এক গুচ্ছো কদম পর্বঃ৬

0
1534

#এক_গুচ্ছো_কদম
#পর্বঃ৬
লিখাঃসামিয়া খান

মাদিহার ছোট ছোট হাত নিয়ে খেলা করছে হিমাদ্রি।মেয়েটা সারাদিন হিমাদ্রির কাছেই থাকে।কেমন যেনো আপন আপন লাগে মেয়েটাকে।হয়তো একটা সুপ্ত বাসনা প্রকাশ পায়।হুট করে হিমাদ্রির মাথায় একটা গাট্টা পরলো।

“জানো মৃদ আমিও মানুষ।আমারোও ব্যাথা লাগে।”

“আমি কী তা না করেছি!”

“না করোনি কিন্তু এভাবে সবসময় মারলে ভালো লাগেনা।”

“তোর ভালো কোনদিনও লাগবে না।বাবুকে বুক থেকে সরিয়ে দে একটু আদর করবো”।

“সরাতে হবেনা।কোলে নেও তাতেই হবে”।

” না এখন কোলে নিবো না। প্রচন্ড ঘাম শরীরে। ”

“তাহলে দূরে যাও আমার থেকেও এবং আমার মেয়ের থেকেও”।

কথাটা বলে তাজ্জব বনে গেলো হিমাদ্রি। শুধু অস্ফুট স্বরে আমার মেয়ে কথাটা উচ্চারণ করলো।

” এতো চিন্তার কিছু নেই হিম।মাদিহা তোরও মেয়ে”।

“জানো তো মৃদ মুখে বললে আর মেয়ে হয়ে গেলো তা কিন্তু নয়।আর সত্যি হলো রোদসী আপু ওর মা আমি নয়।”

“কেনো আমার বলাটা কী যথেষ্ট নয়?”

“হয়তো না”।

” দেখ হিম এরকম গুরুগম্ভীর মুখোশটা খুলে ফেল। আমার হিম কখনো এমন ছিলোনা।”

কথাটা শুনে মৃদু হেসে আরেকটু ভালোভাবে বুকে জরিয়ে ধরলো মাদিহাকে হিমাদ্রি।বড্ড নির্লিপ্ত কণ্ঠে জবাব দিলো হিমাদ্রি,,

“হিম কখনো মৃদের ছিলনা।রোদসী সবসময় মৃদের ছিল।”

“তুই ফাজিল হিম।

“এখানে ফাজিলের কীহলো?”

“তুই একবার চিন্তা করে দেখ তুই কোন কথা কোন কথার ভিতরে টেনে নিয়ে এসেছিস”।

” জানো তো মৃদ আমি না কোন কুচক্রি মহিলা না যে এবারও তোমার আর রোদসী আপুর মধ্যে আসবো”।

“মাফ করবি না আমাকে হিম।সবসময় তোর এই এক খোঁটা শুনতে আর ভালো লাগেনা”।

” এটা তিতা সত্যি। এজন্য ভালো লাগেনা”।

“তোকে বুঝাতে বুঝাতে আমি সত্যি এখন ক্লান্ত হিম।”

“আমাকে বুঝানোর মতো কিছুই হয়নি”।

” ঠিক আছে আর বুঝাবো না।কিন্তু প্লিজ এখন আমার অনেক ক্ষুদা লেগেছে। কিছু বানিয়ে খাওয়াবি আমাকে”।

“বাড়িতে অনেক মানুষ রয়েছে তাদের বলো। আমি এখন মাদিহাকে খাওয়াবো”।

” মাদিহার ক্ষুদা লেগেছে যেমন মাদিহার বাবারোও তেমন লেগেছে। রোদসী বাসায় নেই তা নয় ওকেই বলতাম।যা না কিছু করে নিয়ে আয়।”

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো হিমাদ্রি।

“তোমাকে কোনদিনও কিছু বুঝাতে পারবো না মৃদ।তুমি হলে অবুঝ।ফ্রেস হয়ে এসে মাদিহাকে দেখো আমি বানিয়ে নিয়ে আসছি”।

” তার জন্যই তো তোকে এতো ভালোবাসি হিম।তুই সবসময় আমার কথা শুনিস।”

মৃদুলের মুখ থেকে ভালোবাসি এই একটা শব্দ যথেষ্ট হিমাদ্রির বুকে চিনচিন ব্যাথা তৈরী করতে।
,
,
,
চুলায় দেওয়া গরম পানির দিকে অনবরত তাকিয়ে আছে হিম।গরম পানি থেকে কীভাবে গোল গোল বুদবুদ উঠছে যা কয়েক সেকেন্ডর মধ্যে মিলিয়ে যাচ্ছে। ঠিক যেরকমভাবে হিমাদ্রি দেখা অকাল বয়সের স্বপ্ন হঠাৎ করে এভাবে মিলিয়ে গিয়েছিল।

হিমাদ্রি আর মৃদুল সেই ছোটবেলা থেকে একসাথে থাকতো।খুব বেশী বড় না হিমের থেকে মৃদুল।ঠিক পাঁচ বছরের বড়।ছোটবেলায় একসাথে থাকা আর একটা বয়সের পর একসাথে থাকার মধ্যে অনেক পার্থক্য।একটা বয়সের পর ছেলে মেয়ে একসাথে থাকবে কিন্তু তাদের মধ্যে এক বিশেষ অনুভূতির সৃষ্টি হবেনা এটা চিন্তা করাটা নেহাৎ বোকামী ছাড়া কিছুই না।হিমাদ্রি ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।কিন্তু মৃদুলের ক্ষেত্রে তা হলো না কেনো?এ প্রশ্নের উত্তর আজোও পাইনি হিমাদ্রি। কোনদিন পাবেও কীনা তা জানেনা।

