#এক_গুচ্ছো_কদম
#পর্বঃ৫
লিখাঃসামিয়া খান
“মৃদ তুমি কী আমার সাথে পরকীয়া করতে চাও?”
কথাগুলো শুনে ভ্রু কুঁচকালো মৃদুল।হাতে থাকা চাওমিনের বাটিটা টেবিলের ওপর রাখলো।
“হিম এখন রাত বারোটা বাজে।তাও আমি এতো কষ্ট করে তোর ফেবারিট রেস্ট্রুরেন্ট থেকে চাওমিন এনে তোকে নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছি।আর তুই কীনা বলছিস যে আমি পরকীয়া করতে চাই?”
“কথাটা মনে হলো তাই বললাম।কারণ এতো রাতে খালি খালি একজন পুরুষ, একটা নারীর রুমে আসবে না”।
” দেখ হিম তুই আর রোদসী কী শুরু করছিস আমি জানিনা।কিন্তু এটা বলতে পারবো আমার কোন খারাপ ইন্টেশন নেই তোর প্রতি। তুই একটা পবিত্র ফুলের মতো সবসময় আমার কাছে যাকে হাতে নিয়ে মাড়িয়ে দেওয়া যায়না”।
“আমি কিছু জানিনা মৃদুল।শুধু এটুকু জানি তুমি এতো আমার কাছে আসবেনা।আমরা সমাজে বসবাস করি।তোমার আর আমার এতো একসাথে থাকা সমাজের জন্য খুবই দৃষ্টিকটু”।
“এই তুই আমাকে মৃদুল বলে কেন ডাকলি।আজ পর্যন্ত কোনদিন তো ডাকিস নি।তাহলে আজ এমন কী হলো যে আমাকে মৃদুল বলে ডাকছিস?”
“ওহ মৃদুল বলেছি।খেয়াল ছিল না”।
বড্ড ভাবলেশহীন ভাবে কথাগুলো বললো হিমাদ্রি। এই কথাগুলো শুনে বুক চিড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসলো মৃদুলের।হিমাদ্রির কাছে গিয়ে দুহাতের আজলা দিয়ে হিমাদ্রির মুখটা তুলে ধরলো মৃদুল।
“হিম এমন করছিস কেনো?তুই মৃদুল বলে ইচ্ছা করে ডেকেছিস তাইনা?আমি ছোটবেলা থেকে তোকে মৃদ ডাকা শিখেয়েছি।তোর এই কথাগুলো শুনে আমার বুকে রক্তক্ষরণ হয় তা কী তুই বুঝতে পারিস?”
নিজের মুখটা মৃদুলের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলো হিমাদ্রি।
“কী শিখিয়েছো সেগুলো আমি সব ভুলে গিয়েছি মৃদ।আমি নতুন হিমাদ্রি। আর চার বছরে সব পাল্টে গিয়েছে”।
” না আমি কোন কিছু পাল্টাতে দিবো না হিম।সব আবার আগের মতো হবে”।
“কিছুই হবেনা। আর সবকিছু তোমার মন মতো হতে হবে সেটা জরুরী না। এই চার বছরে একবারও এটা প্রয়োজন মনে করনি জানতে যে আমি কেমন রয়েছি।বেঁচে আছি না মরে গিয়েছি।”
“বিশ্বাস কর হিম আমি সবসময় তোর আশেপাশে থেকেছি।হয়তো সেদিন তোকে থাপ্পড় দিয়েছিলাম কিন্তু একটু পরেই আমার রাগটা পরে গিয়ে সেখানে অপরাধবোধ জন্ম নেয়।তুই যখন কলেজে ক্লাস করতে যেতি আমি রোজ তোকে দেখতে যেতাম রে পাগলী। ”
“সেটা তোমার মহত্ব তাই মৃদুল তাই এসেছো।কিন্তু আমি এতো মহৎ নই।আরেকটা কথা এতো আমার শরীরের সাথে ঘেঁষতে আসবে না।বিরক্ত লাগে।”
“হিম তুই কতোবড় কথা বললি তা একবার চিন্তা করে দেখবি। ঠিক আছে কোন সমস্যা নেই এখন চুপচাপ চাওমিনটা শেষ কর আমি চলে যাচ্ছি। এমনিও অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। ”
মৃদুল টেবিলের উপরে থাকা চাওমিনের বাটিটা হিমাদ্রির হাতে তুলে দিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো।আবার কী মনে করে যেনো ফিরে এসে নিজের ডান হাতের বাহু ও কনুয়ের সংযোগস্থল দিয়ে হিমাদ্রির গলাটা চেঁপে ধরলো।
“মৃদ কী করছো এগুলো ছাড়ো।ব্যাথা লাগছে তো”।
” তোকে ব্যাথা দিতে চাইনা হিম।কিন্তু তার আগে বল আমি কী কোনদিন খারাপভাবে তোর শরীরে কোথাও টাচ করেছি?কী হলো বল?”
