওয়ালা, আনফ্যাশানেবল একজন ছিলাম।আপনি যদি দুই বছর আগে আমাকে দেখতেন তাহলে বলতেন এটা কীভাবে সম্ভব।”

“আই থিংক আমি আপনার দুই বছর আগের ছবি দেখেছি।আর এ ব্যাপারে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে আমি আপনার সম্পর্কে যথেষ্ট রিসার্চ করেই এসেছি।”

“ভেরী ইমপ্রেসিভ মিস।”

“আপনার মেয়ের মায়ের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করেছিলাম। ”

“মাদিহার মায়ের নামের জায়গায় যার নাম আছে সে হলো হিমাদ্রি খান।আমার মাদিহার মা।”

“কিন্তু আমি যতোটুকু জানি মিস.হিমাদ্রি আপনার ছোট ভাই দুর্জয়ের বউয়ের নাম।এবং মি.দুর্জয় তার বিয়ের দিনই আত্নহত্যা করে মারা গিয়েছে।আর মাদিহার আসল মায়ের নাম মিস.রোদসী।”

“মাদিহার আসল মা হিমাদ্রি। রোদসী না।তেইশটা ক্রোমোজমের উপর ভিত্তি করে কেও কখনো মা হতে পারেনা।”

“হয়তো।আচ্ছা আপনার পরিবারের সকলের সাথে মোটামুটি দেখা করেছি এবং জানি।কিন্তু মিস.হিমাদ্রির ব্যাপারে কিছু জানতে পারলাম না।তার সম্পর্কে শেষ যা তথ্য পেলাম তা আজ থেকে দুই বছর আগের।সে কোথায় থাকে,কী করে? কেমন দেখতে এ ব্যাপারে কিছু জানতে পারিনি।আপনি কী আমাকে এ ব্যাপারে ক্লিয়ার করতে পারবেন একটু?”

“লুক মিস…

” মিস.নূপুর এহসান।”

“মিস.এহসান।আই থিংক আপনি আমার উপরে একটা ডকুমেন্ট লিখতে চলেছেন হিমাদ্রির উপরে না।সো নো মোর কোয়েশ্চেন এবাউট হিমাদ্রি। ”

“আই এপোলাজাইস স্যার।বাট আপনাকে নিয়ে ডকুমেন্ট করবো। সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার আশেপাশের জিনিস নিয়েও আমার মাথা ব্যাথা আছে।”

“মাথা ব্যাথা আছে তো ২৫০ গ্রাম এসপিরিন নিতে পারেন।বাট আপাতত আপনার জন্য নির্ধারিত সময়টা শেষ।আশা করি মিটিং এর পুরোটা সময় আপনি উপভোগ করেছেন।”

“অফকোর্স স্যার।”

“হোপ দ্যাট ডকুমেন্ট উইল বি গুড। হ্যাভ এ গুড ডে মিস.এহসান।”

কথাটা বলে চেয়ারের মাথা থেকে জ্যাকেটটা গায়ে জরাতে জরাতে বাহিরে চলে গেলো মৃদুল। মৃদুল বাহিরে যাওয়া মাত্র তার পাশে দশটা বডিগার্ড হাঁটা শুরু করলো।

সেদিকে তাঁকিয়ে নূপুর একটা দাম্ভিক হাসি দিলো।ব্যাগ থেকে ফোনটা করে কাকে যেনো ডায়াল করলো,,

“আই ওয়ান্ট এভরি ইনফরমেশন এবাউট মিস.হিমাদ্রি। এট এনি কস্ট। এন্ড আই ডোন্ট ওয়ান্ট এনি এক্সকিউজ।”

ফোনটা রেখে নূপুর মৃদুলের রেখে যাওয়া ব্লুগেনের গ্লাসে একটা চুমুক দিলো।
,
,
,

গাড়ীর কাঁচ গলিয়ে বাহিরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে মৃদুল।বৃষ্টি হচ্ছে।কিন্তু মাসটা হলো ডিসেম্বর।ডিসেম্বরে সাধারণত বৃষ্টি হয়না।কিন্তু আজ হচ্ছে এবং বেশ জোরালোভাবে।ঢাকা শহরে ট্রাফিক জ্যাম মানে মিনিমাম আধা ঘণ্টা লস।এটা মৃদুলের বেশ বিরক্তি লাগে।হাঁতে থাকা রিস্ট ওয়াচে আরেকবার সময় দেখে নিলো।৫.৩০ বাজে।এতোক্ষণে তো মাদিহার পার্কে থেকে আসার কথা।পকেট থেকে ফোনটা বের করে মৃদুল কাকে যেনো কল দিলো।ওপাশ থেকে কল রিসিভ করলে মৃদুল কোন ভনিতা ছাড়াই বললো,

“মাদিহা বাড়ীতে কী এসেছে।”

