এক গুচ্ছো কদম পর্বঃ২১

0
1271

#এক_গুচ্ছো_কদম
#পর্বঃ২১
লিখাঃসামিয়া খান

আজকে হিমাদ্রির ক্লাসে যেতে বেশ লেট হয়ে গিয়েছে।তাড়াতাড়ি করে ঘুম থেকে উঠে কোনমতো ফ্রেশ হয়ে নিলো।শরীরে ব্লেজারটা জরিয়ে ডরমিটরি থেকে বের হয়ে আসলো।হিমাদ্রি।হিমাদ্রির রুমমেট হিসেবে আরো দুজন রয়েছে। একজনের নাম ক্যারেল,আরেকজন এলসা।দুজনেই নর্থ আমেরিকান।রোজ হিমাদ্রি তাদের সাথে মেট্রোস্টেশন পর্যন্ত আসে।আজকেও ব্যাতিক্রম না।

ডরমিটরি থেকে বের হয়ে হিমাদ্রি থম মেরে গেলো।ভৌমিক দাড়িয়ে আছে গাড়ী নিয়ে।ছয় ফুঁটের মতো লম্বা,চুল গুলো ব্রাউন।চোখে চমৎকার দামী ব্র্যান্ডের গ্লাসেস।পরনে কালো একটা ব্লেজার।ঠিক এখন হলিউডের কোন হিরোর থেকে কম না।হিমাদ্রিকে দেখে ভৌমিক ডান হাত উঠিয়ে হাই দিলো। হিমাদ্রিও বিপরীতে একটা ফর্মাল হাসি দিলো।

ভৌমিক কিছুটা এগিয়ে এসে হিমাদ্রিদের সামনে এসে দাড়ালো।

“গুড মর্নিং বিউটিফুল লেডিস।”

“হাই প্রফেসর।”

“হিমাদ্রি আমি কী তোমাকে ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত লিফট দিতে পারি?”

“সিওর প্রফেসর।”

“ওকে কাম।সি ইউ সুন লেডিস।”

হিমাদ্রিকে নিয়ে গাড়ীতে এসে বসলো ভৌমিক।গাড়ী স্টার্ট করে ইউনিভার্সিটির দিকে এগিয়ে চললো।

“তুমি ইউনিভার্সিটির কাছে কোনো ডরমিটরিতে উঠছো না কেনো হিমাদ্রি?”

“কেনো?এখানেই তো বেশ ভালো আছি।”

“কিন্তু অনেকটা যে দূর হয়ে যায় তোমার থেকে।”

“ইটস নট এ প্রবলেম।”

“হুম গুড।বাই দ্যা ওয়ে তুমি কী প্রফেসর.আহাদ কে চিনো?”

আহাদের নাম শুনে চমকে উঠলো হিমাদ্রি। হঠাৎ প্রফেসর ভৌমিক কেনো আহাদের কথা বলছে?আহাদকে শেষবার যখন দেখেছিলো হিমাদ্রি যেদিন ভৌমিকের সাথে একটা পার্টিতে গিয়েছিলো।সেদিন আহাদের পাশে ছিলো রোদসী।ওয়েস্টার্ন একটা গাউন পরে এসেছিলেন।চেহারায় বেশ একটা আভিজাত্য খেলা করছিলো।হিমাদ্রিকে ওখানে আহাদ ও রোদসী বেশ অবাক হয়।কিন্তু কোনপ্রকার আলাপচারিতা তাদের মধ্যে হয়নি।

“হিমাদ্রি!”

“ইয়েস প্রফেসর।”

“কোথায় হারিয়ে গেলে?”

“কোথাও না।আপনি হঠাৎ তার কথা জিজ্ঞেস করলেন কেনো?”

“কে? প্রফেসর আহাদ?”

“হুম।”

“বিকজ সেদিন প্রফেসর.আহাদ আপনার কথা জিজ্ঞেস করলো আমাকে।আর আমার যতোদূর মনে আছে আপনি মি.আহাদের মাধ্যমেই স্কলারশিপ এক্সামটা দিয়েছিলেন।”

“জ্বী।মি.আহাদ হলো মৃদের ফ্রেন্ড।”

“ওহ দেটস ফাইন।”

“এবং মিসেস.রোদসী হচ্ছে মাদিহার ব্যায়োলজিক্যাল মাদার।”

“রেলী!”

“ইয়েস।”

“দ্যাটস মিন মৃদ যে মেয়ের জন্য আজকে এমন সেটা রোদসী?”