“না করোনি এখন ছাড়ো”।
” তো সেগুলো মনে রাখবি।আর পরকীয়া তাইনা!পরকীয়ার ডেফিনেশন জানিস?পরকীয়ার ডেফিনেশন আগে জেনে আসবি তারপর এতো বড় বড় কথা বলবি।যতোসব!
হিমাদ্রিকে ছেড়ে গটগট করে চলে গেলো মৃদুল।সেদিকে তাকিয়ে গলায় হাত বুলাতে বুলাতে হিমাদ্রি মিনমিন করে বললো,,
“আসলে বুইড়া খাটাশ গুলো কখনো ঠিক হয়না।এরা সবসময় নিজের হাটুর বয়সী পোলাপানদের সাথে হাডুডু খেলতে আসে”!
,
,
,
প্রায় একমাস হয়ে গিয়েছে দুর্জয়ের মৃত্যুর।কিন্তু এখনো দুর্জয়ের মা জানতে পারলো না যে তার আদরের ছোট ছেলে মারা গিয়েছে।মূলত মৃদুলের বিয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঝামেলাতে ওর মা মেজর এট্যাক করেছিল।যার কারণে সে প্যারালাইজড হয়ে আছে।এসময় ডাকে দুর্জয়ের মৃত্যুর খবর দেওয়া মনে তার জীবনে সংকটে ফেলা।
সৃষ্টি যেহেতু এখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে তাই ওর পড়ালেখা থামায়নি মৃদুল।খুব সাবলীলভাবে ওর পড়ালেখা চালু রেখেছে সে।সৃষ্টি এখন মূলত গাড়িতে যাতায়াত করে।আজোও তাই সে গাড়িতে করে যাবে।সৃষ্টিকে গাড়ীতে বসিয়ে যেই না মৃদুল উঠতে যাবে তখন হুট করে আহনাফ গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।মৃদুল আর সৃষ্টি দুজনেই অনেকটা হকচকিয়ে গেল এ বিষয়ে।
“আহনাফ তুই কখনো ঠিক হবিনা তাইনা?”
” আমি আবার কী করলাম?”
“কিছুনা তুই হঠাৎ গাড়িতে?”
“আমি চালাবো গাড়ী। তুই যা তোর বউ বাচ্চা সামলা। নয়তো তোর মেয়েকে আমি নিয়ে নিবো”!
” স্লা তুই কখনো ঠিক হবিনা।আচ্ছা যা দেখে যাবি”!
হঠাৎ সৃষ্টি বলে উঠলো
“মৃদুল ভাইয়া আপনিও চলেন না”।
” কেন সৃষ্টি কোন সমস্যা”।
সৃষ্টি মাথা নাড়িয়ে না করলো।
“তাহলে?আহনাফ যা দেখে যাবি।”
,
,
,
বাড়ী থেকে অনেকটা দূরে এসে পরেছে আহনাফ আর সৃষ্টির গাড়ী।
“বাবু কেমন আছে?আর আমি কথা বলতে গেলে এতো এভয়েড কেনো করো?”
কথাগুলো শুনে কোন জনাব দিলো না সৃষ্টি। চুপচাপ গাড়ির কাঁচ গলিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো।একটু থেমে আবার বলা শুরু করলো আহনাফ,,
“আমাকে এতো এভয়েড করে কোন লাভ হবেনা।আমি তোমার পিছু ছাড়ছিনা।দেখো তোমার ভবিষ্যত এখনো অনেক বাকী।বাবুর কথা একবার চিন্তা করবে”।
তাও সৃষ্টি নির্বাক।বুক চিড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসলো আহনাফের।প্যান্টের পকেট থেকে একটা কিটক্যাট বের করে সৃষ্টির দিকে এগিয়ে দিলো আহনাফ।চকলেটটা হাতে নিয়ে নিলো সৃষ্টি। এতোক্ষণে মুখ খুললো সে,,
” আমি কোন বাচ্চা না যে আমাকে ভুলাতে চকলেট দিবেন”।
“কে বললো তোমাকে চকলেট দিয়েছি?তোমার পেটে যে আছে তাকে দিয়েছি”।
” ভালো করেছেন”।
“এতোদিনে বুঝলেন?আচ্ছা যাও কলেজে এসে পড়েছি।নিজের এবং বাবুর খেয়াল রেখো”।
” আপনাকে বলতে হবেনা সেটা”!