পাস্তা বানিয়েছে হিমাদ্রি মৃদুলের জন্য।ইটালিয়া স্টাইলে। একদম এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল, হাফ বয়েল পাস্তা,, সাথে মজেরিলা চিজ,, এবং আরোও বিশেষ কিছু উপাদান।এরকমভাবে শুধু হিমাদ্রি রান্না করতে পারে।আর একজন পারতেন মূলত তার থেকেই হিমাদ্রি শিখেছিল। সে হচ্ছে মৃদুলের মা।

পাস্তার বয়েল একটা ট্রে তে করে নিয়ে যাচ্ছে হিমাদ্রি। কিন্তু মৃদুলের রুমে এসে মেজাজটা চরম হয়ে গেলো।খুব সুন্দর করে মাদিহাকে গান দেখিয়ে দেখিয়ে খাইয়ে দিচ্ছে মৃদুল।এটা একটা দন্ডণীয় অপরাধ লাগে হিমাদ্রির কাছে।এতো ছোট বয়সে বাচ্চাদের ফোনের প্রতি আসক্ত করে দেওয়ার ভালো এবং অভিনব কৌশল।

“মৃদ আমি তোমার খাওয়া বন্ধ করিয়ে দিবো যদি আর কোনদিন দেখি এভাবে ফোন ফোন দেখিয়ে মাদিহাকে খাওয়াতে”।

” আরে তুই জানিস না তা নয় খেতে চায় না”।

“তাই বলে এতো ছোট বয়সে ফোন?আর বাবুদের একটু ধৈর্য্য ধরে খাওয়াতে হয় তা জানোনা?”

“এমনভাব ধরছিস যেনো নিজের পাঁচ দশটা বাবু হয়েছে”।

” পাঁচ দশটা বাবু না হলেও এ ব্যাপারে জানি।”

“দেখবোনি নিজের বাচ্চার বেলায় কী করিস”।

” তুমি হয়তো ভুলে গিয়েছো মৃদ।আমি তোমার মৃত ভাইয়ের স্ত্রী।আমি একটা বিধবা।”

হিমাদ্রির একথার জবাবে কী বলবে মৃদুল তা তার জানা নেই।পরিবেশটা ঠিক করতে মৃদুল বললো,,

“চল বাগানে গিয়ে খাবো।রুমে ভালো লাগছে না”।
,
,
,

যে ব্যাক্তি রিকশা দিয়ে সবসময় চলাচল করে হুট করে সে যদি একটা অতি চমকপ্রদ গাড়ীতে চড়ার সুযোগ পায় তাহলে অবশ্যই তা বানরের গলায় মুক্তার মতো লাগবে।(লিখাঃসামিয়া খান)রোদসীরও হয়েছে তাই।রোদসীর বাবা ঘুষখোর পুলিশ হলেও কোনদিন গাড়ী কিনার সামর্থ্য তার হয়নি।কিন্তু মৃদুলের বাবার সেটা ছিল। যদিও ছিল তারপরও ওদের বিয়ে নিয়ে ঝামেলা হওয়ার পর থেকে মৃদুল ওর পরিবারের কাছে আসেনি।তাই আর গাড়িতে চড়াও হয়নি।কিন্তু ইদানীং মৃদুল বাড়ি ফিরার পর থেকে নিজের সব অপূর্ণ বাসনা গুলো পূরণ করার স্বাদ জেগেছে রোদসীর।

হাতে থাকা প্লাটিনামের ব্রেসলেটটা দেখে মিটমিট করে হেসে চলছে রোদসী।অবশেষ তার প্লাটিনাম পরার স্বাদ পূরণ হলো।কিন্তু এটা মৃদুলের বা তার বাবার টাকা দিয়ে কেনার না।এটা সে উপহার হিসিবে একটা অপ্রত্যাশিত মানুষের কাছ থেকে পেয়েছে।

গাড়ী থেকে নেমেই যে দৃশ্যটা সর্বপ্রথম রোদসীর নজরে পরলো তা হলো হিমাদ্রিকে মৃদুল খাইয়ে দিচ্ছে।তাও আবার একী বোল এবং এবং একী চামচ দিয়ে।যে চামচ দিয়ে মৃদুল নিজে খাচ্ছে ঠিক সেই চামচ দিয়ে হিমাদ্রিকেও খাইয়ে দিচ্ছে।বিষয়টা দেখে ঘেন্না পেলো রোদসীর।কারণ সে কখনো এভাবে খাইনি মৃদুলের সাথে।তার কাছে এটা ঘেন্না লাগে একজনের মুখেরটা অন্যজন খাওয়া।কিন্তু হিমাদ্রি কতো সহজে তা গোগ্রাসে গিলতে পারছে।ওদের থেকে চোখ সরিয়ে ভেতরের দিকে হাঁটা ধরলো রোদসী।তার মুড এখন অনেক ভালো।এসব ছোট ছোট ম্যাটার নিয়ে সে এখন মাথা ঘামিয়ে এতো সুন্দর মুডটা নষ্ট করতে চায় না।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here