“উহু।রোদসী যাওয়ার পরেও মৃদ নিজেকে সামলে নিয়েছিলো।আজকে মৃদ এমন হওয়ার পিছনে যে মেয়েটা আছে তার নাম হচ্ছে হিমাদ্রি।”
,
,
,
সৃষ্টি সেই কখন থেকে আরাফ এবং আরাভকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু দুটোর একটাও খাচ্ছেনা।শেষমেশ রেগে গিয়ে দুজনের গালে দুটো চড় মেরে দিলো সৃষ্টি।নাতীদের এভাবে মারতে দেখে আহনাফের মা দৌড়ে আসলো।দুটোর বয়সই দুই বছর।কিন্তু বয়স অনুযায়ী খাওয়াদাওয়া করেনা।

“তোমার কী আক্কেল নেই সৃষ্টি? তুমি আমার সোনাদুটোকে কেনো মারলে?”

“দেখেন না মা, কোনকিছু খাচ্ছেনা।”

“খাচ্ছেনা বলে তাই তুমি মারবে?আজকে এর একটা বিহিত করবো।আগেও দেখেছি তুমি ওদের মেরেছো।কিন্তু আর নাহ।”

ব্যাস শুরু হয়ে গেলো। চেঁচিয়ে সারা বাড়ী মাথায় তুললো সে।তার প্রাণপ্রিয় নাতীদুটোকে মেরেছে সৃষ্টি।কোনটা থেকে কোন শাস্তি দিবে সৃষ্টিকে ভেবে কূল পাচ্ছেনা সে।অথচ আরাফ আর আরাভ নির্বাক।কেমন যেনো হয়েছে ওরা। সহজে কাঁদেনা।সৃষ্টি মারলেও একটুও কাঁদেনি।দুই ছেলেই দেখতে একদম দুর্জয়ের মতো হয়েছে।দুর্জয়ের সন্তান বলে কিন্তু এই বাড়ীর কেও কোনদিন হেয় করেনি।বরং অনেক বেশী ভালোবেসেছে।শুধু আহনাফের বড় ভাই,ভাবী ছাড়া।অবশ্য তাতে কিছু যায় আসেনা কারো।

রুমে এসে সৃষ্টি দেখে আহনাফ নেটফ্লিক্সে শো দেখছে।কোনো কথা না বলে সৃষ্টি ওয়াশরুমে চলে গেলো।

কিছুক্ষণ পর সৃষ্টি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসলে আহনাফ ওকে নিজের কাছে ডাকে।

“বাবুদের আবার কেনো মেরেছো সৃষ্টি? ”

“কই মারলাম?”

“মা আমার কাছে বিচার দিয়ে গিয়েছে এখন।”

“হ্যাঁ মেরেছি।খাচ্ছিলো না তাই।”

“তোমাকে মারবো যদি আর কোনদিন আমার বাবাদের মেরেছো।”

“বাহ রে আপনার বাবাগুলো সারাদিন দুষ্টামি,বাঁদারামী করবে, কিন্তু কিছু বলিনা।শুধু যখন খায়না তখন মারি।খেলে তো আমার পেটে যায়না।”

“তাও মারবে না আর।”

সৃষ্টিকে নিজের কাছে টেনে নিলো আহনাফ।

“মৃদ ভাইয়ার কী খবর?”

“জানিনা।কথা হয়না।”

“মৃদ ভাইয়ার উচিত হিম আপুর সাথে কথা বলা।”

“জানো সৃষ্টি হিম আর মৃদ দুটোই এক নাম্বারের ফাজিল।ঝামেলাটা হয়েছে দুবছর আগে কিন্তু দুই ফাজিলে এখনো সেটা ঠিক করছেনা।দেখাচ্ছে আমরা কতো বড় ইগোয়িস্টিক।মাঝেমধ্যে দুটোকে চটাশ চটাশ করে থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে করে।”

“আপনার মনেই হবে।খালি শয়তানদের মতো কথা।”

“হ্যাঁ আর তুমি শয়তানের বউ।যাও অনেক কথা হয়েছে এখন পড়তে বসো।”

“আমি ভাবছি পড়ালেখা ছেড়ে দিবো।করে কী হবে?আপনি তো আছেনই। ”

“থাপ্পড় মেরে গাল ফাটিয়ে দিবো যদি এটা আবার বলেছো।”

“শয়তান কোধাকার।”

“যেমনি হইনা কেনো আমাকে নিয়েই থাকতে হবে।যাও পড়তে বসো।”

“হুম।”

“বাবুরা কই?”