,
,
,
“কেমন আছেন প্রজাপতি?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আপনি?”
“হুম আমিও সেম।আপনাকে কী বিরক্ত করলাম?”
“না তো আহাদ ভাইয়া”।
” ওহ প্লিজ প্রজাপতি। ডোন্ট কল মি ভাইয়া?”
“কেন ভাইয়াতে কী সমস্যা?”
“কোন সমস্যা না।কিন্তু আমি আর মৃদু তো এক সমান তাই ওকে মৃদ বলে ডাকলে আমাকে আহাদ বলে ডাকতে পারো”।
” জানেন আপনার এই মৃদু ডাকটা শুনলে মৃদ বেশ খেপে যায়”।
“তা আমি খুব ভালো করেই জানি।তার জন্য আরো এ ডাকে ডাকতে বেশ মজা লাগে”।
” ওহ ভালো”।
“হুম।মন খারাপ”।
” আপনি কীভাবে বুঝলেন? ”
“সেটা না হয় অজানা থাক।কিন্তু তার কারাণটা কী মৃদ?”
“আশ্চর্যভাবে আপনি যেনো কীভাবে সব বুঝতে পারেন”।
” তাই তাহলে আরোও একটা গেস করি।কিছু মানুষ আপনাকে আর মৃদকে নিয়ে বাজে কথা ছড়িয়ে দিচ্ছে।এম আই রাইট?”
“জ্বী এটাও সঠিক”।
লিখাঃসামিয়া খান
” আপনাকে কতোগুলো কথা বলি প্রজাপতি।অনেক সময় দেখবেন আপনি বেশ লোভনীয় এবং দামী খাবার নিয়ে রাস্তা দিয়ে ভদ্রভাবে হেঁটে চলেছেন।কিন্তু হুট করে একদল কুকুর আসবে আপনার কাছে।এসেই আপনার ওপর ঘেউঘেউ করবে।এমনভাব শুরু করবে যেনো এই বুঝি তারা আপনাকে কামড়ে রক্তাক্ত করে দিবে।আপনি যদি তখন ভয় পেয়ে দৌড় দেন বা তাদের সাথে লড়তে যান তাহলে ক্ষতিটা আপনার।অথচ যদি শান্তভাবে হেঁটে চলে আসেন তখন আর কুকুরগুলো কিছু বলার সাহস রাখবেনা।এইযে এই কুকুরদের মতো একদল মানুষ আমাদের সমাজে বসবাস করে।এরা করবে কী দলবেঁধে আপনার সাথে ঘেউঘেউ করতে আসবে।তাই বলে কী উল্টো আপনি তাদের ওপর ঘেউঘেউ করবেন।এটা তাদের সহজাত কুকুরের মতো বৈশিষ্ট্য।আপনি বা আমি অথবা আমরা হলো গিয়ে মানুষ।তাই এসব মানুষ কিন্তু চতুষ্পদ জন্তুর মতো ব্যাবহারকারীদের কথা শোনা বাদ দেন।ড্যাম কেয়ার ভাব রাখবেন।যা আপনার জন্য সুফলদায়ক”।
“কথাটা শুনে ভালো লাগলো”।
” আশা করি কথাগুলো বুঝতে পেরেছেন এবং তা মেনে চলবেন”।
“অবশ্যই তা মেনে চলবো”।
“পিউবিলিয়াস সিরাসের একটা কথা আছে,,
একজন নারী হয় ভালোবাসে অথবা ঘৃণা করে।এছাড়া জানেনা তৃতীয় কোন পন্থা।
তো আপনি না হয় ভালোবাসাটাকে বেছে নিলেন।
” আমি সবসময় তাই নেই।কিন্তু মাঝেমধ্যে ভালোবাসাটাকে ছেড়ে দিতে হয় এবং সেটা ভালোবাসা স্বার্থে”।
চলবে,,
বিঃদ্রঃপুরো গল্প না পড়ে কেও হিমাদ্রি আর সৃষ্টির চরিত্র বিশ্লেষন করতে আসবেন না