ওপাশ থেকে কী বললো তা শুনা গেলো না।

“ঠিক আছে। ওর খেয়াল রেখো।”
,
ফোনটা কানে থেকে নামিয়ে ফোনের স্ক্রিনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে রইলো মৃদুল।স্ক্রিনে হিমাদ্রির হাসিমাখা মুখটা ভেসে উঠছে।হিমাদ্রির কোলে মাদিহা।হিমাদ্রির পরনে লাল শাড়ী আর মাদিহার লাল ফ্রক।এ ছবিটা আজ থেকে দুই বছর আগে তোলা হয়েছিলো। যেদিন মৃদুল ইন্ডিয়া থেকে ফেরত আসে।ফোনটাকে নিজের বুকে রেখে গাড়ীর সিটে মাথাটা এলিয়ে দিলো মৃদ।শুধু অস্পষ্ট স্বরে উচ্চারণ করলো,

“শুধুমাত্র একটা কথায় এতো বড় শাস্তি কেনো আমাকে দিলি তুই হিম?আমাকে করা কোন ওয়াদা তো পূরণ করলিনা।আমি বের হয়ে যেতে বললাম আর তুই বের হয়ে গেলি?একবারোও তোর মাথায় আসলো না মাদিহা আর আমার কী হবে?”
,
,
,

“আমার মাদিহার আম্মু কী করে?”

জবাবে ফোনের ওপাশ থেকে একটা চাঁপা হাসির আওয়াজ পেলো মৃদুল।

“কী হলো বল?হাসছিস কেনো?”

“তাহলে কী করবো মৃদ?আমার প্রচন্ড হাসি পায় যখন তুমি আমাকে মাদিহার আম্মু বলো।”

“কেনো হিম?তুই কী মাদিহার আম্মু না?”

“আমিই তো মাদিহার আম্মু।”

“আর আমার বউ।”

“এখনোও হয়নি।”

“কিন্তু হবে তো।মাদিহা কী করে রে?”

“ঘুমিয়েছে।”

“আর মাদিহার আম্মু?”

“উমম।মাদিহার আম্মু একটা খাটাশের সাথে কথা বলে।”

“আমি খাঁটাশ তাইনা?দাড়া ইন্ডিয়া থেকে ব্যাক করতে দে আমাকে।”

“কবে আসবে?”

“এক মাস পর।তারপরের মাসে তোকে বিয়ে।”

“সত্যি তো মৃদ?”

“তুই দেখিস। সত্যি হয় কীনা।”

“আমি অপেক্ষায় থাকলাম মৃদ।”
,

“মিস. হিমাদ্রি? মিস.হিমাদ্রি ওয়েক আপ।”

কারো জরালো কণ্ঠের আহবানে ঘুম ভেঙে গেলো হিমাদ্রির।চোখ খুলে যে ব্যাক্তিকে প্রথমে দেখতে পেলো তাকে দেখে হিমাদ্রির আত্না উড়ে গেলো।ঘামছে হিমাদ্রি।আর এক জোড়া ধূসর চোখ তার দিকে তাঁকিয়ে আছে।

“হোয়াই আর ইউ স্লিপিং ইন দ্যা ক্লাস রুম মিস.হিমাদ্রি? ”

“আই এম সরি প্রফেসর ভৌমিক।একচুয়েলি আই ডিডেন্ট স্লিপ ওয়েল লাস্ট নাইট।”

“আই এক্সসেপ্ট ইওর এপোলাইজ।বাট ডোন্ট ডু ইট এগেইন।”

“ইয়েস প্রফেসর।”

প্রফেসর ভৌমিক আর কোন কথা বললো না।সামনে ঘুরে ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে গেলো।হিমাদ্রি খেয়াল করলো ক্লাস টাইম ওভার।তাই সেও তার নোটবুক নিয়ে তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসলো ক্লাস রুম থেকে।এখন আবার শপে যেতে হবে।

বিল্ডিং থেকে বের হতেই তুষারের কবলে পরলো হিমাদ্রি। ডিসেম্বর মাস। আমেরিকাতে বেশ কয়দিন যাবৎ তুষার বৃষ্টি হচ্ছে।গায়ে ব্লেজারটা আরো ভালোভাবে জরিয়ে নিলো।একটা দীর্ঘস্বাস বের হয়ে আসলো বুক চিঁড়ে। আমেরিকাতে আছে দুই বছর যাবৎ।পরিবেশের সাথে বেশ মানিয়ে নিয়েছে এখন।

হিমাদ্রি একটা গ্রোসারী শপে কাজ করে।স্কলারশিপে এইড থাকলেও হিমাদ্রি কাজটা করে।হঠাৎ করে হিমাদ্রি আকাশের দিকে তাঁকালো।বরফ পরছে।বাংলাদেশেও তো এখন শীতকাল।হুট করে হিমাদ্রির মনে হলো এই সাদা বরফের বৃষ্টির মধ্যে এক গুচ্ছো কদম হাতে থাকলে মন্দ হতো না।

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here