“মার কাছে।দিবেনা এখন।ছেলেদুটো হয়েছেও একদম দাদীর ভক্ত।”

“থাক তাহলে।বাবা মারা যাওয়ার পর মা অনেক ভেঙে পরেছে।কিন্ত ছেলেদুটো আশেপাশে থাকলে মা অনেক হাসিখুশি থাকে।থাক আজকে মায়ের কাছে। এতে আমারই লাভ।”
,
,
,

মৃদের এখন চরম বিরক্তি লাগছে।আজকে আবার সেই মেয়েটা এসেছে। কালকেই তো ইন্টারভিউে সব ক্লিয়ার করে দিয়েছিলো।কিন্তু আজকে আবার এসেছে।

“লিসেন মিস. ”

“মিস.নূপুর এহসান। ”

“মিস.এহসান,আপনি এখন কেনো আমার অফিসে এসেছেন তা কী জানতে পারি?”

“অফকোর্স স্যার।আসলে আমার আরো কিছু ইনফরমেশন লাগতো আপনার সম্পর্কে। ”

“আপনাকে আমি যতোটুকু ইনফরমেশন দিয়েছিলাম তা কী যথেষ্ট নয়?”

“যথেষ্ট নয় দেখেই তো আপনার সাথে আবার দেখা করতে এসেছি।”

“বাট আপনি বলেছিলেন আপনি আমার সম্পর্কে যথেষ্ট জেনে তারপর এসেছেন।ওকে কী আস্ক করতে চান করতে পারেন।”

একটু নড়েচড়ে বসলো নূপুর।

“আপনি কি খেতে ভালোবাসেন?”

“কেনো আমি যা খেতে পছন্দ করি, তা কী রান্না করে খাওয়াবেন?”

“যদি বলি তাই।”

“আই থিংক আপনি আর্টিকেল লিখবেন আমার জীবনে সাফল্য কীভাবে অর্জন করেছি নাকী আমি কী খেতে ভালোবাসি।”

“উহু।যার সম্পর্কে লিখবো তার সম্পর্কে পুরোটা লিখবো।অর্ধেক কাজ করার মানুষ নূপুর না।”

“আমার ভালোলাগার মধ্যে কিছু নেই।যখন ক্ষুদা লাগে একমাত্র তখন খাই।তাছাড়া খাওয়া হয়ে উঠেনা।”

“মানে?আপনার কোন পছন্দ নেই?এরকম কীভাবে হতে পারে।আপনার কী খেতে ভালোলাগে,জিহবায় স্বাদ কোনটায় বেশী লাগে তাই জানেন না?”

“ওরকমই।”

“আচ্ছা আপনার পছন্দের রঙ?”

“হিম রঙ।”

“মানে?এটা আবার কেমন রঙ?”

“প্রত্যেক প্রেমিক পুরুষের তার প্রিয়তমার গায়ের রঙ প্রিয় রঙ হওয়া উচিত।তেমনি আমার প্রিয়তমার গায়ের রঙ আমার প্রিয়।”

“মাথার উপর দিয়ে গেলো।আচ্ছা ফেভারিট ফ্লাওয়ার?”

“কদম।”

“আর ভালোবাসা? ”

“হিম।আরো জিজ্ঞেস করবেন মিস.এহসান?”

“আপনি মিস.হিমাদ্রিকে অনেক ভালোবাসেন তাইনা?অথচ এর কানাকুড়িও মিস.রোদসীকে বাসেন না।”

“সবার সাথে সবার তুলনা হয়না।তেমনি হিমের সাথেও রোদসীর তুলনা হয়না।”

“জ্বী,,আচ্ছা আমি কী আপনাকে ডিনারের জন্য ইনভাইট করতে পারি?”

“আপনি কী আমার সাথে ডেট করতে চাচ্ছেন?”

“নো ইট উইল বি জাস্ট এ ডিনার।”

“ওকে।সময়,জায়গা আমার পিএ ঠিক করবে।”

“ধন্যবাদ স্যার।”

“আপনি এখন আসতে পারেন।”

নূপুর চলে যাওয়ার পর চেয়ারে মাথাটা হেলান দিয়ে চোখ বুজলো মৃদ।ইদানীং কেমন যেনো অসহ্য একটা ব্যাথা হয় মাথায়।এটা কোন বড় রোগের লক্ষণ না কী কে জানে?কিছুসময় পর চোখ খুললো মৃদ।চোখটা আদ্র তার।শুভ্র সিলিং এর দিকে তাঁকিয়ে মৃদু স্বরে উচ্চারণ করলো,,

“হিম তুই এতো বেইমান কীভাবে হতে পারলি।আমাকে দেওয়া ওয়াদাগুলো কীভাবে ভুলে যেতে পারলি?একটা যে বৈধ চুম্বন এখনো পাওয়া তোর কাছে।”

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here